• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Adultery দহন

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
রঞ্জন অফিস থেকে ফিরে দেখল সুছন্দা এখনো ফেরেনি।ছেলের এখন স্কুল ছুটি পড়েছে সবে।আইপিএলের স্কোর বোর্ডে নাইট রাইডার্স তখন ১৪৮/৩।একবার স্কোর বোর্ডে চোখ বুলিয়ে নিয়ে রঞ্জন বলল---কি রে তোর মা আসেনি?
---না, ফোন করেছিল দেরী হবে।
রঞ্জনের আজকাল সুছন্দার এই অফিস থেকে ফিরতে দেরী হওয়াটা পছন্দ হয় না।এ নিয়ে খটমট লেগেই থাকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রঞ্জন বসে পড়ল অর্কের পাশে।ঘড়িতে তখন সাতটা।
সুছন্দা ঢুকল ঠিক সাতটা দশে।ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে, ঘড়িটা খুলে রেখে ঢুকে গেল বাথরুমে।শাওয়ার ছাড়ার শব্দ হল।
স্নান করে বেরলো একটা নাইটি পরে।রঞ্জন বলল---আজকাল তোমার বেশ দেরী হচ্ছে?
সুছন্দা চুলটা আয়নার সামনে চিরুনি দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে বলল---হবে না, এমনিতেই এখন মাসের পিক টাইম।এটা তোমার ব্যাঙ্ক নয়, পোস্টাপিস, এখানে কতরকমের লোক আসে জানো?
---তা বলে সাড়ে সাতটা?
---সাড়ে সাতটা তো এই বাজল।
রঞ্জন আর কিছু বলল না।অর্ক চিৎকার করে উঠল---সিক্স!
রঞ্জন দেখলো তরবারির মত ব্যাট ঘোরাচ্ছে আন্দ্রে রাসেল।
কিচেনে চলে গেল সুছন্দা।

চায়ে চুমুক দিতে দিতে সুছন্দা রঞ্জনের গা ঘেঁষে বসল।
রঞ্জন বলল---কাল থেকে ছুটি।
---ছুটি মানে?
---ছুটি নিলাম।
---এখন ছুটি নিলে?
---কি করব ছুটি গুলো নষ্ট হচ্ছে।আর ক'দিন পরই তো ট্রান্সফার।
সুছন্দা রঞ্জনের গা থেকে ঠেস ছেড়ে বলল---আরে জমিয়ে রাখলে তো ভালো হত।এবার বেড়াতে যাবার সময়...
রঞ্জন বলল---ওই তো কদিন আগে আলিপুর দুয়ার বেরিয়ে এলাম।

অর্ক টিপ্পনি কেটে বলল---কদিন না বাপি পুরো ছ মাস !

রঞ্জনকে ছেলের কাছে জব্দ হতে দেখে সুছন্দা হেসে বলল---বুড়ো হয়ে যাচ্ছো বুঝলে রঞ্জন মৈত্র?
রঞ্জন সত্যি এত দিন-মাসের হিসেব মনে রাখতে পারে না।আলিপুদুয়ার থেকে ফেরার পর গত ছ'মাস তারও অফিসের চাপ কম যায়নি।
রঞ্জন বলল---কাল তুমিও ছুটি নাও।একটা দিন হলেও কোথা থেকে ঘুরে আসা যাবে।
সুছন্দা চুলটা ক্লিপে আটকে নিয়ে বলল---আমার অত সহজে ছুটি মেলে না গো, এটা যদি তোমার মত চাকরী হত...
---আঃ সুছন্দা, তুমি ট্রান্সফার নিচ্ছ না কেন?
সুছন্দা চা শেষ করে উঠতে উঠতে বলল---ট্রান্সফারটি নিলেই তো হচ্ছে না।কলকাতার যেখানেই ট্রান্সফার নাও ঝামেলা একই থাকবে।
---রুরালে নাও।
---তারপর তোমাদের ছেড়ে...এমনিতে একটা দিন ছেড়ে তোমাদের যাবার জো নেই, বাপ-ব্যাটাতে ঘরের অবস্থা যা করো।
রঞ্জন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল---সে টি আর হচ্ছে না।মনে হয় ট্রান্সফারটি এবার স্টেটের বাইরে দেবে।
সুছন্দা বলে উঠল---ওমা! তা হলে তো বিরাট সমস্যা! ওপর মহলকে জানিয়ে দেখো না...
---হবে না।অম্লান বক্সীর ট্রান্সফার হল মহারাষ্ট্র।রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের চাকরী এক বছরের জন্য হলেও স্টেটের বাইরে যেতে হবে।তোমার পোস্ট অফিসের চাকরী না যে যাই হোক না কেন স্টেটেই দেবে।
---সে সকলেই মনে করে অন্যের চাকরীতে যত সুবিধা মেলে।এদিকে তোমার যে যখন তখন ছুটি পাচ্ছো, আমার বেলায় তা নেই।সারাক্ষণ লোকের ভিড় সামলাতে হয় নানাবিধ কাজ নিয়ে আসে লোকে।

রঞ্জন এবার ছেলের দিকে চোখ টিপে বলল---বেশ! তুমি অফিস করো।আমরা বাপ-ছেলেটে ক'টা দিন ঘুরে আসি।
অর্ক চেঁচিয়ে বলল---চল তাহলে বাবা, আলিপুরদুয়ার!
সুছন্দা রান্না ঘরে আনাজ কুচোতে কুচোতে বলল---আবার আলিপুরদুয়ার!

রঞ্জন হেসে বলল---তোমার ইচ্ছে না হলে যেও না।
সুছন্দা বলল---পুজোর সময় ছুটি নেব।তখন আবার আলিপুরদুয়ার যাওয়া যাবে।

রাসেল আউট! স্কোর দাঁড়ালো ১৯ ওভারে ২০২/৫, লাস্ট ওভারে কত রান হয় দেখবার জন্য রঞ্জন আর অর্ক টিভিতে মনোযোগ দিল।
(চলবে)
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
বাড়ীতে থাকলে রঞ্জনের এই অভ্যাস, পড়ে পড়ে ঘুমানো।সকাল বেলা অর্ক চলে গেল আঁকার স্কুলে।অর্ক আঁকে ভালো।শিশু বয়স থেকেই বিভিন্ন অঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে। সুছন্দা বলেছিল একজন ভালো আঁকা শিক্ষকের কাছে দেবে।অর্ক চলে যেতে, রঞ্জন দেখল ঘড়িতে ন'টা দশ।সুছন্দা অফিস যাবার জন্য রেডি হচ্ছে।
---এই যে ঘুম ভাঙ্গলো? নাও চা।
রঞ্জন চায়ে চুমুক দিয়ে সুছন্দার দিকে তাকালো।গোলাপি শাড়ি আর সাদা ব্লাউজ পরেছে।কপালে লাল টিপ, গলায় সোনার চেন, হাতে লাল পোলা আর চুড়ি, কানে দুটো ছোট টাব।এই সামান্য সাজেও সুছন্দাকে কম দেখায় না।হাতে ঘড়িটা বাঁধছিল সে।
রঞ্জন বলল--ডার্লিং অফিস যেও না আজকে প্লিজ।
সুছন্দা কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে বলল---ছুটি নিয়ে কি লাভ হল ওই তো ঘুমাচ্ছ পড়ে পড়ে!
রঞ্জন চায়ের কাপটা রেখে সুছন্দাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে গেলে, সুছন্দা বলল--এই! এই! ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করোনি!
রঞ্জন বলল---একটা চুমু খাবো প্লিজ...
----তোমার দেখছি বয়স কমছে রঞ্জন?
---আঃ বয়সের কি আছে? এইতো বিয়াল্লিশ!
---হুম্ম বিয়াল্লিশটা কম নয়, ছেলে বড় হচ্ছে!
অর্ক এখন ক্লাস নাইন।ইতিমধ্যে মায়ের থেকে লম্বা হয়েছে।
রঞ্জন বলল---আজ কিন্তু দেরী কোরো না।
সুছন্দা চলে গেলে রঞ্জন ব্রাশ করে এসে দেখল সকালে উঠেই রান্না-বান্না সব করে রেখে গেছে সুছন্দা।জলখাবার খেয়ে একটা পুরোনো বই খুঁজছিল পড়বার জন্য।রঞ্জনের বিশেষ বইটই পড়ার নেশা নেই।এসব সুছন্দারই সংগ্রহ।প্রতি বছর বইমেলায় গাদা গাদা বই কেনে।রঞ্জন দেখল বুক সেলফের ফাঁকে একটা ছোট ডায়েরি রাখা।রঞ্জন ওটা টেনে বের করে দেখল সুছন্দা কাজের মেয়ের পাওনা থেকে দুধওয়ালা, কাগজওয়ালা এসবের হিসেব লিখে রেখেছে।সেলফ থেকে একটা বই টেনে নিল রঞ্জন।বইটা অনেক দিন সেলফে পড়ে থাকলেও চোখে পড়েনি কখনো রঞ্জনের।একটি কবিতার বই, ইংরেজি কবিতা।রঞ্জন এমনিতেই তেমন গল্প উপন্যাসের বই'ই পড়ে না, তার ওপর কবিতার বই! বইটা রাখতে গিয়ে পেছনের পাতায় চোখ আটকে গেল রঞ্জনের।একটা কবিতার পংক্তি লেখা!
'তোমার হৃদয় জুড়ে আছে যে পাখি
সেই পাখিটা আমি দেওয়ালে আঁকি'
-----সুখেন।

চমকে উঠল রঞ্জন!---সুখেন!

নামটা মনে আসতেই রঞ্জনের মনে পড়ল ছ মাস আগে তাদের আলিপুরদুয়ার বেড়াতে যাবার কথা--------

রঞ্জন বড় হয়েছে আলিপুরদুয়ারে আর সুছন্দা বড় হয়েছে জলপাইগুড়িতে।সুছন্দার দাদুর বাড়ী আলিপুর দুয়ার।আলিপুরদুয়ারেই রঞ্জন আর সুছন্দার দেখা, প্রেম।সুছন্দার কোনো মামা বা মাসি নেই, ঠিক তার নিজেরও যেমন কোনো ভাইবোন নেই।দাদু দিদা গত হবার পর সুছন্দা আর যায়নি ওখানে।সুছন্দার মা মাঝে মধ্যে যেতেন।গতবছর তিনিও চলে গেলেন।
রঞ্জনের এখন আর ওখানে কেউ নেই।রঞ্জনের একমাত্র পিসি ছিলেন।তিনিও গত।সুছন্দা কিংবা রঞ্জন দুজনেই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় এখন আর তাদের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই।

---আলিপুর দুয়ার---

কলকাতা শহরে মানুষ হওয়া অর্কের কাছে আলিপুরদুয়ার বেশ নতুন।রঞ্জনের বাড়ীটা রঞ্জনের বাবা বানিয়েছিলেন।রঞ্জনের বাবা ফরেস্টে চাকরী করতেন।বিমল মৈত্র নামটি ফরেস্ট এরিয়ার ট্রাইবাল থেকে শুরু করে রেঞ্জারদের ও স্থানীয়দের কাছে বেশ শ্রদ্ধার।বড় সাহেব নামে তিনি পরিচিত ছিলেন।আর সুছন্দার দাদু ফনিবাবু কিন্তু এখানকার লোক ছিলেন না।তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার লোক।অধ্যাপনা করতেন।একমাত্র মেয়ের বিয়ে জলপাইগুড়িতে হতে তিনিও চলে আসেন আলিপুরদুয়ার।আসলে জপাইগুড়ি না গিয়ে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার তার কারণ হল তিনি খুব প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন।রঞ্জনের বাবার সঙ্গে সুছন্দার দাদুর খুব সখ্যতা ছিল।


রঞ্জন অনেক দিন পর তার পৈত্রিক বাড়ীতে এসে খুশি।এ বাড়ীর দেখাশোনা করেন বটুকলাল সর্দার।জাতিতে নমশূদ্র।সে কারনে রঞ্জন ছোটবেলা থেকেই দেখেছে বটুকাকা সব সময় নিজেকে অস্পৃশ্য মনে করতেন।কিন্তু রঞ্জনের বাবা-মা কখনো বটুকলালকে দূরের মনে করেননি।লম্বা কুঁজো করে লোকটা বহুদিনের পুরোনো ভৃত্য।ঘরদোর খুলে পরিষ্কার করে দিলেন।সুছন্দা আগেই নিজের মত করে গুছিয়ে নিল।
সামনের ঢালুর ওপারে মোরাম রাস্তাটা পিচ হয়ে গেছে।অর্ক দূরের পাহাড়টা দেখে বলল---বাপি ওইখানে যাওয়া যায় না?
রঞ্জনের মনে পড়ল জঙ্গলের রাস্তা ধরে কতবার ওই পাহাড়ে গেছে ও।বলল--দাঁড়া বিকেলে নিয়ে যাবো তোকে।আগে এখানে বাঘ দেখা যেত।ওই পাহাড়ের কাছেই একটা বাঘের বাচ্চা ধরা পড়েছিল।তোর দাদু ওটাকে তুলে নিয়েসে সেবা শুশ্রূষা করে আবার ছেড়ে দিয়েছিল জঙ্গলে।

কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে রঞ্জনের।পুরো শৈশব তার এখানে কেটেছে।এখান থেকে ছ' মাইল দূরে একটা টোটো পাড়া আছে।সেখানেই ফরেস্টের অফিস।রঞ্জনের পিতৃদেব সেখানেই চাকরী করতেন।এই এলাকায় কোনো স্কুল নেই।এই এলাকা মূলত জলদাপাড়া বনভূমির অংশ।রঞ্জন পড়ত মাদারিহাটের স্কুলে।ফরেস্টের গাড়ী করে স্কুল যেত।
কাছে পিঠেই খয়েরবাড়ি, যেখানে পাহাড়ী তোর্সা নদী রয়েছে।সুছন্দাকে নিয়ে রঞ্জন ওখানে বেশ কয়েকবার গেছে।তখন তাদের বিয়ে হয়নি।

সুছন্দা বাইরে বেরিয়ে এলো।ঘেমে নেয়ে একাকার সে।কোমরে আঁচলটা বেঁধে এতক্ষণ ঝাড়পোছ করছিল সে।বলল---শুনছ? একটা গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে, নাহলে খাবে কি?
বুড়ো বুটুকলাল বলল---বৌমনি, আমি মাদারিহাট যাবো এক্ষন, লিয়ে আসব।

রঞ্জন বলল--বটু কাকা আপনি একা পারবেন না, আমি যাই।
অর্ক বলল--আমিও যাবো।

মাদারিহাটও অনেকখানি বদলে গেছে।রঞ্জন বলল---এই দেখ অর্ক এই স্কুলে আমি পড়তাম।
বটুকলাল হেসে বলল---আর ছোটবাবু তখন কি দুস্টুমি করতেন! ইস্কুল যাবেনি বলে।
---হ্যা মনে আছে বটুকাকা, আপনি আমাকে নলবাড়ী রাজার দুর্গে ঘুরতে নিয়ে যেতেন।
---সেটা কোথায় বাপি?
---চিলাপাতার জঙ্গলে।ওখানেই তোমার মায়ের দাদুর বাড়ী।
---ওখানে এখন কে আছে মায়ের?
বটুকলাল বলল---বৌমনির দাদু নামজাদা লোক ছিলেন গো...সে বাড়ী এখনো আছে।সাপ খোপ বাসা বেঁধেছে।
---আমি যাবো তাহলে দেখতে! অর্ক বলল।
--যাবি যাবি দাঁড়া।এখন ক'টা দিন রেস্ট নে।

দুপুরে সুছন্দা রান্নায় লেগে পড়ল।রঞ্জন জঙ্গলটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল অর্ককে।অর্ক কলকাতায় জন্ম।কলকাতায় বড় হয়েছে।কংক্রিটের ভিড় আর গাড়ীর আওয়াজই দেখেছে।ঘন সবুজ জঙ্গল, পাহাড় আর পাখির ডাক দেখে সে মোহিত হয়ে পড়ছে।
(চলবে)
 
  • Like
Reactions: Ex-fire

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
রাত গভীর হলে জঙ্গল যেন থমকে যায় এখানে।হাতির ডাক শুনতে পাওয়া যায় মাঝে মাঝে, কখনো শেয়াল ডেকে ওঠে।ঝিঁঝিঁর ডাক একনাগাড়ে শোনা যাচ্ছে।সুছন্দা বলল---বিয়ের পর ভেবেছিলাম আমরা এখানেই থেকে যাবো বলো।
রঞ্জন সুছন্দার দিকে ঘুরে শুয়ে বলল---তখন কি ভেবেছিলাম কলকাতায় চাকরী করব।আমি সবসময় চাইতাম বাবার মত ফরেস্টের চাকরী করতে।
সুছন্দা হেসে বলল---তাহলে ভালোই হত এখানেই আমরা থেকে যেতাম।
রঞ্জন বলল---আজ বটু কাকা বলল তোমার দাদুর বাড়ী নাকি আগের মতই আছে।ওখানে নাকি এখন সাপ-খোপের বাস!
---সত্যি? যাবে একদিন?
---কালই চলো।অর্কও বলছিল, চিলাপাতার জঙ্গলটা ঘুরে আসা যাবে।


পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ল ওরা।সকালের জঙ্গল আরো অপরূপ।চিলাপাতার জঙ্গলের মেঠো রাস্তাটা ধরে ওরা পাহাড়ের ঢালে উঠল।
একতলা দু কামরার বাড়িটা এখনো আছে।বাড়িটা সুছন্দার দাদু অনেকটা বনবাংলোর কায়দায় বানিয়েছিলেন।তার বেড়াগুলো ভেঙে গেছে।গাছ, লতাপাতা বেয়ে উঠেছে।সুছন্দা দেখল একটা তালা দিয়ে দরজা বন্ধ।রঞ্জন লতাপাতা সরিয়ে দরজার কাছে যেতেই একটা গিরগিটি সরে গেল।
সুছন্দা বলল---তালা দেওয়া তো?
রঞ্জন বলল--ভেঙে ফেলা যায়, কিন্তু লাগাবে পরে কি?
---এর চাবি কার কাছে আছে?
ফরেস্টের গাড়ীতেই এসছে রঞ্জন-- সুছন্দারা।যদিও সুছন্দার দাদুর এই বন বাংলো রঞ্জনের পৈত্রিক বাড়ী থেকে মাত্র দশ মিনিট জঙ্গলের হাঁটা পথে।সে পথেই আগে আসত রঞ্জন সুছন্দার সাথে দেখা করতে।কিন্তু পিচ রাস্তা দিয়ে গেলে সেই পথই দশ মিনিট গাড়িতে লেগে যায়।

গাড়ীর ড্রাইভার ছেলেটা বেশ মিশুকে।ওর বাড়ী এখানে নয়।মালবাজার।ও ফরেস্টের গাড়ী চালায়।
গাড়ীর ড্রাইভার বলল---স্যার এ ঘরের চাবি আপনি একজনের কাছে পাবেন?
রঞ্জন জিজ্ঞেস করল---কে?
---নাম জানি না স্যার, কে একজন এখানে থাকে।আপনাদের বাড়ীর কেয়ারটেকার বটুকলাল তাকে চেনে।
সুছন্দা বলল---তবে যে বটুকাকা বলল এ বাড়ী এখনো দখল করেনি কেউ?

চিলাপাতার জঙ্গল ঘুরে নল রাজার বাড়ী হয়ে রঞ্জনরা যখন ফিরল তখন সন্ধ্যে হয়েছে।খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে।রঞ্জন বলল---সুছন্দা তুমি ভাতে ভাত করে নিও জলদি।

সুছন্দা শাড়ি বদলে রান্না ঘরে ঢুকে গেল।বটুকলাল এসে বলল---ছোটবাবু ঘুরে আইলেন?
---আচ্ছা বটু কাকা আপনি যে বললেন ওই বাড়ী দখল হয়নি তবে? ওখানে নাকি অন্য কে থাকে ড্রাইভার বলল।

বটুকলাল হেসে বলল---বৌমনির দাদু খুব ভালো লোক ছিলেন, জানতেন এই বাড়ীর লগে আর কেউ আসবেনি।বৌমনির মা'ও আসতেন কম।একটা ভবঘুরে আইসে জুটল।তার আস্তানা ছিল আশপাশ।দয়ালু মানুষ মরবার আগে থাকতে দিয়ে গেলেন।

----তার মানে ওই বাড়ীর চাবি আর মিলবে না?
---মিলবে না কেন?
---সে ভবঘুরে পাগলা সারাদিন জঙ্গলে ঘুইরে বেড়ায়, রাতে এসে আস্তানা গাড়ে।নিজের খেয়ালে থাকে, ভোর হবার আগেই চম্পট দেয়।তার কাছ থেকে চাবি এনে রাখব।

সুছন্দা ডাক দিলো---খাবে এসো।
খেতে বসে রঞ্জন বলল---কে এক ভবঘুরে পাগলকে থাকতে দিয়েছে তোমার দাদু ওই বাড়ী, বটুকাকা বললেন চাবি এনে দেবেন আজ রাতে।

সুছন্দা বলল---কাল তাহলে হেঁটে যাবো।
চিলাপাতা এখান থেকে বেশি দূরে নয়।রঞ্জন বহুবার হেঁটে গেছে।

ভোর বেলা বটুকাকা চাবি এনে দিল।অর্কর খুব ইচ্ছা হাতির পিঠে চড়বে।বটুকলাল বলল--তবে আমি দাদুভাইকে লিয়ে যাচ্ছি ছোট বাবু, আপনি না হয় বৌমনিকে লিয়ে চিলাপাতা হয়ে আসুন।

রঞ্জন একটা ট্রাউজার আর টিশার্ট পরেছে, পায়ে স্নিকার্স।সুছন্দা হাল্কা নীলচে শাড়ি আর ছাপা ব্লাউজ।

বাড়িটার উঠোনের লতাপাতা গুলো সরিয়ে দরজার তালা খুলতে লাগল রঞ্জন।বেশ জং পড়েছে।ভবঘুরে বোধ হয় এ বাড়ীতে অনেকদিন আসেনি তাই তালার অবস্থা এই।

রঞ্জন দরজা খুলতেই ফাঁদের সম্মুখীন হল।ভীষন অন্ধকার, গুমোট ভাব।রঞ্জন মোবাইলের আলোটা জ্বাললো।সুছন্দা তার দাদুর বাড়ীর ঘরগুলো ভালো করে চেনে।শাড়ীটা গোড়ালির উপরে তুলে ও হাঁটতে লাগল।প্রথম ঘরটার লাগোয়া দরজা দ্বিতীয় ঘরটা।পাশে ছোট রান্না ঘর, পেছন দিকেও বারান্দা আছে।

প্রথম ঘরে ঢুকে রঞ্জন আর সুছন্দা চমকে গেল মোবাইলের আলোয় তারা দেখছে এ কার ছবি!!!

(চলবে)
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
সুছন্দার ছবি দেওয়ালে আঁকা।খুব দক্ষ হাতেই আঁকা।সুছন্দা বলল---এটা কে আঁকল?
রঞ্জন বলল---আগে ছিল না?
---না তো?
রঞ্জন এবার দেখল পাশে টেবিলে কাগজের গোছা।প্রত্যেকটা কাগজে সুছন্দার ছবি আঁকা!তবে কোনো ছবিটাই এই বয়সের নয়।অল্প বয়সের।

সুছন্দাও হতবাক হল! রঞ্জন পাশে রাখা একটা ছোট কার্ডবোর্ডের বাক্স পেল।তাতে কিছু টুকরো টাকরা চিঠি।

সুছন্দা বলল---কি আছে ওতে?
---চিঠি!
প্রথম চিঠিটা এরকম--

সুছন্দা,

আমার বুকে আছড়ে পড়ছ না কেন? আমার বুকে তোমাকে রেখে দেবার মত অনেকখানি জায়গা আছে।সুছন্দা, প্রিয়তমা আমার, একটিবার জবাব দাও।তুমি একটিও চিঠির প্রত্যুত্তর দিচ্ছ না।আর এদিকে আমি উতলা হচ্ছি! তোমাকে না পেলে মরে যাবো লক্ষীটি।
তোমার অন্ধকারের প্রেমিক সুখেন!

সুছন্দা বলল---কে সুখেন?
পরের চিঠি খুলল রঞ্জন।

সুছন্দা,
আমাকে হত্যা করছ কেন বারবার? একটাও চিঠির উত্তর দিচ্ছ না।আমি পাগল হয়ে যাবো।তোমাকে আমি চাই, চাই, চাই।

সুখেন

তারপর অসংখ্য কবিতা!

বাকি চিঠিগুলো আর পড়া হল না।সুছন্দা বলল---কে সুখেন? কখনো তো শুনিনি?
রঞ্জন হেসে বলল---সুন্দরীদের এরকম পাগল প্রেমিক থেকেই থাকে, মনে করে দেখো কে হয়ত এমন ছিল, যাকে তুমি খেয়ালই করোনি।

সুছন্দা বলল---ধ্যাৎ, কি একটা পাগল! চলো।
সুছন্দা বেরিয়ে যাবার সময় আটকে গেল।বলল---ছবিগুলো কি সুন্দর এঁকেছে দেখো।আমি কিন্তু মোটেই এত সুন্দর ছিলাম না।
রঞ্জন বলল---ছিলে গো ছিলে তাই না লোকে এমন পাগলামী করে, আর এখনো আছো...পুরো মিলফ!
সুছন্দা কপট রাগ দেখিয়ে বলল---এই নোংরা কথাটা তোমাকে আগেও বলতে না বলেছি।
সুছন্দা ছবিগুলো দেখছিল।রঞ্জন বাকি চিঠিগুলো পড়বার লোভ সামলাতে পারল না।আস্তে করে পকেটে ঢুকিয়ে নিল।

সুছন্দা একটা ছবি হাতে নিয়ে বলল---এটা আমি বাড়ী নিয়ে যাবো।
রঞ্জন ঠাট্টা করে বলল---নিতে পারো।তবে তার আগে তোমার পাগল প্রেমিকের কাছে একটা অটোগ্রাফ নিয়ে নিও।

সুছন্দা অন্য ঘরের দরজার কাছে এসে বলল---এর চাবি কই?
রঞ্জন বলল---এটা তালাবন্ধ? কই দেয়নিতো।

রঞ্জন পেছনের দিক থেকে খেয়াল করল আলো আসছে।পেছনে গিয়ে দেখল এধার দিয়ে কেউ যাতায়াত করে।ঝোপ ঝাড়ের মাঝে বারান্দায় সরু রাস্তা তৈরি হয়েছে।বুঝতে পারল তাই দরজাটার তালায় মরচে পড়েছে।
একটু এগোতেই পায়ে কিছু একটা লেগে গড়িয়ে গেল।রঞ্জন দেখল দেশী মদের বোতল।যত্রতত্র বিড়ির টুকরো।সামান্য গাঁজার গন্ধ।বেশি পুরোনো না।এখানে তবে কেউ বসে নেশা ভাঙ করে।
এবার দেখল অনেকগুলো খালি দেশী মদের বোতল।একটু ঝোপের দিকে গিয়ে দেখল ফাটা দেওয়ালে কেউ ইট দিয়ে লিখেছে ''সুছন্দা তোমার স্তনে জায়গা দাও/আমি আজীবন শিশু হয়ে যাবো/সুছন্দা তোমার যোনি মেলে ধরো/আমি আজীবন যুবক হয়ে যাবো"!
রঞ্জন আর এসব দেখালো না সুছন্দাকে।

বাড়ী ফিরে এলো ওরা।অর্ক তখনও ফেরেনি।বটুক লাল অর্ককে নিয়ে বারোটা নাগাদ ফিরল।দুপুরে খেয়েদেয় সকলে বিশ্রাম করছিল।সুছন্দা পাশ ফিরে শুয়ে আছে।ঘুমে মগ্ন।অর্ক তার মায়ের পাশে শুয়ে মোবাইল হাতে গেম খেলে যাচ্ছে।

রঞ্জন একটু পাহাড়ের দিক থেকে বেড়িয়ে এলো।রাতে সুছন্দা চিকেন করল।বটুকলাল অর্ককে নিয়ে ফিরবার সময় টোটো পাড়া থেকে মুরগী কাটিয়ে এনেছিল।খেয়ে দেয়ে শুল ওরা তাড়াতাড়ি।

রঞ্জন পাশ ফিরে দেখল সুছন্দা ঘুমোয়নি।কিছু বলতে যাবার আগেই সুছন্দা বলল---সুখেন বলে আমার এখনও কাউকে মনে পড়ল না জানো!
রঞ্জন হেসে বলল---পাগলটা তোমার মনে বেশ জাঁকিয়ে বসছে দেখছি।
সুছন্দা রঞ্জনের বুকের কাছে মুখ নিয়ে বলল---তার চেয়ে তো বড় পাগল তুমি, যার সাথে সতেরো বছর ঘর করলাম।
---তাও অত ভালো ছবি আঁকতে পারবো না কিন্তু....
---সত্যি গো যে ই হোক ছবিগুলো কি সুন্দর এঁকেছে বলো।
---ওই যে ছবিটা আনবে বললে, এনেছো?
---আনলাম কই।ভুলেই গেলাম তো।
একটু খানি থেমে রঞ্জন বলল----ইচ্ছা করছে...
সুছন্দা রঞ্জনের গালে চুমু দিয়ে বলল---আজ নয়, বেশ কোমরে ব্যথা, কাল।
---মলমটা লাগাচ্ছো না কেন? বলেই রঞ্জন উঠে গিয়ে ব্যাগ হাতড়ে মলমটা বের করল।
সুছন্দা শাড়ি পরেছে।রঞ্জন সুছন্দার ফর্সা কোমল অল্প মেদ যুক্ত কোমরে মালিশ করতে লাগল।

সুছন্দা ঘুমিয়ে গেছে।রঞ্জনের মনে পড়ল চিঠি গুলোতো পড়া হয়নি।সন্তর্পণে উঠল রঞ্জন।ঘরের মধ্যে থেকে মোমবাতি দানীটা তুলে নিয়ে গেল পাশের ঘরে।ওখানে অর্ক ঘুমোচ্ছে।একদম শব্দ না করে চিঠির বান্ডিল নিয়ে বারান্দায় গেল।

বাইরে ছমছমে অন্ধকার।শৈশবে এই অন্ধকারেই বড় হয়েছে ফরেস্ট অফিসার বিমল মৈত্রের ছেলে রঞ্জন মৈত্র।তাই এই জঙ্গলে তার তেমন ভয় করে না।
তৃতীয় ও চতুর্থ চিঠিটা আবার সেই রোমান্টিক ও সুদীর্ঘ।তবে প্রথম দুটির মত সাধারণ নয়।অত্যধিক পান্ডিত্য না থাকলে এমন চিঠি লেখা যায় না।পড়ে বোঝা গেল এক অজানা যুবক সুছন্দার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খেত, বেচারাকে সুছন্দাই জানতে পারল না।মনে মনে রঞ্জন ভাবল, ভালোই হয়েছে সুছন্দার হাতে এই যুবকের চিঠি আসেনি।এই চিঠির কাব্যিকগুন আর তার রোমান্টিকতায় যে কোনো নারীই প্রেমে পড়ে যাবে।সুছন্দাও নিশ্চই ব্যতিক্রম হত না।তবু চিঠিগুলো পড়ে রঞ্জনের জানতে ইচ্ছে করল এই হতভাগা প্রেমিকটি কে?

প্রত্যেকটা চিঠি পড়েই বোঝা যায় সুছন্দা কোনো উত্তর দেয়নি।চিঠিগুলো সুছন্দার হাতে পৌঁছায়নি।রঞ্জন বুঝল কেউ ইচ্ছে করেই চিঠিগুলো লুকিয়েছে সুছন্দার হাতে যাতে না এসে পৌঁছায়।
পঞ্চম চিঠিতে আটকে গেল রঞ্জনের চোখ।সুছন্দার একটি নগ্ন ছবি আঁকা আছে।বিয়ের প্রথম দিকের সুছন্দা।ভাল করে রঞ্জন দেখল, সুছন্দার মুখটা সে সময়কার সঙ্গে পারফেক্ট হলেও স্তন, নাভি যোনিতে ত্রুটি আছে আঁকায়।রঞ্জন জানে সুছন্দার বাম স্তনে একটা লালচে তিল আছে।রঞ্জন নিজে যদি সুছন্দার নগ্ন পোট্রেট আঁকে তবে সেটি ভুলে যেত না।সুছন্দার স্তনের আকারেও ত্রুটি আছে আঁকায়।শিল্পী কল্পনাতেই এঁকেছে যে তার ফল এটি।

পরের ছবিটা অদ্ভুত! সেখানে সুছন্দা পেছন দিক করে ঘাড় ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কোমরে কাপড় তোলা।উদ্ধত পাছা।সুছন্দার পশ্চাৎদেশের স্বাভাবিক আকারের চেয়েও অস্বাভাবিক রকম বড় করে এঁকেছে! মনে হচ্ছে এইটা আঁকার সময় প্রেমিক শিল্পীর মনে ঘৃণা জন্মে ছিল সুছন্দার প্রতি।
পরের ছবিতে আরো একটি বিচিত্র চিত্র।এখানে সুছন্দা স্তন দান করছে।কোলে একটি শিশু।শিশুটির রঙ কালো।

শেষ ছবি নর্তকী বেশে সুছন্দা।সম্পুর্ন নগ্ন, গহনা পরিহিতা।

রঞ্জন বুঝতে পারল লোকটা শুধু পাগল প্রেমিক নয়, পারভার্টও।তবে লোকটা সুদক্ষ শিল্পীও বটে।কিন্তু লোকটা কে?
(চলবে)
 
  • Like
Reactions: Ex-fire

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
সকালে রঞ্জন আর অর্ক সামনের দুটো শাল গাছে জাল টাঙিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলল।খেলা শেষে অর্ক বলল----বাপি, ওই পাহাড়ে নিয়ে যাবে যে?
---যাবি? চল তাহলে বিকেলে।
খাওয়া দাওয়া সেরেই অর্ক আর রঞ্জন বেরিয়ে পড়ল।পাহাড়ের চড়াই উতরাই ঢাল বেয়ে অনেকটা হাঁটতে হয়।
এই পাহাড়টা যাবার পথ আবিষ্কার করেছিল কানু দা।কানু দা ছিল বটু কাকার ছেলে।খুব সাহসী ছিল কানু দা।তখন রঞ্জন দশ বারো বছর।কানু দা রঞ্জনের থেকে বছর ছয়েক বড়।সতেরো-আঠারো হবে তখন।কানু দা'র যেমন দুস্টুমি ছিল তেমন ছিল বুদ্ধি।রঞ্জনের মনে আছে একবার হাতির পালের মুখে পড়েছিল তারা।কানু দা' তখন বটুকাকার বিড়ি চুরি করত।পকেটে দেশলাই রাখত।শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল হাতির পালকে।কানু দা দুষ্টমি করলেও পড়াশোনায় ভালো ছিল।তাই রঞ্জনের বাবা তাকে ভালোবাসতেন এবং সব পড়ার খরচ বহন করবেন বলেছিলেন।
হঠাৎ অনেক দিন পর কানু দা'র কথা মনে এলো রঞ্জনের।রঞ্জন তখন সবে ফাইভে পড়ে।কানু দা'র টেন হবে।হঠাৎ হই হই করে উঠল সকালবেলা বাড়ীর পরিবেশ।রঞ্জনের মনে আছে সেদিনটা।সকলে বলছিল রেঞ্জার অফিস থেকে নাকি চুরি গেছে টাকা।কানু দা চুরি করেছে।সেদিন রঞ্জনের বাবাও কানু দা'কে খুব মেরেছিলেন।রঞ্জন পরে জেনেছিল কানু দা'কে হোস্টেলে রেখে দিয়ে আসা হয়েছে।

অর্ক বলল---বাপি ওই দেখো?
রঞ্জনের হুশ ফিরল।দেখল একটা শেয়াল পাথরের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে।তারপর পালালো।

বাড়ী ফিরল সন্ধ্যের মুখে।অর্ক এসে---মা মা হাঁক ডাক করল।সুছন্দাকে দেখতে পাওয়া গেল না।

বটু কাকা বললেন---বৌমনি তার দাদুর বাড়ীর দিকে গেছে।
রঞ্জন বলল--এখন?
রঞ্জন দেখল সুছন্দা আসছে।হাতে রোল করা কাগজ!
রঞ্জন বলল---এখন তুমি গেছিলে কেন?
সুছন্দা বলল---ছবিটা আনতে।
রঞ্জন বলল---সন্ধ্যের দিকে ওদিকে কেউ যায়? বলতেই পারতে আমরা না হয় ওদিক দিয়েই ঘুরে আসতাম।
সুছন্দা বলল---কি করব, তোমরা আমাকে না বলে চলে গেলে, একা একা কি করব...ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।


সুছন্দার পেটে মাথা রেখে শুয়ে ছিল রঞ্জন।সুছন্দা বলল---আমরা যদি সব কিছু ছেড়ে পাকাপাকি থেকে যাই?
----বা রে! তারপর তোমার চাকরী, আমার চাকরী, অর্কের স্কুল?
---ট্রান্সফার নিয়ে নেব।
রঞ্জন হেসে সুছন্দার দিকে ঘুরল।একটু আগেই তারা মিলিত হয়েছে।সুছন্দার ব্লাউজের একটা হুক তখনও খোলা।রঞ্জন আঁচল সরিয়ে স্তনের দিকে হাত বাড়াতেই সুছন্দা হাতটা সরিয়ে হুকটা লাগিয়ে নিল।
রঞ্জন বলল---এখানে একটা পোস্ট অফিস আছে।তোমার বদলি হয়ে যাবে, কিন্তু আমার? এখন তো ট্রান্সফারটি স্টেটের বাইরে নিতেই হচ্ছে।একবছর পরে ভাবা যেতে পারে।তবে মাদারিহাটেও কোনো শাখা আমার ব্যাঙ্কের নেই।আছে সেই জলপাইগুড়িতে...সেখান থেকে এখানে যাতায়াত করার চেয়ে কলকাতা টু অলিপুরদুুয়ার একই ব্যাপার।

সুছন্দার বুকের গভীরে মাথা গুঁজে শুয়ে পড়ল রঞ্জন।

(চলবে)
 
  • Like
Reactions: Ex-fire

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
আজ শেষ দিন।কালই ফিরবে তারা।রঞ্জন বটুকাকার সাথে গল্প করছিল।কথায় কথায় রঞ্জন বলল---বটুকাকা আচ্ছা কানু দা কোথায়?
নামটা শুনে বটুকলাল গম্ভীর হয়ে গেলেন।এড়িয়ে গিয়ে বললেন---ছোটবাবু আবার কবে আইসবে? দাদুভাইর তো ভালো লেগে গেছে জায়গাটা?
রঞ্জন একটু অবাক হল।সত্যি সেই কবে ক্লাস সিক্সে কানু দা'কে শেষ দেখে ছিল।চুরির দায়ে অভিযুক্ত হবার পর আর কোনো দিন কানুদার কথা সে না বাবা-মা, না বটুকাকা; কারোর মুখে শোনেনি।

ব্যাগ গোছাচ্ছিল সুছন্দা।বটুকাকা ফরেস্টের গাড়ী ডাকতে গেছে।রঞ্জন বটুকাকার ঘরটার কাছে এসে বারান্দায় বসল।বটুকাকার ঘরের দেওয়ালে একটা পট আঁকা আছে।প্রচন্ড শিল্পীসত্বা না নিয়ে জন্মালে এমন আঁকা যায় না।রঞ্জন দেখল একটা জায়গায় ছোট করে ইংরেজিতে লেখা আছে 'Sukhen'।চমকে গেল রঞ্জন।ভাবল সুছন্দাকে ডেকে দেখাবে।তারপর ভাবল না থাক।যে প্রেমিককে সুছন্দা কখনো দেখেনি, এতদিন পর তাকে চিনিয়ে লাভ নেই।
সুখেনকে চিন্তে পেরেছে রঞ্জন।কানু দা'ই সুখেন।এটা চিনতে তার বাকি নেই।
******

রঞ্জন ইংরেজি কবিতার বইটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মানে সুছন্দা সুখেনকে অর্থাৎ কানু দা'কে চিনতো!!! আসলে চিঠি গুলো সবই পড়ত সুছন্দা।কিন্তু সুছন্দা কোনো প্রত্যুত্তর দিত না কেন?

কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল রঞ্জনের!সুছন্দা যদি চিনতো তবে রঞ্জনের কাছে চেপে গেল কেন? কেন সেদিন বলেছিল---"কে সুখেন?"

আলিপুদুয়ার থেকে ঘুরে আসার পর রঞ্জন ভুলেই গেছিল কানু' দা'র কথা।কিন্তু আজ যেন নতুন করে তার অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলল।

অর্ক ফিরেই বলল---বাপি আজ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আর চেন্নাই সুপার কিংসের খেলা আছে।

রঞ্জন অন্যমনস্ক ছিল।নিজের স্ত্রীর এই হতভাগা প্রেমিককে জানার রহস্য তাকে পেয়ে বসেছে।বলল---কাল আলিপুরদুয়ার যাবি?
--কাল? অর্কের চোখ চকচক করে উঠল।
---হ্যা, তোর মাকে রাজি করাতে হবে।

সুছন্দা অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়িই ফিরল।রঞ্জন অর্ককে ইশারা করল।অর্ক বলল---মা,কাল আমরা আলিপুরদুয়ার যাচ্ছি।
----মানে??
---হ্যা সুছন্দা, তুমিও চলো।তুমি না গেলে বাপ-ছেলেতেই যাবো।এই ছুটিগুলো নষ্ট করা যাবে না।
অর্ক ভেবেছিল মা রাজি হবে না।রঞ্জনও তাই ভেবেছিল।সুছন্দা একটু নারাজ হয়ে বলল---আমি একা একা থাকব?
---কেন তুমিও চলো।
---আমার একদম এখন হবে না।ঠিক আছে তোমরা যাও।কিন্তু সাবধানে তোমরা দুজনেই যে কি করে বসো কখন।

রঞ্জন হেসে বলল---তাহলে কাল আমরা যাচ্ছি?
অর্কও খুব খুশি।
*******
মাত্র ছ'মাস আগে আলিপুরদুয়ার ঘুরে গেছে তারা।অর্কর কাছে তবুও জায়গাটা নতুন।জলদাপাড়া পৌঁছল যখন ওরা বটুকলাল খুশি হয়ে বলল---ছোট বাবু আপনি?
----হ্যা বটু কাকা, তিন চারদিন কাটিয়েই যাবো।
----বৌমনি কোথায়?
---ও আসেনি ওর অফিস আছে।
---ঠিক আছে ছোটবাবু আমি ঘর খুলে দিচ্ছি।টোটোপাড়ার ঘনার বউকে বলে দিচ্ছি।রেঁধে দিয়ে যাবে।

সুছন্দা যেভাবে ঘর গুছিয়ে দিয়ে গেছিল ঠিক একই রকম আছে ঘরটা।অর্ক বলল---বাবা তোমার ছোটবেলাটা বেশ কেটেছে, আমার তো এখানে থেকে যেতেই ইচ্ছে করে।
রঞ্জন বলল--এখানে কিন্তু আইপিএল দেখতে পাবি না, ইলেকট্রিক নেই।
---জানি তো।সেজন্যই ভালো লাগে।

রঞ্জন খুশি হল।তার ছেলেটা কলকাতায় মানুষ হয়েও যা হোক নাকউঁচু হয়নি।

টোটো পাড়ার একটা আদিবাসী বউ এসে রেঁধে দিয়ে গেল।এধার ওধার রঞ্জন আর অর্ক ঘুরে এলো।মাঝে সুছন্দা ফোন করে জেনে নিল তারা ঠিকঠাক পৌঁছেছে কিনা।

রাতে অর্ক ঘুমিয়ে পড়তে রঞ্জন বাইরে বেরোলো।জঙ্গলের রাতটা তার বড় ভালো লাগে।
বটুকলাল দাওয়ায় বসে আছে।রঞ্জন এগিয়ে গেল।বটুকলাল দাওয়ায় মাদুর পেতে দিল।বলল---বসেন ছোটবাবু।
---বটু কাকা এখানে একা একা থাকেন কখনো কোনো বিপদ হয়না?
---সে আর কি বিপদ ছোটবাবু...এখন কি আর আগের মত পশু পাখি আছে।তবে এক আধবার চিতা ধরা পড়ে বৈকি।তোমার মনে আছে ছোটবাবু বড় সাহেব একবার বাঘের বাচ্চা ধরে...
রঞ্জন কথা শেষ না করতে দিয়েই বলল---কানু দা কোথায়?
বটুকলাল আবার এড়িয়ে গিয়ে বলল---কাল হাতির পাল ঢুকে পড়েছিল...
----কাকা কানু দা এখন কোথায় থাকে?
বটুকলাল আর এড়াতে পারলেন না।বললেন---কে কানু?
---আপনি নিজের ছেলে ভুলে গেলেন বটু কাকা?
বটুক গম্ভীর হয়ে গেল।বলল---সে কি আমাকে কখনো বাপ মনে করছে?
---সে এখন কোথায়?
---আসে মাঝে মধ্যে।দিন চার পাঁচ থাকে।পাহাড় জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তারপর আবার কোথায় চলে যায়।নির্লিপ্ত ভাবে বটুকলাল বলল।
---সুছন্দার দাদুর বাড়ীতে কানু দা থাকে না?
বটুকলাল চমকে উঠল---তুমি কি কইরে জানলে ছোটবাবু?
---আমি জানি বটুকাকা, কানু দা'কে আমার বেশ মনে আছে, পাহাড়ে চড়া, গাছে চড়া সব কিছুতেই ওস্তাদ ছিল।তারপর সেই ফরেস্ট অফিসে চুরি...
বটুকের চোখ ভিজে গেল বলল---তোমার মনে আছে ছোটবাবু? তুমি তখন দশ বারো।বটু তোমার চেয়ে অনেক উঁচু কেলাসে পড়ত।চুরি করল, বড়সাহেব মারলেন।স্কুলে পাঠালুম তারপরও বড় সাহেবের কথা শুনে।বড় সাহেব বড় ভালোবাসত তাকে।বাসবেই না কেন? কানু পড়াশুনা, খেলাধুলা সবেতেই পরথম হত যে!
---তারপর?
---ইস্কুলে সবাই খ্যাপাতে লাগল,'চোর চোর' বলে।ছোট বাচ্চারও ছাড়ত না তাকে।কেষ্ট বলে একটা ছেলে পড়ত কানুর সাথে।কানুকে খ্যাপালো।কানুর গতর সবসময়ই বেশি।একদিন বেদম মারল ছেলেটাকে।বড় সাহেবের কাছে কমপিলেন আইল।বড় সাহেব পাঠিয়ে দিল হোস্টেলে, দিনাজপুর।
---তারপর কি হল?
---কানু আসতে চাইত না ইখানটা।এলো সেই কলেজ পাশ করে।তখন কানু কেমন বদলে গেছে।একা দরজা বন্ধ করে থাকত।বৌমনির দাদু ফণীভূষণ মুখুজ্জে পন্ডিত মানুষ।তাকে পছন্দ করত।কিসব পন্ডিতদের কথা, পড়া লেখার কথা আলোচনা করত তারা।কানু ছবি আঁকত, ফনি বাবুর ঘরে।তারপর একদিন আচমকা কানু নিরুদ্দেশ হয়ে গেল!
---ফিরল কবে?
---দশ বছর পর।তখন মাথার ছিট হইছে!ফনিবাবু তখন মরণ শয্যায়।কানুকে দেখতে পেয়ে খুশি হলেন।বললেন কানু যেন আর কোথাও না চলে যায়।তারপর ফনি বাবুর মৃত্যুর পর কানু এই বাড়ীতে আসতে লাগল।দুমাসে, একমাসে ইচ্ছা হলে আসে।নেশা ভাঙ করে।জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।আবার কোথায় চলে যায়।
---কোথায় চলে যায় কানু দা?
----সে বলতে পারবনি ছোটবাবু।পার্থকে মনে আছে কানুর সাথে পড়ত? সে বলতে পারবে।
রঞ্জনের মনে পড়ল পার্থ দা, মাদারিহাটের স্কুলে পড়ত।কানুদার ব্যাচ।
---বলল হ্যা পার্থ দা, মনে আছে তো? সে এখন কি করে? কোথায় থাকে?
---ও তো এখন মাস্টার হয়েছে।মাদারিহাট ইস্কুলে।যে ইস্কুলে আপনি পড়তেন।শুধু আমার কানুটাই মাতাল, গাঁজাখোর হইল।


পরদিন সকালেই রঞ্জন মাদারিহাট বেরিয়ে গেল।রঞ্জন নিজেও জানে না কেন সে এত উৎসাহিত কানু দা'র ব্যাপারে।এজন্যই কি কানু দা তার স্ত্রীকে অন্ধ ভাবে ভালোবাসত বলে?

মাদারিহাটের স্কুলটা বদলে গেছে।এখন বিরাট সাজানো গোছানো।কিছুক্ষণ পর পার্থ সমাদ্দার এলো।পার্থ দা কে দেখে আগের পার্থ দা'র সাথে কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
পার্থও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রঞ্জনের দিকে।বলল---বলুন।
---আপনি পার্থ দা?
বেশ অবাক চোখে পার্থ বলল--হ্যা।আপনি?
---আমি রঞ্জন মৈত্র।ফরেস্ট অফিসার বিমল মৈত্রকে মনে আছে? তার ছেলে।
----ও হো হো হো! রঞ্জন? বড় সাহেবের ছেলে?
---ভালো আছো পার্থ দা?
--হ্যা তুমি?
---ভালো।
---এতদিন পর আলিপুরদুয়ারে?
---এলাম ছুটি কাটাতে।
---বাঃ ভালো করেছো।পৈত্রিক ভিটে ভুলে যাওনি তাহলে।বটুকাকার মুখে শুনেছিলাম তুমি তো কলকাতা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার।
---ওই আরকি।পার্থ দা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
--হ্যা বলো?
---আচ্ছা কানু দা'কে মনে আছে? বটুকাকার ছেলে?
---সুখেন? মনে থাকবে বা কেন? দু-তিনমাস আগে বোধ হয় দেখলুম মুখ নীচু করে হেঁটে যাচ্ছে।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করব ভাবলাম কোথায় যাচ্ছিস।কিন্তু এত মদ গিলেছে! যাওয়া যায় না।
---আচ্ছা কানু দা পাগল হয়ে গেছে?
---পাগল? না, না, আসলে খুব প্রতিভাবান ছিল তো, নিজের জগতে থাকে।এমনিতে ও তো বরাবরই রগচটা, ইনট্রোভার্ট ধরনের।কিন্তু রঞ্জন, তুমি কানুর খবর নিচ্ছ কেন? ও মাতালের খবর কে রাখে?
---আসলে বটু কাকা বুড়ো হচ্ছে তো।ওর তো একমাত্র ছেলে।একটু যদি ছেলে কে বয়সে পায়।
হেসে উঠল পার্থ।বলল--কে কানু বটুকাকার দেখাশোনা করবে? ওর নিজেরই হাল যা।
---কেন ও তো খুব ভালো ছবি আঁকে শুনেছি।
---শুধু ছবি কেন, কবিতা লেখা থেকে পান্ডিত্যতে ওর ধারে কাছে লোক মেলা মুস্কিল।কিন্তু কি জানো কানুটা বড়ই হতভাগা।ছেলেবেলা থেকেই এমন।অল্প বয়সে বেশ দুঃসাহসী ছিল।তারপর চুরির দায়ে...
---আচ্ছা পার্থ দা, কানু দা কি সত্যি চুরি করেছিল?
---রঞ্জন, সেসব এত পুরোনো কথা।জেনে আর কি করবে?চুরিটা করেছিল নিরাপদ চক্রবর্তী।
---মানে আমাদের বাড়ীর পুরোহিত যিনি ছিলেন?
---হুম্ম।জাতপাতের বিষয় বুঝলে।তোমার বাবা-মা কানুকে নিজের ছেলের মত স্নেহ করতেন।নিরাপদ তা পছন্দ করতেন না।ব্রাহ্মণের বাড়ীতে শূদ্র ছেলের এত খাতির...সহ্য হত না।নিরাপদ বুড়ো তাই ফাঁসালেন।বড় সাহেব সব জানতেন।
------বাবা জানতেন! তাও?
----বড় সাহেবের কিছু করার ছিল না।সব প্রমাণ কানুর পক্ষে ছিল।হতভাগাকে বড় সাহেবই তো হোস্টেলে দিলেন পরে।শুনেছি ওখানেও ও ফার্স্ট হত।তারপর ফিরেও ছিল জলদাপাড়া...কিন্তু...
----কিন্তু কি পার্থ দা?
----ও কেমন একগুঁয়ে ছিল তো বরাবর, ফিরেও জলদাপাড়ার লোকগুলোর ওপর রাগ গেল না।একা থাকত ছবি আঁকত...মাঝখানে বড় সাহেব ওর প্রতিভা দেখে মাদারিহাটে একটা ছবি আঁকার স্কুল খুলে দিয়েছিলেন।কিছুদিন ছিলও ভালো।সেসময় আমার সাথে ক্যারাম খেলতে আসতো মাদারিহাট।শুনেছিলাম ও নাকি প্রেমে পড়েছে...ওয়ান সাইডেড লাভ।মেয়েটা নাকি ওকে পাত্তা দেয়না।

---মেয়েটাকে চিনতেন?
----না, ওর মত ইনট্রোভার্ট ছেলের কাছে এতটা আশা করা যায়না।এতটুকু জানতাম মেয়েটার বাড়ী জলপাইগুড়ি।মেয়েটার অন্য একজন প্রেমিক আছে।

রঞ্জনের নিজেকে দোষীও মনে হচ্ছিল আবার গর্বও হচ্ছিল।বেচারা কানু দা।রঞ্জন জানে মেয়েটি হল তার স্ত্রী সুছন্দা আর মেয়েটির প্রেমিক হল সে নিজেই।

পার্থ সমাদ্দার তখনও বলে গেলেন---তারপর হঠাৎ করে একদিন নিরুদ্দেশ।সকলে যখন ধরে নিয়েছে কানু মরে গেছে, প্রায় বছর দশেক পরে একদিন আচমকা হাজির।শুনেছিলুম কলকাতায় একটা বয়স্ক নোংরা মেয়েছেলেকে নিয়ে থাকত।এসব শোনা।মহিলা নাকি কানুর চেয়ে কুড়ি বছরের বড়।তারপর মহিলা মরতে তার বাড়ীটা কানুকে দিয়ে গেছে।ওই বাড়ীতেই থাকে ও।
----কানু দা কলকাতাতেই থাকে?
---হু, সেরকমই তো শুনেছি।কয়েকটা কাগজ, ম্যাগাজিনে ছবি আঁকে, কি একটা ছদ্ম নামে...।সেখান থেকে যা পয়সা পায় তাতেই ওর চলে যায়।
---কলকাতার কোথায় থাকে?
---একযাক্ট জায়গাটা বলতে পারব না, ওই কেষ্টপুরের দিকে।সে তোমাকে ছোট্টু বলতে পারবে।ছোট্টু বলে ওর এক সাগরেদ আছে।আমার অনুরোধে আমাদের এখানে একটা ম্যাগাজিনে ছবি এঁকে দিয়েছিল।ছোট্টুর হাতে পাঠিয়ে ছিল ছবিটা।
---ছোট্টুকে কোথায় পাওয়া যাবে পার্থ দা?
----ও তো কলকাতাতেই থাকে।দাঁড়াও নাম্বারটা আছে কিনা দেখি।
পার্থ সমাদ্দার মোবাইল ঘেঁটে বললেন---এই যে...
ফোন নম্বরটা নিয়ে, রঞ্জন যখন ওঠবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পার্থ তখন বলল---যা করো না কেন রঞ্জন...কানুকে তুমি লাইনে আনতে পারবে না...বটুকাকার কথা ভাবলে সত্যিই কষ্ট হয়।

রঞ্জন ফিরে এলো।অর্ক বলল----বাপি কোথায় গেছিলে?
---একটু নিজের পুরোনো স্কুলটা দেখে এলাম রে।
পরের দুটো দিন বেশ কাটল রঞ্জন আর অর্কের।ফিরল তৃতীয় দিন।ফিরবার সময় বটুকলাল চোখ ছলছল করে বলল---ছোটবাবু কানুর খবর পেলেন?
--কেন বটুকাকা কানু দা তো এখানে মাঝে মধ্যে আসে?
---সে আইসত কিন্তু তিন মাস হল আসেনি কই।কি করি ছোটবাবু,নিজের ছেলেতো, সে যেমন হউক, মুখটাতো দেখতে পেতুম।পার্থ কিছু ঠিক-ঠিকানা দিল?
---হ্যা বটু কাকা ও কলকাতাতেই থাকে।
বটুকলাল রঞ্জনের হাত দুটো ধরে বলল---একবার দেখতে পেলে খবর দিয়েন।

বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকাতে পারছিল না রঞ্জন।অসহায় পিতার মুখটা দেখতে পাচ্ছিল সে।
ট্রেনে ফিরবার সময় রঞ্জন ভাবছিল সেদিনটার কথা।কানু দাকে চড় মারছিলেন বাবা, বটুকাকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন মাথা নত করে।সেদিনই হয়ত কানুদার মন থেকে পিতার প্রতি দূরত্ব তৈরী হয়ে গেছিল।আর নিজের কাছের লোক তার বাবা, বড় সাহেব সবাই সেদিন কানুদার কাছে অপরাধী হয়ে গেছিল।নিজের লোকদের কাছে ঠকেই বোধ হয় কানুদা সুছন্দাকে এত বেশি ভালো ফেলেছিল।সুছন্দা তখন রঞ্জনের প্রেমিকা।দুই বাড়ী মোটামুটি এই সম্পর্কটা তখন বৈধতা দিয়ে দিয়েছে।সুছন্দা তখন রঞ্জনের বাড়ীতে আসতো যখন তখন।সুছন্দা হয়ত কানুদার চিঠিগুলো পড়ত কারণ কানুদার অসাধারণ কাব্যগুন।কিন্তু সুছন্দা ভালোবাসত রঞ্জনকে তাই কানু দা'র চিঠির কখনো উত্তর দেয়নি।আর যে লোকটিকে সে ভালো বাসেনি কোনোদিন আজকে তাকে চেনে বলাটা জরুরী নয় বলেই সুছন্দা রঞ্জনের কাছে কানু দা'কে চেনার ব্যাপারটা চেপে গেছে।

রঞ্জনের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল জলের মত।নিজেরও একটা তৃপ্তি এলো।গর্ব হচ্ছিল সুছন্দার জন্য।সুছন্দা তাকে সব সময় ভালোবেসেছে, কানুদার এত কাব্যিক-রোমান্টিক চিঠিগুলো উপেক্ষা করে।কেবল বটুকাকার করুন মুখটা রঞ্জনকে ব্যথা দিয়ে গেল।সে ঠিক করল কানু দা'কে খুঁজে বের করে বটু কাকার কাছে পাঠাবে।

(চলবে)
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
সুছন্দা বলল---ঘোরা হল বাপ-ছেলেতে?
রঞ্জন বলল---তুমি গেলে না কি মিস করলে।
অর্কও বলল---হ্যা মা গেলে না, বাপি ঠিক বলেছে মিস করে গেলে।আমরা বুনো হাতির পাল দেখেছি।
সুছন্দা হেসে বলল---আলিপুরদুয়ার শুধু তোর বাপির পৈত্রিক ভিটে নয়, আমারও মামার বাড়ী।আমিও দেখেছি বহুবার।

রাতে সুছন্দাকে বিছানায় জড়িয়ে ধরল রঞ্জন।সুছন্দা হেসে বলল---বউ ছেড়ে আলিপুরদুয়ার গেছিলে তো বেশ, এখন এত আদর কিসের?
রঞ্জন সুছন্দার কাঁধে মুখ ঘষতে ঘষতে বলল----আমার সুন্দরী বউ ছেড়ে থাকা সত্যিই উচিত হয়নি ডার্লিং।
সুছন্দার শায়িত দেহের উপর রঞ্জন তার দেহের ভার ছাড়ল।একে অপরকে আদরে ভরিয়ে দিল দুজনে।মাঝে সুছন্দা একবার বলল---আস্তে শব্দ করো, পাশে ছেলে ঘুমোচ্ছে।
******
অফিসের কাজে দুটো দিন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল রঞ্জন।অথচ কেষ্টপুরের বস্তি রঞ্জনদের বাড়ী থেকে খুব কাছে।দশ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছানো যায় তবু তার ছোট্টু নামের ছেলেটাকে ফোন করা হয়নি।

সেদিন অফিস ক্যান্টিনে বসেই ফোন করল রঞ্জন।
---হ্যালো?
---আপনি ছোট্টু বলছেন?
---হাঁ বলছি?
---আপনার সঙ্গে আমার একটু দরকার ছিল।
---আমার সঙ্গে? আপনি কি পুলিশের লোক নাকি?
রঞ্জন হেসে বলল---না, না, নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আমি পুলিশের লোক না।
---ও তাহলে পুরিয়া দরকার।কেষ্টপুরে লগেনের দোকানে চলে আসুন বিকালে, ভালো মাল আছে, মণিপুরী।
রঞ্জন বুঝল ছোট্টু আসলে গাঁজার সরবরাহকারী।
অফিস থেকে তাড়াতাড়িই বেরোলো রঞ্জন ।বাড়ী যাওয়ার পথে কেষ্টপুর বস্তির দিকে একবার ঘুরে যাবার প্ল্যান করল সে।রঞ্জনদের বাড়ী জেদিকটা সেটা একটা অভিজাত কলোনি।তার পরেই ডান দিকে একটা সরকারি স্কুল সেখানেই বসে বাজার।তার পাশ দিয়ে খাল বরাবর গেছে বস্তি।
একটা উটকো লোককে জিজ্ঞেস করল রঞ্জন---নগেনের দোকান কোন দিকে?
---লগার দোকান? এই খালের ধার দিয়ে চলে যান।সেই যে গুমটি চা দোকান...সেটাই লগার।

রঞ্জন দোকানে এসে দেখল গলায় তুলসী মালা বাঁধা একটা বুড়ো চায়ের গেলাস ধুচ্ছে।রঞ্জন বলল---এটা নগেন মানে লগার দোকান?
বুড়োটা রঞ্জনের দিকে তাকিয়ে বলল---হাঁ।
---ছোট্টু..?
একটা ছাব্বিশ-সাতাশ বছরের ছেলে বেরিয়ে এলো।বলল---ও আপনি?
ভালো করে দেখে আবার বলল---আমি ভাবলি কোনো কলেজের ছাত্র...
রঞ্জন বলল---না, আপনি যা ভেবেছেন তার কোনটাই নয়।
---তাহলে বলেন কি জন্য?
---ভেতরে বসে কথা বলা যাবে?
ছোট্টু আর রঞ্জন ভেতরে বসল।দোকানটা ফাঁকা।
রঞ্জন বলল---সুখেন সর্দার কে চেনেন?
---কে সুখেন?
---সুখেন সর্দার, উত্তরবঙ্গে বাড়ী, ছবি আঁকে...
---ও কানু দার কথা বলছেন নাকি?
---হ্যা কানু দা।
---আরে লগা দা? দেখো এই পরথম দেখলুম কানু দা'র খোঁজ কেউ করছে! ছোট্টুর মুখে হাসি।
--নিশ্চই ছবি আঁকাবেন?
রঞ্জন হেসে বলল--না, আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।
চা দোকানী বৃদ্ধ বলল---কানু পাগলা'র সঙ্গে দেখা কইরবেন? যা খ্যাপা লোক কথাই বলে কিনা দেখুন।
রঞ্জনের খারাপ লাগল এত বড় মাপের প্রতিভাবান শিল্পীকে এরা পাগল বলছে!ছোট্টু বলল---না না লগা দা, কানু নেশা করলে একটু গোঁ মেরে থাকে।
লগা চা গেলাস ধোয়া শেষ করে হাত মুছতে মুছতে বলল---কে জানে বাপ, দেখলেই ভয় হয়!
ছোট্টু লগার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলল--- তাহলে চলে যান, এই রাস্তা ধরে গেলে একটা বস্তির শেষ মাথায় একটা দোতলা ঘর দেখবেন।কানু দা থাকেন।
লগা বলল---না, না, এত ঘুরে গেলে কানুর ঘর চিনতে পারবেননি।বস্তিতে এরকম অনেক ঘর আছে।একটা কাজ করেন শর্টকাট বলে দিচ্ছি দিলে আর আপনাকে বস্তি দিয়ে যেতে হবেনি।
রঞ্জন বেশ চাপে পড়ল দুজন দুরকম কথা বলে।তবু বলল--বলুন।
এই যে বড় রাস্তা দেখছেন।এই রাস্তা দিয়ে গেলে একটা ফিলাই ওভার পড়বে তার পাশ দিয়ে মোরাম রাস্তা পড়বে।একদম শেষমাথায় কানুর ঘর।দেওয়ালে তেনোমুলের ভোটের কথা লিখা আছে।
রঞ্জন বলল---ধন্যবাদ।
রঞ্জন বেরিয়ে যাচ্ছিল।ছোট্টু পিছন থেকে ডাকল---ও সার!
---হ্যা বলুন।
---আপনি যখন যাচ্ছেন কানু দা'কে এই ব্যাগটা দিয়ে দিবেন পিলিজ।বলবেন ছোট্টু দিয়েছে।
একটা চটের ব্যাগ দিল ছোট্টু।রঞ্জন হাঁটা দিল।একটা উত্তেজনা হচ্ছে তার।কানু দা'র সাথে কতদিন পর দেখা হবে।কানু দা' তাকে নির্ঘাৎ চিনতে পারবে না।সেই শৈশবেই তাদের শেষ দেখা।

রঞ্জন লগার কথা মত বড় রাস্তা ধরে যেতেই ফ্লাই ওভার পেল।সত্যিই সেখানে মোরাম রাস্তা।শেষমাথায় একটা বাড়ী পেল।একেবারে রাস্তার গায়ে বাড়িটা।দোতলাটা টালির।বাড়ীর রাস্তার সংলগ্ন একটা টিনের দরজা।বাড়িট বস্তির শেষেই।এদিকে কেউ আসে বলে মনে হয়না।
লোহার চেন দিয়ে বাঁধা দরজাটা।রঞ্জন দেখল লোহার চেনে তালা ঝুলছে।

রঞ্জন নাড়িয়ে শব্দ করল তবু।কোন উত্তর নেই।বুঝল নাঃ কেউ নেই।রঞ্জনের হাতে তখনও ব্যাগটা।মনে মনে ভাবল এই ব্যাগটা নিয়ে এখন কি করবে? কোনো মূল্যবান জিনিস নেই তো?
রঞ্জন থলেটা খুলে দেখল দুটো রঙের কৌটো, চারটে আঁকার ব্রাশ, একটা দেশী মদের বোতল, দুটো বিড়ির প্যাকেট, এক প্যাকেট কন্ডোম!
কন্ডোম কি কাজে লাগে কানু দা'র!রঞ্জন হাতে নেড়ে দেখছিল প্যাকেটটা।এই ব্র্যান্ডের কন্ডোম আগে দেখেনি রঞ্জন 'TheyFit G31'!
অবাক হল রঞ্জন।তবে কি কানু দা'র কোনো নারী ঘটিত সম্পর্ক আছে।রঞ্জন ফোন করল ছোট্টুকে।বলল কানু দা নেই বলে।
ছোট্টু বলল---ব্যাগটা তালে দরজার নীচ দিয়ে গলিয়ে দিন।তাই করল রঞ্জন।
(চলবে)
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
রঞ্জন শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল।সুছন্দা বলল---শুনছ?
---বলো।
--একটু এসো না।
রঞ্জন দেখল সুছন্দা সায়া--ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে আছে।কালো ব্লাউজ, লাল সায়া।রঞ্জন বলল---কি?
---পিঠে চুলকোচ্ছে দেখ না?
রঞ্জন সুছন্দার পিঠে ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে চুলকে দিল।সুছন্দার পিঠ মসৃন ত্বকত্বকে।ফর্সা পিঠে একটা লালচে তিল আছে।সুছন্দার গায়ে এরককম বেশ কিছু জায়গায় তিল আছে রঞ্জন জানে।সুছন্দার বাঁ স্তনে, পেটের ঠিক নাভির কাছে, পিঠে ও উরুতে তিল আছে।
রঞ্জন সুছন্দার কাঁধে চিবুক রেখে বলল---অনেক দিন আমাদের হয়নি কিন্তু..
সুছন্দা বলল---যত বয়স বাড়ছে তুমি পারভার্ট হয়ে যাচ্ছো!
---পারভার্টের কি হল? নিজের সুন্দরী বউকে আদর করব তাতে দোষের কি?
সুছন্দা শাড়ীটা পরতে পরতে বলল---বয়স হয়ে গেল সাঁইত্রিশ! এখন আবার সুন্দরী! গায়ে সর্বত্র মেদ জমে যাচ্ছে!
---তাতে তো তোমাকে আরো বেশ লাগে।
অর্ক ঢুকে পড়ে বলল--বাপি আসবার সময় আমার জন্য কিছু ব্রাশ আনতে হবে।
---ব্রাশ? কি কাজে লাগবে?
---কাল নতুন ড্রয়িং স্যারের কাছে যাবো।


শনিবার দিন রঞ্জন আর সুছন্দা এক সাথে অফিস থেকে ফেরে।রঞ্জন সুছন্দার অফিসের সামনে ওয়েট করে।সুছন্দা বেরিয়ে আসে।সংসারের কেনাকাটাটা ওরা ঐদিনের জন্য তুলে রাখে।
রঞ্জন বলল---গত মাসের চার তারিখ ট্রান্সফার।
সুছন্দা আর রঞ্জন পাশাপাশি হাঁটছিল।সুছন্দা বলল---কোথায় দিল?
---ভাইজাগ।
---বাব্বা এতদূর!
---যা হল ভালোই তো হল।ছুটি পেলে তুমি আর অর্ক চলে আসবে।
সুছন্দা বলল---মন্দের ভালো আরকি।

মলের মধ্যে রঞ্জনের কাজ হল সুছন্দার পিছু নেওয়া।যদিও সুছন্দা তেমন বেশি সময় নেয়না।রঞ্জন একটা টিশার্ট দেখে বলল---সুছন্দা দেখো, এটা নিলে কেমন হয়।
সুছন্দা বলল---এইটা তোমার আছে।
---এইটা নয়, একই রঙের আছে।
সুছন্দা বলল ওই দেখো---ওইটা তোমাকে মানাবে ভালো।
রঞ্জন দেখল একটা নেভি ব্লু টিশার্ট।রঞ্জন বলল---এমনিতেই আমাকে বুড়ো বলো, এখন এমন শার্ট নিতে বলছ?
সুছন্দা শার্টটার দাম দেখতে দেখতে বলল---বুড়োর মত আচরণ কর তাই বলি।শার্টটা নিয়ে নিল সুছন্দা।
মল থেকে বেরিয়ে রঞ্জন ওষুধের দোকানের সামনে দাড়িয়ে বলল---আজকে রাতে কিন্তু...
সুছন্দা বলল---সেদিনতো করলে?
---কবে? এক সপ্তাহ হল।
সুছন্দা হাসলন।রঞ্জন সুছন্দাকে রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড় করিয়ে রেখে ওষুধের দোকানে গেল।

সুছন্দা পিল নেয়না।রঞ্জন কন্ডোম ব্যবহার করে।ওষুধের দোকানে বেশ ভিড়।ভিড় একটু ফাঁকা হতেই রঞ্জন বলল--ডুরেক্স স্ট্যান্ডার্ড।
দোকানী চলে গেল।রঞ্জনের মনে পড়ল সেদিনের কথা।কানু দা'র কন্ডোমের ব্র্যান্ড ছিল 'TheyFit G31'।দোকানী ডুরেক্স স্ট্যান্ডার্ড এনে দিল।রঞ্জন বলল---'TheyFit G31' আছে?
দোকানী একবার রঞ্জনকে ভালো করে দেখল।বলল---আপনার কোনটা লাগবে ঠিক করে বলেন।
---আপনি দেখান না!
দোকানী বিরক্ত হল।'TheyFit G31' এর প্যাকেট এনে রাখল।রঞ্জন প্যাকেটের ওপর লেখাটা পড়ে চমকে গেল! অস্বাভাবিক বড় লিঙ্গ না হলে কেউ ব্যবহার করে না।মিনিমাম ৯.৪৫ ইঞ্চি হতেই হবে।দোকানী এবার হেসে বলল---স্যার এ সাইজ খুব কম লোকের লাগে।

রঞ্জন ভাবল কানু দা মানুষ নাকি ঘোড়া!সুছন্দা রঞ্জনকে হাসি হাসি মুখে দেখে বলল---কি হল হাসছো কেন?
---কিছু না, একটু রসিকতা হচ্ছিল দোকানির সাথে।
---পারো বটে তুমি, কন্ডোম কিনতে গিয়েও তামাশা করছ।
(চলবে)
 
  • Like
Reactions: Ex-fire

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
মাস শেষ হতেই রঞ্জনকে চলে যেতে হল।কিছু ফর্মালি কাজ আছে।সুছন্দা টিকটিক করে রঞ্জনের জিনিসপত্র গুছিয়ে দিল।রাত্রি ন'টায় ফ্লাইট।রঞ্জন বলল---এটা জিনিস দিচ্ছ কেন? ওখানে কিনতে পাওয়া যায় না নাকি?
---বাইরে কোথায় কি ফালতু জিনিস কিনবে কেন?

বাবা চলে যেতে অর্কের মনটা খারাপ হয়ে গেল।সুছন্দা বলল---অর্ক ঘুমিয়ে পড়।কাল রবিবার আঁকার নতুন স্যারের কাছে যেতে হবে মনে আছে তো?

খুব ভোরে অর্ককে তুলে দিল সুছন্দা।অর্ক ব্রাশ করে আসতেই সুছন্দা বলল---তাড়াতাড়ি জলখাবার খেয়ে নেয়ে।তোকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বাড়ী ফিরতে হবে।অনেক কাজ আছে।কাজের মেয়েটা আজ আসবে না এমনিতে।

অর্ক রেডি হয়ে দেখল মাও রেডি।সুছন্দা একটা সবুজ রঙের তাঁত শাড়ি আর ছাইরঙা ব্লাউজ পরেছে।হাতে ঘড়ি বাঁধতে বাঁধতে বলল---সব কিছু ঠিকঠাক নিয়েছিস?
অর্ক মাথা নাড়ল।
সুছন্দা বাড়ী থেকে বেরিয়ে একটা অটোকে দাঁড় করালো।বলল---বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেবেন।

অর্ক দেখল মাত্র পাঁচ মিনিট লাগল অটোতে।হেঁটেও আসা যায়।একটা মোরাম রাস্তা দিয়ে মাকে এগিয়ে যেতে দেখে অর্কও পিছু নিল।জায়গাটা বেশ ফাঁকা।কিছুটা যাবার পর।অর্ক দেখল একটা পিচ রাস্তায় উঠল।পিচ রাস্তাটা দেখে অর্ক চিনতে পারল এটা বস্তি যাবার রাস্তাটা শেষ হয়েছে।অর্ক একবার বাপির সঙ্গে বস্তিতে এসেছিল।তাদের বাড়ীর রঙমিস্ত্রী যে লোকটা আসতো তার বাড়ীতে।
পিচরাস্তার শেষমাথাতেই বাড়িটা।রাস্তার গায়ে ইটের দেওয়ালের বাড়ী।রাস্তা সংলগ্নই টিনের দরজা।
দরজাটা সুছন্দা খুলে বলল---ভেতরে আয়।অর্ক ভেতরে ঢুকে দেখল।সামনে একটা টিউওয়েল।তার মুখেই কাঠের দরজা।
সুছন্দা দরজাটায় শব্দ করল।প্রায় দু-তিন মিনিট পর ক্যাঁচ করে শব্দ হল দরজায়।অর্ক দেখল একটা লোক খালি গায় দাঁড়িয়ে।লোকটা বেশ লম্বা হলেও পাতলা।চুলগুলো এলোমেলো উষ্কখুস্ক।দীর্ঘদিন সাবান না পড়লে যেমন লালচে হয় তেমন।দাড়ি গোঁফ সবই খোঁচা খোঁচা।মোটা ঠোঁট দুটোর কোন ক্ষয়ে গেছে।রাগি গম্ভীর মুখ।গায়ে ভীষন ঘাম।গায়ের রঙ কালো নয়।বরং রোদে পোড়া।পরনে ময়লা লুঙ্গি।হাতে জ্বলছে একটা বিড়ি।

সুছন্দা বলল---এই যে তোমার ছাত্র কানু দা!!!!
অর্ককে প্রনাম করতে ইশারা করল সুছন্দা।অর্ক মায়ের কথা মত প্রনাম করল।কিন্তু লোকটার কোনো অভিব্যপ্তি নেই।
অর্কর কেমন অদ্ভুত লাগছিল লোকটাকে।ভেতরে ঢুকে দেখল মুখেই একটা সিঁড়ি।সিঁড়িতে কোনো প্লাস্টার নেই।আর নিচে ভাঙা চোরা যত জিনিসপত্র রাখা।একটা ভ্যাপসা গুমোট মত আবহাওয়া।
নিচেই একটা ঘরে নিয়ে গেল লোকটা।সুছন্দা অর্ককে একটা চেয়ারে বসতে বলল।অর্ক দেখল চারদিকে ল্যান্ডস্কেপ, পোট্রেট আঁকা।এই ঘরটাও যত্রতত্র জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

সুছন্দা বলল---তাহলে আসি।একা যেতে পারবি তো?
অর্ক মাথা নাড়ল মায়ের কথায় সায় দিয়ে।
মা চলে যাবার পর অর্ক তার ড্রয়িং পেপার, ব্রাশ বের করল।অর্ক দেখল স্যার একটা ব্ল্যাংক পোট্রেট আনলেন।খুব গম্ভীর গলায় বললেন---তোর নাম কি?
---অর্ক মৈত্র!
---বাপের নাম কি? কথা বলতে বলতেই লোকটা ঝটঝট করে পেনশিল স্কেচ করে যাচ্ছেন।
অর্ক লোকটার মুখে 'বাপ' কথাটা শুনে খারাপ লাগল।মুখের উপর বলল---বাপ না বাপি!
লোকটা বিচ্ছিরি ভাবে বলল---ওই ওই হল! শালা ইংরেজের বাচ্চা হয়েছ! কি নাম তোর বাপির?
অর্ক ভাবলো এ কেমন স্যার! মুখের ভাষা এত খারাপ কেন!
----রঞ্জন মৈত্র।
লোকটা এবার বলল---ঠাকুর্দার নাম কি?
অর্ক বলল---বিমল মৈত্র।
লোকটা কোনো কথা আর বলল না।এঁকে যাচ্ছে এক মনে।অর্ক দেখছি লোকটা যতই খারাপ হোক।আঁকে দারুন।কিন্তু সে এখান থেকে কিছুই শিখতে পারছে না।
সে তাই বলল---স্যার আমি তো এসব শিখিনি।
গলা খাঁকারি দিয়ে লোকটা বলল---শিখিসনি শিখে যাবি!দে পেন্সিল দে।

অর্ক পেন্সিল দিল।লোকটা একটা বাঁক নিয়ে ময়ূর এঁকে দিল।এই ময়ূর একটা আর্ট ফর্মে আঁকা।অর্কও নকল করে আঁকল।দেখল বেশ তো হল।
লোকটা এবার বলল---কিরে বড়লোকের নাতি? হল?
অর্ক মাথা নাড়ল।লোকটাকে সত্যিই তার পছন্দ হচ্ছে না।
এবার লোকটা আবার একটা টার্ন নিল।একটা হরিণ হয়ে গেল।অর্ক চেষ্টা করল।হল না।
লোকটা হলদে দাঁত বের করে খিঁচিয়ে বলল---বাঞ্চোদ! বাল ছিঁড়তে এসেছো এখানে?
অর্ক ভয় পেয়ে গেল।এমন অশ্লীল কথা তাকে কেউ বলবে সে কল্পনাও করতে পারেনি।সে মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে এমন নোংরা কথা শুনে সে যেমন ঘৃণা বোধ করছিল তেমন লোকটার মুখ ভঙ্গি দেখে ভয় পেল।
লোকটা এবার ওর হাত থেকে পেন্সিল ছাড়িয়ে আবার আঁক কষল।অর্কও এবার করল।আস্তে আস্তে হরিণটাও গড়ে উঠল।
এবার বলল---বল দেখি ময়ূর আর ময়ূরী চিনবি কি করে?
অর্ক ভয়ে ভয়ে বলল--ময়ূরের পেখম আছে! ময়ূরীর পেখম নেই!
---হুম্ম।এইবার দেখ! বলে একটা ময়ূরী আঁকল।
এবার বলল---বলতো মানুষ আর মানুষী চিনবি কি করে?
অর্ক কিছু বলতে পারল না।আসলে সে কি বলবে বুঝতে পাচ্ছিল না।
লোকটা বিচ্ছিরি করে অশালীন হাসি হাসল।---তোর বাপ আর মাকে চিনিস তো?
অর্ক চুপ করে বসে আছে।লোকটা ধমক দিয়ে বলল---কি হল বল!
অর্ক চমকে উঠল।সে ভয়ে কাঁপছে।বলল---চিনি।
---হুম।কি করে চিনলি?
অর্ক চুপ।লোকটা এসে অর্কের মাথায় টোকা মারল।বলল---পরের বার দেখে আসিস।তারপর বলিস তোর মা আর বাপের ফারাক কি কি আছে!

অর্ক বড় রাস্তায় এসে অটো ধরল।বাড়ী ফিরে দেখল মা কোমরে শাড়ি বেঁধে ঝুল ঝাড়ছে।অর্ককে দেখে বলল---কি রে ক্লাস ঠিকঠাক হল?
অর্ক মাথা নাড়ল।
*******
ছোট থেকে বাবাকে পেয়েছে অর্ক।বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় তার বেশ বিষন্ন লাগে।তার স্কুল খুলে গেছে।
সে খুব একা বোধ করছে।ঘড়ির দিকে তাকালো সে।রাত্রি সাড়ে আটটা।আজ শনিবার তবুও তার মায়ের আসতে দেরী হচ্ছে।সুছন্দার আসতে এখন প্রতিদিন আরো দেরী হয়।অর্ক বই পত্র গুছিয়ে উঠল।টিভিটা চালিয়ে সে কিছু পুরোনো ম্যাচের ক্লিপিংস দেখতে লাগল।
সাড়ে ন'টার সময় সুছন্দা ঢুকল।ঢুকেই বলল---কি রে পড়া হয়ে গেছে?
---হ্যা মা।এত দেরী হল কেন মা?
সুছন্দা শাড়ি বদল করতে করতে বলল---এখন অফিসের খুব কাজের চাপ রে!

বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো সুছন্দা।বলল---রাতে কি খাবি বল?
---তুমি যা চাইবে করো।

সুছন্দা রান্না ঘরে ঢুকে গেল।প্রতিদিন অর্কর যেন আরো বেশি একা মনে হচ্ছে।স্কুলের বন্ধুদের সাথে তার স্কুলেই দেখা হয়।টিউশন তার সপ্তাহে তিন দিন থাকে।দুদিন সকালে তার বাড়ীতে সায়েন্সের স্যার আসেন।তিনদিন বিকেলে আসেন আর্টসের স্যার।সবই বাড়ীতে, ফলে স্কুলের বন্ধুদের সাথে তার আর দেখা হওয়ার সুযোগ নেই।

সে কখনো ভিডিও গেমস কখনো ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে বসে।মনে পড়ল কাল রবিবার, আবার সেই আঁকার স্যারের কাছে যেতে হবে।ভয়ে তার বুক ঢিপ ঢিপ করে উঠল।

সুছন্দা রান্না করে ডাইনিং টেবিলে খাবার বেড়ে ডাকল---অর্ক চলে আয়।

পরদিন সকালে সুছন্দা তুলে দিল অর্ককে---আঁকা স্যারের কাছে যেতে হবে যে?

অর্ক বলল---মা, একটু ঘুমোই না, আজ তো রবিবার।
---কত ঘুমোবি, ওঠ!
অর্ক ব্রাশ করে, জলখাবার খেয়ে রেডি হয়ে পড়ল।আঁকা স্যারের বাড়ী পৌঁছে দেখল সেই টিনের দরজাটা বন্ধ।না, কোনো তালা দেওয়া নেই।ভেতরে হাত গলিয়ে খুলে দেওয়া যায়।অর্ক দরজাটা খুলে কাঠের দরজায় নক করল।

কিছুক্ষণ পর লোকটা এসে দরজা খুলল।সেই গম্ভীর মুখ, নোংরা লম্বা পাতলা ঘর্মাক্ত চেহারা!
অর্কর দেখলেই ভয় করে।ভেতরে ঢুকে বসাবার কিছুক্ষণ পর আঁকার স্যার এলো।এসেই বলল---কি রে!বাপ আর মায়ের ফারাক দেখে এসেছিস?
অর্ক ভয়ে ভয়ে বলল--বাবা খেতে ভালো বাসে, মা বই পড়তে, বাবা ব্যাঙ্কে চাকরী করে, মা পোস্ট অফিসে।
---দূর বাঁড়া! লোকটা খেঁকিয়ে উঠল।বলল---বাবা আর মায়ের ছবি আঁকতে দিলে তুই কি করবি? একটা দুপেয়ে জন্তু ব্যাঙ্কে বসে গিলছে আর একটা দু পেয়ে জন্তু রবীন্দ্রনাথ পড়ছে?
অর্ক চুপ করে গেল।লোকটার গা দিয়ে তীব্র ঘামের গন্ধ! অর্ক মনে মনে ভাবল স্নান করেনা নাকি!
লোকটা বলল---তোর বাপের দুধ নেই, তোর মায়ের দুধ আছে, তার মানে পুরুষ আঁকলে বুক সমান হবে আর নারী আঁকলে ভারী দুটো বুক হবে।
লোকটা এঁকে যাচ্ছে পোট্রেটে।একটা নগ্ন নারী হাঁসের মত ডানা মেলে আছে।তার কেবল ঊর্ধাঙ্গ নগ্ন, নিম্নাঙ্গ হাঁসের মত।দুটো ডানা মেলে আছে, আর একটা পুরুষ যে সেটা ধরে ফেলবার চেষ্টা করছে।
অর্ক তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে।খুব নিখুঁত আঁকা হলেও ছবিটার মাথা মুন্ডু সে বুঝে উঠতে পারল না।
লোকটা এবার ঘুরে পড়ে বলল--ফ্যালফেলিয়ে দেখছিস কি? যেন তোর মার দুধ নেই! দুধ খাসনি তুই?
অর্ক লজ্জায় ঘৃণায় লাল হয়ে উঠল।লোকটা বলল--- যেটা আঁকলাম আঁক।
অর্ক চেষ্টা করল।পারফেক্ট হল না।অর্ক জানে এবার সে গালি খাবে।লোকটা হেসে উঠল বলল---দুধ আঁকতে লজ্জা শালা! মায়ের দুধ খাসনি? না কি তোর বাপ সব খেয়ে ফেলত তোকে দিত না।
অর্ক চুপটি করে বসে থাকল।লোকটা এবার একটা শেপ দিয়ে দেখালো।অর্ক অনুকরণ করল।দেখল এবার হচ্ছে।

লোকটা হেসে উঠল।সেই অশ্লীল হাসি।একটা বিড়ি ধরিয়ে বলল---তোর মা কাল বলল তুই খুব ওবিডিয়েন্ট ছেলে সত্যিই তুই খুব শান্ত।

অর্ক ভাবল কাল মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল স্যারের।কই মা বলেনিতো।লোকটা এবার একটু নরম গলায় বলল---তুই পারবি।চেষ্টা কর পারবি।তোর মা আজ এলে তোর প্রশংসা করে দেব।

অর্কের কানে লোকটার প্রশংসা ঢুকছে না।কেবল সে ভাবছে মা কোথায় আসবে? মা কি এখানে আসবে?
অর্ক আবার আঁকায় মন দিল।বলল---স্যার দেখুন হয়েছে?
লোকটা বিড়ির টুকরোটা ঐখানেই ফেলে দিয়েই বলল---হয়েছে, তবে দুধ গুলো ছোট হয়ে গেল! তুই তোর মায়ের দুধ খাসনি বোধ হয়।আজ তোর মাকে জিজ্ঞেস করব তার বুকের দুধ যেত কোথায়?
অর্ক কিছু বলল না।আঁকার ক্লাস শেষ করে সে যখন বাড়ী ফিরল দেখল মা স্নানে গেছে।

অর্কের সত্যি এই স্যারকে একদম ভাল্লাগেনা।সে রবিবার আসবে ভাবলেই ভয় পায়।

মা স্নান করে বেরোতেই সে বলল---মা তুমি কাল স্যারের বাড়ী গেছিলে?
সুছন্দা ভেজা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল---কোন স্যারের বাড়ী?
---আঁকা স্যার?
---কই না তো।
অর্ক ভাবল তাহলে কি স্যার ভুল বলল।সুছন্দা বলল--কেন? কানু দা কিছু বলছিল নাকি?
---হ্যা, বললেন তুমি এসছিলে।
সুছন্দা চুল ঝাড়া থামিয়ে বলল---আর কি বলছিল?
অর্ক গালি গুলো বলতে পারল না।বলল--তুমি আমার প্রশংসা করেছ।
সুছন্দা হাসল।বলল---লোকের কাছে তোর প্রশংসা করি বলে তুই আবার মাথায় উঠে যাসনা।
অর্ক কিছু বলল না।নিজের ঘরে ঢুকে গেল।

স্কুলবাস থেকে নেমে নিজেই বাড়ীর চাবি খুলে ঘরে ঢোকে অর্ক।তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি থাকে।ব্যাগের একের পর এক চেইন খুলে দেখল চাবি নেই।বুঝল সে চাবি আজ বাড়ী থেকে নেয়নি।অর্ক বেরোনোর পর সুছন্দা অফিস বেরোয়।সুছন্দাই মনে করে অর্ককে চাবি দিয়ে দেয়।

অর্ক বাড়ীর গ্রীল খুলে তাদের ছোট্ট বারান্দায় বসে রইল।অর্ক জানে তার মা ফিরতে ফিরতে সেই রাত্রি ন'টা বাজবে।তারচেয়ে বরং সে তার বন্ধু শান্তনুর বাড়ী চলে যাওয়াটাই ঠিক মনে করল।

শান্তনুদের বাড়ীতে কুকুর আছে।অর্কের আবার কুকুরের ভয়।অর্ক বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।শান্তনুর মা সিঁড়ি দিয়ে নেমে বললেন---ও মা! অর্ক? এই টুবাই অর্ক এসছে।
শান্তনুর ডাকনাম টুবাই।শান্তনু নেমে এলো।তার পিছু পিছু জার্মান শেফার্ডটাও নেমে এলো।শান্তনুর মা কুকুরটাকে নিয়ন্ত্রন করে নিয়ে গেলেন।অর্ক নিশ্চিন্ত হল।

শান্তনু বলল---কি রে? তুই বাড়ী যাসনি।
---না রে, আমি আজ চাবি নিয়ে যেতে ভুলে গেছি।মা অফিস থেকে ফিরতে দেরী হবে।
শান্তনু বলল---ভালোই হল, আমি ভাবছিলাম আজকে গেম স্টোরে যাবো।চল দুজনে যাওয়া যাবে।

অর্ক আর শান্তনু বেরোলো।অর্ক বাপিকে নিয়ে মাঝে মধ্যেই গেম স্টোরে এসছে।অর্কের মা আবার গেম টেম পছন্দ করে না।তাই সুছন্দা রঞ্জনকে বলত---এইসব কিনে দিয়ে ছেলেটার ফিউচার নষ্ট করছ।তবু রঞ্জন কিনে দিত।

গেম স্টোরে গিয়ে শান্তনু এক একটা গেমসের প্রাইস চেক করছিল।অর্ক দেখছিল তার এসব আছে।এখন পছন্দ হলেও সে কিনতে পারবে না।এখন তার কাছে পয়সা নেই।পরে মাকে নিয়ে আসবে ঠিক করল সে।


গেমস্টোর থেকে বেরিয়ে অর্ক জিজ্ঞেস করল---ক'টা বাজেরে?
শান্তনুর হাতে রিস্টওয়াচ আছে।সে দেখে বলল---ছ'দশ।
অর্ক মনে মনে ভাবল তার মা'র ফিরতে এখনো অনেক দেরী।

শান্তনু বলল---ফুচকা খাবি?
ফুচকা দোকানটা রাস্তার ওপারে।পারাপার হবে অর্ক ঠিক সেই সময় দেখল অনাদি জেঠুকে।অনাদি রঞ্জন দাস সুছন্দার কলিগ।অর্ক বলল---আরে অনাদি জেঠু ভালো আছেন?
---আরে তুমি সুছন্দার ছেলে না?স্কুল ড্রেসে?
---আমি বাড়ীর চাবি নিতে ভুলে গেছি।মা অফিস থেকে না ফিরলে...তাই বন্ধুর সঙ্গে এসছি।


অনাদিরঞ্জন বললেন---তবে জলদি যাও।তোমার মা এতক্ষনে বাড়ী পৌঁছে গেছেন।টেনশন করছেন হয়ত।

শান্তনু বলল---এই রে কাকিমা এসে গেছে তো।আর ফুচকা খাওয়া হবে না।

অর্ক বলল---অন্য একদিন হবে।

অর্ক বাড়ী ফিরে দেখল না মা ফেরেনি।লোহার গেট খুলে প্রায় দশ মিনিট বসে রইল সে বাড়ীর বাগানে।তারপর তার মনে পড়ল--আরে! স্যার বলেছিলেন মা ওখানে যাবে।
অর্ক ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে এলো।একটা অটোকে দাঁড় করিয়ে বলল---বড় রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দেবেন।
বড় রাস্তায় নেমে সে মোরাম রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগল।পিচ রাস্তায় উঠেই স্যারের দোতলা ইটের ভাঙাচোরা বাড়ীর টিনের দরজায় কড়া নাড়ল।
কোনো সাড়াশব্দ নেই!
আবার নাড়ল।কিছুক্ষণ পর ভেতরে কাঠের দরজা খোলার শব্দ পেল অর্ক।তারপর টিনের দরজা খুলে আঁকার স্যার বললেন---কি রে তুই!
অর্ক কেমন এই লোকটাকে দেখলেই ভয়ে গুটিয়ে যায়।লোকটার সারা গা ঘামে চপচপ করছে।যেন কোনো ভারী কাজ করছিল।
অর্ক বলল---স্যার! মা আছে?
---আছে।কি দরকার?
অর্ক এমন জবাবে অবাক হল।তার মায়ের সাথে তার কি দরকার সেটা তাকে বলতে হবে।
লোকটার গলাটাই বেশ রূঢ়।অর্ক বলল---মাকে ডেকে দিন।
লোকটা কি একটা ভাবল।বলল---দাঁড়া ডেকে দিচ্ছি।বলেই টিনের দরজাটা অর্কের মুখের সামনে এঁটে দিল।অর্ক শব্দ পেল কাঠের দরজাটাও লেগে যাবার।

অর্ক চেয়েছিল ভেতরে গিয়ে মাকে ডেকে আনবে।কিন্তু লোকটা এভাবে দরজা বন্ধ করে চলে যাবে ভাবতে পারেনি।

অর্ক রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।কি অদ্ভুত মা এতো দেরী করছে কেন?
অর্ক দাঁড়িয়ে রইল।মায়ের কি কিছু জরুরী কাজ আছে, তাই দেরী হচ্ছে? অর্ক নানাবিধ ভাবল।
অবশেষে সে ভেতরে হাত গলিয়ে টিনের দরজাটা খুলে ফেলল।ভেতরে ঢুকে দেখল কাঠের দরজাটা বন্ধ।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল সে।বাইরে বেরিয়ে এলো।রাস্তা দিয়ে একটা সাতাশ আঠাশ বছরের যুবক যাচ্ছে।বস্তির ছেলে বোধ হয়।লুঙ্গি পরা, হাতে মোবাইলে ভোজপুরি গান শুনতে শুনতে চলেছে।
অর্ক বলল---দাদা ক'টা বাজে?
ছেলেটা মোবাইলের টাইম দেখে বলল---সাতটা কুড়ি।
অর্ক বুঝল পাক্কা এক ঘন্টা সে দাঁড়িয়ে আছে।আর অপেক্ষা না করে সে বাড়ীর পথে রওনা দিল।

তেষ্টা পাচ্ছে তার।বাড়ীর বাগানের কাছে বসে সে ব্যাগ থেকে জলের বোতল বার করল।ঢকঢক করে জল খেয়ে ব্যাগে বোতলটা রাখতে গিয়ে দেখল ওই তো চাবি!
নিজেকে দূষতে থাকল সে।এমনিই তার ধকল গেল।দরজা খুলে সোজা ড্রয়িং রুমের সোফায় আছড়ে পড়ল সে।

প্রতিদিনের মত ন'টার পর হাজির হল সুছন্দা।অর্কর ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকাডাকিতে।---ওঠ বাবা, খাবি ওঠ!
অর্ক বুঝল সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছিল।তার মা এসে আর ডাকেনি।খেতে বসে অর্ক ভাবল মাকে বলবে স্যারের বাড়ীতে গেলাম, তুমি এত দেরী করলে চলে এলাম।তারপরে তার মনে হল, তাহলে তার মা'ই বলত চলে গেলি কেন? তবে কি স্যার মাকে জানায়নি? অর্কের এমনিতেই লোকটাকে পছন্দ নয়, তাই সে একদম নিশ্চিত হল লোকটা মাকে জানায়নি।তা নাহলে মা নিশ্চিত এত দেরী করত না।আর কাজ থাকলে বেরিয়ে বলত দেরী হবে বলে।কিন্তু স্যারের বাড়ীতে মা'র কি কাজ থাকে।একবার জিজ্ঞেস করবে?

অর্ক কোনোদিন বাপি-মায়ের অফিস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো প্ৰশ্ন করেনি।এটা তার অভ্যাসের বাইরে।তাই সে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করল না।কিন্তু প্ৰশ্নটা তার মনের মধ্যে থেকে গেল।
(চলবে)
 

Manali Bose

Active Member
1,461
2,135
159
পুরো সপ্তাহটাই একা একা কাটল যেন অর্কর সুছন্দার প্রতিদিনই রাত্রি ন'টা বাজে ফিরতে।অর্কের সাথে সুছন্দার দেখা হয় সেই সকালে আর রাত্রি ন'টার পর।অর্কর মন খারাপ করে।রবিবারটার জন্য সে অধীর অপেক্ষায় থাকে।সকালে আঁকা স্যারের কড়া চাহুনি আর অশ্লীলতা পেরোতে পারলেই বাকি দিনটা তার বেশ কাটে।মায়ের সঙ্গে সারাদিন সময় কাটে তার।বাপিকে খুব মিস করে সে

রঞ্জন ফোন করে কখনো সকালে কখনো সন্ধ্যে ছ'টায়।সকালে সুছন্দাই ধরে, সন্ধ্যেতে করলে অর্ক ধরে।

অর্ক বাপির ফোন এলেই আনন্দে মুখিয়ে ওঠে।শনিবার দিন স্কুল থেকে ফিরে অর্ক জাস্ট টিভি দেখছিল তখনই সায়েন্সের স্যার এসে পৌঁছান।স্যার ছাড়েন আটটার দিকে।অর্ক একটু খোলা ছাদে ঘুরে আসে।একতলার কেবল মাত্র সিঁড়ি আর গেটের মুখের লাইটটা চালু রেখে বাকি গুলো বন্ধ রেখে সে দোতলায় নিজের বেডরুমে শুয়ে শুয়ে ভিডিও গেমস খেলতে থাকে।ঘড়ির দিকে তাকায় দশটা! সুছন্দা তখনও বাড়ী ফেরেনি।
অর্ক ভাবে মা'তো এতো দেরী করে না!অর্ক বাড়ীর ল্যান্ড ফোন থেকে মায়ের মোবাইলে ফোন করতে যায় ঠিক সময়ে অর্ক নীচের গ্রীল খোলার শব্দ পায়।সুছন্দা সিঁড়ি দিয়ে তড়বড় করে উঠে আসে।
অর্ক প্ৰশ্ন করে---মা আজকে প্রচুর লেট!
সুছন্দা হাসি মুখে বলল---সরি বাবু!
সুছন্দা হাতের ব্যাগটা নিজের বেডরুমের বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়।অর্কর নাকে একটা তীব্র বিদঘুটে গন্ধ আসে গন্ধটা চেনা চেনা লাগে।।

খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যায় অর্ক।পরদিন সে নিয়মমাফিক সকালে উঠে পড়ে।আজ তাকে সুছন্দাকে ডেকে দিতে হয়না।বরং সে উঠে দেখে মা ঘুমোচ্ছে।সুছন্দা সচরাচর এতক্ষণ ঘুমোয় না।অর্ক উঠে বলে--মা ওঠো আঁকার স্যারের বাড়ী যেতে হবে, ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দাও।
সুছন্দা বলল---বাবু, বিস্কুট, কেক আছে খেয়ে নে।আমার কোমরটা বেশ ব্যথা।

অর্ক জানে মায়ের মাঝে মধ্যে কোমরে ব্যথা হয়।তাই সে নিজে খেয়ে বেরিয়ে পড়ল।স্যারের বাড়ী এসে টিনের দরজা সে হাত ঢুকিয়ে খুলে দেয়।কাঠের দরজায় নক করে।স্যার এসে দরজা খুলতেই তীব্র ঘামের গন্ধটা তার নাকে ঠেকে।কাল রাতে মা ঢুকতে সে এই গন্ধটাই পেয়েছিল।

অর্ক ভাবে এ বাড়ীটা বড় নোংরা তাই কি এই বাড়ীতে কাজে এসে মায়ের গায়ের সাথে এই গন্ধটা যায়।কিন্তু এই গন্ধটা তো বাড়ীতে কোথাও নেই! সে একটা ভ্যাপসা গন্ধ পায় বটে, সেটা গুমোট হওয়ার জন্য।কিন্তু স্যার যত কাছে আসে সেই তীব্র ঘাম গন্ধ তার নাকে ঠেকে।বুঝতে পারে এটা স্যারের গায়ের নোংরা গন্ধ!
অর্ক একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।লোকটা গলা খেঁকিয়ে ওঠে--কি রে! সোমবার এলি তোর মাকে খুঁজে পালিয়ে গেলি কেন?
---স্যার, আমি তো অপেক্ষা করলাম।কিন্তু মা...!
---কোনো কিন্তু না...আর কোনোদিন আসবি না এখানে।বুঝলি?
---ঠিক আছে স্যার!
---আর তোর মায়ের এখানে অনেক কাজ থাকে।বিরক্ত করতে আসবিনা।
অর্ক মাথা নাড়ল।তার যেন উৎসাহ বেড়ে গেল মায়ের কি কাজ থাকে জানার জন্য।

আঁকতে দিয়ে লোকটা মাঝে মধ্যে ছাদে উঠে যায়।মিনিট কুড়ি পর নামে সেই সুযোগে অর্ক এই বিদঘুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।চারদিকে ভাঙা চোরা জিনিস যেখানে সেখানে বিড়ির টুকরো, কিছু প্লাস্টিকের বোতলও গড়াগড়ি খাচ্ছে! অর্ক একটা বোতল তুলে পড়বার চেষ্টা করে।বুঝতে পারে এগুলি মদের বোতল! স্যার কি মদ খায়? এমন নোংরা জায়গায় মা আসে কেন?
পেছনের দিকে একটা দেওয়াল ভাঙা দেখা যায়।অর্ক সেখানটা পৌঁছে দেখে একটা মানুষ ধেপে অনায়াসে গলতে পারবে।অর্ক সেদিক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে আগাছা জমা হয়ে আছে বাড়ীর সামনের টিউওয়েলটা বাঁ দিকে দেখা যাচ্ছে!
মাথায় একটা আইডিয়া ঘুরপাক খায়।চুপচাপ আবার ছবি আঁকার জায়গায় চলে আসে।

সোমবার সুছন্দা ছেলেকে বাসে তুলে অফিস বেরিয়ে যায়।
অর্কের স্কুল ছুটি হয় সাড়ে চারটায়।বাড়ী এসে পৌঁছায় পাঁচটায়।বাড়ীতে টিফিন করে সে ভিডিও গেমস নিয়ে বসে।তার কম্পিউটারটা কিছুদিন হল বেশ ডিস্টার্ব করছে।সুছন্দা বলেছে পরের সপ্তাহে হার্ডওয়ার সারাইয়ের লোক ডাকবে।
বারবার কি বোর্ডে এন্টার প্রেস করেও যখন কিছু হল না তখন অর্ক বিরক্ত হয়ে সুইচ অফ করে দিল।
ঘড়িতে দেখল ছ'টা কুড়ি।কাল অনাদি জেঠুর সঙ্গে ঠিক এসময়তেই দেখা হয়েছিল।তার মানে মায়ের অফিস এসময়ই ছুটি হয়।অর্ক বাড়ীর দরজা লক করে বেরিয়ে পড়ল।
একটা অটো পেয়ে উঠে পড়ল সে।বড় রাস্তা ধরে হেঁটে হেঁটে এসে পৌঁছল স্যারের বাড়ীতে।টিনের দরজাটা বন্ধ।
হাত গলিয়ে খুলে ফেলল অর্ক।ভেতরে ঢুকে দেখল কাঠের দরজাও বন্ধ।টিউওয়েল পেরিয়ে ঝোপটার সম্মুখীন হল সে।
ঝোপের ওপাশে গিয়ে দেখল ওই ভাঙা দেওয়ালটা।প্রথমে বাম পা'তা গলিয়ে দিল সে।তারপর নিজে ঢুকে পড়ে বাম পা'টা গলিয়ে নিল।প্যান্টে ধুলো লেগে গেল তার।ভেতরে সেই গুমোট গন্ধ আর অন্ধকার।মনে হচ্ছে যেন কেউ নেই।

অর্ক নিঃশব্দে সিঁড়ির কাছে এসে বুঝতে পারল দোতলা থেকে একটা হাল্কা আলো দেখা যাচ্ছে।অর্ক ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে সিঁড়ি দিয়ে উঠল।
তার ভীষন ভয় করছে।এমনিতেই সে লোকটাকে ভীষন ভয় পায়।আস্তে করে ছাদে উঠে দেখল একটা ঘরের বন্ধ দরজার তলা দিয়ে সরু আলো এসে পড়ছে।
এটা বাল্বের আলো নয়, ক্ষীন মোমবাতির আলো বোধ হয়।অর্ক যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতে এক পা এক পা করে চলে এলো।
বন্ধ দরজার সামনে এসে চমকে গেল।ভেতরে একটা অনবরত ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দ হচ্ছে।শব্দটা এতই জোরে যে সিঁড়িতে উঠবার সময়ও অর্ক শুনতে পেয়েছে।অর্কর মনে পড়ল আলিপুরদুয়ারের তার ঠাকুর্দার বাড়ীর একটা পুরোনো খাটে উঠলেই এমন শব্দ হত।
শব্দটা থামছে না।এক নাগাড়ে ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর করে যাচ্ছে।অর্ক যখন ভাবছে কিন্তু মা কোথায়? ঠিক তখনই একটা গোঙ্গানির শব্দ উঠে থেমে গেল।অর্ক কান খাড়া করে দরজায় কান পাতল।অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে...ঠাপ! ঠাপ! ঠাপ! আর ফোঁস ফাঁস শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।এবার অর্ক একটা মৃদু গলার স্বর পেল গুনগুন করে।তার মধ্যে 'কানু দা' কথাটা কানে এলো অর্কের।অর্ক বুঝতে পারল এটা তার মায়ের গলা।তারমানে মা আর স্যার এইঘরে আছে।কিন্তু এই গরমে দরজা লাগিয়ে মোমবাতি জ্বেলে কি করছে।এই আলোতে তো কিছু পড়া যায় না!

অর্ক এবার শুনতে পাচ্ছে ঠাপ ঠাপ শব্দটা আরো জোরে শুরু হল! আর খাটের ক্যাঁচোর ক্যাঁচোর শব্দও বহুগুন বেড়ে গেল!
উমমমম উঃ উম্ম! মায়ের গোঙানি কানে এলো অর্কর।কি হচ্ছে সে ঠিক বুঝতে পারছে না।এবার কপট ছিনালি ঢঙে সুছন্দার গলায়---কানু দাঃ শব্দটা জোরে শোনা গেল! অর্ক ভয় পেয়ে গেল! মা এমন কেন করছে।স্যার লোকটাকে তার একেবারেই ভালো লাগে না।মাকে কোনো কষ্ট দিচ্ছে না তো!
অর্ক ঠাপ ঠাপ আর খাটের ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ পেয়েই চলেছে থামার লক্ষণ নেই।অর্ক ভাবল সে কি অপেক্ষা করবে।ঠিক সেসময় শব্দ থেমে গেল।

অর্ক ভয় পেয়ে গেল তড়িঘড়ি সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।সিঁড়ির তলায় লুকিয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর আবার দরজা লেগে গেল।অর্ক আস্তে আস্তে উঠে এলো আবার।কি বিচ্ছিরি নোংরা গন্ধ একটা!ঠিক ঝাঁঝালো গন্ধ, কিংবা নোনা মাছ পচে গেলে যেমন হয়!
অর্ক বুঝতে পারছে না গন্ধটা একটু আগে ছিল না, কোত্থেকে এলো? অর্ক এবার মায়ের হাসির গলা পাচ্ছে।গুরুগম্ভীর ভাবে স্যারের গলাও পাচ্ছে।দুজনে কি কথা বলছে বুঝতে পারল না।
দরজার কাছে আবার শব্দ হতেই অর্ক পড়িমরি করে নিচে নেমে এলো।আর দাঁড়ালো না সে।ভাঙা দেওয়ালটা দিয়ে বেরিয়ে গেল।

বাড়ী ফিরে এসে সে নিশ্চিন্ত হল।ন'টা দশ নাগাদ সুছন্দা ফিরল।অর্ক মাকে কিছু বলল না।
সুছন্দার অফিস থেকে ফিরে স্নানে যাওয়া অভ্যাস।স্নান করে একটা হাল্কা নাইটি পরে বেরোলো।বলল--বাবু, আজ আর রান্না করব না, তোর ফেভারিট খাবার এনেছি?
----কি মা? বিরিয়ানি?
সুছন্দা হাসল।অর্ক আনন্দে লাফিয়ে উঠল।

পরদিন অর্কের সকালে আর্টসের টিউশন মাস্টার পড়াতে এসেছিলেন।সুছন্দা রান্না ঘরে ছিল।অর্ক পড়া শেষ করে বেরোতে সুছন্দা বলল---তোর বাপি ফোন করেছে কথা বলবে...
অর্ক দেখল রান্না ঘরে মায়ের কানে ফোন ধরা।অর্ক বাপির গলা পেয়ে আনন্দ আত্মহারা।
---কি রে আজ তোর স্কুল নেই।
---আছে তো।
----তোর নাকি কম্পিউটার খারাপ হয়েছে শুনলাম?
অর্ক মুখ ব্যাজার করে বলল---ওই পুরোনোটা আর চলবে না।
পাশ থেকে সুছন্দা বলল---পুরোনো কোথায়? ওই তো তিন-চার বছর হল।
রঞ্জন ছেলেকে আস্তে করে বলল---শোন তোর মাকে বলিস না, আমি একটা ল্যাপটপ কিনেছি তোর জন্য।বাড়ী গেলে নিয়ে যাবো।
অর্ক একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল---ঠিক আছে।
---দে তোর মা'কে দে।
সুছন্দা ফোনটা নিয়ে বলল---বলো।


অর্কর স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে মিহির আর শান্তনু কাছের।মিহির অর্কের বাবার কলিগের ছেলে।এখনো তিনি কলকাতাতেই আছেন।অর্ক ক্লাসে সেকেন্ড হয়, শান্তনুও প্রথম দশজনের মধ্যে।মিহির একটু পাকা ছেলে পড়াশোনার চেয়ে ও খেলাধুলাতে পটু।তবে মিহির খুব হেল্পফুল ছেলে।মিহির সঙ্গে থাকলে অর্ক আর শান্তনু ক্লাসে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।দুস্টু ছেলেরাও চুপ করে থাকে।

টিফিনের সময় ওরা টিফিন ভাগ করে খায়।সুছন্দা অর্কের জন্য নিজে টিফিন রেডি করে দেয়।অর্ককে মা'ই বলেছে মিহির আর শান্তনুকে ভাগ দিতে।
ওরা টিফিন খাচ্ছিল।মিহির বলল--বাবার পুরোনো স্মার্ট ফোনটা এখন আমার বুঝলি।
অর্ক বা শান্তনুর এখনো ফোন নেই।অর্ককে ওর মা বলেছে মাধ্যমিকের পরে ফোন দেবে।
তাই দুজনে অধীর আগ্রহে বলল---ফেসবুক আছে?
---আছে।
অর্ক বলল---হোয়াটস অ্যাপ?
---আছে।
শান্তনু বলল---ইউটিউব?
---আছে।সব আছে আর ভালো ভালো গেমসও আছে।পাবজি খেলা যায়।

অর্ক বলল---পাবজি!ওয়াও...
----আর সবচেয়ে নতুন যেটা আছে সেটা তোদের ছুটির সময় দেখাবো।কিন্তু...
অর্ক আর শান্তনু দুজনেই খাবার চিবোতে চিবোতে তাকালো।মিহির একটা ফলের টুকরো অর্কের টিফিন বক্স থেকে নিয়ে বলল---আজকে কার বাড়ী ফাঁকা পাওয়া যাবে?
শান্তনু বলল---অর্কের।
---না, কাকিমা থাকেন তো?
অর্ক বলল---না, মায়ের অফিস থেকে ফিরতে দেরী হয়।
---তাহলে আজকে অর্কের বাড়ীতে বিকেলে...

বিকেলে ওরা অর্কের বাড়ীতেই জমা হল।মিহির মোবাইলটায় একটা ভিডিও ক্লিপস দেখালো।
একটা মেয়ে উলঙ্গ! শান্তনু বলল--একে পর্ন বলে আমি জানি, এসব দেখা ঠিক নয়।
মিহির বলল---ইটস নট আ পর্ন, এইটা হল সেক্স এডুকেশন।মেয়েদের ভ্যাজাইনা কি জিনিস জানিস।
অর্ক লজ্জা পেয়ে বলল---আই নো দ্যাট...
নিষিদ্ধতার লজ্জায় তিনজনে হেসে উঠল।
শান্তনু বলল---পেনিট্রেশন জানিস কিভাবে হয়?
অর্ক বলল আমার বাপির একটা ম্যাগাজিন ছিল।ওখানে সব লেখা ছিল।আমি একদিন পড়েছিলাম।
শান্তনু বলল---তোরা কোনোদিন দেখেছিস?
মিহির বলল--দেখেছি, আগে তোর গল্পটা বল তারপর আমারটা বলব।

শান্তনু বলল---দেখ, সেক্স হচ্ছে প্রাইভেট বিষয়।আমরা তো বায়োলজিতে পড়েছি রিপ্রোডাকশন...সেক্স না করলে রিপ্রোডাকশন হয় না।

মিহির রেগে গিয়ে বলল---তুই কি এবার বায়োলজি ক্লাস নিবি?

অর্ক হেসে বলল---শান্তনু ভুল কিছু বলেনি।রিপ্রোডাকশন হয় সেক্স করলে।

মিহির সবজান্তার মত বলল--সে সব জানি আমাদের বাবা-মায়েরা সেক্স না করলে আমরা হতাম না।বাট সেক্স ইজ নট অনলি ফর রিপরিডাকশন, ইট ইজ অলসো ফর প্লেজার।আমার এক আংকেল আর্মিতে ছিল, আন্টির এফেয়ার ছিল তার এক বন্ধুর সাথে।আমি শুনেছি মা-বাবা কে আলোচনা করতে।কারণ আন্টি প্লেজার পেতেই করত।

শান্তনু বলল---হুম্ম।আমার একবার কি হয়েছিল শুনিস, আমি তখন ক্লাস সেভেনে দু বছর আগে।আমার মামার বাড়ী গিয়েছিলাম।আমার ছোট মামা বিয়ে করেছে তখন সবে।ছোটমামার ড্রয়ারে একটা প্যাকেট পেয়ে, আমি কেটে বেলুন ফুলিয়ে ঘুরতে থাকি সকলের সামনে।তারপর সে কি মার খেলুম মায়ের হাতে।

মিহির হেসে উঠল হো হো করে।অর্ক বলল--হাসির কি হল এতে?
শান্তনু হাসি চাপতে না পেরে বলল---ওটা কন্ডোম ছিল।
অর্ক বলল---কন্ডোম???
মিহির হেসে বলল---প্রটেকশন নেওয়ার জন্য।সেক্স করলেও রিপ্রোডাকশন হবে না।
অর্ক বলল---ওঃ।এক মিনিট।
উঠে গেল অর্ক।বাপি-মায়ের বেডরুমে একটা ড্রয়ারে সে দেখেছে।প্যাকেটটা তুলে আনল।
মিহির বলল---এটা তুই কোত্থেকে পেলি?
---আমাদের বাড়ীতেই ছিল।
শান্তনু বলল---রেখে দা ভাই।
অর্ক বলল---এটাই কন্ডোম তো?
মিহির বলল---হ্যা রে হ্যা।এইটা তোর বাবা-মা ইউজ করে।রেখে দে, তা নাহলে আমার মত তুই কাকিমার হাতে মার খাবি।
সবাই হাসল।
শান্তনু বলল---ইস আমরা কি বাজে সব আলোচনা করছি।
মিহির বলল---আরে আমরা বড় হচ্ছি একদিন আমরাও..
শান্তনু বলল---হ্যা তুই সেক্স কথায় দেখেছিস যেন?
মিহির একটু চুপ করে গেল।বলল---আমি দুবার দেখেছি।একবার দেখেছি রাতে ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যাবার সময়..
অর্ক মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল---ইস! কাকু-কাকিমার দেখেছিস! তোর লজ্জা করে না?
শান্তনু বলল---লজ্জার কি? আমিও দেখেছি।দেখতে ক্ষতি কি।আরে আমাদের কাছে বাবা-মার সেক্স হল পবিত্র।ওটা না হলে কি আমরা জন্মাতাম।আমিও দেখেছি।বাবা-মা যে অত দুজন দুজনকে ভালোবাসে ওই সিন না দেখলে বুঝতে পারতাম না।

মিহির বলল--ঠিক বলেছিস।আমার মা আবার সেক্স করবার সময় আদুরে বিড়াল হয়ে যায় বাবার কাছে, আর বাবা বাঘ।অথচ সারাদিন মা বাঘ বাবা বিড়াল হয়ে থাকে।
শান্তনু বলল---ওটাই লাভ রে।

মিহির বলল---তবে জানিস আমি দ্বিতীয় বার দেখেছিলাম আমাদের পাশের বাড়ীর...
---ঋদ্ধি? শান্তনু বলল অবাক হয়ে।
---কাকুকে বলিস না।যেটা বলব।মিহির সন্তর্পণে সাবধানতামুখী ভাবে বলল।
---না, না, কে কাকে বলবে।এসব কোথায় আলোচনা করছি বাড়ীর কেউ জানলে ঠ্যাং ভেঙে দেবে।
মিহির বলল---ঋদ্ধির মায়ের একজনের সঙ্গে এফেয়ার আছে।ওদের ভাড়াটে একটা মাস্টার থাকে।ওর সাথে।আমি ভুল করে একদিন ঋদ্ধিকে খুঁজে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চমকে যাই।দেখে ঋদ্ধির মা শুয়ে আছে, পুরো ন্যাংটো, আর ওই মাস্টারটাও ন্যাংটো তার উপরে চড়ে...ব্যাস!
বয়ঃসন্ধির কৈশরের উৎকণ্ঠা তিনজনেই যেন রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায়।অর্ক বলল---ঋদ্ধি কে রে? ওই ক্লাস সিক্সের ছেলেটা?যে ইন্টারম্যাথসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল?
---হুম্ম।তবে ভাই কেউ তোরা কারোর কাছে ফাঁস করিস না।মা মেরে ফেলবে এইসব আলোচনা করি জানলে।মিহির বলল।
শান্তনু বলল---ইন্টার ম্যাথসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল না ছাই।ওটা ঢপ।
অর্ক বলল---ও ম্যাথস বলতে মনে পড়ল।প্রীতিশ স্যারের ক্লাসে হাইটেনডিস্টেন্স কিছু বুঝতে পারলি?
শান্তনু বলল---প্রীতিশ স্যারের ক্লাসে সত্যিই কিছু বুঝতে পারা যায় না।
মিহিরও তাল মিলিয়ে বলল---ঠিক বলেছিস।
অর্ক হেসে বলল---মিহির তো প্রীতিশ স্যার কেন কোনো স্যারের ক্লাসেই কিছু বুঝতে পারিস না।
শান্তনু হেসে উঠল।মিহির বলল---আচ্ছা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করা না?
অর্ক বলল--না, না, তুই যে এতক্ষণ যে জ্ঞানগুলো দিলিস সেগুলো কি আমি জানতাম।সেগুলোই তুই কিন্তু পন্ডিত।
শান্তনু আবার হেসে উঠল।বলল---না, না, অর্ক তুই সত্যিই কিন্তু অনেক কিছু জানতিস না? কন্ডোম কি জানতিস না?

অর্ক বই আই খাতা বের করতে বলল---সেসব পরে জানবো।এখন তোরা খাতা বের কর।আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।

শান্তনু আর মিহিরকে অর্ক নিজের থেকে পড়ায় হেল্প করে।ওরা তিনজনে অতন্ত্য কাছের বন্ধু।ওদের বাড়ীর লোকেরাও জানে ওরা কত ক্লোজ।

শান্তনু-আর মিহির চলে যাবার পরও ঋদ্ধির মায়ের ব্যাপারটা অর্কের মাথায় যেন রয়ে গেল।কেন যে ঋদ্ধির প্রতি একটা সংবেদনা অনুভব হচ্ছিল সে বুঝতে পারছিল না।
কম্পিউটার খারাপ।টিভি দেখতেও ইচ্ছা করছেও না।বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে সে ঋদ্ধির জায়গায় যদি সে থাকত! যন্ত্রনা হচ্ছিল তার, বুকটা কেমন দুঃখে ভরে উঠল।ঘুম ধরে গেল কখন বোঝেনি।

ঋদ্ধির বাড়ী গেছে অর্ক।সিঁড়ি দিয়ে উঠছে।উঠতে উঠতে সে হাঁফিয়ে যাচ্ছে।ছাদের মুখেই ঋদ্ধি বলল---অর্ক দা, যেও না।
অর্ক এগিয়ে গেল তবু।বন্ধ দরজা।এবার আর ঋদ্ধির বাড়ীর দরজা নয়।সে দেখছে আঁকার স্যারের বাড়ীর সে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে থাকা দোতলার টালির চাল দেওয়া ইটের ঘরের কাঠের দরজা।বন্ধ দরজার সেপাশ থেকে অদ্ভুত শব্দ! ঠিক যেন তার মায়ের গলা!
অর্ক ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলতে চাইছে, কিন্তু তার হাত যেন অবশ।কেউ বেঁধে রেখেছে।অনেক চেষ্টার পর অর্কের ঘুম ভেঙে গেল!
অর্ক বুঝতে পারল সে এতক্ষণ অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছিল।তার মন টা ডুকুরে কেঁদে উঠল।মনের মধ্যে একটা বিরাট শূন্যতা কাজ করছে তার।মাকে-বাপিকে দুজনকে পেতে ইচ্ছে করছে তার এখনই।এই এক বছর আগেও অর্ক রাতে ভয়ের স্বপ্ন দেখলে বাপি-মায়ের ঘরে চলে যেত।দুজনের মাঝে গিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ত।কিন্তু এখন যেন সেক্ষেত্রে শূন্য মনে হচ্ছে তার।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত্রি ন'টা চল্লিশ! অর্কের খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে ঋদ্ধির জন্য, তার নিজের জন্য।

সুছন্দা ফিরল পুরো দশটা সময়।অর্ক চুপটি করে থাকল।তার বুকে যে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে সেটা মাকে সে বলল না।সুছন্দা বলল---কি রে? বিকেলে টিফিন করেছিস?
অর্ক মাথা নাড়ল।সুছন্দা শাড়ি বদলে স্নানে গেল।তারপর কিচেনে ঢুকল।

অর্ক মায়ের বিপরীতে টেবিলে খেতে বসছিল।তার মুখ দিয়ে একটিও কথা বের হচ্ছিল না।সে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিল।সুছন্দার নজরে পড়ল।বলল---কি রে বাবু? মন খারাপ কেন? স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে?
অর্ক মাথা নেড়ে না বলল কোনো উত্তর দিল না।সুছন্দা নিজের ভাগের মাছ অর্কের প্লেটে তুলে দিল।
অর্ক বিরক্ত হয়ে বলল---মা আমার খেতে মোটেই ভালো লাগছে না।প্লিজ!
সুছন্দা বুঝতে পারল ছেলের মুড খারাপ।

অর্ক শুয়েছিল চুপচাপ।ঘুম আসছিল না।আচমকা লাইটটা জ্বলে উঠল।দেখল বালিশ নিয়ে মা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
--আমার কোমরটা ব্যথা করছে রে, তোর কাছে ঘুমোবো।
অর্ক জানে মায়ের মাঝে মধ্যেই কোমরে ব্যথা করে।বলল---মা, মালিশ করে দিই।
সুছন্দা অর্কের পাশে জায়গা করে বলল---দে।
সুছন্দা শাড়ি পরেছে।অর্ক মায়ের কোমরে মলম লাগিয়ে মালিশ করতে লাগল।অর্কের নজরে পড়ল মায়ের পিঠে একটা লালচে দাগ।সুছন্দার পিঠ তকতকে কোমল ফর্সা।সামান্য দাগও নজরে আসে।অর্ক বলল---মা, এখানে কি হয়েছে?
সুছন্দা বলল---কোথায়?
---তোমার পিঠে!
---ওঃ, পোকা টোকা কামড়েছে বোধ হয়।
অর্ক মায়ের কোমরে আবার মালিশ করতে লাগল।সুছন্দা বলল---থাক, আর করতে হবে না।

অর্ক ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে দিয়ে মায়ের পাশে শুয়ে পড়ল।সুছন্দা অর্কের দিকে ঘুরে অর্ককে আদর করতে করতে বলল---বাবু? মন খারাপ কেন রে? কি করব বল অফিসের কাজ এখন খুব বেড়েছে।
অর্ক বলল---মা, আঁকার স্যারের কাছে যেতে আমার ভালো লাগে না!
---ওমা!কেন?
---ভালো লাগেনা!
---কেন স্যার কিছু বলেছে নাকি? আজ তো গেলাম কই কানু দা কিছু বলল না তো? কানু দা তো তোর প্রশংসা করে।

---তুমি আজ আঁকা স্যারের বাড়ী গেছিলে?


সুছন্দা অর্কের কপালে চুমু এঁকে বলল---ওখানে জরুরী কাজ ছিল, গেছিলাম।
---আঁকা স্যারকে আমার ভয় লাগে মা!
---ওঃ বুঝেছি, হুম্ম।কানু দা'কে দেখলে এরকম মনে হয়, উনি কত গুনী মানুষ জানিস।নিজেকে ব্যবহারই করল না।নাহলে কত বড় শিল্পী হতে পারত।
---উনি কেমন খুব রাগি আর...
বাকিটা বলবার আগেই সুছন্দা অর্কের গালে হাত দিয়ে আদর করে বলল---আচ্ছা তোর যদি যেতে না ইচ্ছা হয় যাস না।
অর্ক খুব খুশি হল।মাকে জড়িয়ে ধরল।মায়ের আদর খেতে তার খুব ভালো লাগে।মায়ের কোমল স্পর্শ পেতে কার না ভালো লাগে।সুছন্দা অর্ককে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল--- তোর বাপি ফোন করেছিল?
--না।
---তোর বাপি ফোন করেছিল সন্ধ্যে বেলা।আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম ফোন তুলতে পারিনি।আমি ভাবলাম তোকে ফোন করেছে হয়ত।
---মা বাপিকে ফোন করব?
---আজ আর এত রাতে ফোন করার দরকার নেই।লোকটা অফিস করে এসে ঘুমোচ্ছে হয়ত।এমনিতেই জানিস তো তোর বাপির ঘুম কত...
অর্ক বলল---মা ভাইজাগ যাবে বাপির কাছে?
---যাবো সোনা, পুজোর ছুটিতে।
---সে তো এখন অনেক বাকি।
---এখন খুব কাজের চাপ রে।
(চলবে)
 
Top