• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Thriller আউট অফ কলকাতা

207
438
64
পর্ব ৩৫


"আর? আর কি লাগবে..? " বিছানার এক পাশ থেকে প্রশ্ন করে উঠল রুদ্র



"একটা ছোড়া বা কাটারি জাতিও কিছু একটা..."



"ছোড়া? এইতো আমার কাছে আছে...." বলে সাথে সাথে ব্যাগ-পাকের ভেতর থেকে নিজের কোমরের বেল্টটা বার করল তিস্তা | তারপর সেই বেল্টের পিছনদিক থেকে ওর সেই ছোড়াটা বের করে দীপার সামনে তুলে ধরল |



"হমম...এমনি ঠিকই আছে, কিন্তু আমাদের এর থেকেও বড়ো কিছু একটা লাগবে | মানে বুঝতেই তো পারছিস আমাদের বোন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে আর সামনের রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য একটা ধারাল কিছু একটা দরকার..." দীপা বলে উঠল



"হ্যাঁ...সেটা তো বুঝেছি কিন্তু জায়গাটার ব্যাপারে আমরা এখনও কিন্তু ঠিক করে ফিগার আউট করে পারিনি...মানে জায়গাটা কোথায়? সেখানে যাওয়ার রাস্তা জানলেও সেটা ঠিক করে পিন পয়েন্ট না করে সেখানে যাওয়া বেশ বিপদ জনক..." বলে এক মুহূর্ত থামল রুদ্র ," আমি বলি কিনা, যে এখানে আরও কিছুদিন থেকে সেই জায়গার ব্যাপারে আর সেটার এক্স্যাক্ট লোকেশন বার করে তারপর সেইদিকে যাই..."



"দেখ রু...প্রথমত এইখানে বসে থেকে আমরা কিছু করতে পারবো না | সেকেন্ডলী আমাদের ট্রায়েল এন্ড এরর মেথড ফলো করতে হবে নাহলে সেই জায়গা কোনোদিনই খুঁজে বের করতে পারবো না আমরা, তাছাড়া তোর কাছে তো সব কিছুই ওই ফোনে তোলা রয়েছে,তাহলে ? তাহলে কিসের এত ভয় "



"ভয় নয় নিজেদের সেফটির জন্য বলছে...তবে আমাদের যে কতদূর হেটে যেতে হবে সেটা এখনও ঠিক করে বুঝতে পারছিনা আমি | তবে...তবে আমি ভাবছিলাম যে যদি লেক দিয়ে আমরা ঢোকার চেষ্টা করি তাহলে কেমন হয়... মানে একটা নৌকা করে..." রুদ্র বলে উঠল |



"নৌকা..? নৌকা কোথা থেকে পাবি তুই? আর লেক দিয়ে যাওয়াটা কি নিরাপদ হবে রু ? তোর কি মনে হয় যে লেক দিয়ে গেলেই সেই জায়গাটা চোখে পরে যাবে আমাদের? খুঁজে পেয়ে যাবি ওই গাছ পালার মধ্যে? আর তার ওপর লোকেরা ওইখানে সব মাছ ধরতে যায়, তাই নাকি?" একটা পর একটা যুক্তি লাগিয়ে প্রশ্ন করে গেল দীপা |

"নাহ! এখন সেখানে আর কেউ মাছ ধরতে যায়না...দীপা " হঠাৎ করে চতুর্থ ব্যক্তির কণ্ঠস্বর পেয়ে সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে সেই উদ্দেশ্যে তাকাতেই ডাক্তার-কাকুকে তাদের ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওরা | উনি যে একটু আগেই এসেছেন সেটা তার হাঁপানি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল | তাকে সেইরকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে দেখে দীপা এক লাফে বিছানা থেকে নেমে বলে উঠল :

"একি?..একি ডাক্তার -কাকু আপনি, বাইরে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসুন...এখানে আসুন না...বসুন না আমাদের সাথে..."




"হ্যাঁ ডাক্তার-কাকু, এসো না ভেতরে...তোমারি তো বাড়ি" বলে তিস্তার দিকে তাকিয়ে হাসল রুদ্র



দীপাকে উঠতে দেখে ডাক্তার-কাকু সাথে সাথে বলে উঠলেন , " আরে! না...না...একদম, একদম ব্যস্ত হোশ না তোরা | তোরা সবাই নিজেদের এই কাজের কথা আলোচনা করছিস আর তার মধ্যে আমি থেকে কি করব বলত? আমি...আমি এসেছিলাম তোদের বলতে যে রাতের খাবারটা রেডি হয় গেছে আর কাল সকালে তোরা তাড়াতাড়ি বেরবি তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নেওয়াটাই বেটার হবে"



"একদম! আমরা...এক্ষুনি যাচ্ছি" দীপা বলে উঠল, তারপর হঠাৎ সেই কোথা মনে পড়তেই আবার বলল "তবে ডাক্তার-কাকু, আপনি ওই লেকের ব্যাপারে কি যেন একটা বলছিলেন..."

দীপার কথা শুনে ডাক্তার-কাকু ঘরের দোরগোড়া থেকে ভেতরে ঢুকে এলেন | তারপর আস্তে আস্তে ওদের বিছানার সামনে এসে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন "হ্যাঁ, ওই লেকে এখন আর তেমন কেউ মাছ ধরতে যায়না, তার কারণ লেকের ডান পাশটা মানে পূর্ব দিকটা পুরোটাই নষ্ট হয় গেছে | নষ্ট হয়ে গেছে বলা ভুল হবে, বরঞ্চ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বোমা ফেলে ফেলে আর তার ওপর জলেরও স্তর বেড়ে যাওয়াতে আরই কেউ ওই দিকে মাছ ধরতে যায়না..."



"তাহলে ব্যাপারটা আরও শক্ত হয়ে গেল আমাদের জন্য, তাইতো...?" পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল



"হমম...আরও শক্ত "



ওদের চিন্তিত চিত্ত দেখে ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন "এই....বাচ্চারা, আমি নিচে যাচ্ছি | খাবারটা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে খেতে ভালো লাগবেনা কিন্তু তাই আর দেরি না করে চলে আয়, ঠিক আছে? খালি পেটে কিন্তু চিন্তা ভাবনা করে কোথাও পৌঁছতে পারবিনা , হে..হে..হে"

বলে বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে ওদের ঘর থেকে চলে গেলেন ডাক্তার-কাকু | দীপাকে ওনাকে চলে যেতে দেখেই রুদ্রর দিকে ঘুরে প্রশ্ন করল :

"আর গাড়িতে ঠিকঠাক তেল আছে তো..?"



"হ্যাঁ কালকের জন্য যথেষ্ট আছে আর সেরকম বুঝলে ডাক্তার - কাকুর কাছ থেকে কিছুটা চেয়ে নেবো..." রুদ্র বলে উঠল



"আর খাবার জিনিস পত্র? জল? খাবারের পরিমাণ কম হলেও জল ইস মাস্ট | জঙ্গলের মধ্যে কিন্তু ডিহাইড্রেট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি আর তার ওপর এখন শীতকাল তাই নিজেদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল রাখা খুবই দরকার" তিস্তা বলে উঠল



"হ্যাঁ...ওসব ঠিক ঠাক নিয়ে নিয়েছি আমি, আমার কাছে দুটো আর তোদের কাছে একটা একটা করে বোতল থাকবে..তাই আশা করি বেশি অসুবিধে হবেনা..."



"পরে ভারী হয়ে যাবেনা তো...?" রুদ্র বলে উঠল



"জল তো খেতে খেতে ফুরবে তাহলে ভারী কি করে হবে? আর তোদের ওই প্লাস্টিকের বড়ো প্যাকেটগুলো নিতে বলেছিলাম সেগুলো নিয়েছিস...?" দীপা প্রশ্ন করে উঠল



"হ্যাঁ হ্যাঁ প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে নিয়েছি আর ফোনেও চার্জ দিয়ে নিয়েছি...."



"তাহলে কালকে, আমাদের শেষ অভিযানের জন্য সব কিছু রেডি তো ? " তিস্তা বলে উঠল



"হ্যাঁ এজ অফ নাও, তবে জানি না কাল কি হতে চলেছে আমাদের সাথে তবুও সব কিছুর জন্যই আমি রেডি..." শক্ত গলায় বলে উঠল দীপা



"আমরাও" রুদ্র আর তিস্তা একজোট হয়ে বলে উঠল




রাত্রের খাবারের কথা ডাক্তার-কাকু আগেই বলে গিয়েছিলেন তাই আর বেশি দেরি না করে ওরা সবাই নিচে নেমে এলো | রকমারি খাবার না হলেও রান্না খুবই ভালো করতেন ডাক্তার-কাকু | রান্না করে করে ওনার রান্নার হাতটা এতটাই ভালো হয়ে গেছিলো যে ওদের মনে হল যেন চাটতে চাটতে প্লেটটাই খেয়ে ফেলবে ওরা | ডাইনিং টেবিলে বসে ওরা চারজনে ভালোই গল্পগুজব করতে করতে নিজেদের সুস্বাদু খাবার উপভোগ করছিল এমন সময় হঠাৎ খেতে খেতে নিজের জায়গা থেকে উঠে পড়ল দীপা | দীপাকে ওরকম আচমকা উঠে পড়তে দেখেই ডাক্তার-কাকু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন :

"কি হল দীপা? উঠে পড়লি যে? ভালো লাগছে না খাবার? "



ডাক্তার-কাকুর কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে দীপা বলল "আমি...আমি একটু আসছি কাকু...আমার একটা কাজ আছে" বলে ওখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল দীপা



"এ মা..কি হল? ওই রকম দৌড়ে চলে গেল কেন দীপা দি? কি এমন জরুরি কাজ আছে ? " তিস্তা বলে উঠল |



"হ্যাঁ...তাই তো, খেতে খেতে ওই রকম কে উঠে যায়....? " ডাইনিঙের দরজার দিকে তাকিয়ে রুদ্র বলে উঠল |



"দাঁড়া...দাঁড়া, আমি গিয়ে দেখছি..." বলে চেয়ার থেকে উঠে দীপাকে খুঁজতে গেলেন ডাক্তার-কাকু |
"কি হল মেয়েটার আবার? এমন কি কাজ আছে যেটা এক্ষুনি করার দরকার হল..." নিজের মনে গজগজ করে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু, তবে তাকে খুঁজতে বেশি দূর যেতে হল না ওনাকে | ওপরে দুতলায় যাওয়ার সিঁড়ির পাশে যে বাথরুম ছিল তারই দরজার সামনে উনি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন দীপাকে | আস্তে আস্তে তার কাছে গিয়ে তার মাথায় নিজের হাতটা রেখে জিজ্ঞেস করলেন :

"কিরে দীপা, কি হল...? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?"

ডাক্তার-কাকুর কথা শুনে দীপা বকে উঠল "না..না..ডাক্তার-কাকু তেমন কিছুই নয়, আসলে পেটটা গুলিয়ে গেছিল...মানে বুঝতেই তো পারছেন, আজকে সারাদিন বাড়ির বাইরে এইদিক ওইদিক করতে হয়েছে..."



"হ্যাঁ..সে আর বলতে" বলে দীপার চোখের পাতার তলাটা টিপে তারপর ওর কব্জি ধরে পালস দেখলেন ডাক্তার-কাকু "পেটে-ফেটে মোচড় দিচ্ছে না তো? বাইরে কিছু খেয়েছিলি নাকি আজকে?"



"না..না আমরা কিছুই খাইনি আজকে...."



"আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি, তবে এখন ডাইনিং রুমে চল..."



"কিন্তু আমার আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না, ডাক্তার-কাকু..." দীপা বলে উঠল



"সে তো জানি, তোকে কিচ্ছু খেতে হবেনা চল | তুই শুধু ওখানে গিয়ে বস, নাহলে ওরা আবার চিন্তা করবে" ডাক্তার-কাকুর মুখে সেই কথা শুনে আস্তে আস্তে আবার সেই ডাইনিং রুমে ফিরে গেল দীপা | তাকে দরজা দিয়ে ডাইনিঙের ভেতরে ঢুকতে দেখেই তিস্তা প্রশ্ন করে উঠল :

"কি? কি হয়েছে দীপা দির, ডাক্তার-কাকু ?"

"আরে না....তেমন কিছুই না, এমনি সারাদিনের ধকল আর অনিয়মের করে খাবার জন্য অ্যাসিড হয়ে গেছে, তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই" বলে ডাইনিং টেবিলের পাশের আলমারির ড্রয়ার খুলে একটা ট্যাবলেটের স্ট্রিপ বার করেন ডাক্তার-কাকু, তারপর ,"এইনে...এইটা খেয়ে নে..." বলে সেই অ্যাসিডের ট্যাবলেটটা ধরিয়ে দিলেন দীপার হাতে | দীপা নিজের মুখে একটু খানি জল নিয়ে সেই ট্যাবলেটটা খেতেই কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আগের মতন সুস্থ বোধ করতে লাগল | তবে তাকে না খেতে দেখেই রুদ্র বলে উঠল :

"এই তুমি আর খাবে না?"



"না, আমার আর খেতে ইচ্ছে করছে না...."



"ওহ! তাহলে আমি খেয়ে নেবো..তোমার খাবারটা" দীপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র |



"হ্যাঁ...কিন্তু তুই পারবি...?"



"হমম..."



পরের দিন তাদের কে অনেক সকালে উঠতে হবে জেনে খাওয়া দাওয়া শেষ হতে না হতেই রুদ্র আর তিস্তা ওপরে নিজেদের নিজেদের ঘরে শুতে চলে গেল | তবে যেহেতু কালকেই তারা সেখান থেকে চলে যাবে তাই সোফাতে বসে ডাক্তার-কাকুর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলো দীপা | একটা কথা থেকে আরেকটা কথা উঠতে উঠতে পুরনো দিনকার কথা সব মনে পরে যেতে লাগল দুজনের | যে মানুষগুলো তাদের চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে গেছে তাদের কথা মনে পড়তেই দুজনেরই মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল |



"তবে শিলা, শিলা আজকে বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হতো রে, দীপা..." ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন



"শিলা...? " সেই প্রথম ওই নামটা শুনল দীপা | তবে তার চেনা কারুর মধ্যে সেই নামের কেউই ছিল না, তাই নিজের মনের অন্ধকারকে দূর করতে ডাক্তার-কাকুকে প্রশ্ন করল " কে? কে শিলা ডাক্তার-কাকু...?"



ডাক্তার-কাকু দীপার মুখ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে প্রথমে একটু অবাক হলেন তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলে উঠলেন, " হ্যাঁ..সেই তো..তুই তাকে চিনবি কি করে? শিলা..? শিলা হল আমাদের তিশার মা, মানে ওই তিস্তার মা" বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন ডাক্তার-কাকু, তারপর আবার বলে উঠলেন " জানিস তো দীপা মেয়েটা খুবই ভালো ছিল, মানে অন্যদের মতন একদমই ছিল না | আমি যখনি যেতাম ওদের বাড়িতে সব সময়ই দেখতাম যে সে তার নিজের মেয়েকে আগলে রয়েছে...কিন্তু..কিন্তু" বলে থেমে গেলেন ডাক্তার-কাকু ।



"কিন্তু কি ডাক্তার-কাকু...?"



"কিন্তু ওকেও আমি বাঁচাতে পারিনি, দীপা...তবে ওর সেই অসুখের হাত থেকে কেউই ওকে বাঁচাতে পারতো না.....তবুও" বলে দুঃখে নিজের মাথাটা নিচু করে নিলেন ডাক্তার-কাকু, "আজকে ও বেঁচে থাকলে নিজের মেয়েকে এই অবস্থাতে, মানে তোদের সঙ্গে দেখলে নিশ্চয়ই খুবই খুশি হত"



"হ্যাঁ..ডাক্তার-কাকু, সব মা রাই সব সময়ই তাদের সন্তানের সব কর্মেই খুশি হয়" দীপা বলে উঠল



দীপার মুখ থেকে সেই কথা শুনে হঠাৎ ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন "তবে দীপা, একটা কথা...."



"কি?..কি কথা ডাক্তার-কাকু..?" ওনাকে থেমে যেতে দেখে বলে উঠল দীপা



"ওটা কার দীপা...?" ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন



"কি..কি কোনটা? কার ?" থতমত খেয়ে বলে উঠল দীপা


দীপার কথা শুনে নিজের চোখ থেকে নিজের চশমাটা খুলে পাশের টেবিলে রাখলেন ডাক্তার-কাকু, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন, "দেখ দীপা,তুই পেশায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হলেও তুই নিজেও অনেক দিন ধরেই মেডিসিন নিয়ে নাড়াচাড়া করেছিস | তাই, তাই নিজের মধ্যে হওয়া জিনিসগুলো তুই একটু হলেও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস, আর সেটাও বুঝতে পেরেছিস নিশ্চয়ই"



"মানে...?" দীপা অবাক হয়ে ডাক্তার-কাকুর মুখের দিকে তাকাল "হোয়াট ডাজ হি মিন..." নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করে উঠল দীপা |



"মানে...? মানেটা তুই নিশ্চয়ই জানিস দীপা, কিন্তু সেটাকে হয়তো এখনও স্বীকার করতে পারছিস না, তাই তো...? " হালকা হেসে বলে উঠলেন উনি


ডাক্তার-কাকুর কথার কুল কিনারা না করতে পেরে তার মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল দীপা, চিন্তা করতে লাগল কি হতে পারে সেই কথার কারণ , কেন বলছেন তিনি সেই কথা? আর হঠাৎ করেই সেই কারণটা দীপার মাথায় আসতেই সে বলে উঠল "ডাক্তার - কাকু, আমি..আমি কি প্রেগন্যান্ট ?"


দীপা যে তার কথা বুঝতে পেরেছে সেইটা দেখে খুশি হয়ে ডাক্তার-কাকু বললেন "হ্যারে মা, তাই তো মনে হয় ....তবে অবশ্য এই..এই বুড়ো বয়েসে এসে ভুলও হতে পারে আমার..."


"আরে! না..না..ভুল হতে যাবে কেন.." দীপা তাকে বাধা দিয়ে বলে উঠল


"তাহলে...তাহলে তুই নিজেও মানছিস? তুই নিজেও মানছিস যে তুই মা হতে চলেছিস?" বলে নিজের জায়গা থেকে উঠে দীপাকে জড়িয়ে ধরলেন ডাক্তার-কাকু ," এই হাত দিয়েই সেই ছোট্ট তোকে ধরেছিলাম আমি দীপা...আর আজ তোরই..তোরই....খুব, খুব ভালো খবর দীপা !!!" খুশিতে ফেটে পরে ডাক্তার-কাকুর বলে উঠলেন আর তার চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরে পড়তে লাগল অশ্রু ধারা |


কিন্তু অন্যদিকে দীপা বুঝতে পারল না সে ওনাকে কি বলবে, মানে তার কাছে সেটা একদমই একটা নতুন অভিজ্ঞতা | ভয় আনন্দ অনিশ্চয়তা মাখানো একটা অবস্থায় কি বলবে না বলবে সেটার ব্যাপারে ভাবতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে এমন সময় হঠাৎ ডাক্তার-কাকু আবার একটা প্রশ্ন করে বসলেন:


"কিন্তু দীপা মা, বাচ্চাটা...কার ? মানে হু ইস দা ফাদার, দীপা...."



দীপা জানতো যে এইরকমই একটা প্রশ্ন তার জন্যে অপেক্ষা করছে তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠল "পাণ্ডে-জি, মোস্ট প্রব্যাবলি...."



"কি? পাণ্ডে-জির...?" বলে উনি অবাক বিস্ময়ে তাকালেন দীপার দিকে " কিন্তু..কিন্তু উনি! " বলতে গিয়েও আবার থেমে গেলেন ডাক্তার-কাকু



"কিন্তু কি? কি ডাক্তার-কাকু?"



"নাহ...কিছু না, তবে..তবে তুই মোস্ট প্রব্যাবলি বললি কেন ? তুই কি শিওর নোস্ সেই ব্যাপারে ?"



"না..মানে ওই ৭৫% মতন শিওর আমি যে এটা পাণ্ডে-জিরি " দীপা হালকা সূরে বলে উঠল



"দীপা, প্রেগন্যান্সিতে ৭৫% বলে কিছু হয়না, ইটস অলওয়েজ আইদার এ হান্ড্রেড পার্সেন্ট অর ইটস জিরো, কিন্তু...তবুও" বলে আবার নিজের চিন্তায় হারিয়ে গেলেন ডাক্তার-কাকু | ওনাকে সেই রূপ চিন্তামগ্ন হতে দেখে দীপা বলে উঠল :

"কি হল ডাক্তার-কাকু, কি ভাবছেন এইরকম করে?"



দীপা কথায় সেই চিন্তা ভেঙে যেতেই ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন " নারে মা কিছুনা, তবে তোর...তোর সঙ্গে কি পাণ্ডে-জির বিয়ে টিয়ে...."



"না..না ডাক্তার-কাকু, ওসব..ওসব কিছুই নয় | উনি জাস্ট একটা বায়োলজিক্যাল সাকসেসর চেয়েছিলেন, মানে নিজের সন্তান আর আমি সেটা দেওয়ার জন্যই ওনাকে সাহায্য করেছিলাম..." দীপা বলে উঠল



"বায়োলজিক্যাল সাকসেসর !!!" বলে দীপার দিকে বিস্ময়ে তাকালেন ডাক্তার-কাকু |



"হ্যাঁ..ডাক্তার-কাকু, কিন্তু...কিন্তু বেচারির ভাগ্য দেখুন, সন্তান সুখ ভোগ করার আগেই কেমন চলে যেতে হল ওনাকে..."



"সন্তান সুখ....হমম | সত্যি, সত্যি রে মা সব কিছুই ওই ভাগ্য, কারুর ভাগ্যে থাকে সন্তান সুখ আবার কারুর ভাগ্যে থাকে সেই অন্ধকূপ..." শান্ত গলায় বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু



"সত্যি তাই ডাক্তার-কাকু..."



"আমার ভাগ্যেও সেই সুখ কোনোদিনই ছিল না দীপা, তবে আমি সেই সুখ না পেয়েও তোদের সবাই কে পেয়ে সুখী ছিলাম কিন্তু পাণ্ডে-জি? পাণ্ডে-জি তো সব কিছু পেয়েও কোনও সুখই পেলেন না...."



"হমম" দীপা বলে উঠল , তারপর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল "ডাক্তার-কাকু আমরা তো কালকেই চলে যাবো...তুমি একা একা ঠিক থাকতে পারবে তো...?"



"ওরে মা আমায় নিয়ে চিন্তা করিস না, তবে জানিস তো কালকেই আবার সেই স্বপ্নটা দেখলাম আমি...সেই যে আলোটাকে দেখেছিলাম আমি, আমার চোখের সামনে, আমার...আমার মনে হয় যে এইবার আমার সময় হয়ে এসেছে রে.."



"আবার? আবার তুমি বাজে বকতে আরম্ভ করলে ?" দীপা চেঁচিয়ে উঠল "আমাকে এত সুন্দর একটা খবর জানবার পরেও, এই রকম কথা তুমি কি করে বলছ ডাক্তার-কাকু? আর তোমার এখন কোথাও যাওয়া চলবে না, আমি তোমায় যেতে দেবে না..." ভারী গলায় বলে উঠল দীপা



"কেন রে মা? আমার মতন বুড়োর কাছ থেকে তোর আর কি দরকার থাকতে পারে...?



"আছে..দরকার আছে...এখনও..." বলে একটা ঢোঁক গিলল দীপা, তারপর আবার বলে উঠল "আমার এই বাচ্চাটাকে এই পৃথিবীতে আনতে আমায় সাহায্য করতে হবে তোমায় ডাক্তার-কাকু...আমি চাই যাতে তুমিই আমায় সেই সাহায্য করো..."



"দীপা মা, আমি আজ আছি কাল নেই...আমার কথার এখন আর কোনও দাম পাবি না রে মা..তুই এই রকম দিব্বি আমায় দিস না মা, আমি আমি...." বলে আবার কেঁদে ফেললেন ডাক্তার-কাকু



"আমি কিচ্ছু জানি না, তোমাকে সেটা করতেই হবে..." শক্ত গলায় বলে উঠল দীপা



"জানি না, সেটা সম্ভব হবে কিনা তবে তোর এই কথাটার দাম রাখার চেষ্টা আমি নিশ্চয়ই করব দীপা..." বলে টেবিলের ওপর থেকে কাঁচের গ্লাসটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঢকঢক করে জল খেতে লাগলেন ডাক্তার-কাকু | তার গলা দুঃখে বেদনায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল | তার সেই অবস্থা দেখে দীপা বলে উঠল :

"তুমি..তুমি আমাদের সঙ্গে ওইখানে যাবে ডাক্তার-কাকু? মানে, আমি জানিনা ওখানে কি অবস্থাতে, কি জায়গাতে আমরা থাকব তবে তুমি আমাদের সাথে ওইখানে গেলে আমাদের তিনজনেরই খুব ভালো লাগত..."


"নাহ..নাহ রে দীপা" ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু, " সেই যুদ্ধ চলাকালীন এখানে এসে নিজের আস্তানা গুঁজে ছিলাম তারপর এখন থেকে আর কোথাও যায়নি আমি আর তাই আমি চাই আমার এই শেষ জীবনটা এখানেই কাটাতে | এমনি বেশ ভালোই আছি আমি জানিস তো, মানে খুবই শান্তি এখানে" বলে বাইরের দিকে ইশারা করলেন উনি "বাইরে মাঝেমাঝে একটা দুটো হরিণের পালও আসে জানিস তো..ওই সরু নদীটা থেকে জল খায় আবার..আবার ময়ূরও আসে...." বলতে বলতে থমকে দাঁড়ালেন ডাক্তার-কাকু।


"তবে কি জানিস তো মা, মাঝেমধ্যে একটা জিনিস খুব..খুব বিরক্ত করে আমায় | সেই জিনিসটা হল এই একাকীত্ব | একটা যদি সঙ্গী পাওয়া যেত তাহলে..." বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন উনি, তারপর আবার বলে উঠলেন " কিন্তু...কিন্তু কালকে এই তোরা যে এইখানে এলি তাতে আমার মন প্রাণ একেবারে ভোরে গেল রে মা...আমার সারা জীবনের সব দুঃখ সব বেদনা সব আক্ষেপ সব ধুয়ে মুছে গেছে রে...."

"ডাক্তার-কাকু তুমি...তুমি ওইরকম করে বোলো না" বলতে বলতে দীপার চোখ দিয়েও জল বেরিয়ে এলো |

"এই দেখেছ..দেখেছ মেয়ের কাণ্ড? এই অবস্থায় কাঁদতে নেই মা, আমাদের সবাই কার খারাপ হবে তাতে " বলে নিজের হাত দিয়ে দীপার চোখের জল মুছিয়ে দিলেন উনি, তারপর আবার বললেন "শোন মা...নিজেদের খুব খেয়াল রাখবি আর বিশেষ করে তোর নিজের শরীরের যত্ন নিবি, তবে সেটা বলার প্রয়োজন হবে না ওই দুজন থাকতে" বলে মাথা ঘুরিয়ে দোতলার দিকে ইশারা করলেন ডাক্তার-কাকু ," তবে দীপা..রুদ্রর কি আর কোনও প্রব্লেম হয়েছিল...পরে ?"



"কি প্রব্লেম? ওহ না..তবে.." নিজের কথা শেষ করার আগেই ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন



"তবে ওর সেইদিন কার ঘটনার কথা কিছুই মনে পড়েনি, তাই তো..?"




"হ্যাঁ একটুও না, মাঝেমাঝে যেন মনে হয় যে সেইদিনের কথাগুলো কেউ ওর মন থেকে মুছে দিয়েছে তবে..তবে আমিও চাই যাতে সেইদিন কার ঘটনা ওর একটুও না মনে পরে " উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল দীপা



"হ্যাঁ...ও যদি ভালো থাকে, তাহলে ওকে সেই কথা মনে করানোর কোনও দরকারিই নেই | জানিস তো দীপা, চাইল্ডহুডে ওইরকম সিভিয়ার কিছু ট্রমা হলে সেই সিচুয়েশন থেকে বাঁচার জন্য বা খাপ খাওয়ানোর জন্য অনেক সময় ব্রেন সেই মেমোরিটাকে লক দায়....আর আমার যতদূর আন্দাজ রুদ্রর ক্ষেত্রেও সেইরকমই কিছু হয়েছে | তবে আমি মনে করি সেটা ভালোর জন্যেই হয়েছে "



"হুমা" বলে নিজের মাথা নাড়ল দীপা



"তবে যাইহোক, অনেক রাত এখন...এইবার গিয়ে শুয়ে পর তুই, কালকে অনেক তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে তোদের" বলে সোফার হাতলের ওপর চাপ দিয়ে আস্তে আস্তে সোফা থেকে উঠে পড়লেন ডাক্তার-কাকু,তারপর দীপার দিকে ঘুরে হাসি মুখে বলে উঠলেন "কালকে নিশ্চয়ই এতক্ষণে ওইখানে পৌঁছে গেছিস তোরা "



"হমম...সেইটাই আমি আশা করি ডাক্তার-কাকু, আই হোপ সো" বলে নিজেও সোফা থেকে উঠে পড়ল দীপা | ডাক্তার-কাকুকে আস্তে আস্তে নিজের ঘরে ঢুকে যেতে দেখে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে দুতলায় উঠে নিজের ঘরে ঢুকল দীপা | তবে ঘরে ঢুকতেই দেখল যে তিস্তার পাশে রুদ্রও ঘুমোচ্ছে |


ওদের দুজনকে শান্তিতে ঘুমোতে দেখে নিঃশব্দে পা টিপে টিপে খাটের ওপর উঠে পড়ল দীপা | তারপর রুদ্রর গালে একটা আলতো চুমু খেয়ে নিদ্রা মগ্ন হয়ে পড়ল সে |
 
Last edited:
207
438
64
অত্তাধিক সময় ব্যাস্ত থাকার জন্য এই সপ্তাহে আমি আপডেট দিতে পারছিনা । গল্পের পরের পার্ট আপডেট না দিতে পারার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি । নতুন আপডেট আগামি সোমবার থেকে আবার পাবেন আপনারা ।
 

pavel392

New Member
1
1
3
অত্তাধিক সময় ব্যাস্ত থাকার জন্য এই সপ্তাহে আমি আপডেট দিতে পারছিনা । গল্পের পরের পার্ট আপডেট না দিতে পারার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি । নতুন আপডেট আগামি সোমবার থেকে আবার পাবেন আপনারা ।

অপেক্ষায়
 
  • Like
Reactions: Anuradha Sinha Roy
207
438
64
পর্ব ৩৬

"সাবধানে, সাবধানে যাবে তোমরা..." পেছন থেকে ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন । তার কণ্ঠস্বর শুনে তিনজনেই পেছনে তাকাল আর তাকাতেই ওনাকে দেখতে পেল ।



"একি ডাক্তার- কাকু আপনি আবার এলেন কেন...?" দীপা বলে উঠল



"আরে কিছু হবেনা, তবে যা বললাম মনে রাখবে তোমরা সবাই..."



"হ্যাঁ ডাক্তার-কাকু...মনে রাখব" গাড়িটার দরজাটা খুলে গাড়িতে উঠে বসল দীপা | ভোরের আকাশে তখন আলো ফুটে গেছে । দূর থেকে পাখির কূজন তাদের কানে ভেসে আসতে লাগল এমন সময় দীপা বলে উঠল

"চল এবার...ইটস টাইম ফর আস...."

ফোনের গ্যালারিতে আগে থেকেই পর পর সব স্ক্রিনশটগুলো সাজিয়ে রেখেছিল রুদ্র আর তাই আর সময় নষ্ট না করে সেটা সে তিস্তার হাতে ধরিয়ে দিল | গাড়ির চালকের আসনে ছিল রুদ্র আর তার পাশেই বসল তিস্তা | পেছনের সিটে ছিল দীপা আর তার পাশে ছিল তাদের সব ব্যাগ পত্রগুলো | জিনিস-পত্র পরিমাণ এর আগের বারের থেকে অনেকটাই বেশি হলেও ওরা চেষ্টা করেছিল যত সম্ভব জিনিসপত্র কম করে নেওয়ার। তার কারণ সেদিনকার পথ ছিল তাদের কাছে পুরোটাই অজানা |



"গাড়িটা ভালোই দেখতে লাগছে..." ডাক্তার-কাকু গাড়ির জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন


"হ্যাঁ...থ্যাংকস টু ইউ ডাক্তার-কাকু" দীপা বলে উঠল | ডাক্তার-কাকুর সেটা বলার কারণ ছিল গাড়ির নতুন রঙের জন্য । রুদ্র সেদিন ভোর ভোর উঠেই ডাক্তার-কাকুর কাছ থেকে কিছুটা গারো সবুজ রং নিয়ে গাড়ির চারপাশে রঙ করে দিয়েছিলো আর সেটা করার ফলে গাড়িটার সেই আগের মড়াখেকো রূপ অনেকটাই চলে গেছিলো । তবে সবুজ রং করে গাড়িটায় একটা ক্যামোফ্লাজের ব্যাপারও তৈরি হয়েছিল |



"হমম...যাও এবার তোমরা গুড লাক..." বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন ডাক্তার-কাকু



"আসছি ডাক্তার-কাকু..." বলে চাবিটা ঘোরাতেই গাড়িটা একটা ভীষণ গর্জন করে জেগে উঠল | পুরনো আর জরাজীর্ণ অবস্থাতে হলেও গাড়ির ভেতরের জিনিসপত্র মানে গাড়ির ইঙ্গিনটা তখনও চাবুকের মতন ছিল | ক্লাচ চেপে প্রথম গিয়ার দিয়ে আস্তে আস্তে এক্সিলারেটরে চাপ দিতেই গাড়িটা এগিয়ে যেতে লাগল । দীপা আর তিস্তা জানালা দিয়ে ডাক্তার-কাকুকে শেষ বারের জন্য হাত নাড়িয়ে বিদায় জানাল আর সাথে সাথেই এক্সিলারেটরে চাপ দিলো রুদ্র | শেষমেশ দেখতে দেখতে ওরা বেরিয়ে পড়লো তাদের শেষ গন্তব্যে পৌঁছোবার জন্য |


আগের দিনের চাইতে অনেকটাই আগে বেরবার জন্য জানালা দিয়ে হিম শীতল বাতাস হুহু করে ঢুকতে লাগল, তবে ওদের ঠাণ্ডা লাগল না কারণ নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার উত্তেজনায় তাদের শরীরের প্রতিতা রক্ত কোশ আগুনের ফুল্কির মতন জ্বলে ছিল । অনেক কষ্ট সহ্য করেছে তারা, আজ সেই কষ্টের নাশ হবে...


সেই একই ঝোপঝাড়ের রাস্তা ধরে ওরে আস্তে আস্তে এগোতে আরম্ভ করলো তবে আগের দিনের মতন আর অসুবিধা হল না ওদের | পর পর দুদিন একই রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার কারণে সামনের ঝোপ ঝড় অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছিলো | রুদ্র আস্তে আস্তে গাড়ির গতি বারিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল এমন সময় তিস্তা বলে উঠল :

"এখন দিয়ে বেরিয়ে সোজা যে রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম, সেই রাস্তাটাই ধরবে...বুঝলে?"


"হমম একদম, তবে বলছি যে তুমি তোমার সব অস্ত্র-শস্ত্র ঠিকঠাক করে নিয়েছ তো ? "


"হ্যাঁ বাবা...সে সব আমায় মনে করানোর কোনও দরকারই নেই, ওগুলো আমার শরীরেরই অঙ্গ " বলে নিজের হট প্যান্টের ওপর দিয়েই নিজের উরুর ওপর সেই বেল্টের ওপর হাত বোলাল তিস্তা |


আস্তে আস্তে সেই কাঁচা রাস্তা থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে উঠল ওরা তবে হাইওয়েতে উঠতেই রাস্তার সেই করুন অবস্থার টের পেলো ওরা তিনজন| আগের দিন তাড়াহুড়ো আর শরীরে এড্রেনালিনে ভোরে থাকার জন্য উত্তেজনায় সেই রাস্তা দিয়ে আসতে জিনিসটা না বুঝলেও আজকে ধীরে সুস্থে সেই একই রাস্তা দিয়ে যেতেই বুঝতে পারলো আসল ঠেলা | কিছুদূর অন্তর অন্তর রাস্তার মাঝখানটা খোবলানো খোবলানো মনে হতে লাগল, দেখে মনে হতে লাগলো যেন কেউ খুবলে দিয়ে কিছু দিয়ে | কোনমতে খুব সাবধানে সেই গচ্চা গর্ত বাঁচিয়ে গাড়িটাকে আস্তে আস্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো রুদ্র তবে কিছুদূর যেতে না যেতেই গাড়িটাকে স্লো করে পেছন দিকে মানে দীপার দিকে মাথা ঘুরিয়ে রুদ্র বলে উঠল :

"এই দীপা...তেল নিতে হবে, গাড়িতে তেল কম আছে মনে হচ্ছে..."

রুদ্রর মুখে সেই কোথা শুনে নিজের ভুরু দুটো কুঁচকে দীপা বলে উঠলঃ "মানে...? তোকে কাল রাত্রে জিজ্ঞেস করলাম না এই ব্যাপারে? তুই তো বললি যে যা আছে তাতে হয়ে যাবে...আর তা না হলে ডাক্তার-কাকুর কাছ থেকে নিয়ে নিবি...তাহলে এখন...? "


"হ্যাঁ সে তো আমি সকালেই ডাক্তার-কাকুর কাছ থেকে কিছুটা চেয়ে নিয়ে ছিলাম কিন্তু, এখন...এখন তো ফুয়েল গেজে অন্য কিছু দেখাচ্ছে..." বলে ফুয়েল গেজের দিকে ইশারা করল রুদ্র | দীপা সাথে সাথে নিজের সিট থেকে উঠে সেই দিকে তাকাতেই দেখল যে গেজের কাঁটাটা একদম নিচে নেমে এসেছে |



"ওহ! এই ব্যাপার ? ওটা..ওসব কিছু না, তেল আছে । তুই কোনও চিন্তা করিস না নিজের মতন চালা..ব্যাস" বলে আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ল দীপা



"শিওর...তো তুমি?" রুদ্র বলে উঠল



"একদম শিওর তবে এবার একটু জোরে চালা...আটটা বেজে গেছে যে...."



"হম" বলে আর কোনও কথা না বারিয়ে আবার এক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে গাড়ি ভাগাতে লাগলো রুদ্র | প্রায় চল্লিশ মিনিট সেই একি ভাবে যাওয়ার পর হঠাৎ মেন রাস্তা থেকে নেমে পাশে একটা ঝোপ দেখে গাড়িটা দাঁড় করাল রুদ্র | তাকে সেই রূপ দাঁড়াতে দেখে দীপা বলে উঠল :



"কি রে? কি হল? আবার দাঁড়ালি কেন? গাড়িতে কিছু..."



"না না...এমনি কিছু না জাস্ট একটু খিদে পেয়েছে..." বলে পেছন দিকের সিট থেকে একটা ব্যাগ টেনে নিলো রুদ্র | তারপর সেটা চেন খুলে প্লাস্টিকের মধ্যে থেকে দুটো রুটি বার করে গো গ্রাসে গিলে নিলো রুদ্র | তিস্তাকে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে উঠল ; "খাবে তুমি...?"

তিস্তা নিজের মাথা নাড়িয়ে 'না' জানিয়ে আবার সামনের দিকে তাকাল । রুদ্রকে সেই ভাবে খেতে দেখে দীপা বুঝল যে সেই ভাঙা চোরা পথ দিয়ে গাড়ি চালানোর জন্যই ওর অতটা খিদে পেয়ে গেছে |


পেট শান্ত করে জলের বোতল থেকে এক ঢোঁক জল মুখে নিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকটায় তাকাল রুদ্র, সত্যি সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই পাল্টে যায় | এক সময় যে হাইওয়ে ছিল মকমলের মতন মোলায়েম আজ সেটাই পরিণত হয়েছে এই পরিত্যক্ত, ভাঙা আর আগাছা ভর্তি রাস্তায় | সেই কারণেই হয়ত খুব একটা গাড়িও তেমন চোখে পড়লো না ওদের | যাও বা দু তিনটে চোখে পড়ল সে সবই তাদের উল্টোদিকে চলে গেল | অন্যমনস্ক হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই সব কথা চিন্তা করছিল রুদ্র এমন সময় হঠাৎ তিস্তার কণ্ঠস্বর শুনে তার সম্বিত ফিরল ঃ

"চলো এবার...এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি যে..."


তিস্তার কথা শুনে নিজের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে রুদ্র আবার গাড়ি স্টার্ট করে হাইওয়ে ধড়ে এগিয়ে যেতে লাগলো ওরা | আরও প্রায় ঘণ্টা খানেক সেই পথে যাওয়ার পর তিস্তা আবার মোবাইল ফোনটা ওপর তুলে ধরে রাস্তাটা আরেকবার মিলিয়ে নিলো |


"এইবার...এইবার এই এখন দিয়ে ঘুরে সোজা..." তবে তার কথা শেষ হতে না হতেই রুদ্র প্রাণপণে গাড়ির ব্রেকটা চেপে ধরল | অকস্মাৎ অত জোরে ব্রেক লাগানোর ফলে গাড়িটা পিছলে গিয়ে ঘষটাতে ঘষটাতে কিছুদূর গিয়ে থামল | গাড়িতে সিটবেল্ট ছিল না তাই তিস্তা প্রথমেই ড্যাশবার্ডে ধাক্কা খেলো । রুদ্র কোন মতে নিজের হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে নিলো । দীপা পেছনে থাকার ফলে বেশী জখম হল না । সব কিছু এতটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে গাড়ির বাকি দুজন যাত্রী ভয়ে কাবু হয়ে গেল | টায়ারের রাবার পোড়া গন্ধ ওদের নাকে আসতে লাগল । দীপা আস্তে আস্তে নিজের সিট থেকে উঠে তিস্তাকে সোজা করতেই দেখল যে তিস্তা পুরোপুরি ঠিক আছে ।


"তোর লাগেনি তো তিস্তা...?"


"না না দীপা দি, ঠিক টাইমে হাঁটু দিয়ে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য কিছু হয়নি...তবে রুদ্র তুমি ঠিক আছো তো..." রুদ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল তিস্তা।


তিস্তার কথা শুনে দীপাও সেই দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল "কি...? কি হল রু ?" আর সাথে সাথে ওদের নাকে একটা পচা ভোঁটকা গন্ধ ভেসে এলো | গন্ধটা এতটাই তীব্রতর ছিল যে দীপার গা গুলিয়ে উঠতে লাগল |


দীপার প্রশ্ন শুনে রুদ্র আস্তে আস্তে নিজের তর্জনী তুলে সামনে দিকে ইশারা করল "সাম...সামনের অবস্থাটা দেখো এক...একবার..." বলে গাড়ির দরজাটা খুলে গাড়ি থেকে নিচে নামল রুদ্র | তাকে দেখা দেখি বাকি দুজনও গাড়ি থেকে নেমে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটা দেখল | রুদ্র যদি ঠিক সময় গাড়ির ব্রেকটা না টিপত তাহলে হয়তো তাদেরও স্থান সেইখানেই হত | সে কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য....গাড়ি থেকে পাঁচ ফুট পর সামনের রাস্তার কোনও অস্তিত্বই দেখতে পেলো না ওরা | সেই রাস্তার জায়গায় প্রায় পঞ্চাশ ফুট গভীর একটা খাইয়ের মতন দেখতে পেল ওরা আর সেই খাইয়ের মধ্যেই পরে থাকতে দেখল লাশের পর লাশ | সেই সব লাশই পোচে গোলে গিয়ে সেই দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে......কিছুটা দূরে আবার কোয়াকটা কুকুরকে একটা মরার হাত নিয়ে ঝগড়া করতে দেখা গেল ।


রুদ্র এইরকম ভয়াবহ দৃশ্য যেন আগে কোনোদিনও দেখেনি | সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে সেই খাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আশ্চর্যে প্রশ্ন করল "এ...এটা...কি? এখানে...রাস্তা...রাস্তা কোই? এত লাশ..?"


"বুঝতে পারছনা রুদ্র?" বলে ওর মুখের দিকে তাকাল তিস্তা তারপর আবার বলে উঠল ," এটা...এটা ভাগাড়....' একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলে উঠল , "হয়তো...একসময় এখান দিয়ে যাতায়াত করার জন্য একটা রাস্তা ছিল কিন্তু যুদ্ধের পর সেটার আর কোনও অংশই অবশিষ্ট নেই, দ্যাখো এখনও ওই জায়গাগুলোতে শেলিং এর ক্রেটার হয়ে রয়েছে" বলে নিজের আঙ্গুল দিয়ে নিচের দিকে ইশারা করল তিস্তা | তিস্তার কথা শুনে রুদ্র সামনের দিকে একটু এগিয়ে যেতেই দেখল যে সত্যি বিশাল বিশাল গর্তের মতন কেমন সব হয়ে রয়েছে | সেই দিকে মন দিয়ে কিছুক্ষণ তাকাতেই রুদ্রর চোখ পড়ল তারই ঠিক পাশের পরে থাকা একটা লম্বা পাইপের মতন জিনিসের ওপর | দেখে মনে হল যেন মাটি থেকে বেরিয়ে রয়েছে | সেই দিকে ইশারা করে রুদ্র বলল ঃ

"ওটা...ওটা কি? জলের পাইপ নাকি...? কিন্তু ওইরকম তো পাইপ হয়না...তবে..."



"ওটা পাইপ না রুদ্র, ওটা ট্যাঙ্ক....মানে যুদ্ধের ট্যাঙ্কের অবশিষ্ট অংশ..."



"ট্যাঙ্ক?" অবাক হয়ে সেই জিনিসটার দিকে আবার একবার তাকাল রুদ্র,"হমম...তাহলে, তাহলে ঠিকই বুঝেছি আমি...."




"কি?" অবাক হয়ে রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল তিস্তা



"এই জায়গাটাই মেন্ হাব ছিল, মানে এখন দিয়েই ওই দিকে যাওয়ার রাস্তা ছিল তাই শত্রুরা যাতে এই দিকে না ঢুকতে পারে সেই জন্যই রেসিস্টেন্সরা এখানে নিজেদের ট্যাঙ্ক আর্টিলারি দিয়ে রোডব্লক বানিয়েছিল...তবে সেটা যে কতটা কার্যকরী হয়েছিল সেটা আমি জানি না কিন্তু সেই রোডব্লক সরাবার জন্যই বা আক্রশ দেখাবার জন্যই যে শত্রুরা এখানে শেলিং করেছিল সেটা বুঝতে পারছি..."



"হমম আর এখন এই জায়গাটাই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে..."



"হ্যাঁ...বা পরিণত করছে সবাইকে মনে করাবার জন্য যে তাদের বিরুদ্ধে গেলে অন্যদেরও এই একি পরিণতি হবে..." রুদ্র বলে উঠল



"তিস্তা...এছাড়া আর কোনও রাস্তার ব্যাপারে জানিস তুই..." হঠাৎ পেছন থেকে দীপা বলে উঠল | রুদ্র আর তিস্তা তার গলার আওয়াজ শুনে পেছনে ঘুরতেই দীপাকে নাকে কাপড় চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল |



"হ্যাঁ... জানি দীপা দি কিন্তু...সেটা অনেক ঘুরপথ...মানে পুরোই উল্টো দিক আর ওইদিকে কি বিপদ..."



"আর..তাছাড়া কোনও রাস্তা আছে কি...?"



"না..সেটা ছাড়া আমাদের যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই, দীপা দি আর যদি থেকেও থাকে তাহলে সেটার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না..." তিস্তা বলে উঠল



"তাহলে আর দেরি করা যাবে না একদম...তাড়াতাড়ি চল! এখান থেকে চল অন্তত...গাড়িতে ওঠ...সূর্য থাকতে থাকতে আমাদের সেখানে পৌঁছতেই হবে যে করেই হোক...নাহলে" শক্ত গলায় বলে উঠল দীপা "রু, গাড়িতে ওঠ!"


দীপার কথা শুনে রুদ্র সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট করে সেটাকে আস্তে আস্তে ব্যাক করে তিস্তার দিকে তাকাল ।


"হাইওয়েতে ওঠে আবার...তারপর আবার সোজা যেতে হবে..." তিস্তা বলে উঠল | তিস্তার কথা শুনে রুদ্র আবার হাইওয়েতে উঠে গাড়িটাকে ছোটাতে লাগল | একের-পর এক মাঠঘাট জলা জঙ্গল পেরোতে পেরোতে সেই নতুন রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা | তবে যতই না ওরা সেই রাস্তা দিয়ে এগোতে লাগল ততই ওদের মনে নতুন একটা আশংকা দানা বাঁধতে লাগলো | "তারা ঠিক পৌঁছতে পারবো তো সেখানে....?"


রুদ্রকে সেই নতুন রাস্তা বলে দিতে দিতে সেখান দিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো তিস্তা | দীপা পেছনের সিটে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল এমন সময় একটা ঘরের বাইরে লাগান একটা বোর্ড চোখে পড়ল দীপা । অবশেষে প্রায় তিনঘণ্টা পর ওরা রঘুনাথপুর পেরল |

"রঘুনাথপুর..."



"কোথায় দেখলে...?"



"ওই পেছনের বার্ডটায়..." দীপা বলে উঠল



"ওহ! তাহলে এখান থেকে আর বেশি দূর নয় লেকটা" তিস্তা বলে উঠল



"হমম রু, গাড়িটাকে এইবার এখানে কোথাও একটা লুকোতে হবে, মানে এই ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে..."



"কেন? এখনতো অনেক দেরি আছে...তাই না তিস্তা? " তিস্তার দিকে ঘুরে প্রশ্ন করল রুদ্র



"হমম তবুও...বলা যায়না, গাড়িটা দূরে রাখা ভালো..." দীপা বলে উঠল



"কিন্তু যদি আমাদের আবার পালাতে হয়...তাহলে?" তিস্তা বলে উঠল



"সেই জন্যই তো একটা মাঝের জায়গা দেখে দাঁড় করাতে বললাম আমি"



"ওহ আচ্ছা ঠিক আছে..." রুদ্র বলে উঠল


রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে যেতে যেতে হঠাৎ লেকর মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি নজরে পড়ল রুদ্রর | ঝোপ জঙ্গলের ভেতরে থাকার কারণে বাড়িটা খুব সহজে বাকিদের চোখে না পড়লেও রুদ্রর চোখে একবারে পড়ল | সে গাড়িটাকে মেন্ রাস্তা থেকে নামিয়ে আস্তে আস্তে সেই বাড়ির পেছনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করল "এখানে..?"


"একদম পারফেক্ট স্পট" দীপা বলে উঠল


গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখতেই দীপা বুঝল যে বাড়িটা পরিত্যক্ত হয়েছে অনেকদিনই আর তার ফলে চারিদিক দিয়ে গজিয়ে উঠেছে একাধিক লতা পাতা | সেই ঘন গাছগাছড়ার একটা ঝোপের পেছনে একটা ভালো স্পট দেখতে পেলো দীপা আর সাথে সাথে রুদ্রর কাছে ফিরে গিয়ে তাকে সেইখানে গাড়িটা নিয়ে যেতে বলল | রুদ্র আস্তে আস্তে সেই ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে গাড়িটাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে দাঁড় করিয়ে তারপর গাড়ি থেকে নেমে আরও কিছু গাছের ডাল পালা এপাশ ওপাশ থেকে এনে গাড়িটার ওপর চাপিয়ে দিলো লুকানোর জন্য | অবশ্য গাড়ির নতুন রঙের ফলে সেটা দেখা যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না | অবশেষে নিজের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে দীপার দিকে ঘুরে হাসল রুদ্র |


"নাইস ওয়ার্ক তবে চল, চল এবার" দীপা বলে উঠল | তিস্তা গাড়ি থেকে মালপত্র আগেই বের করে নিয়েছিল তাই এবার দীপার কথা শুনে সবাই নিজেদের ব্যাগ-ট্যাগগুলো নিজেদের পিঠে কাঁধে চাপিয়ে নিলো | সামনের রাস্তাটা দেখে খালি খালি মনে হলেও ওরা রাস্তা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো | আগে থাকতেই ম্যাপে দেখেছিলো যে সামনে লেকের দিকটা জঙ্গলটা অনেকটাই কম আছে কিন্তু সেই রাস্তা ধরতে চাইলো না ওরা | জঙ্গলের ভেতর দিয়েই আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগল যেতে লাগলো ওরা | সূর্য দেবর প্রকোপ প্রবল থেকে প্রবলতর হয় গেলেও বড়ো বড়ো গাছ থাকায় ফলে তার থেকে অনেকটাই মুক্তি পেলো ওরা | কিছুদূর যেতে না যেতেই নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে একবার সময়টা দেখল রুদ্র | তখন প্রায় দুপুর তিনটে |


দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিল তিস্তা তার পেছনে ছিল দীপা আর সব শেষে ছিল রুদ্র । সমতল জমি থেকে যে ওরা এইবার আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে সেটা খাঁড়াই অনুভব করে বুঝতে পারল ওরা | এমনিই জায়গাটা পাহাড়ি আর তার ফলে যতই না ওরা এগোতে লাগল ততই জঙ্গলটা ঘন আর গুরুতর হয়ে উঠতে আরম্ভ করলো | এভারগ্রিন গাছে ভর্তি থাকার ফলে আস্তে আস্তে জঙ্গলটা দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে আরম্ভ করলো| সেই দেখে তিস্তা নিজের ব্যাগ থেকে ডাক্তার-কাকুর দেওয়া সেই বড়ো ছোঁড়াটা বের করে গাছের ডালগুলো কেটে আগে যাওয়ার রাস্তা বানাতে লাগলো| কিছুদূর সেই ভাবে যাওয়ার পর তিনজনেই ঘেমে চান করে গেলো |


"আর...পারছিনা, দাঁড়া...দাঁড়া একটু জিরিয়ে নিতে দে" বলে হাঁপাতে হাঁপাতে একটা বড়ো পাথর খণ্ডের ওপর গিয়ে বসে পড়ল দীপা | তাকে দেখা দেখি রুদ্রও তার পাশে গিয়ে বসে পড়ল | নিজের কপাল বেয়ে ঘাম পরতে দেখে রুদ্র নিজের হাত দিয়ে মুছতে যেতেই দীপা নিজের জামার কোন দিয়ে সেটা মুছিয়ে দিলো | কিছুক্ষণ সেখানে সেইভাবে বসে থাকার পর রুদ্র নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ম্যাপটাকে আবার একবার ভালো করে দেখে নিলো |


"আমরা ঠিক দিকেই এগোচ্ছই..." ম্যাপের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো রুদ্র |



"আর ইউ শিওর রু, আশপাশের অবস্থা দেখে সেটা তো মনে হচ্ছে না ?" অনিশ্চিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠল দীপা



"হ্যাঁ...এই তো এই ম্যাপের স্কেল আর সূর্যের দিক অনুযায়ী আমার মনে হচ্ছে আমরা ঠিক দিকেই যাচ্ছি..."



"কিন্তু আমরা তো অনেকটাই পথ চলে এলাম তাইনা...?"



"হ্যাঁ...আর তাই জন্যই বলছি আমরা ঠিক দিকে এগোচ্ছি..." রুদ্র বলে উঠল



"তারমানে...?" পাস থেকে তিস্তা বলে উঠল



"তারমানে? তারমানে আমার মনে হচ্ছে যে আমরা সেই জায়গার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি" আশান্বিত গলায় বলে উঠলো রুদ্র "আর নিয়ার এবাউট ২৪০০ মিটারেই ওই জায়গাটা আমাদের সামনে চলে আসা উচিত"



"২৪০০মিটার! মানে ২.৪ কিমি.???" দীপা চেঁচিয়ে উঠল



"হমম..." রুদ্রর কথা শুনতেই বাকি দুজন আরও উৎসাহিত হয়ে উঠলো | দীপা পাথরের ওপর থেকে উঠে আবার নিজের ব্যাগ পরে নিয়ে এগোতে লাগল তবে এইবার নিজের চলার গতি বাড়িয়ে দিলো | তাহলে অবশেষে তাদের দুঃখের অবসান ঘটবে আজকে...

"তবে রু, এত সহজে জায়গাটা পেয়ে গেলে তাহলে সেটা কি সেফ হাউস হবে..." ঝোপঝাড় ডিঙোতে ডিঙোতে সামনে থেকে বলে উঠল দীপা



"হ্যাঁ আমিও সেটাই ভাবছি জানতো...মানে অনেক সহজেই আমরা এখানে পৌঁছে...." তবে নিজে মুখের কথা শেষ করার আগেই হঠাৎ তিস্তা বলে উঠল ঃ



"ওইটা...ওইটা কি...?" সামনের দিকে আঙ্গুল তুলে তিস্তা প্রশ্ন করে উঠল | রুদ্রর আর দীপা সেই ইশারা অনুসরণ করে সেই দিকে তাকাতেই জিনিসটা দেখল কিন্তু ঠিক করে বুঝতে পারল না জিনিসটা আসলে কি...




"ওটা...ওটা, কি? গাছ? বুঝতে পারছিনা আমি "



"সামনে চল আরেকটু তাহলে বুঝতে পারবি..." বলে উঠে আস্তে আস্তে সেই দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো দীপা |

আর ঠিক দীপার কথা মতোই সামনে এগোতেই হঠাৎ সেই জিনিসটা পরিষ্কার দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা তাদের যাওয়ার রাস্তায় সেই বিরাট প্রাচীরটা দেখে, ক্যাকটাসের সেই বিরাট প্রাচীর।

দীপা আস্তে আস্তে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ভালো করে জিনিসটা দেখে বলে উঠল "এটা এখানে...এটা এখানে কি করে..? ওরকম তো..."


সেটাকে দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিলো যে কেউ ইচ্ছা করেই সেই বাধাটা সৃষ্টি করেছিল! ঠিক একটা পাহাড়ের মতন ছোট থেকে আস্তে আস্তে মাঝারি তারপর আস্তে আস্তে বিরাট বড়ো হয়ে গেছে সেই ক্যাকটাসের গাছগুলো আবার তারই মধ্যে মধ্যে আবার গজিয়ে উঠেছে মোটা মোটা অশথ গাছ | মনে হচ্ছিলো যেন ক্যাকটাসকে অশথ গাছে পাহারা দিচ্ছে আবার অশথ গাছকে যেন ক্যাকটাসে পাহারা দিচ্ছে | এমনি কোনও গাছ হলে সেগুলোর ওপরে উঠে না হয় ঐদিকে যাওয়া পরিকল্পনা করা যেত কিন্তু সেই বিরাট বিরাট ক্যাকটাসের ওপর ওঠার কোনও প্রশ্নই আসেনা | ক্যাকটাসের প্রতিটা কাঁটা প্রায় ইঞ্চি দশেক লম্বা | সেই কাঁটা একবার শরীরে বিঁধে গেলে বাঁচার কোনও প্রশ্নই থাকবে না |


"এর মানে বুঝতে পারছিস তো তোরা...." দীপা হঠাৎ বলে উঠল



"হমম..আমরা সেই জায়গা খুব কাঁচা কচি এসে পড়েছি...আর সেই জন্যই এই প্রটেকসান, কিন্তু এখন দিয়ে কি করে যাব আমরা...মানে পেছন দিকটা এরকম হলে সাইডেও একই অবস্থা হবে..." তিস্তা বলে উঠল


তিনজনেই আবার সেই বিরাট প্রাচীরের দিকে তাকাল এমন সময় হঠাৎ পাশ থেকে রুদ্র উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল "এখন দিয়ে ভেতরে ঢোকার নিশ্চয়ই অন্য কোনও রাস্তা আছে...মানে কোনও গুপ্ত পথ বা ওই ট্র্যাপ-ডোর জাতীয়...মনে আছে তোমাদের...? তোমরা ওইদিকটা খোঁজো....আমিও খুঁজছি"


রুদ্রর কথা শুনে বাকি দুজনও উত্তেজিত হয়ে এদিক ঐদিক খুঁজতে লাগলো | পাচিলের সামনের প্রতিটা অংশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খোঁজার পরেও কোনও কিছু না পেয়ে নিরাশ হয়ে আবার ওরা একই জায়গায় ফিরে এলো |


সূর্য তখন প্রায় অস্ত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গাছে এমন সময়ে রুদ্র বলল "ওই..ওই পাশটা দিয়ে ঘুরে গেলে হয় না, মানে ওই বাঁদিকটা দিয়ে"

"না...ঐদিকেও এইরকমই একই অবস্থা রু..." দীপা বলে উঠল



"তাহলে? তাহলে এই এত সামনে এসে হার মেনে যাবো আমরা...? সেরকম হলে আজকের রাতটা এখানে..." রুদ্র বলে উঠল



"ক্ষেপেছিস তুই...এই দুর্ভেদ্য জঙ্গলে রাতির কাটানোর কথা বলছিস কি করে তুই? এখানে মানুষ না থাকলেও কি ধরনের জন্তু জানোয়ার আছে সে সব আমরা কিছুই জানি না..." দীপা বলে উঠল



"দেন হোয়াট ডু ইয়উ রেকন...?"



"আমার...আমার সঙ্গে এসো...এইদিকে" হঠাৎ তৃতীয় ব্যক্তির আগমন টের পেয়ে সেই দিয়ে তাকাতেই তিস্তাকে দেখতে পেলো ওরা | তিস্তার অনুপস্থিতি এতক্ষণ না বুঝলেও তার গলার আওয়াজ পেয়ে সেইদিকে তাকাতেই তাকে হাঁপাতে হাঁপাতে তাদের দিকে তাকিয়ে হাঁসতে দেখল ওরা|


"কোথায়? কোথায় যাবো আমরা...? কোন দিক দিয়ে..." তিস্তার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল দীপা



"এই পাঁচিলটার প্যারালাল..."



"মানে...?"



"মানে এই প্রাচীরের একদম গা ঘেঁসে যে পথটা চলে গেছে...সেইখান দিয়ে গিয়ে একবার দেখা যাক...কতদূর গেছে সেই পথটা..." তিস্তার কথা শুনে রুদ্র সাথে সাথে নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ম্যাপের ছবিটা দেখতেই বলে উঠল "দাঁড়াও দাঁড়াও....এই..এই রাস্তাটা তো জলের দিকে চলে গেছে...মানে ওই লেকের দিকে"



"তাই চল...আমাদের কাছে আর কোনও রাস্তা নেই..." বলে দীপা সেই দিকে এগিয়ে গেল



"এই নাও দীপা-দি টর্চটা..." নিজের বাগ থেকে টর্চটা বার করে দীপার হাতে দিয়ে বলে উঠল তিস্তা । তিনজন সেই কাঁটা প্রাচীরের গা ঘেঁসে আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগল | কেউ যতই সাবধান হোক না কেন একটা না একটা কাঁটা লাগা অবধারনিও । দীপারও সেই রকমই হাতে আর পায়ে কাঁটা লেগে কেটে গেল কিন্তু সে সেই দিকে কোনও ধ্যান না দিয়ে সামনের দিকে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যেতে লাগল |

আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে এগোতে আরও প্রায় আধ ঘণ্টা হাঁটার পর ওরা নিজেরদের সামনে সেই বিশাল হ্রদটাকে দেখতে পেলো | সামনে অনেকদূরে কয়েকটা আলো দুর্বল ভাবে জ্বলে থাকতে দেখল ওরা ।

"দেখছ..দেখছও তো তোমাদের বললাম না যে এটা সোজা জলের সঙ্গে এসে মিশেছে" রুদ্র বলে উঠল



"হমম তারমানে ব্যাপারটা বুঝলি তো...? এই পাঁচিলটা...মানে এই জায়গাটা পুরোপুরি পরিকল্পনা করে বানানো আর আমি ১০০% শিওর যে ওই পাঁচিলের ওইপাশেই আছে আমাদের সেই সেফ হাউস..." তবে দীপার কথা শেষ হতে না যেতেই আকাশে মেঘ ডেকে উঠলো



"ফাক...দিস ইস ব্যাড..." তিস্তা বলে উঠল



"হমম, গোদের উপর বিষফোড়া...." পাশ থেকে দীপা বলে উঠলো



"তাহলে..তাহলে, এবার আমরা কি করব দীপা দি...? " তিস্তা বলে উঠল



"আমাদের কাছে আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই, আর আকাশের অবস্থা দেখে যা মনে হচ্ছে তাতে একটু পরেই হয়তো বৃষ্টিও এসে যাবে। আর এখানে রাত কাটানোর কোন প্রশ্নই নেই তাই, এইখান...এইদিক দিয়ে আস্তে আস্তে জলে নেমে সাঁতার কেটে ওই দিকে গিয়ে একবার দেখা যেতে পারে...আমাদের এই দেওয়াল ধরে জলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই..." দীপা বলে উঠল



"মানে? তারপর..'



"তারপর দেখতে হবে এমন একটা জায়গা যেখানে ক্যাকটাস নেই বা কম আছে...আর সেখান গিয়ে দেখতে হবে আমরা ভেতরে পৌঁছতে পারি কিনা" দীপা বলে উঠল



"কিন্তু...কিন্তু..জলে নামলে আমাদের সব কিছুই তো ভিজে যাবে তাহলে, মানে স্টার্টইং ফ্রম জামা কাপড়, ব্যাগ-ট্যাগম কাগজ-পত্র আর তিস্তার বন্দুকে একবার জল ঢুকে গেলে তো হয়েই গেল" অনিশ্চিত কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র



"এখানে বসে থাকলে একটু পরে বৃষ্টিতে এমনিই ভিজে যাবে..." দীপা বলে উঠল



"হ্যাঁ...কিন্তু জলে নামলেও তো ভিজে যাবে..."



"কেন? ভিজবে কেন ? প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো কি এমনি এমনি নিতে বলেছিলাম তোদের...?" দীপা বলে উঠল



"মানে....?" রুদ্র বলে উঠল



"মানে আমরা যে প্লাস্টিকের ব্যাগগুল সঙ্গে এনেছি তার মধ্যে সব জিনিস ঢুকিয়ে নেবো আমরা | তোদের নিজেদের নিজেদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুল প্রথমে প্লাস্টিকে ঢোকা তারপর সেগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে দে আর বাকি জিনিসগুলো সাবধানে হাতে ধরে নে "



"সে না হয় হল কিন্তু জামা কাপড়....?" তিস্তা বলে উঠল



"সব কিছু খুলে ভেতরে প্লাস্টিকের ভেতরে ঢুকিয়ে নে...এখানে সবাই সবাইকে ল্যাংটো দেখেছে তাই লজ্জার কিছু নেই..." বলে সাথে সাথে নিজের পরনের কামিজ আর প্যান্ট খুলে দিয়ে পুরো উলঙ্গ হয়ে গেলো দীপা | সেই অন্ধকার অনিশ্চয়তার মদ্ধেও দীপার সেই অপরূপ নগ্ন সৌন্দর্য দেখে রুদ্রর ধমনীর রক্ত গরম হয়ে উঠতে লাগল ।


'হমম..গুড আইডিয়া....দীপা দি" বলে তিস্তাও নিজের পরনের জামা আর হটস খুলে ফেললো আর তার দেখা দেখি রুদ্রও পুরো উলঙ্গ হয়ে গেল | নিজেদের সব দরকারি জিনিসপত্রগুল যথাসম্ভব প্যাক করে প্লাস্টিক করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে জলের নামার জন্য প্রস্তুত হল ওরা | দীপাকে আগে জলে নামতে দেখে রুদ্র ওর হাত ধরে ওকে বাধা দিয়ে বলে উঠল ঃ

"দীপা আর ইউ শিওর....আমরা অন্য..."


"আমি জানি না রু...অ্যাই রেয়ালি ডোন্ট নো বাট দিস ইস আওয়ার লাস্ট রিসোর্ট...আমাদের এটা করতেই হবে..." দীপার কণ্ঠে একটা শক্ত দৃঢ়তা অনুভব করতেই রুদ্রর মন থেকে সব ভয় কেটে গেল...নিজের মধ্যে আবার সেই সাহসিকতা অনুভব করে দীপাকে অনুসরন করে এগিয়ে গেল রুদ্রও | প্রথমে দীপা তারপর রুদ্র আর একদম শেষে তিস্তা একে একে আস্তে আস্তে সবাই মিলে জলে নেমে পড়ল |


প্রথমে জলটা খুব ঠাণ্ডা লাগলেও একটু পরেই সেটা খুব আরামদায়ক লাগতে লাগলো ওদের | জানুয়ারি মাসের ঠাণ্ডা এখন আর সেইরকম না থাকার জন্যই তাদের তেমন কিছু অসুবিধা হল না| প্রকৃতপক্ষে বছরের এই সময়ে জল আর আবহাওয়া খুব ঠাণ্ডা হওয়া উচিত কিন্তু গ্লোবাল ওয়ার্মিং আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সব কিছুই পাল্টে গেছিলো | আবহাওয়াটা ওদের খুবই মনোরম লাগতে আরম্ভ করলো - ঠিক যেমন লাগে বসন্তের শেষের আর গ্রীষ্মের প্রথম দিকে। সৌভাগ্যক্রমেই আকাশে জমে থাকা ঘন কালো মেঘের ঘটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যেতে লাগলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই আকাশে চাঁদ বেরিয়ে পড়ল | ওরা সেই আলোতেই আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো এমন সময় রুদ্র বলে উঠল ঃ

"এই তোমরা...পায়ে ফীল করতে পারছ....?"



"হ্যাঁ...পারছি, জল খুব বেশি গভীর নয় এইখানটায়..." তিস্তা বলে উঠলো



"হমম...তবে সাবধানে কিন্তু...ঢেউ রয়েছে কিন্তু অল্প" সামনে থেকে দীপা বলে উঠল


জলের স্তরটা তাদের গলা অবধি হলেও, ভাগ্যক্রমে এপাশে লেকের নীচের অংশটা বেশ শক্তই ছিল তাই সেখান দিয়ে হাটতে তাদের কোনও অসুবিধাই হচ্ছিলো না, তবে মাথার ওপরে নিজেদের ব্যাগ আর জিনিসপত্র থাকার ফলে সেগুলো ধরে রাখতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিলো ওদের | জিনিসপত্রগুল প্লাস্টিকে থাকার কারণে মাঝে মধ্যেই সেই ব্যাগগুলো পিছলে যেতে লাগল । সামনের দিকে এগোতে এগোতে ওরা শীঘ্রই বুঝতে পারল যে তাদের পাশের বনটা আস্তে আস্তে হালকা হয়ে যাচ্ছে | আর সেই আশার কিরণ অনুসরণ করতে করতে আরও পনেরো মিনিট ওরকম যেতেই ক্যাকটাসের সেই প্রাচীরটাকেও আস্তে আস্তে কমে যেতে দেখল ওরা | তবে ক্যাকটাস কমে গেলেও এইপাসে আবার অন্য ধরনের লম্বা লম্বা গাছে ভর্তি দেখল ওরা |

"ক্যাকটাসের পাঁচিলটা তো শেষ হয়ে গাছে...এইবারে ওপরে ওঠা যাক নাকি" রুদ্র বলে উঠল ," ওই....ওইখানটা দিয়ে ওঠা যাবে মনে হচ্ছে " একটা ঢালু জায়গার দিকে ইশারা করে বলে উঠল রুদ্র



"না...না...দাড়াও" ফিসফিস করে বলে উঠল তিস্তা "একদম তাড়াহুড়ো কর না..."



"কেন? এখানে তো আর কিছু নেই? তাহলে কেন..." রুদ্র বলে উঠল



"না...তিস্তা ঠিকই বলেছে । এখান দিয়ে সোজাসুজি ওঠা ঠিক হবে না আর সেটা আমার পক্ষেও সম্ভব না" দীপা বলে উঠল



"তাহলে"


"তাহলে...দূরে লেকের পারের কাছটায় দেখ অনেকটা সমতল হয়ে গেছে ল্যান্ডটা...ওইখানে যে গাছগাছালিগুল দেখছিস তার পেছন গিয়েই আপাতত দাঁড়াই চল, মানে বলা যায়না যদি এখানে গার্ড থেকে থাকে তাহলে আমাদের পুরো প্ল্যানটাই শেষ হয়ে যাবে...." দীপা বলে উঠল | দীপার কথা শুনে আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে একটা মোটা গাছের কাণ্ড ধরে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে গেল রুদ্র, তার পেছনে উঠল দীপা আর সব শেষে তিস্তা | তারপর নিজেদের সব জিনিস-পত্রগুলো একটা গাছের পেছনে রেখে আস্তে আস্তে সেই লম্বা গাছগুলোর আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা | ওপরে আকাশের তারাগুলো মিটি মিটি করে চেয়ে দেখতে লাগলো সেই তিন-মূর্তির কাণ্ড কারখানা |


WYrii1N.jpg
 
Last edited:
  • Like
Reactions: ranaroy
207
438
64
পর্ব ৩৭

সেই লম্বা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল ওরা | সেই অন্ধকারের মধ্যে ঠিক করে ঠাহর করতে লাগল যে সেইখানে কেউ আছে কি নেই । তারপর আস্তে আস্তে সেই গাছের পেছন থেকে বেরিয়ে আরেকটা গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল ওরা । এইরকম একটা গাছ থেকে আরেকটা গাছের আড়ালে থাকতে থাকতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা তারপর এমন সময় হঠাৎই সেই লম্বা গাছ-গুলর শাখাপ্রশাখার মধ্যে দিয়ে চাঁদের আলো ধেয়ে এলো আর সাথে সাথে সেই আলোতে সেই প্রথমবার দেখতে পেলো তাদের সেই সেফ হাউসটাকে...ঠিক যেমন উইকি-ম্যাপিয়াতে দেখেছিলো ওরা ঠিক সেইরকমই লোকেশনে । শেষমেশ চোখের সামনে নিজেদের মুক্তির ঠিকানাটা দেখতে পেয়ে দীপা স্বস্তিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তারপর তিস্তার দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বলে উঠল :
"তিস্তা, এইবার আস্তে আস্তে আমাদের ব্যাগগুলো পেছন থেকে নিয়ে আয়, আমরা আপাতত এখানেই দাঁড়াবো কিছুক্ষণ..."
দীপার কথা শুনে তিস্তা নিজের মাথা নাড়িয়ে সাথে সাথে ওদের ব্যাগগুলো নিয়ে এসে ওদের পায়ের কাছে এনে রাখল | তবে পাণ্ডে-জির যে ভালো জিনিসের প্রতি চোখ আছে সেটা সেই জায়গাটা দেখে তিনজনেই বুঝতে পারল । সত্যিই জায়গাটা খুবই সেফ আর সিকিওর আর এমনি ভাবে বানানো যে কাছ থেকে দেখলেও ঠিক করে বোঝা যাবে না সেফ হাউসটাকে | আর কেউ যদি দূর থেকে দেখে তাহলে তার রং আর স্ট্রাকচার দেখে ভাববে যে সেটা জঙ্গলেরই একটা ভাগ | সামনের দিকে লেকের জলটাকে ধরে রাখা হয়েছে যার ফলে একটা আলাদা দিঘির
মতন জলাশয় তৈরি হয়েছে তবে সেটাকে দেখে অনেকটা সুইমিংপুলের মতন হল ওদের । বড় বড় পাতা যুক্ত গাছ-গুল এমন ভাবে সেই জায়গাটাকে ঘিরে ছিল যে তাদের দেখে মনে হতে লাগল যেন কেউ ইচ্ছা করেই সেই ভাবে তাদের পুঁতেছে | আর সেই গাছ-গুলর ঠিক পেছনেই ছিল তাদের সেই একতলা সেফ হাউস | রুদ্র সেই দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বলে উঠল ঃ

"টর্চটা দাও..."



"কেন...? এখন টর্চ দিয়ে কি করবি তুই...?" রুদ্রর দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বলে উঠল দীপা

"টর্চ দিয়ে যা করে তাই করব...সামনে যাবো ওইদিকে..." বলে দীপার হাত থেকে টর্চটা কেরে নিয়ে রুদ্র প্রায় সেই দিকে পা বাড়াল এমন সময় খপ করে ওর হাতটা ওর হাতটা চেপে ধরে ওকে বাধা দিলো তিস্তা | নিজের কাজে বাধা পাওয়ায় রুদ্র তিস্তার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকাতেই তিস্তা বলল :

"প্লিজ রুদ্র...এতদিন যখন তুমি অপেক্ষা করতে পেরেছ তখন আরও কিছুটা সময় তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে পারবে...প্লিজ" রুদ্রর হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠল তিস্তা | সে বুঝতে পারছিল যে এত সামনে এসে পরে রুদ্র আর নিজের প্রতি সংযম রাখতে পারছেনা ।

"কিন্তু...এখানে তো কেউ নেই....দেন....? হোয়াট আর উই ওয়েটিং ফর...? এখন আবার কেন এত...?" নিজের কথা শেষ করতে যেতেই দীপা পাশ থেকে বলে উঠল ঃ

"কেউ না থাকলেও...সাবধানের কোনও মার নেই রু, সাফলতার ঠিক দোরগোড়াতে এসেই লোকেরা ভিরমি খেয়ে মুখ থুবড়ে পরে যায়, আর সেই জন্যই আমরা এখানে এখন অপেক্ষা করছি অ্যান্ড দ্যাটস অ্যাই প্রে টু ইয়উ প্লিজ...প্লিজ ওয়েট এ বিট রু...." |
দীপার কণ্ঠে সেই কাতর অনুরধের সুর শুনেই রুদ্রর সব বিরক্তি গোলে জল হয়ে গেল আর সাথে সাথে টর্চটা আবার দীপার হাতে দিয়ে "সরি" বলে উঠল... দীপার তার প্রেমিকা হলেও সেই ছিল তার একমাত্র গার্ডিয়ান তাই তার কথা কখনই অমান্য করত না রুদ্র । অন্যথা আর কোনও উপায় না দেখতে পেয়ে আস্তে আস্তে সেই গাছের পেছনেই বসে পরে সামনের দিকে আবার মনোযোগ দিকে চেয়ে থাকল রুদ্র | অন্যদিকে রাত আস্তে আস্তে ঘন হতে আরম্ভ করতেই সামনের জঙ্গল থেকে ঝিঝির ডাক ভেসে আসতে আরম্ভ করল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠল |
"তিস্তা...কিছু টের পাচ্ছিস...?"
"না...না দীপা দি, কোনও জনমানবের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না আমি..."
"আর দেখতে পাবেও না..." নিজের মনে মনে বলে উঠল রুদ্র । আধঘণ্টা ধরে সেই স্যাঁতস্যাঁতে গাছের পেছনে লুকিয়ে সেই বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুদ্র এতটাই বোর হয়ে গিয়েছিল যে সে অন্যমনস্ক হয়ে এইদিক ওইদিক তাকাতে লাগলো | উলটো দিকে ঘুরে বাঁ দিকে তাকাতেই হঠাৎ দীপার ওপর নজর পড়লো ওর | সদ্য জল থেকে উঠে আসার জন্য দীপার নগ্ন শরীরে তখনও কিছু জল রেখা দেখা যাচ্ছিল | গাছের ফাঁক দিয়ে যেটুকু চাঁদের আলো তাদের উপর এসে পরছিল তাতেই সে দীপার উলঙ্গ শরীরটাকে উপভোগ করতে আরম্ভ করল । সে দেখল যে দীপার যোনির লোমগুলো ভিজে একত্রে মিলিত হয়ে আটকে রয়েছে আর তাই থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল চুইয়ে চুইয়ে তার উরুর ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পরছে | সেই দৃশ্য দেখে রুদ্র এতটাই মোহিত হয়ে পড়ল যে স্থান কাল পাত্র বিচার না করেই নিজের অজান্তেই নিজের লিঙ্গ খাঁড়া করে ফেলল । আরও কিছু দেখার আশাতে নিজের মাথাটা আরও একটু ওপরে তুলতেই নিজের চোখের সামনে দীপার স্তনের বৃন্তগুলোকে
সতেজ খাঁড়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রুদ্র |

yQBNHQ3.jpg

অন্যদিকে নিজের মন সন্তুষ্ট করে দীপা বুঝল যে তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়াতে আর কোনও বিপদ নেই আর সাথে সাথে পাশে ঘুরে সে বলে উঠল ঃ
"চল...চল এবার...ইটস সেফ" আর তারপরই রুদ্রর দিকে চোখ পড়তেই রুদ্রর সেই অবস্থা দেখে বলল "মা গো মা...এখনও ? এই সবের মধ্যেও..? পারিস বটে তুই...."

"হ্যাঁ নাহলে কি করবো বোলো তো...চোখের সামনে তোমার এই অপ্সরার মতন রূপ দেখে যে কেউই মোহিত হয়ে যাবে, কি বল তিস্তা...?" তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র

"হ্যাঁ...সত্যি তাই, আমিও তো....." বলতে গিয়ে থেমে গেলো তিস্তা

"হমম বুঝেছি...তোদের এই ঠাট্টা রঙ্গ তামাসা শেষ হয়ে গেলে বলিস আমাকে তবে যাইহোক এইবার ওই দিকে যাওয়া যেতে পারে...আশা করি আর কোনও বিপদ হবে না আমদের..." বলে পায়ের কাছ থেকে নিজের ব্যাগটা তুলে সেটা কাঁধে লাগাতে যেতেই তাকে তিস্তা বাধা দিয়ে উঠল তিস্তা ।

"না...ওটা আমি নিয়ে যাচ্ছি.....তুমি এই টর্চটা নাও আর আমাদের কে রাস্তা দেখাও । আমরা তোমার পেছন পেছন যাব " বলে দীপার হাতে বড় শেলের টর্চটা ধরিয়ে দিলো তিস্তা । তিস্তা কথা শুনে দীপা নিজের মাথা নাড়িয়ে নিজেদের গন্তব্যের দিকে হাঁটা লাগাতে আরম্ভ করল তবে টর্চের আলোর তেমন কোন প্রয়োজনই হল না | মাথার ওপর সেই লম্বা লম্বা গাছ-গুল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের ডাল পালার মধ্যে দিয়ে আলো ভেসে আসছিলো তাতে তাদের সামনের যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছিল | সেইদিকে তাকিয়ে মন হল কেউ যেন তাদের সহায়তার জন্যই সেই ভাবে তাদের পথে আলো ফেলে সেই জায়গাটাকে আলোকিত করেছে , তাই আর অপেক্ষা না করে দীপা সেই পথ ধরে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো | দীপা এগিয়ে যেতেই তিস্তা নিজেদের সব মাল পত্র গুলকে একত্রে নিজের কাঁধে তুলতে দেখে তার কাছ থেকে অর্ধেক মাল-পত্র নিজের কাঁধে তুলে নিলো রুদ্র । :
"একি...তুমি নিচ্ছ কেন? আমি পারবো তো...কেন? আমি...? " তিস্তা বলে উঠল
"না...আমি থাকতে তোমাকে একা একা এত কিছু নিতে দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা আর এই প্যাকসগুল কি এমনি এমনি হয়েছে নাকি...বলে নিজের পেটের কাছে শক্ত হয়ে ওঠা পেশীর দিকে ইশারা করল রুদ্র...."
"বাবা! ঠিক আছে যাও...কিন্তু সাবধানে, তোমার ছোট ভাই এখনও শুতে যায়নি" বলে দুষ্টু হেসে অর্ধেক জিনিস রুদ্রর সামনে রেখে দীপার দিকে এগিয়ে যেতে আরম্ভ করল তিস্তা | রুদ্রর গায়ে রাক্ষসের জোর থাকলেও সেই খাঁড়া অবস্থাতে ওর হাটতে এতটাই অসুবিধা হচ্ছিল যে সে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোতে লাগল |
দেখতে দেখতে তিনজনই দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে বুঝল যে সেফ হাউসটা আসলে দুতলা | ওরা যে জায়গাতে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা নিচু হওয়ার জন্য সেই ব্যাপারটা আগে ওরা কেউই ঠিক করে ঠাহর করতে পারেনি । তবে এতক্ষণেও চারপাশে কারুর সারা শব্দ না পেয়ে দীপা বুঝেই গেছিলো যে সেখানে তারা ছাড়া আর কেউই ছিল না তাই এবার আর হাতের টর্চটা জ্বালাতে আর কোনও দ্বিধা বোধ করল না সে | টর্চটা জ্বালিয়ে সেই দরজার ওপর আলো ফেলতেই তিনজনে লক্ষ করল যে সেফ হউসের দরজাটা সাধারণ কোন দরজার মতন নয় | দেখে অনেকটা গ্যারাজের শুটারের মতন মনে হলেও সেটায় হাত দিতেই সেটাকে খুবই শক্ত পোক্ত মনে হল | দীপা টর্চের আলোটা আরও একটু নিচের দিকে ফেলতেই সেই দরজার গায়ে গোটা কতক চাবি ঢোকা বার জায়গা দেখতে পেলো ওরা |
"লকস..." পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল

"কিন্তু এতগুলো...এতগুল লক কেন? আর চাবি? এগুলোর চাবি কোথায় ?" চিন্তিত হয়ে বলে উঠলো দীপা |

"চাবি!! দাড়াও...দাড়াও" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে রুদ্রর কাছ থেকে নিজের সেই ব্যাগ-প্যাকটা চেয়ে নিলো তিস্তা, তারপর সেটার চেন খুলে আস্তে আস্তে ব্যাগের ভেতরে থাকা সব চাবিগুলো বের করল তিস্তা | তারপর নিচে মাটির ওপর একটা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সব চাবিগুলোকে সাজিয়ে রাখল |
"গ্রেট..." তিস্তার সেই ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা দেখে বলে উঠল রুদ্র
এরপর একটার পর একটা চাবি প্রথম লকের মধ্যে ঢুকিয়ে ঘোরাতে আরম্ভ করল তিস্তা | চাঁদের আলোটা হঠাৎ মৃদু হয়ে আসতে দেখে দুটো টর্চই জ্বালিয়ে সেই দিকে ধরে রইল দীপা | দূরে কোথাও থেকে শেয়াল ডাকার আওয়াজ ভেসে আসতেই সাথে সাথেই দরজার প্রথম লকটা ফট করে খুলে গেলো |
"গ্রেট, দ্যাট মিন্স...আমরা ঠিক রাস্তাই অবলম্বন করেছি..." পাশ থেকে বলে উঠল দীপা
"হমম..কিন্তু দীপা দি, এইরকম করে একটার পর একটা চাবি করতে করতে তো অনেক সময় চলে যাবে..."
"সে যাক না..এখন আমাদের কাছে অঢেল সময়...তোর যত ইচ্ছা সময় লাগুক না কেন আমাদের কোনও কিছুতেই অসুবিধা নেই...তুই তোর মত লেগে থাক" তিস্তাকে উৎসাহিত করে বলে উঠল দীপা
খিদেতে তাদের পেট চুঁইচুঁই করলেও খাওয়ার কোন পরিকল্পনা ওদের মধ্যে দেখা গেল না সেই সময় । আরও আধঘণ্টার প্রচেষ্টায় আরও একটা লক খুলে যেতেই দীপার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল কিন্তু আসল মুশকিলটা ঘটলো তার পরেই | তৃতীয় আর অন্তিম লকটা অনেক্ষনের চেষ্টার পরেও কিছুতেই খুলতে পারলো না তিস্তা আর সেই অক্ষমতার জন্য আস্তে আস্তে অধৈর্য হয়ে উঠতে লাগল সে |
"ফাক! ফাকিং বিচ....ফাক !" রাগে দুঃখে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা " ইটস নট ওপেনিং...ফাকিং লক খুলছেই না তো কিছুতেই...কেন খুলছে না ? মাদারফাকিং কি!!!" বলে হাতের চাবিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো তিস্তা | একটার পর একটা চাবি ট্রাই করার পরেও কোনও ফল না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়লো তিস্তা | রাগে আর বেদনায় ভেঙে পরে নিজের মাথা নিচু করে মাটির ওপর বসে পড়লো সে আর তার দুচোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা বেরিয়ে এসে গড়িয়ে মাটির ওপর পড়তে লাগল | তিস্তাকে ওইরকম ভেঙে পড়তে দেখে রুদ্র ওর পাশে গিয়ে বসল, তারপর ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো
"এই তিস্তা...ওইরকম ভেঙে পরনা প্লিজ...মন খারাপ করার কিচ্ছু হয়নি...দেখবে এখুনি সব ঠিক হয়ে যাবে..."

রুদ্রর কথা শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তিস্তা বলল "কি করে..? কি করে ঠিক হবে রুদ্র...? তুমি দেখতে পেলে না যে আমাদের একটাও চাবি দিয়ে কাজ হল না...? এরপর...এরপর আর কিসের আশা করব আমি বলতে পার রুদ্র...আমি যে বসের কথাটা রাখতে পারবোনা রুদ্র"
"অ্যাই তিসু...এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে হার মেনে নিলে কি করে হবে ? পেশেন্স ইস দা কি টু সাকসেস তাই বিলিভ ইন ইয়োরসেলফ, বিলিভ ইন আস...প্লিজ" তিস্তার মাথায় হাত বুলতে বুলতে বলে উঠল রুদ্র

"বাবাহ! এই একটু আগেই তুমি নিজেই অধৈর্য্য হয়ে পরছিলে না...? "

" হ্যাঁ আর তখন তুমি আর দীপা আমাকে বোঝালে আর এখন আমি তোমাকে বোঝাচ্ছি...বিকজ উই আর অ্যা টিম তিস্তা । আমাদের...আমাদের কে একটা গাড়ির মতন ভাবো তিস্তা...ধর দীপা হল স্টিয়ারিং তুমি হলে ইঞ্জিন আর আমি...."

"তুমি গিয়ার..." বলে হেসে উঠল তিস্তা

"হ্যাঁ আর সেই জন্যই আমি মনে করি যে, যে কোনও কাজে সফল হওয়ার জন্য টিমের প্রত্যেক সদস্য কেই টিমের সাথে কাজ করা উচিত..." রুদ্রও বলে উঠল
"কিন্তু..রুদ্র, চাবি কোথায়...? এই সব মরাল সাইন্সের কথা শুনতে ভালো লাগলেও, আরেকটা চাবি...কোথা থেকে পাবো আমরা...???" তিস্তা বলে উঠল
"এই তিস্তা রুম নম্বর ৯এর চাবি তোর কাছে আছে না...?" হঠাৎ পেছন থেকে দীপার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো আর সাথে সাথে সেই দিকে ঘুরে তিস্তা বলে উঠল ঃ


"রুম নম্বর ৯....? মানে সেলেব্রেশন হোটেলের চাবি...? " তিস্তার কথায় দীপা নিজের মাথা নাড়াল ।
"হ্যাঁ....আছে, কিন্তু...সেটা দিয়ে তুমি কি করবে...?"
"কি করবো সেটা এক্ষুনি দেখতে পাবি...তবে ডে চাবিটা" বলে তিস্তার দিকে নিজের হাত বাড়াল দীপা | মাটি থেকে উঠে নিজের ব্যাগের কাছে গিয়ে ব্যাগ থেকে সেই চাবিটা বের করে দীপার হাতে ধড়িয়ে দিল তিস্তা । চাবিটা হাতে পেতেই পর মুহূর্তেই সজোরে দরজার সেই তৃতীয় লকের ভেতর ঢুকিয়ে ঘোরাল দীপা আর সাথে সাথে খটাং করে একটা আওয়াজ করে চাবিটা ঘুরে গেলো, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমেই দরজা যে কে সেই একই অবস্থাতে দাঁড়িয়ে রইলো |

"চাবিটা...চাবিটা ঘুরল কিন্তু..." দীপা বলে উঠল

"তার মানে..?"
"তার মানে ওই চাবিটাই ছিল ওই শেষ লকের চাবি...আর সেই জন্যই ওই পাশ থেকে ওই যান্ত্রিক আওয়াজটা ভেসে এলো" রুদ্র বলে উঠল
"সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু...দরজা কি খুলল...?" বলে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল তিস্তা তারপর হাতে করে জোর দিয়ে ঠেলা মারতে লাগল । তিস্তাকে একা একা সেই দরজা ঠেলতে দেখে রুদ্রও ওর সাথে সাথে শরীরের সমস্ত জোর লাগিয়ে দরজাটা ঠেলতে চাইল কিন্তু কোনও উপায়েই সেই দরজা নাড়াতে পারলো না | অনেক্ষন ধরে অনেক ভাবে চেষ্টা করে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে আবার মাটির উপর বসে পড়ল ওরা |
"নিশ্চয়ই......দরজাটা জ্যাম হয়ে গেছে, অনেকদিন নিশ্চয়ই খোলা হয়নি..." তিস্তা বলে উঠল
"তাহলে? তাহলে এখন উপায় কি...? " ভয়ে বলে উঠল দীপা | ভয়ের ব্যাপারটা দীপার খুব সহজে আসত না কিন্তু আজকে, এই অসহায় অবস্থায় এই জঙ্গলের মধ্যে এই রাত বিড়েতে তাকে ঘিরে ধরতে লাগলো...তবে সে ভয় বাঘ ভাল্লুকের নয়, অনিশ্চয়তার |
"আই রিয়েলই ডোন্ট নো দীপা দি...আই রিয়েলই ডোন্ট নো, ফাক!!!" বলে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা | নিজেদের লক্ষ্যের এত কাছে এসেও হেরে যাওয়াটা ঠিক মেনে নিতে পারছিলনা সে | নিজের রাগকে আর সংযত না রাখতে মাটি থেকে উঠে মাটির ওপর একের পর এক লাথি মারতে আরম্ভ করল সে । তবে সেদিন তিনজনের মধ্যে রুদ্র সব থেকে শান্ত অবস্থাতে ছিল কারণ সে আঁচ করতে পারছিলো যে পাণ্ডে-জি নিশ্চয়ই সেখানে কোনও একটা কারসাজি করে রেখেছেন |

"ফাক!!! ফাক!!! " বলে আবার ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে উঠল তিস্তা আর তার সাথে নিজের পা দিয়ে মাটির ওপর সজোরে একটা লাথি মারল | তবে এইবার আচমকাই লাথি মারার সাথে সাথেই যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল তিস্তা আর সেই ব্যাথার টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল| তিস্তাকে হঠাৎ পরে যেতে দেখে রুদ্র আর দীপা দৌড়ে এসে ওকে মাটি থেকে তুলল |
"তিস্তা...অ্যাই তিস্তা? তোর লাগেনি তো...? " দীপা প্রশ্ন করে উঠল আর সাথে সাথে নিজের হাতের টর্চটা জ্বালিয়ে তিস্তার পায়ের ওপর ফেললো | টর্চের আলো তার পায়ের ওপর পড়তেই সে দেখল যে তিস্তার গোড়ালির কাছটা একটু কেটে গেছে আর তাই থেকে হালকা রক্ত বেরোচ্ছে...

"একি...এতো রক্ত বেরোচ্ছে!!! কি করিস বলতো তুই? এত কিসের রাগ তোর? এইবার কি হবে বলতো? এসব যেনে বুঝে এই রকম কে করে...? " তিস্তার দিকে একটার পর একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে দিতে বলে উঠল দীপা | তবে যন্ত্রণাটা যে প্রবল সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তাই সে আর কোনও উত্তর না দিয়ে দীপাকে জড়িয়ে মাটির ওপর বসে পড়ল | তিস্তাকে যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে রুদ্র বলে উঠল
"কিসে লাগল তোমার বল তো? এখানে তেমন কোনও কিছু দেখতে..." বলতে গিয়েই থেমে গেল রুদ্র । হঠাৎ একটা জিনিসের ওপর তার নজর পড়তেই তার চোখ সেইখানেই আটকে গেলো | সাথে সাথে দীপার দিকে ঘুরে শক্ত গলায় সে বলে উঠল ঃ
"দীপা..টর্চটা...টর্চটা দাও..."
রুদ্রর কাছ থেকে আবার টর্চের কথা শুনে দীপা আরও বেশি ক্ষেপে উঠল " কেন ? টর্চ নিয়ে কি করবি তুই...?"
"যা করবো একটু পরে নিজেরাই দেখতে পাবে, তাই কথা না বাড়িয়ে টর্চটা দাও আমায়..." আবার শক্ত ভাবে বলে উঠল রুদ্র | অন্যথা কোনও উপায় না দেখতে পেয়ে রুদ্রকে টর্চটা দিতে বাধ্য হল দীপা তবে রুদ্রর হাতে টর্চটা দিতেই সে সেটাকে জ্বালিয়ে, তার আলোটাকে মাটির ওপর ফেলল ঠিক সেই জায়গাটার ওপর যেখানে একটু আগেই তিস্তা লাথি মারতে গিয়ে জখম হয়ে ছিল | আলোটা সেই খানে ফেলে সেই জায়গাটার ওপর হাত দিতেই সাথে সাথে শক্ত কিছু একটা অনুভব করল রুদ্র |
ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেই সে নিজের হাতের টর্চটা মাটির ওপর রেখে নিচের দিকে ঝুঁকে হাতে করে সেই জায়গাটার ওপর থেকে মাটি সরাতে আরম্ভ করল । রুদ্রকে সেই রূপ উত্তেজিত হয়ে মাটি খুরতে দেখে দীপা প্রথমে একটু অবাক হলেও পরো মুহূর্তে সেও বুঝতে পারল যে তার রু ই তাদের কে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারবে । ওই রুদ্রও নিজের মত মাটি সরিয়ে যেতে লাগল এমন সমায় হঠাৎ ওর একটা ধাতব জিনিস ওর হাতে ঠেকল | রুদ্রও সাথে সাথে টর্চের আলো সেই জায়গাটার ওপর ফেলতেই ওর মুখ হাসিতে ভরে উঠল ।
"দীপা!!! তিস্তা!! শিগগিরি!!..শিগগিরি এসো তোমরা এখানে...!!!" উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল রুদ্র । রুদ্রর কণ্ঠে সেই উত্তেজিত ভাব অনুভব করতেই দুজনে সাথে সাথে রুদ্রর পাশে এসে দাঁড়াল আর দাঁড়াতেই সেই জিনিসটা দেখতে পেলো |

"এটা....কি এটা...?" সেই জিনিসটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল দীপা
"জানি না...তবে এখুনি যেনে যাব...তোমরা প্লিজ একটু হাত লাগাও আমার সাথে..." রুদ্রও বলে উঠল । রুদ্রর কথা শুনে বাকি দুজনও মাটির ওপর বসে হাত লাগিয়ে সেই জায়গাটা আরও একটু পরিষ্কার করতে লাগল । যতই না মাটি সরে যেতে লাগল ততই সেই জিনিসটা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠতে আরম্ভ করল এমন সময় রুদ্র নিজের হাত তুলে ওদের থামতে বলল ।
"এই জিনিসটার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর জন্য তোমাকে আশঙ্কা ধন্যবাদ তিস্তা...ভাগ্যিস তুমি লাথি মারাতে উদ্যত হয়েছিলে নাহলে এখানেই হয়তো..." তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র তবে তিস্তা সেই ব্যাপারের সিকে ভাগ বুঝতে না পেরে বোকার মতন রুদ্রর দিকে ফ্যালফ্যাল করে খালি চেয়ে রইল ।

"রু... হোয়াট ইস দিস...?" দীপা বলে উঠল


"বলছি..." বলে এইবার পুরোপুরি মাটির ওপর বসে পড়ল রুদ্র, তারপর হাতে করে আরও একটু মাটি সরিয়ে টর্চের আলোটা সেই জায়গাটার ওপর ফেলল | আলো পড়তেই ওরা দেখল যে ঠিক একটা ঘড়ির মতন দেখতে সেই জিনিসটাকে তবে সেটা পুরোপুরি কালো রঙের | জিনিসটার পাশে পাশে খাঁজ কেটে কেটে কিসব লেখা দেখা যাচ্ছিল তবে সেগুলো কি সেটা ঠিক করে বুঝতে পারল না রুদ্র । আস্তে আস্তে সেই উঁচু হয়ে থাকা লেখার ওপর আঙুল বলাতেই সে বুঝল যে সেগুলো আসলে নম্বর...থিক যেমন ঘড়িতে থাকে সেইরকম তবে জিনিসটার মাঝখানটায় ঘড়ির কাঁটার জায়গায় একটা ছোট খাঁজকাটা জিনিস দেখতে পেল রুদ্র |


"কিরে রু...কি জিনিস এটা? কোনও বম..."

"না..." এক বাক্যে উত্তর দিয়ে সেই জিনিসটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো রুদ্র | সে দেখল যে জিনিসটায় ঘড়ির মতন ডায়াল থাকলেও এক থেকে বারো অবধি না থেকে তাতে এক থেকে নয় অব্দই রয়েছে । "মাত্র নটা ঘর...কেন? নটার সঙ্গে কিসের সম্পর্ক..." সেই লোহার ডায়ালের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল রুদ্র ।
"নয়ের সাথে সম্পর্ক... কোথায় যেন নটা দেখেছি..." ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রুদ্রর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল , ধাঁধার সঙ্কেতটা এতক্ষণে বুঝতে পেরে সে নিজের মনে মনে হেসে উঠল |
"দীপা, কুইক....তিস্তার ব্যাগ-প্যাক থেকে...ওই..ওই নোটবুকটা বার করো, পাণ্ডে-জির নোটবুকটা" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল রুদ্র | রুদ্রর কথা শুনে প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেল দীপা কিন্তু পরক্ষণেই ওর কথাটা বুঝতে পেরে দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে সেই নোটবুকটা বার করে আনল সে |

"এইতো...এইতো!! এইবার? এইবার কি করবো?" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল দীপা

"এইবার? এইবার সেই পেজটা খোলো, সেই পেজটা যেটাতে তোমার লালুর ফোন নম্বর লেখা আছে...." হাসি মুখে বলে উঠল রুদ্র

"মানে...? আমার লালু? কে লালু? রুদ্র এখন প্লিজ মস্করা করিস না, আমার মাথা কাজ করছে না একদম...আমি" প্রায় কেঁদে ফেলে বলে উঠল দীপা
দীপার সেই করুন অবস্থা দেখে রুদ্র বলল "কাঁদার কিছু হয়নি দীপা আর আমি মস্করাও করছি না । তোমাকে সেই পেজটা খুলতে বললাম যাতে পাণ্ডে-জি 'ল্যালো'...." তবে রুদ্র নিজের কথা শেষ করার আগেই দীপা সেই ব্যাপারটা বুঝে ফেলল আর সাথে সাথে সেই পেজটা খুলে রুদ্রর সামনে তুলে ধরল |
"ইয়েস ! এইতো... এইটাই, এইবার ওই ল্যালোর পরে যেটা লেখা আছে সেগুলো আমাকে একটা একটা করে বল"
"কোনগুলো? এই...এই সংখ্যাগুলো...?" উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল দীপা

"হমম"
"এইতো দুই তিন...তারপর পয়েন্ট..." দীপার বলার সাথে সাথে রুদ্র সেই সংখ্যাগুল অনুযায়ী সেই সামনের লিভারটা আরম্ভ করল । তিস্তা চুপ করে পাশে বসে রুদ্রর সেই কেরামতি দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছিল ।

"ছয়..আট..পাঁচ..পাঁচ..শূন্য..আট..আট...তারপর..."

"দাড়াও.." রুদ্র বলে উঠল । রুদ্রর কথা শুনে দীপা তার দিকে তাকাতে সে আবার বলে উঠল "যদি আমার একটুও বুদ্ধি থেকে থাকে তাহলে আশা করি এইবার কিছু একটা হবে " বলে সেই লিভারটা চেপে ধরল রুদ্র আর সাথে সাথে ঘটাং করে একটা আওয়াজ ভেসে এলো দরজার দিক থেকে |
আওয়াজটা রুদ্রর কানে আসতেই ওর মুখ হাসিতে ভরে উঠল ঃ "ইয়েস !!! এইবার তার পরের সংখ্যাটা বোলো "
" দাঁড়া এই...এইতো আট ছয় দিয়ে আবার একটা পয়েন্ট তারপর সাত...তিন...শূন্য..পাছ..শূন্য..আট আর...আর শূন্য..." বলে রুদ্রর দিকে তাকাল দীপা । উত্তেজনায় বসে তার নিশ্বাস প্রশ্বাসের বেগ এতোটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সে স্থির হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পাচ্ছিল না ।
শেষর শূন্যটা দিকে শেষ বারের জন্য লিভারটা ঘুরিয়ে নিজের মাথা তুলে বাকি দুজনের দিকে তাকাল রুদ্র "ব্যাস...আমাদের কাজ শেষ" বলে আবার লিভারটা চেপে ধরল রুদ্র আর সাথে সাথেই হঠাৎ আগের মতন ঘটাং করে একটা আওয়াজ ভেসে এলো তবে সেটা আগের বারের চেয়ে অনেকটাই জোরে আর দেখতে দেখতে সামনের দরজাটা খুলে গেল |
"ওয়েলকাম...ওয়েলকাম টু দ্যা সেফ হ্যাভেন...." শান্ত গলায় বলে উঠল রুদ্র
সব কিছু এত তাড়াতাড়ি আর চোখের নিমিষের মধ্যে হয়ে গেলো যে দীপা আর তিস্তা বুঝতেই পারলো না যে তাদের স্বপ্ন আজকে সত্যি হয়ে উঠেছে | দীপা আস্তে আস্তে ঝুঁকে মাটির ওপর টর্চটা তুলে সেই দরজার দিকে আলো ফেলতেই দেখল...সেফ হউসের দরজাটা সত্যিই খুলে গেছে | সেই অন্ধকার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দীপার চোখ থেকে জল বেরিয়ে তার গাল বেয়ে নেমে এলো | " উই...ডিড ইট" ফিসফিস করে বলে উঠল সে আর সাথে সাথে পাশ থেকে তিস্তার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো :

"উই ডিড ইট!!! আমরা পেরেছি!!! আমরা পেরেছি !! আমরা পেরেছি!!! " বলে হঠাৎ রুদ্রর ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ওকে অষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে মুখে ঘাড়ে পাগলের মতন এলো পাথারই চুমু খেতে আরম্ভ করলো তিস্তা | সত্যিই তার জায়গায় কেউ থাকলে সেও সেইরকমই করত । এতদিন ধরে সাধনা করার পর আজকে শেষমেশ নিজেদের লক্ষ্যভেদ করার আনন্দে সে ভুলেই গেল যে একটু আগেই তার পায়ে চোট লেগেছে । রুদ্রও সেই ঠাণ্ডার আবহাওয়াতে একটা সুন্দরি নারীর শরীরের উষ্ণতা উপভোগ করে তিস্তাকে পাল্টা চুমু খেতে আরম্ভ করল |
"আমরা পেরেছি...কিন্তু কি করে...? কি করে করলি তুই এই কাজটা রু...? হাউ ডিড..." দীপা বলে উঠল । তখনও অবিশ্বাসে সেই একই দিকে তাকিয়ে ছিল দীপা |

"মমম...ওই মমম ওইটা...মমম ঘড়িটার ডায়াল...লটা..মমমম লকারের মতন উহঃ..." তিস্তাকে চুমু খেতে খেতে বলে উঠলো রুদ্র

"মানে? ওই কম্বিনেশন লকের মতন? সেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যেটা খুলতে হয়? ব্যাংকের সেফে যেমন থাকে...?" দীপা প্রশ্ন করে উঠল

"মমম হমম...মমমম..আহঃ আস্তে তিসু" উত্তেজিত হয়ে তিস্তা রুদ্রর ঠোঁটে কামড়ে দিলো
"কিন্তু তুই কি করে বুঝলি যে ওইটাই এইখানে লাগবে...? মানে নোটবুকে তো আরও অনেক কিছুই...অনেক নাম্বারই লেখা আছে...তুই শিওর কি করে হলই..." রুদ্রর দিকে ঘুরে বলে উঠল দীপা
"শিওর...মমম মানে প্রথমে মমম আমি শিওর ছিলাম না মমম...তিস্তা আস্তে....কিন্তু যখন ওই...ওই ডায়ালে বারোটার জায়গায় নটা সংখ্যা দেখলাম তখন আমি বুঝলাম যে ওই সংখ্যাগুলোই আমাদের ভেতরে ঢোকার চাবি কাঠি....মমমম দুটো জায়গাতেই নটা নটা সংখ্যা লেখা আছে দেখো মমমম...আহহ! তিস্তা....ওখানে এখন হাত দিয়ো না....মমম আহঃ....আর তাই এই জায়গাটার কো-অর্ডিনেটসটাই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল....মমমম"
"তারমানে এই নোটবুকে লেখা এই ল্যাটিটিউড আর লংগিটিউডটাই ভেতরে ঢোকবার পাস-কোড...? কিন্তু এই পয়েন্টগুলর কি করলি...?" আবার প্রশ্ন করে উঠল দীপা কিন্তু এইবার আর কোনও উত্তর পেল না রুদ্রর কাছ থেকে |
নিজের জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কর্ম হাসিল হয়ে যাওয়ার ফলে আজকে নিজেকে খুব মুক্ত বোধ করছিল তিস্তা আর সেই মুক্তি উদযাপন করার এর থেকে ভালো সুযোগ আর পেল না সে । দুজন দুজনকে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে একে অপরের মুখের ভেতর জীব ঢুকিয়ে কামের জোয়ারে ভেসে যেতে লাগল । তাদের সেই উত্তপ্ত উত্তেজিত রূপ দেখে দীপা হঠাৎ বলে উঠল "এই ! এই তিস্তা...এখানে নয়...এখানে নয়..আমরা এখানে সেফ নোই...ভেতরে চল অন্তত...প্লিজ " বলে তিস্তার হাত ধরে টানল সে

"প্লিজ ...মম আঃ আহহহ প্লিজ দীপা...উহঃ দীপা দি...আমি পাচ্ছিনা আর....আজকে প্লিজ..." কামোত্তেজনায় আগুনে পুড়তে পুড়তে কাতর কণ্ঠে বলে উঠল তিস্তা |

"না...না...এখন যদি এখানে কেউ এসে পরে, তাহলে কিন্তু সব পেয়েও আমাদের সব কিছু হারাতে হবে তিস্তা, তাই প্লিজ ভেতরে চল আগে "
দীপার মুখ থেকে হঠাৎ হারানোর কথা শুনতে আবার তিস্তার মনের ভেতর তার সেই কর্তব্য-বোধ জেগে উঠল আর সাথে সাথে রুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল |
"হ্যাঁ...আমা...আমাদের মমম...আগে ভেতরে যাওয়া....উচিত..., রুদ্র.....সরি..বাট.." হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও মতে বলে উঠল তিস্তা

"নো...নো প্রব্লেম" হতাশ কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র, তারপর সেও মাটি থেকে উঠে নিজের হাত পা ঝেড়ে নিলো |

"তাহলে...এবার ভেতরে ঢোকা যাক নাকি...? " রুদ্রকে উঠে দাঁড়াতে দেখে দীপা বলে উঠল | দীপার কথায় বাকি দুজনে মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই আস্তে আস্তে সেই দরজার দিকে পা বারাল ওরা | তবে সেই আগের মতোই রুদ্র দীপার হাত থেকে টর্চটা কেড়ে নিয়ে নিজে আগে সেই দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল, তারপর পেছনে ঘুরে বাকি দুজনকে ভেতরে আসতে বলল | বাইরে থেকেই অন্ধকার মনে হলেও দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘিরে ধরল ওদের | রুদ্রও টর্চটা জ্বালিয়ে এইদিক ওইদিক আলো ফেলতে ফেলতে এগিয়ে চলল সামনের দিকে | ভেতরে ঢুকে প্রথম যে জিনিসটার ওপর ওর চোখ পড়ল সেটা হল একটা লিভারের মতন দেখতে জিনিস | ঠিক বাইরে মাটির মধ্যে যেমন ছিল সেই রকমই কিন্তু আকারে অনেকটাই ছোট ।
দরজার ঠিক পাশেই সেই রকম একটা জিনিসটা থাকতে দেখে রুদ্র বুঝল যে সেটা নিশ্চয়ই দরজার লক | টর্চের আলোটা সেই জিনিসটার ওপর ফেলে আস্তে করে তার লিভারটা ঘোরাতেই নিমেষের মধ্যে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো আর সাথে সাথে একটা যান্ত্রিক আওয়াজ ওদের কানে ভেসে এলো...ঠিক যেমন দরজাটা খোলার সময় হয়েছিল সেই রকমই | দরজাটা বন্ধ হয়ে যেতেই ওরা আস্তে আস্তে সামনে করিডোরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল | ঘরের ভেতরটা অন্ধকার হলেও করিডরের ওপরে মানে সিলিঙে থাকা ছোট স্কাই লাইট দিয়ে চাঁদের মৃদু আলো ভেসে আসতে দেখল ওরা | করিডোরের দেওয়ালের ওপর আলো ফেলতে ফেলতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল রুদ্র এমন সময় হঠাৎ "এইতো!!!" বলে চেঁচিয়ে উঠল সে ।
"এইতো...এইতো ইলেকট্রিক বোর্ড রয়েছে এখানে....." বলে টর্চটা ডান হাত থেকে বাঁ হাতে নিলো রুদ্র ," এর মানে মেন্ সুইচটাও নিশ্চয়ই এটার ভেতরেই থাকবে " বলে আস্তে আস্তে সেই ইলেকট্রিক প্যানেলের দিকে এগিয়ে গেলো রুদ্র | সেখানে গিয়ে সেই প্যানেলটা খুলতেই বিভিন্ন রঙের অজস্র সুইচ দেখতে পেলো সে | রুদ্রকে সুইচে হাত দিতে দেখে দীপা বলল ঃ
"রু... সাবধানে কিন্তু...অনেকদিন ওখানে কেউ হাত দায়নি , তাই শর্ট হয়ে যাওয়ার চান্স আছে কিন্তু...যাই করিস সাবধানে করিস " | তবে দীপা কথার কোন গ্রাহ্য না করে রুদ্র সোজাসুজি মেন্ সুইচটা ওপরে তুলে দিলো আর সাথে সাথে সেই প্যানেলের থাকা বাকি সুইচগুলোর ওপরে লাল রঙের আলো জ্বলে উঠল | ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রথম একটা সুইচ টিপতেই দূরে কোথাও কোনও একটা ঘর থেকে এক চিলতে আলো ভেসে এলো আর সাথে সাথে সেই সুইচটার ওপর সবুজ রঙের আলো জ্বলে উঠল |
ব্যাপারখানা এইবার ঠিক করে বুঝতে পেরে রুদ্র হঠাৎ পেছনে ঘুরে দীপা আর তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল "লেট্ দা পার্টি বিগিন..." আর সাথে সাথে একটার পর একটা সুইচ টিপে দিলো রুদ্র সেই প্যানেলের সব আর দেখতে দেখতে বাড়ির প্রত্যেকটা আলো জ্বলে উঠল |
"ওহ মাই গড!!!" আলো জ্বলে উঠতেই দীপা চেঁচিয়ে উঠলো খুশীতে

"ইয়েস!! ইয়েস!! ইয়েস!!!!" উল্লাসে ফেটে পড়ল তিস্তা আর তার সাথে সাথে দীপাকে জড়িয়ে ধরে লাফাতে আরম্ভ করল সে | তিস্তাকে সেই রকম আনন্দ করতে দেখা দেখি দীপাও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওর সাথে লাফাতে আরম্ভ করল |

"তারমানে পাণ্ডে-জি এই জায়গাটাকে রিসোর্টের বর্ণনা দিয়ে কোনও ভুল করেননি...কি বল দীপা...? " সামনে করিডরের দেওয়ালে লাগানো সব বহুমূলের আসবাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র | সত্যিই খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে বানানো হয়ে ছিল বাড়িটাকে আর তার ওপর চারিদিক দিয়ে গাছ পালায় ঘিরে থাকার জন্য কোনও মতেই এই জায়গা কারুর দ্বারা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ছিল।

এরই মধ্যে ঘুরে ঘুরে ভেতরের সব ঘরগুলো দেখতে লাগল ওরা | প্রথমত, সবাই মিলে কিচেনে গিয়ে সেখানকার জিনিসপত্র নেরে চেরে দেখতেই পেটি পেটি মিনারেল ওয়াটারের বাক্স দেখতে পেলো আর তারই পাশেই পেটি পেটি ক্যান্ড খাবারও দেখল | ওপরের দিকের পাল্লা-গুল খুলতেই বিভিন্ন রকমের মসলা আর খাবারের দ্রব্য চোখে পড়ল ওদের । রুদ্র এগিয়ে গিয়ে নিচে ঝুঁকে সামনের ড্রয়ার খুলতেই রান্না করার গ্যাস, ওভেন আর হিটার দেখতে পেলো । তবে সেই কিচেনটাকে সাধারণ কিচেন বললে পুরো পুরি ভুল হবে | মডুলার টপ থেকে আরম্ভ করে ডিশ ওয়াসার পর্যন্ত এমন অনেক কিছুই ওদের চোখে পড়ল যে সবের নাম তারা আগে কোনদিনেও শোনেনি আর নিজের আগ্রহ সংযত না রাখতে পেরে এইটায় ওইটায় হাত দিতে নাড়াচাড়া করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রুদ্র |
"এ...রু তবে এই বাড়িটা কোথা থেকে কারেন্ট পাচ্ছে ? ...মানে জলের নিচ দিয়ে কি কোনও লাইন এসেছে...?" দীপা পাশ থেকে বলে উঠল
"না...তবে ইলেকট্রিক প্যানেলটা দেখে আমার যতদূর আন্দাজ করছি...এই বাড়ির টেরেসে বা পেছনে কোথাও নিশ্চয়ই সোলার প্যানেল বসানো আছে আর তাই থেকেই এই ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি হচ্ছে...মানে দিনের বেলাটা সেলগুল নিজেদের পুরো চার্জ করে নেয় আর রাতের বেলা সেগুল সেটা ডিসচার্জ করে দায়....দ্যাখো না আজকে ঘরের আলো-গুলর জোর কম মনে হচ্ছে তো...কালকে রাতে দেখবে কত জোর হয়ে যায় এগোল..."

"ওহ! তারমানে এখানে ইলেক্ট্রিসিটি পুরোপুরি আন-লিমিটেড...? " অবাক হয়ে বলে উঠল দীপা


"একদম...আর সামনেই একটা জলাশয় আছে তাই জলেরও কোনও অভাব হবে না...এভ্রিথিংগস আন লিমিটেড..." বলে উঠে রুদ্র আস্তে আস্তে দীপার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো | তারপর হঠাৎ তার কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে ওকে তুলে কিচেনের কাউন্টারের ওপর বসিয়ে ওকে নিজের বুকে আঁকড়ে ধরল রুদ্র |

"আমরা শেষমেশ পেরেছি দীপা, আমাদের প্ল্যান সার্থক হয়েছে..." দীপার কাঁধে নিজের মাথা রেখে বলে উঠল রুদ্র | দীপাও সস্নেহে তাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেলো তবে ওদের অজান্তেই দুটো নগ্ন শরীরে পেষণে ওদের রক্ত কোষগুলো উষ্ণ হয়ে উঠতে আরম্ভ করল | স্নেহ ভালোবাসা ভরা আলিঙ্গনে হঠাৎই কামের জোয়ার এসে ধাক্কা দিতে আরম্ভ করল আর তাদের অজান্তেই একে অপরকে পাগলের মতন চুমে খেতে আরম্ভ করল ওরা | রুদ্রর লিঙ্গ ততক্ষণে খাঁড়া হয়ে গিয়ে দীপার বালে ভরা যোনিতে খোঁচা মারতে আরম্ভ করে দিয়েছিলো | দীপার ঠোঁটের ওপর থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে ওর ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে খেতে আস্তে আস্তে নিজের মাথাটা নিচে নামিয়ে দীপার মাইয়ের বোঁটা নিজের মুখে নিয়ে চুষতে আরম্ভ করল রুদ্র | এতদিন পর আবার নিজের শরীরে কামের জোয়ার ফিরে পেয়ে তাতে ভেসে যেতে আরম্ভ করল দীপা আর রুদ্রর চুলের মুঠি ধরে ওর মুখটা আরও জোরে চেপে ধরল নিজের ভারী মাইয়ের ওপর | সবে মাত্র ওদের নৌকা পাল তুলেছে ভাসার জন্য এমন সময় দূর থেকে একটা চিৎকার শুনে ওদের ঘোর কেটে গেলো । রুদ্রর বাহু থেকে নিজেকে মুক্ত করে আস্তে আস্তে সেই কাউনটার নেমে পড়ল দীপা তারপর হঠাৎ আবার সেই আওয়াজটা শুনতে পেল । আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সেই আওয়াজ অনুসরণ করে দৌড়ে গেলো ওরা |
কিচেনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে করিডোরে পৌঁছতেই আবার সেই চিৎকার শুনতে পেলো ওরা কিন্তু এইবার সেই গলার আওয়াজটা অনেকটাই স্পষ্ট, তিস্তার গলার আওয়াজ | রুদ্র আর দীপা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই আওয়াজের দিকে দৌড়ে যেতে লাগল |
"ওহ দীপা দিইইই!!!.....রুদ্রোওওওও!!! তোমরা কোথায় আছো!!!! " তিস্তার চেঁচানোর চোটে ভয়ে করিডোর দিয়ে দৌড়তে দৌড়তে একদম শেষের ঘরের সামনে আসতেই ঘরের মধ্যে তিস্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওরা, তবে তাকে দেখে ভয় কম আহ্লাদিত বলে মনে হল ওদের | আস্তে আস্তে সেই ঘরের মধ্যে ঢুকে বিরক্ত হয়ে দীপা বলে উঠল ঃ
"কি হল কি? অত চেঁচাচ্ছিলি কেন ? কি হয়েছে....? বাঘ পরেছে নাকি...? "

দীপার কথা শুনে তিস্তা হাসি মুখে বলে উঠল ," বাঘ পরবে কেন দীপা দি তবে কেন ডাকছি সেটা নিজেরাই দেখো" আর তার সাথে সাথে নিজের আঙুলে করে ইশারা করলো সেই ঘরের জিনিসপত্রের দিকে | রুদ্র সেই দিকে এগিয়ে যেতেই বুঝল যে এই ঘরটা আসলে একটা আরমারি |


"এইটা...এইটা অস্ত্রাগার...? " অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রুদ্র


"ইয়েস...ইট ইস..." বলে সামনের লোহার বড়ো আলমারির পাল্লাটা খুলে দিল তিস্তা আর পাল্লা খুলতেই তাকে সাজানো একের পর এক রাইফেল দেখতে পেলো রুদ্র...তারপর তার পাশের আলমারিটা খুলতেই হ্যান্ড-গান, পিস্তল আর রিভলভার দেখতে পেলো সে | দীপা সেই দিকে এগোতেই পায়ের কাছে কিছু একটা ঠেকার অনুভূতি পেলো, নিজের মাথা নামিয়ে সেই দিকে তাকাতেই পর পর প্রায় পনেরোটা কার্টুন দেখতে পেলো সে |

"এ গুলোতে কি..."

"ওগুলোতে ম্যাগাজিন আছে দীপা দি আর ওই পাশের গুলোতে বুলেটস আছে...."


"মানে পাণ্ডে-জি সব কিছুরই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন এখানে....?" দীপা বলে উঠল

"শুধু ব্যবস্থা নয়, এখানে যা সব জিনিসপত্র, অস্ত্র-শস্ত্র, গোলাবারুদ রয়েছে তাতে একটা ছোট সেনাবাহিনীর পক্ষে পর্যাপ্তর থেকেও বেশী....শালা আবার গ্রেনেড লঞ্চারও রয়েছে..." পেছন দিকের দেওয়ালের ওপর লাগানো একটা লম্বা মোটা বন্দুকের মতন জিনিসের দিকে ইশারা করে বলে উঠল রুদ্র |

"বাপরে বাপ! পাণ্ডে-জি কি আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার প্ল্যান করছিলেন নাকি তিস্তা...?" ঠাট্টার সুরে বলে উঠল দীপা

"না...না...দীপা দি, দিস আর ফর সিকিওরিটি পারপাসেস ওনলি...." নিজের হাত নাড়িয়ে বলে উঠল তিস্তা, তারপর হঠাৎ ঘরটার আরও একটু সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা কাঠের আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবার বলে উঠল "বাট আই থিংক দ্যাট ওই সব জিনিসের থেকে এইগুলো তোমার বেশী পছন্দ হবে দীপা দি..." আর সাথে সাথে সামনের সেই আলমারির পাল্লাটা টেনে খুলে দিলো তিস্তা |
রুদ্র আর দীপা আস্তে আস্তে সেই আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওদের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল | সেই পুরো আলমারি জুড়ে ভর্তি রয়েছে তাক তাক টাকার বান্ডিল আর তারই নিচের দিকে জ্বলজ্বল করে রয়েছে তালের পর তাল সাজানো সোনার বিস্কিট | দীপা আর রুদ্র এত টাকা পয়সা জীবনেও নিজের চোখে দেখেনি তাই অবাক হয়ে সেই দিকে একদৃষ্টে হয়ে তাকিয়ে রইলো ওরা | দীপা আস্তে আস্তে আলমারির সামনে গিয়ে নিচ থেকে একটা সোনার বিস্কিট বের করে সেটাকে নিজের হাতে তুলে ধরতেই সাথে সাথে তার চোখের কোন বেয়ে এক ফোটা জল সেই সোনার বিস্কিটের ওপর পড়ল | সারাজীবন অত খাটা খাটনি অত কষ্ট সহ্য করে আজ এত টাকা পয়সার মুখ দেখে ওর মন ভারি হয়ে এলো তবে বাকি দের কিছু বুঝতে দিলো না সে । সোনার টুকরোটা যথাস্থানে রেখে দিয়ে তিস্তার দিকে তাকিয়ে দীপা বলল :
"তোর পায়ের ব্যথাটার কি হল...? রক্ত বেরোচ্ছে না আর?"

"না....না...ওসব কিছুনা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে...." তিস্তা বলে উঠল
দেখতে দেখতে পুরো বাড়িটা ঘুরতে অনেক সময় লেগে গেলো ওদের আর সত্যি বলতে প্রত্যেকটা ঘরে ঢুকে প্রথম দশমিনিট অবাক হয়ে সেই ঘরের আসবাব আর জিনিসপত্র এক দৃষ্টি তাকিয়ে দেখতে লাগল ওরা | বাড়িটা দুতলা হলেও তার সেই অদ্বিতীয় স্ট্রাকচারের জন্যে সামনের দিক থেকে দেখলে সেটাকে একতলা বলে মনে হবে আর তাই জন্যই অতটা সিকিওর এই বাড়িটা | তবে আশ্চর্যের বিষয় হল যে বাইরে থেকে এমনি দুতলা দেখা গেলেও নিচের দিকে মানে বেসমেন্টে আরও একটা তলা ছিল সেই বাড়িটার | জলের সংলগ্ন স্থলে থাকার জন্য বাড়ির সেই বেসমেন্টে একটা ছোট বোট হাউস ছিল যেটার সঙ্গে বাইরের লেকের একটা কানেকশন ছিল | বোট-হাউসের প্লাটফর্মের সাথে বাধা দুটো ছোট ছোট বোটও দেখতে পেলো ওরা আর তার পাশেই বাইরে জলপথে যাওয়ার সেই দরজাটাকে |
প্রায় আরও দুঘণ্টা ধরে সেই বাড়ির ভেতরে অভিযান চালিয়ে শেষমেশ সব কিছুই দেখে ফেলল ওরা | বাড়িটার দুটো ফ্লোর, নিচের ফ্লোরে মানে একতলায় ছিল একটা ড্রয়িং কাম থিয়েটার রুম আর তার ঠিক পাশেই ছিল কিচেন-ও-ডাইনিং রুম | করিডোর দিয়ে গিয়ে তার পাশের রুমটা ছিল ওয়াশরুম | তার পাশে মানে একদম শেষের রুমটা ছিল সেই অস্ত্রাগার বা আরমারি | সেই রুমের মুখোমুখি লাগোয়া যে সিঁড়িটা ওপরে চলে গেছে সেই সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ফ্লোরে গেলে ছিল আবার একটা লম্বা করিডোর তবে নিচের করিডরের চেয়ে আয়তনে অনেকটাই ছোট | সেই করিডোর দিয়ে হেটে সামনে গেলেই পর পর তিনটে বড়ো বড়ো বেডরুম ছিল আর শেষে একদম সিঁড়ির গায়ে আরও একটা কিচেন রুম একদম তবে সেটা নিচেরটার চেয়ে অনেকটাই ছোট |
সেই ফ্লোরের শেষের দিকে যে সিঁড়িটা ছিল সেটা সোজা চলে গেছে ওপরে টেরেসের দিকে | রুদ্র আস্তে আস্তে সেই ওপরের যাওয়ার সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে সামনের দরজার লিভার ঘুরিয়ে দরজাটা খুলতেই বাড়ির সেই বিরাট টেরেসটা দেখতে পেলো আর এটাও বুঝতে পারল যে ওর আন্দাজি ঠিক | টেরেসের একপাশ জুড়ে পর পর দশটা সোলার প্যানেল বসানো ছিল আর তার পাশেই একটা ছোট ইলেকট্রিকাল বাক্স বসানো ছিল | রুদ্র আস্তে আস্তে টেরেসে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই সামনের সেই অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পেলো | গাছের আড়াল থাকলেও তারই মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিলো সেই চাঁদর আলোতে আচ্ছাদিত সেই লেকটাকে | একা একা সেই দৃশ্য কিছুক্ষণ উপভোগ করে হঠাৎ বাকিদের কথা মনে পরতেই দৌড়ে সিঁড়ির কাছে এসে রুদ্র বলে উঠল ঃ
"এই...এই তোমরা কোথায় আছো? উপরে এসো তাড়াতাড়ি...একবার দেখে যাও সিনটা...হেব্বি লাগবে"
তিস্তা আর দীপা তখন ওপরের কিচেনে এইটা ওইটা দেখছিল তবে হঠাৎ রুদ্রর গলার আওয়াজ শুনে ওরাও সিঁড়ি বেয়ে টেরেসে উঠে এলো আর সেই দরজা দিয়ে ঢুকে বাইরে বেরোতেই সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেলো ওরা |
দীর্ঘ দিন ধরে ভয়ঙ্কর সব ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার পর তারা যে আজ অবশেষে এইখানে পৌঁছতে পেরেছে, নিজেদের আপনজনদের সাথে তাতেই যেন দীপার মন খুশিতে ভোরে উঠতে লাগল | রুদ্রকে সামনের কার্নিশের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দীপাও আস্তে আস্তে গিয়ে তারই পাশে সেই কার্নিশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো | পায়ের তলাটা হালকা ভেজা ভেজা অনুভব করে সেই দিকে তাকাতেই দীপা দেখল যে ছাতের মেঝেটা ভিজে রয়েছে | "তারমানে আমরা ভেতরে ঢুকতেই বৃষ্টি এসেছিলো...কিন্তু কোনও আওয়াজ তো পেলাম না আমরা...তাহলে কি পুরো বাড়িটাই সাউন্ড-প্রুফ...?" নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল দীপা
সেই সব প্রশ্ন নিজের মন থেকে আস্তে আস্তে ঝেরে ফেলে মাথা তুলে সামনে তাকাতেই সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেল দীপা | পূর্ণিমার চাঁদের উজ্জ্বল আলো পরে বিস্তৃত সেই লেকের জলটাকে রূপোলী রঙের দেখতে লাগছিলো । এতই অপরূপ সেই দৃশ্য ছিল যে সেটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন কোনও শিল্পী নিজের তুলি দিয়ে সেই দৃশ্য এঁকে দিয়েছে | দীপা আস্তে আস্তে নিজের মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকাতেই সেই লম্বা লম্বা গাছের মধ্যে দিয়ে আকাশে ভোরে থাকা সহস্র কোটি তারা জ্বলজ্বল করতে দেখল | এমন দৃশ্য সে শহরে থাকতে আগে কোনদিনও দেখেনি।
বাড়ির চারপাশের জঙ্গল থেকে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক অনবরত শোনা যাচ্ছিলোই আবার তারই সাথে সাথে দূর থেকে হুতুম পেঁচার ডাকও ওদের কানে ভেসে আসতে লাগল | "দ্যাখো..দ্যাখো ওই জোনাকিগুলোকে, কি সুন্দর তাইনা..." হাত তুলে সেই অন্ধকার জঙ্গলের বুকের দিকে ইশারা করল তিস্তা আর সত্যিই এক ঝাঁক জোনাকিকে উড়ে বেড়াতে দেখল ওরা | কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবে সেই রকম অবস্থা হল ওদের | সেই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতটাই মোহিত হয়ে গেলো ওরা যে অবাক হয়ে সেই দিকেই তাকিয়ে রইলো | কতক্ষণ সেই রকম দাঁড়িয়ে ছিল ওরা সেটা ওরা বুঝতেই পারলো না এমন সময় নীরবতা ভঙ্গ করে পাশ থেকে রুদ্র বলে উঠল :
"তোমরা একটু দাড়াও....আমি আসছি এখুনি..." বলে পেছন ফিরে দরজা দিয়ে নিচে চলে গেল রুদ্র |
রুদ্রকে নিচে চলে যেতে দেখে তিস্তা আস্তে আস্তে দীপার পেছনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল | সেই ঠাণ্ডা শীতল আবহাওয়ায় হঠাৎ আরেকটা শরীরে উষ্ণতা অনুভব করে দীপা কেঁপে উঠল | তিস্তা আস্তে আস্তে নিজের শরীরটা দীপার শরীরে সাথে চেপে ধরতেই দীপা অনুভব করল যে তিস্তার স্তনের বোঁটাগুলো শক্ত হয়ে তার পিঠে নিজেদের জানান দিচ্ছে | দীপার কানের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গিয়ে তিস্তা ফিসফিস করে বলে উঠল "দীপা দি....আমরা অবশেষে পেরেছি, আমি বসকে নিরাশ করিনি....বল? বস থাকলে আজকে খুবই খুশি হতেন তাইনা......? "
"উহঃ হ্যাঁ...হ্যাঁ সোনা...." বলে আস্তে আস্তে পেছনে ঘুরে তিস্তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুম্বনে হারিয়ে গেলো দীপা | সেই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সবে মাত্র একে ওপরের সঙ্গ ভালো লাগতে আরম্ভ করেছে এমন সময় হঠাৎ দরজার দিক থেকে রুদ্রর পায়ের আওয়াজ ভেসে এলো ওদের কানে | না চাইতেও একে ওপরকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের প্রতি সংযম এনে আবার আগের মতন সোজা হয়ে দাঁড়াল ওরা |
"এই দ্যাখো! এই দ্যাখো কি নিয়ে এসেছি!!" উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল রুদ্র তারপর আস্তে আস্তে আবার ওদের পেছনে এসে দাঁড়ালো |

"কি ওটা...?" রুদ্রর হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা

"আরে বুঝতে পাড়ছও না?? আরে এটা সেই টালিস্কারটা যেটা সেলেব্রেশন হোটেল থেকে নিয়ে এসেছিলাম আমরা..." বলে তিস্তার দিকে তাকিয়ে চোখ মারল রুদ্র

"মানে...? ওটা কি করে এলো এখানে...? ওটা তুই কোথায় ঢুকিয়েছিলি...? " নিজের ভুরু দুটো কুঁচকে জিজ্ঞাসু চোখে রুদ্রর দিকে তাকাল দীপা

তবে দীপার প্রশ্ন শুনে রুদ্র হাসি হাসি মুখ করে দীপার কাছে গিয়ে বলে উঠলো "বলছি...কিন্তু আগে বোলও আমায় মারবে না ....? প্লিজ..."
"মারব...? কেন মারতে যাবো কেন তোকে...? তোকে তো আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়েছিলি ওটা...সেটার সঙ্গে মারামারির প্রসঙ্গ কি করে আসছে..." দীপা বলে উঠল

"ঠিক আছে, তাহলে বলি...তোমার ব্যাগে..." বলেই দীপাকে জাপটে ধরল রুদ্র
"মানে...? আমার ব্যাগে মানে...? ছাড় আমায়! ছাড়...শালার ছেলে কোথাকার ! ওই জন্যই আমার ব্যাগটা অত ভারী লাগছিলো...তাই জন্যই শালা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি না ব্যাগ ভারি হয়ে যাওয়ার কথা...?" কপট রাগ দেখিয়ে রুদ্রকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বলে উঠল দীপা
"আরে সরি...সরি বলছি তো...প্লিজ....দীপু প্লিজ" আদুরে সূরে বলে উঠল রুদ্র
"না...না...না... ছাড় আমায়...আমি তোর সাথে আর কোনোদিন কথা বলব না ....যাহ্‌!!!" দীপা বলে উঠল
"ঠিক আছে যাও কথা বলতে হবে না তোমাকে...এমনিতেও কথা বলা ছাড়া আর কিছুই তো করোনা আমার সাথে...বাট যাই হোক না কেন, আই থিংক দ্যাট আজকে আমরা এটা ডিসার্ভ করি..." বলে হাতের বোতলটা ওপরে তুলে ধরল রুদ্র তারপর সেটাকে নামিয়ে এনে মাথার ক্যাপটা খুলতেই আবার বলে উঠল "এইরে দেখেছো তো! গ্লাস টাস আন্তে ভুলেই গেছি একদম..."
"ধুররর!! ও সব গ্লাস টাস লাগবে না আজকে আমাদের, আমি একাই পুরোটা মেরে দিতে পারবো আজকে" ফুর্তিতে বলে উঠল তিস্তা |
"ব্যাস তাহলে তো হয়েই গেল....এই নাও প্রথমে তুমি এক ঢোঁক খাও তারপর আমি খাবো" বলে তিস্তার হাতে বোতলটা দিতেই মুখ ভর্তি করে এক ঢোঁক খেলো তিস্তা তারপর রুদ্রকে বোতলটা ফেরত দিয়ে দিলো
"থ্রি চিয়ার্স টু আস এন্ড টু আওয়ার হাইডওয়ে!! হিপ হিপ হুররে!!!! হিপ হিপ হুররে!!! হিপ হিপ হুররে!!!" বলে বোতল থেকে এক ঢোঁক মদ খেলো রুদ্র তবে অভ্যাস না থাকায় আর পানীয়টা অত্যধিক ঝাঁজালো থাকার ফলে এক ঢোঁক খেয়েই ওর গলা জ্বলতে আরম্ভ করল | পাশে দীপাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুদ্র বলে উঠল :
"একি...একি কাণ্ড...? আমাদের আসল মদারুই এইরকম চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন!!! এই নাও সোনা...এই নাও তোমার অমৃত..." বলে দীপার হাতে বোতলটা দিতে যেতেই দীপা বাধা দিয়ে বলল :
"না রে রু......আমি খাবোনা আজকে...সরি..."

"একি!! একি কথা...? এজে ভূতের মুখে......" পাশ থেকে বলে উঠল তিস্তা

"আরে খাও না...নিজেই তো বয়ে নিয়ে এলে এতোটা পথ, সেই খাটনির একটু ফল ভোগ করো না....। রাগটা না হয় বিছানাতেই দেখিও" হেসে বলে উঠল রুদ্র

"ইসসস!!! ছোট লোক কোথাকার...বাট রু! প্লিজ...আজকে আমি খাবোনা, আমার অ্যাসিড হয়ে গেছে তাই....." দীপা বলে উঠল


"আচ্ছা ঠিক আছে যাও....মাফ কিয়া তবে তাতে আমাদেরই ভালো হল...কি বলও তিস্তা...?" তবে তিস্তার কাছ থেকে কোনও উত্তর এলো না | উত্তর না পেয়ে সেই দিকে তাকাতেই ওরা দেখল যে তিস্তা টেরেসের ওপর শুয়ে পড়েছে | তাকে দেখা দেখি ওরাও টেরেসের ওপর শুয়ে পড়ল আর শুয়ে ওপরে আকাশের দিকে ঝিকমিক করা তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো | কিছুক্ষণ ঐরকম শুয়ে থাকার পর রুদ্র হঠাৎ "হুউউ" বলে কেঁপে উঠতেই দীপা বলে উঠল :

"এই!!! এখুনি নিচে চল....এখানে এই অবস্থাতে শুয়ে থাকলে কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে যাবে...এমনই শীতকাল তার ওপর জলে ভেজা হয়েছে তার ওপর আবার বৃষ্টিও হয়েছে....ওঠ!! এখুনি ওঠ..." দীপা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াতেই ওকে দেখা দেখি তিস্তাও মেঝে থেকে উঠে পড়লো | অন্যথা আর কোনও রাস্তা না দেখতে পায়ে রুদ্রও উঠে পরে নিচে যাওয়ার সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল |

দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজাটার লিভার বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে আরম্ভ করল রুদ্র তবে সিঁড়ি দিয়ে নামার সাথে সাথে দীপা আর তিস্তার পাছার নড়ন চরণ দেখে রুদ্র আবার মোহিত হয়ে পড়ল । হা করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলো ওদের পাছার দুলুনি | সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাঁদিকে ঘুরে সামনের করিডোর দিয়ে প্রথম রুমটার সামনে আসতেই দীপা বলে উঠল ঃ


"আয় এখানে আয়", তারপর রুমের ভেতরে ঢুকে দেওয়াল হাতড়ে ঘরের লাইটটা জ্বালাও দীপা |

u0njscW.jpg

রুমের আলো জ্বলে উঠতেই ওরা দেখল যে বাকি দুটো বেডরুমের থেকে সেই রুমটা আয়তনে অনেকটাই বড়ো আর তার ফলে এমনি বিছানার জায়গায় একটা বিরাট কিং সাইজড বেড রাখা রয়েছে | বিছানাটা দেখেই ওদের তিনজনর ক্লান্তি যেন দিগুণ হয়ে গেল তাই আর এক বিলম্ব দেরি না করে দীপা আর তিস্তা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো | রুদ্র ঘরের আলোটা নিভিয়ে এক লাফে বিছানাতে উঠে ওদের মাঝখানে গিয়ে শুয়ে পড়লো | বিছানাতে তার পিটটা ঠেকতেই তার মনে হল যেন সেটা মকমলের তৈরি । এপাশ ওপাশ নড়ে ছড়ে শেষ মেষ সোজা হয়ে শুতেই ওপরে ঘরের সিলিঙের দিকে চোখ পড়ল রুদ্র । সে দেখল যে নিচের করিডোরের মতন সেই রুমেও স্কাই-লাইট করা রয়েছে | সেই স্কাই-লাইট দিয়ে হালকা জ্যোৎস্নার আলো এসে ভরিয়ে তুলতে লাগল তাদের সেই ঘরটাকে | অনেক্ষন ধরে সেই একই দিকে তাকিয়ে থাকার পর আস্তে আস্তে নিজের মাথা ঘুরিয়ে তিস্তার দিকে তাকাতেই সে দেখল যে তিস্তাও তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে |
"কি দেখছ...?"

"তোমায়..." তিস্তা বলে উঠল । তিস্তার ঠোঁটে একটা হাসির রেখা দেখতে পেলো রুদ্র |

"তিস্তা..?" রুদ্র বলে উঠল

রুদ্রর প্রশ্ন শুনে সে "হ্যাঁ " বলে উঠতেই সাথে সাথে নিজের ঠোঁটের ওপর রুদ্রর ঠোঁট অনুভব করল সে | তিস্তার নরম শরীরের ওপর আস্তে আস্তে নিজের হাত বোলাতে বোলাতে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলো তার শরীরটাকে | তিস্তাও উত্তেজনার বসে রুদ্র মাথায় হাত দিয়ে বোলাতে লাগল |
অন্যদিকে সেই প্রেম-লীলার খেলা শুয়ে শুয়ে তাদের উপভোগ করতে লাগলো দীপা | চোখের সামনে দুটো নর নারীকে সেই আদিম খেলায় লিপ্ত হতে দেখে তার শরীরও গরম হয়ে উঠতে লাগল | রুদ্রকে তিস্তার মাইয়ের বোঁটায় কামড়াতে দেখে দীপার নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো আর তার সাথে সাথে তার সুন্দর গর্বিত স্তনের কালো বৃত্তের মধ্যে থাকা স্তনবৃন্তগুলো খাঁড়া হয়ে নিজেদের জানান দিতে লাগলো | নিজের অজান্তেই নিজের আঙ্গুলটা আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামাতে নামাতে নিজের লোমে ভরা যোনির উপরে নিয়ে গিয়ে আটকে গেল দীপার । নিজের ওপর আর সংযম রাখতে না পেরে আলতো করে নিজের যোনির ফাটলের মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে দিল দীপা আর সাথে সাথেই কামের আগুনে কুঁকড়ে গিয়ে নিজেই নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরল | তবে পরক্ষনেই হঠাৎ একটা কথা মনে পরে যেতেই নিজের কামাতুর দেহকে সামলে নিয়ে আবার ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল
"রুদ্র...তিস্তা...আয় আমার কাছে একবার " দীপার মুখ থেকে সেই কথা শুনে দুজনেই সেই দিকে তাকাল, তারপর আস্তে আস্তে দীপার কাছে ঘেঁষে এলো ওরা | রুদ্রর হঠাৎ মনে হল যেন তিস্তার সাথে ওই রূপ ঘনিষ্ঠ হতে দেখে দীপার আবার কষ্ট হচ্ছে...তাই ওর কাছে গিয়েই ওর ঠোঁটে আবার একটা গভীর চুমু খেলো রুদ্র | দীপাও সেই চুম্বন অনুভব করে রুদ্রর মনের কথা বুঝতে পারল, তারপর হঠাৎই রুদ্রর ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে বলে উঠল "আজকে তোদের দুজনকেই কিছু কথা বলতে চাই...আশা করি তোরা শুনতে ইচ্ছুক আছিস..." । দীপার কথা শুনে দুজনেই নিজেদের মাথা নাড়িয়ে উঠতেই দীপা বলল...

"তুই...তুই আমাকে ভালবাসিস তো রুদ্র ?" রুদ্রর দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে সেই প্রশ্ন করল দীপা |

দীপার মুখ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে আবার সেই আগের দিনের কথা মনে পরে গেলো রুদ্রর | সে জোর দিয়ে বলে উঠল "হ্যাঁ, আমি তোমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি দীপা..."

"ঠিক...আর তিস্তাকে...? " বলে তিস্তার দিকে তাকাল দীপা


"আমি...আমি, তিস্তাকেও খুব ভালোবাসি..." রুদ্র বলে উঠল
"হমম... কিন্তু এটা কি তুই জানিস যে তিস্তাও তোকেও ততটাই ভালোবাসে...?" আবার তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা


"কি ? তিস্তা আমাকে...? সত্যি...? সত্যি তুমি...?" তিস্তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র

"হ্যাঁ...হ্যাঁ রুদ্র আমি তোমাকে ভালোবাসি...তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না রুদ্র..."

"কিন্তু তিস্তা আমি....আমি যে দীপাকে...." রুদ্র বলে উঠল

"আমি জানি রুদ্র আর সেই জন্যই আমি আমার ভালোবাসা ভাগ করে নিতে রাজি আছি " তিস্তা বলে উঠলো


"মানে....?"


"মানে...আমি জানি যে তুমি দীপা দিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসো, তাই তুমি দীপার দি আর দীপা দি তোমারি থাকবে....আমি শুধু চাই তোমাকে দীপা দির সাথে ভাগ করে নিতে...তোমার একটু ছোঁয়া পেতে....সেই একটুকু ছোঁয়া পেলেই আমি ধন্য হয়ে যাবো রুদ্র...." স্কাই-লাইট দিয়ে আসা জ্যোৎস্নার আলোতে তিস্তা চোখের কোন বেয়ে অশ্রু ধারা গড়িয়ে পড়তে দেখল রুদ্র | তিস্তার সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা যে শুধুমাত্র দৈহিক নয় সেটা এইবার বুঝতে আর বাকি রইল না রুদ্রর |

"দেখ রুদ্র দেখ, মেয়েটা...মেয়েটা তোকে কতটা ভালোবাসে...." পাশ থেকে দীপা বলে উঠল
"কিন্তু আমি তোমাকেও খুব ভালোবাসি দীপা দি..." দীপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল তিস্তা |
"হমমম....সে তো আমি জানি সোনা...তুই আমাকে কতটা ভালবাসিস...আমিও তোকে..."

"না দীপা দি, আমি সেই ভালোবাসার কথা বলছি না...আমি এই ভালোবাসার কথা বলছি" বলে দীপার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে একটা গভীরে চুম্বন খেলো | তবে রুদ্র সেই প্রথম ওদের দুজনকে প্রেমে লিপ্ত হতে দেখে অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো আর নিজের অজান্তেই ওর কণ্ঠ দিয়ে একটা প্রশ্ন বেরিয়ে এলো : "মানে...?"

রুদ্রর মুখ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে দীপার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে তিস্তা বলে উঠল "রুদ্র...আমি...আমি লেসবিয়ান, আমি সমকামী..."
তিস্তার কাছ থেকে সেই উত্তর পেয়ে তিস্তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রুদ্র তারপর দীপার দিকে তাকাতেই দীপাকে নিজের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতে দেখল |

"কিন্তু...? মানে...তুমি...মেয়েদের প্রতি....তাহলে আমায়...? কি করে...?"
" রু প্লিজ শান্ত হ সোনা....আসলে আমি এই সব কিছুই জানতাম, ও আমাকে প্রথমদিনই জানিয়েছিল এই ব্যাপারটা | তবে ও এটাও জানিয়েছিল যে প্রথম দেখাতেই ও তোর ভালোবাসায় পাগল হয়ে গিয়েছিল আর এটাও বলেছিল যে আমায় দেখলেই ওর শরীরে কামে ভোরে যায় | আমি এই সব কিছুই জানতাম...বিশ্বাস কর...শুধু জানতাম না একটা কথা, যে কথাটা একটু আগে ও আমাদের সামনে বলল" তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ "ফাক! ফাক! আই আম কনফিউজড..." বলে বিছানাতে উঠে বসল রুদ্র | তার মুখের সেই কথা শুনে দীপা ও তিস্তা দুজনেই একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে আরম্ভ করল | "তবে কি..রুদ্র আমাদের কে মেনে নেবে না....?" "তবে কি রু আমাকে তিস্তার সাথে ভাগ করে নেবে না....?" নিজেদেরকে প্রশ্ন করে উঠল দীপা ও তিস্তা এমন সময় রুদ্র বলে উঠল :
"আমি এখন খুবই কনফিউজড হয়ে গেছি...তবে ফার্স্ট অফ অল টেল মে....এখানে সবাই একে অপরকে ভালোবাসে...তাইতো? মানে আমি তোমাকে আর তিস্তাকে ভালোবাসি তুমি আমাদের দুজনকে ভালোবাসো আবার তিস্তাও আমাদের দুজনকে ভালোবাসে...?"

"মমম....মানে...মানে হ্যাঁ অনেকটাই তাই...." দীপা কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল

"ওকে! সো তাতে...তাতে কি প্রবলেম থাকতে পারে...? মানে আমরা এখানে এক সাথে তিনজনেই থাকবো আর আমাদের মধ্যে ভালোবাসার প্রেমের সম্পর্ক থাকবে তাতে...তাতে আমার কি অসুবিধা থাকতে পারে...? আর যত বেশী ততই ভালো তাইনা...? আর এখন কোনও সোসাইটিও নেই আর কোনদিন থাকবেও না..." রুদ্র বলে উঠল

"মানে...?" দীপা আর তিস্তা একসাথে বলে উঠল
"মানে? মানে আর কি হবে আমি আমার প্রেমিকাদের সাথে এখানে থাকবো...আর কেউ যদি কিছু বলতে আসে আমি তার গাঁড় মেরে দেব...."

"মানে ? তার মানে...তার মানে, তুমি আমাকে মেনে নিচ্ছ রুদ্র ?" রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল তিস্তা "কিন্তু...কিন্তু রুদ্র, আমি...আমি যে সমকামী....তুমি পারবে তোমার দীপাকে আমার সাথে ভাগ করে নিতে..?"

"দীপার ভালোবাসা যেমন ভাগ করবো তেমন তোমার ভালোবাসারও ভাগ পাবো আমি তিস্তা আর লেসবিয়ান টেসবিয়ান ওসব নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই । দুনিয়া যাই বলুক না কেন তুমি যেটাতে খুশি থাকবে তুমি সেইটাই করবে.... "

"ওহহহ রুদ্র!!! " বলে রুদ্রর ওপর ঝাঁপিয়ে পরে ওকে নিজের বুকে চেপে ধরল তিস্তা আর তারি সাথে তার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ধারা ঝরে পড়তে লাগল | আজকে তিস্তার বড়ই খুশির দিন কারণ আজকে তার প্রেমিক প্রেমিকা তাকে প্রথমবারের জন্য আপন করে নিয়েছে, আর এর থেকে বেশী আর কিছুই চাওয়ার ছিল না তার...

"এ মা! আবার কাঁদে কেন...? বললাম তো ভালবাসি তবে তিস্তা আমার যতদূর আন্দাজ...তুমি লেসবিয়ান নও তুমি বাইসেক্সুয়াল..." তিস্তার মাথায় হাত বুলতে বলতে বলে উঠল রুদ্র

রুদ্রকে অত সহজে সব কিছু মেনে নিতে দেখে দীপারও চোখে জল চলে এলো, "তাহলে...তোকে আমি ঠিক মানুষ করতে পেরেছি বল, রু..." ধরা গলায় পাশ থেকে বলে উঠল দীপা

"ওহহহ দীপা!!! কাম অন...এসো...আমার কাছে এসো..." বলে দীপাকেও নিজের বুকে টেনে নিলো রুদ্র | সারা দিনের ক্লান্তিকর ভয়ঙ্কর ঘটনার পর নিজের দুই সঙ্গিনীকে নিজের দুই বাহুতে শক্ত করে ধরে এই প্রথম স্বস্তির নিদ্রায় মগ্ন হয়ে পড়ল রুদ্র ।
 
  • Love
Reactions: ranaroy
Top