• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery স্বামীর পরাজয় (Completed)

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
স্বামীর পরাজয়






স্বামীর পরাজয়

সেটা একটা শনিবার ছিল। আমার বউ মনীষা, আমি আর আমার বড় মেয়ে টাপুর কোলকাতার ‘এসি মার্কেট’ বলে একটা মলে কেনাকাটা করছিলাম। আমরা প্রতিমাসের একদিন সংসারের যাবতীয় কেনাকাটা একসঙ্গে সেরে ফেলতাম। আসলে একসঙ্গে অনেক জিনিস কিনলে মলে অনেক ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়তো, তাই।

মনীষা নিজেই কিছু জিনিস পছন্দ করে কিনছিল আর আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে টাপুরকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক বিভিন্ন জিনিসের সম্ভার দেখছিলাম।হঠাৎ আমার মনে হল একজনকে যেন খুব চেনা চেনা লাগছে। একটু কাছে আসতেই ছয় ফুটের ওপর লম্বা অনেকটা ফ্যাশান মডেলের মত দেখতে লোকটাকে চিনতে পারলাম। আমার বস রবি রায়।আমি এগিয়ে গিয়ে রবি কে ডাকলাম।

- “স্যার আপনি এখানে”?

– “আরে রাজীব! তুমি এখানে কি করছো? তোমার তো এখন অফিসে থাকার কথা”।

– “আসলে স্যার… আজকে আমি একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়েছি। আমি আর আমার বউ মনীষা দুজনে মিলে এখানে এসেছি।আমাদের একটু কেনাকাটা করার ছিল”।

– “তোমার কোলে এই কি তোমার মেয়ে”?

– “হ্যাঁ, ও আমার বড় মেয়ে”।

- “বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে তো, কত বয়েস হলো ওর?” টাপুরের গাল টিপে আদর করে রবি রায় জিজ্ঞেস করলো।

- “এই তো এই বছরে পাঁচে পরলো, সামনের বছর ক্লাস ওয়ান হবে”।

- "বাঃ বাঃ বেশ বেশ। তা তোমার ছোটো মেয়ের বয়েস কত হলো? কি নাম রেখেছো ওর? ও কি বাড়িতে?"

- “ওর তো সবে দেড় বছর বয়েস হলো, ওর নাম রেখেছি টুপুর, ওকে আমার দাদা বউদির কাছে রেখে এসেছি, ওদের কাছেই তো থাকে বেশির ভাগ সময় ।"

ঠিক তখনই দেখলাম আমার বউ মনীষা সামনের দোকানটা থেকে কেনাকাটা সেরে আমাদের দিকেই আসছে।

মনীষা আমার কাছে আসতেই রবি বলে উঠলো – “ও এই বুঝি তোমার বউ মনীষা”।

আমি বললাম – “হ্যাঁ”।

রবি
স্মার্টলি মনীষার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।আমি বললাম – “মনীষা পরিচয় করিয়ে দি। ইনি হলেন আমার বস মিস্টার রবি রায়”।

মনীষা
হেঁসে রবি-র সাথে হাত মেলালো। মনীষা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মেয়ে বলে বেশ স্মার্ট।

ও হেঁসে বললো – “ও আপনি মিস্টার রায়, ওর কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি। গ্ল্যাড টু মিট ইউ স্যার”।

খুব পোলাইটলি অল্প একটু হাত ঝাঁকিয়ে রবি বললো – “নাইস টু মিট ইউ টু মনীষা। আমার মনে হচ্ছে আমাদের আজকেই প্রথম দেখা হল। আশা করছি রাজীব যখন আমার সম্বন্ধে কথা বলে তখন নিশ্চই গালাগালি টালাগালি না দিয়েই বলে”।

আমি আর মনীষা দুজনেই রবি-র কথা শুনে হেঁসে ফেললাম।

রবি রায় আসলে আমার কম্পানি ফিউচার মিডিয়ার মালিক আর প্রেসিডেন্ট প্রদীপ রায় এর একমাত্র ছেলে। ও আগে মুম্বাইতে আমাদের হেড অফিসে বসতো।

কোম্পানি এখন ঠিক করেছে তাদের ভাইস প্রেসিডেন্টদের হেড অফিসে না রেখে মেজর ব্রাঞ্চ অফিস গুলোতে পাঠাবে। এতে করে তারা ব্রাঞ্চ অফিস গুলোর সেলস ডেভলপমেন্ট এর কাজ ছাড়াও এ্যাডমিনিসট্রেসন ও দেখতে পারবে। সেই মত রবি কোলকাতাতে বদলি হয়ে আসে।

প্রথম যখন ওর সাথে দেখা হয়েছিল তখন ওকে আমার ফ্রেন্ডলি বলেই মনে হয়ে ছিল।

অবশ্য কম্পানির মেয়েদের কাছে ও একবারে হট ফেবারিট। মেয়েরা ওর সব কিছুই দারুন ভাল দেখে। তাদের মতে কোলকাতা অফিসের হাল ওর হাতে পরে দুদিনে ফিরে যাবে। কম্পানির সেলস ডেভলপমেন্টের ব্যাপারে ওর আইডিয়া গুলো নাকি অসাধারন। হবেইনা বা কেন? ওরকম লম্বা চওড়া বেক্তিত্ব সম্পন্ন সুপুরুষ ছেলে দেখলে মেয়েদের নাল পড়া অস্বাভবিক কিছু নয়।

আমি রবি-র সাথে দু একটা কথা বলতে লাগলাম। মনীষা আমার কোল থেকে টাপুরকে নিয়ে তার বদলে আমার হাতে ওর হাতের ব্যাগ দুটো ধরিয়ে দিল। রবি-র সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ যেন মনে হল রবি আড় চোখে এক পলকে টুক করে কি যেন একটা দেখে নিল।

আমি পাশে তাকিয়ে দেখি টাপুরের একপাটি জুতো খুলে গেছে বলে মনীষা ওকে মাটিতে দাঁড় করিয়ে ওর পায়ের কাছে উবু হয়ে বসে ওর জুতোর ফিতে বাঁধছে। ফিতে বাধতে গিয়ে ওর খেয়াল নেই যে অজান্তে কখন ওর বুকের আঁচল খসে পরেছে।

সেদিন মনীষা একটা লো কাট কালো রঙের ব্লাউজ পরে এসেছিলো। উবু হয়ে বসায় ব্লাউজের ওপর দিয়ে ওর পুরুষ্টু মাই দুটোর অনেকটাই দেখা যাচ্ছিল। রবি কি তাহলে এক পলকে ওর মাই দুটো দেখে নিল? আমি নিশ্চিত নই কারণ আমাদের পাশ দিয়ে অনেকেই হেঁটে যাচ্ছিল, রবি তাদের কারোর দিকেও তাকাতে পারে।

আর ও যদি মনীষা-র বুকের দিকে তাকিয়েও থাকে তাহলেও সেটা এমন কিছু অপরাধ নয়। একজন পুরুষ মানুষ হিসেবে আমি জানি এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। আমি সুযোগ পেলে আমিও কি কারুরটা দেখতে ছাড়ি নাকি? তাছাড়া আমার ছোট মেয়ে টুপুর হবার পর মনীষা নিজের মাই দুটোর সাইজ যা বানিয়েছে তাতে করে এক বার চোখ পরলে চোখ ফেরানো মুস্কিল। যাই হোক কিছুক্খন বোকাবোকা ভদ্র কথাবার্তার পর রবি অন্য দিকে চলে গেল, আর আমরা আমাদের রাস্তায়।

যেতে যেতে মনীষা হঠাৎ বললো – “মিস্টার রায়ের কথাবাত্রা কিন্তু খুব সাধারন আর ফ্রেন্ডলি না? দেখে বোঝা যায়না অতো পয়সার মালিক”।

আমি ঘাড় নাড়লাম।

- “আচ্ছা উনি আমাদের সঙ্গে এত গল্প করলেন, ওনাকে একবার আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলা উচিত ছিল না গো”?

- “দেখো মনীষা রবি ফ্রেন্ডলি হলেও খুব প্রফেশনাল। আমার মনে হয় ও আমাদের মধ্যেকার রিলেসানটা প্রফেশনালই রাখতে চাইবে। ওকে বাড়িতে আসতে বোললে বা খেতে নেমন্তন্ন করলে ও খুব অসুবিধাতে পরে যেত”।

- “তা কেন? কেউ কি নিজের বস কে বাড়িতে নেমন্তন্ন করেনা”?

– “দেখো আমার মনে হয় না বলাই ভাল হয়েছে। বললে ও আসতোনা”।

- “কেন”?

- “দেখো উনি আমাদের বাড়িতে খেতে এসেছেন এই ব্যাপারটা আমার মত আমাদের অফিসের অন্য সব সেলস এক্সিকিউটিভরা জানলে ব্যাপারটা কিরকম হত বলো? এসব ব্যাপারে বসেদের খুব সাবধানে চলতে হয়”।

- “কে কি ভাববে তার দায় আমরা নেব কেন রাজীব? আর নেমন্তন্ন করলে দোষ কি ছিল? উনি আসলে আসতেন, না আসলে না আসতেন, সেটা ওঁর ব্যাপার”।

- “হ্যাঁ, কিন্তু উনি অস্বস্তিতে তো পড়তেন”।

- “আমার তা মনে হয় না। উনি ঠিক সামলে নিতেন। ওনাকে অসম্ভব স্মার্ট বলে মনে হল আমার। আর কি সুন্দর কথা বলতে পারেন উনি”।

- “দেখো মনীষা আমি মনে করি বসের সাথে বন্ধুত্বের একটা সীমানা রাখা অত্যন্ত দরকারি”।

- “ঠিক আছে, ঠিক আছে, চল ওঁকে বাড়িতে নেমন্তন্ন করার ব্যাপারটা ভুলে আমরা একটা রেস্টুরেন্টের দিকে যাই। আমার খুব খিদে পেয়েছে”।

মনীষা-র সাথে রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম এই রবি আমাদের অফিসে মাস পাঁচেক হল বদলি হয়ে এসেছে, এই ক'মাসে ওর সাথে কাজ করতে করতে আমার বেশ বন্ধুত্ত মত হয়ে গেছে।

রবি আমাকে এখনো পর্যন্ত বেশ স্বাধীনভাবেই কাজ করতে দিয়েছে। যদিও ওর কাজ প্রত্যেকের কাজের ওপর নজরদারি করা, তবুও ও এই ক'মাসে সেলস ডেভলপমেন্টের ওপর নিজের আইডিয়া নিয়ে নিজেই খেটেছে। অল্প যা একটু খবরদারি করেছে তা অন্য দুএক জনের ওপর। আমাকে নিয়ে সত্যি বলতে কি একবারেই মাথা ঘামায়নি ও।

রবি-র সাথে মলে দেখা হওয়ার চার পাঁচদিন পর একদিন হঠাৎ রবি-র চেম্বার থেকে একটা ফোন কল পেলাম আমার ডেস্কে। রবি-র ফোন।

ও বললো
– “রাজীব তোমার দুয়েকজন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে একটা ব্যাপার জানতে পারলাম। ওদের কিছু অভিযোগ আছে তোমার সার্ভিস নিয়ে”।

- “কি বলছো তুমি রবি? আমার ক্লায়েন্ট আর আমি জানবো-না তাদের অভিযোগ আছে”?

- “হ্যাঁ ব্যাপারটাতো সেরকমই মনে হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন ক্লায়েন্টের অভিযোগ বেশ গুরুতর। সে বলছে তুমি নাকি ওদের কাছে মার্কেটিং করার সময় যেসব সার্ভিস দেবে বলেছিলে, কনট্র্যাক্ট পেপারে তার উল্লেখ না করেই ওদের কাছে সাইন করতে পাঠিয়েছো”।

- “হতেই পারেনা। আমি এরকম ভুল কোনোদিন করিনি রবি। ক্লায়েন্টের নাম বলতো কে? আমি এখুনি ফোন করে কথা বলে ব্যাপারটা দেখে নিচ্ছি। এটা নিশ্চই ওদেরই ভুল”।

- “তার দরকার নেই রাজীব। আমি ব্যাপারটা সালটে নিয়েছি। তবে এবার থেকে তোমার ক্লায়েন্টদের কনট্র্যাক্ট পেপার পাঠাবার আগে আমার কাছে একবার পাঠাবে, আমি আগে পড়ে দেখবো”।

- “কিন্তু রবি”?

- “দেখো তোমার কাজের ব্যাপারে নাক গলাবার কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। কিন্তু তুমি কনট্র্যাক্ট পেপারে কোনো ভুল করলে তার থেকে কম্পানির বদনাম হবে তাই আমাকে দেখতেই হবে ওগুলো”।

- “কিন্তু রবি একটা জিনিস বুঝতে পারলামনা আমার ওই ক্লায়েন্ট আমাকে না ফোন করে তোমাকে ফোন করলো কেন”?

- “ওরা রিশেপসানে ফোন করে তোমাকে মেসেজ দিতে বলেছিল, কারণ
তুমি অফিসের বাইরে ছিলে আর তোমার মোবাইল আনরিচেবল ছিল। আমি তখন রিশেপসানে প্রেজেন্ট ছিলাম বলে কোনোভাবে ব্যাপারটা জানতে পারি”।

আমি আর তর্ক বারালাম না কারন আমি বুঝতে পারলাম রবি আমার কনট্র্যাক্ট পেপারগুলো দেখার ব্যাপারে ওর ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে।

- “থাঙ্কস রবি আমাকে হেল্প করার জন্য”।

এই বলে রবি-র ফোন ছাড়লাম আমি । প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম তখন। আমার ক্লায়েন্টরা আমার সার্ভিস নিয়ে কমপ্লেন করেছে এটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারছিলামনা। আমার সাথে আমার ক্লায়েন্টদের সম্পর্ক চিরকালই মধুর থাকে।

ক্লায়েন্ট তো দুর, অফিসের কারোর সাথেই আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই। ক্লায়েন্টদের সাথে অসম্ভব ভাল রিলেসনই আমার সবচেয়ে বড় প্লাসপয়েন্ট। তাহলে কেন এমন হলো?

রবি কিছুতেই আমাকে সেই ক্লায়েন্টের নাম বললোনা কারণ ও বোধহয় ভাবলো ক্লায়েন্টের নাম বললে আমি ভবিষ্যতে
তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে শোধ তুলতে পারি। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হল রবি এবার থেকে সব ব্যাপারে আমার কাজ সন্দেহের চোখে দেখবে, আর আমার প্রত্যেকটি ব্যাপারে নাক গলাবে।

সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর চান করে একটু ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরচ্ছি এমন সময় মনীষা আমাকে জিজ্ঞেস করলো
– “কিগো অফিসে কিছু ঝামেলা হয়েছে”?

মনীষা সোফায় বসে টুপুর মানে আমার ছোটো মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বুকের দুধ দিচ্ছিল।

আমি ওর দিকে ফিরে বললাম
– “হ্যাঁ আজকের দিনটা আমার একটু খারাপ গেছে। কিন্তু তুমি কি করে জানলে”?

- “তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। তুমি অফিস থেকে ফেরা ইস্তক দেখছি তোমার মুখটা রাগে থমথম করছে”।

আমি মনীষা-কে খুলে বললাম কি ঘটনা ঘটেছে। কিভাবে রবি রিশেপসানে আমার ক্লায়েন্টদের দেওয়া মেসেজকে কমপ্লেন হিসেবে ধরে নিয়ে আমাকে না জানিয়ে নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।

- “তারপর কি হলো? রবি কমপ্লেন গুলো সামলালো কি করে”?

- “বললাম-না ওগুলো ঠিক কমপ্লেন ছিলোনা। ওরা ওদের সাথে আমাদের কনট্রাক্টের কতগুলো বিষয়ে জাস্ট একটা এক্সপ্ল্যানেসান চেয়েছিল। আমি সেই সময় অফিসে ছিলামনা আর আমার মোবাইল কোন ভাবে আনরিচেবল হয়ে গিয়েছিল। ক্লায়েন্টরা আমাকে ফোনে না পেয়ে রিসেপসানে ফোন করে আমার জন্য মেসেজ দেয়।

রবি সেই সময় দুর্ভাগ্যবশত কোনোভাবে ওখানে উপস্থিত হয়। ও মেসেজ গুলোকে কমপ্লেন হিসেবে ধরে নিয়ে আমাকে কোন ব্যাবস্থা নেবার সুযোগ না দিয়ে, আমাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে, নিজেই ওদের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা সালটেছে। আমি তো বুঝতেই পারছিনা আমার কিভাবে এমন ভুল হতে পারে। কনট্রাক্ট পেপার পাঠানোর আগে আমি বারবার পেপারটা মিলিয়ে দেখে নিই যে কোনো ভুল হয়েছে কিনা। এই ঘটনার পর রবি এখন চাইছে যে আমি আমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার ক্লায়েন্টকে পাঠাবার আগে একবার ওকে দিয়ে চেক করিয়ে নিই”।

- “দেখো রাজীব তোমার ভুল হওয়া তো অসম্ভব কিছু নয়, তুমিও তো মানুষ। আর মানুষ মাত্রেই ভুল হতে পারে”।

- “হ্যাঁ ভুল আমার হতে পারে। কিন্তু এর আগে এরকম ভুলতো আমি আগে কখনো করিনি। আর এক সপ্তাহে পরপর দু-দুটো এরকম সিলি মিস্টেক আমি কিভাবে করতে পারি? না আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছেনা ব্যাপারটা”।

- “দেখো দুটো ভুল হওয়াও তো অসম্ভব কিছু নয়। আমার মনে হচ্ছে মিস্টার রায় তোমার কনট্রাক্ট পেপারগুলো কাউকে পাঠানোর আগে নিজে চেক করায় তোমার ভালই হবে। ও ঠিকই ডিশিসান নিয়েছে”।

মনীষার মুখে এই কথা শুনে ফট করে মেজাজটা গরম হয়ে গেল আমার।

- “কার হয়ে কথা বলছো তুমি মনীষা? তুমি কি আমার বউ না রবি-র বউ”?

- “অবশ্যই তোমার হয়ে বলছি রাজীব। কিন্তু আমি মনে করি যে তোমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার ক্লায়েন্টদের কাছে পাঠানোর আগে মিস্টার রায় যদি একবার চেক করে নেয় তাহলে তাতে তোমার কোনো অসুবিধে থাকার কথা নয়। মিস্টার রায়তো ওর কম্পানির ভাল চাইবেই রাজীব। ওতো চাইবেই যে তুমি অজান্তেও যেন কোনো ভুল না করে ফেলো”।

- “আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি তোমার কথায় মনীষা। এত বছর ধরে তো এই সব ক্লায়েন্টদের আমি একাই সামলেছি। আমার তো কখনো কোনো ভুল হয়নি। তাহলে তুমি কেন এখন ভাবছো যে আমার রবি-র সাহায্যের দরকার আছে?”

- “ওঃ রাজীব তুমি মাঝে মাঝে এতো ছেলেমানুষী করোনা যে কি বলবো। আমি তো জানি আমার স্বামীটা সেলস একজিকিউটিভ হিসেবে অফিসে সবার থেকে সেরা। আমি শুধু মনে করছি তোমার মিস্টার রায়ের কথা মেনে নেওয়াই উচিত কারন আর কিছুনা হোক এতে করে মিস্টার রায় তোমার ওপর অজথা চটে যাবেন না বা তোমার বাকি কাজে নাক গলাবেন না”।

মনীষা আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট না করায় আমি ভেতর ভেতর ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে পরলেও ওর কথার যুক্তি আমি বুঝতে পেরেছিলাম। স্পষ্টতই মনীষা ব্যাপারটা আমার থেকে অনেক নিরপেক্ষভাবে দেখছিলো। ওর যুক্তিও অগ্রাহ্য করার মত ছিলোনা।

হয়তো ধনী সুপুরুষ এই রবি-কে আমি মন থেকে খুব একটা পছন্দ করতাম-না বলেই এই ব্যাপারটায় একটু বেশিই তেতেছিলাম। তবে একটা কথা মনে হল, সেদিন মলে রবি-র সাথে দেখা হওয়ার পর রবির ভদ্র এবং চৌখস কথাবাত্রা তে মনীষা হয়তো ভেতর ভেতর বেশ অভিভূত হয়ে পরেছে। তাই ও হয়তো ভাবছে কম্পানির মালিকের ছেলে, কত স্মার্ট, ও কি না বুঝেই এই ডিসিশন নিয়েছে নাকি?

নিশ্চই রাজীবের কোনো নেগ্লিজেন্সি দেখেছে ও, তাই এরকম বলেছে। এই কথাটা মনে হওয়ার পর থেকেই সেদিন বুকের ভেতরটা কি রকম যেন জ্বালা জ্বালা করতে শুরু করেছিল আমার।

পরের প্রায় একমাস আমি রবি-র কথা মতন আমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার যেগুলো ওই মাসে বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের কাছে যাবার ছিল সেগুলোকে পাঠাবার আগে রবি-র কাছে ফাইনাল চেক করতে পাঠালাম । যথারিতি কোনো সমস্যা ছিলনা ওগুলোতে। মাসের শেষ নাগাদ আবার রবি আমাকে ওর চেম্বারে ডাকলো ।

- “রাজীব আমি এখন তোমার কাজে মোটামুটি ভাবে খুশি। তুমি যেভাবে তোমার কাজ করছো আর তোমার ক্লায়েন্টদের সামলাচ্ছ তাতে আমার আর অসন্তুষ্ট হবার কোনো কারণ নেই। তোমার ক্লায়েন্টদের নিয়ে যা সমস্যা ছিল মনে হচ্ছে সেগুলো মিটে গেছে। এখন আর কারুর কোনো সমস্যা নেই”।

- “একটা কথা বলি রবি কিছু মনে করোনা, আমার কিন্তু কোনদিনই মনে হয়নি যে আমার ক্লায়েন্টদের সত্যি সত্যি মেজর কোনো অভিযোগ বা সমস্যা ছিল”।

আমার কথা শুনে প্রচণ্ড একটা বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো রবি-র মুখে । আমার মনে হল এই ধরনের কথা বোধহয় না বললেই ভাল হত।

- “দেখো রাজীব আমি তোমাকে আমার চেম্বারে ডেকেছি এই বলতে যে তোমাকে আর তোমার সমস্ত কনট্রাক্ট পেপার পাঠাবার আগে আমার কাছে পাঠানোর দরকার নেই। কিন্তু আমি চাই এখন থেকে তুমি যে সমস্ত নতুন ক্লায়েন্টদের নিয়ে কাজ করছো তাদের ব্যাপারে আমাকে ইনভল্ব কর”।

- “জানতে পারি কেন”?

- “দেখো আমরা ম্যানেজমেন্ট থেকে ঠিক করেছি আমাদের বিজনেসের ওপর আমাদের মানে ম্যানেজমেন্টের আরো কন্ট্রোল থাকা উচিত । তাই এখন থেকে আমি আমাদের অফিসের সমস্ত বড় বড় কনট্রাক্টের ব্যাপারে নিজেকে ইনভল্ব রাখতে চাই । আমাকে দেখতে হবে যে আমাদের সমস্ত ক্লায়েন্টরা আমাদের কাছ থেকে একদম সঠিক সার্ভিস পাচ্ছে কিনা”?

- “হ্যাঁ কিন্তু অফিসে তো আমার মত আরো সেলস ম্যানেজার আছে শুধু আমাকেই বা আতস কঁচের তলায় ফেলা হচ্ছে কেন”?

- “রাজীব শুধু তুমি নও, আমি সমস্ত সেলস ম্যানেজারদের কাজই এখন থেকে মনিটরিং করবো। তোমার এতে চিন্তিত হবার কোনো কারণ নেই। এতে করে আমার নিজের কাজই শুধু বাড়বে তোমার কোনো অসুবিধে হবেনা। আর মনে কোরোনা আমি তোমার কাজে নাক গলাতে চাইছি। এটা একটা ম্যানেজমেন্ট ডিসিশান”।

রাতে বাড়ি ফেরার পর অনেকটা আগের দিনের মতই মনীষা দরজা খুলে আমার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো যে আবার অফিসে কিছু একটা ঘটেছে। ফলস্বরূপ আমাকে সব ওকে খুলে বলতে হল যে রবি আমাকে ওর চেম্বারে ডেকে কি কি বলেছে আর কি কারণে আমার মাথা এখোনো রাগে গন গন করছে ।

- “রাজীব তুমি কিন্তু বড় বেশি টেনশন নিচ্ছ ব্যাপারটায়। অফিস তো আর বাড়ি নয়, সেখানে অনেক সময়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। সেটা মেনে নেওয়াই ভাল। তবে তুমি যদি রাগ না কর তাহলে বলি আমার কিন্তু মনে হয় মিস্টার রায় তোমার ওপর ছড়ি ঘোরাতে চাইছেন-না, উনি তোমার কাজে তোমাকে সাহায্যই করতে চাইছেন।"

মনীষা সম্পূর্ণ ঠিক কথা বলেছে বুঝতে পারলেও আমি কিন্তু মনে মনে বেশ একটু অসন্তুষ্টই হলাম। আমি ভেবেছিলাম অন্য সব বাপারের মত মনীষা আমাকে সাপোর্ট করবে, আমার পাশে দাঁড়াবে, বলবে হ্যাঁ রবি সত্যিই বাড়াবাড়ি করছে ব্যাপারটা নিয়ে।

আশ্চর্যজনক ভাবে রবির সব কাজেই আজকাল ও রবি-কে সাপোর্ট করা শুরু করেছে। এইটা মাথায় আসতেই রাগ আরো বেড়ে গেল আমার। মনীষার উচিত ছিল আমার সাথে আজ এগ্রি করা যে আমার মত যোগ্য সিনিয়ার এমপ্লয়ীকে একটু স্বাধীনভাবেই আজ করতে দেওয়া উচিত, ও এইভাবে আমার সব কাজে নাক গলালে হিতে বিপরীত হয়ে যখন কম্পানির সেলস ফল করবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।

মনীষা
এর আগে সব ব্যাপারে আমাকে সাপোর্ট করলেও আজ কেন এমন করছে বুঝলামনা ।

এর প্রায় দুমাস পর এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে আমার মনে হল কিছু একটা ব্যাপার নিশ্চই আছে। আমি আর মনীষা এক রাতে আমার এক অফিস কলিগের বাড়িতে তার একটা বার্থডে পার্টি অ্যাটেন্ড করতে গেছিলাম।

এমনিতে টুপুর হবার পর মনীষা-কে পার্টিতে যাওয়া একরকম প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। যদিও আমরা চাইলে আমার বড় মেয়ে টাপুরের মত আমরা টুপুরকেও আমাদের দাদা বউদির কাছে রেখে বেরতে পারতাম।

ওঁদের ফ্ল্যাটটা আমাদের ফ্ল্যাটের একবারে তলায় ।আমরা দুই ভাই একসাথেই ফ্ল্যাট কিনেছিলাম ।দাদা বউদির কোন সন্তান নেই। টাপুরতো একরকম ওদের কাছেই মানুষ হচ্ছে। লোকে দেখে ভাবে টাপুর আমার নয় ওদেরই সন্তান।টাপুরকে পেয়ে ওরা যেন নতুন করে বাঁচার রসদ পেয়ে গেছে। আর টুপুর হবার পরতো ওদের আনন্দ প্রায় দিগুন হয়ে গেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই দুজনকে নিয়েই সময় কাটে ওদের।

কিন্তু দাদা সবে রিটায়ার করেছেন আর বউদিরও বয়েস হচ্ছে। পাঁচ বছরের টাপুরকে সামলানো আর দেড় বছরের বাচ্চা সামলানো তো আর এক কথা নয়। তাই আমরা একটা দিন রাতের আয়া খুঁজছিলাম।

দাদা বউদি বলেছিলেন কি দরকার খরচ বাড়ানোর আমরা তো আছি। কিন্তু আমি মনীষাকে বললাম দেখো একটা দিন রাতের আয়া পেলে তোমাদের সকলেরই একটু রিলিফ হয়ে যাবে।

অনেক খোঁজার পর দুদিন আগে একটা দিন রাতের আয়া পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ভদ্রমহিলার বয়েস প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবে কিন্তু খুব কাজের আর বাচ্চা সামলাতে একবারে এক্সপার্ট। ওদের হাতে টাপুর টুপুর কে ছেড়ে অনেক দিন পর পার্টিটা অ্যাটেন্ড করতে পেরেছিলাম আমরা।

যাই হোক সেদিন পার্টিতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গিয়েছিল। আমার পরের দিন অফিস ছিল বলে আমি একটু তাড়াতাড়ি কেটে পরার তাল করছিলাম। হাতে একটা হার্ড ড্রিংকের গ্লাস নিয়ে এদিক ওদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছিলাম পার্টির মধ্যে। ভাবছিলাম ভিড় একটু পাতলা হলেই টুক করে সরে পড়তে হবে। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ভিড় একটু পাতলা হতেই ভাবলাম মনীষাকে গিয়ে বলি চলো এবার আস্তে আস্তে সরে পরি। মনীষাকে প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিলাম-না।

তারপর দেখলাম ও গার্ডেনে আমার এক অফিস কলিগের বউ নিশার সাথে গল্প করছে। আমি সোজা ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। গার্ডেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক একটা ছোটো ছোটো জটলাতে জোর আড্ডা আর পরনিন্দা আর পরচর্চা চলছে।

পুরো গার্ডেনটাই আলো দিয়ে ভীষণ সুন্দর করে সাজানো। ভিড় একটু পাতলা হয়ে গেলেও এখনো অনেক লোক ছিল পার্টিতে। মনীষা আর নিশা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো।

ওদের পেছনটা আমার দিকে থাকায় ওরা আমাকে দেখতে পায়নি। তাছাড়া ওরা এত মগ্ন হয়ে গল্প আর হাঁসাহাসি করে যাচ্ছিল যে চারপাশে কি হচ্ছে সেই ব্যাপারে ওদের কোন হুঁস ছিলনা। কি এত গল্প করছে ওরা?

এমনিতে নিশা মুখে প্রকাশ না করলেও মনীষাকে মনে মনে বেশ হিংসা করে। কারণ অনেকটা বিদ্যা বালানের মত দেখতে সুন্দরী আমার বউকে, ওর বর মানে আমার কলিগ খুব পছন্দ করে। মনীষার রান্না, ওর ঘর সাজানো, সব কিছুই তার খুব পছন্দ। মনীষাকে দেখতে পেলেই ও মনীষার সাথে খুনসুটি শুরু করে। আজও করেছে।

নিশাও দেখতে খুব সুন্দরী। কিন্তু সুন্দরী হলেও আমি কিন্তু ওকে একদম পছন্দ করিনা। এর কারণ ওর স্বভাব চরিত্র খুব একটা ভাল নয় আর ও যা মুখে আসে তাই বলে দেয়। নিশার মুখের কোন বাঁধন নেই। এমন কি গুরু লঘু কোন জ্ঞানও নেই। ওর কথা বলার স্টাইল অনেকটা ষোল সতেরো বছরের ডেঁপো ছেলেদের মতন।

আমি মনীষাকে ডাকতে যাব এমন সময় ওদের একটা কথা আমার কানে এল। কথাটা শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম। এসব কি বলছে ওরা? ওদের ডিস্টার্ব না করে টুক করে ওদের পেছনে একটা ছোট জটলার পাশে এমন ভাবে দাঁড়ালাম যাতে ওদের সব কথা শুনতে পেলেও ওরা আমাকে দেখতে না পারে।

নিশা বললো
- “বুঝতেই পারছি লোকটাকে তোর খুব মনে ধরেছে”।

এই বলে নিশা মনীষার হাতে ছোটো করে একটা খিমচি কেটে দিল।
- “ধুত বাজে বকিসনা তো। ওফ সত্যি তোকে কোনো কথা বলা উচিত নয়। বললেই শুরু হয়ে যাবি”।

কোন লোকটার কথা বলছে ওরা? আমি একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলামনা।

- “মিথ্যে বলিসনা তুই মনীষা, তুই যখন ওর কথা বলছিলি তখন তোর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তুই লোকটার প্রেমে পরেছিস”।

- “কি যে আজে বাজে কথা বলিসনা তুই। জানিস রাজীব ওকে একদম দেখতে পারেনা”।

- “আমি রাজীব কে দোষ দিতে পারিনা। বিশেষ করে আমার বউ যদি আমার বসের প্রেমে পড়তো তাহলে আমিও তাকে দুচোখে দেখতে পারতামনা”।

- “আবার বাজে কথা বলছিস? আমি মোটেই মিস্টার রায়ের প্রেমে পরিনি”।

- “পরেছিস বাবা পরেছিস। ওর মত সেক্সি আর হ্যান্ডসাম দেখতে পুরুষের প্রেমে কেই বা না পরে? তোর কোনো দোষ নেই এতে। এটা স্বাভাবিক”।

- “তুই বড্ড বাজে ইয়ার্কি করিস নিশা। প্রায় আট বছর হয়ে গেল আমার আর রাজীবের বিয়ের আর আমি এখন প্রেমে পরবো। আমি কি পাগল”?

- “কেন বিয়ে করলে প্রেমে পরা যায়না বুঝি। প্রেমে পরবি, লাগাবি, বুকের দুধ খাওয়াবি, সব করতে পারবি। শুধু তোর বর না জানলেই হলো। হিহিহিহি”

- “ধ্যাত বাজে বকিসনা তো। তুই গিয়ে দুধ খাওয়াগে যা। যত সব নোংরা নোংরা কথা তোর”।

- “কেন এতে নোংরার কি আছে? আমিও খাওয়াই তো। আমার বুকের দুধ তো বাড়ির সকলেই খায়। বাচ্চা খায়, বাচ্ছার বাবা খায়, বাচ্ছার কাকা খায় । আমার সাথে আমার দেওরের ইন্টুমিন্টুর ব্যাপারটাতো তুই জানিস। যাকে বলে একবারে ফুল ফ্যামিলি নরিসমেন্ট এর দায়িত্ব আমার ওপর হি হি হি”।

- “ইশ নিশা তুইনা। আমি শুধু বললাম মিস্টার রায় খুব স্মার্ট, ওঁকে দেখতে খুব হ্যান্ডসাম আর সেক্সি। আর তুই কি কথা থেকে কি কথা শুরু করলি। নাঃ আজ আর তোর সঙ্গে মস্করা করে আমার কাজ নেই। চল অনেক রাত হয়েছে, তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে, কাল রাজীবের অফিস আছে”।

আমি চট করে সরে পরলাম ওখান থেকে। রাতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আমি মনে মনে ভাবছিলাম কি আশ্চর্য এই মেয়ে মানুষের মন। সেদিন মলে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেছে রবি আমাদের সঙ্গে, আর এর মধ্যেই মনীষার মত কনজারভেটিভ মেয়ের ওকে শুধু হান্ডসাম আর সেক্সিই নয় ভীষণ স্মার্টও মনে হল।

“স্ট্রেন্জ”, ভাবলাম আমি।

তারপরেই গত কয়েকদিনের ঘটনার কথা এক এক করে মনে পরতে থাকলো আমার। মনে পরলো কিভাবে মনীষা গত কয়েক মাস ধরেই সব ব্যাপারেই রবিকে সমর্থন করছিল। মনে পরলো সেদিন মলে মনীষা কি ভাবে একদিন রবিকে আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করতে বায়না শুরু করেছিল। এসব ভাবতেই বুকের ভেতরটা সেদিনকার মত কেমন যেন জ্বালা জ্বালা করতে শুরু করলো আমার।

পরের দিন অফিসে আর গত রাতের ঘটনা আমার মনে ছিলনা, কারণ অফিসে একটা সিরিয়াস প্রবলেম এসে উপস্থিত হয়েছিল। আমার একটা কাস্টমার আমাকে কমপ্লেন করলো আমি নাকি ওকে পাঠানো আমার কন্ট্র্যাক্ট পেপারে একটা ইমপর্টেন্ট ইস্যু বাদ দিয়েছি যেটা নাকি মার্কেটিং করার সময় ওদের সাথে আমি ডিসকাশ এবং নেগসিয়েট করেছিলাম।

ওরা বললো আমি নাকি ওদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছি। শেষে অনেক বুঝিয়ে ওদের সামলালাম আর ওদের কন্ট্র্যাক্ট পেপারটা নতুন করে ওদের মনোমতো করে লিখে দিলাম। ঝামেলাটা মেটার পর ভাবলাম এটা রবি কে আমার আগেই জানানো দরকার কারণ রবি পরে কোনোভাবে জেনে গেলে আবার আমাকে চেম্বারে ডেকে আলতু ফালতু বকবে। তাই আমি নিজেই রবির চেম্বারে গিয়ে ওকে বললাম ব্যাপারটা।

- “এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা রাজীব। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে কন্ট্র্যাক্ট পেপারে এমন মারাত্বক ভুল আমরা আর না করি যাতে করে ক্লায়েন্ট মনে না করে যে তাদের কে ঠকানো হচ্ছে। এতে করে আমাদের ক্লায়েন্টবেসই শুধু নয় মার্কেটে আমাদের গুডউইলও নস্ট হয়ে যাবে। এই ভুল না শোধরালে তোমাকে কিন্তু এবার বেশ বিপদে পরতে হবে রাজীব। আমি অবশ্য এবারের মত ব্যাপারটা চেপে যাব কিন্তু তুমি সিনিয়র এমপ্লয়ী, দেখো এরকম ভুল যেন আর না হয়। মনে রেখো এরকম ভুল হতে থাকলে শুধু তুমিই নয় আমিও তোমার সাথে ফেঁসে যাব”।

- “ঠিক আছে রবি আমার মনে থাকবে”।

- “দেখো রাজীব আমি আর চাইনা তোমার কন্ট্র্যাক্ট পেপারগুলো পড়ে দেখতে, কারণ তুমি অনেক সিনিয়র এমপ্লয়ী, তবে আমি চাই এবার থেকে তোমার সব ক্লায়েন্ট নেগসিয়েশানে তুমি আমাকে ইনভল্ব করবে”।

রবির চেম্বার থেকে বেরিয়ে মনটা খিঁচরে গেল আমার। যদিও এবার রবির কথা শুনে মনে হল ও আমার দিকেই আছে তবুও এবার থেকে আমার সব ক্লায়েন্ট নেগসিয়েশানেই ওকে ইনভল্ব করতে হবে শুনে একদম খুশি হতে পারলামনা আমি।

সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে সকালের ঘটনার কথা আর রবি আমাকে কি বললো সবই মনীষাকে খুলে বললাম ।

বললাম, “আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিনা যে ক্লায়েন্ট আমাকে যে ইস্যুটা বাদ দেয়ার কথা বলছে সেটা আমি কন্ট্র্যাক্ট পেপারে মেনশান করতে ভুলে গেছি”।

মনীষা টাপুর কে বিছানায় বসে পড়াচ্ছিল, ওকে পড়ানো থামিয়ে ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো
– “তুমি বার বার এতো নিশ্চিত হচ্ছো কি করে যে তুমি কোনো ভুল করনি”?

খট করে কথাটা কানে বাজলো আমার। তাহলে কি মনীষা ভাবতে শুরু করেছে যে আমার পারফরম্যান্স আর আগের মত নেই। ওর এক্সপ্রেসান দেখেতো মনে হল আমাকে আর ও আগের মত অফিসের অন্য সব মার্কেটিং একজিকিউটিভদের থেকে সেরা বলে মনে করেনা।

- “আমি ঠিক জানিনা কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস মনীষা আমাকে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে অফিসে নিচু দেখানোর চেষ্টা করছে”।

- “কি আবোল তাবোল বকছো রাজীব। তুমি নিজেই একটু আগে বললে কন্ট্র্যাক্ট পেপার তুমি নিজেই রেডি করেছো আর মেল করে দিয়েছো। তাহলে বলো কন্ট্র্যাক্ট পেপার অন্য কারোর হাতে পরবে কি করে? আর যদি পরেও তাহলে তোমার কন্ট্র্যাক্ট পেপার পালটে সে তোমার মেল আইডি থেকে পাঠাবেই বা কি করে। তোমার মেল আইডি পাসওয়ার্ড তো তুমি না বললে আর কারোরই জানার কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল পাঠিয়ে তার লাভটাই বা কি হবে”?

আমি মনীষার যুক্তি বুঝলাম, অকাট্য যুক্তি, এর কোনো উপযুক্ত উত্তর আমার কাছে ছিলনা।

- “হুম সেটা অবশ্য ঠিক বলেছ। তাহলে হয়তো সত্যিই আমি কোনো ভুল করেছি। ব্যাপারটা আমার এখন ঠিক মাথায় ঢুকছেনা”।

মনীষাকে বললাম বটে আমার ভুল হতে পারে কিন্তু আমি মনে মনে কিছুতেই ব্যাপারটা মানতে পারছিলাম না।

- “আর তুমি যদি সত্যিই ভুল করে থাক তাহলেই বা কি? ভুল তো মানুষ মাত্রেরই হয়। তোমাকে শুধু চেষ্টা করতে হবে যেন এরকম ভুল আর না হয়। তুমি চিন্তা করে দেখো এবার থেকে তুমি কি স্টেপ নিতে পারো যাতে করে তোমার আর কোনো ভুল কখনো না হয়। একটা কাজ করতে পারো। তুমি মিস্টার রায় কে বলতে পারো যাতে কোথাও পাঠানোর আগে আবার ও তোমার কন্ট্র্যাক্ট পেপারগুলো চেক করা শুরু করে”।

মনীষার কথা শুনে চড়াক করে মাথায় রক্ত উঠে গেল আমার।

- “না, আমি কোনো ভুল করিনি। আমার মনে হচ্ছে সত্যিই কেউ উঠে পরে লেগেছে আমাকে ধংস করার জন্য”।

- “কি পাগলের মত বলছো রাজীব। আমার মনে হচ্ছে তোমার কোনো কারণে অসম্ভব স্ট্রেস পরছে। চলো কোথাও একটা বেরিয়ে আসি। আমার মনে হচ্ছে তোমার এখন একটা চেঞ্জ দরকার”।

- “হ্যাঁ স্ট্রেস পরছে আমার ঠিকই কিন্তু এই প্রবলেমটা তার জন্য হচ্ছেনা”।

- “তুমি তো আমার ভয় ধরিয়ে দিচ্ছ রাজীব। তুমি কি কোন সাইকোলজিস্ট কে দেখাবে”?

আর ধৈর্য্য রাখতে পারলামনা আমি। বলে ফেললাম মনের কথা।

- “তুমি এই কথা বলছো মনীষা, আমার তো চিন্তা হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যবে থেকে এই ঘটনাগুলো ঘটছে আমি তো একবারও দেখছিনা যে তুমি আমাকে সাপোর্ট করছো”।

- “এই সব আজে বাজে কথার কোনো মানে আছে রাজীব। আমি তোমার বউ আর আমি সবসময়ই তোমার দিকে। আমি শুধু তোমাকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে চাইছি। ছাড়ো এসব কথা, আমি শুতে চললাম”।

বুঝলাম প্রচণ্ড রেগে গেছে ও আর আলোচনাটা-র আজকের মত এইখানেই সমাপ্তি হল। মনীষা শুতে যাবার পর আমি একটা স্কচের গ্লাস নিয়ে বসার ঘরে চলে গেলাম। ঘটনাটা ঠাণ্ডা মাথায় বোঝার চেষ্টা করলাম আমি। আমার সাথে মনীষার এই খটাখটিটা কেন হল?

হঠাৎ করে ওর ওপর এত রেগে কেন গেলাম আমি? তাহলে কি আমার ইগোর জন্য এটা হল? আমি কি মেনে নিতে পারলাম না যে মনীষা আমার বউ হয়েও আমার পক্ষ নিচ্ছেনা? আমি কি ভেবেছিলাম যে মনীষা ভাবছে আমার ক্ষমতায় কোন খামতি আছে বলে বার বার আমি একই ভুল করছি? এমন সময় মনে পরে গেল সেদিনের পার্টিতে নিশা আর মনীষার রবি কে নিয়ে আলোচনা।

মনীষার মনে হয়েছে রবি খুব স্মার্ট, গুডলুকিং আর সেক্সি। বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠলো আমার যখন মনে হল সেদিনের পর থেকে মনীষা কি ভাবে বার বার আমার সাইড না নিয়ে রবির সাইড নিচ্ছে। ওকে সাপোর্ট করছে। মনের দুঃখে অনেকটা মদ খেয়ে ফেলে সোফার ওপরই সেই রাতে শুয়ে পরলাম আমি।

পরের দিন অফিসে পৌঁছতেই আমাদের রিসেপশনিস্ট আমাকে জানালো যে রবি আমার জন্য কনফারেন্স রুমে অপেক্ষা করছে। ওর সাথে দুজন ভিসিটরও রয়েছে।

রিসেপশনিস্ট মেয়েটিকে থ্যাঙ্কস জানিয়ে তাড়াতাড়ি কনফারেন্স রুমের দিকে হাঁটা দিলাম আমি। কনফারেন্স রুমের ভেতরে একটি মহিলা ও একটি পুরুষের সাথে বসে কথা বলছিল রবি। আমাকে দেখেই ওরা সকলে উঠে দাঁড়ালো আর আমাকে গ্রীট করলো। পুরুষটি ছিলেন মিস্টার শর্মা, আমার পুরনো ক্লায়েন্ট।

- “রাজীব তোমার ক্লায়েন্ট শর্মা প্রোডাক্টের সি-ই-ও মিস্টার শর্মা আমাকে ফোন করেছিলেন একটা বড় প্রজেক্টের ব্যাপারে। আমি লাস্ট দুমাস ওই প্রোজেক্টটা নিয়ে খুব খেটেছিলাম। উনি আজ সঙ্গে এনেছেন ওনার স্ত্রী এবং ওনার কম্পানির পার্টনার তনুজা শর্মা কে। ওঁরা আমাদের সাথে একটা বিরাট আস্যাইনমেন্টের ব্যাপার পার্টনারশিপে যেতে চান।"

আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম কি ব্যাপারে আজ ওরা এসেছেন। আমি গত এক বছর ধরে প্রায় প্রতি মাসেই মিস্টার শর্মার সাথে যোগাযোগ রাখছিলাম। এই এক বছরে আমারা প্রায় বন্ধুর মতন হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম যে দু-একমাসের মধ্যেই আমি ওঁকে কোনো না কোনো একটা প্রজেক্টের ব্যাপারে রাজী করিয়ে নেব। আমার অবাক লাগছে এই ভেবে যে রবি মাত্র দুমাসেই ওনাকে রবির কথা মত একটা বিরাট আস্যাইনমেন্টের ব্যাপারে কি করে রাজী করিয়ে নিল।

- “রাজীব তোমাকে দেখে ভাল লাগলো, কেমন আছো?", মিস্টার শর্মা আমার দিকে হাঁসি মুখে তাকিয়ে বললেন।

- “আপনাকে আমাদের অফিসে দেখে আমারও খুব ভাল লাগলো স্যার। আমি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি রবির সাথে এত বড় একটা আস্যাইনমেন্টের ব্যাপারে রাজী হওয়ার জন্য”।

- “হাই রাজীব আমি তনুজা", মিসেস শর্মা বলে উঠলো।

ভদ্রমহিলা বেশ সুন্দরী। উনি একটা স্লিভলেস ব্লাউজ আর তার সাথে একটা দারুন সুন্দর প্রায় ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছিলেন। ভদ্রমহিলার মাই দুটি বিশাল। ওগুলো যেন ব্লাউজ ছিঁড়ে বেরিয়ে পড়তে চাইছে। ওঁর চোখে খুব সুন্দর একটা রিমলেস চশমা রয়েছে। ওনার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে গেলে ওনার মাই দুটোর দিকে বার বার চোখ চলে যায়। ওঁর ট্রান্সপারেন্ট শাড়ির ভেতর দিয়ে ওনার নরম পেট আর অত্যন্ত সুগভীর একটি নাভি ছিদ্র চোখে পরে। ভদ্রমহিলার চোখ দুটি ভীষণ উজ্জ্বল আর মুখটিও বেশ মিষ্টি। সব মিলিয়ে যাকে বলে একটা দারুন প্যাকেজ।

- “তুমি কি অনেক দিন কাজ করছো রাজীব, রবির সাথে”?

- “না না মাত্র কয়েক মাস”।

- “ভালো, আচ্ছা তুমি আর আমার হাজব্যান্ড এখানে বসে সমস্ত টেকনিকাল দিক গুলো দেখে নাও, আমি ততক্ষণ রবির চেম্বারে বসে কনট্র্যাক্ট পেপারের একটা বেসিক স্ট্রাকচার তৈরি করে নিই। চলো রবি তোমার চেম্বারে যাওয়া যাক”।

এই বলে মিসেস শর্মা রবির সাথে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

- “রাজীব তোমাকে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আমার মনে হয় তোমাকে আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করতে পারি। তোমার সাথে গত এক বছরে কয়েকটা ছোটখাট ডিল তো আমি করেছি আর সব সময়ই দারুন সার্ভিস পেয়েছি তোমার কাছ থেকে”।

- “আমাকে বিশ্বাস করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিস্টার শর্মা”।

- “রাজীব, আসলে আমি এই বছরেই আমার কম্পিটিটর আরো দুটো কোম্পানি কিনছি। ওগুলো কেনার পরে আমার প্রোডাকসান এখনকার থেকে প্রায় তিনগুন হয়ে যাবে। আমার পার্টনার এবং আমার স্ত্রী তনুজার নিউইয়র্কের একটা কনফারেন্সে তোমাদের মিস্টার রবির সাথে পরিচয় হয়। ওরা দু দিনেই খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়। তনুজা তো ওর সার্ভিস প্ল্যান শুনে খুব ইমপ্রেশ হয়েছে। ওই আমাকে জোর করলো তোমাদের কোম্পানি-কে আমাদের প্রোডাক্ট গুলোর সার্ভিসের ব্যাপারে একবারে পাঁচ বছরের কনট্র্যাক্ট দিয়ে দিতে”।

আমি মনে মনে ভাবলাম বাপরে একবারে পাঁচ বছর তাহলে তো বিশাল কনট্র্যাক্ট হবে এটা। ঠিক কত টাকার কনট্র্যাক্ট হবে এটা ভাবতে ভাবতে আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল।

আমরা পরের দু-ঘণ্টা ধরে বসে বসে একটা রূপরেখা তৈরি করলাম কি কি ভাবে আমরা সার্ভিস দিলে ওঁর কম্পানির উপকার হবে। ওনার কাছ থেকে ইস্যু ধরে ধরে বুঝলাম উনি ঠিক কি রকম সার্ভিস চাইছেন আমাদের কাছ থেকে।মিটিং শেষ হবার আগে আমরা ঠিক করলাম আমি প্রতিসপ্তাহে ওঁকে ফোন করে আমাদের অগ্রগতির ব্যাপারে ইনফর্ম করবো।

সেই সপ্তাহের শুক্রবার নাগাদ আমি আমার তিনটে কেস একসাথে ক্লোজ করে ক্লায়েন্টদের সাথে ডিল ফাইনাল করে ফেললাম । অফিস থেকে বেরনোর আগে আরো একটা ক্লায়েন্টর কাছ থেকে আমার ফোন এলো। ওরাও বললো ওরা দু একদিনের মধ্যেই ওদের ডিলটা ফাইনাল করতে চায়। আমার সে দিনটা খুব ভালো যাচ্ছিলো।

চারটে ডিল ফাইনাল করা মানে অনেক টাকার কমিশন। ব্যাপারটা আমি আমার অফিস কলিগ শেখর কে বলতে ও বললো - “গুরু তাহলে কিছু খরচা তো করো”।

শেখর ওর মন মেজাজ ভালো থাকলে আমাকে প্রায়ই হোটেলে নিয়ে গিয়ে লাঞ্চ-ফাঞ্ছ করায়।

আমি তাই ওকে বললাম - “ঠিক আছে তুই যদি একটু আর্লি ডিনার করতে পারিস তাহলে চল আজ আমার সাথে ডিনার কববি”।

ও এককথায় রাজী হল। মনীষা কে ফোন করে জানালাম - “আমার ফিরতে একটু দেরি হবে কারণ আমি একবারে ডিনার সেরে আসবো। তুমি আর রান্নাটান্না কোরোনা, তোমারটাও প্যাক করে নেব”।

মনীষা বললো -“ঠিক আছে”।

সেদিন ডিনার করতে করতে শেখরের সাথে নানা কথা আলোচনার মধ্যে শর্মা প্রোডাক্টস এর সাথে আমাদের করা বিশাল ডিলটার কথা এসে পরলো।

শেখর হঠাৎ বললো – “তাহলে গুরু মালটা কেমন দেখলে বলো”?

আমার বুঝতে একটু সময় লাগলো যে ও কার কথা বলছে। তারপর বুঝতে পারলাম যে ও মিসেস শর্মার কথা বলছে।

শেখর বললো – “আমি জানি বেশ কয়েক মাস ধরে তুমি ওই ক্লায়েন্টটার পেছনে খাটছো কিন্তু তোমার একটা কথা জানা দরকার যেটা বোধহয় তুমি এখনো জানো না। জানি তোমার শুনতে একটু খারাপ লাগবে কিন্তু আমার মনে হল এটা আমার তোমাকে জানানো দরকার”।

- “আরে তুই নতুন কি আর বলবি? আমি এখন ওই রবির জন্য যে অবস্থার মধ্যে পড়েছি তার থেকে আর কি খারাপ লাগবে আমার”?

- “শোন শোন…. রবি ওই কনট্র্যাক্টটা কি ভাবে এত সহজে পেয়ে গেল জানো? আমি শুনেছি রবি মিসেস শর্মা কে পটিয়ে ফেলেছে, ও মিসেস শর্মা কে প্রায়ই একটা রিসর্টে নিয়ে গিয়ে চুঁদছে। মিসেস শর্মা এখন রবির প্রেমে পাগল, ও যা বলছে তাই করছে”।

- “উরি শালা, তা তুই এসব জানলি কি করে”?

- “আর বলোনা একদিন দুপুরে রবি আমাকে বললো শেখর তোমার কোন কাজ না থাকলে আমার সাথে একটা মিটিংএ চলো। আমি রাজীবকেই নিয়ে যেতাম কিন্তু ও অফিসে নেই তাই তোমাকে বলছি। জানোইতো তো ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে কথা, গেলাম রবির সাথে। মিটিংটা ছিল মিসেস শর্মার সাথে।

মিটিং শেষ হবার পর রবি আমাকে গাড়িতে জিজ্ঞেস করলো – “কি রকম বুঝলে ওদের অফারটা?"

আমি বললাম –“অফারটা ইনটারেস্টিনং! তবে ভালো ভাবে কস্ট অডিট করে দেখে নিতে হবে যে সত্যি সত্যিই আমাদের ভালো প্রফিট থাকবে কিনা”?

আমাকে অবাক করে রবি বললো – “আরে লাভ লোকসান তো পরের কথা কিন্তু মিসেস শর্মার সাথে একসঙ্গে কাজ তো করা যাবে। দেখেছ কি দারুন দেখতে মহিলাকে? আমি তো যে দিন ওকে প্রথম দেখি সেদিনই কাত”।

আমি ভাবলাম রবি বোধহয় আমার সাথে ইয়ার্কি মারছে। কিন্তু রবি মিসেস শর্মার রুপের প্রশংসা করেই চললো। আমি তখনই বুঝলাম রবি ওই অফারটা নিয়ে নেবে ওতে খুব একটা লাভ না হলেও। বোঝো তাহলে ব্যাপারটা, শুধু মাত্র একটা মেয়ের জন্য অত বড় ডিসিশিনটা নিয়ে নিল ও।

আবার আমাকে বলে কিনা - “বুঝলে শেখর এরকম একটা বউ পেলে জীবনে আর কোনোদিন কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতাম না আমি। কি মাগীবাজ-রে লোকটা”?

আমি অবাক হয়ে বললাম – “বলিস কিরে? বোকাচোঁদাটা নিজেকে কি ভাবে কি”?

শেখর বললো- “আরে আমি আগেই এদিক ওদিক থেকে শুনেছিলাম মালটা মাগি ছাড়া আর কিছু বোঝেনা। আর ভালো মেয়ে পেলে তাকে যেমনভাবে হোক নিজের বিছানায় শুইয়ে তবে ছাড়ে। জানিস আমার দিল্লি অফিসের এক বন্ধু বলেছে ওর নাকি একটু ভারী চেহারার ম্যারেড মেয়েদের ওপর খুব লোভ। ওর নাকি এরকম অনেক বেড পার্টনার আছে”?

আমি বললাম – “মারধোর খাবে দেখবি একদিন । বড় লোক হলেও সব সময় বাঁচা যায়না বুঝলি? একদিন না একদিন ও ঠিকই ফাঁসবে, আমার কথা মিলিয়ে দেখে নিস”।

শেখর বললো- “জানো মেয়েদেরও নাকি ওকে খুব সেক্সি লাগে। দেখো না আমাদের অফিসের মেয়েগুলোও কেমন হ্যাংলার মতন সবসময় ওর কথা আলোচনা করে এমনকি ওর সাথে একটু কথা বলতে পারলে বর্তে যায়। আমার বন্ধুটা বলেছিল মেয়েরা নাকি ওর সাথে কথা বলতে শুরু করলে কেমন একটা হিপ্নোটাইজড মত হয়ে যায়। মেয়েদের পটিয়ে বিছানায় নিয়ে যেতে ওকে নাকি কোনো বেগই পেতে হয়না। দেখলেনা মিসেস শর্মার ব্যাপারটা। রবি যে ভাবে চেয়েছিলো সেই ভাবেই কনট্র্যাক্ট পেপারটা সাইন করালো মিসেস শর্মা কে দিয়ে। জানো আমি এও শুনেছি মিসেস শর্মার নাকি দুটো ছোটো ছোটো বাচ্চা আছে”।

- “বলিস কিরে শেখর। ভদ্রমহিলা এরকম। উনি নিজেও তো খুব সুন্দরী আর বড়লোক, ওর এতো হাংলামো কেন কে জানে”?

- “আরে রবির চেহারাটা দেখেছো গুরু, ঠিক যেন একটা গ্রিক ভাস্কর্য। মুখটাও বেশ পুরুষালী আর সুন্দর। জানো প্রায় ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা ও।"

- “হ্যাঁ, আর সব মেয়েরাই তো মনে মনে ঠিক এরকমই পুরুষ চায়”।

শেখর হাঁসতে হাঁসাতে বললো – “হ্যাঁ ঠিক বলেছো, আর পায়না বলেই আমাদের মত সাধারন পুরুষদের বিয়ে করে কাজ চালিয়ে নেয়”।

আমিও হেসে উঠলাম ওর কথা শুনে।

যাই হোক সেদিন শেখরের সাথে ডিনার শেষ করে ফেরার সময় গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবছিলাম রবির কথা। সত্যি নিজের প্রতি একটা আশ্চর্য কনফিডেন্স আছে ওর। সুপুরুষ, স্মার্ট, মার্জিত অথচ ডমিন্যান্ট পারসোনাল্যাটির রবি এই জন্যই খুব সহজে মেয়েদের ইমপ্রেস করতে পারে। হঠাৎ আমার মনে পড়লো মনীষার কথা, সঙ্গে সঙ্গে নিজের গাটা কেমন যেন শিরশির করে উঠলো আমার। এই জন্যই বোধ হয় রবিকে দেখা মাত্র মনীষারও খুব ভালো লেগে গিয়েছিল ওকে। মনে পরলো শেখরের কথা, রবি নাকি ভারী চেহারার বিবাহিত মহিলাদের খুব পছন্দ করে। আমার মনীষাও তো ভারী চেহারার আর বিবাহিত। তাহলে কি রবি সুযোগ পেলে মনীষাকেও শোয়াবে ওর সাথে?

সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে আমি মনীষাকে রবির সাথে আমার আর আমার পুরনো ক্লায়েন্ট মিস্টার শর্মার গত কয়েকদিন আগেকার সেই মিটিংটার কথাটা বললাম। এও বললাম যে রবি কনট্র্যাক্টটা সাইন করে ফেলেছে।

মনীষা শুনে বললো
– “দেখলে তো? বললাম না লোকটা খুব স্মার্ট আর বুদ্ধিমান। তুমি যদি কোনো ব্যাপারে ওর কাছে সাহায্য
চাও দেখবে ও তোমাকে ভাল বুদ্ধিই দেবে”।

ওর কথা শুনে আমার মাথায় যেন আগুন জ্বলে গেল। কিন্তু আমি ওকে মুখে কিছুই বললাম না। তবে সেই রাতে মনীষার সাথে আমি আর কোনো কথাই বললাম না । সারাক্ষণ গুম হয়ে বসে টিভি দেখতে থাকলাম। রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসতে চাইছিলনা আমার। ঘুরে ফিরে বার বার শেখরের কথা মনে পরছিলো।

এই রবিকে কিছুতেই যেন মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছিলামনা আমি। ভাবছিলাম রবির কথা। ওর মত অবিবাহিত ধনী সুপুরুষ বস কে পেয়ে অফিসের বেশিরভাগ মেয়েদেরই যেন নাল পরতে শুরু করেছে। অনেকেই রবির সাথে রোম্যান্টিক একটা সম্পর্ক চেয়ে ওর কাছে আসার চেষ্টা করছে। রবি একনম্বরের মাগিবাজ হয়েও অফিসের পরিবেশের কথা চিন্তা করে বোধহয় ওদের-কে এখনো পর্যন্ত এড়িয়ে চলছে। কিন্তু এতে করে ও মেয়েদের কাছে আরো যেন কামনার বস্তু হয়ে উঠছে।

এমনিতে অফিসের সিনিয়র মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে আমি অফিস গসিপে কান দিইনা। তবে অন্য কয়েকটি মেয়েদের কাছ থেকে রবির সম্বন্ধে দু-একটা গুজব আমারও কানে এসেছে। সেই মেয়েরা বিশ্বাস করে রবির সাথে অফিসের কোনো না কোনো মেয়ের কিছু একটা বোধহয় চলছে।

আমি ভাবছিলাম যতই নিরাশক্ত ভাব দেখাক রবি, ওর মত মাগিবাজ লোক মেয়েছেলে ভোগ না করে বেশি দিন থাকতে পারবেনা। বিশেষ করে আমাদের অফিসেই যখন ওর পছন্দ মত বিবাহিত ভারী চেহারার অনেক মহিলা রয়েছে।

তখনই একটা ব্যাপার আমার মনে পরলো। কয়েক সপ্তাহ আগে আমি আমার মার্কেটিং টিমের সঙ্গে একটা মিটিং করছি। এমন সময় রবি আমার ঘরে ঢুকে আমাকে বললো ওর নাকি আমার একটা ক্লায়েন্টের ব্যাপারে কি একটা রিপোর্ট চাই। আমি ওকে বললাম ঠিক আছে রবি মিটিংটা শেষ হলেই আমি তোমার চেম্বারে গিয়ে দিয়ে আসছি। হঠাৎ দেখলাম রবি আমার টিমের ঋতিকা বলে একটা মেয়ের দিকে চোখে কেমন যেন একটা ঈশারা করলো। কেউ দেখেনি ব্যাপারটা কিন্তু আমার চোখ এড়ায়নি।

ঋতিকা ওমনি লাফিয়ে উঠে - “আমি বের করে দিচ্ছি স্যার আমার কাছে আছে রিপোর্টটা”, বলে আমাকে কিছু না বলেই রবির সাথে বেরিয়ে গেল।

আমি মিটিং বন্ধ করে অপেক্ষা করছিলাম কখন ও ফিরবে। পাঁচ মিনিট , দশ মিনিট, পনেরো মিনিট হয়ে গেল। তারপরেও ঋতিকা ফিরলোনা দেখে আমি মিটিং আবার চালু করে দিলাম। ঋতিকা প্রায় আধঘণ্টা পরে ফিরলো আমাদের রুমে।

কেমন যেন একটা আলুথালু ভাব দেখলাম ওর চেহারায়, চুলে এবং শাড়িতে। ব্যাপারটা কিরকম যেন অদ্ভুত লেগেছিল আমার সেদিন, তখন অবশ্য রবির ব্যাপারে এতসব জানতাম না আমি। ঋতিকা বিবাহিত, দেখতে খুব মিষ্টি, আর একটু ভারী চেহারার। তাহলে ওই কি গুজবের সেই মেয়ে যার সাথে রবির অ্যাফেয়ার চলছে?

প্রায় রাত তিনটে নাগাদ অবশেষে ঘুমতে পারলাম আমি।

পরের দিন সকালে চা দিতে এসে মনীষা বললো – “তুমি রাগ করেছো আমার ওপর রাজীব?"

আমি কিছুই বললামনা উত্তরে।

মনীষা বললো –“শোনো আমি যদি এমন কিছু বলে থাকি যাতে তোমার খারাপ লেগেছে তাহলে তা না জেনেই বলেছি, তোমাকে দুঃখ্য দেবার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলনা । এসো আমরা দুজনেই ব্যাপারটা ভুলে যাই। আমি জানি তুমি অফিসের ঝামেলা নিয়ে ক'দিন একটু চাপে আছো। আচ্ছা কাল যে একটা এতবড় সুখবর দিলে, যে তোমাদের অতো বড় কনট্র্যাক্টটা সাইন হয়ে গেছে, তোমার মন নিশ্চয়ই এখন একটু ভালো হয়েছে”।

- “মনীষা আমার মন একবারে ভালো নেই। ভীষণ ফ্রাসটেটেড লাগছে আমার। কারণ আমার মনে হচ্ছে আমারই ক্লায়েন্টের সাথে এতো বড় কনট্র্যাক্টটা সাইন হল অথচ আমিই ব্যাপারটায় খুব একটা ইনভল্ব নই। এই কনট্র্যাক্টটা তো আমারই ফাইনাল করা উচিত ছিল”।

- “এরকম ভাবছো কেন রাজীব, এতো বড় কনট্র্যাক্টট সাইন হলে সকল-কেই তো হাত লাগাতে হয়। আর মিস্টার রায় যখন ওই ভাবে কনট্র্যাক্টটা সাইন করতে পেরেছে তখন ও নিশ্চই তোমার থেকেও বেশি খেটেছে। কি আমি ঠিক বলছি তো”?

আবার মাথা গরম হয়ে গেল আমার। মাথা ঘুরিয়ে মনীষার দিকে তাকালাম আমি তারপর ওর চোখের দিকে একটা কড়া দৃষ্টি হেনে বললাম, “একবারেই না”।

মনীষা উত্তরে আমাকে যা বললো তাতে আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেল। ও বললো
- “কি বলছো তুমি রাজীব? ওই শর্মা ভদ্রলোক তোমার পুরনো ক্লায়েন্ট হুওয়া সত্বেও তুমি তো ডিলটা ফাইনাল করতে পারনি। তোমার কি মনে হচ্ছেনা যে মিস্টার রায় কোনো একটা স্টেজে ইন্টারভেন না করলে তোমরা এই কনট্র্যাক্টটা কিছুতেই পেতেনা”।

- “আমি যে কোনো ডিল বাইরের কারোর সাহায্য ছাড়াই ফাইনাল করতে পারি মনীষা আর ওটাই আমার কাজ”।

- “তুমি মিস্টার রায়কে কি ভাবে বাইরের সাহায্য হিসেবে দেখো রাজীব। আর এটা এখনো-তো তোমার ডিলই আছে। আসলে আমি ভাবলাম তোমার কয়েকদিন মনমেজাজ ঠিক যাচ্ছিলনা, ছোটোখাটো ভুল হয়ে যাচ্ছিল কাজে, তাই কারোর একটু হেল্প পেলে প্রবলেমটা হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাই মিস্টার রায়ের কথা বললাম”।

আমি উত্তরে আর কিছু বললামনা ওকে। একবার ভাবছিলাম বলেই দি কিভাবে রবি ওই কনট্র্যাক্টটা পেয়েছে। কিন্তু না, কোনরকমে নিজেকে সংযত করলাম আমি, কারণ মনীষা ভাবতে পারে যে আমি আমার মনের হিংসা থেকে ওর নামে কুৎসা করছি। এতে করে আমার প্রতি ওর ইম্প্রেসান আরো খারাপ হয়ে যাবে।

অফিসে রবি কে নিয়ে আমার যে ইগোর সমস্যা হচ্ছিলো সেটা আমাকে ব্যাথা দিচ্ছিল ঠিকই কিন্তু আমার ওপর মনীষার যে কনফিডেন্স ছিল সেটা কমে যাওয়াটাই ভেতরে ভেতরে জ্বালিয়ে পুরিয়ে খাক করে দিচ্ছিল আমাকে।
 
Last edited:

sabnam888

Active Member
809
392
79
জয় পরাজয় যাহারই হউক এই আ সা মীগণ কী দোষ করিল ? পরবর্তী পর্ব র দিকে চাতক-চোখে .....
 
  • Love
Reactions: Manali Bose
Top