• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery স্বর্গের নীচে সুখ

Manali Bose

Active Member
1,461
2,136
159
আমার গল্পের পাঠক সংখ্যা কম হয়।কারন আমি রেডিমেড গল্প লিখতে পারি না।তাই সেই কতিপয় পাঠকের জন্য লিখছি।যারা আমার গল্প পড়ছেন এবং পছন্দ করছেন তারা সঙ্গে আছেন সেরকম বার্তা মাঝে মাঝে দেবেন।এক ধনতান্ত্রিক শ্রেণী সমাজে এক নিম্নশ্রেণীর মানুষ উচ্চশ্রেণীর রমণীকে ভোগ করছে তা অনেকের পোষায় না।কিন্তু আমি সর্বদাই এই বিষয়ে লিখি।সমাজের আকছার ঘটে থাকা ভিন্ন শ্রেণীর মানুষের প্রেম,ভালবাসা,সঙ্গম নিয়ে।শ্রেণী ভেদাভেদ দূর হোক এই মহানুভবতা শুধু সাহিত্য,কবিতা নয়,মানুষের কামনা বাসনার গোপন গল্পগুলিতেও মিশে যাক।এ গল্পটি সুনীল গাঙ্গুলির সেরকমই একটি প্রাপ্তবয়স্ক গল্প ‘স্বর্গের নীচে মানুষ’ থেকে নেওয়া।আমি যতটা পারছি মূল গল্পভাবনা,কথাগুলি রেখে তার পরিবর্তন ঘটিয়ে অতন্ত্য মুক্ত যৌন গল্পে রূপান্তরিত করছি।

সামনে একটা নদী।এই নদী পার হতে হবে।পুরুষটির নাম রঞ্জন।তার বয়স ৩৫।স্বাস্থ্য সুঠাম।সে হালকা চকোলেট রঙের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে আছে।সাদা শার্ট তার প্রিয়।কাঁধে ঝুলছে ক্যামেরা।
মেয়েটির নাম ভাস্বতী, বয়স ৩২,সে পরে আছে গাঢ় নীল রঙের শাড়ি ও ব্লাউজ–ব্লাউজের তলায় ব্রা’য়ের আউটলাইন চোখে পড়ে।তার ব্রা–র রং কালো,সায়ার রং কালো,পরে দেখা যাবে।তার ডাক নাম সতী।সবাই এই নামেই ডাকে।তার নাম ঝর্ণা হলেও বেশ মানাতো।সে খুব সুন্দরী,অল্পবয়সী বালকের মতন দুরন্ত।রূপহীনা মেয়েদের গল্প আলাদা,রূপসী মেয়েদের গল্প আলাদা।এটা রূপের গল্প।এরা দুজনে স্বামী-স্ত্রী।এদের দুজনের অনেক আলাদা গল্প আছে।যেমন অনেকেরই থাকে।
এক একদিন হয় না দুপুর বেলাতেই আকাশটা সন্ধ্যের মত আঁধার হয়ে আসে।এই দিনটাও সেই রকম।নৈঋত কোন থেকে আস্তে আস্তে সারা আকাশ ছেয়ে আছে মেঘে।তবে সেই মেঘ যেন পাথরের মতন শক্ত,বর্ষণের কোন চিহ্ন নেই।এই মেঘের পটভূমিকায় পাহাড়টাকে গম্ভীর মনে হয়।এইসব দিনে কেউ নদী পেরিয়ে পাহাড়ে ওঠার স্বাদ করে না,কিন্তু ভাস্বতী খুব জেদি।
পৌঁছতে খুব দেরি হয়ে গেল।সকাল থেকেই গাড়ী খারাপ।রঞ্জন বলেছিল আজ আর বেরুবো না।
ভাস্বতী বলেছিল সারাদিন ডাকবাংলোয় বসে থাকবো না।
রঞ্জন বলেছিল কিন্তু গাড়ী যে খারাপ।
ভাস্বতী বলেছিল মাত্র দুবছর আগেও আমাদের গাড়ি ছিল না।তখনও আমরা বেড়াতে বেরুতাম।সুতরাং রঞ্জন গিয়েছিল দেড় মাইল দূর থেকে গাড়ীর মিস্ত্রী ডেকে আনতে।মিস্ত্রী এসে ঠুকঠাক করে জানালো গাড়ী গ্যারেজে নিয়ে যেতে হবে।নিয়ে যাওয়া হল ঠেলতে ঠেলতে।রঞ্জন চেয়েছিল অনেকক্ষণ সময় লাগুক।মিস্ত্রী সম্প্রদায় জানালো গাড়ীর অনেক অসুখ,দুদিনের আগে সারবে না।
নিশ্চিতভাবে রঞ্জন ফিরে এসে বলল দুদিনের আগে কোথাও যাওয়া যাবে না।গাড়ী পাওয়া যাবে না।
ভাস্বতী বলল বাস রয়েছে।মানুষ বাসেও বেড়াতে যায়।নইলে বাসগুলো চলে কেন?
রঞ্জন বলল ভুল,বাসে লোকে কাজকর্মে যায়।বেড়াতে যায় না।তাছাড়া বাস নদীর ধার পর্যন্ত যায়।নদী থেকে তিন-চার মাইল দূর দিয়ে বাস যায়।এমন পাহাড়ী বুনো নদী অবধি কে’বা যাবে।
—হাঁটতে হবে বলে তুমি ভয় পাচ্ছো!
রঞ্জন ভীতু নয়।তার শরীরে শক্তি আছে।বুকে সাহস আছে।সে পৃথিবীর হেরে যাওয়া মানুষের দলে নয়।বরং সে অতিরিক্ত পেয়ে থাকে।সে সাঁতারে মেডেল পেয়েছে,কলেজে ক্রিকেট খেলেছে,ভূতে বিশ্বাস করে না।শহরের রাস্তায় হঠাৎ হৈচৈ শুরু হলে সে দৌড়তে শুরু করে না।দাঁড়িয়ে দু-এক দন্ড দ্যাখে।কিন্তু সে পাহাড়ে উঠতে ভালোবাসে না।ভালোবাসে না-ভালোবাসে না,এর কোনো যুক্তি নেই।মোটরগাড়ী শুদ্ধ তাকে পাহাড়ে তুলে দাও-সে বিখ্যাত সৌন্দর্য্যগুলি উপভোগ করবে।কিন্তু ওইসব সৌন্দর্য্যের লোভে সে হেঁটে পাহাড়চূড়ায় উঠবেনা।তবে সে পরিশ্রম বিমুখ নয়।সমুদ্রে সাঁতার কাটতে বলুক না কেউ রঞ্জন এককথায় রাজি।অনেক মানুষেরই এরকম অদ্ভুত একটি দুর্বলতা থাকে।
—-বিশেষত নদী পেরিয়ে পাহাড়টি দেখতে যাওয়া সম্পর্কে তার মনে অন্য একটি আপত্তি ছিল।পাহাড়টি সম্পর্কে একটি কুসংস্কার জড়িত।সে কুসংস্কারের প্রশ্রয় দিতে চায় না।ভাস্বতী যাবেই যাবে।এই ধরনের গল্প শুনলেই ভাস্বতী পরীক্ষা করে দেখতে চায়।হাতের কাছেই যখন রয়েছে।রঞ্জনের অভিমত হচ্ছে এইসব কুসংস্কার পরীক্ষার আগ্রহও একধরনের স্বীকার করে নেওয়া।
—-তুমি কুঁড়েমি করে যেতে চাইছোনা,তাই বলো!অত সব যুক্তি দেখাচ্ছো কেন?
রঞ্জন ট্রাউজার ও গেঞ্জি পরে বসেছিল ডাকবাংলোর বারান্দায়।তার চওড়া কব্জিতে বাঁধা ঘড়ির কাঁচে রোদ পড়ে ঝলসে উঠছে।তার সুঠাম স্বাস্থ্য,এই মানুষকে দেখে কেউ অলস বলবে না।
তবু রঞ্জন হেঁসে বলেছিল এক একদিন কুঁড়েমি করতেও মন্দ লাগেনা। এসো না আজ সারাদিন শুয়ে থাকি।
ভাস্বতী তার হাত টেনে ধরে বলেছিল না,ওঠো।
অতএব বেরিয়ে পড়তেই হয়।স্থানীয় লোকজন কেউ কেউ বলেছিল পাহাড়টাতে উঠতে তিনঘন্টা,নামতে তিনঘন্টা লাগে।আবার কেউ কেউ বলেছিল ও পাহাড়ে ওঠাই যায় না।দেখতে ছোট হলে কি হবে।আবার কেউ বলেছিল সুন্দর রাস্তা বানানো আছে,কোন অসুবিধে নেই।বনাঞ্চলের এই এক অসুবিধে শ’য়ে শ’য়ে পাহাড় অজানাই থেকে গেল।নির্জনতার দম্ভ নিয়ে তারা মাথা উঁচিয়ে থাকে।পাহাড় এবং জঙ্গলের পথ সম্পর্কে মানুষের নানারকম মত থাকে।যারা রাস্তা মাপে তারা ছাড়া কেউ সঠিক দূরত্ব আন্দাজ করতে পারে না।পাহাড় কারুর কাছে সবসময়েই দূরে,কেউ ভাবে যতই দূরে হোক যাওয়া যায়।তবে এই পাহাড়টির কথা একটু আলাদা।এরা পাহাড়টিকে ভক্তিও করে আবার ভয়ও করে।
রঞ্জন বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেছিল এদের কারোর কথা বিশ্বাস করা যায় না।কারোর সাথে কারোর মেলে না।
ভাস্বতী বলেছিল গিয়েই দেখলে বোঝা যাবে কোনটা সত্যি।
রঞ্জন সাহসী,ভাস্বতী দুঃসাহসীকা।অথবা,গোঁয়ার শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ।ঝরঝরে বাস,কিন্তু তার ফার্স্টক্লাস,সেকেন্ড ক্লাস,থার্ড ক্লাস আছে।
ভাস্বতীর ইচ্ছে থার্ড ক্লাসে আর সব নারী,পুরুষের সঙ্গে মিলে মিশে যায়।রঞ্জন তাতে সম্মতি জানায়,আপত্তি জানানো অর্থহীন বলে।বাসে উঠে এই ভিড়ভাটটায় রঞ্জনের ভালোলাগেনা।যাদের দেখলে বোঝা যায় পকেটে পয়সা আছে,শহুরে শিক্ষিত,সঙ্গে ফর্সা চেহারার রমণী থাকলে গেঁয়ো জঙ্গলাকীর্ণ লোকেরা একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে দ্যাখে।তবু ভালো রঞ্জন আর ভাস্বতীর ভাষা এখানে কেউ বোঝে না।ওড়িয়া কিংবা আদিবাসীদের এক ওড়িয়া মিশ্রিত নিজস্ব ভাষা চলে।সে ভাষা বোঝা দুস্কর।ওড়িশা।
দেড় ঘন্টার পথ তবু প্রায় তিনঘন্টা লেগেছিল।তবু ভাস্বতী বিরক্ত হয়নি সে উচ্ছলতায় রঞ্জনকে মাতিয়ে রেখেছিল।বেড়াতে এলে ভাস্বতী একটু বেশি উচ্ছল হয়ে ওঠে।মানুষ মুক্তিকামী। যতই তার জীবন আধুনিকতা, স্বাধীনতা থাক না কেন।তবু সে মুক্তি খোঁজে।ভাস্বতী ব্যতিক্রম নয়।কয়েকটা জনপদ পেরিয়ে গাড়িটা এগিয়ে ওদের যেখানে নামতে হয় সেখানে কয়েকটা খাবারের দোকান।খাঁটি অতন্ত্য বেশি গন্ধময় দুধে ভেজানো চা।কলকাতার চা’য়ের কোনো স্বাদ নেই তাতে।ওরা দু গেলাস চা নেয়।পরে আরো এক গেলাস।
এরপর মাইলের পর মাইল,প্রায় তিন মাইল হাঁটা পথ।ইতিমধ্যে মেঘ ঘনিয়ে আসে।দ্বিপ্রহরকে মনে হয় সায়াহ্ন।ঝলমলে বহিঃদৃশ্যকে অপ্রসন্ন মনে হয়।কোথাও পাখি নেই।ইতিউতি ফড়িং ওড়াউড়ি করছে।এরই মধ্যে মেঘ চিরে একটা বিমান উড়ে যায়।খুবই অবাস্তব মনে হয়।এমন ঘন অরণ্যে এই শব্দ বেমানান লাগে।পায়ের তলায় শাল পাতার খসখস নীরব শব্দ।লম্বা লম্বা মোটা গাছ এলোমেলো পাহাড়ে উঁচিয়ে আছে।
রঞ্জন বলল আজ আর যাওয়া উচিত নয়।আকশের অবস্থা একদম ভালো নয়।
ভাস্বতী বলল আমার একদম ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
—-যদি অনেক রাত্তির হয়?
—-যেখানেই থাকি রাত্তিরতো হবেই।
ভাস্বতীর এই কথাটিকে কোনো যুক্তি বলা যায় না।কিন্তু মেয়েরা এমন অযৌক্তিক কথা বলে বলেই তো মোহময়ী।কেউ কেউ বলে রহস্যময়ী।রঞ্জনের মত যুক্তিবাদী মানুষও ভাস্বতীর এই কথা শুনে হাসলো।
নদীটি ছোট।হেঁটে পার হওয়া যায়।প্রতক্ষ্য প্রমান হিসেবে একটা গরুর গাড়ী পার হয়ে আসতে দেখা গেল।গরুর গাড়িটি পাহাড় থেকে আসেনি।নিশ্চিত ওপাশে কোনো লোকালয়ের রাস্তা আছে।
ভাস্বতীর কাঁধে ঝোলানো একটি চামড়ার ব্যাগ।তাতে টুকিটাকি ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র।বেশি ভারী।রঞ্জনের কাঁধে শুধু ক্যামেরা।এতে যেন কেউ মনে না করে রঞ্জন তার স্ত্রীকে দিয়ে ভারী ব্যাগ বইয়ে নিচ্ছে।ভাস্বতী সুন্দরী ও আধুনিকা–সে সাধ্য কি রঞ্জনের?আসলে ব্যাগটা ওরা ভাগাভাগি করে নেবে বলেছিল।কিছুক্ষন আগে ভাস্বতীর অনুরোধে সেটা ভাস্বতী নিয়ে নিয়েছে।রঞ্জন ভাস্বতীর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নেয়।নদী পার হবার জন্য শাড়ি উচু করলো ভাস্বতী।রঞ্জনও গুটিয়ে নেয় ট্রাউজার্স।
নদীর জলে পা দিয়েই বোঝা গেল জল যেমন ঠান্ডা,তেমনই তীব্র স্রোত।পাহাড়ী ছোট নদীগুলো খুব তেজি হয়।এটা তেমনই একটা নদী।তার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারো,কিন্তু তাকে সমীহ করতে হবে।
তবে এ নদী সাঁতার কাটার মত নয়।তবু জলে পা দিয়ে রঞ্জনের মেজাজ ভালো হয়ে যায়।
—-সতী আমার হাত ধরো।
ভাস্বতী বনভূমিতে বেড়াতে এলে সবকিছুতেই আনন্দ পায়।এই স্রোতের জল,স্রোত তার স্পৃহাকে আনন্দিত করে তোলে।একহাতে চটি,অন্য হাত রঞ্জনের বাহুতে।বড় বড় পাথরের টুকরো তার পায়ে খোঁচা দেয়।তবু সে হাসছে।হাসতে হাসতে বলে যদি কোন জায়গায় জল বেশি থাকে?
ভাস্বতী সাঁতার জানে না।তবে জল বেশি থাক বা না থাক ভাস্বতীর প্রশ্নে ভয়ের চিহ্ন নেই।এ সবই–কৌতুক।রঞ্জনের মুখ থেকে সে আশ্বাসবাণী শুনতে চায়।যা শুনিয়ে রঞ্জন পরিতৃপ্ত হবে।নির্ভরযোগ্যতাই প্রধান যোগ্যতা।রঞ্জন নির্ভরযোগ্য তার স্ত্রীর কাছে।সে পাহাড়ে হোক বা জলে।
ভাস্বতীর শাড়ি উঠেছে হাঁটু পর্যন্ত।ফর্সা পা দুটোকে ধুইয়ে জলের স্রোত বয়ে চলেছে।ক্রমশ জল বেড়ে চলেছে।এমন নির্জনতাই নারী পুরুষকে আনন্দ দেয়।স্বামী-স্ত্রীকেও।শয়নকক্ষে কেউ থাকে না—তবু এই আকাশের নীচে পাহাড় আর নদীর পটভূমিকায় দুজনে নিরালা হবার স্বাদ আলাদা।ভাস্বতী নিচু হয়ে এক আঁচলা জল ছিটিয়ে দেয় রঞ্জনের গায়ে।
রঞ্জন বিরক্ত হল না।স্রোতস্বিনী নদীতেও সে ঘুরে দাঁড়ালো ভাস্বতীর দিকে।ভাস্বতীর কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে হাসতে হাসতে বলল, ফেলে দিই ফেলে দিই?
কেউতো এখানে দেখার নেই।কেউ তো জানে না যে সে কলকাতার একটি বড় সংস্থার দায়িত্বপূর্ণ অফিসার! এখানে একটু ছেলেমানুষী করতে দোষ কি?
কেউ না দেখলেও কিছু কিছু ব্যাপার আসে যায়।ভাস্বতী তার শাড়ি উরুর অনেকখানি তুলে ফেলেছে।রঞ্জনের চোখ গেল সে দিকে।এবার তার দৃষ্টিতে অন্যধরনের হাসি।ভাস্বতীর ফর্সা উরু,নীল শাড়ি যেন যবনিকা।যে পুরুষ তার স্ত্রীকে শয়নকক্ষে নিরাবরণ দেখেছে।ঘুমের মধ্যে ওই উরুরু উপর হাত রেখেছে–অনুভূতিহীন হাত–বহু দিনের বেলা তার স্ত্রী যখন শাড়ি পাল্টেছে তার কাছাকাছি,হয়তো বা সে পড়েছে সেসময় কোনো অকিঞ্চিতকর বই—আজ সে সেই শরীরের আভাস পেয়ে রোমাঞ্চিত।এরকমও হয়।
জল আর একটু বাড়লো।ভাস্বতী আর শাড়ি তুলল না।সবটাই ফেলে দিল।ভিজে একাকার।এ অঞ্চলের আদিবাসী মেয়েরা শাড়ি নদীতে ভেজায় না।অনেক লোক থাকলেও তারা শাড়ি তুলে নেয়।কারন তাদের আর হয়তো শাড়ি নেই।এই মুহূর্তে ভাস্বতীর কাছেও কোন দ্বিতীয় শাড়ি নেই।তবুও সে ভেজালো।খানিকটা নিজের স্বামীর কাছেই লজ্জা পেয়ে।
ভাস্বতী সাধারণ সুন্দরী নন।প্রত্যেক সুন্দরীরও নিজস্ব খুঁত থাকে।হয়ত ভাস্বতীরও আছে।কিন্তু ভাস্বতীর বুদ্ধিমত্তা,দুঃসাহস,আনন্দউচ্ছলতা,মুক্তিকামী হৃদয় তার রূপসী ফর্সা তনুকে অতিরিক্ত রূপসী করে তুলেছে।সে যেন এই স্রোতস্বিনী নদীরই প্রতিরূপ।
ভিজে শাড়ি ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে সময় লাগে।ভাস্বতী এগিয়ে চলে।রঞ্জন জলের তল মেপে ধীরে ধীরে পিছনে এগোয়।
—-দ্যাখো,কি সুন্দর ছোট মাছ!
—-তাড়াতাড়ি এসো সতী!
—-তুমি মাছগুলো দেখছো না কেন?
—-তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে না?
—-এখনই পৌঁছলাম।এরই মধ্যে ফেরার কথা!
—-সাড়ে সাতটার পরে আর বাস নেই।এখানেই রাত কাটাতে হবে তাহলে।
—-দারুন হবে তাহলে।বেশ বনের মধ্যে—
সরু সরু ছাইরঙা মাছ জলের মধ্যে সুরুৎ সুরুৎ করে ঘুরছে।এই জলে কোথাও শ্যাওলা পাওয়া মুস্কিল।স্বচ্ছ জলের তলদেশে পাথর দেখা যায়।মাথার ওপর কয়েকটা ফড়িং ঘুরতে থাকে।
মাছ দেখার অতি উৎসাহ নিয়ে নিচু হতেই ভাস্বতী আর ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারে না।জলের স্রোত তাকে টেনে নিয়ে যায় দূরে। ভয়মিশ্রিত হাসিতে চেঁচিয়ে ওঠে ভাস্বতী।
রঞ্জন দেখতে থাকে ভাস্বতীর জলে ভিজতে থাকার দৃশ্য।রঞ্জন চেয়েছিল জলে ঝাঁপ দিতে কিন্তু গলায় ক্যামেরা থাকায় অপেক্ষা করছিল।তাছাড়া স্রোত ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও এখনো অগভীর।
ভাস্বতী ততক্ষনে উঠে দাঁড়িয়েছে।নীল শাড়িটা ভিজে লেপ্টে রয়েছে গায়ে।ভেজা শাড়িতে কোমল মসৃন পেট ও নাভি দৃশ্যত হেমেন মজুমদারের ছবি।কালো ব্লাউজে আবৃত নারীবক্ষ স্বচ্ছ হয়ে রয়েছে।
রঞ্জন ক্যামেরা নিয়ে দু-পা ছাড়িয়ে দাঁড়ায়।নিজের সুন্দরী স্ত্রীর এমন রূপমাধুরী দেখে লোভ সামলাতে পারে না কয়েকটা ছবি নেওয়ার।প্রথম ছবিতেই ভাস্বতী ভেঙচি কাটলো।দ্বিতীয় ছবিতে ভাস্বতী দু’হাত তার চুলে,মুখ ওপরের দিকে,মেঘের ছায়া পড়ে সেই মুখ পৌরানিক নারীর মতন।ভাস্বতীর শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল।সেই মুহূর্তে,সেই বিশেষ মুহূর্তেই মনে হল তার: কি সুন্দর এই বেঁচে থাকা।
গহন অরণ্যে দশদিকব্যাপি নির্জনতার মধ্যে এক নদী,তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে সর্বাঙ্গ ভেজা নারী।এবং সেই দৃশ্যকে চিরস্থায়ী করে রাখছে রঞ্জন।
ওপাশে পৌঁছে রঞ্জন রুমাল খুলে ঘড়ি দেখলো।তিনটে দশ।গ্রীষ্মকালের দীর্ঘবেলা।রাত্রি নামার আগে অনেকটা সময় আছে।পাহাড়টি বিশেষ বড় নয়।অধিকাংশ ভারতীয় পাহাড়ের মত।এর চূড়ায়ও একটি মন্দির আছে।মন্দিরটি দূর থেকে দেখা যায়।অচেনা অজানা জনমানবশূন্য জায়গায় এরকম মন্দির দেখলে স্বস্তি লাগে।
চামড়ার ব্যাগে তোয়ালে ছিল।ভাস্বতী মাথা মুছলো,মুখ মুছলো।শাড়ি,ব্লাউজ সম্পুর্ন ভিজে গেছে।তার আর কিছু করার নেই।রঞ্জন চিন্তিত হলে ভাস্বতী বলে আমার কিছু হবে না।অত সহজে ঠান্ডা লাগবে না।
পাহাড়ী জঙ্গল যেমন হয়।ওড়িশার প্রত্যন্ত জঙ্গলে এরকম অজস্র পাহাড় থাকে।যা মানুষের চোখে অজানা।সরু একটা রাস্তা ঝোপের মধ্য দিয়ে উঠে গেছে বাঁ দিকে।সেটাই সম্ভবত ওঠার রাস্তা।একটা রাস্তা ডান দিকে ঝোপের মধ্যে মিলিয়ে গেছে।তার গতি ঢাল বেয়ে নিচু।ওটা হয়তো কোনো দিকে সমতলে গেছে।
ওঠার রাস্তাটি সরু হলেও দুর্গম নয়।বহু ব্যাবহারের চিহ্ন আছে।তবে বোঝা যায় অনেককাল কেউ ওঠে না।একটু খানি উঠেই ঢুকে গেছে বনের মধ্যে।
ঝোপ ঝাড় তবে খুব বেশি নয়।প্রত্যেকটা গাছকে একে ওপরের থেকে আলাদা চিহ্ণিত করা যায়।এসব বনে অনেক আগেই বন্যপ্রাণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।বাঘ এখানে কেবল উপকথার মত প্রাচীন বুড়োদের অভিজ্ঞতার গল্পে। ছোটখাটো কিছু প্রাণীর উপদ্রব থাকলেও ভয় নেই।রঞ্জন সশস্ত্র।তার লাইসেন্স পিস্তল আছে।
সিগারেট ধরিয়ে রঞ্জন বলল একটা গাইড-টাইড নিয়ে এলে হত।
ভাস্বতী মোহময়ী গলায় বলল এখন আর কেউ থাকলে আমার ভালো লাগতো না।
—-যদি রাস্তা হারিয়ে ফেলি?
—-একটাই তো রাস্তা দেখতে পাচ্ছি।
মন্থর পদযাত্রায় ওরা এগিয়ে যায়।এসেই যখন গেছে এখন দ্বিধা না রেখে উপভোগ করা শ্রেয়।
—-তুমি আসতে চাইছিলে না।জায়গাটা কি সুন্দর বলোতো।
—-হ্যাঁ,বেশ ভালোই জায়গাটা।
—-আমাদের এখানে যদি কেউ নির্বাসন দিত তো বেশ হত! আমরা সারাজীবন এখানেই থেকে যেতাম।
—-কতদিন?
—-আমি সারাজীবনই থাকতে পারি।
—-সত্যি পারবে?বাথরুম?
ভাস্বতী লজ্জা পেল।বিছানার বদলে মাটিতে শুতে দিক তার আপত্তি নেই।খাবার জুটুক না জুটুক তাতেও আপত্তি নেই।কিন্তু পরিচ্ছন্ন বাথরুম থাকা চাই।ঝকঝকে বাথরুম না পেলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।যতবার বেড়াতে গেছে,ভাস্বতী প্রথম ডাকবাংলোয় শোবার ঘরের বদলে বাথরুম পরীক্ষা করেছে।নোংরা ডাকবাংলোর জন্য নির্দিষ্ট ডাকবাংলো ছেড়ে এইবারে সাতাশ মাইল দূরের বাংলোতে আসতে হয়েছে রঞ্জনকে।
ভাস্বতী এখন তার চারিত্রিক দুর্বলতা গোপন করে বলল।তবু থাকতে পারবো।এখানে তো নোংরাই নেই।বেশ একটা কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকতাম দু’জনে।
—-তারপর কুঁড়ে ঘরের সামনে একটা সোনার হরিণ আসতো।তুমি সেটা ধরে আনবার জন্য আবদার করতে আমার কাছে।
ভাস্বতী হেসে ওঠে।নিজের স্ত্রী’র কাছে এমন একটা চতুর শব্দ বলে রঞ্জন বেশ খুশি হয়।
রাস্তার পাশে পড়ে আছে একটা সিগারেটের প্যাকেট ও ইংরিজি খবরের কাগজ দোমড়ানো ভাবে।দুটোই খুব দূরের জিনিস বোঝা যায়।কৌতুহল বশতঃ রঞ্জন কাগজটির তারিখ লক্ষ্য করলো।দেড় মাসের পুরোনো।
একটা শাল গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো রঞ্জন।সিগারেট ধরিয়ে বলল তুমি কি বিশ্রাম নেবে সতী?
—-আমি তো হাঁপিয়ে যাইনি।
—-পাহাড়ে উঠতে হয় খুব আস্তে আস্তে।প্রথমদিকে তাড়াহুড়ো করলে খুব কষ্ট হয়।
—-আমি পরেশনাথ পাহাড়ে উঠেছি।আমারতো কষ্ট হয়নি।তোমার কি হচ্ছে?
মিনিট চল্লিশেক বাদেই মনে হল তারা পাহাড়টার এক-তৃতীয়াংশ উঠে এসেছে।রঞ্জন তৃপ্ত হল।এই গতিতে গেলে তাড়াতাড়ি ফেরা যাবে।নামার সময় কমসময় লাগে।
এখান থেকে নদীটাকে অনেক নীচে মনে হয়।বনের আড়াল থেকে বোঝা যায় নদীর জলের তরঙ্গ।নদীর জলটা ভীষন কালো কুচকুচে মনে হয়।একটু আগেই তারা এ নদী পার করে এসেছে।ভীষণ নীল আর স্বাদু এ নদীর জল।
এমন বদলে গেল কি করে?
আসলে আকাশটা বদলে গেছে অনেকখানি।নীল আকাশ ঢেকে গেছে কালো মেঘে।নদীর রংও বদলে গেছে।রঞ্জন একটা পাথর তুলে নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলবার চেষ্টা করলো।নদী অবধি পৌছালো না।
এই সময় ঝড় উঠলো।এবং সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি।পাহাড়ী জঙ্গলের ঝড়বৃষ্টি খুব তীব্র হয়।বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা তীরের মতন বিঁধছে পাথরে।গাছগুলোর মাথা ঝটপট করছে বৃষ্টি আর মন্দ বাতাসে।
ওরা ছুটে গিয়ে একটা ঝাঁকড়া সেগুনগাছের তলায় দাঁড়ালো।প্রথম প্রথম জল লাগেনা।একটু পরে বৃষ্টির চেয়েও বড় বড় ফোঁটা ওদের ভিজিয়ে দেয়।রঞ্জন ক্যামেরাটা বাঁচাতে তড়িঘড়ি ব্যাগে ভরে নিল।আকাশ একেবারে ফেটে পড়েছে ভারী বৃষ্টিতে।পাহাড়ী রাস্তাটা এখন ঝর্নার মত।
ওদের ভ্রু কুঁচকে আসে।অল্প অল্প শীতের মতন হয়।এত অসম্ভব ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বিপদের গন্ধ আসে।অচেনা নির্জন অরণ্যে এরকম ঝড়বৃষ্টি ভয়ের কারণ।
কিন্তু বিপদ আসেনি।ওরা দু’জন ভয়কে আচ্ছন্ন করার সুযোগ দেয় না।পরস্পরের দিকে হাসি বিনিময় করে।
রঞ্জন ভাস্বতীকে কাছে টেনে নেয়।ভাস্বতীকে বৃষ্টিতে সিক্ত অবস্থায় দেখে নিজের প্রণায়াবেগ চেপে রাখতে পারে না রঞ্জন।এমন বিপদের দিনে সুন্দরী স্ত্রীকে কাছে পেলে যেকোনো পুরুষই ঘনকামনায় বিভোর হবে।মিষ্টিমুখের মৃদু হাসিতে ভাস্বতীর ঠোঁটখানা কাঁপতে থাকে।ভাস্বতী রঞ্জনের পাঁচ বছরের পুরোনো স্ত্রী।এমন সুন্দরী,দুঃসাহসী,বুদ্ধিমতী স্ত্রী কি কখনো পুরোনো হয়? রঞ্জন ভাস্বতীর কোমল শরীরটাকে জড়িয়ে উষ্ণতা বিনিময়ের চেষ্টা করে।ঠোঁটের পাঁপড়ি দুটোকে নিজের ঠোঁটে চেপে ধরে।গাছের পাতা বেয়ে তখন প্রকৃতি যেন স্নানঘরের শাওয়ার।ঠোঁট দুটো মিশে ঘন চুম্বনে মেতে রয়েছে।স্বামী-স্ত্রীর একান্ত প্রেমময় স্থান নারী-পুরুষের ঠোঁট।চুম্বনের কয়েকটি মুহূর্ত দুজনের জীবন থেকে বিপদের অস্বস্তি মুছে যায়।রঞ্জন যেন গভীর চুম্বনে তার স্ত্রীকে আশ্বস্ত করছে।ভাস্বতী নিজের শরীরটাকে রঞ্জনের শরীরে আরো গভীর ভাবে মিশিয়ে দেয়।নরম বুকদুটো রঞ্জনের বুকে চেপে ধরে দীর্ঘস্থায়ী চুম্বন চলতে থাকে।
তারপর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় দুজনের।পরস্পরের দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকায় দুজনে।অঝোর বৃষ্টির ধারা ওদের দু’জনের মাথা গড়িয়ে পড়ছে।কড়কড় শব্দে হঠাৎ প্রচন্ড বজ্রপাত হয়।
রঞ্জন বলল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বোধ হয় ঠিক নয়।দাম্পত্যের রোমান্সে এই বজ্রপাত যেন হিংস্রতার ছাপ রাখে–তৃতীয় অনাকাঙ্খিত ব্যক্তির মত।
রঞ্জন এদিক ওদিক তাকাতে থাকলো।গাছের তলা ছেড়ে বা কোথায়ই যাবে!
গাছগুলো থেকে ঝরে পড়ছিল প্রচুর শুকনো পাতা।কোথাও গাছের ডাল মড়মড় করে ভেঙে পড়ার শব্দ হচ্ছে।যে কোনো গাছ ভেঙে পড়বার সম্ভাবনা আছে কিংবা বজ্রপাত।
রঞ্জন ভাস্বতীর হাতটা ধরে বলল চলো,এখানে আর দাঁড়ানো যাবে না।
ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো বড় একটা পাথরের কাছে।এখানে বেশি ভিজতে হবে কিন্তু গাছ ভেঙে পড়বার ভয় থাকবে না।
বৃষ্টি একটুও কমেনি।বরং বেড়েই চলেছে।
ভাস্বতী ক্ষুণ্ন গলায় বলল আমরা যাতে পাহাড়টায় না উঠতে পারি তার জন্য একটার পর একটা বাধা আসছে।লোকেরা এইজন্যই আমাদের এখানে আসতে বারণ করেছিল।
রঞ্জন ভাস্বতীর গালে টোকা মারলো।এসব কি বলছো কি?
—-যাইহোক না কেন আমরা ওই পাহাড়ে উঠবোই।
রঞ্জন বলল নিশ্চই উঠবো।তবে আজ বোধ হয় ফিরে যেতে হবে।সাড়ে চারটে বেজে গেল।আর বেশি দেরি করলে ফেরার উপায় থাকবে না।কাল আবার না হয় আসা যাবে।
ভাস্বতী তীক্ষ্ণ ভাবে জিজ্ঞেস করলো কাল ঠিক আসবে?
—-কেন আসবো না।এবার রেনকোট আনা হয়নি।এই যা মুশকিল।
একটা রোমান্টিক অভিলাষ ছিল।এই ঝড় বৃষ্টি কাদায় তা পুরোপুরি উবে গেছে।তবে কাল আবার ফিরে আসতে হবে।একবার যখন সে এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠবে ঠিক করেছে,সে উঠবেই।দরকার হলে বারবার ফিরে আসবে।
বৃষ্টি থামবার কোনো লক্ষণ নেই।ব্যাঙের সম্মিলিত ডাক শুরু হয়েছে।
রঞ্জন তক্ষুনি ফেরার পথ ধরতে চায়।এই বৃষ্টিতে পাথরগুলো অত্যন্ত পিচ্ছিল।সেগুলিকে ভয়ঙ্কর বলা যেতে পারে।তবু সে ভাস্বতীর হাত ধরে বলল সাবধানে নামতে পারবে?
—-সে ম্লান গলায় বলল পারবো, ফিরে চলো।
কয়েক পা এগিয়েই রঞ্জন বুঝতে পারলো এটা হঠকারিতা।এরকম প্রকৃতির ভয়ঙ্কর রূপের সাথে প্রতিযোগীতা করার কোন মানে হয় না।
এত ঝড়বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ী ঢালু রাস্তায় কেউ পথ হাঁটে না।স্থানীয় আদিবাসীরা তো বৃষ্টিতে বনাঞ্চলে পা’ই বাড়ায় না।
হঠাৎই রঞ্জনের মনে হল পাশে একটা সরু জিনিস নড়াচড়া করছে।কেঁচো হতে পারে।কিংবা জোঁকও হতে পারে।রঞ্জন বুঝতে পারে বৃষ্টির সময় অরণ্যের এই সব প্রাণী দেখা মেলা নিশ্চিত।তারওপরে গোখরোর উপদ্রব পাহাড়ে বেশিই।
রঞ্জনের জুতোর মধ্যে ভিজে মোজা পরে হাঁটতে অস্বস্তি হচ্ছিল।জুতোখুলে মোজা খুলে নিল সে।ভাস্বতী নীচের দিকে শাড়ি,সায়া খানিকটা চিপড়ে নিল।ওরা এত ভিজেছে গা,মাথা মোছার কোনো মানে হয় না।
বৃষ্টিতে অরণ্য আরো বেশি নিঃঝুম হয়ে পড়েছে।ফেরার জন্য ওরা তৈরী হয়েছে এমন সময় সোনা গেল মনুষ্যকন্ঠ।একটা গানের মত আওয়াজ কথা শোনা যায় না,শুধু সুর—কণ্ঠস্বর খুব সুরেলা নয়—বেসুরোরা যেভাবে গান গায়,সেরকমই।
ওরা দু’জনে চোখ চাওয়াচাওয়ি করলো।কিন্তু কোনো কথা বলল না।
সুরটা শোনা যাচ্ছে।ক্রমশ পাহাড় থেকে এগিয়ে আসছে।জঙ্গল ভেদ করে।
একটু বাদেই পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো একটা মনুষ্য মুর্তি।
ক্রমাগত বৃষ্টির মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসছে বিরাট লম্বা চওড়া লোকটা।
লোকটার পরনে হাঁটুর নীচ অবধি ধুসর কালচে রেইনকোট।মাথায় টুপি কপাল পর্যন্ত ঢাকা,পায়ে ভারী গামবুট।তার হাতে একটা লম্বা লোহার জিনিস,দেখলে মনে হয় একটা খুব বড় সাইজের চিমটে,সেটা দিয়ে সে ঝোপঝাড়ে আঘাত করতে করতে আসছে।আর আপনমনে গান গাইছে।কথা না বোঝা গেলেও গানের সুরটা চিনতে পারলো ভাস্বতী।এই পরিবেশে এরকম গান শোনা যায়!—‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিল ভারতবর্ষ/সেদিন বিশ্বে সে কি কলরব,সেকি হর্ষ,সে কি মা ভক্তি…’
লোকটি প্রথমে দেখতে পায়নি ওদের।তারপর চোখ তুলে তাকালো।এগিয়ে আসলো ওদের দিকে।আপাদমস্তক ভালো করে দেখলো গম্ভীর ভাবে।ভাস্বতীর দিকেই তার বেশিক্ষণ দৃষ্টি,বলাই বাহুল্য।
লোকটির এমন ভাব,যেন সে অরণ্যের অধিপতি।যেন তার এলাকায় আগুন্তুক এসেছে।গম্ভীর ভাবে খুঁটিয়ে দেখছে সে।
গম্ভীর ভাবে বলল বাঙালি?
রঞ্জন বলল হ্যাঁ
—-বৃষ্টিতে আটকে পড়েছেন?
—-হ্যাঁ
—-ফিরে যাবেন?
—-তাই ভাবছি।
কথা বলার সময় লোকটি মাটিতে লোহার চিমটেটা ঠুকছিল।শব্দ হচ্ছিল কর্কশ ভাবে ঠন ঠন ঠন।
রঞ্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল বছরের এই সময়টা খুবই খারাপ।
ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনি নিশ্চই উপরের মন্দিরটায় যেতে চাইছিলেন?
ভাস্বতীর বদলে রঞ্জনই উত্তর দিল সেরকমই ইচ্ছে ছিল।এখন আর হবে না।
লোকটি হাসলো যেন সে হঠাৎ কোনো পুরোনো ঘটনা মনে করে ফেলেছে।
বৃষ্টি থেমে গেলেও আকাশের রং ময়লা।অন্ধকার হয়ে রয়েছে চারপাশ।এইটুকু বোঝা যাচ্ছে যে আজ আর বিকেলের আলো ফুটবে না।
মাথার টুপিটা খুলতেই লোকটির মুখ এতক্ষনে দেখা গেল।বয়স অনুমান করা মুস্কিল চল্লিশের বেশি হলেও হতে পারে আবার পঞ্চাশও হতে পারে।একমাথা ঝাঁকড়া চুল,অবিন্যস্ত।খাড়া নাক,রোদে পোড়া তামাটে রঙ।তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো চোখ।কথা বলার ধরণও ভারিক্কি ধরণের।
—-আপনারা কোথা থেকে আসছেন?
—-কলকাতা থেকে।
লোকটি আবার হাসলো।যেন মনে হয় মুখে একরকম কথা বলে মনে অন্যকিছু ভাবে।
বলল কলকাতা অনেক দূর।এখন কোথা থেকে আসছেন?
রঞ্জন ডাকবাংলোটার নাম বলল।
লোকটাকে এবার চিন্তিত দেখালো।মাটিতে চিমটেটা গেঁথে দিয়ে টুপিটা পরিয়ে দিল।
ভাস্বতী এই প্রথম কথা বলল আপনি কোথায় থাকেন? কাছাকাছি?
লোকটি যেন চমকে উঠলো ভাস্বতীর গলার আওয়াজ শুনে।ভাস্বতীর মুখ ও ভিজে শরীরের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলল এই পাহাড়েই আমার ঘর।
রঞ্জন আর ভাস্বতী দু’জনেই অবাক হল।এই পাহাড়েই ঘর মানে!মন্দিরের পুরোহিত?না তো দেখে তো মনে হয় না।পরনের পোষাক ও রূপে এক বন্য আদিমতার ছাপ আছে।কিন্তু পাহাড়ে যারা থাকা তাদের পাহাড়ী বলে একে কি বলা যায়?
লোকটি পকেট থেকে সিগারেট বের করলো।কি মনে করে নিজে ধরানোর পর রঞ্জনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল চলবে?
রঞ্জনের সিগারেটের প্যাকেট বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।সিগারেট পেয়ে সে কৃতজ্ঞতা বোধ করলো।বলল ধন্যবাদ।আমাদের সাড়ে সাতটার মধ্যে বাস ধরতে হবে।
—-তার আগে নদী পার হতে হবে।
—-হ্যাঁ আচ্ছা চলি।
—-কোথায় যাবেন?
—-নদীর দিকে।
রঞ্জন চামড়ার ব্যাগটা তুলে নিয়ে ভাস্বতীকে বলল চলো।
লোকটির সাথে তাদের পরিচয় হয়নি,নাম জানাজানি হয়নি।তাই আনুষ্ঠানিক বিদায় নেবার প্রশ্ন ওঠে না।অনেক দূরে বাঙালি দেখা হলে যে উচ্ছাস দেখানোর রীতি আছে তা রঞ্জন আর ভাস্বতী মানে না।তবে লোকটির কাছ থেকে রঞ্জন সিগারেট নিয়েছে বলে বলল আচ্ছা চলি তা হলে।
ভাস্বতীও লোকটির দিকে তাকায়।লোকটি ভাস্বতীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।যেন ভাস্বতীর রূপের ছটাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।এতে ভাস্বতী বিরক্ত হয় না।একজন সুন্দরী নারীর এই বিষয়ে অভ্যেস আছে।
লোকটি হাত তুলে বলল আপনাদের আজ ফেরা হবে না।
রঞ্জন লোকটির দিকে তাকালো বলল কেন?
—-ঐ নদী পেরুতে পারবেন না।
—-আসবার সময় পেরিয়ে এসেছি।
লোকটি এবার শব্দ করে হাসলো।সেই হাসির শব্দ জঙ্গলে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।ভরাট গলার গমগম করতে থাকা হাসিটা মোটেই ভাস্বতীর ভালো লাগলো না।
লোকটি বলল আসা আর যাওয়া কি এক কথা?এসেই কি যাওয়া যায় সবসময়?
রঞ্জন সোজা কথার মানুষ।এই ধরণের হেঁয়ালি সে ঘৃণা করে।কোনো উত্তর না দিয়ে সে ভাস্বতীকে বলল চলো।
ভাস্বতী লোকটির কাছ থেকে পুনশ্চ বিদায় নেবার জন্য ভদ্রতাসূচকভাবে বলল আমরা আবার কাল কি পরশু আসবো।
রঞ্জন বলল ঠিক নেই।যদি সুযোগ সুবিধে হয়—
লোকটি বলল কালকের কথা কালকে।আজকের কথা ভাবুন।একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছেন।
একটু কান পাতলেই ওরা শুনতে পেল ঝড়ো কলকল জলের শব্দ।
ভাস্বতী বলল এদিকে কি কোথাও জলপ্রপাত আছে?
—-নদীর শব্দ।আসবার সময় এরকম শব্দ শুনেছি।
রঞ্জনের কথার জবাবে একটু উগ্র ভাবেই লোকটি বলল না আসবার সময় এরকম শব্দ শুনতে পাননি।এতদূর থেকে নদীর শব্দ পাননি।
রঞ্জন বুঝতে পারে সত্যটা।
—-এরকম পাহাড়ী নদী বৃষ্টিতে ভরে যায়।কিন্তু এমন শব্দ!
লোকটা ভারিক্কি গলায় বলে ওঠে ও নদী এখন পার হতে পারবেন না।
রঞ্জন সাঁতার চ্যাম্পিয়ন।সে জলকে ভয় পায় না।ভাস্বতী সাঁতার জানে না সেকথা তখন তার মনে পড়ে না।একটু অবজ্ঞার সুরে বলে উঠল ও জল যতই বাড়ুক কিন্তু পার হওয়া যাবে না কেন?লোকে কি ভাবে পার হয়?
—-লোকে পার হয় না।
—-এখন দু’তিন দিন কেউ পার হতে পারবে না।এসব নদীতে নৌকাও চলে না।
রঞ্জন কিছু বলতে যাচ্ছিল, লোকটি বাধা দিয়ে বলল সাঁতার জানলে কিছু হবে না।স্রোতের টানে তিন চার মাইল দূরে গিয়ে উঠবেন।যদি পাথরে ঘা না লেগে মাথা না ফাটে।
—-গিয়েই দেখা যাক।
লোকটার কথা ভদ্র লোকের মত হলেও চেহারার বন্যতার মত সবসময় একটা আদিম ঔদ্ধত্য আছে।
একটু যেন নরম হল লোকটা।বলল আমি এ জায়গায় অনেকদিন আছি তো তাই আমি জানি।তাছাড়া আপনি ওই নদীটার নাম জানেন?
—-খাবারের দোকান দার বলেছিল বটে নামটা। কি যেন জিরে না কি যেন।নাম দিয়ে কি হবে?
—-নদীর নাম সবসময়ে জেনে রাখা জরুরী।
—কেন?
—-স্থানীয়র এই নদীর নামটাকে জিরুয়া বলে।আসল নাম জিরা।
—-জিরা অতি সাধারণ বাঙালি মশলা।কিন্তু জিরা ঝাঁঝালো হয়।জিরা নদী একবার পেরোলে কি আর ফেরা যায়?
নিজের রসিকিতায় লোকটি আবার হাসলো লঘু ভাবে।ভাস্বতীর ঠোঁটেও একটা হাসির রেখা দেখা গেল।এই অদ্ভুত ধরনের লোকটাকে তার খারাপ লাগছে না।সাধারণত অচেনা লোকদের পছন্দ করে না সে।সকলেরই কথা একঘেয়েমি বস্তাপচা হয়।সত্যিই এর নাম জিরা নাকি লোকেরা নদীটার নাম জিরা দিয়েছে নাকি এই বন্য’টার বানানো?
—-আপনি কে?
—-আমি জিরার ওপারের হলেও একজন সাধারণ মানুষ।
এই কথাটা বলার সময় তার মুখে একটা সুক্ষ হাসি ফুটে ওঠে।যেন সে এই সাধারণ মানুষ কথা দুটোতে বেশি জোর দিচ্ছে—এবং সে যেন দু’জন অসাধারন মানুষের সাথে কথা বলছে।
রঞ্জন ভ্রু কুঞ্চিত করলো।লোকটি বেশি বেশি হেঁয়ালি করছে।বৃষ্টির পরে এরকম বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে হাসির কথা মানায় না।
ভাস্বতী জিজ্ঞেস করলো আপনি এখানে থাকেন বললেন, আপনি এখানে কি করেন?
লোকটি সংক্ষিপ্তভাবে বলল ব্যবসা করি।
তারপর ও আরো বিস্তারিত ভাবে বলল দেখুন না এই পাহাড়,জঙ্গলে আপনার মত কোনো মহিলার গলার আওয়াজ শোনা যায়নি।এই গাছগুলো,পাথরগুলো পর্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনছে।
ভাস্বতী গাছপালাগুলোর দিকে তাকালো।যেন সে ভক্তদের দেখছে।তার ভালো লাগে।
রঞ্জন বিরক্ত বোধ করলো।আজেবাজে কথা শুনে সে সময় নষ্ট করতে চায় না।লোকটির কাছে আরো কিছু জেনে নেওয়ার পর বলল নদী যদি পার না হওয়া যায় তবে এদিকে আর কোথাও থাকবার জায়গা নেই?
লোকটি সবজান্তার মত হাসলো।
—-খোঁজ খবর না করে আপনাদের আশা ঠিক হয়নি।বৃষ্টির সময়ে এদিকে কেউ আসেনা।আদিবাসীদের গ্রাম এখান থেকে ছয়-সাত মাইল দূরে।সেও নদী পেরিয়ে যেতে হয়।
—-কেউ কেউ আমাদের আসতে বারণ করেছিল।
—-কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেননি কেন? অশিক্ষিত গেঁয়ো লোকের কথা বিশ্বাস করা যায়না?কিন্তু তারাই প্রকৃতিকে সবচেয়ে বেশি জানে।
রঞ্জন বলল একটা ছোট নদী পার হওয়া তেমন কিছু কঠিন কাজ নয়।
—-কিন্তু এই বিশেষ নদীটি পার হওয়া শক্ত।
ভাস্বতী একটু রেগে গিয়ে বলল তাহলে কি এই নদী বৃষ্টিতে কেউ পারাপার করে না?
—-ভারতবর্ষে ক’টা নদীতে ব্রিজ আছে বলুন?
—-কোনো খেয়া পারাপার?
—-এরকম পাহাড়ী নদীতে খেয়াপারাপার করা যায় না।তাছড়া এই পাহাড়টিতে লোকে আসতে চায় না।
রঞ্জনকে চিন্তিত দেখাচ্ছিল।ভাস্বতী বলল ওপরের মন্দিরটায় লোকজন আছে?
—-কেউ নেই।
—-তাহলে মন্দিরটা আছে কেন?
—-এরকম থাকে
—-তাহলে আপনি কোথায় থাকেন?
—-মন্দিরে থাকি না।
ভাস্বতী রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল মন্দিরটা যদি খালি থাকে তাহলে আমরা রাত্তিরটা ওখানে কাটাতে পারি।
ভাস্বতীর মনে এডভেঞ্চার স্পৃহা জেগে উঠেছে।বাথরুমের ব্যাপার মনে নেই, কিন্তু জোঁক! তারা কি এত উপরে উঠবে।
রঞ্জন বলল এখানে জোঁক কিলবিল করছে।
লোকটি বলল এগুলো জোঁক নয়,কেঁচো।তবে সাপ প্রচুর আছে।
তবে সাপের নাম শুনলে অন্য কোনো মহিলা লাফিয়ে উঠতো।কিন্তু ভাস্বতীর মনে হল পাহাড়ী জঙ্গলে সাপ থাকবে তাতে আর আশ্চর্য্য কি!
—-চলো আমরা মন্দিরের দিকে যাই।
লোকটি বলল মন্দিরে এসময় ওঠা সম্ভব নয়।বৃষ্টির পর পাথর পিচ্ছল হয়ে আছে।
ভাস্বতী বলল ওঠা যায়নাতো ওপরে মন্দির বানালো কি করে?
—-ওঠা যায় না তো বলিনি।এমনিতেই শক্ত, এই বৃষ্টিতে একেবারেই ওঠা যায় না।
রঞ্জন মাঝপথে ওদের কথা থামিয়ে বলল সতী চলো তো আমরা ঠিক নদী পার হতে পারবো।
রঞ্জন হাঁটতে শুরু করলো।ভাস্বতী চলে এলো তার পাশাপাশি।লোকটিকে কিছু না বলা হলেও পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।মাথায় টুপিটা পরে নিয়ে চিমটে দিয়ে ঝোপঝাড়ে পেটাতে থাকলো।এমন ভাবে চলছে সে যেন তার নিজের কাজেই চলছে।
রঞ্জন একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো।চেহারাটা ভীষণ দীর্ঘ—লোকটির কোনো বদ মতলব নেই তো?এই পাহাড়ে একা একা একটি বাঙালি লোকের থাকা কেন?কিসের ব্যবসা?অবশ্য চেহারায় যা হোক ওর কথাবার্তায় একটা ভদ্রতার স্পর্শ আছে।
টগবগে ছল ছল করছে নদীর জল।কে বলবে এই নদী সেই–যে নদী একটু আগে রঞ্জন আর ভাস্বতী পার হয়ে এসেছে!অন্ধকার নেমে এসেছে,কোনো জনপ্রাণীর চিহ্ন নেই।
ভাস্বতী রঞ্জনের বাহু আঁকড়ে আছে।
রঞ্জন বলল তুমি আমাকে শক্ত করে ধরে আঁকড়ে থাকতে পারো।রিস্ক নিতে পারবে তো?
ভাস্বতী নিজে ঝুঁকি স্বভাবের মেয়ে।এডভেঞ্চার তাকে আকর্ষণ করে।ভয় পাওয়া তার চরিত্রে মানায় না।কিন্তু সাঁতার জানে না।তার রক্ত মাংস চামড়ার মত ভয় বাস্তব।এই ভয়ের কাছে সবাই একা।অতন্ত্য প্রিয়জনের পাশে থাকাও—সান্ত্বনা দেয় না।
লোকটি অল্প দূরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে অল্প অল্প হাসি।সম্প্রতি সে একটা গাছের ডাল ভেঙে নিল।ডালাপালা সমেত ছুড়ে দিল জলে।
মুহূর্তেই নদীটা গ্রাস করে নিল সেটাকে।আবার কিছুক্ষন পরে অনেকদূরে ভেসে উঠলো সেটা।স্রোতের টানে চলে যাচ্ছে দিশাহীন ভাবে।তারপর আর সেটাকে দেখা গেল না।ভাস্বতী এবার শিউরে উঠলো।
রঞ্জন হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে এক এক করে পোষাক খুলে ভাস্বতীর হাতে দিয়ে জাঙ্গিয়া পরা অবস্থায় নেমে পড়লো জলে।
কোমর জল পর্যন্ত নেমেই রঞ্জনের দুঃসাহস ডালটার মত অবস্থায় পরিণত হল।
ভাস্বতী চেঁচিয়ে উঠলো,এই—-।
লোকটি ক্ষিপ্র পায়ে দৌড়ে গেল।চিমটেটা বাড়িয়ে দিল।ধমকের সুরে বলে উঠলো করছেন কি—পাগলের মতন।
অনেক চেষ্টার পর চিমটেটা ধরে রঞ্জন উঠতে পারলো।বিপদে পড়লেও রঞ্জন ভয় পায়নি।কিছু দূর গিয়ে সে ভেসে উঠতোই।
ভাস্বতীর মুখখানা রক্তিম।মনে মনে সে অসহায় হয়ে পড়েছিল।অল্পক্ষনের জন্য রঞ্জন যেন মৃত হয়ে গেছিল তার কাছে।সে নিজেকে অপরাধী ভাবছিল।
লোকটি বিনম্র ভাবে এগিয়ে এসে বলল আজ রাত্তিরে আপনারা আমার অতিথি।আমার নাম রাজা সেন।
রঞ্জন বলল আমি রঞ্জন সরকার।আমার স্ত্রী ভাস্বতী গাঙ্গুলি সরকার।
তিনজনেই হাতজোড় করে নমস্কার বিনিময় করলো।তারপরে আর একবার পেছন ফিরে তারা তাকালো নদীটির দিকে।নদীর চরিত্র বড় দুর্বোধ্য।
ওরা এগিয়ে গেল পাহাড়ের সরু পথ বেয়ে।বড় পাথরটার আড়ালে লোকটার ঘর।
ফেরা পথটুকু দীর্ঘক্ষণ মনে হয়।রঞ্জন লোকটির সাথে কথা বলছে ভাস্বতী একা একা হাঁটছে আগে আগে।বৃষ্টি থেমে গেলেও এদিক ওদিক জল ঝরার শব্দ।পাহাড়ে নিস্তব্ধ আঁধারে কয়েকটা শালিখ পাখি কিচিরমিচির করে ফিরে যাচ্ছে।
এ পাহাড়ে বিশেষ কোনো ফুলের সমারোহ নেই।তবে একধরনের সাদা পাহাড়ী ফুলের পরগাছা মাঝে মাঝে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।রাত্রে যখন এখানে থাকতেই হবে—এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ভাস্বতীর মনে কোন জড়তা নেই।
—আপনি এখানে কতদিন আছেন?
—অনেক সময়।এই ধরুন দশ বছর।
—-দশ বছর! কি করেন আপনি?
—-আমি সাপ ধরার ব্যবসা করি।
পাহাড়ে এমনভাবে বাড়ী বানিয়ে থাকা অসম্ভব কিছু নয়।বিদেশের ছেলেমেয়েরা অনেকেই থাকে–রঞ্জন দেখেছে।হয়তো এদেশেও অনেকে রয়েছে,সে খবর রাখেনি।কিন্তু সম্পূর্ণ একা একা?
—আপনি কি কলকাতার?
লোকটি কি একটা যেন ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।বলল উঁহু ত্রিপুরা।
বাড়ীটা তাঁবু ও কুঁড়েঘরের মাঝামাঝি।কাঠের ফ্রেমে তিনপাশে ত্রিপল লাগানো।শক্তপোক্ত কিছু গাছের কাঠ দিয়ে ঘেরা।পাহাড়ই একদিকের দেওয়াল।ওপরে টিন।ভাস্বতী এরকমই এক কুঁড়ে ঘরে হয়তো থেকে যাওয়ার বাসনা করেছিল।
ভিতরে দুটি কামরা।একটিতে দুটি ক্যাম্প খাট পাতা,টুকিটাকি জিনিসপত্র,একটি রাইফেল।পাশের ঘরে শুধু অনেকগুলি খাঁচা।
ঘরে ঢুকে লোকটি রেইনকোটটা খুলে ফেলার পর দেখা গেল,তার লম্বা দীর্ঘ চেহারা।তবে তা মেদহীন পেটানো ধাতুর মত শক্ত।মুখের মধ্যে সুশ্রী একটা ভাব হয়তো অনেক আগে ছিল।পাহাড়ে থাকতে থাকতে তা যেন রুক্ষ হয়ে গেছে।রেনকোটের তলায় সে শুধু পরেছিল ফুলপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি।জামা-টামার বালাই নেই।হাতের বাইসেপ্স গুলো স্পষ্টতই দৃঢ় লোহার মত।
—-আপনাদের জামা কাপড়তো সব ভিজে গেছে।সঙ্গে আর কিছু আছে?
—-রাত কাটাবার প্ল্যান ছিল না।তাই সঙ্গে কিছু আনা হয়নি।
—-ভিজে পোশাক পরে তো থাকতে পারবেন না।আর আমার কাছে তো ধুতি-টুতিও কিছু নেই।কয়েকটা পাজামা আছে অবশ্য-তার দুটো পরে নিয়ে জামাকাপড়গুলো মেলে দিন, শুকিয়ে যাবে।
—-থাক না,তার আর দরকার নেই।
লোকটি বিছানার তলা থেকে দুটো পাজামা আর গেঞ্জি বার করে রঞ্জনের হাতে দিল।
বলল ইস্ত্রি না করা থাকলেও কাচা আছে ব্যাবহার করার কোনো অসুবিধে নেই।
—-আপনাকে খুবই অসুবিধেয় ফেললাম।
লোকটি পর্যায়ক্রমে দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর ওরা দুজনে চুপচাপ হয়ে রইলো।ভিজে শরীরে কাঁপুনি দিচ্ছিল।দুজনে পরস্পরের অতি চেনা মানুষ,দু-এক মুহূর্ত যেন কথা খুঁজে পায় না।চোখ সরিয়ে নেয়।
ভাস্বতী বা রঞ্জন দুজনের কেউই অন্যের পোষাক পরা পছন্দ করে না।অথচ উপায় তো নেই।
ভাস্বতী একটু হালকা হেসে বলল আমি কি সারারাত এই পাজামা পরে থাকবো।
—-ভিজে শাড়ি পরে সারারাত থাকতে পারবে না।ঘন্টাখানেকের জন্য একটু মেলে দাও।যদি অল্প শুকিয়ে যায় পরে নিও।
ঘরের একটা দরজা আছে দরজাটা আলগা।পাশে রাখা আছে।রঞ্জন ওটা সরিয়ে এনে লাগিয়ে দিল।প্যান্ট,শার্ট,জাঙ্গিয়া,গেঞ্জি খুলে সেই পাজামা আর গেঞ্জি পরলো বিনা বাক্যব্যয়ে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখার পর ভাস্বতী শাড়িটা ছেড়ে ফেলল।সিল্কের শাড়ি জলে ভিজে বেজায় ভারী।মেলে দিলে শুকোতে বেশিক্ষন সময় লাগবে না।ব্লাউজটা খুলে ফেলার পর কালো সায়া আর কালো ব্রাতে ফর্সা শরীরটা মোহময় হয়ে উঠলো।যেন সে প্রাচীন মিশরের দেবদাসী।
ঘরের ভেতরটা আবছা অন্ধকার।ভাস্বতী রঞ্জনের কাছে এসে তার কাঁধের উপর দুই হাত রেখে বলল, তুমি রাগ করেছ?
-উই বিহেভড এজ ফুলস।কিছু না জেনেশুনে আমাদের এরকম আসা ঠিক হয়নি।
ভাস্বতী রঞ্জনের থুতনিটায় চুমু দিয়ে বলল এখন আর চিন্তা করে কি হবে।একটা তো থাকার জায়গা পাওয়া গেছে।
—-অচেনা লোকের কাছে থাকতে আমার ভালো লাগে না।
—-কত অচেনা জায়গায় তো আমরা থাকি।
—-সেখানে আমরা টাকা দিয়ে থাকি,হুকুম করি।সে জায়গা আর এ জায়গা কি এক?
ভাস্বতী ম্লান গলায় বলল এখন থেকে তুমি কি আমার ওপর সবসময় রাগ করে থাকবে?
—-তোমার ওপর রাগ করবো কেন?
—-হ্যাঁ করেছ তো।
রঞ্জন ভাস্বতীকে আলিঙ্গন করে বলল তুমি একদম কথা শুনলে না।আসবার জন্য যেভাবে জেদ ধরলে।
—-আমর কিন্তু বেশ ভালো লাগছে।
রঞ্জন ভাস্বতীর ঠোঁটে ঠোঁট জেঁকে দিল।ভাস্বতীর শরীরটা উষ্ণ।একটু-আধটু বিপদের গন্ধ পেলেই তার শরীরী চাঞ্চল্য বাড়ে।সে নিজের ঠোঁট রঞ্জনের ঠোঁটে পিষে দিতে লাগলো।
ব্রা পরিহিত কোমল রূপসী স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে চুম্বন খেলা দীর্ঘক্ষণ করবার ইচ্ছে হলেও রঞ্জন করলো না।নিজের উষ্ণ স্ত্রীর কাছে একটু বিরতি পেয়ে বলল তাড়াতাড়ি করে নাও।ভদ্রলোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভাস্বতী তার অন্তর্বাসের বাঁধন খুলতেই আবছা আলোতে নগ্ন বক্ষদেশ দেখা গেল।সে সম্পুর্ন রকমের সুবিধাভোগীনি কারণ সে একটা নিখুঁত রকমের শরীর পেয়েছে।ভাস্বতীর উজ্জ্বল নগ্ন স্তনের আভায় উদ্বেলিত হচ্ছিল তার শরীর।সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, দুঃসাহসী নারীর উদ্ধত বক্ষ হলে তা সম্পুর্ন নিখুঁতই বলা যায়।ভাস্বতী তেমনই উন্নত কোমল স্তনের অধিকারিণী।গোপন ব্লাউজের অন্তরালে তার হৃদয়স্পন্দন স্তনদ্বয়ের সাথে একাত্ম হয়ে থাকে।
সম্পুর্ন শরীরটা এগিয়ে গেল খাটের দিকে।এক এক করে পাজামা গেঞ্জি তুলে নিল,পরলো।
রঞ্জন চামড়ার ব্যাগ থেকে টর্চটা বেরকরে ভাস্বতীর গায়ে ফেলে বলল তোমাকে মজার দেখাচ্ছে।
টর্চের আলোর আভা পেয়ে লোকটি বাইর থেকে বলল ভেতরে একটা হ্যাজাক আছে জ্বেলে নিতে পারেন।
ভাস্বতী বলল আমি এইরকম ভাবে বেরুবো?
রঞ্জন বলল কি আর করা যাবে?গেঞ্জিটাও ফুটোফুটো।
ভাস্বতী ওদের বড় তোয়ালেটা গায়ে জড়িয়ে নিল।তার মুখে লজ্জার চিহ্ন নেই,রয়েছে কৌতুক।নিজের শরীরটা নিয়ে সে বিব্রত বোধ করে না কখনো।কিন্তু তার একটু ঠান্ডা লেগে গেছে এর মধ্যে—নাক সুলসুল করছে।
রঞ্জন দরজাটা খুলতে গিয়েও থেমে গেল–কি ভেবে রিভলবার সমেত কোমরে বেল্টটা জড়িয়ে নিল।তারপর দরজা খুলে বাইরে এলো।
লোকটা বাইরে বসে একটা স্টোভ জ্বালানোর চেষ্টা করছে।ভাস্বতী তাকে জিজ্ঞেস করলো আপনার কাছে অ্যাসপিরিন জাতীয় কিছু আছে?
মুখ না ফিরিয়ে সে বলল না।
তারপর ওদের পোশাক দেখে বলল কি আর হবে একটা রাত কষ্ট করে কাটিয়ে দেন।
—-কাল নদীর জল কমবে?
—-যদি বৃষ্টি না হয়।
—-আপনি এখানে একা থাকেন?
—-এখনো দ্বিতীয়জনকে কি দেখতে পেয়েছেন এই জঙ্গলে?আমার সাথে তবে থাকবেই বা কে?
ভাস্বতী জিজ্ঞেস করলো আপনার একা একা থাকতে খারাপ লাগে না?
লোকটা স্টোভটা জ্বেলে সেটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।ভাস্বতীর মুখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল আমাকে টারজান ভাববেন না।এ জঙ্গলের ছ মাইল দূরে আদিবাসী গ্রাম আছে ওরা আমায় চেনে।একশো তিরিশ কিমি দূরে ফরেস্টের অফিস।ওরা আমায় চেনে,জানে।আমার সাপ ধরার লাইসেন্স আছে।তাহলে আর একা কোথায়?
স্টোভটা নিয়ে ও দ্বিতীয় ঘরটাতে ঢুকে গেল।পেছন পেছন ওরাও এলো।একপাশে কতগুলো খাঁচা আর একটু রান্নার ব্যবস্থা।
—-ভাত চাপিয়ে দিচ্ছি।বিশেষ কিছু আতিথ্য করতে পারবো না,এজন্য দুঃখিত।
রঞ্জন বলল আমাদের কাছে পাউরুটি আর জেলি আছে।ভুলেই গেছিলাম।
ওগুলো এখন খেয়ে নিতে পারেন।রাতে ভাত, আলুসেদ্ধ আর পেয়াজ।ঘি আছে টাটকা।ডিম ছিল–ফুরিয়ে গেছে।
ভাস্বতী বলল ঘি আর গরম ভাত তো চমৎকার।
—-প্রত্যেকদিন খাবারের পক্ষে একঘেয়ে।তাছাড়া আর যখন কিছু নেই,তখন ভালো লাগুক আর খারাপ লাগুক—
—-আমাদের ভালো লাগবে।আমি কি আপনাকে রান্নায় সাহায্য করতে পারি?
—-সাহায্য করার কিছু নেই।আমি একসঙ্গেই ভাত আর আলু সেদ্ধ চাপিয়ে দেব–
হিসহিস শব্দ শুনে রঞ্জন চমকে গিয়ে বলল খাঁচা গুলোর মধ্যে কি সাপ আছে নাকি?
—-গোটা তিনেক আছে।ভয়ের কিছু নেই।খাঁচা ভালো করে বন্ধ আছে।দেখবেন?
টর্চের আলোয় দেখা গেল।দুটি সাপ নির্জীব হয়ে পড়ে থাকলেও একটি ফণা তুলে দাপাদাপি করছে।সেটা অন্তত হাত চারেক লম্বা,মাথার ওপর প্রবাদ মতন পায়ের ছাপ আঁকা।
—-এগুলো আপনি ধরেছেন?
—-হ্যাঁ
—-ভাস্বতী বকুনির স্বরে বলে উঠলো, এগুলো নিজে ধরেন কেন?সাপুড়ে কিংবা বেদেদের দিয়ে ধরতে পারেন না?
লোকটি বলল সাপুড়েরাই কেবল সাপ ধরতে পারে এটা পুরোনো ধারণা।কতগুলো টেকনিক আছে শিখে নিলেই হল।ধরবেন নাকি সাপ?
লোকটির শেষের কথাটির মধ্যে যেন একটা স্পর্ধার আদি রসিকতা আছে।ভাস্বতীর তবু খারাপ লাগলো না।মাঝপথে রঞ্জন বলে উঠলো কারা কেনে সাপ?
—-বোম্বের হপকিনস ইনস্টিটিউট।তাছাড়া দেশে বিদেশে নানা গবেষণাকেন্দ্র,চিড়িয়াখানা কেনে।
—-আপনি কি নিজেই যান ওদের কাছে।
—-না সরাসরি আমি বিক্রেতা নই।আসলে আমি সে অর্থে ব্যাবসায়ী নই।ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আমি একজন সাপুড়ে সে অর্থে বেদে।আমার কাজই সাপ ধরা।আমি চালান করি ভুবনেশ্বরে।সেখানকার কেন্দ্রের মাধম্যে বিক্রি হয়।
 
  • Like
Reactions: Ex-fire

Manali Bose

Active Member
1,461
2,136
159
কিছুক্ষন থামবার পর লোকটি বলল তবে এগুলো বাজে সাপ।ভালো দাম পাওয়া যায় পাইথনের।এই পাহাড় থেকেই তিনটে ধরেছি।আর একটা আছে সেটা খালি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
রঞ্জন বলল, এ পাহাড়ে এখনো একটা আছে?
—-হু সেটাকে দেখেছি দু-একবার।তবে ধরা যায়নি।এই বর্ষার মধ্যেই ধরে ফেলতে হবে।শীত পড়লে আর পাওয়া যাবে না।
—-এই যে একা একা থাকেন,সাপ ধরেন আপনার ভয় করে না?
—-জীবিকার জন্য অনেক কিছু করতে হয়।শহরে ব্লাস্ট ফার্নেসে যে শ্রমিক কাজ করে তার ভয় করে না?
—-আমরা বোকার মত এখানে চলে এসেছি।আপনি না থাকলে আমরা ভীষন বিপদে পড়তাম।
লোকটি ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনার ভিজে কাপড়গুলি এ ঘরে মেলে দিন,গরম আছে।
রঞ্জন বলল এরকম অভিজ্ঞতা আপনার আগে হয়েছে?আর কেউ এ পাহাড়ে এসে আটকা পড়েছে?
—-না।
ভাস্বতী উঠে গেল পাশের ঘরে।রঞ্জনের শার্ট ও নিজের শাড়ি তুলে নিল।তার সায়া,ব্রা,রঞ্জনের জাঙ্গিয়া নিতে ইতস্তত করলো একটু।অচেনা মানুষের সামনে এসব প্রদর্শন করা সহবত নয়।কিন্তু অচেনা মানুষের সামনে সে কবে পাজামা,গেঞ্জি,তোয়ালে গায়ে বেরিয়েছে?
অন্তর্বাসগুলো এ ঘরেই মেলে দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে খাঁচার ঘরে চলে এলো।
লোকটি একটা ডেকচিতে আলু পেয়াজ সমেত চাল ধুয়ে বসিয়ে দিল স্টোভে।
তারপর একটা বাক্স এনে একটা ব্র্যান্ডির বোতল ও দুটো গেলাস বার করলো।রঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলো আপনার চলবে তো?
—-রঞ্জন বলল না থাক।
—-আপত্তি আছে?
—-আপত্তি ঠিক নয়।আমি ওসব জিনিস একটু খেলে তারপর বেশি না খেয়ে থাকতে পারি না।আপনার জিনিসে আমি ভাগ বসাতে চাই না।আপনার ফুরিয়ে যাবে—আবার কবে আনতে পারবেন আপনি ঠিক নেই।
—-লোকটি মৃদু হেসে অন্য একটি বোতল বের করে বলল আমার কাছে রাম আছে চলে যাবে।সপ্তাহ পরে শহর যাবো।যেটুকু আছে ব্র্যান্ডিটা এখন খাওয়া যেতে পারে।আমি আগামীর কথা চিন্তা করি না।
—-না থাক।
লোকটি আর রঞ্জনকে পীড়াপীড়ি করলো না।ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনি?
–ভাস্বতী বলল আমি একটু চা খাবো।
লোকটি বলল দুঃখিত আপনাদের চায়ের কথা বলা উচিত ছিল।দাঁড়ান আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
ভাস্বতী বলল আপনি বসুন না।আমি করছি কোথায় কি আছে বলুন?
লোকটি বলল দু’কাপ।আমার জন্য করবার দরকার নেই।
অন্ধকারের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে এলো ভাস্বতী।রঞ্জন এতো আরাম করে কখনো চা খায়নি।বৃষ্টিতে ভেজার পর গরম চা অপূর্ব লাগছে।
চা খাবার পর রাজার কাছে সিগারেট চেয়ে নিল রঞ্জন।
ভাস্বতী চায়ে চুমুক দিতে দিতে লোকটিকে দেখছিল।লোকটির নাম রাজা—এই জঙ্গলের নির্জন সাম্রাজ্যে কোনো রাজার প্রয়োজন নেই।তবু লোকটির হাবভাব যেন রাজার মত।স্টোভের আলোতে রাজার মুখখানা দেখা যাচ্ছে।তামাটে পাথরে খোদাই করা মুখ।বয়স যতটা মনে হচ্ছিল এখন মনে হচ্ছে বয়স খুব বেশি নয়।মেরেকেটে চল্লিশ হবে হয়তো।
ঠান্ডা লাগায় দুবার হেঁচে ফেলল ভাস্বতী।যতবার হাঁচি চাপতে যায়।ততবার তার হাঁচি পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।
রঞ্জন বলল সতী তুমি বরং একটু ব্র্যান্ডি খেয়ে নাও।তোমার ঠান্ডা লেগেছে উপকার হবে।
বিয়ের পর রঞ্জনের সাথে ভাস্বতী কয়েকবার অল্প ভদকা পান করেছে।কিন্তু তা একান্ত নিজস্ব লোকের সাথে,নিজের ঘরে–অপরিচিতের সামনে কখনই নয়।
লোকটি কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে আর একটা গেলাসে ব্র্যান্ডি ঢেলে ভাস্বতীকে দেয়।
ভাস্বতী হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিল।ঠোঁটে চুমুক দিয়ে বলল ভালোই লাগছে।
রঞ্জন লোকটিকে বলল আপনার সিগারেটে ভাগ বসাতে হবে।আমার সিগারেটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
ভাস্বতী বলল চামড়ার কালো ব্যাগে আরো তো সিগারেট আছে দেখলাম।
—-তাই তো!
রঞ্জন লাফ দিয়ে চলে গেল পাশের ঘরে সিগারেট আনতে।সেইসময় খাঁচার সাপটা ফণা তুলে হিসহিস করে উঠলো।
ভাস্বতী চোখ তুলে দেখলো লোকটি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার শরীরের দিকে।পুরুষের এই ধরনের দৃষ্টি তার গায়ে বেঁধে না–গা সওয়া।এসব তার রূপের নৈবেদ্য সে জানে।
লোকটি কোনো কথা বলছে না।ভাস্বতীও কি বলবে বুঝতে পারছে না।অথচ এইরকম দুইজনে পাশাপাশি বসে কথা না বলার মধ্যে একটা অস্বস্তি আছে।
ভাস্বতী নিম্নস্বরে বলল,আমরা এসে পড়ে আপনাকে অনেক অসুবিধায় ফেললাম–
লোকটি বলল এই কথা বলতে হয় বলেই বারবার বলছেন।আমার কিন্তু আজ ভালো সময় কাটছে আপনাদের জন্য।এই গাছপালা,এই পাহাড় দেখতে একঘেয়ে লাগে।
রঞ্জন দু প্যাকেট সিগারেট এনে বলল ব্যাগে যে সিগারেট ছিল খেয়াল করিনি।আপনি এক প্যাকেট রাখুন।
লোকটি অবহেলায় এক প্যাকেট রেখে দিল এক পাশে।ধন্যবাদ জানালো না।
ওরা বাইরে বেরিয়ে এলো।এইসব পাহাড়ী রাতে জোৎস্না ফুটলে ভালো হত।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তারাদল সহ নিশাপতি অবলুপ্ত।এখনো মেঘ থমথমে হয়ে রয়েছে।
সিগারেট ধরিয়ে রঞ্জন বলল এ পাহাড়ে কোন বন্যপ্রাণী মেলে না?
—-গেলাস থেকে মুখ সরিয়ে লোকটি বলল খরগোশ আছে।কদাচিৎ দু-একটা মেলে।বনমোরগও আছে।তবে হিংস্র জন্তুটন্তু আর নেই।হাতির পাল আর এদিকে আসে না।শেষবার নদীর ওপারে বছর দুই আগে দেখা গেছিল।
—-আপনার কাছে রাইফেল আছে দেখলাম?
—-ওটা রেখেছি লোকজনদের ভয় দেখাবার জন্য।
—-সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে?
—-না।স্থানীয়দের ধারণা আমি মন্ত্র পড়ে সাপেদের বশ করি।তাই তারা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা করে।চোরটোর আসে না,কারণ তারা আমার কাছে কিছু পাবে না জানে।
ভাস্বতী বলল জায়গাটা ভীষন নির্জন।ওখানেতো রাস্তা রয়েছে তবুও লোকজন আসে না?
—-স্থানীয় লোকজন এ পাহাড়টাতে আসতে চায় না পারতপক্ষে।
—-কেন আসতে চায়না?
—-তার প্রধান কারন সাপের ভয়।মন্দিরটা যখন প্রথম হয়েছিল তখন পরপর দুজন পুরুত সাপের কামড়ে মারা যায়।সেই থেকে আর কোনো পুরুত থাকে না।তাছাড়া আর একটা সুসংস্কার রয়েছে।লোকের ধারণা এই পাহাড়টার ওপরে গেলে কেউ আর ফিরে আসতে পারবে না।কারন ওই মন্দিরটার কাছেই স্বর্গ।
—-স্বর্গ?
—-কেন আপনারা শোনেননি এ কথা?
—-না তো।
—-শুনেছেন ঠিকই,বুঝতে পারেননি।লোকে বলেছে ওই পাহাড়টার ওপরেই হারাবুরু।বলে নি?
—-হ্যাঁ,ঐরকম কথা শুনেছি।
—-হারাবুরু মানেই স্বর্গ।এবং এটা খুবই নতুন কথা নয়।হিন্দুদের যেমন হিমালয়ের উপরে উঠলে স্বর্গ,কেউ বলে কৈলাশ পাহাড়,কেউ বলে মহেন্দ্র,তেমন যারা হিমালয় চোখে দ্যাখেনি,দূরত্ব কখনো কল্পনা করতে পারে না তারা কাছাকাছি কোনো পাহাড় দেখলেই স্বর্গ কল্পনা করে।
এই পাহাড়টা আদিবাসীদের নিজস্ব স্বর্গ।একবার স্বর্গে গেলে যেমন কেউ ফিরে আসতে পারে না।তেমন তাদেরও বিশ্বাস এখান থেকে কেউ ফিরতে পারবে না।
—-আপনি এর উপরে যাননি?
—-অন্তত দশ-বারো বার গেছি।তাই সেই হিসেবে দশ-বারো বার স্বর্গফেরত বলতে পারেন।ওখান থেকেই একটা পাইথন ধরেছি।
রঞ্জন চকিতে পেছন ফিরে তাকালো।হঠাৎ মনে হল চতুর্থ পাইথনটা কাছাকাছি কোথাও আছে।থাকা অসম্ভব তো নয়।গা শিরশির করে ওঠে।
এখন আর পোশাকের অস্বস্তি নেই ভাস্বতীর।নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে একে অপরের মুখ দেখা যায়না।শুধু সিগারেটের আগুন।একবার সে তোয়ালেটা সরিয়ে ফেলেছিল বুক থেকে।আবার অভ্যেসবশত আঁচলের মত জড়িয়ে নেয়।
লোকটি আবার বলতে শুরু করলো শীতকালে কিছু তীর্থযাত্রী আসে।
—-শুধু শীতকালে আসে কেন?
—-কুসংস্কারের সাথে বাস্তবজ্ঞান মেশানো।শীতকালে নদীটা শুকিয়ে যায়।সাপেরা গর্তে ঢুকে যায়।ওদের শাস্ত্রমতে ওটাই ওদের তীর্থের সময়।
—-তখন মন্দিরে ওঠে।
—-না।সে সাহস কে দেখাবে? স্বর্গে যেতে কে বা চায়।তাহলে যে আর ফিরবে না।মন্দিরের অনেক নীচ থেকে পুজো দেয়।মুরগীর গলা কেটে ছুঁড়ে দেয়।বিশেষ করে বাঁজা মেয়েরা বেশি আসে।এখানে পুজো দিলে নাকি ওদের সন্তান হয়,–এই ওদের বিশ্বাস।
একটুক্ষণ চুপ থেকে লোকটি ভাস্বতীকে জিজ্ঞেস করলো আপনিও তো সেইজন্যই এসেছেন?আসেন নি?আপনারও নিশ্চই সন্তান হয়নি?
লোকটির কণ্ঠস্বর একটু রুক্ষ মনে হল।পুরুষমানুষের এরকম কণ্ঠস্বর শোনার অভ্যেস নেই ভাস্বতীর।সে কড়ে আঙুলের নখের ডগা ঠেকিয়ে এরকম পুরুষকে অবহেলা করতে পারে।
শান্ত গাম্ভীর্যের সঙ্গে ভাস্বতী বলল আমি সেরকম কোনো বিশ্বাস নিয়ে আসিনি।এমনি কৌতূহলে এসেছি।
—-সন্তান না হলে অনেক মেয়েরই মাথা খারাপ হয়ে যায়।আমি জানি।
—-আপনি ভুল জানেন।
সঙ্গে সঙ্গে লোকটি গলা নরম করে বলল আপনাকে আর একটু ব্র্যান্ডি দেব?
ভাস্বতী স্বামীর অনুমতি না নিয়েই বলল দিন।
অন্ধকারে গেলাসে ঠোকাঠুকি হল।ভাস্বতী দেখলো তখন তার গেলাস ধরে আছে লোকটির আঙ্গুল।ছোঁয়া লাগলেও লোকটি হাত সরিয়ে নিল না।
ভাস্বতী সামান্য হেসে গেলাসটা তুলে নিল।বড় চুমুক দিল একটা।গলায় অপ্রিয় তরল আগুনের স্বাদ।
তোয়ালেটা বুক থেকে খুলে সে পাশে রেখে দিল এবার।যার ঠান্ডা লেগেছে সে কেন অন্ধকারে আব্রু রক্ষার হাস্যকর চেষ্টায় বুকে ভিজে তোয়ালে জড়িয়ে আছে এতক্ষন?নিছক সমতল জীবনের অভ্যেস।
—-রঞ্জন বলল তাহলে বোঝা যাচ্ছে আদিবাসীদের কাছে এটা পবিত্র জায়গা।আপনি যে এখানে থাকেন কেউ আপত্তি করে না?
—-আমার ওড়িশা সরকারের লাইসেন্স আছে।ওড়িয়াদের মত ওড়িয়া ট্রাইবরাও ধর্মভীরু।এ পাহাড়ে একা একা থাকায় ও সাপ ধরে ওদের উপকার করায় ওদের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছি।এই বনাঞ্চলের এদিকটায় কাঠ কাটতেও তেমন ওরা আসে না।
—-কিন্তু এ কাজে আপনার জীবনের আশঙ্কা আছে।
—-কোথায় নেই?জীবন দেওয়া-নেওয়া বন্যপ্রাণীদের নিজস্ব ব্যাপার।এ জঙ্গলে এক সময় বাঘ থাকত—এসব স্থানীয়দের কাছে শোনা।এখন আমি একা আছি।স্বর্গের দায়িত্বশীল প্রহরীর মত।
—তিনজনেই হঠাৎ চুপ করে যায়।যেন তিনজনেই উৎকর্ণ হয়ে কোন শব্দ শুনছে।নদীর শব্দ ছাড়া আর কোথাও কিছু শোনবার মত নেই।কথা বলতে বলতে এমন হয় যখন সকলে একসঙ্গে চুপকরে যায়।স্তব্ধতা তখন গর্ভবতী।
একটু পরে ছোট্ট হেসে লোকটি বলল এখন আমাকে একবার ওই নদীর কাছে যেতে হবে।
ভাস্বতী সেই মুহূর্তে তার কোমরের কাছে একটা হাতের স্পর্শ পেল।হাতখানা তার কোমরে উপর স্থির হয়ে রইলো।অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না—কিন্তু পুরুষের স্পর্শ চিনতে দেরি হয়না মেয়েদের।এ স্পর্শ তার স্বামীর নয়।রুক্ষ,শক্ত হাতের স্পর্শ।অথচ এখন শান্ত।
ভাস্বতী সহজে বিচলিত হয় না।যেকোন অবস্থায় তার মনে হয় দেখাই যাক না এরপর কি হয়।তাই সে শরীর কোঁকড়ালো না।
কিন্তু একটু বিচলিত হয়ে সে ভাবলো এই লোকটি কি নিছকই অসভ্য,বদ।না অন্য কিছু।লোকটি নদীতে যাবার নাম করে হঠাৎ তাকে স্পর্শ করলো কেন?
রঞ্জন বলল কেন?
—-লোকটি বলল জল আনতে ভুলে গেছি।
—-তা বলে এই অন্ধকারে জল আনতে যেতে হবে?
ভাস্বতী কোমরে আগুন্তুকের হাতের উপর নিজের হাতখানি রাখলো।যেন সে অবাধ্য শিশুকে শাস্তি দিচ্ছে।এই ভাবে আঙ্গুল তুলে মুচড়ে দিল।হাতখানা সরে গেল।
লোকটি বলল সারারাত কি তৃষ্ণা নিয়ে থাকা যায়?ব্র্যান্ডি খেয়েছিতো এখন আমার ভীষণ জলতেষ্টা পাবে। আপনাদেরও পাবে নিশ্চই?
ভাস্বতী জিজ্ঞেস করলো আপনি ঐ নদীর জল খান?
—-আর কোথায় জল পাবো বলুন?নদীর জলই তো সম্বল।কখনো কখনো বৃষ্টির সময় পাত্র পেতে রাখি।আজ বালতি পাততে ভুলে গেছি।
—তখন আমরা নদীর ধারে গেলাম।
—-তখন তো আপনারা চলে যাবেন ঠিক করে ছিলেন।দাঁড়ান দেখে আসি ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা?
লোকটি হ্যাজাকটা জালালো।হ্যাজাক বললে ভুল হবে হ্যাজাকের মত উজ্জ্বল আলো নয়।বরং মিনমিনে হ্যারিকেন বলা ভালো।
খাঁচার সাপ তিনটেই এখন জেগে আছে।অসহিষ্ণু ভাবে নাড়াচাড়া করছে।মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসছে লকলকে জিভ।সেদিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না রঞ্জন ও ভাস্বতীর,তবু সেদিকেই চোখ চলে যায়।
লোকটি ভ্রূক্ষেপ করে না।ডেকচি নামিয়ে ভাত টিপে দ্যাখে।এখনো সেদ্ধ হয়নি।
—-আপনারা দেখুন আমি জল নিয়ে আসছি।
একটা বড় প্লাস্টিকের বালতি তুলে নিয়ে সে বেরিয়ে যাচ্ছিল।রঞ্জন বলল দাঁড়ান।
লোকটি বলল কি হল?
—-আমি যাচ্ছি আপনার সঙ্গে।
—-তার কোনো দরকার নেই।
ভাস্বতী বলল একটা রাত জল ছাড়া চলবে না?এখন আনতেই হবে?
—-তাতে কি হয়েছে মরুভূমিতে তো মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাতে পারে।
—-কিন্তু কাছাকাছি জল আছে জানলে মানুষ জীবন তুচ্ছ করেও আনতে যায়।এ পাহাড় আমার চেনা এলাকা আপনারা বসুন না,আমার বেশিক্ষণ লাগবে না।
রঞ্জন উদ্বেল হয়ে উঠে,তার শোভনতার কারনে একটা কাঁটা ফুটছে।
এই লোকটির কাছে আচমকা আতিথেয়তা স্বীকার করিয়ে খানিকটা জুলুম করে নেওয়া হচ্ছে।তার ওপর আবার এতটা পথ ভেঙে নদীতে রাতে জল আনতে পাঠালে—সে নিজের কাছে ছোট হয়ে যাবে।ভাস্বতীও তার দিকে তাকাবে নিচু চোখে।
সে দৃঢ়ভাবে বলল আপনি একা যাবেন কেন?আমিও যাচ্ছি আপনার সঙ্গে।
—-তার দরকার নেই।শুধু শুধু ব্যস্ত হচ্ছেন।
—-না তা হয় না।
রঞ্জন টর্চটা নিয়ে লোকটির কাছে গিয়ে বলল চলুন।
লোকটি ভুরু কুঁচকে ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল উনি একা থাকবেন?
রঞ্জন সমানভাবে ভ্রু কুঁচকে বলল তাতে কোনো ভয় আছে?
—-এমনিতে কোনো ভয় নেই।আবার জোর করে সেসব বলা যায় না তো।অনেকে বিনা কারনে ভয় পায়।
ভাস্বতী বলল আমি ঠিক থাকতে পারবো।
লোকটি বলল সেটা কিন্তু রিস্ক হয়ে যাবে।যার নির্জন জায়গায় একা থাকার অভ্যেস নেই তার পক্ষে একা থাকা ঠিক নয়।বিশেষত যে জায়গা কুসংস্কার দিয়ে ঘেরা সে জায়গা মেয়েদের পক্ষে বিপজ্জনক।
ভাস্বতী বলল আপনি মেয়েদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন মনে হচ্ছে?
লোকটি লজ্জা পেয়ে বলল না, তা জানি না।আমি মেয়েদের কখনো কাছ থেকে দেখিইনি।আপনি সত্যিই ভয় পাবেন না?
ভাস্বতী লঘুভাবে হেসে বলল এখানে ভূত টূত নেই তো?
—-তা কি করে জানবো তবে এখানে কয়েকজন লোক মরেছে।
—-ঠিক আছে।কিচ্ছু হবে না।
—-তা হয় না।লোকটি নির্দেশ দেওয়ার মত করে রঞ্জনকে বলল আপনি ওর কাছে থাকুন।আমি চট করে জল নিয়ে আসছি।
রঞ্জনের কাছে কথাটা চ্যালেঞ্জের মত মনে হল।দুজন পুরুষের মধ্যে পারঙ্গতার প্রশ্নে এইভাব এসে পড়ে।সে পাহাড় পছন্দ করে না।কিন্তু সে কাপুরুষ নয়।সে গম্ভীর ভাবে বলল আপনি থাকুন এখানে আমি জল নিয়ে আসছি।
—-আপনি পারবেন না।
—-কেন পারবো না।রাস্তাতো একটাই।পথ হারানোর ভয় নেই।
—-ভাস্বতী বলল এখনো একটা পাইথন কিন্তু আছে।
রঞ্জন বলল পাইথন কখনো তেড়ে আসে বলে শুনিনি।দেখা গেলে পাশ কাটিয়ে চলে আসবো।
বালতিটার দিকে হাত বাড়িয়ে সে বলল দিন।
লোকটি রঞ্জনের পৌরুষে আঘাত করতে চায় না।বিনা বাক্যব্যয়ে বালতিটা রঞ্জনের হাতে তুলে দিল।
ভাস্বতী প্রগাঢ় চোখে তাকালো রঞ্জনের দিকে।এক নির্জন পাহাড়ী রাত্রে একজন অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তির কাছে নিজের স্ত্রী’কে রেখে যাওয়ার মধ্যে একটা মনোবেদনা থাকে।
আবার,স্বার্থপরের মতন সে তার স্ত্রী’কে পাহারা দেবে।তাদের এক উপকারী লোকটি ভৃত্যের মতন খাটবে—এতেও সে ছোট হয়ে যাবে।
আর কোনো কথা না বলে রঞ্জন রাস্তা ধরে নামতে থাকলো।তার সামনে সামনে একটা আলোর বৃত্ত।
লোকটি তাকালো ভাস্বতীর দিকে।তার অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে পড়ছে কপালে।হ্যাজাকের আলোয় ভাস্বতী যেন শিল্পীর তুলিতে অরণ্যবাসনা।গেঞ্জির আধারে উদ্ধত স্তন উঁচিয়ে আছে।অতিরিক্তমাংসহীন ৩২ বর্ষিয় এই মানবীর শরীরে কোথাও মেদ নেই।
রঞ্জনের আসতে অন্তত দেড় ঘন্টা লাগবে।
লোকটি একদৃষ্টে চেয়ে আছে ভাস্বতীর দিকে।তার শুধু চোখের আরাম নয়।তার দৃষ্টি শুয়ে আছে ভাস্বতীর শরীরে।
ভাস্বতী লোকটির দিকে তর্জনী তুলে রানীর মত অহংকারী গলায় হুকুম করলো আপনি যান ওর সাথে। আমি একা থাকতে পারবো।
লোকটি বলল আমিতো অনেকবার বলেছিলাম।
ভাস্বতী বলল আপনি জেনেশুনে আমার স্বামীকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছেন
লোকটি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল।ভাস্বতী ক্রীতদাসের মুখ্ থেকে কোনো কৈফিয়ত শুনতে চায় না।ফের হুকুম করলো, যান!
দাস বিদ্রোহের নেতার মতন লোকটি উদ্ধত ভাবে হাসলো।
ভাস্বতীর পায়ের পাতা থেকে কপাল পর্যন্ত চোখ বোলালো।হাসলো আপনমনে।তারপরে দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে রঞ্জনের হাত থেকে বালতি কেড়ে নিয়ে বলল আপনি আপনার স্ত্রী’র কাছে থাকুন।উনি ভয় পেয়েছেন !
রঞ্জনকে সে কথা বলারও সুযোগ দিল না।তরতরিয়ে নীচে নেমে গেল।টর্চও সে নেয়নি।মিলিয়ে গেল অবিলম্বে অন্ধকারে।
রঞ্জন অপ্রসন্ন মুখে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলো তুমি ভয় পেয়েছ?
কিসে?তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ভাস্বতী বলল ভয় পাইনি তো?এই সাপগুলোর কাছে থাকতে বেশ বিচ্ছিরি লাগছিল।
রঞ্জন দেখলো ভাস্বতীর পীনোন্নত স্তনদ্বয় ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে উঠছে নামছে।ভাস্বতী উত্তেজিত।
উত্তেজিত তো সে হবেই কোনো নারী যখন কোনো পুরুষকে হুকুম করে তখন সে একটা গভীর ঝুঁকি নেয়।হুকুম মানলে সেই পুরুষ তার অহংকারকে সন্তুষ্ট করে।আর যদি হুকুম অগ্রাহ্য করে,তবে আত্মসম্মানটুকু ধূলিসাৎ হয়ে যায়—তখন সে নারী থাকে না।একটা অসহায় প্রাণী,নিছক শারীরিক শক্তিতে দুর্বল।
লোকটি তার কথায় বাধ্য হয়েছে।এখন ভাস্বতীর করুণার ছিটেফোঁটা সে পেলেও পেতে পারে।
রঞ্জনের কিন্তু ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে।সে উদারতা দেখাবার একটুও সুযোগ পায়নি।
সে অপ্ৰসন্ন ভাবটা বজায় রেখে ভাস্বতীকে বলল তুমি পাশের ঘরে শুয়ে থাকলে পারতে।লোকটাকে একা একা পাঠানো ঠিক হল না।
ভাস্বতী অবহেলার সঙ্গে বলল ও নিশ্চই প্রতিদিন যায়।ওর অসুবিধা হবে না।
—-তা হোক আমাদের ওকে এত খাটানো উচিত নয়।
—-মানুষ মানুষের জন্য এরকম একটু করবেই।এতে নতুন কি?
—-আমার অনর্থক কারোর কাছে উপকার নিতে ভালো লাগে না।কারুর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকা ভালো লাগে না।
এই কথা বলে রঞ্জন অপ্রসন্নতা কাটিয়ে হাসলো।
তারপর বললো অবশ্য মেয়েদের কথা আলাদা।মেয়েরা এমনি এমনিই অনেক কিছু পেতে অভ্যস্ত।সেবার তরফদার ইউ.কে থেকে ফেরার পর তোমার জন্য পারফিউম আনলো।তুমি এমন ভাবে নিলে যেন সেটা তোমার প্রাপ্য ছিল।
—-আমি অনেকবার আপত্তি করেছিলাম।
—-সেটা এমন ভাবে বলেছিলে বোঝাই যাচ্ছিল তোমার নেবার ইচ্ছে ছিল।ওনার বোনের চেয়ে তোমাকে নিয়ে উনি বেশি আগ্রহী।
—-কিন্তু সত্যি সত্যিই আমি নিতে চাইনি।আমি কি নিয়ে কিছু ভুল করেছি বলো?
—রঞ্জন বুঝতে পারছিল ভাস্বতী রঞ্জনের এমন অকারণ রসিকতায় বিরক্ত।হেসে বলল না না,আমি এমনিই মজা করছিলাম।তরফদার আমার বন্ধু।বন্ধুপত্নীর জন্য উপহার দিতেই পারে।
তরফদারদের মত লোকেদের ভাস্বতীর ভালো লাগে না।রঞ্জনের অফিসের পার্টিতে ভাস্বতী বেশ কয়েকবার গেছে রঞ্জনের ইচ্ছায়।অবশ্য রঞ্জন জোরাজুরি করেনি।ভাস্বতীর ভালো লাগেনি রঞ্জনের কলিগদের,তাদের স্ত্রীদের।হয়তো এজন্য অনেকেই ভাবে ভাস্বতী একজন নাকউচু মহিলা।ভাস্বতীর মত বুদ্ধিমতী সুন্দরী নারীকে অহংকারী মানায়—যদিও সে অহংকারী নয়।
রঞ্জন বলল ভাতটা হয়ে গেছে বোধ হয়,নামিয়ে ফেলো।
ভাস্বতীর নিজের সংসার রাঁধুনি ও চাকরের হাতে।কদাচিৎ সে রান্না ঘরে ঢোকে।রান্নার পরীক্ষা নিয়ে সময় কাটাবার বদলে সে রবীন্দ্র সংগীতে মেডেল পায়, আবৃত্তিতেও সে ভালো।আগে ক্লাবে গিয়ে ব্যাটমিন্টনও খেলতো এখন আর হয়না।
তথাপি সে এখন ভাতটা নামিয়ে ফ্যান গেলে এলো।ডেকচি টা কয়েকবার নেড়ে সে ঢাকনাটা খুলে দেখলো ভাত ঝরঝরে হয়েছে।
রঞ্জন বলল লোকটা কতক্ষনে ফিরবে কে জানে?
স্টোভ নিভিয়ে দিয়ে ভাস্বতী উঠে দাঁড়িয়ে বলল লোকটা বোধ হয় পাগল–এই রকম জায়গায় কেউ একা একা থাকে।মনেতো হয় কিছু লেখাপড়া জানে।একটা কোথাও চাকরি পেতে পারতো না? তা না করে এই বিদঘুটে কাজ!
রঞ্জন উদারভাবে বলল আমার অফিসেই একটা চাকরি দেওয়া যায়।ওকে বলে দেখবো একবার।কথাটা বলেই রঞ্জন ভীষন তৃপ্তি পায়।বাধ্য হয়ে যার কাছে আশ্রয় নিয়েছে—যে এখন উপকারীর ভূমিকায়–তাকে অধঃস্তন কর্মচারী করে ফেলতে পারলে ভালো হয়।প্রতিনিয়ত প্রতিদানের কথাটা বোঝানো যায় অদৃশ্য ভাবে।
—-না তোমাকে বলতে হবে না।লোককে ডেকে ডেকে চাকরি দিতে হবে না।দেশে কি বেকারের অভাব পড়েছে?
ভাস্বতী মুখে একরকম কথা বললেও মনোভাব অন্যরকম।
আর যাইহোক এই লোকটিকে সে রঞ্জনের অফিসের কেরানি হিসেবে দেখতে চায় না।যদি কোনোদিন তা হয়,–লোকটিকে যদি সমতল ভূমিতে কেরানি হিসেবে দেখে তবে এই লোকটি যে একদিন পাহাড়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল—তা দেখে ভাস্বতীর গা জ্বলে যাবে।জঙ্গলের স্বর্গ দুয়ারের অতন্দ্র প্রহরী জঙ্গলেই থাকুক রাজা হয়ে—বন্যরা বনে সুন্দর।
ভাস্বতী ভিজে পোশাকগুলো হাতে নিয়ে দেখলো।শুকোবার কোনো লক্ষণ নেই।কিন্তু ব্রেসিয়ার ছাড়া রীতিমত অস্বস্তি লাগছে তার।রাত্রে বিছানায় ছাড়া সবসময় ব্রেসিয়ার পরে থাকা তার দীর্ঘদিনের অভ্যেস।ব্রা এখনো ভিজে থাকলেও সে পরে ফেলার মনস্থ করে ফেলল।রঞ্জন মৃদু আপত্তি তুললেও সে কানে তোলে না।
রঞ্জনের দিকে পেছন ফিরে ভাস্বতী গেঞ্জিটা খুলল।তার ফর্সা পিঠ হ্যাজাকের আলোয় আলোকিত।কোথাও মালিন্য নেই,এইসব নারীর ঘাড়ে কখনো ময়লা জমে না।এইসব সৌন্দর্য্য প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত মনে হয়-পাথরের মুর্তি হিসেবেই যেন বেশি মানায়।কেননা পাথরের মূর্তির নাম,শিল্প–তখন তা বহুজনের দৃষ্টিগ্রাহ্য।যতক্ষন তা রক্তমাংসের ততক্ষন তা সীমিত।এবং জ্যান্ত সৌন্দর্য্য যতই তীব্র হোক,একজনের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতায় তা নষ্ট হয়ে যাবেই।যেমন রঞ্জন আপাতত এই অর্ধনগ্ন নারীমুর্তির দিকে তাকিয়ে নেই।এই সুন্দরী নারী তার কাছে পুরোনো-স্ত্রী।সে অন্যদিকে তাকিয়ে সিগারেট ধরিয়েছে ও একটু অন্যমনস্ক।
ভাস্বতীর মুখ সাপের দিকে,ফণা তুলে দুলছে বড় সাপটা।ওদের মাথা দোলানোই নাকি ওদের ভাষা।
—-হুকটা আটকে দাও তো।
রঞ্জন উঠে ভাস্বতীর ব্রেসিয়ারের হুকটা পেছন দিক দিয়ে আটকে দেবার সময় অভ্যেসবশত তার ঘাড়ে একটা চুমু খেল।তারপর কাঁধ ধরে তার নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল তুমি এভাবেই থাকবে নাকি?উপরে গেঞ্জিটা পরবে না?
—-পরতে হবে?
—-তোমাকে এখন মজার দেখাচ্ছে।কার মতন দেখাচ্ছে বলতো?
—-কার মতন?
—-এসমেরান্ডার মতন।
ভাস্বতী হাসলো কৌতুকে।তার সেই কোঁচকানো পাজামা আর কালো ব্রা পরা শরীরটা দোলালো একবার।অন্তর্বাসে ঢাকা ভারী স্তনদুটো দুলে উঠলো।নারীর শরীরে অতিরিক্ত মাংস কেবল বক্ষেই মানায়–ঠিক যতটা প্রয়োজন ভাস্বতীর বুকে আছে।মাথার ওপর হাত দুটো তুলে বলল নাচবো এসমেরান্ডার মতন?তাহলে তো একটা পোষা ছাগল দরকার।
—-ছাগলটা কল্পনা করে নাও।
ভাস্বতী দু পায়ে ছন্দ তুলে নাচলো।এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই।যেন ওরা পাঁচ-ছয় হাজার বছর পেরিয়ে পাহাড়ী জীবনে ফিরে এসেছে।যেন ওরা শরীরের আব্রু সম্পর্কে অসচেতন-মুক্ত গুহামানব।
কিন্ত মন আর সেরকম সরল হবে না।
ভাস্বতীর কথ্যক নাচ শেখা আছে।যেহেতু ঘরটায় জায়গা কম,একমাত্র দর্শক স্বামী,সামনে অন্ধকার,পেছনে সাপ তাই দু-একটি মাত্র নাচের বোল তুলে থেমে গেল।
এ অবস্থায় স্তুতি ছাড়া জীবনে কিছু থাকে না।রঞ্জন তাই খানিকটা ঠাট্টা আর খানিকটা সত্যি মিশিয়ে বলল, সতী তুমি চিরযৌবনা।তুমি সারাজীবন একইরকম থাকবে।
ভাস্বতীর মুখ খানা করুন হয়ে গেল।অযাচিত মৃদু হাসি হাসলো। বলল আমি কিন্তু এখনই ৩২।একদৃষ্টে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকলো।
রঞ্জন বলল ধ্যাৎ, ৩২ আবার বয়স নাকি?তোমাকে এখনো একই দেখায়–বিয়ের আগের মতো।যেন তোমার বিয়েই হয়নি।
—-কি হবে?
—-তার মানে?
—-ভাস্বতী বুকের উপর আড়াআড়ি ভাবে হাত দুটি রেখে কাতর ভাবে বলল আমি সন্তান চাই।তাকে আমার বুকের ওপর চেপে ধরবো।ভীষণ ইচ্ছে করে।
—-সতী আমারতো কোনো দোষ নেই।
—-তবে কি আমার দোষ?
—-সে কথা বলছি না।
—-তাহলে কেন? কেন?
—-সতী তুমি আবার এই নিয়ে মন খারাপ করছো।কথা ছিল আমরা এই নিয়ে কখনো মন খারাপ করবো না।
—-আমি যখন খুব ছোট্ট মেয়ে তখন থেকেই আমি ভাবতাম একদিন আমার একটি ছেলে হবে–আমি তাকে ভীষন,ভীষণ আদর করবো।সে খুব দুষ্টু হবে।আমাকেও জ্বালাতন করবে।
—-আজ হঠাৎ এসব কথা ভেবে মন খারাপ করছো কেন?
ভাস্বতী হাত দুটো নামিয়ে আনলো নীচে।রিক্তার মতন বলল মন খারাপ করিনি।তুমি রাগ করো না।
—-তোমাকে তো কতবার বলেছি অনাথ আশ্রম থেকে একটা বাচ্চা এনে মানুষ করতে।বিদেশেতো এরকম হরদম হয়।আজকাল এদেশেও এরকম হচ্ছে।
—-না থাক, আর বলবো না।
রঞ্জন ভাস্বতীর সিংহিনীর মত কোমরটা জড়িয়ে ধরে বলল পৃথিবীতে উত্তরাধিকার রেখে যাবার মত আগ্রহ আমার তেমন নেই।একি!তোমার শরীরটা কাঁপছে কেন?
—-কই? না তো।
—-চলো ও ঘরে গিয়ে একটু বসি।
ক্যাম্প খাটে পা ঝুলিয়ে বসা খুব মুশকিল।পশ্চাৎদেশ নিম্নাভিমুখী হয়ে যায়।সেই অবস্থাতেই বসে।ওদের কৌতুকবোধ খানিকটা ফিরে এসেছে।
ভাস্বতী বলল এখন কিন্তু জায়গাটা বেশ ভালো লাগছে।ওই লোকটার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা দু-তিনদিন তো থেকে গেলেও পারি?
—-রঞ্জন বলে যদি আবার বৃষ্টি নামে তবে আমাদের বাধ্য হয়েই থেকে যেতে হবে।
তারপর মনে পড়া গলায় রঞ্জন বলল ভাগ্যিস গাড়িটা আনিনি।না হলে গাড়ীটা নদীর ওপারে পড়ে থাকতো।
ভাস্বতী বলল এরপরে আমরা ওই লেকটা দেখতে যাবো।যেখানে খুব পাখি আসে।
—-রাজা বাবুকেও আমরা ইনভাইট করতে পারি।যদি তিনি রাজি হন।
ভাস্বতী একটু চিন্তা করে বলল না,ওকে আর বলতে হবে না।সেখানে শুধু আমরা দুজনে মিলে বেড়াবো।এই পাহাড়টাতেও যদি শুধু আমরা দুজনে থাকতাম,তাহলে আরো ভালো হত।
একসঙ্গে রাত্রি বাসের পর নারী পুরুষ আর নিরালা খোঁজে না।তবু যেন মনে হয় এখনো কোনো ফাঁকা জায়গায় একটা আলাদা রহস্য আছে।
রঞ্জন বলল লোকটা একলা গেল টর্চও সঙ্গে নিয়ে গেল না।বেশি বেশি বীরত্ব দেখাতে চায়।
ভাস্বতী খুক খুক করে হেসে বলল যখন ভাতটা চড়ালো তখনও জল নেই মনে পড়লো না।তখনও একটু আলো ছিল।
রঞ্জন বলল যাইহোক লোকটা খারাপ নয়,মনে হচ্ছে।অমন দীর্ঘ তামাটে চেহারার লোককে দস্যু বলে ভেবে বসেছিলাম।আমরা না জেনে শুনে চলে এসেছিলাম,বদমাশ লোকেরও পাল্লায় পড়তে পারতাম।
তখন নদীতে স্রোতের মধ্যে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম।ও সাহায্য না করলে বেশ মুশকিল হত।
একটু থেমে রঞ্জন বলল আমি কি তোমাকে ওর কাছে রেখে জল আনতে গিয়ে ভুল করছিলাম?
ভাস্বতী রঞ্জনের গলা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঁহু।রঞ্জন ভাস্বতীর ঘাড়ের কাছে চুমু খেয়ে লালচে করে দেয়।
ভাস্বতী রঞ্জনের বুকে নিজের বুক জোরালো ভাবে চেপে ধরে।
এর মধ্যে কোনো বাসনার তীব্রতা নেই।পরক্ষনেই ওরা পরস্পরকে ছেড়ে অন্যকাজে ব্যাপৃত হয়।রঞ্জন সিগারেট ধরায়, ভাস্বতী কালো ব্যাগ থেকে চিরুনি বার করে ভিজে চুল আঁচড়াতে আরম্ভ করে।
ভাস্বতী ভাবে লোকটি অন্ধকারে তার কোমরে হাত দিয়েছিল,একথা কি রঞ্জনকে জানানো দরকার? স্বামী-স্ত্রী শুদ্ধতার জন্য পরস্পরের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।যা পরে প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে তা গোপন করবার কথা নয়।কিন্তু এই ঘটনাটা বলে কি কোনো লাভ আছে?তাতে শুধু শুধু রঞ্জনের মন বিষিয়ে যাবে—এ রাত্রে তো তারা অন্য কোথাও চলে যেতে পারবে না।বলার দরকার নেই।লোকটি দুর্বৃত্ত নয়,লোভী।
কিন্তু ভাস্বতী তার স্বামীকে কিছু জানাচ্ছে না—এতে যদি লোকটা প্রশ্রয় পেয়ে যায়।যদি সে পাগল হয়ে ওঠে?পুরুষদের এরকম পাগল হতে ভাস্বতী কলেজ জীবনে অনেক দেখেছে।ভাস্বতীর একটু মন খারাপ হয়ে ওঠে।এই রোমাঞ্চকর রাত্রি,এই স্তব্ধতা এর মধ্যেও কি তাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে? ভাস্বতীর কাছে নিয়ম নীতি তুচ্ছ।কিন্তু সে রঞ্জনের মনে কোনো আঘাত দিতে চায় না।
লোকটির রূপ,মন ও ইচ্ছায় একটা বন্যতা আছে–এই জঙ্গলের মতন।ভাস্বতীর হয়তো লোকটিকে রঞ্জনের অফিসের বিরক্তিকর কলিগের মত লাগেনি।আর পাঁচটা সৌখিন পুরুষদের মতও নয়।এরকম পুরুষ ভাস্বতীর কাছে একটু আলাদা জায়গা করে নেবে-এ কথা ভাস্বতী বোঝে।হাজার হাজার বছর আগে আদিম জঙ্গলে কোনো মানুষের দেখা পেলে হয়তো সে এরকম গুহামানবের সাক্ষাৎ পেত।
সভ্য মানুষেরা এরকম হয় কখনো কোনো কিছু পছন্দ হলেও তা আপন করে নেয় না,তার সাথে তার পৃথকীকরণ করতে পারে নিজেকে।ভাস্বতী কলকাতার নগর জীবনের সভ্য কিন্তু লোকটি?বন্যরা যে লোভী–কেড়ে নিতে চায়।
ভাস্বতী সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে বসে থাকা রঞ্জনের দিকে তাকালো।
রঞ্জন ভাস্বতীকে দেখে একটু উষ্ণতা অনুভব করলো।ভাস্বতীর পাজামার দড়ি একটু তলপেটের নীচের দিকে নেমে গেছে।মেদহীন কোমল পেটে ছোট্ট নাভি।কোমরের খাঁজ যেন মাখনের ওপর ছুরি বসিয়ে তৈরী করা।কালো ব্রেসিয়ারের মধ্যে গিরি চূড়ার মত দুই স্তন।কণ্ঠার হাড় সামান্য জেগে আছে,গলায় একটা সরু সোনার হার চিকচিক করছে,কানেও দুটো ছোট দুল।একটা হাত উচু করে চুলের গোছা ধরে থাকা,অন্য হাতে চিরুনি।শুধু তার চোখের দৃষ্টিই অন্যমনস্ক।ভাস্বতীর শরীরের ফর্সা অনাবৃত অংশে চামড়ার মসৃণতাই বেশি আকর্ষণ করে।
রঞ্জন দুহাত বাড়িয়ে বলল এসো আর একবার কাছে এসো।
এমন সময় বাইরে একটা শব্দ হল।তেমন চমকায়নি ওরা,কেননা লোকটির তখন আসবার কথা।
অথচ শব্দটা ঠিক মানুষের পায়ে চলার মত নয়।
রঞ্জন ভাস্বতীকে বলল গায়ে কিছু একটা জড়িয়ে নাও।তারপর সে সাবধানে দরজার কাছে দাঁড়ালো।রঞ্জন সাহসী,লাইসেন্স পিস্তল আছে তার।সহজে বিচলিত হয় না সে।
টর্চের আলো ফেলে দেখলো আর কেউ নয়– দীর্ঘকায় লোকটিকে দেখে চিনতে ভুল হল না।কিন্তু তার হাঁটার ভঙ্গিটা অন্যরকম।জলের বালতিটা দুহাতে ধরা,মাথাটা সামান্য ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে।পা ঘষটে ঘষটে হাঁটছে।দুই হাতে ভারী জিনিস নিয়ে চড়াই উৎরাই পাহাড়ে ওঠা যথেষ্ট কষ্টকর।এমন মজবুত বাঁধনের লোকের পক্ষেই সম্ভব।তবু সে ঝুঁকে হাঁটছে,কারন তার পায়ে রক্ত।
রঞ্জন দৌড়ে গেল লোকটির কাছে,সাহায্য করতে।জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
লোকটির থুতনির কাছে অনেকটা কাটা।সেখান থেকেই রক্ত ঝরছে।গায়ে এবং প্যান্টে লেগে রয়েছে।
বালতি নামিয়ে রেখে সে বলল কিছু না,পড়ে গিয়েছিলাম।বৃষ্টির জন্য পাথর খুব পিচ্ছিল হয়ে গেছিল।
—-আপনাকে বললাম,আমি যাই।
—-আপনি গেলে আরো মুশকিলে পড়তেন।রাত্তিরে পাহাড়ী রাস্তায় হাঁটা ডেঞ্জারাস।আমার অভ্যেস আছে।ফেরবার সময় একটা শর্টকার্ট রাস্তা নিয়ে ফেলেছিলাম।সেই সময় হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলাম।এরকম ভাবে আগে কখনো পিছলে পড়িনি।জলটা পড়ে গেছিল সব।তখন আবার যেতে হল।
—-দুবার গিয়েছিলেন?
—-উপায় কি?
—-আপনি টর্চটা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন না।আচ্ছা লোক তো!
লোকটি এবার গভীর ভাবে ভাস্বতীর দিকে তাকালো।বলল ওর জন্য উনিই দায়ী।উনি যেরকম ভাবে আমাকে হুকুম করলেন আমি আর ভাবার সময় পেলাম না।
ভাস্বতী দেখল লোকটা তখন ওরকম দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।পাথরে খোদাই করা মুখে রক্ত লেগে আছে।শক্ত বাঁধনের লোকের চোখে মুখে কোনো যন্ত্রণার ছাপ নেই।
লোকটি এবার কথাটাকে মোলায়েম করবার জন্য হাসলো।
রঞ্জন তাকালো ভাস্বতীর দিকে।
ভাস্বতী এবার একটুও লজ্জা না পেয়ে ধমকের সুরে বলল পাহাড়ী রাস্তায় কোথায় অসুবিধে সুবিধে সেটা আপনি বুঝবেন।সে কি আপনাকে আমি বলে দেব।নিন রক্ত ধুয়ে নিন।
—-বেশি জল খরচ করা যাবে না।
—-তুলো টুলো কিছু আছে?
লোকটি কাঠের বাক্স থেকে তুলো,স্টিকিং প্লাস্টার বার করলো।
রঞ্জন বলল একটু গরম জলে ধুয়ে নিলে হত না?
—-দরকার নেই।ব্র্যান্ডি আছে লাগিয়ে নিলে হবে।
একটা পাথরের কণা নিশ্চই ঢুকে গেছিল থুতনিতে–গর্ত হয়ে গেছে।যন্ত্রনা হবার কথা,লোকটির কোনো বিকার নেই।
ভাস্বতী বলল আর কোথায় লেগেছে।
—-হাঁটুতে লেগেছে।এমন কিছু নয়।খানিকটা গড়িয়ে পড়েছিলাম তো—
ভাস্বতী ক্ষতস্থানটা ভালো করে পরিষ্কার করে তুলো চেপে ধরলো,যাতে রক্ত বন্ধ হয়।
প্রসেনজিৎ থুতনি উচু করে দাঁড়িয়ে।
একজন আহত পুরুষের কাছাকাছি কোন নারী থাকলে সেই পরিচর্যা করবে-এই তো জগৎ সংসারের নিয়ম।এছাড়া নারীকে মানায় না।রঞ্জন একপাশে দাঁড়িয়ে দেখছে,ভাস্বতী মন ও হাতের সেবায় রত।এই অবস্থাতেও আলতো ভাবে ভাস্বতীর পিঠের ওপর একটা হাত এসে পড়ে।ভাস্বতী কি করবে লোকটিকে ধাক্কা দেবে?তার স্বামী এতো কাছে দাঁড়ানো, তবু লোকটির দুঃসাহস!সে কি রঞ্জনকে এখন বলবে এই স্পর্ধিত পুরুষকে শাস্তি দাও?
তারপর যদি রঞ্জন ও লোকটির মধ্যে মারামারি শুরু হয়,তখন কি মনে হবে না এক খন্ড মাংসের জন্য দুটি কুকুরের ঝগড়া?সে কি শুধু একখন্ড মাংস?
ভাস্বতী গোপনে চোখ গরম করে লোকটির দিকে তাকায়।
তবু লোকটি হাত সরিয়ে নেয় না।তার ঠোঁটে সুক্ষ,অতি সুক্ষ একটা হাসির আভাস।
ভাস্বতীর হাতের স্পর্শ পাবার জন্যই কি লোকটি থুতনি কেটে এসেছে?কেবল তার হাতের স্পর্শ প্রাপ্তির জন্যই পুরুষ যন্ত্রনা সইতে পারে? এই হাসি কি লোকটির সফলতার হাসি?
ভাস্বতী তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলতে চাইছিল।তুলো গুঁজে তুলে নিতে গেলে ক্ষতস্থানে একটু ধাক্কা লেগে যায়।লোকটি শব্দ করে ওঠে আঃ!
ভাস্বতী কোমল হাতের যত্নে আর একটু সাবধান হয়।
স্টিকিং প্লাস্টার লাগানোর পর ভাস্বতী দেখে হাতে রক্ত লেগেছে।জল খরচের কথা মনে না রেখে ভালো করে হাত ধোয় সে।
খাঁচার বড় সাপটা ফোঁস ফোঁস করে উঠতেই লোকটি চেঁচিয়ে উঠলো চোপ! বড্ড জ্বালাচ্ছিস! এবার দেবো এক ঘা!
রঞ্জন বলল ওরা কি খায়?বোধ হয় ক্ষিদে পেয়েছে?
—-সাপের ব্যাবসায় এই একটা সুবিধে–ওরা অনেকদিন না খেয়ে থাকতে পারে?আমার কিন্তু ক্ষিদে পেয়েছে?আপনার পায়নি?
রঞ্জন বলল একা একা থাকেন এরকম চোট পেলে কি হবে?
—-চোট? নির্লিপ্ত হাসিতে লোকটি পরক্ষনেই বলে উঠলো আমার একটি পুরোনো জিপ আছে।অবশ্য সেটি আমার নয়।ফরেস্টের পরিত্যাক্ত গাড়ি–আমি ওটা সারিয়ে প্রয়োজনে চালাই।অসুবিধে হলে পাঁচ-ছয় মাইল দূরেই আদিবাসী গাঁয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
—-জিপ? কোথায়?
—-আগের রেঞ্জার অফিসার আমার বন্ধু।বন্ধু বলতে রাম তার প্রিয় পানীয়।এ অঞ্চলে কালেভদ্রে আসতেন।তাঁর রিটায়ার্ড হবার আগে আমাকে পুরোনো জিপটা দেন।
আপনারা বোধ হয় দেখেননি ওটা নদীর ওপারে আছে।
-নদীর ওপারে?কেউ তো পার্টস চুরি করে–
—-পার্টস চুরি হতে পারে কিন্তু বেচবে কোথায়? জঙ্গলের মানুষ সহজ সরল হয়।ওরা হাড়িয়া খবর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে তবু চুরি করবে না।
দুটি চিনে মাটির প্লেট আর গেলাস।আর কোনো পাত্র নেই।
তিনজন একসঙ্গে খেতে বসবে কি করে?
ভাস্বতী আধুনিক সমাজের অন্তর্গত হলেও সে বাঙালি নারী।সে বলল আপনাদের দুজনকে আগে দিই,তারপর আমি খেয়ে নেব।
লোকটি কথাটা উড়িয়ে দিল।না তা কি করে হয়? আপনারা বসুন আমি পরিবেশন করছি।
রঞ্জনের ভাস্বতীর প্রস্তাবটাই ঠিক মনে হল।সে বলল ঠিক আছে ওই দিক না।চলুন আমরা বসি।
—-দেখুন আমি পাহাড়ী মানুষ।অতিথি সৎকারটুকু করতে পারবো না?
রঞ্জন শুকনো ভাবে হেসে বলল অতিথি?আমরা তো জোর করে আপনার কাছে–আর কোনো উপায় ছিল না।
দুটি চটের থলি বিছানো আসনে ভাস্বতী আর রঞ্জনকে বসতে হল।
—-আরে না না আপনি বসুন।
এক কাজ করি আপনারা প্লেটে খান।আমি বরং ডেকচিতে খেয়ে নিই।
—-ভাস্বতী বলল আমি বরং ডেকচিতে খেয়ে নিচ্ছি।
—-কালকেও যদি থেকে যেতে হয়–কালকে আপনি ডেকচি—
রঞ্জন চমকে উঠে বলল কালকেও থাকতে হবে নাকি?
লোকটি মৃদু হেসে বলল এরমধ্যেই বিরক্ত হয়ে উঠছেন? নদীর জল কমা না কমা তো আমার হাতে নেই।যাই হোক কাল যদি যেতেই হয় আমি ব্যাবস্থা করে দেব।সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লে নদী পেরিয়ে পাঁচ ছয় মাইল দূরে গ্রামটা।সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে আড়াই মাইল দূরে পাকা রাস্তা, বাস পেয়ে যাবেন।
রঞ্জন ফেরা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে বলল দেখা যাক।যদি ভালো লাগে কালকেও থেকে যেতে পারি।
আপনার এই অরণ্য জীবন আর পাহাড় কিন্তু চমৎকার লাগছে।
রঞ্জন থেমে আবার বলল শহরের জীবন আমাদেরও একঘেয়ে লাগে।মাঝে মাঝে যদি এরকম জায়গায় এসে থাকা যায়।বিদেশের ছেলে মেয়েরা তো প্রায়ই যায়–একটা তাঁবু সামান্য নিয়ে আর কিছু জিনিস পত্র।–কিন্তু এই পাহাড়টাতে যে সাপ আছেন বলছেন–
—-আর বেশি নেই।আমি প্রায় ধরে ফেলেছি।আর পাহাড়, জঙ্গলে সাপতো থাকবেই–
ভাস্বতী হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো আপনার বাড়ীতে কে কে আছেন?
লোকটি না শোনার ভান করে মাথা নিচু করে খেতে থাকলো।লম্বা চওড়া কাঁধ- স্যান্ডোর ফাঁক দিয়ে হাতের স্ফীত পেশী দেখা দিচ্ছে।যেন মনে হচ্ছে লোকটা নিজেকে কঠোর করে রেখেছে।
ভাস্বতী উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছে।জিম করা পর্দার নায়কদের মত নয়–শরীরের বাঁধন যেন তার খানিকটা জন্মগত খানিকটা পাহাড়ে ওঠা নামার ফসল।এরকম পুরুষের গায়ের রং তামাটেই মানায়।
লোকটি বোধ হয় বুঝতে পারলো ভাস্বতী এখনো অপেক্ষা করছে তার উত্তরের জন্য।
—-এখন আর কেউ নেই।বাবা ছিলেন মারা গেছেন।
—-মা?
—-এক বছর বয়সে মারা গেছেন।
—-এরকম আর কতদিন থাকবেন?
—-কোনো পরিকল্পনা নেই–যতদিন চলে—
ভাস্বতী লোকটির চোখ খোঁজার চেষ্টা করে।
মাত্র একবছরে মা হারানোর কথা এত নিষ্প্রাণ গলায় বলে কি করে?মাতৃস্নেহে বঞ্চিত পুরুষরাই কি এরকম নির্জন পাহাড়ে সাপ ধরার কাজে নিযুক্ত থাকতে পারে।
রঞ্জন তাকিয়ে বলল ওটা কি সতী!
একটা পাহাড়ী ব্যাঙ।মেটে রঙের তেলতেলে।
লোকটা বলল এবার মজা দেখুন–খাঁচায় সাপ আছে জেনেও ব্যাঙটি সেদিকে যাবে।
ব্যাঙটা সত্যি সত্যিই খাঁচার দিকে লাফিয়ে গেল।অমনি বড় সাপটা ফণা উঁচিয়ে ফোঁস করে উঠলো।
ব্যাঙটা লাফিয়ে উঠলো।লোকটা একটা লাঠি দিয়ে ব্যাঙটা খাঁচায় ছুড়ে দিল।সাপটা ধরতে পারলো না,কিন্তু ছোঁবল দিল।ব্যাঙটা উল্টে উৎপটাং হয়ে পড়লো।লোকটি হেসে উঠলো।লাঠি দিয়ে আবার ছুঁড়ে দিতে যেতেই ভাস্বতী বলল করছেন কি?
—-লোকটি শুনলো না।খাঁচার মধ্যে ব্যাঙটিকে চেপে ধরতে যায়।
ভাস্বতী লোকটির হাত চেপে কাঠিটা সরিয়ে দিয়ে বলল কি হচ্ছে কি? ছেড়ে দিন?আপনার কি একটু ইয়ে নেই?
সামান্য একটু অবসর পেয়েই ব্যাঙটি লাফাতে শুরু করলো।লোকটি পা দিয়ে সেটাকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে বলল যাঃ!
ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনি বেচারা সাপটাকে খেতে দিলেন না।এমন বিচলিত হচ্ছিলেন কেন?এটাই জীবজগতের নিয়ম!
—-তবু চোখের সামনে দেখতে ভালো লাগে না।
—-আপনারা শহরে থাকেন।আপনাদের এসব চোখে পড়ে না।ঘন জঙ্গলে এসব অহরহ হচ্ছে।
সুন্দর পাখিটাকে কে গাছ থেকে পেড়ে খাচ্ছে সাপ। আমি অপেক্ষা করলাম।সাপটা তক্ষুনি ধরলাম না।
—-আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন?
—-হ্যাঁ, এটাইতো নিয়ম।এরপর তো সাপটা কবে খেতে পাবে ঠিক নেই।শুনতে আপনার খারাপ লাগছে?
—-হ্যাঁ।
—-এসব তো আপনাদের শহরেও হয়।কিন্তু একটু আব্রু থাকে।সেখানেও তো একদল মানুষকে তিলতিল করে মেরে একদল মানুষ উপভোগ করে–তাই না? বিশেষত সর্বত্র সাপ আর ব্যাঙ এর ব্যাপারটা চলছে,, কিন্তু সেটা সহজে বুঝতে দেওয়া হয় না; বিশেষত মেয়েদের–
রঞ্জন বলল ঠিকই বলেছেন এরকম চলে আসছে।
খাওয়ার শেষে বলা স্বত্বেও লোকটি প্লেট গুলো ধুতে বাইরে চলে গেল।
রঞ্জন বলল আমরা এখানে পেট পুরে খেলাম।ওই সাপগুলো অনাহারে থাকলো।
ভাস্বতী বলল আমার এখানে আর একটুও থাকতে ইচ্ছে করছে না।
—-কেন?
—-আমার এক্ষুনি এখন থেকে চলে যেতে ইচ্ছা করছে।
—-একটা ব্যাঙ দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল?
—-চুপ করো তো একটু !
—-তুমি যে বলেছিলে এরকম একটা জঙ্গলে বাড়ী বানিয়ে থাকবে?
—-উনি বোধ হয় ভেবেছিলেন সব বনই তপোবনের মত শান্ত স্নিগ্ধ জায়গা।কিছুক্ষনের জন্য এলে তাই মনে হতে পারে—কিন্তু জঙ্গল মানেই হিংসার রাজত্ব।দেখলেন না একটা সামান্য নদী পর্যন্ত কতটা বিপজ্জনক হতে পারে!
সে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেল।অন্ধকারের মধ্যে এগিয়ে গেল বেশ খানিকটা।
রঞ্জন বলল এক্ষুণি কি শুয়ে পড়া হবে?
—-কি করবেন? চাইলে একটু ঘুরে আসতে পারেন।তবে না যাওয়াই ভালো।বৃষ্টিতে পথ পিচ্ছিল হয়ে আছে।আবার পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙতে পারে।
—-আপনি অন্যদিন এই সময় কি করেন?
—-কি করি? খাওয়া-দাওয়ার পর ঘুম।আলো থাকলে জঙ্গলের হিংস্রতাকে পর্যবেক্ষণ করি।কখনো চাঁদের আলোয় জঙ্গল দেখেছেন?
—-কিন্ত এখানে তো তেমন হিংস্র প্রাণী নেই।
—-নেই।তবে এই পাহাড়ের পিছনে একটা লাগোয়া পাহাড় আছে সেখানে কয়েকটা মহুয়া গাছ আছে,ভাল্লুকের এক আধবার যাতায়ত দেখেছি।
—-ভাল্লুক! তবে তারা তো এ পাহাড়েও আসতে পারে?
—-আসতে পারে।তবে কখনো এ পাহাড়ে আসতে দেখিনি।
ভাস্বতী বলল আপনি তো গান জানেন?
—-আমি?
—- হ্যাঁ ওই যে ‘যেদিন সুনীল জলধি হইতে…’
—হা হা।সে গান এই বোবা পাহাড় আর গাছপালা সহ্য করতে পারে কোনো সভ্য মানুষের কানে সহ্য হবে না।আপনি জানেন না?
ভাস্বতী রঞ্জনের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল—ইনি জানেন।
ভাস্বতী নিজে রবীন্দ্রসংগীতে পারদর্শী।কিন্তু রঞ্জনেরও গানের গলা খারাপ নয়।
রাত বাড়তে থাকে।লোকটি বলে এবার শোবার ব্যাবস্থা করা যাক।
দুটিমাত্র খাট—কিন্তু ফোল্ডিং খাট এমনই ছোট আর গড়ানে ধরনের হয় তাতে দুজনের শোয়া সম্ভব নয়।
রঞ্জন তবু সেই প্রস্তাব করলো এক খাটে আমরা দুজনে শুই অন্য খাটটা আপনি নিন।
লোকটি বলল একটি খাটে দুজন? এই একটি খাটে দুটো বাচ্চাও ঘুমাতে পারবে না।
—-সে আমরা ঠিক চালিয়ে নেব।
—-অবাস্তব কথা বলে লাভ নেই।তার চেয়ে না শোওয়া ভালো।আপনারা বরং একটি খাট নিন আমি রান্নার জায়গাটায় জায়গা করে শুয়ে যাবো।
রঞ্জনের উন্নত হৃদয় এই স্বার্থপর ব্যাবস্থায় কিছুতেই সম্মত হতে পারে না।
রঞ্জন বলে তারচেয়ে বরং এক কাজ করি আমরা তিনজনেই নিচে বিছানা করে শুতে পারি।
রঞ্জনের কথায় একটা আতিশয্যের সুর আছে।ভাস্বতী তাকালো রঞ্জনের দিকে।ওরকম ভাবে শুতে ভাস্বতীর আপত্তি নেই।সামাজিক রীতি সে গ্রাহ্য করে না।কিন্তু লোকটির হাত? ওই দুরন্ত হাতকে কে রুখবে?
রঞ্জনকে দুঃখ দেওয়া হবে তাতে।
সে মানিনীর মতন গলায় আনুনাসিক সুর ফুটিয়ে বলল আমি বাবা মাটিতে শুতে পারবো না।আবার যদি ব্যাঙ-ট্যাঙ আসে—
রঞ্জন লোকটির দিকে তাকিয়ে পুরুষদের নিজস্ব ধরনের সহাস্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো,যার অর্থ মেয়েদের নিয়ে আর পারা যায় না।
লোকটি বলল ঠিক আছে এ ঘরের খাট দুটোতে আপনারা শোবেন।আমি অন্যঘরে শোওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
—-ওই সাপের ঘরে আপনি শোবেন?
—-মেছনির যেমন মাছের গন্ধ ছাড়া ঘুম আসে না।তেমনই আমার সাপের ফোঁসফাঁস ছাড়া ঘুম আসে না।
অনেক কথা বার্তার পরও লোকটি মেনে নিল না।সেই যেন শ্রেষ্ঠ উপায় বের করেছে।
এ যদি কোনো ডাকবাংলোর চৌকিদার হত তাহলে রঞ্জন এখুনি একে হাজার টাকার বখশিশ দিয়ে দিত।কিন্তু বিনিময়ে একে এখন কিছুই দেওয়া যাচ্ছে না–রঞ্জন মনে মনে বিব্রত বোধ করলো।
ভাস্বতী ততক্ষনে একটা খাটে শুয়ে পড়েছে।আরাম করে দেহ ছড়িয়ে বলে উঠলো আঃ।
রঞ্জন বলল সতী তুমি প্লিজ ওর বিছানাটা পেতে দিয়ে এসো।
ভাস্বতী বলল আমার এখন উঠতে ইচ্ছা করছে না।
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,136
159
রঞ্জনের ভদ্রতাবোধ এতো বেশি যে সে লোকটির কাছে কৃতজ্ঞতার বোঝায় কিন্তু কিন্তু হয়ে আছে।
সে বলল এরকম কোরো না।ছেলেটি এতকিছু করেছে আমাদের জন্য—এটা না করলে খারাপ দেখায়।
ভাস্বতী আর দ্বিরুক্তি না করে তোষক আর বালিশ নিয়ে চলে এলো অন্যঘরে।
লোকটি ততক্ষনে জায়গাটা সাফসূতরো করে ফেলেছে।
ভাস্বতী বলল সরুন আমি বিছানা করে দিচ্ছি।
হাঁটু গেড়ে বসে ভাস্বতী বিছানাটা ঠিক করছে।লোকটি খুব আস্তে আস্তে বলল আমার বিছানায় কোনো দিন আপনার মত লোকের হাতের ছোঁয়া লাগবে–বিশ্বাসই করতে পারছি না।
ভাস্বতী মুখ না ফিরিয়ে বলল এবার বিয়ে করলে পারেন?
—-কেউ এখানে আসবে না।আপনি শুধু এসে পড়েছেন।
তারপর লোকটি ভাস্বতীর চিবুক ছুঁয়ে বলল আপনি কি সুন্দর ! ভাস্বতী মুখটা সরিয়ে নিল।
লোকটি তবু ভাস্বতীর হাতের উপর হাত রেখে বলল এমন সুন্দর আঙ্গুল–এরকম ছবির মতন হাত।
যেন লোকটি ভাস্বতীর অনেকদিনের চেনা।
লোকটি তার শক্ত লোহার মত দৃঢ় হাতখানা ভাস্বতীর নরম গালে রেখে বলল কি সুন্দর ! কতদিন এমন সুন্দর কিছু দেখিনি।
যে কোন মুহূর্তে রঞ্জন এ ঘরে আসতে পারে।ভাস্বতী তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো।লোকটি হাঁটু গেড়ে বসে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্বতীর উরু দুটোকে জড়িয়ে রাখলো।যেন কোনো ক্রীতদাস রাজকুমারীর কাছে প্রাণভিক্ষা করছে।ভাস্বতী ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে দর্পের সঙ্গে চলে গেল পাশের ঘরে।
দুটি ঘরেই দরজা আছে বাইরের দিকে।দুটি ঘরের মাঝখানের দরজায় কোনো পাল্লা নেই।তাই বন্ধ করার কোনো প্রশ্ন আসে না।
যে যার ঘরের বিছানায় শুয়ে দু ঘর থেকে গল্প করতে থাকলো।
হ্যাজাকটি মৃদু করে দিল লোকটি।রঞ্জন আর ভাস্বতীর খাট ঘরের দুপাশে রাখা।মাঝে ভাস্বতীর শাড়িটা মেলে রাখা আছে দড়িতে।ফলে ওরা তিনজনেই তিনটি আধার দ্বারা আড়াল করা।কেউ কাউকে দেখতে মেলে না।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো আপনি লাস্ট কবে কলকাতা গিয়েছিলেন?
—-সতেরো বছর বয়সে।তখন একবার বাড়ী থেকে পালিয়েছিলাম।কলকাতা আমার ভালো লাগেনি।
—-সেটা বুঝতে পারছি।কারন আপনি কলকাতার কথা একবারও জিজ্ঞেস করেননি।সব প্রবাসী বাঙালিরাই জিজ্ঞেস করে।
—-আমি ঠিক বাঙালীও তো নই।
—-আপনি ইউনিক।এখন দেখছি আপনি এখানে বেশ ভালোই আছেন।আমাদেরও আজকাল কলকাতা ভালো লাগে না।যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে গেছে–তাই সুযোগ পেলে একবার বেড়িয়ে আসতে ইচ্ছা হয়।
রঞ্জন আর ভাস্বতীর খাটদুটো দুপাশে–অনায়াসেই দুটো খাট জুড়ে শোওয়া যেত।এ চিন্তা রঞ্জনের মাথায়ও এসেছিল–কিন্তু পাশের ঘরে একজনকে নীচে ঘুমোতে দিয়ে স্বামী-স্ত্রী কাছকাছি শোওয়ার মধ্যে একটা লজ্জার ব্যাপার আছে।
হ্যাজাকের অস্পষ্ট আলো থাকলেও ভাস্বতীকে রঞ্জনের খাট থেকে ভালো করে দেখা যায় না।
ভাস্বতী চুপচাপ শুয়ে আছে।তার চোখে ঘুম আসে না।খাট থেকে ফাঁকা জায়গাটা দেখা যায়।যে খাটটা থেকে দেখা যায় ভাস্বতী সেই খাটটাই ইচ্ছা করে নিয়েছে।সে সর্বক্ষণ তাকিয়ে আছে সেই দিকে।
কথাবার্তা থেমে যায়।চারিদিকের নিস্তব্ধতা টের পাওয়া যায়।যেন মনে হয় অরণ্যে গভীর রাত্রি থমকে গেছে।
একটুক্ষণ পরেই শোনা গেল রঞ্জনের নাসিকাধ্বনি।পাশের ঘরেও চুপচাপ।ভাস্বতীর তবু ঘুম আসে না।সে যে কেন পাশের ঘরে তাকিয়ে রয়েছে,তা সে নিজেও জানে না।
একসময় দেখলো অন্ধকারে সেই ফাঁকা জায়গায় একটা মনুষ্যমুর্তি।
ভাস্বতী প্রথমে ভাবলো চোখের ভুল।পরক্ষনেই দেখলো না সত্যিই কেউ নেই।পাশের ঘরে কেবলই সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দ।
ভাস্বতী কি এরকমই কিছু দেখবার জন্য প্রতীক্ষা করেছিল এতক্ষন?প্রতীক্ষা নাকি আশঙ্কা?
হালকা আলো আর অন্ধকারে চেয়ে থাকলো অনেকক্ষন।এরকম ভাবেই মানুষ ভূত দেখে।সত্যিই চোখের ভুল।
ভাস্বতী এবার পেছন ফিরে শুলো।
তন্দ্রার ঘোরে ছোট ছোট স্বপ্ন।…একটা ফুটফুটে বাচ্চা সবেমাত্র হাঁটতে শিখেছে–দুলে দুলে হাঁটছে..ইস কি মিষ্টি কি মিষ্টি- -কার ছেলে?এ কাদের ছেলে? ভাস্বতী দু হাত বাড়িয়ে ডাকলো আয় আয়…’
দ্বিতীয় স্বপ্ন–তার পাশে কে যেন শুয়ে আছে..মানুষতো নয়, একটা মোটা ময়াল সাপ,না পাইথন।যে সাপটা ধরা পড়েনি এখন সেটাই লুকিয়ে লুকিয়ে তার বিছানায় উঠে এসেছে।ভাস্বতীর গা দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে,নড়তে পারছে না। যদি নড়তে গেলে কামড়ে দেয়…সাপটা তাকে পেঁচিয়ে ধরছে…
কত ঘন্টা,কত মিনিট বা কত যুগ কেটে গেল কে জানে?ভাস্বতী তা জানে না।একটু তন্দ্রা এসেছিল,রঞ্জনের নাক ডাকার শব্দে তা ভেঙে গেল।অমনি ভাস্বতী দুই ঘরের দরজার মুখে তাকালো।একটি মনুষ্য অবয়বের রেখা সেখানে দাঁড়িয়ে।সত্যি? না চোখের ভুল?
ভাস্বতী কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছে না।ভাস্বতী চোখের পাতা বুজলো আবার খুলল।তখনও ছায়ামুর্তিটা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ভাস্বতী পাশ ফিরলো।সে আর ওদিকে তাকাবে না।
কিন্তু এভাবে কি থাকা যায়?যদি সত্যিই কেউ দাঁড়িয়ে থাকে ওখানে! রঞ্জনকে ডাকতে হবে।এমনি ডাকলে রঞ্জনের ঘুম ভাঙার সম্ভাবনা কম।
ভাস্বতী আবার সেদিকে না তাকিয়ে থাকতে পারলো না।তখনো ছায়ামুর্তিটি দাঁড়িয়ে আছে।এতে কি চোখের ভুল হতে পারে?মনে হল এবার ছায়ামুর্তিটা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
ছায়ামুর্তিটি এগিয়ে আসলো তার দিকে।তার হাতে পুরুষের স্পর্শ।পুরুষটি যে রঞ্জন নয় সে বুঝতে পারলো।ওপাশের খাটে রঞ্জনের ঘুমন্ত নিশ্বাস।
পুরুষটি হাত ধরে ভাস্বতীকে টানলো।সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক মুহূর্ত মাত্র সময় লাগলো ভাস্বতীর।মৃত্যুর আগেও মানুষ এত দ্রত চিন্তা করে না।
ভাস্বতী যদি চেঁচিয়ে ওঠে? তাহলে রঞ্জন কি করবে? নিজের স্ত্রীর পাশে পরপুরুষকে দেখলে!-কোমর থেকে রিভলবার বের করে গুলি করবে?কিংবা তা যদি না হয়-দুজন পুরুষ পরস্পরকে সহ্য করতে না পেরে তুমুল যুদ্ধ করবে?
তাতে যদি একজন মারা যায়?যদি রঞ্জন…?
নিঃশব্দে খাট থেকে নেমে এলো ভাস্বতী।লোকটি তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।এক হাতে তার রাইফেল ধরা।
ভাস্বতী ঘুমন্ত রঞ্জনের দিকে একপলক তাকালো।লোকটিকে একবারও বাধা দিল না,কোনো কথা বললো না।পূর্ব নির্দিষ্ট অভিসারের মতন চলে এলো পাশের ঘরে।সেখান থেকে বাইরে।আকাশ অনেক পরিষ্কার হয়ে গেছে।আকাশের জোৎস্নার উজ্জ্বল প্রভা ছড়িয়ে পড়েছে বনে বনান্তরে।এই রকম জোৎস্না রাতের কথাই কি লোকটি বলেছিল?
রাইফেলটা পাথরে ঠেস দিয়ে লোকটি ভাস্বতীর দুহাত ধরে দাঁড়ালো।তার চোখ দুটি যেন হীরের মত জ্বলছে…কিংবা ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত।
ভাস্বতী খুব শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো কি চান?
লোকটি উত্তেজনাজনিত ভাঙা গলায় বলল আমি আপনাকে চাই।
—-কেন?
—-আমি কখনো সুন্দর কিছু পাইনি।
—-এইরকম ভাবে কি পাওয়া যায়?
—-কি রকম ভাবে পেতে হয় জানি না।আমাকে তো কেউ নিজের থেকে কিছু দেবে না।তাই আমার যাকে প্রয়োজন আমি জোর করে কেড়ে নেব।
—-এখন বুঝতে পারছি আমি সুন্দর-টুন্দর কিছু না,কেবল রক্ত মাংস।
—-ওসব আমি বুঝি না।আপনাকে আমার এখনি চাই।দরকার হলে আপনার স্বামীকে খুন পর্যন্ত করতে পারি।
—-এভাবে কি কোনো মেয়ে কে পাওয়া যায়?
—-কি ভাবে জানি না।আমি কি জীবনে কিছুই পাবো না?
—-গোড়া থেকেই কি আপনার ওরকম উদ্দেশ্য ছিল?
—-তা যদি থাকতো অনেক আগেই আমি আপনার স্বামীকে খুন করে ফেলতাম।
—-আমি জানি,আপনি ওরকম কিছু করবেন না।
—-কেন?
—-আপনাকে ওরকম মানায় না।জন্তু জানোয়াররা ওরকম করে।
—-আপনাকে আমি বলিনি আমার ডাকনাম পশু?
—-তা হোক,আপনার ভালো নাম মানুষ,মানুষ এরকম করে না।
—-করে না?আপনি মানুষকে চেনেন না তাহলে?সারা পৃথিবীতে কি হচ্ছে তাহলে?মানুষের চেয়ে হিংস্র কি কেউ আছে?
—-সে হোক।সব মানুষই ভালো হবার চেষ্টা করে।
—-এর মধ্যে ভালো মন্দ কি দেখছেন? এই পৃথিবীতে যারা শুধু বঞ্চিত হয়ে থাকে আমি তাদের একজন।আমি আর বঞ্চিত থাকবো না।আমি চাই-আমি চাই-আমি চাই–
লোকটি ভাস্বতীর কোমর ও পিঠ বেষ্টন করে হ্যাঁচকা টানে কাছে টেনে আনলো।দীর্ঘকায় পুরুষের বুকের মধ্যে চেপে রইলো ভাস্বতীর কোমল শরীর।শরীরে শরীর মিশিয়ে দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো।
ভাস্বতী কোনো রকম বাধা দিল না।শরীর আড়ষ্ট করলো না।চুম্বন থেকে মুছে দিল না উত্তাপ,একটা হাত রাখলো লোকটির কোমরে।
লোকটির গায়ে যেন নদীর জলের গন্ধ,পুরুষের গায়ে যে ঘামের গন্ধ থাকে এ তার চেয়েও বন্য।এই বন্যতা যেন আরো বেশি পুরুষালি।ভাস্বতীর ঠোঁটের পাঁপড়ি লোকটি মুখের মধ্যে পুরে যেন সূরা পান করছে।ভাস্বতী টের পাচ্ছে লোকটি যেন আগুন,তার লোভ,কাম,ক্রোধ সব নিংড়ে দিতে চাইছে ভাস্বতীর শরীরের উপরে।
লোকটা পাগল হয়ে গেছে।ভাস্বতী খুঁজে পেয়েছে না ধরা পড়া ময়ালটাকে।ভাস্বতী সোঁপে দিয়েছে নিজেকে।ঠোঁট দুটো মিশে যাচ্ছে গভীর হতে গভীর পর্যন্ত।তার হাত আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠছে।গেঞ্জির ভেতরে প্রবেশ করে ভাস্বতীর মোলায়েম পিঠে খেলা করছে।লোকটি দীর্ঘ চুম্বনের পর ভাস্বতীর ঘাড় এবং গলায় উন্মাদের মত ঘষে চলেছে মুখ।ঘ্রান নিচ্ছে সুন্দরী রমণীর কোমলতায়।ভাস্বতীর শরীরে উষ্ণতা বেশি।কোমল হাতে লোকটির চওড়া শরীরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইছে সে।ভোগ করুক এই জংলী জানোয়ার তার শরীরটাকে–খাক যেমন করে খেতে পারে।এমন পুরুষকে কি সেও আকাঙ্খা করে নি?
লোকটি অস্থির–শিল্পী নয়।কখনো পাগলের মত ভাস্বতীর সুন্দর মুখটাতে মুখ ঘষছে, ঘাড়ে গলায় নিজের রুক্ষ পাথুরে মুখটা ঘষে ঘ্রান নিচ্ছে কখনো ঠোঁট দুটোকে পাগলের মত চুষছে।লোকটার লোভী হাতের শক্ত পাঞ্জায় ভাস্বতীর পিঠের গেঞ্জি উঠে গেছে গলার কাছে।অনাবৃত কোমল পিঠে হাত ফেরাচ্ছে বারবার।
নারীর শরীরে কামের আগুন জ্বালালে তা নেভানোর দায়িত্ব পুরুষের—ভাস্বতী যেন তার তৃপ্তির দায়িত্ব তুলে দিয়েছে লোকটির ঘাড়ে।
লোকটি এবার ভাস্বতীকে ঠেলে ধরে পাথরের দেওয়ালে।জোৎস্নায় সেই চোখটা খোঁজার চেষ্টা করে ভাস্বতী।লোকটি খামচে ধরে ভাস্বতীর সুডৌল স্তন।নির্দয় ভাবে চটকাতে থাকে সে।যেন তার তাড়া আছে।রঞ্জন কখনো ভাস্বতীর স্তনকে এভাবে মর্দন করেনি–কখনোই নয়।বন্য হিংস্রতার ছাপে পিষ্ট হচ্ছে ভাস্বতীর কোমল স্তনজোড়া– পাথরের মত শক্ত হাতে।লোকটি এবার এক টানে পাজামার দড়িটা টান দেয়।পাজামা নেমে আসে হাঁটুর নীচে,ভাস্বতীর পরনে এখন কেবল প্যান্টি।দুই উরুর মাঝে যোনিতে হাত ঘষতেই শরীরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে তার।মুহূর্ত আগেও যে ভাস্বতী তার স্বামীর কাছে সতী ছিল তার গোপনাঙ্গে এখন অপরিচিত একটি লোকের হাত।ভাস্বতী শেষবার প্রত্যাখানের চেষ্টা করে।সে প্রচেষ্টা বড় দুর্বল।ভাস্বতীর প্যান্টিটা টেনে ছিঁড়ে দেয় লোকটি।নগ্ন যোনি দেখবার মত চাঁদের আলো যথেষ্ট নয়।লোকটা নিজের প্যান্ট’টা নামিয়ে দেয়।ভাস্বতী টের পায় তার উরুতে ঠেকছে পুরুষাঙ্গ।লোকটি আনাড়ি ভাবে লিঙ্গটা পড় পড় করে তার গভীরতায় প্রবেশ করে।নারী বুঝতে পারে এই পুরুষাঙ্গ তার মালিকের মতই স্বাস্থ্যবান।ভাস্বতীর মনে হয় যেন একটা বাঁশের মত মোটা কিছু তার যোনিতে প্রবেশ করলো।কোমরের তাল শুরু হল দুর্বার গতিতে।ভাস্বতীর নগ্ন পশ্চাৎদেশ লোকটির সঙ্গমের গতিতে ধাক্কা খাচ্ছে পাহাড়ের দেওয়ালে।লোকটার সারা শরীরটা ভাস্বতীকে দেওয়ালের সাথে চেপে রেখেছে।লোকটাকে আঁকড়ে ধরে ভাস্বতী উঠতে চাইছে সুখের শিখরে।বনভূমির মত আদিম হিংস্র এই মানুষটা তার ক্ষিপ্রতার সাথে স্ট্রোক নিচ্ছে আরো গভীরে পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে।নিস্তব্ধ বনান্তরে নরনারী মিলনের শব্দই কেবল তাদের কানে পৌঁছাচ্ছে।কানের কাছে ভাস্বতী পাচ্ছে লোকটার ঘন শ্বাস নেবার শব্দ।বিনিময়ে ভাস্বতী লোকটার বুকে মুখ জেঁকে রেখে নিচ্ছে সেই আদিম বুনো ঘ্রান।সারা পৃথিবী থমকে গেছে…ভাস্বতীর এখন আর কিছু ভাববার নেই,কেবল সুখলাভের সামান্যটুকু সময়।
কতটা সময় পেরিয়ে যায় হিসেব নেই।কোমল ভাস্বতীকে সুউচ্চে তুলে কতক্ষন ভোগ করছে লোকটা কেউ জানে না।ওদেরও জানবার কথা নয়।রঞ্জনেরও নয়।রঞ্জন এখন স্বপ্ন দেখছে….বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি।সে আর তার বন্ধু বরুন দৌড়চ্ছে।কোথাও আশ্রয় নেই—জায়গাটা কোথায় হাফলং নাকি?
লোকটির ডাকনাম পশু।সত্যিই পশু,তার নমুনা ভাস্বতী টের পাচ্ছে।কিন্তু এমন পশুকেই কি তার শরীর চেয়েছিল? তার রূপ,সৌন্দর্য্য,বর্ণ-সে তো কত পুরুষকে হেলায় ফিরিয়েছে? কিন্তু এই পাশবিক কামকে তার শরীর হেলা করতে পারছে না।লোকটা গোঙাচ্ছে,ভাস্বতীর শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে উঠেছে।দুটো স্তন লোকটার বুকে চেপে আছে।চরম মুহূর্তের দিকে এগিয়ে চলেছে তার।লোকটা নির্দয় হোক,আরো নির্দয়,মেরে ফেলুক তাকে–ভাস্বতী যেন এই কামনা করছে।লোকটা যেন ভাস্বতীর মন পড়তে পারছে।লোহার মত শক্ত পুংদন্ডটা বিদ্যুতের গতিতে চালনা করছে।ছলকে ছলকে বর্ষা নামছে ভাস্বতীর যোনিতে।তৃপ্ত শরীরটাকে আঁকড়ে রেখে ভাস্বতীর বুকের উপর মুখ গুঁজে দেয় লোকটি।নরম উদ্ধত মাংসপিন্ডের উপর মুখ রেখে হাঁফাচ্ছে সে।ভাস্বতী বুকে চেপে রেখেছে লোকটার মাথা।
একটা হিংস্রতার মৃত্যু ঘটেছে তার শরীরে।নিম্নাংশ দুজনেরই নগ্ন।কেউ চেষ্টাও করছে না আব্রুকে ঢেকে নিতে।ভাস্বতীর গায়ে তার সৌন্দর্য্যের মতোই মিষ্টি গন্ধ।নরম স্তনে মুখ চেপে ধেপে রয়েছে লোকটা।নারী যখন কোনো পুরুষকে গ্রহণ করে তার মধ্যে–তখন সে আকর্ষনে যতই উত্তাপ থাক তা মমতা মিশ্রিত হবেই।
ভাস্বতী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে দেয়।নীরবতার বন্ধন ভেঙে বলে আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই।
লোকটি মাথা তুলে দাঁড়ায়।বলে আমি কি বিশ্বাস ভেঙেছি?
—-আমরা এখানে ভুল করে এসেছি।আপনি সেই ভুলের সুযোগ নিয়েছেন।
—-আপনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করেন নি?
—-না মোটেও না।আমি আশঙ্কা করেছি।আপনি আমার আশঙ্কার সুযোগ নিয়েছেন
—-নিশ্চই।আমি কেড়ে নিই,আমাকে কেউ দেবে না।আপনি যদি ভুল করে গরীবের ঘরে জন্ম নিতেন,তবে বুঝতেন–সমস্ত সমাজ আপনার সুযোগ নিচ্ছে।
—-ও কথা আলাদা।আমি কি কোনো দোষ করেছি?
—-আমি আপনাকে ধর্ষণ করিনি।
—-জোর করেছেন।
—-জোর করলে কিছু পেতাম না,কেবল পেতাম নির্জীব শরীর।লোকটির হাতদুটো ভাস্বতী নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল কথা দিন,আর এরকম করবেন না।
—আমি কোনো কথা দিতে পারি না।আপনাকে পাওয়া মানেই আমার সবকিছু পাওয়া
—-কাল আমরা চলে যাবো।আপনার যা পাওয়ার হয়ে গেছে।আপনি ভুলে যান।
—-কি ভুলে যাবো? বলতে পারেন কেন এই পাহাড়ে আমি বছরের পর বছর সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকবো?আর আপনারা সব পাবেন।
—-আমিও তা জানি না।কিন্তু রাত্রি বেলা একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে সে সব প্রশ্ন আসে না।ভাস্বতী মোহময় ভঙ্গিতে লোকটির হাত মুঠিয়ে বলল এখন আপনি যান।আমাকে যেতে দিন।
বলেই ভাস্বতী পাজামাটা পরে নেয়।
—-যদি আমি আপনাকে আবার একবার ভোগ করি?আপনার স্বামীর বিছানার পাশে?
—-আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই।
—-আমি চাই সেক্স।আপনার শরীর।আমি লোভী,তাই না?
—-দোহাই লক্ষীটি,আপনি…
ভাস্বতী কিছু বলবার আগেই লোকটি ভাস্বতীকে কোলে তুলে নেয়।দীর্ঘদেহী এই হিংস্র পুরুষের কোলে ভাস্বতী যেন খেলবার পুতুল।
সাপের খাঁচার ঘরে লোকটি তার নিজের বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়।সাপটা ফোঁস ফোঁস করে ওঠে।রঞ্জনের ঘুম প্রগাঢ়।কিন্তু রঞ্জন যদি উঠে আসে– দেখে তার স্ত্রী পরপুরুষের বিছানায় শায়িত?
ভাস্বতী যেন মৃত্যুর আগে শেষ সুখটুকু সঞ্চয় করছে।
ভাস্বতী শায়িত হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে লৌহ কাঠামোর এই নর পিশাচটা কে।হ্যাজাকের মৃদু আলোয় লোকটা সম্পুর্ন নগ্ন।পেশীবহুল শরীরে দৈত্য বললে ভুল হবে না।কিছুক্ষণ আগে ন্যাতানো লিঙ্গটা দুই উরুর মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে,শিকারের দিকে তাকিয়ে।ভাস্বতী চোখ সরাতে পারছে না,রজতের পুরুষাঙ্গ ভাস্বতী এত গভীর ভাবে দেখেনি–দেখাবার প্রয়োজন হয়নি।কারন সেখানে ছিল ভালোবাসা,প্রেম।এখানে ভালবাসা প্রেম নয়।খাঁচার গোখরোটা যেন লোকটির লিঙ্গের আকার ধারণ করেছে।হিসহিসিয়ে আসছে ভাস্বতীর কোমল আভিজাত্য কে দংশন করতে।
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,136
159
লোকটা ভাস্বতীর গায়ের উপর শায়িত হয়।ভাস্বতী মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যঘরের দিকে।ফাঁকা জায়গাটা থেকে অন্য ঘরের কিছুই বোঝা যায় না।লোকটার দেহের ভার ভাস্বতী সইছে,যেমন প্রত্যেক নারী সঙ্গমের সময় সইতে পারে।এ লোকের শরীরে মেদ নেই,কেবলই পেশী।
ভাস্বতীর মুখ লোকটা নিজের দিকে করে নেয়।ভাস্বতীর গায়ে তখনও গেঞ্জিটা রয়েছে।আস্তে আস্তে টেনে খুলে দেয়।ভাস্বতীর পরনে এখন কেবল কালো ব্রা।হ্যাজাকের আলোয় তার গলার সরু হারটা চিকচিক করে ওঠে।ব্রেসিয়ার খুলে ফেলতেই লাফিয়ে ওঠে দুটি স্তন।লোকটি লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ভাস্বতীর স্তনে আলতো চুমু দেয়।তার পর খামচে নেয় হাতের তালুতে।এমন রূপসী নারীর কোমল স্তন মর্দনে রুক্ষ হাতের চেটোগুলি যেন আরো বেশি নির্দয় হয়ে ওঠে।স্তনদুটো দলাইমলাই করতে থাকে সে।ভাস্বতী যেন একখন্ড মাংসের দলা।তাকে এভাবে রঞ্জন কখনো ভোগ করেনি,রঞ্জন এতো লোভী নয়।
লোকটা এবার ভাস্বতীর থুতনিটা তুলে ধরে।নিজের মোটা ঠোঁট ভাস্বতীর ঠোঁটে মিশিয়ে দেয়।
লোকটার ঠোঁটে একটা গন্ধ আছে।সেই গন্ধ পাহাড়ের বন্য লোকের মুখে থাকা স্বাভাবিক।স্তন মর্দন ও চুম্বনের দাপটে ভাস্বতীর শরীরটা কুঁকড়ে আসে।যতটা জোরে সম্ভব লোকটিকে আঁকড়ে ধরে।লোকটি প্রশ্রয় পায়।মুখ নামিয়ে আনে ভাস্বতীর স্তনের বৃন্তে।বৃন্তটা মুখে পুরে তীব্র জোরে চুষতে শুরু করে লোকটি;যেভাবে শিশু তার মায়ের স্তন টানে।ভাস্বতী তার মাথাটা বুকে চেপে ধরে।নিজের পিঠ বেঁকিয়ে স্তন উঁচিয়ে ধরে লোকটির মুখে।মুখের লালারসে সিক্ত হয়ে ওঠে ভাস্বতীর স্তনের বোঁটা।উরুসন্ধিতে তখন ধাক্কা দিচ্ছে লোকটির অবাধ্য দানবলিঙ্গটা।ভাস্বতী পাল্টে দেয় স্তন।
এই লোকটিকে আজ রোখা অসম্ভব।ভাস্বতী জানে,তারও শরীরকে আজ রোখা অসম্ভব।রঞ্জন জানলোই না তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে পাশের ঘরে তার উপকারী লোকটি তার স্ত্রীয়ের সাথে এক বিছানায়।
নির্জন গভীর রাতের পাহাড়ে ভাস্বতী এক অচেনা মানুষকে সোঁপে দিয়েছে তার শরীর।লোকটা ভাস্বতীর স্তনের উপর ব্যস্ত।এত সুন্দর স্তন পেলে যেকোনো লোকই পাগল হয়ে উঠবে।বৃন্তটাকে টেনে চুষে ছেড়ে দেয় লোকটা।আবার মুখে পুরে নেয়।সেই সাথে চলছে মর্দন প্রক্রিয়া।
শিহরিত শরীরে ভাস্বতী দেখতে থাকে এই পুরুষের খেলা।অবাধ্য শিশুর হাতে তার স্তন দুটো তুলে দিলেই সে তাকে ক্ষান্ত রাখতে পারত?
ভাস্বতীর পেটের দিকে মুখ নামিয়ে আনে সে।কোমল তকতকে পেটে তার রুক্ষ মুখ ঘষতে থাকে।নাভিমূলের গভীরতায় জিভের ডগা ঢুকিয়ে স্বাদ নেয়।ভাস্বতীর শরীরটা এখন বড় বেশি চাইছে,রঞ্জন হলে এতক্ষনে বলে বসতো, রঞ্জন তাড়াতাড়ি করো।কিন্তু এ যে অবাধ্য।
লোকটা ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে আসে ভাস্বতীর যোনিতে।ভাস্বতী অবাক হয়ে বলতে যায় কি করছেন কি? তার কন্ঠরোধ হয়ে যায়,কোনো শব্দের প্রকাশ হয় না।
লোকটা ঘৃণাহীন ভাবে ভাস্বতীর ফুলের মত শুভ্র যোনিতে মুখ ডুবিয়ে জিভ দিয়ে খোঁচাতে থাকে।ভাস্বতীর শরীরের উত্তাপ তাকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।লোকটার মাথাটা দুই উরু দিয়ে চেপে ধরবার চেষ্টা করে।
লোকটা দুই উরু দুপাশে ঠেলে ধরে ভৃত্যের মত চুষতে থাকে ভাস্বতীর ভ্যাজাইনা।তারপর মসৃন উরুর ত্বকে চুমু দেয়।
ভাস্বতী বুঝতে পারে একটু আগের অস্থির লোকটা এখন পরিণত।পা ফাঁক করে থাকা ভাস্বতীর মুক্ত যোনির মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে লোকটা।নিজের হাতে লিঙ্গটা ধরা।আস্তে আস্তে ভাস্বতীর যোনিতে লিঙ্গটা ঢোকাতে থাকে।
রঞ্জন যদি এখন এসে দেখে? কি ভাববে সে? তার স্ত্রী আর এই লোকটি কি ষড়যন্ত্র করেছে?
কুমারী মেয়েদের যোনির মত ভাস্বতীর অঙ্গ।লোকটা শক্তি প্রয়োগ করে, লিঙ্গটা ধীরে ধীরে সম্পুর্ন প্রবেশ করে যায়।দেহের ভার সম্পুর্ন ফেলে দেয় ভাস্বতীর উপর।ভাস্বতী আঁকড়ে ধরে তাকে।লোকটা মৃদু গতিতে সঞ্চালন করে।ভাস্বতীর ঠোঁটের দিকে লোকটা মুখ নিয়ে যায়।ভাস্বতী এগিয়ে এসে নিজেই আগে পুরুষটির ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।চুম্বনের সাথে সাথে কোমরের ধাক্কা বাড়তে থাকে।ভাস্বতী তার দুই পায়ে লোকটির কোমরটাকে বেঁধে রাখে।শরীরের নীচে লোকটির কোমর যেন যান্ত্রিক ছন্দে খনন করছে রঞ্জনের স্ত্রীর যোনি।উর্ধাংশে অস্থির চুম্বন।একে অপরকে তারা হঠাতে চায় না মুখের ভেতর থেকে।অথচ এতে কোনো চুমু খাবার নিয়মগুলো নেই।
বন্য পুরুষটা তার গুহায় আজ সুন্দরী রমনী কে পেয়েছে।সে তাকে শিকারের মত খাবে।আর ভাস্বতী এই পাহাড়ী আদিম উন্মাদের কাছে নিজের থেকে খাদ্য হতে এসেছে।লোকটার হাত আবার নেমে এসেছে ভাস্বতীর স্তনে।ডলে দিচ্ছে দুই স্তন।কোমরের গতির ধাক্কায় ভাস্বতীর তলার বিছানাটা সরে সরে যাচ্ছে।
একটা মুক্ত সাপ ভাস্বতীর যোনিতে নিয়মিত দংশন করছে,খাঁচার সাপটা মাঝে মাঝে হিসহিসিয়ে উঠছে।অথচ ভাস্বতীর কানে কোনো শব্দই আসছে না,কেবল ঠাপ.. ঠাপ করে তীব্র জোরে উরুতে ধাক্কার শব্দ।
আদিমক্রীড়ায় মাতোয়ারা হয়ে উঠছে ভাস্বতীর শরীর।শরীরদুটো এক হয়ে গেছে,লোকটা জোরে জোরে মৈথুন করছে।নারীর তৃপ্তি কোথায় তা বুঝে নিতে পারে না সব পুরুষ।এই লোক বুঝেছে; ভাস্বতী তার তনয়ায় বন্যতাকে হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ করছে।বনের পশুর মত চলছে সঙ্গমের গতি।থমকে থমকে প্রবল জোরে-ধাক্কায় ভাস্বতীর শরীর সরে সরে যাচ্ছে।হ্যাজাকের অস্পষ্ট আলোয় একে অপরের মুখ দেখা যায় না।লোকটার সারা গায়ে ঘাম– খনি শ্রমিকের যেমন খননে ক্লান্ত হয়ে ঘাম বের হয়।গায়ের পুরুষালি বুনো গন্ধটা আরো তীব্র হচ্ছে,এমন গন্ধ রঞ্জনের নয়।রঞ্জন এ ব্যাপারে সৌখিন।ভাস্বতী লোকটার গায়ের ঘামে মাখামাখি হয়ে আঁকড়ে রয়েছে।
স্তনের বৃন্তে হালকা কামড় বসায় লোকটা।ভাস্বতীর মনে হচ্ছে এরকম কামড়ে ধরে থাকুক তার অবাঞ্ছিত প্রেমিক।লোকটা পড়তে পারে ভাস্বতীর মন,কামড়ে ধরে বাম স্তনের বোঁটাটা।নির্দয় কামড়ের সাথে অদম্য মিলনের আদিম গতি।ভাস্বতীর কি এরকম শরীরের ক্ষুধা ছিল? কখনোই না।লোকটাই কি এর জন্য দায়ী? খামচে ধরে থাকা ডান স্তনটায় মুখ নামিয়ে আনে বনের রাজা।এবার আর কামড় নয়,নির্লিপ্ত চোষন।
কোমরের কাছে হাতটা নিয়ে যায় সে।মসৃন দেহে হাত বোলায়।লিঙ্গটা বের করে আনে।নারীকে কেউ অতৃপ্ত রাখে?
ভাস্বতীর শরীরটাকে উল্টে দেয়।যে পুরুষ ক্রীতদাসের মত ভাস্বতীর পা জড়িয়ে ধরে ছিল-ভাস্বতী এখন তার দাসী।
ভাস্বতী এখন বনের পশুদের মত চারপেয়ে হয়ে রয়েছে।লোকটা আস্তে আস্তে লিঙ্গটা তার লক্ষ্যে প্রবেশ করায়।পেছন থেকে বগলের তলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধরে থাকে ভাস্বতীর নিটোল পুষ্ট স্তন।দানবিক জোরে স্ট্রোক নিতে থাকে।ঘরের ঠেস হিসাবে একটা মোটা বাঁশের খুঁটি।ভাস্বতী তাল সামলাতে না পেরে সামনের খুঁটিটা ধরে ফেলে।লোকটার সুবিধা হয়।
সে এখন ভাস্বতীর ভি আকৃতির ফর্সা মোলায়েম পিঠের উপর হামলে পড়ে পশুপ্রবৃত্তিতে কোমর সঞ্চালন করছে। স্তন দুটো কেবল হাতের মধ্যে ধরা।
ভাস্বতীর নরম গালে লোকটার রুক্ষ মুখ কাঁধের পাশ দিয়ে ঘষা লাগছে।অরণ্যের নিয়মে নরনারীর এই আসনই যথাযোগ্য।
কত যুগ যেন পার হয়ে যাচ্ছে তাদের।রাজার অস্বাভাবিক বৃহৎলিঙ্গ আর ভাস্বতীর ফুলের মত যোনিই কেবল গতিশীল।
হঠাৎ করে ভাস্বতীর মত রূপবতী পরস্ত্রী লাভের সুখে লোকটা অস্থির।ভাস্বতীর যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে এনে পুনরায় তাকে শায়িত করে।যোনিতে লিঙ্গ পুনঃস্থাপন করে ভাস্বতীকে জড়িয়ে ধরে এক গভীর আলিঙ্গনে মৈথুন করতে থাকে।অত্যধিক শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে গেছে ভাস্বতীর।এখন যদি রঞ্জন এসে দাঁড়ায়? ভাস্বতী পারবেনা ছাড়িয়ে নিতে,মিলনের যে বর্বর তৃপ্তি সে পাচ্ছে তাকে পূর্ন করবেই।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে আছে।সম্ভোগের চূড়ান্ত সময়ে ভাস্বতী এই প্রথম লোকটির জন্য টের পাচ্ছে প্রণায়াবেগ।তার চোখের কোনায় জল গড়িয়ে পড়ছে।লোকটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে তার লালসা পূরণ করতে ব্যস্ত।
শেষ মুহূর্তে চুম্বনে বদ্ধ হয় তারা।গভীরে প্রবেশ করছে অসংখ্য প্রজাপতি।তারা উড়তে চায় মুক্ত বিহঙ্গে।
নিস্তেজ দুটি শরীর পড়ে থাকে।ভাস্বতী পাজামা,অন্তর্বাস,গেঞ্জি পরে নেয়।লোকটা শুয়ে শুয়ে সিগারেট ধরায়।ভাস্বতী নিজের বিছানায় এসে শোয়।একটা শিকারী পাখি কর্কশ শব্দে ডেকে ওঠে।
ভাস্বতী চোখ মেলে দেখলো ঘর আলোয় ভরে গেছে।বাইরে কিছু পাখির ডাকাডাকিও শোনা যায়।রঞ্জন তখনো ঘুমিয়ে আছে।শিয়রে চা দিয়ে না ডাকলে সে আবার কবে ওঠে?
খাট থেকে নেমে পাশের ঘরে উঁকি মারলো সে।লোকটা তখন উঠে স্টোভ জেলে ফেলেছে।চায়ের জল চাপিয়ে একটা গাছের ডাল নিয়ে দাঁতন করছে। ভাস্বতী সেদিকে যাবে কি যাবে না,ইতস্তত করছিল।লোকটা দেখতে পেয়ে ডাকলো আসুন।
ভাস্বতী কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।চোখে তখনও ঘুমের দাগ।শরীরটা ব্যথা ব্যথা।
—-রঞ্জন বাবু ওঠেননি এখনো?
—-না
—-চা হয়ে গেলে ডাকবেন।
সকালের আলোয় সব কিছুই অন্যরকম।লোকটার চোখে মুখে রাতের কামনার কোনো ছাপ নেই।
ভাস্বতী জানে আজকের পর হয়তো আর কখনো লোকটার সাথে তার দেখা হবে না।এই অরণ্যেই সে তার আগের রাতের ব্যাভিচারকে বর্জন করে চলে যাবে।
সে কি কাল আটকাতে পারত না রাজাকে?
রঞ্জন ঘুম থেকে উঠে অভ্যেস মত একটা বৈঠক দিতে গেল।দু চারটা বৈঠক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ভাস্বতী এক এক করে তার সায়া,ব্লাউজ পরে নেয়।নীল শাড়িতে রঞ্জনের সামনে এসে দাঁড়ায়।রঞ্জন তার রূপসী স্ত্রীর দিকে তাকায়।
গরম চায়ে চুমুক দিয়ে রঞ্জন ভাবে শাড়ি পরা তার স্ত্রীকে সে নতুন করে দেখবে।মানুষের উপভোগের কতরকম বিষয় আছে।সুন্দরী স্ত্রীকে ভোরের পাহাড়ে মোহময়ী লাগে।
লোকটির দিকে তাকিয়ে রঞ্জন বলে আপনার দৌলতে বেশ চমৎকার সময় কাটলো।আজকের আবহাওয়া বেশ চমৎকার।মেঘ নেই,বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।
—তুমি প্যান্ট জামা পরে নাও।
ভাস্বতী মাঝপথে বলে ওঠে।
রঞ্জনের চকলেট রঙা প্যান্টটা নদীর জলে ভিজে বেশ ময়লা।রঞ্জন কখনো এরকম ময়লা জামাকাপড় পড়েনি।
ভাস্বতী বলে ওঠে ওই দ্যাখো একটা খরগোশ!
লোকটা বলে মারবো? বেশ ঝোল রেঁধে খাওয়া যাবে।
ভাস্বতী হেসে বলে এখন কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এসব জায়গায় একটা ঘর বেঁধে থাকলে ভালো হয়।
—-দিনের বেলা কিনা।আজ রাত্তিরটাও থাকবে নাকি?
—ভাস্বতী বলল থাকতে পারি।
—-সত্যি তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে?
—-তুমি যা বলবে।
—-তাহলে রাজা বাবুর উপর বেশি ট্যাক্স করা হয়ে যাবে।
লোকটা কিছু বলল না।নিমন্ত্রণও করলো না।সে জানে এসব হালকা কথা।ভাস্বতীর শরীর সে জোর করে ভোগ করেছে মানে ভাস্বতী তাকে পুনর্বার সুযোগ দেবে, এই নয়।
হঠাৎ রঞ্জন মনে পড়ার মত জিজ্ঞেস করলো কাল রাতে তো আর বৃষ্টি হয়নি।নদীর জল কমেছে।
—- কমতে পারে গিয়ে দেখা যাক।
—-হ্যাঁ,চলুন সেইটা আগে দেখা যাক।
তিনজনে নামতে লাগলো পাহাড়ী রাস্তা ধরে।কাল অপরাহ্নে যেখানে দাঁড়িয়ে যেখানে ওরা বৃষ্টিতে ভিজে ছিল—তারই কাছাকাছি একটা চাতালের মত জায়গায় নদীটা দেখা যায়।
রাজা উঁকি মেরে দেখে বলল জল অনেক কমে গেছে।
ভাস্বতী বলল, আমি তো বুঝতে পারছি না।আমারতো মনে হচ্ছে জল আগের মত আছে।
আমি এই নদী দশ বছর ধরে দেখে আসছি,আমি বুঝতে পারি।
ভাস্বতী বলল আমি কি আপনার নদী পার হতে পারবো?
লোকটা বলল কেন এখনো কি আপনার ভয় করছে?
পার হবার সময় একবারও পেছন ফিরে তাকাবেন না।তা হলে ঠিক পার হয়ে যাবেন।
রঞ্জন বলল সতী, আর দেরী নয় এখনই চলো।আর রিস্ক নেওয়া ঠিক নয়।
ভাস্বতী বলল আমরা একবার নদীটা দেখে এলে হয় না?
লোকটা বলল আপনি বুঝি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না ঠিক?এখন একবার নীচে নামবেন,আবার উপরে উঠবেন,আবার নামবেন;তারচেয়ে যদি যেতে হয় এখনই জিনিসপত্তর সঙ্গে নিয়ে একবারেই চলুন।
ভাস্বতী স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল আমরা কি একবারও মন্দিরটা দেখতে যাবো না?
রঞ্জন কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলল আর মন্দিরে গিয়ে কি হবে,বেশ তো এডভেঞ্চার হল।
—-বাঃ এতখানি এসে মন্দিরটা না দেখে ফিরে যাবো?
—-এসব মন্দিরে দেখার কি আছে।সবই তো একইরকম।
লোকটা ঠাট্টার সুরে ভাস্বতীকে বলল মন্দিরে পুজো না দিয়ে মনটা খুঁত খুঁত করছে তাই না।এসব সংস্কার সহজে মেয়েদের যায় না।
ভাস্বতী সামান্যতম বিদ্রুপ বোঝে না সেকথা লোকটা এখনো বোঝেনি।সে ঝংকার দিয়ে বলল পুজোটুজো কিছু নয়–আমি এমনিই মন্দিরটা দেখতে চাই।
—-ওই মন্দিরটার নাম স্বর্গ।স্বর্গের এতো কাছ থেকে ফিরে আসা চলে?
–রঞ্জন বলল সতী,এখন যাওয়া কেবল পন্ডশ্রম।
ভাস্বতী চোখ শানিত করে বলল–তুমি যাবে না?
রঞ্জন তৎক্ষণাৎ সুর নরম করে বলল চলো তাহলে।কিন্তু ফিরতে যদি দেরি হয়ে যায়?রাতে হাঁটতে হবে ছ মাইল পথ,তুমি পারবে?
—-হ্যাঁ আমি পারবো।মন্দিরটাতো বেশি দূরে নয়।আমি একটু আগে দেখেছি।
রঞ্জন লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো কতক্ষন লাগবে?
—-এক ঘন্টা,বড়জোর আরো কুড়ি মিনিট বেশি লাগতে পারে।তবে মন্দিরে শেষ পর্যন্ত উঠতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
—-কেন?
—-মন্দিরের শেষের রাস্তাটা খুবই খারাপ।পাথর গুলো খাড়াই।স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা কি সহজ হতে পারে?তাইতো লোকেরা একে ভয় করে দূরে থাকে।
—-তাহলে আপনি এডভাইস করুন।আমাদের যাওয়া উচিত কি উচিত নয়?
—-আমায় মতে আপনাদের যাওয়া উচিত নয়।
মন্দিরটার কাছে গিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত উঠতে পারবেন না।তাতে আপনাদের মন আরো খারাপ হবে।
রঞ্জন বলে সতী শুনছো মন্দিরে শেষ পর্যন্ত হয়তো ওঠাই যাবে না।
ভাস্বতী আর তাকাচ্ছে না লোকটার দিকে।লোকটা যেন চাইছে ওরা তাড়াতাড়ি চলে যাক।যে লোক ভাস্বতীকে কাল রাতে ভোগ করেছে,সেই লোক এত দ্রুত সব লালসা ত্যাগ করতে চাইছে কেন?
ভাস্বতী মনে মনে ভাবে এ কি সেই কাল রাত্তিরের দুধর্ষ পুরুষ?চিবুক উঁচিয়ে ভাস্বতী বলে আমি যাবোই।
রঞ্জন জানে ভাস্বতী দৃঢ়চেতা নারী।বুদ্ধিমত্তার সাথে জেদও তার খুব।কখনো তার জেদ বত্রিশ বছরের নারীর মত নয়,একজন কিশোরীর মত দেখায়।
রঞ্জন হালকা গলায় বলে-তবে দেখে আসি চলো।যদি দুপুরের আগে ফেরা যায়।
ওরা দুজন হাঁটতে শুরু করেছে।লোকটা দাঁড়িয়ে রইলো।রঞ্জন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি আপনি আসছেন না আমাদের সাথে?
ভাস্বতী বলল একটাই তো সোজা রাস্তা।ওর আসার দরকার নেই।আমরা যেতে পারবো।ফেরার সময় জিনিসপত্র নিয়ে যাবো।
লোকটা বলল,একটা গাইড ছাড়া আপনারা যেতে পারবেন না।একটু দাঁড়ান।
সে সরু চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।রঞ্জন কাছে এসে বলল কি দেখছেন?
—-আরো কয়েকজন লোক নদী পার হচ্ছে।
ওরা এদিকেই আসবে কিনা দেখা দরকার।
এ কথা শুনে ভাস্বতী ঘুরে দাঁড়ালো।পাহাড়ে এলে একটা অধিকার বোধ জন্মায়।মনে হয় এই জায়গা শুধু আমাদের।অন্য কেউ এলে ভুরু কুঁচকে যায়,মুখ ফিরিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো এখানে আর কেউ আসে নাকি?
—মাস খানেক আগে একটা দল এসেছিল।চার-পাঁচজন পুরুষ ও স্ত্রীলোক।আমি তাদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।
লোকটা প্রশান্ত ভাবে হেসে বলল আমি দরকার হলে ভয় দেখাতেও পারি।–আমাকে দেখলে সেটা বোঝা যায় নিশ্চই।এই পাহাড়টা আমার নিজস্ব।অন্য কারুকে সহ্য করতে পারি না।আগে এক আধজন আদিবাসী তীর্থযাত্রী আসতো।গত পাঁচ সাত বছরে কোনো আদিবাসী ওপরে ওঠার চেষ্টা করেনি।ওরা পাহাড়ের নীচ থেকে পুজো করে।
—-আমাদের ভয় দেখালেন না যে?
—-আপনারা সে সুযোগ দিলেন কোথায়।
ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল উনি অবশ্য ভয় পেয়েছিলেন নিশ্চই।
ভাস্বতী কোনো কথা না বলে হাঁটতে লাগলো।
রঞ্জন বলল পাহাড়ে থাকলে কিন্তু ফিট থাকা যায় আপনাকে দেখলে বোঝা যায়।
—-আপনি সুদর্শন।আমি বরাবরই এরকম রুক্ষ দেখতে।কি প্রথমে আপনারা ভয় পাননি?
-রঞ্জন সাহসী পুরুষ তার কাছে লোকটার এই কথার জবাব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হল।
সে দৃঢ়তার সাথে বলল না,সেরকম ভাবে আমি ভয় পাইনা।আসলে কোন যুক্তিতে ভয় পাবো বলুন?
ভাস্বতী ওদের কথা শুনছিল না এমন নয়।লোকটার ‘আপনি সুদর্শন ও আমি বরাবরই রুক্ষ’– কথাটি ওর কানে বাজছিল বারবার।
রুক্ষ,কর্কশ চেহারার লোকটা রঞ্জনের সাথে রূপের কোনো তুলনায় আসে না।রঞ্জন সুপুরুষ,সুঠাম।এই লোকটার চেহারায় সেসব কিছুই নেই।উচ্চতায় রঞ্জনের চেয়ে বেশিই হবে।গায়ে তামার রং।রঞ্জনের মত আকর্ষণীয় চেহারা নয়,হাতের বাইসেপ্স ও কব্জি যেন লোহার বর্ম দিয়ে বাঁধানো।উচ্চতায় অনেক বেশি।যেন পাহাড়ের গায়ে পাথর থেকে জন্ম।
আর এই লোকটাই যখন ভাস্বতীর সাথে পশুর মত অমার্জিত সেক্স করছিল।তখন ভাস্বতী উপভোগ করেছে।এখনো সারা শরীরে একটা ব্যাথার ছাপ আছে তার।
প্রথম থেকেই এই বন্য লোকটাকে ভাস্বতী একটা অন্য আসনে বসিয়েছে।ভাস্বতীর মনে হয় লোকটার নাম মুক্তি হলে ভালো হত,আবার কখনো মনে হয় ওর নাম রাজাই ঠিক আছে।
দশ বারো জনের একটা দল নদী পার হয়ে অন্য দিকে চলে গেল।পাহাড়ের ওপর থেকে ওদের পুতুলের মত দেখাচ্ছে।
বাড়ীর সামনে পৌঁছে লোকটা লোহার চিমটেটা হাতে নিল।
রঞ্জন বলল সাপ ধরবেন নাকি?
লোকটা বলল যার যা কাজ।
—-যাবার রাস্তায় সাপ-টাপ পড়বে?
—-সম্ভবত না।আমি তো আপনাদের বলেছি বেশিরভাগ সাপ এই পাহাড়ে আমি ধরে ফেলেছি।কেবল ওই পাইথনটা…
ভাস্বতী লোকটার দিকে তাকালো।
লোকটা বলল আমার কাছে খাঁজকাটা গামবুট আছে।তাতে পাহাড়ে চড়তে অসুবিধাও হয় না,আর সাপেরও ভয় থাকে না।
ভাস্বতী বলল আমি সাপে ভয় পাই না।
রঞ্জনের মনে পড়লো ক্যামেরাটার কথা।ও আনতে গেল।
আবার লোকটা আর ভাস্বতী একা।
লোকটা বলল আমি সাথে যাচ্ছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন?
ভাস্বতী বলল মনে হচ্ছে আমরা ওপরের দিকে না গেলেই আপনি খুশি হন।
—-আমি সুবিধে অসুবিধেগুলো বোঝাবার চেষ্টা করেছিলুম।
—-আপনি আমাদের অসুবিধে নিয়ে ভাবেন?
—-কালকে রাতে আমি স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম।শুধু আমার সুবিধা নিয়ে ভেবেছি।
—-তবে আপনি সুবিধাভোগী।
—-আপনি সুন্দরী আর আমি স্বার্থপর—আমি একটা বাজে লোক।
—-ভাস্বতী নিচু হয়ে একটা ঘাসফুল ছিঁড়ে বলল দয়া করে যতক্ষন আছি আপনার স্বার্থপরতার পরিচয় আর দেবেন না।
রঞ্জন ক্যামেরাটা নিয়ে খচখচ কয়েকটা ছবি তোলে।কেবল ভাস্বতী নয়,প্রকৃতির ছবি তুলতেও সে ভালো বসে।লোকটার ছবি তুলতে গেলে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এগিয়ে এসে রঞ্জন ভাস্বতীর হাতটা ধরে বলে চলো দৌড়াই,দৌড়াবে?
লোকটা বলে পাহাড়ে ওঠার সময় আস্তে আস্তে ওঠা উচিত।
ভাস্বতী তবু আগে হেঁটে যায়।তার পায়ে লঘু ছন্দ।
মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বে দ্রৌপদীই প্রথম অবসন্ন হয়েছিলেন।আজ এই খুদে স্বর্গে ভাস্বতীই প্রথম আগে পৌঁছাতে চায়।
একটু পেছনে রঞ্জন আর লোকটা।লোকটা নিঃশব্দে সামরিক বাহিনীর মতন হাঁটছে পায়ে পা মিলিয়ে।হাতের লোহার চিমটিটা পাথরে আঘাত করে ঠং ঠং করে এগিয়ে যাচ্ছে।
রঞ্জন কখনো পাহাড়ে ওঠা উপভোগ করে না।কিন্তু আজ তার মন প্রফুল্ল।এই প্রথম সে অচেনা রাস্তা দিয়ে ময়লা জামাকাপড় পরে হাঁটছে।সে যেন অন্য মানুষ।কে না মাঝে মাঝে অন্য মানুষ হতে চায়?
রঞ্জন বলল দেখি আপনার ওই জিনিসটা দেখি তো?
লোকটা সেটা হাতে তুলে দিল।
—-বেশ মজবুত জিনিস তো?
—-স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো।
—-এই দিয়ে সব সাপ ধরা যায়?আপনি পাইথনও এই দিয়ে ধরতে পারবেন?
—-এখানকার পাইথন বেশ বড়।সেগুলোকে ধরতে ভীষন বেগ পেতে হয়।তবে পাইথন ভীষন অলস প্রকৃতির।এক বার দেখলেই–দেখছেন না চিমটেটার মুখে স্ক্রু লাগানো আছে।মাথার কাছে চেপে ধরেই ব্যাটাকে কাহিল করে দেব।
রঞ্জন হঠাৎ কোমরে হাত দিয়ে বলল এই রে!
কোমরে বেল্ট নেই।
—-কি হল?
—-বেল্টটা ছেড়ে এসেছি।সঙ্গে অস্ত্রটাও।
—-তার কি দরকার?আমার রাইফেলটাও তো নিচে রয়েছে।
—-যদি খরগোশ-টরগোশ পেতাম স্বীকার করা যেত।
—-আমিও সেটা ভেবে ছিলাম।তবে সঙ্গে দয়ালু মহিলা থাকলে শিকার করা মুশকিল হয়।দেখলেন না আপনার স্ত্রী খরগোশটাকে মারতে দিলেন না।তবে বনের একটা আইন আছে।
—-আপনি কি আইন মেনে…তবে সাপ ধরেন কেন?
—-সাপ ধরবার জন্য আমার লাইসেন্স আছে।হপকিন্স ইনস্টিটিউট আমাকে…
রঞ্জন মনে করার মত থামিয়ে বলল ও হ্যাঁ আপনি তো বলেছিলেন।
—-তবে জানেন তো বনের মানুষ নিজেই আইন তৈরী করে।তাই এ জঙ্গলে আমার নিজস্ব আইন আছে।
—-রঞ্জন হেসে বলে সেটা কীরকম?
—-আপনি কখনো বনমোরগ খেয়েছেন?
—-না।শুনেছি তবে খুব সুস্বাদু।
—-এ জঙ্গলে বনমোরগ প্রচুর আছে।খরগোশকে মুক্তি দিলেও বন মোরগের আমার হাত থেকে নিস্তার নেই।
ভাস্বতী অনেকটা এগিয়ে গেছে।জঙ্গলের মধ্যে কখনো তাকে দেখা যায়,কখনো দেখা যায় না।গাছপালা বৃষ্টি ধোয়া,চিক্কন সবুজ।চতুর্দিকে একটা চকচকে ভাব।এখানে ফলের সমারোহ চোখে পড়ে।কয়েকটা অচেনা জাতের ফল।
রঞ্জন ভাস্বতীকে থামানোর জন্য ডাক দিল এই সতী দাঁড়াও।
ভাস্বতী দাঁড়িয়ে পড়লো।জঙ্গলের মধ্য থেকে একটা ছাগল গোছের কিছু পায়ের ছাপ।
ভাস্বতীর কাছাকাছি ওরা চলে এলে দেখতে পেল ভাস্বতী এক দৃষ্টিতে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে।
লোকটা বলে উঠলো নীলগাই।
রঞ্জন বলল নীলগাইও আছে নাকি?
—-আছে।তবে জানেন জঙ্গল বড় রহস্যময়।আমি দশবছর ধরে আছি কিন্তু অনেক কিছুই দেখিনি–আবার নতুন নতুন করে আবিষ্কার করি।আপনার চারপাশে আপনাকে সব সময় ওরা লক্ষ্য করছে হয়তো,আপনি জানেন না।
ভাস্বতী লোকটার কথা শুনে একবার চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিল।
ভাস্বতী বলল আমরা সেরকম কিছুই দেখে নিতে পারলাম না।
রঞ্জন বলল তুমি একদিনে সবকিছুই দেখে নিতে চাও?
লোকটা বলল আপনি সাপ দেখেননি?
ভাস্বতী কিছু বলতে যাচ্ছিল,পরক্ষনেই গত রাতের কথা মনে পড়লো–গোখরোর খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে নগ্ন লোকটা।উরুর মাঝে উঁচিয়ে বৃহদাকার পুরুষাঙ্গ।
হঠাৎ অপ্রস্তুত ভাস্বতীর বাহু ধরে হ্যাঁচকা টান দিল লোকটা।
আপনি এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন,আর এইটাই চোখে পড়েনি?
রঞ্জন তখন দেখতে পেয়েছে, সে ভাস্বতীকে আড়াল করে বলল–সাপ!
ভাস্বতী বিচলিত হল না।বলল জ্যান্ত? না,মরা মনে হচ্ছে?
ভিজে বালির উপর এঁকে বেঁকে শুয়ে আছে একটা হলুদ রঙের সাপ।
রঞ্জন বলল আপনি এটাকে ধরবেন না?খাঁচা-টাঁচাতো কিছুই আনেননি।
লোকটা হাসিমুখে বলল এবার আপনাদের কায়দাটা দেখাতে হচ্ছে,কখনো তো দর্শক পাই না।
সে চিমটেটা বাগিয়ে নিয়ে এলো।ওদের খানিকটা উত্তেজনা দেবার জন্যই যেন সাপটা ধরা দিল না।লোকটা কাছে যেতেই সে উঠে পালাতে চেষ্টা করলো।যেন সে লোকটাকে চিনতে পেরেছে।
বেড়াল যেমন ইঁদুর নিয়ে খেলা করে,লোকটাও তেমন সাপটাকে নিয়ে খেলতে লাগলো।একবার ক্যাঁক করে চেপে ধরলো তার মুন্ডুটা।তারপর হাতে নিয়ে চেপে ধরলো।
ছেলেমানুষের মত ভয় দেখাবার জন্য লোকটা সাপটাকে নিয়ে এলো ওদের কাছে।স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ায় ওরা সরে দাঁড়ালো।
লোকটা বলল ভয় নেই।এটার বিষ নেই।
ভাস্বতী বলল কি করে বুঝলেন?
—-এইটাই আমার পেশা।
—-বিষ না থাক।এইটা সরিয়ে নিনতো, সাপ দেখতে আমার বিচ্ছিরি লাগে।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো এখন এটাকে নিয়ে কি করবেন?
—-এ সাপ আমার কাজে লাগে না।
পাহাড়ের একপাশে ছেড়ে দিতে সাপটা পাথরের ওপর দিয়ে ঝোপের মাঝে চলে গেল।আর তাকে দেখা গেল না।
ভাস্বতী চেঁচিয়ে বলল একি ওটাকে মারলেন না।
—ওটা ঢোঁড়া সাপ।ওর বিষ নেই।আপনি হঠাৎ দয়ামায়া ছেড়ে?
—-কিন্তু সাপতো?
লোকটা একমনে এগিয়ে চলল।এবার ওরা পিছু পিছু লোকটার।
রঞ্জন বলল পাইথন কি সাংঘাতিক প্রাণী?
—-নিশ্চই।অ-অজগর আসছে তেড়ে,ছেলেবেলায় পড়েননি?
লোকটা হাতের চিমটেটাকে নিয়ে দোলাচ্ছে।
ভাস্বতীর লোকটাকে অনুসরণ করছে রঞ্জনের সাথে।
রঞ্জন বলল অধিকাংশ সাপেরই তো বিষ থাকে না।বইতে পড়েছি।
লোকটি একটু বাঁকা ভাবে বলল, ঠিকই বলেছেন।বই পড়েও অনেকটা সত্যি জানা যায় বটে।
অর্থাৎ যে বনে-পাহাড়ে ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে ,সামন্য বইয়ের পাতা থেকে যে কেউ সেটা জেনে যাবে,এটা তার পছন্দ নয়।নিজস্ব পেশা সম্পর্কে অনেকেরই গর্ব থাকে।
আর একটুক্ষণ হাঁটবার পর ভাস্বতী বলল জায়গাটা কিন্তু ভারী সুন্দর।লোকেরা যে এই জায়গাটাকে মনে মনে স্বর্গ বানিয়েছে,তার একটা কারণ আছে।এমন চমৎকার পাহাড় আমি আগে কখনো দেখিনি।কতরকম ফুলের গন্ধ।এখানে না এলো খুব বোকামি করতুম।
রঞ্জন চুপ করে আছে দেখে ভাস্বতী বলল তুমি তো আসতেই চাইছিলে না।এখন তোমার ভালো লাগছে না?
—-সত্যিই ভালো লাগছে।
—-আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছ? একটুও হাঁপিয়ে যাইনি।
সত্যিই পাহাড়টা খুব অন্যরকম–চারপাশটা এত সুন্দর বলে ওপরে ওঠার কষ্ট মনেই আসে না।
রঞ্জন বলল এ জায়গাটায় বিশেষ কেউ আসে না বলেই এত সুন্দর।
লোকটা বলল, মন্দিরটা আর বেশি দূরে নেই।এ জায়গাটা এখানকার স্বর্গের নন্দন কানন বলতে পারেন।
—-নন্দন কাননে কি সাপ আছে?
—-বাইবেলের নন্দন কাননে ছিল।
ভাস্বতী শাড়িটা গাছকোমর করে পরেছে।তার মুখে রোদ্দুরের আভা।তার গৌর শুভ্র শরীর বরবর্ণিনী এই অরণ্যে কি সাবলীল।তার ত্বকের প্রতিটি রন্ধ্র দিয়ে যেন আনন্দ শুষে নিচ্ছে।
হাতে একগোছা ফুল।সে গুলো রঞ্জনের হাতে দিয়ে সে বললো ধরোতো,আমি ঐ পরগাছার সাদা ফুলগুলো পাড়বো।
—-তুমি গাছে উঠবে?
—-কেন উঠতে পারি না ভেবেছ?
—-দাঁড়াও আমি পেড়ে দিচ্ছি।
তার আগেই লোকটি হাতের চিমটেটা নামিয়ে রেখে গাছে উঠতে শুরু করে দিয়েছে।সেখান থেকে সে বলল কত ফুল চাই,সব পেড়ে দেব?
রঞ্জন আবার হাসলো।লোকটির আচমকা উৎসাহের অন্ত নেই।
যুবতী নারী,তার ওপরে সুন্দরী,চিত্তবৈকল্য তো ঘটবেই।রঞ্জনকে সুযোগ না দিয়েই ও গাছে উঠে গেছে।রঞ্জন পদস্থ একজিকিউটিভ অফিসার হতে পারে,তাবলে স্ত্রীর জন্য ফুল পেড়ে দিতে পারবেনা,এমন তো নয়।বিয়ের আগে ভাস্বতীর সাথে যখন তার প্রণয়পর্ব চলছিল,তখন সে ভাস্বতীর জন্য এরকম কত কি করতো।তখন সে ছিল প্রেমিক,এখন সে স্বামী।অনেক তফাৎ।যখন সে প্রেমিক ছিল,তখন ভাস্বতীর কাছাকাছি অন্য কোন পুরুষ দেখলে সহ্য করতে পারত না।
আর অন্য কোনো ছেলে ভাস্বতীর সঙ্গে কথা বললে তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠতো।এখন সে স্বামী,এখন উদার প্রশ্রয়ই তাকে মানায়।
লোকটা একগাদা ফুল নিয়ে এলেও ভাস্বতী তৃপ্ত হলো না।আরেকটা গাছের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল ঐ নীল কয়েকটা–
এবার সে রঞ্জনকে কিছু বলেনি।লোকটিকেই সরাসরি অনুরোধ করেছে।
রাস্তাটা একটা বাঁক ঘুরতেই ওরা খাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।একপাশে খাড়া পাথর,আর একপাশে খাদ।খাড়া পাথরের গা দিয়ে সরু পথ, তা-ও-অনেকদিন লোক-চলাচল হয়নি বলে পথের ওপর ঝোপ-ঝাড় হয়ে আছে।
রঞ্জন বলল বাবাঃ এ জায়গা দিয়ে যাওয়া যাবে কি করে?
লোকটা বলল এখান দিয়ে যাওয়া শক্ত নয়।দেওয়ালে পিঠ ঘেঁষে আস্তে আস্তে গেলেই হবে।
মন্দিরটার কাছটায় সত্যিই বেশ ভয় আছে।ইচ্ছে করলে এখান থেকেও ফিরে যাওয়া যায়।ঐ তো মন্দিরটা দেখা যাচ্ছে।আর গিয়ে কি হবে।
রঞ্জন ভাস্বতীর দিকে মুখ করে বলল এতদূর এসেছি যখন যাওয়াই যাক।
লোকটা সট করে ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল যাবেন?
—-হ্যাঁ।
—-তাহলে আমার পেছনে পেছনে আসুন।সব সময়ে সামনে তাকাবেন।
এটা যদি গাড়ির রাস্তা হত,তবে স্টিয়ারিং থাকতো রঞ্জনের হাতে।তা-হলে-সে যেকোন বিপজ্জনক দূরত্ব পার হতে পারতো অনায়াস কৃতিত্বে।কিন্তু পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠার ব্যাপারে তার কোন দক্ষতাই নেই।বরং খাদের দিকে তাকিয়ে তার একটু ভয় ভয় করছে।এখানে লোকটিকেই তাকে ভরসা করতে হবে।
লোকটা আগে আগে গেল,হাতের চিমটেটা দিয়ে ঝোপঝাড়ের উপর প্রচন্ড জোরে বাড়ি মারতে মারতে।গাছগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে রাস্তা করে দিল ওদের।দেখে যা মনে হয়েছিল রাস্তাটা তার থেকে অনেক চওড়া,অনায়সে পা রাখা যায়।
আর একটা বাঁক ঘুরতেই মন্দিরটা খুব কাছে এসে গেল।লোকটা বলল এইখানটা আসল কঠিন জায়গা।
রঞ্জন অপরের দিকে তাকিয়ে বলল মন্দিরটা দেখতে তো বেশ ইন্টারেস্টিং।বহু পুরোনো হবে মনে হয়।
লোকটা বলল,আদিবাসীদের বিশ্বাস এটা দেবতাদের হাতে তৈরী।
হিন্দু মন্দিরের চূড়া যেরকম হয় এ মন্দির সেরকম নয়।বড় বড় পাথরের টুকরো বসিয়ে একটা ত্রিকোণাকৃতি ঘরের মতন—পাথরগুলোতে বহুকালের শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে আছে।
মন্দিরটার পেছন দিকটা দেখা যায় না।বোধ হয় অনেকখানি জায়গা আছে।
মন্দিরের সামনে চাতালের মত জায়গায় ঢালু হয়ে নেমে গেছে।এক জায়গায় ভীষন ফাঁক।
মন্দিরের চাতালে যেতে হলে গর্তটা পেরোতেই হবে।
রঞ্জন গর্তটার কাছে এসে দেখলো ডান দিকে অনেক নিচু খাদ।বামদিকে পাহাড়ের ঢাল।ভাঙা গর্তটার কাছে বোধ হয় অনেককাল আগে পাথরের সিঁড়ি ছিল,প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে গেছে হয়তো।মন্দিরের পথ এতটাই দুর্গম,অনেকের কাছে অসাধ্য।তাছাড়া মন্দিরের ঢাল এতটাই গড়ানো সোজা হয়ে দাঁড়ানো শক্ত।যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বার সম্ভাবনা।আর গড়িয়ে পড়লেই অবধারিত মৃত্যু।
রঞ্জন বলল সতী যাবে নাকি?
—-ভাস্বতী বলল যেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু…
লোকটা বলল একটু যদি ঝুঁকি নিতে রাজি থাকেন তবে যাওয়া যায়।
—-কি ভাবে?
—-আমি আগে পেরিয়ে যাবো।তারপর ওদিক থেকে আপনাদের দুজনকে পার করে নেব।
—-লাফিয়ে?
—-লাফানোটা শক্ত নয়।তবে ওপাশে দাঁড়ানোটা শক্ত।আমি বেশ কয়েকবার গেছি,পারবো।আমি পেরোলেই আপনাদের চিন্তা নেই।
রঞ্জন বলল ঠিক আছে আমি প্রথমে ওদিকে যাচ্ছি।
লোকটা বলল না! আপনার জীবনের দাম আছে।
—-কেন আপনার জীবনের দাম নেই?
লোকটি নিঃশব্দে হেসে ভাস্বতীর দিকে তাকালো,দেখুন আপনার সঙ্গে আপনার স্ত্রী আছে।আমার কেউ নেই।আপনার কিছু হলে উনি কি করবেন?
ভাস্বতী একপলক দৃশ্যটা ভাববার চেষ্টা করলো।রঞ্জন নীচে পড়ে আছে।ভাস্বতী লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ভাস্বতীর গা’টা কেঁপে উঠলো।
রঞ্জন বলল প্রত্যেকেরই জীবনের দাম সমান।
লোকটা বলল একবার এই পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন।এ কথা সত্যি নয়।এবং তা হওয়া সম্ভবও নয়।যাক গে,সেসব কথা না বলে বলছি আমার কোনো বিপদ হবে না।অনেকবার মৃত্যুর চান্স এসেছে,মরিনি।
হঠাৎ সকলকে চমকে দিয়ে ভাস্বতী বলল কাউকে যেতে হবে না।
ওরা দুজনেই চমকে উঠলো।ভাস্বতীর মত সাহসিনীর মুখে এরকম কথা মানায় না।
লোকটা বলল আপনি ভয় পাচ্ছেন?
—-না,ভয় নয়।
—-জীবনে এরকম ঝুঁকি মাঝে মাঝে নিতে হয়।
ভাস্বতী বলল না এতো ঝুঁকি নেবার কোনো মানে হয় না।ফিরে চলুন।
লোকটা হঠাৎ করে এক লাফ দিল।চাতালের সংলগ্ন খাড়া দেওয়াল ধরে ঢালু অংশে দাঁড়িয়ে পড়লো অনায়াসে।
বলল আসুন আর আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে না।
রঞ্জন মৃদু গলায় বলল সতী তুমি পারবে?
—-পারবো।
—-ভয় করছেনা তো?তাহলে এখনো ফিরে যাওয়া যায়।
রঞ্জন ভাস্বতীকে কোমর ধরে উচু করে তুলে দিল খাদের কাছে।
ভাস্বতী কোঁচর ভরে ফুলগুলো ভরে নিয়েছে।দু–হাত বাড়িয়ে দিল সামনের দিকে তবু তার হাত পৌঁছচ্ছে না।
—-আর একটু–আর–একটু–
তাকে ধরে আছে তার স্বামী।অন্যদিকে মধ্যরাতের সেই পাশব পরপুরুষের রুক্ষ হাত।তবু তার শরীর মাধ্যাকর্ষণের নিয়মে নীচের দিকে নেমে যেতে চায়।
আস্তে আস্তে পুরুষের হাতের স্পর্শ পেল ভাস্বতী।সেই দুরন্ত হাত—রুখতে গিয়েও যার কাছে আত্মসমর্পন করেছিল ভাস্বতী।সেই ভাস্বতীর নরম হাত দুটো আবার ধরেছে লোকটা।
অন্ধের মত দুই পুরুষের ভরসায় ভাস্বতী পৌঁছে গেল।ভারসাম্য হারিয়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো তার শরীর।সেই বন্য গন্ধটা তার নাকে এসে পৌঁছলো।একমুহূর্তের জন্য গতরাতের সঙ্গমের সময় তার বুকের ওপর ওঠা নামা করা পুরুষালি পাথর বুক—চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
রঞ্জন রইলো খাদের ওপারে।লোকটার কাছে এখন তার স্ত্রী।তাকে ভরসা করতে হবে ওই লোকটাকেই।
হঠাৎ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো লোকটা ওরে সর্বনাশ!
ভাস্বতীর শরীরটা দুলে উঠলো।লোকটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ঝোপ ঝাড়ের মাঝে গুহার মতন জায়গাটায়।ফিসফিস করে বলল সেই পাইথনটা!
ভাস্বতী দেখল মোটা গাছের গুঁড়ির মতন কিছু একটা পড়ে আছে।
রঞ্জন ব্যাকুল ভাবে জিজ্ঞেস করলো কি? কি হয়েছে?
লোকটা মুখ ফিরিয়ে বলল সাপ।পাইথন।তারপর সে লোহার মতন আঙুলে ভাস্বতীকে আঁকড়ে উপর দিকে ছুটলো।মন্দিরের সমতল জায়গায় ভাস্বতীকে দাঁড় করিয়ে,নিজে নীচের দিকে নেমে গেল।গুহা থেকে দাঁড়িয়ে বলল এই ব্যাটা এখানে এসে হাজির হয়েছে!কি বড় মুখের হাঁ!প্রকান্ড মুখখানা এটাযে এতবড় জানতাম না।জেগে আছে–এদিকেই তাকিয়ে—
রঞ্জন উদগ্রীব হয়ে বলল কি করবেন আপনারা? ফিরে আসুন।
—-এখান দিয়ে যাওয়া এখন রিস্কি।ও যদি মুখটা বাড়িয়ে দেয়!
—-আমি তবে আসছি।বলেই রঞ্জন লাফানোর জন্য প্রস্তুত হল।
লোকটা হাত দেখিয়ে বলল না,না, আপনি দাঁড়ান।খালি হাতে এটার সাথে লড়া যাবে না।রাইফেলটাও ফেলে এসেছি।
ভাস্বতী দূরে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পুরুষ দুজনের চোখ বিস্ফরিত।মাঝখানে গভীর খাদ।
—-একটা কাজ করবেন?
রঞ্জন বলল কি?
—-রাইফেলটা নিয়ে আসতে পারবেন।আমরা অপেক্ষা করছি।
রঞ্জন বলল ওটা নিয়ে আসতে কতক্ষন সময় লাগবে?এতক্ষন কি হবে?
—-আমি সামলাচ্ছি।দরকার হলে গাছে উঠতে হবে।
—-রাইফেলটা কোথায় রাখা আছে?
—-দরজার পাশে।প্লিজ তাড়াতড়ি যান।তবে পাহাড়ী রাস্তা আপনি তাড়াহুড়ো করবেন না।
রঞ্জন পিছু নিয়ে চলতে চলতে গাছের আড়াল হতেই লোকটা ভাস্বতীর হাত ধরে বলল ভেতরে আসুন।
—-সাপটা কোথায়?আমি তো দেখতে পেলাম না!
—-এখনো দেখতে পাচ্ছেন না?
—-না তো।
—-চলুন ভেতরে দেখাচ্ছি।
—-আমার তো মনে হল একটা শুকনো গাছ।সত্যি সত্যিই গাছ।
—-আপনি সাপটা দেখতে পাননি?তবে আপনার স্বামীকে সে কথা বললেন না কেন?
—-আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
—-আপনি জানেন না একটা পাইথন সাপ বিপজ্জনক নয়,অন্তত আমার চেয়ে নয়।
—-এর মানে কি?
—-আমি তোমাকে চাই।
ভাস্বতীর ফর্সা মুখে রোদ্দুরও লালচে আভা।চোখে বহু শতাব্দীর ইতিহাস।শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেছে।উদ্ধত স্তনদ্বয় আঁচলের উপর দিয়ে ওঠানামা করছে।
এতকাল পরেও কি সে শুধু ভোগের সামগ্রী?
ভাস্বতী প্রায় একটা মিনিট তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।এখানে তৃতীয় ব্যক্তি আর কেউ নেই।একটা পুরুষ একটা নারীকে বলছে–আমি তোমাকে চাই।তবু এই চাওয়া-পাওয়ার ইতিহাসগুলো পৃথিবীতে জটিল।
ভাস্বতীর কোমরে হাত রাখলো লোকটা।
—-আপনার যা পাওয়ার তা হয়ে গেছে।আবার কেন?
—-কারন আমি ভালো কিছু পাইনি।একবার যখন পেয়েছি তার স্বাদ আবার…আপনি জানেন আমি লোভী।
—-কিন্তু আপনি আমাকে আর ছোঁবেন না।
লোকটা এবার রেগে বলল আমি কি আপনাদের আসতে বলেছিলাম।বারবার বলে ছিলাম সকালে চলে যেতে।আপনি তারপরেও রয়ে গেলেন।
—-আমি মন্দিরটায় আসতে চেয়েছিলাম।
—-কেন আপনি নিঃসন্তান বলে।আমি আপনাকে দেব সব।
—-আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না।আপনি মিথ্যেবাদী।
—-আমি হতে পারি।কিন্তু এই মন্দির?এত মানুষের বিশ্বাস তো মিথ্যে নয়।এখানে সন্তান লাভের আশায় তারা আসে।
—-আমি এখন কি করবো?
—-চলুন মন্দিরে বিগ্রহের সামনে আপনাকে দেবী করে পূজা করবো।
কার্যত জোর খাটিয়ে ভাস্বতীকে নিয়ে ঢুকলো মন্দিরে লোকটা।
ভাস্বতী বলল আপনি হিন্দু নন?
লোকটা চমকে গেল!
—–আপনি তাও জানতেন তবে আপনি আপনার স্বামীকে বলেননি কেন?
—-আপনার নাম আকবর?
—-হ্যাঁ আমার একটা নাম আছে আকবর।তবে আমি মুসলমান নই।
—-আপনার ধর্ম কি?
—-আমি এই স্বর্গের রাজা।এই দেবতার রক্ষক।
—-আপনি যদি আমাকে এখনই পেতে চান আমাকে সব সত্যি বলতে হবে।
—–কি শুনতে চান।আপনি কি বাকিটুকু জানেন না?
—-না।আমি আর কিছুই জানিনা।আপনার লাইসেন্স থেকে নামটা পেয়েছি।
—-তাহলে শুনে কি লাভ।আমার কোনো ধর্ম নেই।আমি আপনার উপাসক হতে চাই।বলেই লোকটা ভাস্বতীকে জড়িয়ে ধরে।
লোকটার ভারী দীর্ঘ চেহারার বুকে মুখ চেপে ধরে ভাস্বতীর।আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।ভাস্বতীর নাকে আসে সেই আদিম বন্য ঘ্রান।নরম ঠোঁটটা মুখে পুরে নেয় স্বর্গের রাজা আকবর।চুষে নেয় ফুলের পাঁপড়ির মত ওষ্ঠকে।পুতুলের মত আঁকড়ে নিজের বুকে চেপে ধরে।
ভাস্বতীর পাতলা ঠোঁটটিকে মুখে নিয়ে চুষতে থাকে উন্মাদ কামনায়।
লোকটার গায়ের আদিম ঘ্রান ভাস্বতীর শ্বাশ্বত শরীরে মিশে যায়।
ভাস্বতী মুখটা সরিয়ে নিয়ে বলে আকবর! লক্ষীটি আর এরকম কোরো না।
আকবর সম্রাটের মত রাগত স্বরে বলে এই নামে আপনি ডাকবেন না।আমার কোনো জাত নেই।আমার পরিচয় একজন জানোয়ার।
ভাস্বতী মুখ ঘুরিয়ে এনে বলে আমি থেকে গেছি কেন জানেন?
—-আমাকে জানতে চান।
—–আপনি কে?
—-এই প্রশ্ন কেউ করেনা।
—-আমি কি করতে পারি না।
আকবর এবার যেন নিশ্চুপ হয়ে পড়লো।
—-আমি সেদিনই পরিচয় হারিয়েছি যেদিন আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।আমাকে পড়া ছেড়ে দিতে হল।বৌদি যেদিন ভাতে ছাই ঢেলে দিল সেদিন আপনাদের মত সভ্যরা আমায় কোন কাজ দেয়নি।
—-তারপর আপনি বৌদিকে খুন করলেন?
—-হ্যাঁ, আমি খুন করেছি।খুনতো আপনার স্বামীকেও করতে পারতাম–আপনাকে না পেলে।
—-আপনি কি পশু?
—-আমার এটাই আসল নাম।দাদা-বৌদির অত্যাচারে আমার আর কিছু করার ছিল না।
—-আপনাকে মেধাবী মনে হয়েছে।কখনো আমারতো আপনাকে জানোয়ার মনে হয়নি।
—-হা হা হা।আমি মেধাবী।আমার পড়াশোনা ক্লাস এইট।আর আপনি বলছেন মেধাবী!
—-আপনি নিশ্চই তখন স্কুলে ভালো রেজাল্ট করতেন?
—- করতাম।তারপর…তারপর কি হল? আমাকে বউদির অকথ্য অত্যাচার দেখতে হল।কাজের জন্য আপনাদের কলকাতা শহর তন্নতন্ন করে খুঁজলাম।ফুটপাথে লড়াই করলাম।
আকবর থেমে গেল।তার সাথে পাহাড়ের নির্জনতাও যেন একসূরে থমকে গিয়েছে।
—-যেদিন বউদি ভাতে ছাই ঢেলে দিল।আমাকে ভিটে ছাড়া করলো,সেদিন বৌদিকে কুপিয়ে খুন করলাম,ঠান্ডা মাথায়।তারপর পাঁচ বছর জেল।
—-এরপর?
—–মুক্তি।বনের পশুকে মুক্তি দেওয়া হল খাঁচা থেকে।সোশ্যাল ওয়ার্কারদের নজরে পড়লাম।তেমনই একজন অম্লান ভার্মা।আমাকে নিজে হাতে শেখালেন কিভাবে সাপ ধরতে হয়।খুনি উন্মাদ আকবর শেখ হয়ে গেল সাপুড়ে।তিনিও আপনার মত আমার অন্দরের জানোয়ারটাকে ভালোবাসলেন।
—-আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।
—-আপনি এই জানোয়ারটাকে কামনা করেন।
—-আমার কোনো প্রয়োজন নেই।ভাস্বতী দ্বিধাহীন ভাবে অথচ মৃদু গলায় বলল।
—- আপনার সন্তানের প্রয়োজন নেই?
ভাস্বতীর দেখতে পাচ্ছিল একটা ফড়িং।তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে একটা শিশু—কত বয়স হবে তার? তিন বছর।ভাস্বতী দুরন্ত শিশুর পিছনে দৌড়াচ্ছে—নাছোড়বান্দা শিশুটি ফুলের বাগানে লুকিয়ে পড়েছে।ভাস্বতী হন্যে হয়ে খুঁজছে—কি নাম ধরে ডাকবে ওকে? একি! শিশুটি ঝোপের মধ্যে একটা বিষাক্ত সাপ নিয়ে খেলছে!
আকবর এগিয়ে এসে ভাস্বতীর কোমল বাহু ধরে বলে কি চাই আপনার? মানুষেরা যেমন স্বার্থান্বেষী আপনি আপনার স্বার্থসিদ্ধি করবেন না?
—–আচমকা এমন তন্দ্রা দেখবার মেয়ে ভাস্বতী নয়।বুদ্ধিমত্তা তাকে কখনো এরকম স্বপ্নসন্ধানী করে তোলেনি।কিন্তু আজ কি হল তার?
আকবর ভাস্বতীর শুভ্র গ্রীবাদেশে মুখ নামিয়ে আনলো।পাথরের মত মুখে ভাস্বতীর চিবুক,গাল,গলা ঘষা খাচ্ছে বারবার।ভাস্বতী নিথর হয়ে আছে।সে বাধাও দিচ্ছে না উপভোগও করছে না।
আকবরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই—ভাস্বতীর প্রতি।সে সুযোগ সন্ধানীর মত ভাস্বতীকে পেতে চাইছে।তার তাগড়াই শরীরের বলে ভাস্বতীকে পাঁজাকোলা করে নিল।পশুরাজ যেন তার শিকার নিয়ে চলেছে ক্ষুধানিবৃত করতে।
মন্দিরের চাতালে শুইয়ে দেয় তাকে।ভাস্বতী নিস্তেজ ভাবে শুয়ে থাকে। আকবর গায়ের গেঞ্জিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে।তার পর শায়িত ভাস্বতীর উপর দেহের ভার ছেড়ে দেয়।
পাগলাটে কামনায় ভাস্বতীর গায়ের কালো ব্লাউজটা কাঁধ থেকে টেনে ব্রেসিয়ারের লেসের উপর দিয়ে লেহন করতে থাকে।
এক ঝটকায় আঁচলের তলায় হাত চালিয়ে দেয় আকবর।আঁকড়ে ধরে লোহার দস্তানার মত হাতে ভাস্বতীর নরম বাম স্তনটা।এইবার যেন ভাস্বতী কুঁকড়ে ওঠে।তার শরীর সাড়া দিতে শুরু করে।
আকবর নির্দয় ভাবে দুই হাতে ব্লাউজের উপর দিয়ে স্তন চটকাতে থাকে।যেন সে ছিঁড়ে নিতে চাইছে ভাস্বতীর স্তন।মুখ নামিয়ে স্তন বিভাজিকার ওপরে পড়ে থাকে সরু সোনার চেনের মুখটা মুখে পুরে চেপে ধরে আকবর।
আঁটোসাঁটো হাতে স্তনের পিস্টনে ভাস্বতী অস্পষ্ট ভাবে বলে আকবর!
আকবর বুঝতে পারে এটা ব্যাথার নয়,তৃপ্তির ডাক।
সে আরো উন্মাদ হয়ে ওঠে।কোন নারী এই প্রথম তার ভেতরের জানোয়ারটাকে দেখতে চেয়েছে—কামনা করেছে।
আকবর তাড়াহুড়ো করে ভাস্বতীর নীল শাড়িটা খুলে ছুঁড়ে দেয়।মেঘের পর্দার মত সেটা গিয়ে দূরে পড়ে।
অতিরিক্ত দ্রুততায় ব্লাউজের হুক খুলতে গেলে ছিঁড়ে ফেলে একটা হুঁক।গা থেকে ব্লাউজ খুলে নেবার পর ভাস্বতী এখন কেবল কালো ব্রা পরে আছে।
তার কোমরে কালো সায়া।দিনের আলোয় ফর্সা শরীরের মাধুরী যেন আরো উজ্বল মনে হয়।
একে একে সায়া-ব্রা খুলে নিতে ভাস্বতী এখন সম্পুর্ন নগ্ন।
আকবর দেখতে থাকে ভাস্বতীকে গভীর ভাবে।ভাস্বতীর পুষ্ট স্তনদুটো টলোমলো।স্বল্পকেশি যোনি ধবধবে ফর্সা উরুর মাঝে।
আকবর ঠিক উল্টো।নগ্ন আকবর তামাটে পাথরে খোদাই দীর্ঘ মুর্তি।উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন দৃঢ় পুরুষাঙ্গ উঁচিয়ে রয়েছে।ঘষা খাচ্ছে ফর্সা উরুতে।
আদিম পুরুষের দেহের ঘ্রান ভাস্বতীর উত্তেজনাকে আরো শিখরে তুলে দিচ্ছে।নাকের পাটাতন ফুলে উঠছে তার।আকবর নরম মুক্ত স্তনদুটোকে হাতের দাবনায় বন্দি করে নির্মম ভাবে চটকাতে থাকে।তার সেই দুরন্ত হাত থেকে ভাস্বতীর নিস্তার নেই।
ভাস্বতীর গোপন শিহরিত চোখ খোলা।আকবর পাশবিক এক শয়তানি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
অপ্রস্তুত ভাবেই ভাস্বতী নিজেই এগিয়ে গিয়ে চেপে ধরে আকবরের মোটা কালো ঠোঁট।সঙ্গমের সময় এরকম চুম্বন ভাস্বতী রঞ্জনকে অনেকবার করেছে।
আকবর চুম্বনের নিয়ন্ত্রণ ভাস্বতীর কাছ থেকে নিজে ছিনিয়ে নেয়।
স্বর্গের মেঝেতে নগ্ন নারী পুরুষের দেহ মিশে গেছে।এখানে এখন আর কেউ নেই।সমগ্র পৃথিবী শান্ত।
রঞ্জন আস্তে অনেক দেরী।আর এলেও বা কি? আকবর না গেলে কি করে রঞ্জন পেরবে খাদটা?
ভাস্বতীর ডান স্তনের লালচে বোঁটাটা মুখে পুরে নিল আকবর।ভাস্বতীর শরীরটা কাঁপছে—কেন তার এই পাশব লোকটাকে ভালো লাগে? কেন সে এই লোকটাকে এত সুযোগ দিল? একটা খুনী, উন্মাদ জংলী লোককে কেন সে তার আভিজাত্যপূর্ন শরীর তুলে দিচ্ছে নির্দ্বিধায়।জড়িয়ে নিচ্ছে আকবরকে।আকবরের চোষনে স্তনের বৃন্তটা লালাসিক্ত হয়ে উঠছে।শুধু বৃন্ত নয় আকবর যেন পারলে পুরো স্তনটাই মুখে পুরে নিতে চায়।বৃন্তের চারপাশে তার কোমল স্তনে আকবর চুষে চলেছে।
ভাস্বতী একটা অগোছালো শব্দ করে মাথাটা চেপে ধরে নিজের বুকে। যেন সে নিজেই তার স্তনে আকবরকে আহবান করছে।আকবরের মত লোভী পুরুষ ভাস্বতী অনেক দেখেছে।কিন্তু কখনোই লোভীরা লালসা চরিতার্থ করতে পারেনি।
রঞ্জনকে আড়াল রেখে ভাস্বতী এই লোকের লোভকে তৃপ্ত হতে দিচ্ছে।
আকবর জানেই না এই প্রণয়কালের চরম সময়েও ভাস্বতী একাধিক কথা ভাবছে–সে কেবল ভাস্বতীর ফর্সা উদ্ধত নরম স্তনদুটো নিয়ে ব্যস্ত।
ভাস্বতী এসময় কখনো চোখ বুজে নিতে পারে না।সে তৃপ্তির সময় চোখ খুলে দেখতে পছন্দ করে তার পুরুষটিকে,শরীরের শিহরণের গভীরতা যতই থাক।
কাঁপুনি দিক যতই বুকে—তবু সে আকবরের মাথাটা বুকে চেপে তাকে স্তন খাওয়াচ্ছে।
দেখছে আকবর কেমন তার এই মাংসল বক্ষ নিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়েছে।
ভাস্বতীর মত বুদ্ধিমতী সুন্দরী নারী আকবরদের জন্য নয়।তাকে পেতে হলে জোর খাটাতে হয়– ভাস্বতী সেই কল্প ভেঙে দিয়েছে।কিন্তু আকবর যেন বোঝেনি,সে এখনও পশু।
স্তনের বোঁটাগুলোকে চুষতে চুষতে যেভাবে কামড়ে ধরপছে আকবর,তাতে সে তার অমানুষিক কামাকাঙ্খার পরিচয় দিচ্ছে।
ধারালো দাঁতের কামড়ে ভাস্বতীর ব্যাথার চেয়ে সুখ হচ্ছে বেশি।আগের রাতেও এভাবেই কামড়ে ছিল লোকটা।তখনও ভাস্বতীর ভালোই লেগেছিল।
ভাস্বতী তো আকবরকে এরকমই দেখতে চেয়েছে একজন স্বাধীন মুক্তিকামী যোদ্ধা রূপে।যোদ্ধা হোক বা জানোয়ার সে এরকমই পাশবিক হবে।
ভাস্বতীর শরীর রঞ্জনের কাছে কখনো বাড়তি কিছু চায়নি।রঞ্জন সুপুরুষ তার কাছে তার অতৃপ্তি কিছু নেই।কিন্তু এই লোকটি প্রেমিক নয়,বরং—-পশু।এখন ভাস্বতীর একান্ত পশু—যদিও সে পোষ মানে না,স্বাধীন।
আকবরকে ভাস্বতী চেপে রয়েছে বুকের উপর।আকবর ভাস্বতীর বুকে মুখ ঘষে স্তনদুটো কখনো মর্দন করছে।কখনো চুষে,চেঁটে লালায়িত করে তুলছে সমগ্র গৌরবর্ণা পুষ্ট বক্ষদেশ।
ভাস্বতীর পেটে,বাহুতে,উরুতে সর্বত্র লেহন করে অস্থির করে তুলছে।
ভাস্বতীর শরীরের সবজায়গায় আকবরের জিভের সিক্ত লালা।স্তনদুটি চটকে লাল করে দিচ্ছে আকবর।
ভাস্বতী মনে মনে ভাবে তার বনের রাজা আজ যা ইচ্ছে করুক।তাকে মেরে ফেলুক শিকারী প্রাণীর মত।ছিঁড়ে নিক তার স্তন।
বনের পশুরাজের আরাধনায় স্বর্গদ্বারে এভাবেই ভাস্বতী ব্রতী হয়েছে।
আকবর ভাস্বতীর দুটো উরু ফাঁক করে ধরে।মাথাটা নামিয়ে এনে যোনির ঘ্রান নেয়।ভাস্বতীর শরীরের মত যোনিও পরিচ্ছন্ন ঘ্রান আনে আকবরের নাকে।আকবর চুষতে শুরু করে।
সুন্দরী নারীর উন্মুক্ত যোনিদেশের স্বাদ নিতে থাকে আকবর।ভাস্বতী অস্থির হয়ে ওঠে—রঞ্জন কখনো ওরাল করে না।পরিছন্নতায় বিশ্বাসী ভাস্বতী।কিন্তু এক অমোঘ তৃপ্তির কারনে সে রোধ করতে পারছে না।একজন পুরুষ তার পায়ের ফাঁকে মুখ দিচ্ছে দাসের মত।
সারা শরীরে উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে ভাস্বতীর।আকবর একটা আঙ্গুল যোনিতে প্রবেশ করে মৈথুন করতে থাকে।ভাস্বতী উত্তেজনায় ছটকাতে থাকে।আকবর যেন ভাস্বতীকে এরকম দেখে মজা পাচ্ছে।একদিকে আঙ্গুল দিয়ে তীব্র যোনি মৈথুন অন্যদিকে হাত বাড়িয়ে খামচে ধরেছে স্তন।
ভাস্বতীর নগ্ন শরীরটা কাতরাচ্ছে সুখে।লোকটা আরো গতিতে আঙ্গুল সঞ্চালন করছে।
ভাস্বতী চাইছে আকবরকে, তার বুকে উঠে আসুক আকবর।কিন্তু সে বলতে পারে না।
আকবর বোধ হয় বুঝতে পারে।কখনো কখনো আকবরও প্রেমিক হয়ে ওঠে।ভাস্বতীর যোনি থেকে আঙ্গুল বের করে এনে মুখে চুষতে থাকে সে।
তারপর ভাস্বতীর নরম শরীরটাকে জড়িয়ে উদ্ধত লিঙ্গটা ঢোকায়।দ্রুততার সাথে নয় একটু মমতার সাথে।
ভাস্বতী কেঁপে কেঁপে উঠে আকবরকে জড়িয়ে ধরে বলে আকবর!
আকবর কোমর সঞ্চালন করতে থাকে।প্রথমে প্রেমিকের মত ধীরে তারপর জোরে–আরো জোরে।ভাস্বতী পেশীবহুল দীর্ঘ আকবরকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
মন্দিরের চাতালে সুন্দরী ভাস্বতী আর হিংস্র পশুরাজের সঙ্গম চলতে থাকে আদিম শব্দ তুলে।উরুতে উরুতে ধাক্কা খেয়ে একটা নির্লজ্জ্ব শব্দ ব্যাতীত আর কিছু নেই।দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে-একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছে।সামান্য সুতো মাত্র কারোর গায়ে নেই।দূরে ভাস্বতীর অন্তর্বাসটা পড়ে আছে আকবরের গেঞ্জির ওপর-ওদের আর কেউ খেয়াল রাখে না।এইতো আগের রাতেই ভাস্বতী ভিজে ব্রা লোকটার সামনে মেলতে লজ্জা পাচ্ছিল।
সমানতালে মিলনক্রিয়া চলছে।ভাস্বতীর ঠোঁটের দিকে আকবর ঠোঁট নিয়ে যায়।ফিরিয়ে নেয় বারবার।সে চাইছে ভাস্বতী আবার নিজের থেকে চুমু খাক।আবার মুখটা নিয়ে যেতে ভাস্বতী খপ করে ঠোঁট চেপে ধরে।আকবরের মুখে একটা আদিম ঘ্রান আছে।এরকম গন্ধ ভাস্বতী পছন্দ করে না।আজ এই নোংরা গন্ধগুলো তাকে টানছে।
আকবর ঘন চুম্বনে যতটা সম্ভব লালা ভাস্বতীর মুখে চালান করছে।আবার ভাস্বতীর মিষ্টি মুখের স্বাদে মিলেমিশে টেনে নিচ্ছে।
দানবিক সঙ্গমগতি আর গভীর চুম্বনে নরনারীর মিলন খেলা দেখবার জন্য এখানে অতিথি একজনই—মন্দিরের দেবতা।
কামের তাড়নায় কোমরে কোমরে ধাক্কার শব্দ ভাস্বতীর কানে ঠেকছে।ভাস্বতী তার বন্য প্রেমিককেপ আরো ঘনিষ্ট করে জড়িয়ে ধরে।
আকবর ঝড় তুলতে থাকে ভাস্বতীর শরীরে।ভাস্বতী এখন সম্পুর্ন আকবরের নিয়ন্ত্রণে।আকবর সঙ্গমরত অবস্থায় ভাস্বতীকে কোলের উপর নিয়ে উঠে বসে।
তলা থেকে ধাক্কা দিতে থাকে।বৃহদাকার দন্ডটা ঢুকছে-বেরুচ্ছে।ভাস্বতী আকবরের গলা জড়িয়ে ধরে ওঠবস হচ্ছে।মাঝে মাঝে তারা চুমু খাচ্ছে।আকবর তার জিভটা বেরকরে আনে মুখ থেকে।ভাস্বতী এমনি সময় হলে এরকম ঘৃণিত চুম্বন করতে পারত না।কিন্তু এখন তার শরীরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।সে আকবরের জিভটা মুখে পুরে নেয়।
তলায় যোনি গহ্বরে আকবর আরো জোরে ধাক্কা মারতে থাকে।
আকবর এবার মুখ নামিয়ে আনে।একটা স্তন মুখে পুরে নেয়।বোঁটাটা দাঁতে চেপে ধরে কখনো কখনো।
ভাস্বতী বুকে চেপে ধরে সুখ ভোগ করতে থাকে।অবৈধ সুখের স্বাদ বৈধতার চেয়ে অতি তীব্র।
আকবর পাগলের মত ভাস্বতীকে কোলে নিয়ে মৈথুন তালে নাচাতে থাকে।ভাস্বতী যতটা সম্ভব মজবুত করে জড়িয়ে রাখে আকবরকে।
মোটা পুরুষ লিঙ্গটা অনবরত খোদাই করছে–ভাস্বতীর যোনি।
আকবরের গায়ে পশুর মত জোর।সে তার সম্পুর্ন জোর দিয়ে ভাস্বতীকে ফুঁড়ে ফেলতে চাইছে।পুরুষের আদিমতার স্বাদ কতখানি আরমপ্রদ হতে পারে তা ভাস্বতী টের পাচ্ছে।
সে আদর করে জড়িয়ে আছে আকবরকে।আকবর তাকে খেয়ে ফেলতে চায়।তবু তার মনে হচ্ছে খাক—এতকাল পরেও নারী শুধুই ভোগের সামগ্রী।আজ ভাস্বতী স্বর্গের রাজার পুজার ভোগ হতে চেয়েছে।
দুজনেই ভুলে গেছে রঞ্জনকে।সময় দীর্ঘায়িত হয়ে চলছে।সম্ভোগক্রিয়া চলমান।কামনার আগুন যে একবার জ্বলেছে;দুজনার–সুন্দরী এবং তার পাশব প্রেমিকের থামবার কোনো লক্ষণ নেই।
ভাস্বতীর মত নারীকে আকবর পেয়েছে,সে অত সহজে ছাড়বে না।তার সব কামনা তৃপ্ত করে তুলতে চায়।
আকবর লিঙ্গে গাঁথা ভাস্বতীকে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে পড়ে।ভাস্বতী আকবরের কোলে পুতুলের মত সুউচ্চে আরোহন করেছে।আদিম শক্তি আকবরের।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাস্বতীকে কোলে নিয়ে মৈথুন করছে অবলীলায়।অশ্বলিঙ্গের মত পুরষাঙ্গ ভাস্বতীর ফুলের মত যোনিতে চালনা করছে পাশবিক গতিতে।
ভাস্বতী তার শরীরের সম্পুর্ন দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে আকবরের উপর।নিজের থেকেই আকবরের ঠোঁটে প্রগাঢ় চুমু এঁকে দিচ্ছে।অজান্তে সেও হয়ে উঠেছে বন্য হরিণীর মত।
ভাস্বতীকে আঁকড়ে ধরা আকবরের হাতের প্রসারিত বাহু ফুলে উঠছে।তামাটে বুকের পাটা ফুলে উঠছে তার।
ভাস্বতীর মত কোমল ফর্সা নারীদের চিরকাল বেমানান মনে হয়েছে এরকম পুরুষদের সাথে।অথচ এই পুরুষের কবলে ভাস্বতী তৃপ্ত হচ্ছে তীব্রভাবে।
নারীকে চরম সুখ পেতে পুরুষের যৌনদাসী হতে হয়–ভাস্বতীর মত অসামান্যা সুন্দরীর উপলব্ধি হচ্ছে প্রতিটা সঙ্গমের তালে।
আকবর কোল থেকে ভাস্বতীকে নামিয়ে দ্রুততার সাথে পেছন ঘুরে দাঁড় করায়।যেন সে এই অল্প সময়ে সব শৃঙ্গার উপভোগ করতে চায়।ভাস্বতী আকবরের খেলবার পুতুল।
নরম নিতম্ব দেশ উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্বতী।কোমল মোলায়েম নির্দাগ ফর্সা পিঠে চুমু দেয় আকবর।তারপর হঠাৎই পাছার মাংস খামচে ধরে-কি এক মর্ষকামে আলতো করে চড় মারে।
ভাস্বতী আকবরের কাছে মরতে চেয়েছে–যদি পারে আকবর তাকে ধর্ষণ করুক।এমন আদিম আকাঙ্খা কখনো তো তার মনে ছিলনা?
আকবর পেছন থেকে মৈথুন করে।বগলের তলা দিয়ে স্তন দুটো খামচে ধরে।মন্দিরের পাথরের দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্বতী।আকবরের প্রতিটা ধাক্কায় তার হাত সোরে সোরে যাচ্ছে দেওয়াল থেকে।
বেশি সময় নেয়নি আকবর,একটা সজোরে ধাক্কা দিয়ে ভাস্বতীকে দেওয়ালের সাথে সেঁটিয়ে দেয়।স্বর্গের রাজার ক্ষরণ ঘটছে পাহাড়ী প্রবাহীনির মত।
এভাবেই ভাস্বতীকে দেওয়াল ঠেকে চেপে রেখেছে আকবর।দুজনেই শ্বাস নিচ্ছে ঝড়ের মত।
একটা গলার স্বর পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়।আকবর পোশাক গুলো একে একে পরে নেয়।মন্দির থেকে সোজা বের হয়ে যায়।
ভাস্বতী আঃ করে উঠলো।অনেক কিছু বদলে গেল তার জীবনে।ভাস্বতীর সমস্ত শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম।এ ঘাম অবশ্য তার একার নয়–আকবর আর তার বাসনার ঘাম।এই মুহূর্তে তার শরীরে একটা প্রচন্ড তৃপ্তি।ব্রেসিয়ারটা পরতে গিয়ে দেখলো নরম ফর্সা স্তনদুটো লালচে হয়ে পড়েছে।একে একে ব্লাউজ,শাড়ি পরে নিল।তার দুই উরু দিয়ে আকবরের উষ্ণ বীর্যস্রোত গড়িয়ে পড়ছে।
নিচে উঁকি দিয়ে বুঝলো আকবর অনেকটা নিচে নেমে গেছে।রঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাকে।এই সময়টুকু প্রথম তার মিথ্যেবাদী স্ত্রী হিসেবে অপেক্ষা।
রঞ্জনকে সে কি বলবে? কত কত মিথ্যে বলবে? কিছু না বললেও তা মিথ্যেবাদীতা,আর বললেও তা মিথ্যেবাদীতা।
মন্দিরের দেবতার দিকে তাকালো সে।এতক্ষন সে এই স্বর্গের দেবতাকে একবারও দেখেনি।আর দেখবেই বা কি করে আকবরকে সে যে আসনে বসিয়েছে তা আর দেবতার চেয়ে কম কিসের।
অনেক দূরে রঞ্জন রাইফেল হাতে নিয়ে ছুটতে ছুটতে আসছিল।খাদের ধারে এসে সে হাঁফাতে লাগলো।তার মুখে তীব্র ক্লান্তি-প্রশান্তির ক্লান্তি।আকাশের দিকে তাকালো সে।বিরাট নীলাকাশ।নীল শাড়ির মত, হয়তো ভাস্বতীর শাড়ির মত উড়ছে।
আকবর বলল আসুন,লাফ দিতে পারবেন তো?
—-পারবো।দাঁড়ান যাচ্ছি।
বলেই রাইফেলটা আকবরের দিকে ছুঁড়ে দিল।
এ এক চরম মুহূর্ত।ভাস্বতী দূর থেকে দেখছে,আকবরের হাতে এখন রাইফেল।রঞ্জন লাফ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।আকবর যদি এখনI রঞ্জনকে!
আকবরতো খুন করতেই পারে।ও তো খুন করেওছে।আকবর এখন তাকে পেয়েছে,রঞ্জনকে সে কাঁটা হিসেবে রাখতে নাও পারে।ভাস্বতীর মনে শঙ্কা হচ্ছিল। আকবরকে সে বিশ্বাস করে না।
রঞ্জন লাফ দিতেই আকবর রঞ্জনের কাঁধটা ধরে ফেলল।
নাঃ আকবর গুলি করেনি।
রঞ্জন পৌঁছেই বলল কোথায় সাপটা?
—-দেরী করে ফেলেছেন।সাপটা পালিয়েছে।
রঞ্জন হতাশ হয়ে বলল বলেছিলাম না এতক্ষন সাপটা থাকবে না।
—-আকবর কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল একবার যখন পেয়েছি আবার ধরা দিবে।চলুন মন্দিরটা দেখে আসি।
রঞ্জন বলল সতী চলো যাই।
ভাস্বতী বলল তোমরা যাও আমি আর যাবো না।
রঞ্জন অবাক হল।ভাস্বতী নিজেই আগ্রহী ছিল মন্দিরটার ব্যাপারে।
আকবর বললো উনি এতক্ষনতো মন্দিরেই ছিলেন।তাই বোধ হয়—
রঞ্জনের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।কিন্তু এত কষ্ট করে যখন এসেছে দেখাই ভালো।
মন্দিরটায় বিশেষ কিছু নতুনত্ব ছিল না।আর পাঁচটা পুরোনো মন্দিরের মতোই।ব্যতিক্রম কেবল মন্দিরের গঠন।ত্রিভুজাকৃতি–অনেকটা পিরামিডের মত।
তারপর ওরা হাঁটতে শুরু করলো।ভাস্বতী দুঃসাহসী।কিন্তু এখন যেন সে কেমন অন্যমনস্ক- যদি না নজর পড়তো একটা ময়ূরের দিকে।পাহাড়ের চূড়োর দিকে গাছ গুলোর ফাঁকে একটা নয় দুটো ময়ূর।
ভাস্বতী ময়ূর দেখে ওই দিকে যেতে চাইলেই আকবর বলল সাবধান! ওরা আপনাকে দেখতে পেলে পালাতে পারে।তাছাড়া ওরা ক্ষুব্ধ হলে তেড়ে আসতেও পারে।ময়ূর আছে মানে ময়ূরীও আছে।
ভাস্বতী জানে ময়ূরী ময়ূরের মত সুন্দর হয়না।কেবল মানুষের চেয়ে মানুষীই সুন্দর হয়।
আস্তে আস্তে আকবর এগিয়ে গেল।ভাস্বতীর হাতটা ধরে বলল আসুন।গাছের আড়াল থেকে ময়ূর দুটোকে দেখা যাচ্ছে।
ভাস্বতী তাকিয়ে আছে রঞ্জনের সামনে আকবর অবলীলায় তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রঞ্জন বলল ওই তো ময়ূরী,পেখমবিহীন।
ভাস্বতী আকবরের হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।দূরে একটা ময়ূরী,অনেকটা দূরে।
ফেরবার পথে ওদের আবার খাদটা ডিঙাতে হবে।আকবর লাফ দেবার জন্য প্রস্তুত হতেই রঞ্জন বলে আমি আগে পের হই।
—-না,আমি আগে পের হচ্ছি।আপনি পারবেন না।
—-কেন।এ আর অমন কি?আগেই তো পেরলাম।
—-তবুও আপনাদের আগে আমার পেরোনো উচিত।যদি আমি খাদে পড়ে যাই,আপনারা সাবধান হয়ে যাবেন।
রঞ্জন হেসে বলল তা হয় না।বলেই লাফ দিয়ে পের হয়ে যায়।
ভাস্বতীও লাফ দিয়ে রঞ্জনের হাত ধরে ফেলে।এখন আকবর একা খাদের ওপারে।
রাইফেলটা রঞ্জনের হাতে ছুঁড়ে দিয়ে শান্ত অন্যমনস্কভাবে নীচের দিকে চোখ করে এপাশ ওপাশ কি যেন খুঁজতে থাকে।একটা সিগারেট ধরায়।
রঞ্জন বলে কি হল রয়ে গেলেন যে?
—-রঞ্জন বাবু একটু রাইফেলটা দেবেন তো।
—-রঞ্জন রাইফেলটা ছুঁড়ে দেয়।
ভাস্বতী ও রঞ্জন দেখতে থাকে আকবর কি করতে চলেছে।
আকবরের রাইফেল থেকে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে একটা গুলির শব্দ ওঠে।ভাস্বতী কখনো গুলির শব্দ শোনেনি রঞ্জনের বাহুটা শক্ত করে ধরে।দুজনেই চমকে ওঠে।জঙ্গলের নির্জনতায় গুলির শব্দ একটু বেশিই জোরে শোনায়।
 

Helow

New Member
8
5
3
গল্পটা আমার একটা প্রিয় গল্প।
এটাকে একটু বড় করা যায়না?
প্লিজ
 
  • Like
Reactions: Maggots

Manali Bose

Active Member
1,461
2,136
159
কোল জুড়ানো ভালোবাসা গল্পটি কি আপনার
নাহঃ। .. তবে পাঠক হিসেবে গল্পটি আমি পড়তে পারি। আপনি বলতে পারবেন কোথায় পাবো গল্পটি ?
 

Just4fun95

New Member
81
93
18
লোকটা ভাস্বতীর গায়ের উপর শায়িত হয়।ভাস্বতী মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যঘরের দিকে।ফাঁকা জায়গাটা থেকে অন্য ঘরের কিছুই বোঝা যায় না।লোকটার দেহের ভার ভাস্বতী সইছে,যেমন প্রত্যেক নারী সঙ্গমের সময় সইতে পারে।এ লোকের শরীরে মেদ নেই,কেবলই পেশী।
ভাস্বতীর মুখ লোকটা নিজের দিকে করে নেয়।ভাস্বতীর গায়ে তখনও গেঞ্জিটা রয়েছে।আস্তে আস্তে টেনে খুলে দেয়।ভাস্বতীর পরনে এখন কেবল কালো ব্রা।হ্যাজাকের আলোয় তার গলার সরু হারটা চিকচিক করে ওঠে।ব্রেসিয়ার খুলে ফেলতেই লাফিয়ে ওঠে দুটি স্তন।লোকটি লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ভাস্বতীর স্তনে আলতো চুমু দেয়।তার পর খামচে নেয় হাতের তালুতে।এমন রূপসী নারীর কোমল স্তন মর্দনে রুক্ষ হাতের চেটোগুলি যেন আরো বেশি নির্দয় হয়ে ওঠে।স্তনদুটো দলাইমলাই করতে থাকে সে।ভাস্বতী যেন একখন্ড মাংসের দলা।তাকে এভাবে রঞ্জন কখনো ভোগ করেনি,রঞ্জন এতো লোভী নয়।
লোকটা এবার ভাস্বতীর থুতনিটা তুলে ধরে।নিজের মোটা ঠোঁট ভাস্বতীর ঠোঁটে মিশিয়ে দেয়।
লোকটার ঠোঁটে একটা গন্ধ আছে।সেই গন্ধ পাহাড়ের বন্য লোকের মুখে থাকা স্বাভাবিক।স্তন মর্দন ও চুম্বনের দাপটে ভাস্বতীর শরীরটা কুঁকড়ে আসে।যতটা জোরে সম্ভব লোকটিকে আঁকড়ে ধরে।লোকটি প্রশ্রয় পায়।মুখ নামিয়ে আনে ভাস্বতীর স্তনের বৃন্তে।বৃন্তটা মুখে পুরে তীব্র জোরে চুষতে শুরু করে লোকটি;যেভাবে শিশু তার মায়ের স্তন টানে।ভাস্বতী তার মাথাটা বুকে চেপে ধরে।নিজের পিঠ বেঁকিয়ে স্তন উঁচিয়ে ধরে লোকটির মুখে।মুখের লালারসে সিক্ত হয়ে ওঠে ভাস্বতীর স্তনের বোঁটা।উরুসন্ধিতে তখন ধাক্কা দিচ্ছে লোকটির অবাধ্য দানবলিঙ্গটা।ভাস্বতী পাল্টে দেয় স্তন।
এই লোকটিকে আজ রোখা অসম্ভব।ভাস্বতী জানে,তারও শরীরকে আজ রোখা অসম্ভব।রঞ্জন জানলোই না তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে পাশের ঘরে তার উপকারী লোকটি তার স্ত্রীয়ের সাথে এক বিছানায়।
নির্জন গভীর রাতের পাহাড়ে ভাস্বতী এক অচেনা মানুষকে সোঁপে দিয়েছে তার শরীর।লোকটা ভাস্বতীর স্তনের উপর ব্যস্ত।এত সুন্দর স্তন পেলে যেকোনো লোকই পাগল হয়ে উঠবে।বৃন্তটাকে টেনে চুষে ছেড়ে দেয় লোকটা।আবার মুখে পুরে নেয়।সেই সাথে চলছে মর্দন প্রক্রিয়া।
শিহরিত শরীরে ভাস্বতী দেখতে থাকে এই পুরুষের খেলা।অবাধ্য শিশুর হাতে তার স্তন দুটো তুলে দিলেই সে তাকে ক্ষান্ত রাখতে পারত?
ভাস্বতীর পেটের দিকে মুখ নামিয়ে আনে সে।কোমল তকতকে পেটে তার রুক্ষ মুখ ঘষতে থাকে।নাভিমূলের গভীরতায় জিভের ডগা ঢুকিয়ে স্বাদ নেয়।ভাস্বতীর শরীরটা এখন বড় বেশি চাইছে,রঞ্জন হলে এতক্ষনে বলে বসতো, রঞ্জন তাড়াতাড়ি করো।কিন্তু এ যে অবাধ্য।
লোকটা ধীরে ধীরে মুখ নামিয়ে আসে ভাস্বতীর যোনিতে।ভাস্বতী অবাক হয়ে বলতে যায় কি করছেন কি? তার কন্ঠরোধ হয়ে যায়,কোনো শব্দের প্রকাশ হয় না।
লোকটা ঘৃণাহীন ভাবে ভাস্বতীর ফুলের মত শুভ্র যোনিতে মুখ ডুবিয়ে জিভ দিয়ে খোঁচাতে থাকে।ভাস্বতীর শরীরের উত্তাপ তাকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।লোকটার মাথাটা দুই উরু দিয়ে চেপে ধরবার চেষ্টা করে।
লোকটা দুই উরু দুপাশে ঠেলে ধরে ভৃত্যের মত চুষতে থাকে ভাস্বতীর ভ্যাজাইনা।তারপর মসৃন উরুর ত্বকে চুমু দেয়।
ভাস্বতী বুঝতে পারে একটু আগের অস্থির লোকটা এখন পরিণত।পা ফাঁক করে থাকা ভাস্বতীর মুক্ত যোনির মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে লোকটা।নিজের হাতে লিঙ্গটা ধরা।আস্তে আস্তে ভাস্বতীর যোনিতে লিঙ্গটা ঢোকাতে থাকে।
রঞ্জন যদি এখন এসে দেখে? কি ভাববে সে? তার স্ত্রী আর এই লোকটি কি ষড়যন্ত্র করেছে?
কুমারী মেয়েদের যোনির মত ভাস্বতীর অঙ্গ।লোকটা শক্তি প্রয়োগ করে, লিঙ্গটা ধীরে ধীরে সম্পুর্ন প্রবেশ করে যায়।দেহের ভার সম্পুর্ন ফেলে দেয় ভাস্বতীর উপর।ভাস্বতী আঁকড়ে ধরে তাকে।লোকটা মৃদু গতিতে সঞ্চালন করে।ভাস্বতীর ঠোঁটের দিকে লোকটা মুখ নিয়ে যায়।ভাস্বতী এগিয়ে এসে নিজেই আগে পুরুষটির ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।চুম্বনের সাথে সাথে কোমরের ধাক্কা বাড়তে থাকে।ভাস্বতী তার দুই পায়ে লোকটির কোমরটাকে বেঁধে রাখে।শরীরের নীচে লোকটির কোমর যেন যান্ত্রিক ছন্দে খনন করছে রঞ্জনের স্ত্রীর যোনি।উর্ধাংশে অস্থির চুম্বন।একে অপরকে তারা হঠাতে চায় না মুখের ভেতর থেকে।অথচ এতে কোনো চুমু খাবার নিয়মগুলো নেই।
বন্য পুরুষটা তার গুহায় আজ সুন্দরী রমনী কে পেয়েছে।সে তাকে শিকারের মত খাবে।আর ভাস্বতী এই পাহাড়ী আদিম উন্মাদের কাছে নিজের থেকে খাদ্য হতে এসেছে।লোকটার হাত আবার নেমে এসেছে ভাস্বতীর স্তনে।ডলে দিচ্ছে দুই স্তন।কোমরের গতির ধাক্কায় ভাস্বতীর তলার বিছানাটা সরে সরে যাচ্ছে।
একটা মুক্ত সাপ ভাস্বতীর যোনিতে নিয়মিত দংশন করছে,খাঁচার সাপটা মাঝে মাঝে হিসহিসিয়ে উঠছে।অথচ ভাস্বতীর কানে কোনো শব্দই আসছে না,কেবল ঠাপ.. ঠাপ করে তীব্র জোরে উরুতে ধাক্কার শব্দ।
আদিমক্রীড়ায় মাতোয়ারা হয়ে উঠছে ভাস্বতীর শরীর।শরীরদুটো এক হয়ে গেছে,লোকটা জোরে জোরে মৈথুন করছে।নারীর তৃপ্তি কোথায় তা বুঝে নিতে পারে না সব পুরুষ।এই লোক বুঝেছে; ভাস্বতী তার তনয়ায় বন্যতাকে হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ করছে।বনের পশুর মত চলছে সঙ্গমের গতি।থমকে থমকে প্রবল জোরে-ধাক্কায় ভাস্বতীর শরীর সরে সরে যাচ্ছে।হ্যাজাকের অস্পষ্ট আলোয় একে অপরের মুখ দেখা যায় না।লোকটার সারা গায়ে ঘাম– খনি শ্রমিকের যেমন খননে ক্লান্ত হয়ে ঘাম বের হয়।গায়ের পুরুষালি বুনো গন্ধটা আরো তীব্র হচ্ছে,এমন গন্ধ রঞ্জনের নয়।রঞ্জন এ ব্যাপারে সৌখিন।ভাস্বতী লোকটার গায়ের ঘামে মাখামাখি হয়ে আঁকড়ে রয়েছে।
স্তনের বৃন্তে হালকা কামড় বসায় লোকটা।ভাস্বতীর মনে হচ্ছে এরকম কামড়ে ধরে থাকুক তার অবাঞ্ছিত প্রেমিক।লোকটা পড়তে পারে ভাস্বতীর মন,কামড়ে ধরে বাম স্তনের বোঁটাটা।নির্দয় কামড়ের সাথে অদম্য মিলনের আদিম গতি।ভাস্বতীর কি এরকম শরীরের ক্ষুধা ছিল? কখনোই না।লোকটাই কি এর জন্য দায়ী? খামচে ধরে থাকা ডান স্তনটায় মুখ নামিয়ে আনে বনের রাজা।এবার আর কামড় নয়,নির্লিপ্ত চোষন।
কোমরের কাছে হাতটা নিয়ে যায় সে।মসৃন দেহে হাত বোলায়।লিঙ্গটা বের করে আনে।নারীকে কেউ অতৃপ্ত রাখে?
ভাস্বতীর শরীরটাকে উল্টে দেয়।যে পুরুষ ক্রীতদাসের মত ভাস্বতীর পা জড়িয়ে ধরে ছিল-ভাস্বতী এখন তার দাসী।
ভাস্বতী এখন বনের পশুদের মত চারপেয়ে হয়ে রয়েছে।লোকটা আস্তে আস্তে লিঙ্গটা তার লক্ষ্যে প্রবেশ করায়।পেছন থেকে বগলের তলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধরে থাকে ভাস্বতীর নিটোল পুষ্ট স্তন।দানবিক জোরে স্ট্রোক নিতে থাকে।ঘরের ঠেস হিসাবে একটা মোটা বাঁশের খুঁটি।ভাস্বতী তাল সামলাতে না পেরে সামনের খুঁটিটা ধরে ফেলে।লোকটার সুবিধা হয়।
সে এখন ভাস্বতীর ভি আকৃতির ফর্সা মোলায়েম পিঠের উপর হামলে পড়ে পশুপ্রবৃত্তিতে কোমর সঞ্চালন করছে। স্তন দুটো কেবল হাতের মধ্যে ধরা।
ভাস্বতীর নরম গালে লোকটার রুক্ষ মুখ কাঁধের পাশ দিয়ে ঘষা লাগছে।অরণ্যের নিয়মে নরনারীর এই আসনই যথাযোগ্য।
কত যুগ যেন পার হয়ে যাচ্ছে তাদের।রাজার অস্বাভাবিক বৃহৎলিঙ্গ আর ভাস্বতীর ফুলের মত যোনিই কেবল গতিশীল।
হঠাৎ করে ভাস্বতীর মত রূপবতী পরস্ত্রী লাভের সুখে লোকটা অস্থির।ভাস্বতীর যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে এনে পুনরায় তাকে শায়িত করে।যোনিতে লিঙ্গ পুনঃস্থাপন করে ভাস্বতীকে জড়িয়ে ধরে এক গভীর আলিঙ্গনে মৈথুন করতে থাকে।অত্যধিক শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে গেছে ভাস্বতীর।এখন যদি রঞ্জন এসে দাঁড়ায়? ভাস্বতী পারবেনা ছাড়িয়ে নিতে,মিলনের যে বর্বর তৃপ্তি সে পাচ্ছে তাকে পূর্ন করবেই।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে আছে।সম্ভোগের চূড়ান্ত সময়ে ভাস্বতী এই প্রথম লোকটির জন্য টের পাচ্ছে প্রণায়াবেগ।তার চোখের কোনায় জল গড়িয়ে পড়ছে।লোকটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সে তার লালসা পূরণ করতে ব্যস্ত।
শেষ মুহূর্তে চুম্বনে বদ্ধ হয় তারা।গভীরে প্রবেশ করছে অসংখ্য প্রজাপতি।তারা উড়তে চায় মুক্ত বিহঙ্গে।
নিস্তেজ দুটি শরীর পড়ে থাকে।ভাস্বতী পাজামা,অন্তর্বাস,গেঞ্জি পরে নেয়।লোকটা শুয়ে শুয়ে সিগারেট ধরায়।ভাস্বতী নিজের বিছানায় এসে শোয়।একটা শিকারী পাখি কর্কশ শব্দে ডেকে ওঠে।
ভাস্বতী চোখ মেলে দেখলো ঘর আলোয় ভরে গেছে।বাইরে কিছু পাখির ডাকাডাকিও শোনা যায়।রঞ্জন তখনো ঘুমিয়ে আছে।শিয়রে চা দিয়ে না ডাকলে সে আবার কবে ওঠে?
খাট থেকে নেমে পাশের ঘরে উঁকি মারলো সে।লোকটা তখন উঠে স্টোভ জেলে ফেলেছে।চায়ের জল চাপিয়ে একটা গাছের ডাল নিয়ে দাঁতন করছে। ভাস্বতী সেদিকে যাবে কি যাবে না,ইতস্তত করছিল।লোকটা দেখতে পেয়ে ডাকলো আসুন।
ভাস্বতী কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।চোখে তখনও ঘুমের দাগ।শরীরটা ব্যথা ব্যথা।
—-রঞ্জন বাবু ওঠেননি এখনো?
—-না
—-চা হয়ে গেলে ডাকবেন।
সকালের আলোয় সব কিছুই অন্যরকম।লোকটার চোখে মুখে রাতের কামনার কোনো ছাপ নেই।
ভাস্বতী জানে আজকের পর হয়তো আর কখনো লোকটার সাথে তার দেখা হবে না।এই অরণ্যেই সে তার আগের রাতের ব্যাভিচারকে বর্জন করে চলে যাবে।
সে কি কাল আটকাতে পারত না রাজাকে?
রঞ্জন ঘুম থেকে উঠে অভ্যেস মত একটা বৈঠক দিতে গেল।দু চারটা বৈঠক দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ভাস্বতী এক এক করে তার সায়া,ব্লাউজ পরে নেয়।নীল শাড়িতে রঞ্জনের সামনে এসে দাঁড়ায়।রঞ্জন তার রূপসী স্ত্রীর দিকে তাকায়।
গরম চায়ে চুমুক দিয়ে রঞ্জন ভাবে শাড়ি পরা তার স্ত্রীকে সে নতুন করে দেখবে।মানুষের উপভোগের কতরকম বিষয় আছে।সুন্দরী স্ত্রীকে ভোরের পাহাড়ে মোহময়ী লাগে।
লোকটির দিকে তাকিয়ে রঞ্জন বলে আপনার দৌলতে বেশ চমৎকার সময় কাটলো।আজকের আবহাওয়া বেশ চমৎকার।মেঘ নেই,বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা।
—তুমি প্যান্ট জামা পরে নাও।
ভাস্বতী মাঝপথে বলে ওঠে।
রঞ্জনের চকলেট রঙা প্যান্টটা নদীর জলে ভিজে বেশ ময়লা।রঞ্জন কখনো এরকম ময়লা জামাকাপড় পড়েনি।
ভাস্বতী বলে ওঠে ওই দ্যাখো একটা খরগোশ!
লোকটা বলে মারবো? বেশ ঝোল রেঁধে খাওয়া যাবে।
ভাস্বতী হেসে বলে এখন কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এসব জায়গায় একটা ঘর বেঁধে থাকলে ভালো হয়।
—-দিনের বেলা কিনা।আজ রাত্তিরটাও থাকবে নাকি?
—ভাস্বতী বলল থাকতে পারি।
—-সত্যি তোমার থাকতে ইচ্ছে করছে?
—-তুমি যা বলবে।
—-তাহলে রাজা বাবুর উপর বেশি ট্যাক্স করা হয়ে যাবে।
লোকটা কিছু বলল না।নিমন্ত্রণও করলো না।সে জানে এসব হালকা কথা।ভাস্বতীর শরীর সে জোর করে ভোগ করেছে মানে ভাস্বতী তাকে পুনর্বার সুযোগ দেবে, এই নয়।
হঠাৎ রঞ্জন মনে পড়ার মত জিজ্ঞেস করলো কাল রাতে তো আর বৃষ্টি হয়নি।নদীর জল কমেছে।
—- কমতে পারে গিয়ে দেখা যাক।
—-হ্যাঁ,চলুন সেইটা আগে দেখা যাক।
তিনজনে নামতে লাগলো পাহাড়ী রাস্তা ধরে।কাল অপরাহ্নে যেখানে দাঁড়িয়ে যেখানে ওরা বৃষ্টিতে ভিজে ছিল—তারই কাছাকাছি একটা চাতালের মত জায়গায় নদীটা দেখা যায়।
রাজা উঁকি মেরে দেখে বলল জল অনেক কমে গেছে।
ভাস্বতী বলল, আমি তো বুঝতে পারছি না।আমারতো মনে হচ্ছে জল আগের মত আছে।
আমি এই নদী দশ বছর ধরে দেখে আসছি,আমি বুঝতে পারি।
ভাস্বতী বলল আমি কি আপনার নদী পার হতে পারবো?
লোকটা বলল কেন এখনো কি আপনার ভয় করছে?
পার হবার সময় একবারও পেছন ফিরে তাকাবেন না।তা হলে ঠিক পার হয়ে যাবেন।
রঞ্জন বলল সতী, আর দেরী নয় এখনই চলো।আর রিস্ক নেওয়া ঠিক নয়।
ভাস্বতী বলল আমরা একবার নদীটা দেখে এলে হয় না?
লোকটা বলল আপনি বুঝি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না ঠিক?এখন একবার নীচে নামবেন,আবার উপরে উঠবেন,আবার নামবেন;তারচেয়ে যদি যেতে হয় এখনই জিনিসপত্তর সঙ্গে নিয়ে একবারেই চলুন।
ভাস্বতী স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল আমরা কি একবারও মন্দিরটা দেখতে যাবো না?
রঞ্জন কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলল আর মন্দিরে গিয়ে কি হবে,বেশ তো এডভেঞ্চার হল।
—-বাঃ এতখানি এসে মন্দিরটা না দেখে ফিরে যাবো?
—-এসব মন্দিরে দেখার কি আছে।সবই তো একইরকম।
লোকটা ঠাট্টার সুরে ভাস্বতীকে বলল মন্দিরে পুজো না দিয়ে মনটা খুঁত খুঁত করছে তাই না।এসব সংস্কার সহজে মেয়েদের যায় না।
ভাস্বতী সামান্যতম বিদ্রুপ বোঝে না সেকথা লোকটা এখনো বোঝেনি।সে ঝংকার দিয়ে বলল পুজোটুজো কিছু নয়–আমি এমনিই মন্দিরটা দেখতে চাই।
—-ওই মন্দিরটার নাম স্বর্গ।স্বর্গের এতো কাছ থেকে ফিরে আসা চলে?
–রঞ্জন বলল সতী,এখন যাওয়া কেবল পন্ডশ্রম।
ভাস্বতী চোখ শানিত করে বলল–তুমি যাবে না?
রঞ্জন তৎক্ষণাৎ সুর নরম করে বলল চলো তাহলে।কিন্তু ফিরতে যদি দেরি হয়ে যায়?রাতে হাঁটতে হবে ছ মাইল পথ,তুমি পারবে?
—-হ্যাঁ আমি পারবো।মন্দিরটাতো বেশি দূরে নয়।আমি একটু আগে দেখেছি।
রঞ্জন লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো কতক্ষন লাগবে?
—-এক ঘন্টা,বড়জোর আরো কুড়ি মিনিট বেশি লাগতে পারে।তবে মন্দিরে শেষ পর্যন্ত উঠতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
—-কেন?
—-মন্দিরের শেষের রাস্তাটা খুবই খারাপ।পাথর গুলো খাড়াই।স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা কি সহজ হতে পারে?তাইতো লোকেরা একে ভয় করে দূরে থাকে।
—-তাহলে আপনি এডভাইস করুন।আমাদের যাওয়া উচিত কি উচিত নয়?
—-আমায় মতে আপনাদের যাওয়া উচিত নয়।
মন্দিরটার কাছে গিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত উঠতে পারবেন না।তাতে আপনাদের মন আরো খারাপ হবে।
রঞ্জন বলে সতী শুনছো মন্দিরে শেষ পর্যন্ত হয়তো ওঠাই যাবে না।
ভাস্বতী আর তাকাচ্ছে না লোকটার দিকে।লোকটা যেন চাইছে ওরা তাড়াতাড়ি চলে যাক।যে লোক ভাস্বতীকে কাল রাতে ভোগ করেছে,সেই লোক এত দ্রুত সব লালসা ত্যাগ করতে চাইছে কেন?
ভাস্বতী মনে মনে ভাবে এ কি সেই কাল রাত্তিরের দুধর্ষ পুরুষ?চিবুক উঁচিয়ে ভাস্বতী বলে আমি যাবোই।
রঞ্জন জানে ভাস্বতী দৃঢ়চেতা নারী।বুদ্ধিমত্তার সাথে জেদও তার খুব।কখনো তার জেদ বত্রিশ বছরের নারীর মত নয়,একজন কিশোরীর মত দেখায়।
রঞ্জন হালকা গলায় বলে-তবে দেখে আসি চলো।যদি দুপুরের আগে ফেরা যায়।
ওরা দুজন হাঁটতে শুরু করেছে।লোকটা দাঁড়িয়ে রইলো।রঞ্জন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি আপনি আসছেন না আমাদের সাথে?
ভাস্বতী বলল একটাই তো সোজা রাস্তা।ওর আসার দরকার নেই।আমরা যেতে পারবো।ফেরার সময় জিনিসপত্র নিয়ে যাবো।
লোকটা বলল,একটা গাইড ছাড়া আপনারা যেতে পারবেন না।একটু দাঁড়ান।
সে সরু চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।রঞ্জন কাছে এসে বলল কি দেখছেন?
—-আরো কয়েকজন লোক নদী পার হচ্ছে।
ওরা এদিকেই আসবে কিনা দেখা দরকার।
এ কথা শুনে ভাস্বতী ঘুরে দাঁড়ালো।পাহাড়ে এলে একটা অধিকার বোধ জন্মায়।মনে হয় এই জায়গা শুধু আমাদের।অন্য কেউ এলে ভুরু কুঁচকে যায়,মুখ ফিরিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো এখানে আর কেউ আসে নাকি?
—মাস খানেক আগে একটা দল এসেছিল।চার-পাঁচজন পুরুষ ও স্ত্রীলোক।আমি তাদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি।
লোকটা প্রশান্ত ভাবে হেসে বলল আমি দরকার হলে ভয় দেখাতেও পারি।–আমাকে দেখলে সেটা বোঝা যায় নিশ্চই।এই পাহাড়টা আমার নিজস্ব।অন্য কারুকে সহ্য করতে পারি না।আগে এক আধজন আদিবাসী তীর্থযাত্রী আসতো।গত পাঁচ সাত বছরে কোনো আদিবাসী ওপরে ওঠার চেষ্টা করেনি।ওরা পাহাড়ের নীচ থেকে পুজো করে।
—-আমাদের ভয় দেখালেন না যে?
—-আপনারা সে সুযোগ দিলেন কোথায়।
ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে লোকটা বলল উনি অবশ্য ভয় পেয়েছিলেন নিশ্চই।
ভাস্বতী কোনো কথা না বলে হাঁটতে লাগলো।
রঞ্জন বলল পাহাড়ে থাকলে কিন্তু ফিট থাকা যায় আপনাকে দেখলে বোঝা যায়।
—-আপনি সুদর্শন।আমি বরাবরই এরকম রুক্ষ দেখতে।কি প্রথমে আপনারা ভয় পাননি?
-রঞ্জন সাহসী পুরুষ তার কাছে লোকটার এই কথার জবাব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে হল।
সে দৃঢ়তার সাথে বলল না,সেরকম ভাবে আমি ভয় পাইনা।আসলে কোন যুক্তিতে ভয় পাবো বলুন?
ভাস্বতী ওদের কথা শুনছিল না এমন নয়।লোকটার ‘আপনি সুদর্শন ও আমি বরাবরই রুক্ষ’– কথাটি ওর কানে বাজছিল বারবার।
রুক্ষ,কর্কশ চেহারার লোকটা রঞ্জনের সাথে রূপের কোনো তুলনায় আসে না।রঞ্জন সুপুরুষ,সুঠাম।এই লোকটার চেহারায় সেসব কিছুই নেই।উচ্চতায় রঞ্জনের চেয়ে বেশিই হবে।গায়ে তামার রং।রঞ্জনের মত আকর্ষণীয় চেহারা নয়,হাতের বাইসেপ্স ও কব্জি যেন লোহার বর্ম দিয়ে বাঁধানো।উচ্চতায় অনেক বেশি।যেন পাহাড়ের গায়ে পাথর থেকে জন্ম।
আর এই লোকটাই যখন ভাস্বতীর সাথে পশুর মত অমার্জিত সেক্স করছিল।তখন ভাস্বতী উপভোগ করেছে।এখনো সারা শরীরে একটা ব্যাথার ছাপ আছে তার।
প্রথম থেকেই এই বন্য লোকটাকে ভাস্বতী একটা অন্য আসনে বসিয়েছে।ভাস্বতীর মনে হয় লোকটার নাম মুক্তি হলে ভালো হত,আবার কখনো মনে হয় ওর নাম রাজাই ঠিক আছে।
দশ বারো জনের একটা দল নদী পার হয়ে অন্য দিকে চলে গেল।পাহাড়ের ওপর থেকে ওদের পুতুলের মত দেখাচ্ছে।
বাড়ীর সামনে পৌঁছে লোকটা লোহার চিমটেটা হাতে নিল।
রঞ্জন বলল সাপ ধরবেন নাকি?
লোকটা বলল যার যা কাজ।
—-যাবার রাস্তায় সাপ-টাপ পড়বে?
—-সম্ভবত না।আমি তো আপনাদের বলেছি বেশিরভাগ সাপ এই পাহাড়ে আমি ধরে ফেলেছি।কেবল ওই পাইথনটা…
ভাস্বতী লোকটার দিকে তাকালো।
লোকটা বলল আমার কাছে খাঁজকাটা গামবুট আছে।তাতে পাহাড়ে চড়তে অসুবিধাও হয় না,আর সাপেরও ভয় থাকে না।
ভাস্বতী বলল আমি সাপে ভয় পাই না।
রঞ্জনের মনে পড়লো ক্যামেরাটার কথা।ও আনতে গেল।
আবার লোকটা আর ভাস্বতী একা।
লোকটা বলল আমি সাথে যাচ্ছি বলে বিরক্ত হচ্ছেন?
ভাস্বতী বলল মনে হচ্ছে আমরা ওপরের দিকে না গেলেই আপনি খুশি হন।
—-আমি সুবিধে অসুবিধেগুলো বোঝাবার চেষ্টা করেছিলুম।
—-আপনি আমাদের অসুবিধে নিয়ে ভাবেন?
—-কালকে রাতে আমি স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম।শুধু আমার সুবিধা নিয়ে ভেবেছি।
—-তবে আপনি সুবিধাভোগী।
—-আপনি সুন্দরী আর আমি স্বার্থপর—আমি একটা বাজে লোক।
—-ভাস্বতী নিচু হয়ে একটা ঘাসফুল ছিঁড়ে বলল দয়া করে যতক্ষন আছি আপনার স্বার্থপরতার পরিচয় আর দেবেন না।
রঞ্জন ক্যামেরাটা নিয়ে খচখচ কয়েকটা ছবি তোলে।কেবল ভাস্বতী নয়,প্রকৃতির ছবি তুলতেও সে ভালো বসে।লোকটার ছবি তুলতে গেলে সে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এগিয়ে এসে রঞ্জন ভাস্বতীর হাতটা ধরে বলে চলো দৌড়াই,দৌড়াবে?
লোকটা বলে পাহাড়ে ওঠার সময় আস্তে আস্তে ওঠা উচিত।
ভাস্বতী তবু আগে হেঁটে যায়।তার পায়ে লঘু ছন্দ।
মহাভারতের স্বর্গারোহন পর্বে দ্রৌপদীই প্রথম অবসন্ন হয়েছিলেন।আজ এই খুদে স্বর্গে ভাস্বতীই প্রথম আগে পৌঁছাতে চায়।
একটু পেছনে রঞ্জন আর লোকটা।লোকটা নিঃশব্দে সামরিক বাহিনীর মতন হাঁটছে পায়ে পা মিলিয়ে।হাতের লোহার চিমটিটা পাথরে আঘাত করে ঠং ঠং করে এগিয়ে যাচ্ছে।
রঞ্জন কখনো পাহাড়ে ওঠা উপভোগ করে না।কিন্তু আজ তার মন প্রফুল্ল।এই প্রথম সে অচেনা রাস্তা দিয়ে ময়লা জামাকাপড় পরে হাঁটছে।সে যেন অন্য মানুষ।কে না মাঝে মাঝে অন্য মানুষ হতে চায়?
রঞ্জন বলল দেখি আপনার ওই জিনিসটা দেখি তো?
লোকটা সেটা হাতে তুলে দিল।
—-বেশ মজবুত জিনিস তো?
—-স্পেশাল অর্ডার দিয়ে বানানো।
—-এই দিয়ে সব সাপ ধরা যায়?আপনি পাইথনও এই দিয়ে ধরতে পারবেন?
—-এখানকার পাইথন বেশ বড়।সেগুলোকে ধরতে ভীষন বেগ পেতে হয়।তবে পাইথন ভীষন অলস প্রকৃতির।এক বার দেখলেই–দেখছেন না চিমটেটার মুখে স্ক্রু লাগানো আছে।মাথার কাছে চেপে ধরেই ব্যাটাকে কাহিল করে দেব।
রঞ্জন হঠাৎ কোমরে হাত দিয়ে বলল এই রে!
কোমরে বেল্ট নেই।
—-কি হল?
—-বেল্টটা ছেড়ে এসেছি।সঙ্গে অস্ত্রটাও।
—-তার কি দরকার?আমার রাইফেলটাও তো নিচে রয়েছে।
—-যদি খরগোশ-টরগোশ পেতাম স্বীকার করা যেত।
—-আমিও সেটা ভেবে ছিলাম।তবে সঙ্গে দয়ালু মহিলা থাকলে শিকার করা মুশকিল হয়।দেখলেন না আপনার স্ত্রী খরগোশটাকে মারতে দিলেন না।তবে বনের একটা আইন আছে।
—-আপনি কি আইন মেনে…তবে সাপ ধরেন কেন?
—-সাপ ধরবার জন্য আমার লাইসেন্স আছে।হপকিন্স ইনস্টিটিউট আমাকে…
রঞ্জন মনে করার মত থামিয়ে বলল ও হ্যাঁ আপনি তো বলেছিলেন।
—-তবে জানেন তো বনের মানুষ নিজেই আইন তৈরী করে।তাই এ জঙ্গলে আমার নিজস্ব আইন আছে।
—-রঞ্জন হেসে বলে সেটা কীরকম?
—-আপনি কখনো বনমোরগ খেয়েছেন?
—-না।শুনেছি তবে খুব সুস্বাদু।
—-এ জঙ্গলে বনমোরগ প্রচুর আছে।খরগোশকে মুক্তি দিলেও বন মোরগের আমার হাত থেকে নিস্তার নেই।
ভাস্বতী অনেকটা এগিয়ে গেছে।জঙ্গলের মধ্যে কখনো তাকে দেখা যায়,কখনো দেখা যায় না।গাছপালা বৃষ্টি ধোয়া,চিক্কন সবুজ।চতুর্দিকে একটা চকচকে ভাব।এখানে ফলের সমারোহ চোখে পড়ে।কয়েকটা অচেনা জাতের ফল।
রঞ্জন ভাস্বতীকে থামানোর জন্য ডাক দিল এই সতী দাঁড়াও।
ভাস্বতী দাঁড়িয়ে পড়লো।জঙ্গলের মধ্য থেকে একটা ছাগল গোছের কিছু পায়ের ছাপ।
ভাস্বতীর কাছাকাছি ওরা চলে এলে দেখতে পেল ভাস্বতী এক দৃষ্টিতে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে।
লোকটা বলে উঠলো নীলগাই।
রঞ্জন বলল নীলগাইও আছে নাকি?
—-আছে।তবে জানেন জঙ্গল বড় রহস্যময়।আমি দশবছর ধরে আছি কিন্তু অনেক কিছুই দেখিনি–আবার নতুন নতুন করে আবিষ্কার করি।আপনার চারপাশে আপনাকে সব সময় ওরা লক্ষ্য করছে হয়তো,আপনি জানেন না।
ভাস্বতী লোকটার কথা শুনে একবার চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিল।
ভাস্বতী বলল আমরা সেরকম কিছুই দেখে নিতে পারলাম না।
রঞ্জন বলল তুমি একদিনে সবকিছুই দেখে নিতে চাও?
লোকটা বলল আপনি সাপ দেখেননি?
ভাস্বতী কিছু বলতে যাচ্ছিল,পরক্ষনেই গত রাতের কথা মনে পড়লো–গোখরোর খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে নগ্ন লোকটা।উরুর মাঝে উঁচিয়ে বৃহদাকার পুরুষাঙ্গ।
হঠাৎ অপ্রস্তুত ভাস্বতীর বাহু ধরে হ্যাঁচকা টান দিল লোকটা।
আপনি এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন,আর এইটাই চোখে পড়েনি?
রঞ্জন তখন দেখতে পেয়েছে, সে ভাস্বতীকে আড়াল করে বলল–সাপ!
ভাস্বতী বিচলিত হল না।বলল জ্যান্ত? না,মরা মনে হচ্ছে?
ভিজে বালির উপর এঁকে বেঁকে শুয়ে আছে একটা হলুদ রঙের সাপ।
রঞ্জন বলল আপনি এটাকে ধরবেন না?খাঁচা-টাঁচাতো কিছুই আনেননি।
লোকটা হাসিমুখে বলল এবার আপনাদের কায়দাটা দেখাতে হচ্ছে,কখনো তো দর্শক পাই না।
সে চিমটেটা বাগিয়ে নিয়ে এলো।ওদের খানিকটা উত্তেজনা দেবার জন্যই যেন সাপটা ধরা দিল না।লোকটা কাছে যেতেই সে উঠে পালাতে চেষ্টা করলো।যেন সে লোকটাকে চিনতে পেরেছে।
বেড়াল যেমন ইঁদুর নিয়ে খেলা করে,লোকটাও তেমন সাপটাকে নিয়ে খেলতে লাগলো।একবার ক্যাঁক করে চেপে ধরলো তার মুন্ডুটা।তারপর হাতে নিয়ে চেপে ধরলো।
ছেলেমানুষের মত ভয় দেখাবার জন্য লোকটা সাপটাকে নিয়ে এলো ওদের কাছে।স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ায় ওরা সরে দাঁড়ালো।
লোকটা বলল ভয় নেই।এটার বিষ নেই।
ভাস্বতী বলল কি করে বুঝলেন?
—-এইটাই আমার পেশা।
—-বিষ না থাক।এইটা সরিয়ে নিনতো, সাপ দেখতে আমার বিচ্ছিরি লাগে।
রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো এখন এটাকে নিয়ে কি করবেন?
—-এ সাপ আমার কাজে লাগে না।
পাহাড়ের একপাশে ছেড়ে দিতে সাপটা পাথরের ওপর দিয়ে ঝোপের মাঝে চলে গেল।আর তাকে দেখা গেল না।
ভাস্বতী চেঁচিয়ে বলল একি ওটাকে মারলেন না।
—ওটা ঢোঁড়া সাপ।ওর বিষ নেই।আপনি হঠাৎ দয়ামায়া ছেড়ে?
—-কিন্তু সাপতো?
লোকটা একমনে এগিয়ে চলল।এবার ওরা পিছু পিছু লোকটার।
রঞ্জন বলল পাইথন কি সাংঘাতিক প্রাণী?
—-নিশ্চই।অ-অজগর আসছে তেড়ে,ছেলেবেলায় পড়েননি?
লোকটা হাতের চিমটেটাকে নিয়ে দোলাচ্ছে।
ভাস্বতীর লোকটাকে অনুসরণ করছে রঞ্জনের সাথে।
রঞ্জন বলল অধিকাংশ সাপেরই তো বিষ থাকে না।বইতে পড়েছি।
লোকটি একটু বাঁকা ভাবে বলল, ঠিকই বলেছেন।বই পড়েও অনেকটা সত্যি জানা যায় বটে।
অর্থাৎ যে বনে-পাহাড়ে ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে ,সামন্য বইয়ের পাতা থেকে যে কেউ সেটা জেনে যাবে,এটা তার পছন্দ নয়।নিজস্ব পেশা সম্পর্কে অনেকেরই গর্ব থাকে।
আর একটুক্ষণ হাঁটবার পর ভাস্বতী বলল জায়গাটা কিন্তু ভারী সুন্দর।লোকেরা যে এই জায়গাটাকে মনে মনে স্বর্গ বানিয়েছে,তার একটা কারণ আছে।এমন চমৎকার পাহাড় আমি আগে কখনো দেখিনি।কতরকম ফুলের গন্ধ।এখানে না এলো খুব বোকামি করতুম।
রঞ্জন চুপ করে আছে দেখে ভাস্বতী বলল তুমি তো আসতেই চাইছিলে না।এখন তোমার ভালো লাগছে না?
—-সত্যিই ভালো লাগছে।
—-আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছ? একটুও হাঁপিয়ে যাইনি।
সত্যিই পাহাড়টা খুব অন্যরকম–চারপাশটা এত সুন্দর বলে ওপরে ওঠার কষ্ট মনেই আসে না।
রঞ্জন বলল এ জায়গাটায় বিশেষ কেউ আসে না বলেই এত সুন্দর।
লোকটা বলল, মন্দিরটা আর বেশি দূরে নেই।এ জায়গাটা এখানকার স্বর্গের নন্দন কানন বলতে পারেন।
—-নন্দন কাননে কি সাপ আছে?
—-বাইবেলের নন্দন কাননে ছিল।
ভাস্বতী শাড়িটা গাছকোমর করে পরেছে।তার মুখে রোদ্দুরের আভা।তার গৌর শুভ্র শরীর বরবর্ণিনী এই অরণ্যে কি সাবলীল।তার ত্বকের প্রতিটি রন্ধ্র দিয়ে যেন আনন্দ শুষে নিচ্ছে।
হাতে একগোছা ফুল।সে গুলো রঞ্জনের হাতে দিয়ে সে বললো ধরোতো,আমি ঐ পরগাছার সাদা ফুলগুলো পাড়বো।
—-তুমি গাছে উঠবে?
—-কেন উঠতে পারি না ভেবেছ?
—-দাঁড়াও আমি পেড়ে দিচ্ছি।
তার আগেই লোকটি হাতের চিমটেটা নামিয়ে রেখে গাছে উঠতে শুরু করে দিয়েছে।সেখান থেকে সে বলল কত ফুল চাই,সব পেড়ে দেব?
রঞ্জন আবার হাসলো।লোকটির আচমকা উৎসাহের অন্ত নেই।
যুবতী নারী,তার ওপরে সুন্দরী,চিত্তবৈকল্য তো ঘটবেই।রঞ্জনকে সুযোগ না দিয়েই ও গাছে উঠে গেছে।রঞ্জন পদস্থ একজিকিউটিভ অফিসার হতে পারে,তাবলে স্ত্রীর জন্য ফুল পেড়ে দিতে পারবেনা,এমন তো নয়।বিয়ের আগে ভাস্বতীর সাথে যখন তার প্রণয়পর্ব চলছিল,তখন সে ভাস্বতীর জন্য এরকম কত কি করতো।তখন সে ছিল প্রেমিক,এখন সে স্বামী।অনেক তফাৎ।যখন সে প্রেমিক ছিল,তখন ভাস্বতীর কাছাকাছি অন্য কোন পুরুষ দেখলে সহ্য করতে পারত না।
আর অন্য কোনো ছেলে ভাস্বতীর সঙ্গে কথা বললে তার মাথায় আগুন জ্বলে উঠতো।এখন সে স্বামী,এখন উদার প্রশ্রয়ই তাকে মানায়।
লোকটা একগাদা ফুল নিয়ে এলেও ভাস্বতী তৃপ্ত হলো না।আরেকটা গাছের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল ঐ নীল কয়েকটা–
এবার সে রঞ্জনকে কিছু বলেনি।লোকটিকেই সরাসরি অনুরোধ করেছে।
রাস্তাটা একটা বাঁক ঘুরতেই ওরা খাদের পাশে এসে দাঁড়ালো।একপাশে খাড়া পাথর,আর একপাশে খাদ।খাড়া পাথরের গা দিয়ে সরু পথ, তা-ও-অনেকদিন লোক-চলাচল হয়নি বলে পথের ওপর ঝোপ-ঝাড় হয়ে আছে।
রঞ্জন বলল বাবাঃ এ জায়গা দিয়ে যাওয়া যাবে কি করে?
লোকটা বলল এখান দিয়ে যাওয়া শক্ত নয়।দেওয়ালে পিঠ ঘেঁষে আস্তে আস্তে গেলেই হবে।
মন্দিরটার কাছটায় সত্যিই বেশ ভয় আছে।ইচ্ছে করলে এখান থেকেও ফিরে যাওয়া যায়।ঐ তো মন্দিরটা দেখা যাচ্ছে।আর গিয়ে কি হবে।
রঞ্জন ভাস্বতীর দিকে মুখ করে বলল এতদূর এসেছি যখন যাওয়াই যাক।
লোকটা সট করে ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল যাবেন?
—-হ্যাঁ।
—-তাহলে আমার পেছনে পেছনে আসুন।সব সময়ে সামনে তাকাবেন।
এটা যদি গাড়ির রাস্তা হত,তবে স্টিয়ারিং থাকতো রঞ্জনের হাতে।তা-হলে-সে যেকোন বিপজ্জনক দূরত্ব পার হতে পারতো অনায়াস কৃতিত্বে।কিন্তু পায়ে হেঁটে পাহাড়ে ওঠার ব্যাপারে তার কোন দক্ষতাই নেই।বরং খাদের দিকে তাকিয়ে তার একটু ভয় ভয় করছে।এখানে লোকটিকেই তাকে ভরসা করতে হবে।
লোকটা আগে আগে গেল,হাতের চিমটেটা দিয়ে ঝোপঝাড়ের উপর প্রচন্ড জোরে বাড়ি মারতে মারতে।গাছগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে রাস্তা করে দিল ওদের।দেখে যা মনে হয়েছিল রাস্তাটা তার থেকে অনেক চওড়া,অনায়সে পা রাখা যায়।
আর একটা বাঁক ঘুরতেই মন্দিরটা খুব কাছে এসে গেল।লোকটা বলল এইখানটা আসল কঠিন জায়গা।
রঞ্জন অপরের দিকে তাকিয়ে বলল মন্দিরটা দেখতে তো বেশ ইন্টারেস্টিং।বহু পুরোনো হবে মনে হয়।
লোকটা বলল,আদিবাসীদের বিশ্বাস এটা দেবতাদের হাতে তৈরী।
হিন্দু মন্দিরের চূড়া যেরকম হয় এ মন্দির সেরকম নয়।বড় বড় পাথরের টুকরো বসিয়ে একটা ত্রিকোণাকৃতি ঘরের মতন—পাথরগুলোতে বহুকালের শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে আছে।
মন্দিরটার পেছন দিকটা দেখা যায় না।বোধ হয় অনেকখানি জায়গা আছে।
মন্দিরের সামনে চাতালের মত জায়গায় ঢালু হয়ে নেমে গেছে।এক জায়গায় ভীষন ফাঁক।
মন্দিরের চাতালে যেতে হলে গর্তটা পেরোতেই হবে।
রঞ্জন গর্তটার কাছে এসে দেখলো ডান দিকে অনেক নিচু খাদ।বামদিকে পাহাড়ের ঢাল।ভাঙা গর্তটার কাছে বোধ হয় অনেককাল আগে পাথরের সিঁড়ি ছিল,প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে গেছে হয়তো।মন্দিরের পথ এতটাই দুর্গম,অনেকের কাছে অসাধ্য।তাছাড়া মন্দিরের ঢাল এতটাই গড়ানো সোজা হয়ে দাঁড়ানো শক্ত।যেকোনো মুহূর্তে গড়িয়ে পড়বার সম্ভাবনা।আর গড়িয়ে পড়লেই অবধারিত মৃত্যু।
রঞ্জন বলল সতী যাবে নাকি?
—-ভাস্বতী বলল যেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু…
লোকটা বলল একটু যদি ঝুঁকি নিতে রাজি থাকেন তবে যাওয়া যায়।
—-কি ভাবে?
—-আমি আগে পেরিয়ে যাবো।তারপর ওদিক থেকে আপনাদের দুজনকে পার করে নেব।
—-লাফিয়ে?
—-লাফানোটা শক্ত নয়।তবে ওপাশে দাঁড়ানোটা শক্ত।আমি বেশ কয়েকবার গেছি,পারবো।আমি পেরোলেই আপনাদের চিন্তা নেই।
রঞ্জন বলল ঠিক আছে আমি প্রথমে ওদিকে যাচ্ছি।
লোকটা বলল না! আপনার জীবনের দাম আছে।
—-কেন আপনার জীবনের দাম নেই?
লোকটি নিঃশব্দে হেসে ভাস্বতীর দিকে তাকালো,দেখুন আপনার সঙ্গে আপনার স্ত্রী আছে।আমার কেউ নেই।আপনার কিছু হলে উনি কি করবেন?
ভাস্বতী একপলক দৃশ্যটা ভাববার চেষ্টা করলো।রঞ্জন নীচে পড়ে আছে।ভাস্বতী লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ভাস্বতীর গা’টা কেঁপে উঠলো।
রঞ্জন বলল প্রত্যেকেরই জীবনের দাম সমান।
লোকটা বলল একবার এই পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখুন।এ কথা সত্যি নয়।এবং তা হওয়া সম্ভবও নয়।যাক গে,সেসব কথা না বলে বলছি আমার কোনো বিপদ হবে না।অনেকবার মৃত্যুর চান্স এসেছে,মরিনি।
হঠাৎ সকলকে চমকে দিয়ে ভাস্বতী বলল কাউকে যেতে হবে না।
ওরা দুজনেই চমকে উঠলো।ভাস্বতীর মত সাহসিনীর মুখে এরকম কথা মানায় না।
লোকটা বলল আপনি ভয় পাচ্ছেন?
—-না,ভয় নয়।
—-জীবনে এরকম ঝুঁকি মাঝে মাঝে নিতে হয়।
ভাস্বতী বলল না এতো ঝুঁকি নেবার কোনো মানে হয় না।ফিরে চলুন।
লোকটা হঠাৎ করে এক লাফ দিল।চাতালের সংলগ্ন খাড়া দেওয়াল ধরে ঢালু অংশে দাঁড়িয়ে পড়লো অনায়াসে।
বলল আসুন আর আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে না।
রঞ্জন মৃদু গলায় বলল সতী তুমি পারবে?
—-পারবো।
—-ভয় করছেনা তো?তাহলে এখনো ফিরে যাওয়া যায়।
রঞ্জন ভাস্বতীকে কোমর ধরে উচু করে তুলে দিল খাদের কাছে।
ভাস্বতী কোঁচর ভরে ফুলগুলো ভরে নিয়েছে।দু–হাত বাড়িয়ে দিল সামনের দিকে তবু তার হাত পৌঁছচ্ছে না।
—-আর একটু–আর–একটু–
তাকে ধরে আছে তার স্বামী।অন্যদিকে মধ্যরাতের সেই পাশব পরপুরুষের রুক্ষ হাত।তবু তার শরীর মাধ্যাকর্ষণের নিয়মে নীচের দিকে নেমে যেতে চায়।
আস্তে আস্তে পুরুষের হাতের স্পর্শ পেল ভাস্বতী।সেই দুরন্ত হাত—রুখতে গিয়েও যার কাছে আত্মসমর্পন করেছিল ভাস্বতী।সেই ভাস্বতীর নরম হাত দুটো আবার ধরেছে লোকটা।
অন্ধের মত দুই পুরুষের ভরসায় ভাস্বতী পৌঁছে গেল।ভারসাম্য হারিয়ে লোকটাকে জড়িয়ে ধরলো তার শরীর।সেই বন্য গন্ধটা তার নাকে এসে পৌঁছলো।একমুহূর্তের জন্য গতরাতের সঙ্গমের সময় তার বুকের ওপর ওঠা নামা করা পুরুষালি পাথর বুক—চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
রঞ্জন রইলো খাদের ওপারে।লোকটার কাছে এখন তার স্ত্রী।তাকে ভরসা করতে হবে ওই লোকটাকেই।
হঠাৎ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো লোকটা ওরে সর্বনাশ!
ভাস্বতীর শরীরটা দুলে উঠলো।লোকটা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ঝোপ ঝাড়ের মাঝে গুহার মতন জায়গাটায়।ফিসফিস করে বলল সেই পাইথনটা!
ভাস্বতী দেখল মোটা গাছের গুঁড়ির মতন কিছু একটা পড়ে আছে।
রঞ্জন ব্যাকুল ভাবে জিজ্ঞেস করলো কি? কি হয়েছে?
লোকটা মুখ ফিরিয়ে বলল সাপ।পাইথন।তারপর সে লোহার মতন আঙুলে ভাস্বতীকে আঁকড়ে উপর দিকে ছুটলো।মন্দিরের সমতল জায়গায় ভাস্বতীকে দাঁড় করিয়ে,নিজে নীচের দিকে নেমে গেল।গুহা থেকে দাঁড়িয়ে বলল এই ব্যাটা এখানে এসে হাজির হয়েছে!কি বড় মুখের হাঁ!প্রকান্ড মুখখানা এটাযে এতবড় জানতাম না।জেগে আছে–এদিকেই তাকিয়ে—
রঞ্জন উদগ্রীব হয়ে বলল কি করবেন আপনারা? ফিরে আসুন।
—-এখান দিয়ে যাওয়া এখন রিস্কি।ও যদি মুখটা বাড়িয়ে দেয়!
—-আমি তবে আসছি।বলেই রঞ্জন লাফানোর জন্য প্রস্তুত হল।
লোকটা হাত দেখিয়ে বলল না,না, আপনি দাঁড়ান।খালি হাতে এটার সাথে লড়া যাবে না।রাইফেলটাও ফেলে এসেছি।
ভাস্বতী দূরে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পুরুষ দুজনের চোখ বিস্ফরিত।মাঝখানে গভীর খাদ।
—-একটা কাজ করবেন?
রঞ্জন বলল কি?
—-রাইফেলটা নিয়ে আসতে পারবেন।আমরা অপেক্ষা করছি।
রঞ্জন বলল ওটা নিয়ে আসতে কতক্ষন সময় লাগবে?এতক্ষন কি হবে?
—-আমি সামলাচ্ছি।দরকার হলে গাছে উঠতে হবে।
—-রাইফেলটা কোথায় রাখা আছে?
—-দরজার পাশে।প্লিজ তাড়াতড়ি যান।তবে পাহাড়ী রাস্তা আপনি তাড়াহুড়ো করবেন না।
রঞ্জন পিছু নিয়ে চলতে চলতে গাছের আড়াল হতেই লোকটা ভাস্বতীর হাত ধরে বলল ভেতরে আসুন।
—-সাপটা কোথায়?আমি তো দেখতে পেলাম না!
—-এখনো দেখতে পাচ্ছেন না?
—-না তো।
—-চলুন ভেতরে দেখাচ্ছি।
—-আমার তো মনে হল একটা শুকনো গাছ।সত্যি সত্যিই গাছ।
—-আপনি সাপটা দেখতে পাননি?তবে আপনার স্বামীকে সে কথা বললেন না কেন?
—-আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
—-আপনি জানেন না একটা পাইথন সাপ বিপজ্জনক নয়,অন্তত আমার চেয়ে নয়।
—-এর মানে কি?
—-আমি তোমাকে চাই।
ভাস্বতীর ফর্সা মুখে রোদ্দুরও লালচে আভা।চোখে বহু শতাব্দীর ইতিহাস।শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেছে।উদ্ধত স্তনদ্বয় আঁচলের উপর দিয়ে ওঠানামা করছে।
এতকাল পরেও কি সে শুধু ভোগের সামগ্রী?
ভাস্বতী প্রায় একটা মিনিট তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে।এখানে তৃতীয় ব্যক্তি আর কেউ নেই।একটা পুরুষ একটা নারীকে বলছে–আমি তোমাকে চাই।তবু এই চাওয়া-পাওয়ার ইতিহাসগুলো পৃথিবীতে জটিল।
ভাস্বতীর কোমরে হাত রাখলো লোকটা।
—-আপনার যা পাওয়ার তা হয়ে গেছে।আবার কেন?
—-কারন আমি ভালো কিছু পাইনি।একবার যখন পেয়েছি তার স্বাদ আবার…আপনি জানেন আমি লোভী।
—-কিন্তু আপনি আমাকে আর ছোঁবেন না।
লোকটা এবার রেগে বলল আমি কি আপনাদের আসতে বলেছিলাম।বারবার বলে ছিলাম সকালে চলে যেতে।আপনি তারপরেও রয়ে গেলেন।
—-আমি মন্দিরটায় আসতে চেয়েছিলাম।
—-কেন আপনি নিঃসন্তান বলে।আমি আপনাকে দেব সব।
—-আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না।আপনি মিথ্যেবাদী।
—-আমি হতে পারি।কিন্তু এই মন্দির?এত মানুষের বিশ্বাস তো মিথ্যে নয়।এখানে সন্তান লাভের আশায় তারা আসে।
—-আমি এখন কি করবো?
—-চলুন মন্দিরে বিগ্রহের সামনে আপনাকে দেবী করে পূজা করবো।
কার্যত জোর খাটিয়ে ভাস্বতীকে নিয়ে ঢুকলো মন্দিরে লোকটা।
ভাস্বতী বলল আপনি হিন্দু নন?
লোকটা চমকে গেল!
—–আপনি তাও জানতেন তবে আপনি আপনার স্বামীকে বলেননি কেন?
—-আপনার নাম আকবর?
—-হ্যাঁ আমার একটা নাম আছে আকবর।তবে আমি মুসলমান নই।
—-আপনার ধর্ম কি?
—-আমি এই স্বর্গের রাজা।এই দেবতার রক্ষক।
—-আপনি যদি আমাকে এখনই পেতে চান আমাকে সব সত্যি বলতে হবে।
—–কি শুনতে চান।আপনি কি বাকিটুকু জানেন না?
—-না।আমি আর কিছুই জানিনা।আপনার লাইসেন্স থেকে নামটা পেয়েছি।
—-তাহলে শুনে কি লাভ।আমার কোনো ধর্ম নেই।আমি আপনার উপাসক হতে চাই।বলেই লোকটা ভাস্বতীকে জড়িয়ে ধরে।
লোকটার ভারী দীর্ঘ চেহারার বুকে মুখ চেপে ধরে ভাস্বতীর।আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।ভাস্বতীর নাকে আসে সেই আদিম বন্য ঘ্রান।নরম ঠোঁটটা মুখে পুরে নেয় স্বর্গের রাজা আকবর।চুষে নেয় ফুলের পাঁপড়ির মত ওষ্ঠকে।পুতুলের মত আঁকড়ে নিজের বুকে চেপে ধরে।
ভাস্বতীর পাতলা ঠোঁটটিকে মুখে নিয়ে চুষতে থাকে উন্মাদ কামনায়।
লোকটার গায়ের আদিম ঘ্রান ভাস্বতীর শ্বাশ্বত শরীরে মিশে যায়।
ভাস্বতী মুখটা সরিয়ে নিয়ে বলে আকবর! লক্ষীটি আর এরকম কোরো না।
আকবর সম্রাটের মত রাগত স্বরে বলে এই নামে আপনি ডাকবেন না।আমার কোনো জাত নেই।আমার পরিচয় একজন জানোয়ার।
ভাস্বতী মুখ ঘুরিয়ে এনে বলে আমি থেকে গেছি কেন জানেন?
—-আমাকে জানতে চান।
—–আপনি কে?
—-এই প্রশ্ন কেউ করেনা।
—-আমি কি করতে পারি না।
আকবর এবার যেন নিশ্চুপ হয়ে পড়লো।
—-আমি সেদিনই পরিচয় হারিয়েছি যেদিন আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।আমাকে পড়া ছেড়ে দিতে হল।বৌদি যেদিন ভাতে ছাই ঢেলে দিল সেদিন আপনাদের মত সভ্যরা আমায় কোন কাজ দেয়নি।
—-তারপর আপনি বৌদিকে খুন করলেন?
—-হ্যাঁ, আমি খুন করেছি।খুনতো আপনার স্বামীকেও করতে পারতাম–আপনাকে না পেলে।
—-আপনি কি পশু?
—-আমার এটাই আসল নাম।দাদা-বৌদির অত্যাচারে আমার আর কিছু করার ছিল না।
—-আপনাকে মেধাবী মনে হয়েছে।কখনো আমারতো আপনাকে জানোয়ার মনে হয়নি।
—-হা হা হা।আমি মেধাবী।আমার পড়াশোনা ক্লাস এইট।আর আপনি বলছেন মেধাবী!
—-আপনি নিশ্চই তখন স্কুলে ভালো রেজাল্ট করতেন?
—- করতাম।তারপর…তারপর কি হল? আমাকে বউদির অকথ্য অত্যাচার দেখতে হল।কাজের জন্য আপনাদের কলকাতা শহর তন্নতন্ন করে খুঁজলাম।ফুটপাথে লড়াই করলাম।
আকবর থেমে গেল।তার সাথে পাহাড়ের নির্জনতাও যেন একসূরে থমকে গিয়েছে।
—-যেদিন বউদি ভাতে ছাই ঢেলে দিল।আমাকে ভিটে ছাড়া করলো,সেদিন বৌদিকে কুপিয়ে খুন করলাম,ঠান্ডা মাথায়।তারপর পাঁচ বছর জেল।
—-এরপর?
—–মুক্তি।বনের পশুকে মুক্তি দেওয়া হল খাঁচা থেকে।সোশ্যাল ওয়ার্কারদের নজরে পড়লাম।তেমনই একজন অম্লান ভার্মা।আমাকে নিজে হাতে শেখালেন কিভাবে সাপ ধরতে হয়।খুনি উন্মাদ আকবর শেখ হয়ে গেল সাপুড়ে।তিনিও আপনার মত আমার অন্দরের জানোয়ারটাকে ভালোবাসলেন।
—-আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।
—-আপনি এই জানোয়ারটাকে কামনা করেন।
—-আমার কোনো প্রয়োজন নেই।ভাস্বতী দ্বিধাহীন ভাবে অথচ মৃদু গলায় বলল।
—- আপনার সন্তানের প্রয়োজন নেই?
ভাস্বতীর দেখতে পাচ্ছিল একটা ফড়িং।তার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে একটা শিশু—কত বয়স হবে তার? তিন বছর।ভাস্বতী দুরন্ত শিশুর পিছনে দৌড়াচ্ছে—নাছোড়বান্দা শিশুটি ফুলের বাগানে লুকিয়ে পড়েছে।ভাস্বতী হন্যে হয়ে খুঁজছে—কি নাম ধরে ডাকবে ওকে? একি! শিশুটি ঝোপের মধ্যে একটা বিষাক্ত সাপ নিয়ে খেলছে!
আকবর এগিয়ে এসে ভাস্বতীর কোমল বাহু ধরে বলে কি চাই আপনার? মানুষেরা যেমন স্বার্থান্বেষী আপনি আপনার স্বার্থসিদ্ধি করবেন না?
—–আচমকা এমন তন্দ্রা দেখবার মেয়ে ভাস্বতী নয়।বুদ্ধিমত্তা তাকে কখনো এরকম স্বপ্নসন্ধানী করে তোলেনি।কিন্তু আজ কি হল তার?
আকবর ভাস্বতীর শুভ্র গ্রীবাদেশে মুখ নামিয়ে আনলো।পাথরের মত মুখে ভাস্বতীর চিবুক,গাল,গলা ঘষা খাচ্ছে বারবার।ভাস্বতী নিথর হয়ে আছে।সে বাধাও দিচ্ছে না উপভোগও করছে না।
আকবরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই—ভাস্বতীর প্রতি।সে সুযোগ সন্ধানীর মত ভাস্বতীকে পেতে চাইছে।তার তাগড়াই শরীরের বলে ভাস্বতীকে পাঁজাকোলা করে নিল।পশুরাজ যেন তার শিকার নিয়ে চলেছে ক্ষুধানিবৃত করতে।
মন্দিরের চাতালে শুইয়ে দেয় তাকে।ভাস্বতী নিস্তেজ ভাবে শুয়ে থাকে। আকবর গায়ের গেঞ্জিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে।তার পর শায়িত ভাস্বতীর উপর দেহের ভার ছেড়ে দেয়।
পাগলাটে কামনায় ভাস্বতীর গায়ের কালো ব্লাউজটা কাঁধ থেকে টেনে ব্রেসিয়ারের লেসের উপর দিয়ে লেহন করতে থাকে।
এক ঝটকায় আঁচলের তলায় হাত চালিয়ে দেয় আকবর।আঁকড়ে ধরে লোহার দস্তানার মত হাতে ভাস্বতীর নরম বাম স্তনটা।এইবার যেন ভাস্বতী কুঁকড়ে ওঠে।তার শরীর সাড়া দিতে শুরু করে।
আকবর নির্দয় ভাবে দুই হাতে ব্লাউজের উপর দিয়ে স্তন চটকাতে থাকে।যেন সে ছিঁড়ে নিতে চাইছে ভাস্বতীর স্তন।মুখ নামিয়ে স্তন বিভাজিকার ওপরে পড়ে থাকে সরু সোনার চেনের মুখটা মুখে পুরে চেপে ধরে আকবর।
আঁটোসাঁটো হাতে স্তনের পিস্টনে ভাস্বতী অস্পষ্ট ভাবে বলে আকবর!
আকবর বুঝতে পারে এটা ব্যাথার নয়,তৃপ্তির ডাক।
সে আরো উন্মাদ হয়ে ওঠে।কোন নারী এই প্রথম তার ভেতরের জানোয়ারটাকে দেখতে চেয়েছে—কামনা করেছে।
আকবর তাড়াহুড়ো করে ভাস্বতীর নীল শাড়িটা খুলে ছুঁড়ে দেয়।মেঘের পর্দার মত সেটা গিয়ে দূরে পড়ে।
অতিরিক্ত দ্রুততায় ব্লাউজের হুক খুলতে গেলে ছিঁড়ে ফেলে একটা হুঁক।গা থেকে ব্লাউজ খুলে নেবার পর ভাস্বতী এখন কেবল কালো ব্রা পরে আছে।
তার কোমরে কালো সায়া।দিনের আলোয় ফর্সা শরীরের মাধুরী যেন আরো উজ্বল মনে হয়।
একে একে সায়া-ব্রা খুলে নিতে ভাস্বতী এখন সম্পুর্ন নগ্ন।
আকবর দেখতে থাকে ভাস্বতীকে গভীর ভাবে।ভাস্বতীর পুষ্ট স্তনদুটো টলোমলো।স্বল্পকেশি যোনি ধবধবে ফর্সা উরুর মাঝে।
আকবর ঠিক উল্টো।নগ্ন আকবর তামাটে পাথরে খোদাই দীর্ঘ মুর্তি।উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন দৃঢ় পুরুষাঙ্গ উঁচিয়ে রয়েছে।ঘষা খাচ্ছে ফর্সা উরুতে।
আদিম পুরুষের দেহের ঘ্রান ভাস্বতীর উত্তেজনাকে আরো শিখরে তুলে দিচ্ছে।নাকের পাটাতন ফুলে উঠছে তার।আকবর নরম মুক্ত স্তনদুটোকে হাতের দাবনায় বন্দি করে নির্মম ভাবে চটকাতে থাকে।তার সেই দুরন্ত হাত থেকে ভাস্বতীর নিস্তার নেই।
ভাস্বতীর গোপন শিহরিত চোখ খোলা।আকবর পাশবিক এক শয়তানি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
অপ্রস্তুত ভাবেই ভাস্বতী নিজেই এগিয়ে গিয়ে চেপে ধরে আকবরের মোটা কালো ঠোঁট।সঙ্গমের সময় এরকম চুম্বন ভাস্বতী রঞ্জনকে অনেকবার করেছে।
আকবর চুম্বনের নিয়ন্ত্রণ ভাস্বতীর কাছ থেকে নিজে ছিনিয়ে নেয়।
স্বর্গের মেঝেতে নগ্ন নারী পুরুষের দেহ মিশে গেছে।এখানে এখন আর কেউ নেই।সমগ্র পৃথিবী শান্ত।
রঞ্জন আস্তে অনেক দেরী।আর এলেও বা কি? আকবর না গেলে কি করে রঞ্জন পেরবে খাদটা?
ভাস্বতীর ডান স্তনের লালচে বোঁটাটা মুখে পুরে নিল আকবর।ভাস্বতীর শরীরটা কাঁপছে—কেন তার এই পাশব লোকটাকে ভালো লাগে? কেন সে এই লোকটাকে এত সুযোগ দিল? একটা খুনী, উন্মাদ জংলী লোককে কেন সে তার আভিজাত্যপূর্ন শরীর তুলে দিচ্ছে নির্দ্বিধায়।জড়িয়ে নিচ্ছে আকবরকে।আকবরের চোষনে স্তনের বৃন্তটা লালাসিক্ত হয়ে উঠছে।শুধু বৃন্ত নয় আকবর যেন পারলে পুরো স্তনটাই মুখে পুরে নিতে চায়।বৃন্তের চারপাশে তার কোমল স্তনে আকবর চুষে চলেছে।
ভাস্বতী একটা অগোছালো শব্দ করে মাথাটা চেপে ধরে নিজের বুকে। যেন সে নিজেই তার স্তনে আকবরকে আহবান করছে।আকবরের মত লোভী পুরুষ ভাস্বতী অনেক দেখেছে।কিন্তু কখনোই লোভীরা লালসা চরিতার্থ করতে পারেনি।
রঞ্জনকে আড়াল রেখে ভাস্বতী এই লোকের লোভকে তৃপ্ত হতে দিচ্ছে।
আকবর জানেই না এই প্রণয়কালের চরম সময়েও ভাস্বতী একাধিক কথা ভাবছে–সে কেবল ভাস্বতীর ফর্সা উদ্ধত নরম স্তনদুটো নিয়ে ব্যস্ত।
ভাস্বতী এসময় কখনো চোখ বুজে নিতে পারে না।সে তৃপ্তির সময় চোখ খুলে দেখতে পছন্দ করে তার পুরুষটিকে,শরীরের শিহরণের গভীরতা যতই থাক।
কাঁপুনি দিক যতই বুকে—তবু সে আকবরের মাথাটা বুকে চেপে তাকে স্তন খাওয়াচ্ছে।
দেখছে আকবর কেমন তার এই মাংসল বক্ষ নিয়ে উন্মাদ হয়ে পড়েছে।
ভাস্বতীর মত বুদ্ধিমতী সুন্দরী নারী আকবরদের জন্য নয়।তাকে পেতে হলে জোর খাটাতে হয়– ভাস্বতী সেই কল্প ভেঙে দিয়েছে।কিন্তু আকবর যেন বোঝেনি,সে এখনও পশু।
স্তনের বোঁটাগুলোকে চুষতে চুষতে যেভাবে কামড়ে ধরপছে আকবর,তাতে সে তার অমানুষিক কামাকাঙ্খার পরিচয় দিচ্ছে।
ধারালো দাঁতের কামড়ে ভাস্বতীর ব্যাথার চেয়ে সুখ হচ্ছে বেশি।আগের রাতেও এভাবেই কামড়ে ছিল লোকটা।তখনও ভাস্বতীর ভালোই লেগেছিল।
ভাস্বতী তো আকবরকে এরকমই দেখতে চেয়েছে একজন স্বাধীন মুক্তিকামী যোদ্ধা রূপে।যোদ্ধা হোক বা জানোয়ার সে এরকমই পাশবিক হবে।
ভাস্বতীর শরীর রঞ্জনের কাছে কখনো বাড়তি কিছু চায়নি।রঞ্জন সুপুরুষ তার কাছে তার অতৃপ্তি কিছু নেই।কিন্তু এই লোকটি প্রেমিক নয়,বরং—-পশু।এখন ভাস্বতীর একান্ত পশু—যদিও সে পোষ মানে না,স্বাধীন।
আকবরকে ভাস্বতী চেপে রয়েছে বুকের উপর।আকবর ভাস্বতীর বুকে মুখ ঘষে স্তনদুটো কখনো মর্দন করছে।কখনো চুষে,চেঁটে লালায়িত করে তুলছে সমগ্র গৌরবর্ণা পুষ্ট বক্ষদেশ।
ভাস্বতীর পেটে,বাহুতে,উরুতে সর্বত্র লেহন করে অস্থির করে তুলছে।
ভাস্বতীর শরীরের সবজায়গায় আকবরের জিভের সিক্ত লালা।স্তনদুটি চটকে লাল করে দিচ্ছে আকবর।
ভাস্বতী মনে মনে ভাবে তার বনের রাজা আজ যা ইচ্ছে করুক।তাকে মেরে ফেলুক শিকারী প্রাণীর মত।ছিঁড়ে নিক তার স্তন।
বনের পশুরাজের আরাধনায় স্বর্গদ্বারে এভাবেই ভাস্বতী ব্রতী হয়েছে।
আকবর ভাস্বতীর দুটো উরু ফাঁক করে ধরে।মাথাটা নামিয়ে এনে যোনির ঘ্রান নেয়।ভাস্বতীর শরীরের মত যোনিও পরিচ্ছন্ন ঘ্রান আনে আকবরের নাকে।আকবর চুষতে শুরু করে।
সুন্দরী নারীর উন্মুক্ত যোনিদেশের স্বাদ নিতে থাকে আকবর।ভাস্বতী অস্থির হয়ে ওঠে—রঞ্জন কখনো ওরাল করে না।পরিছন্নতায় বিশ্বাসী ভাস্বতী।কিন্তু এক অমোঘ তৃপ্তির কারনে সে রোধ করতে পারছে না।একজন পুরুষ তার পায়ের ফাঁকে মুখ দিচ্ছে দাসের মত।
সারা শরীরে উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে ভাস্বতীর।আকবর একটা আঙ্গুল যোনিতে প্রবেশ করে মৈথুন করতে থাকে।ভাস্বতী উত্তেজনায় ছটকাতে থাকে।আকবর যেন ভাস্বতীকে এরকম দেখে মজা পাচ্ছে।একদিকে আঙ্গুল দিয়ে তীব্র যোনি মৈথুন অন্যদিকে হাত বাড়িয়ে খামচে ধরেছে স্তন।
ভাস্বতীর নগ্ন শরীরটা কাতরাচ্ছে সুখে।লোকটা আরো গতিতে আঙ্গুল সঞ্চালন করছে।
ভাস্বতী চাইছে আকবরকে, তার বুকে উঠে আসুক আকবর।কিন্তু সে বলতে পারে না।
আকবর বোধ হয় বুঝতে পারে।কখনো কখনো আকবরও প্রেমিক হয়ে ওঠে।ভাস্বতীর যোনি থেকে আঙ্গুল বের করে এনে মুখে চুষতে থাকে সে।
তারপর ভাস্বতীর নরম শরীরটাকে জড়িয়ে উদ্ধত লিঙ্গটা ঢোকায়।দ্রুততার সাথে নয় একটু মমতার সাথে।
ভাস্বতী কেঁপে কেঁপে উঠে আকবরকে জড়িয়ে ধরে বলে আকবর!
আকবর কোমর সঞ্চালন করতে থাকে।প্রথমে প্রেমিকের মত ধীরে তারপর জোরে–আরো জোরে।ভাস্বতী পেশীবহুল দীর্ঘ আকবরকে বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে।
মন্দিরের চাতালে সুন্দরী ভাস্বতী আর হিংস্র পশুরাজের সঙ্গম চলতে থাকে আদিম শব্দ তুলে।উরুতে উরুতে ধাক্কা খেয়ে একটা নির্লজ্জ্ব শব্দ ব্যাতীত আর কিছু নেই।দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে-একে অপরকে জড়িয়ে রয়েছে।সামান্য সুতো মাত্র কারোর গায়ে নেই।দূরে ভাস্বতীর অন্তর্বাসটা পড়ে আছে আকবরের গেঞ্জির ওপর-ওদের আর কেউ খেয়াল রাখে না।এইতো আগের রাতেই ভাস্বতী ভিজে ব্রা লোকটার সামনে মেলতে লজ্জা পাচ্ছিল।
সমানতালে মিলনক্রিয়া চলছে।ভাস্বতীর ঠোঁটের দিকে আকবর ঠোঁট নিয়ে যায়।ফিরিয়ে নেয় বারবার।সে চাইছে ভাস্বতী আবার নিজের থেকে চুমু খাক।আবার মুখটা নিয়ে যেতে ভাস্বতী খপ করে ঠোঁট চেপে ধরে।আকবরের মুখে একটা আদিম ঘ্রান আছে।এরকম গন্ধ ভাস্বতী পছন্দ করে না।আজ এই নোংরা গন্ধগুলো তাকে টানছে।
আকবর ঘন চুম্বনে যতটা সম্ভব লালা ভাস্বতীর মুখে চালান করছে।আবার ভাস্বতীর মিষ্টি মুখের স্বাদে মিলেমিশে টেনে নিচ্ছে।
দানবিক সঙ্গমগতি আর গভীর চুম্বনে নরনারীর মিলন খেলা দেখবার জন্য এখানে অতিথি একজনই—মন্দিরের দেবতা।
কামের তাড়নায় কোমরে কোমরে ধাক্কার শব্দ ভাস্বতীর কানে ঠেকছে।ভাস্বতী তার বন্য প্রেমিককেপ আরো ঘনিষ্ট করে জড়িয়ে ধরে।
আকবর ঝড় তুলতে থাকে ভাস্বতীর শরীরে।ভাস্বতী এখন সম্পুর্ন আকবরের নিয়ন্ত্রণে।আকবর সঙ্গমরত অবস্থায় ভাস্বতীকে কোলের উপর নিয়ে উঠে বসে।
তলা থেকে ধাক্কা দিতে থাকে।বৃহদাকার দন্ডটা ঢুকছে-বেরুচ্ছে।ভাস্বতী আকবরের গলা জড়িয়ে ধরে ওঠবস হচ্ছে।মাঝে মাঝে তারা চুমু খাচ্ছে।আকবর তার জিভটা বেরকরে আনে মুখ থেকে।ভাস্বতী এমনি সময় হলে এরকম ঘৃণিত চুম্বন করতে পারত না।কিন্তু এখন তার শরীরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।সে আকবরের জিভটা মুখে পুরে নেয়।
তলায় যোনি গহ্বরে আকবর আরো জোরে ধাক্কা মারতে থাকে।
আকবর এবার মুখ নামিয়ে আনে।একটা স্তন মুখে পুরে নেয়।বোঁটাটা দাঁতে চেপে ধরে কখনো কখনো।
ভাস্বতী বুকে চেপে ধরে সুখ ভোগ করতে থাকে।অবৈধ সুখের স্বাদ বৈধতার চেয়ে অতি তীব্র।
আকবর পাগলের মত ভাস্বতীকে কোলে নিয়ে মৈথুন তালে নাচাতে থাকে।ভাস্বতী যতটা সম্ভব মজবুত করে জড়িয়ে রাখে আকবরকে।
মোটা পুরুষ লিঙ্গটা অনবরত খোদাই করছে–ভাস্বতীর যোনি।
আকবরের গায়ে পশুর মত জোর।সে তার সম্পুর্ন জোর দিয়ে ভাস্বতীকে ফুঁড়ে ফেলতে চাইছে।পুরুষের আদিমতার স্বাদ কতখানি আরমপ্রদ হতে পারে তা ভাস্বতী টের পাচ্ছে।
সে আদর করে জড়িয়ে আছে আকবরকে।আকবর তাকে খেয়ে ফেলতে চায়।তবু তার মনে হচ্ছে খাক—এতকাল পরেও নারী শুধুই ভোগের সামগ্রী।আজ ভাস্বতী স্বর্গের রাজার পুজার ভোগ হতে চেয়েছে।
দুজনেই ভুলে গেছে রঞ্জনকে।সময় দীর্ঘায়িত হয়ে চলছে।সম্ভোগক্রিয়া চলমান।কামনার আগুন যে একবার জ্বলেছে;দুজনার–সুন্দরী এবং তার পাশব প্রেমিকের থামবার কোনো লক্ষণ নেই।
ভাস্বতীর মত নারীকে আকবর পেয়েছে,সে অত সহজে ছাড়বে না।তার সব কামনা তৃপ্ত করে তুলতে চায়।
আকবর লিঙ্গে গাঁথা ভাস্বতীকে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে পড়ে।ভাস্বতী আকবরের কোলে পুতুলের মত সুউচ্চে আরোহন করেছে।আদিম শক্তি আকবরের।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাস্বতীকে কোলে নিয়ে মৈথুন করছে অবলীলায়।অশ্বলিঙ্গের মত পুরষাঙ্গ ভাস্বতীর ফুলের মত যোনিতে চালনা করছে পাশবিক গতিতে।
ভাস্বতী তার শরীরের সম্পুর্ন দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে আকবরের উপর।নিজের থেকেই আকবরের ঠোঁটে প্রগাঢ় চুমু এঁকে দিচ্ছে।অজান্তে সেও হয়ে উঠেছে বন্য হরিণীর মত।
ভাস্বতীকে আঁকড়ে ধরা আকবরের হাতের প্রসারিত বাহু ফুলে উঠছে।তামাটে বুকের পাটা ফুলে উঠছে তার।
ভাস্বতীর মত কোমল ফর্সা নারীদের চিরকাল বেমানান মনে হয়েছে এরকম পুরুষদের সাথে।অথচ এই পুরুষের কবলে ভাস্বতী তৃপ্ত হচ্ছে তীব্রভাবে।
নারীকে চরম সুখ পেতে পুরুষের যৌনদাসী হতে হয়–ভাস্বতীর মত অসামান্যা সুন্দরীর উপলব্ধি হচ্ছে প্রতিটা সঙ্গমের তালে।
আকবর কোল থেকে ভাস্বতীকে নামিয়ে দ্রুততার সাথে পেছন ঘুরে দাঁড় করায়।যেন সে এই অল্প সময়ে সব শৃঙ্গার উপভোগ করতে চায়।ভাস্বতী আকবরের খেলবার পুতুল।
নরম নিতম্ব দেশ উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্বতী।কোমল মোলায়েম নির্দাগ ফর্সা পিঠে চুমু দেয় আকবর।তারপর হঠাৎই পাছার মাংস খামচে ধরে-কি এক মর্ষকামে আলতো করে চড় মারে।
ভাস্বতী আকবরের কাছে মরতে চেয়েছে–যদি পারে আকবর তাকে ধর্ষণ করুক।এমন আদিম আকাঙ্খা কখনো তো তার মনে ছিলনা?
আকবর পেছন থেকে মৈথুন করে।বগলের তলা দিয়ে স্তন দুটো খামচে ধরে।মন্দিরের পাথরের দেওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্বতী।আকবরের প্রতিটা ধাক্কায় তার হাত সোরে সোরে যাচ্ছে দেওয়াল থেকে।
বেশি সময় নেয়নি আকবর,একটা সজোরে ধাক্কা দিয়ে ভাস্বতীকে দেওয়ালের সাথে সেঁটিয়ে দেয়।স্বর্গের রাজার ক্ষরণ ঘটছে পাহাড়ী প্রবাহীনির মত।
এভাবেই ভাস্বতীকে দেওয়াল ঠেকে চেপে রেখেছে আকবর।দুজনেই শ্বাস নিচ্ছে ঝড়ের মত।
একটা গলার স্বর পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়।আকবর পোশাক গুলো একে একে পরে নেয়।মন্দির থেকে সোজা বের হয়ে যায়।
ভাস্বতী আঃ করে উঠলো।অনেক কিছু বদলে গেল তার জীবনে।ভাস্বতীর সমস্ত শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম।এ ঘাম অবশ্য তার একার নয়–আকবর আর তার বাসনার ঘাম।এই মুহূর্তে তার শরীরে একটা প্রচন্ড তৃপ্তি।ব্রেসিয়ারটা পরতে গিয়ে দেখলো নরম ফর্সা স্তনদুটো লালচে হয়ে পড়েছে।একে একে ব্লাউজ,শাড়ি পরে নিল।তার দুই উরু দিয়ে আকবরের উষ্ণ বীর্যস্রোত গড়িয়ে পড়ছে।
নিচে উঁকি দিয়ে বুঝলো আকবর অনেকটা নিচে নেমে গেছে।রঞ্জনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাকে।এই সময়টুকু প্রথম তার মিথ্যেবাদী স্ত্রী হিসেবে অপেক্ষা।
রঞ্জনকে সে কি বলবে? কত কত মিথ্যে বলবে? কিছু না বললেও তা মিথ্যেবাদীতা,আর বললেও তা মিথ্যেবাদীতা।
মন্দিরের দেবতার দিকে তাকালো সে।এতক্ষন সে এই স্বর্গের দেবতাকে একবারও দেখেনি।আর দেখবেই বা কি করে আকবরকে সে যে আসনে বসিয়েছে তা আর দেবতার চেয়ে কম কিসের।
অনেক দূরে রঞ্জন রাইফেল হাতে নিয়ে ছুটতে ছুটতে আসছিল।খাদের ধারে এসে সে হাঁফাতে লাগলো।তার মুখে তীব্র ক্লান্তি-প্রশান্তির ক্লান্তি।আকাশের দিকে তাকালো সে।বিরাট নীলাকাশ।নীল শাড়ির মত, হয়তো ভাস্বতীর শাড়ির মত উড়ছে।
আকবর বলল আসুন,লাফ দিতে পারবেন তো?
—-পারবো।দাঁড়ান যাচ্ছি।
বলেই রাইফেলটা আকবরের দিকে ছুঁড়ে দিল।
এ এক চরম মুহূর্ত।ভাস্বতী দূর থেকে দেখছে,আকবরের হাতে এখন রাইফেল।রঞ্জন লাফ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।আকবর যদি এখনI রঞ্জনকে!
আকবরতো খুন করতেই পারে।ও তো খুন করেওছে।আকবর এখন তাকে পেয়েছে,রঞ্জনকে সে কাঁটা হিসেবে রাখতে নাও পারে।ভাস্বতীর মনে শঙ্কা হচ্ছিল। আকবরকে সে বিশ্বাস করে না।
রঞ্জন লাফ দিতেই আকবর রঞ্জনের কাঁধটা ধরে ফেলল।
নাঃ আকবর গুলি করেনি।
রঞ্জন পৌঁছেই বলল কোথায় সাপটা?
—-দেরী করে ফেলেছেন।সাপটা পালিয়েছে।
রঞ্জন হতাশ হয়ে বলল বলেছিলাম না এতক্ষন সাপটা থাকবে না।
—-আকবর কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল একবার যখন পেয়েছি আবার ধরা দিবে।চলুন মন্দিরটা দেখে আসি।
রঞ্জন বলল সতী চলো যাই।
ভাস্বতী বলল তোমরা যাও আমি আর যাবো না।
রঞ্জন অবাক হল।ভাস্বতী নিজেই আগ্রহী ছিল মন্দিরটার ব্যাপারে।
আকবর বললো উনি এতক্ষনতো মন্দিরেই ছিলেন।তাই বোধ হয়—
রঞ্জনের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।কিন্তু এত কষ্ট করে যখন এসেছে দেখাই ভালো।
মন্দিরটায় বিশেষ কিছু নতুনত্ব ছিল না।আর পাঁচটা পুরোনো মন্দিরের মতোই।ব্যতিক্রম কেবল মন্দিরের গঠন।ত্রিভুজাকৃতি–অনেকটা পিরামিডের মত।
তারপর ওরা হাঁটতে শুরু করলো।ভাস্বতী দুঃসাহসী।কিন্তু এখন যেন সে কেমন অন্যমনস্ক- যদি না নজর পড়তো একটা ময়ূরের দিকে।পাহাড়ের চূড়োর দিকে গাছ গুলোর ফাঁকে একটা নয় দুটো ময়ূর।
ভাস্বতী ময়ূর দেখে ওই দিকে যেতে চাইলেই আকবর বলল সাবধান! ওরা আপনাকে দেখতে পেলে পালাতে পারে।তাছাড়া ওরা ক্ষুব্ধ হলে তেড়ে আসতেও পারে।ময়ূর আছে মানে ময়ূরীও আছে।
ভাস্বতী জানে ময়ূরী ময়ূরের মত সুন্দর হয়না।কেবল মানুষের চেয়ে মানুষীই সুন্দর হয়।
আস্তে আস্তে আকবর এগিয়ে গেল।ভাস্বতীর হাতটা ধরে বলল আসুন।গাছের আড়াল থেকে ময়ূর দুটোকে দেখা যাচ্ছে।
ভাস্বতী তাকিয়ে আছে রঞ্জনের সামনে আকবর অবলীলায় তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রঞ্জন বলল ওই তো ময়ূরী,পেখমবিহীন।
ভাস্বতী আকবরের হাত থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।দূরে একটা ময়ূরী,অনেকটা দূরে।
ফেরবার পথে ওদের আবার খাদটা ডিঙাতে হবে।আকবর লাফ দেবার জন্য প্রস্তুত হতেই রঞ্জন বলে আমি আগে পের হই।
—-না,আমি আগে পের হচ্ছি।আপনি পারবেন না।
—-কেন।এ আর অমন কি?আগেই তো পেরলাম।
—-তবুও আপনাদের আগে আমার পেরোনো উচিত।যদি আমি খাদে পড়ে যাই,আপনারা সাবধান হয়ে যাবেন।
রঞ্জন হেসে বলল তা হয় না।বলেই লাফ দিয়ে পের হয়ে যায়।
ভাস্বতীও লাফ দিয়ে রঞ্জনের হাত ধরে ফেলে।এখন আকবর একা খাদের ওপারে।
রাইফেলটা রঞ্জনের হাতে ছুঁড়ে দিয়ে শান্ত অন্যমনস্কভাবে নীচের দিকে চোখ করে এপাশ ওপাশ কি যেন খুঁজতে থাকে।একটা সিগারেট ধরায়।
রঞ্জন বলে কি হল রয়ে গেলেন যে?
—-রঞ্জন বাবু একটু রাইফেলটা দেবেন তো।
—-রঞ্জন রাইফেলটা ছুঁড়ে দেয়।
ভাস্বতী ও রঞ্জন দেখতে থাকে আকবর কি করতে চলেছে।
আকবরের রাইফেল থেকে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে একটা গুলির শব্দ ওঠে।ভাস্বতী কখনো গুলির শব্দ শোনেনি রঞ্জনের বাহুটা শক্ত করে ধরে।দুজনেই চমকে ওঠে।জঙ্গলের নির্জনতায় গুলির শব্দ একটু বেশিই জোরে শোনায়।
বাংলায় এমন লেখা পাওয়া মুশকিল এই সাইটে। দুর্দান্ত, তবে যেন কিছু থেকে গেল। অপেক্ষায় থাকলাম।
 
Top