• If you are trying to reset your account password then don't forget to check spam folder in your mailbox. Also Mark it as "not spam" or you won't be able to click on the link.

Thriller আউট অফ কলকাতা

207
438
64
পর্ব ২৯

ভোরের প্রথম আলো ফুটে দিগন্তে ফাটল ধরাতেই দূর থেকে পাখিদের কূজন ভেসে আস্তে আরম্ভ করল | ছোট্ট সেই জানালা দিয়ে শীতল বাতাস ঢুকতে লাগলো সেই ছোট ঘরের ভেতরে | সামনের জানালা দিয়ে দূরে কয়েকটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্ট্রিট লাইট ম্লান ভাবে জ্বলজ্বল করছিলো আর শহরটাও নিরবতায় ঘুমিয়ে ছিল |

জানালার সামনে বসে সেই আধো অন্ধকারের শহরটার দিকে তাকিয়ে ছিল দীপা। সদ্য স্নান সারার ফলে তার ভেজা চুলগুল তার কাঁধের উপর এসে এক গুচ্ছ হয়ে ঝুলছিল আর তাই থেকে তার খালি পিঠের উপর ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ছিল। তার পাসেই ছিল তার প্রেম রুদ্র, সেও সম্পূর্ণ নগ্ন তবে তার লিঙ্গ এখন শিথিল | রুদ্রর কোলে নিজের মাথা এলিয়ে শুয়ে ছিল তিস্তা আর তারই মাথায় স্নেহ ভোরে হাত বোলাচ্ছিল রুদ্র । সেই ঘটনার প্রায় দু সপ্তাহ পর, তাদের সব কিছুই অনিশ্চিত বলে মনে হতে লাগলো...যেন সব কিছু তাদের চোখের সামনে থেকেও তাদের চোখে পরছে না ।

brHk0Kx.jpg

দীপার সেই রসময়ি ভেজা নগ্ন রুপের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নীরবতা ভঙ্গ করে হঠাৎ একটা প্রশ্ন করে উঠল রুদ্রঃ


"এখন আমরা কি করব...দীপা...? এখানে চলে তো এলাম...কিন্তু এবার কোথায় যাব আমরা? "


দীপা বুঝতেই পেরেছিল যে রুদ্রর মনে সেই প্রশ্ন কাল থেকেই উঁকিঝুঁকি মারছিল তবে তার কাছে সেই প্রশ্নের উত্তরটা থাকলেও তার চাবি কাঠিটা ছিল না...।

"তোরা...সামনের ওই সাদা বিল্ডিংটা দেখতে পাচ্ছিস, ওই ক্ষেতের পাশে ?" জানালা দিয়ে দূরে ইশারা করল দীপা । "ওইটাই হচ্ছে সেই সেলিব্রেশন হোটেল যেখান থেকে আমি ওই প্যাকেটটা তুলতে এসেছিলাম...।" দীপার কথা শেষ হতে না হতেই তিস্তা রুদ্রর কল থেকে উঠে সটান বসে পড়লো |


"ওইটা সেলিব্রেশন হোটেল....?" রুদ্র আর তিস্তা একসাথে মিলিত কণ্ঠে বলে উঠল




"হ্যাঁ...আর ওখানেই আমি এসেছিলাম, তবে তিস্তা...তুই আগে ওই হোটেলে কোনোদিন যাসনি...তাই তো?"




"নাহ...তবে ওই ব্যাপারে সব কিছুর প্ল্যানিংই বস আর আমি করেছিলাম..." তিস্তা বলে উঠল




"তুই সত্যি ব্রিলিয়ান্ট..তিস্তা, মানে ওই ড্রপ বক্সের আইডিয়াটা দারুণ ছিল.. কারুর সঙ্গে দেখা না করেও কত সহজ ভাবেই সব কাজ হয়ে গেছিল...."



"থ্যাংকস দীপা দি.." বলে আবার জানালা দিয়ে সেই হোটেলের দিকে তকাল তিস্তা




"তবে ঐখান থেকেই খুঁজতে....আরম্ভ করলে কেমন হয়, মানে ওখানেই তো কোনও ক্লু থাকতে পারে..." রুদ্র বলে উঠল




"হ্যাঁ....সেটাই ভাবছিলাম আমি...ওখান থেকেই যখন ওই জিনিসটা পেয়েছিলাম তার মানে ওই ঘরটাই একমাত্র জায়গা যেখানে আমরা পাণ্ডে-জির সেফ হাউসের সম্পর্কে কিছু তথ্য পেতে পারি "




"তবে...ওখানে যাওয়া কি নিরাপদ হবে, মানে এরকম তো নয় যে হোটেলে ঢুকেই আমরা ওই রুম খুঁজতে শুরু করবো আর ম্যানেজার আমাদের ভালোবেসে আদর করবে...।"রুদ্র বলে উঠল




" ঠিকি বলছিস তুই কিন্তু ব্যাপারটা হল যে...." বলে বোতল থেকে এক ঢোঁক জল খেলো দীপা, তারপর আবার বলতে আরম্ভ করল "হ্যাঁ...যা বলছিলাম, একসময় এই হোটেলটা খুবই জমজমাট আর হাই প্রোফাইল ছিল, সব অনেক তাবড় তাবড় লোকেরা সেখানে আসত, তবে এখন এটা কোনও সাধারণ অতিথিশালার চেয়ে বেশি কিছু নয় আর তার ওপর এখন জায়গাটাও খুব একটা সুবিধের নয়।"




"মানে ?" রুদ্র জিজ্ঞেস করলো




"ওখানে এখন লং টার্ম ভিত্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়, সম্ভবত মাসিক বা ত্রৈমাসিক মানে কোয়াটার-লি আর যারা ওখানে থাকে তারা নিজ মর্জি যখন ইচ্ছা ঢুকতে পারে বেরোতে পারে, মানে যেমন আমি করেছিলাম ওই জিনিসটা নেওয়ার সময় "




"হ্যাঁ...দীপা দির কাছে যে চাবি দেওয়া ছিল সে চাবিটা খুলে ও নিজেই ভেতরে ঢুকেছিল" তিস্তা বলে উঠলো




"হ্যাঁ, একদম তাই"




"তবে আগের প্ল্যান অনুযায়ী আমাদের যে ওখানে ওঠার কথা ছিল...মানে ওই রিসেপশানে টাকা খাওয়ানর কথা বলেছিলে যে...সেটার কি হল...?" রুদ্র প্রশ্ন করল




"সে সব আর কিছুই হয়না রু..." বলে তিস্তার দিকে তাকাল দীপা । দীপাও সেই ব্যাপারে অবগত ছিল না কাল পর্যন্ত...গত সকালেই সে তিস্তার কাছ থেকে সেটা জানতে পেরেছে তবে সেই ব্যাপারে রুদ্রকে তখনও কিছু জানায়নি দীপা ।




"ওকে....তবে তুমি কীভাবে জানলে যে কোন ঘরে তোমায় যেতে হবে? আর চাবিটা তোমাকে কে দিয়েছিলো?" রুদ্র বলে উঠলো




"দ্বিতীয় তলায় 9 নং ঘর" দীপা আর তিস্তা একসঙ্গে বলে উঠল আর তারপর একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল । " হ্যাঁ....আর ওই ইন্সট্রাকশন আর ওই চাবিটা একটা সিল করা প্যাকেটে আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল কলকাতায়, আমাদের ফ্ল্যাটে। সম্ভবত এই বদমাশ মেয়েটাই সেই কাজটা করেছিল " বলে তিস্তার গালটা আলতো করে টিপে দিলো দীপা



"কিন্তু ওখানে পৌঁছে কেউ তোমাকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেনি? মানে গেলে আর ঢুকে গেলে..? এ কেমন সিকিউরিটি...!"



"না....আসলে দরজার দিয়ে প্রথমবার ঢোকার সময়ই শুধু একটা গার্ড আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি কোন ঘরে যাচ্ছি তবে শুধু প্রথমবারই, পরের বার থেকে আর কেউ কোনও প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেনি আমায় | আমি বাইরে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ফিরে এলেও কেউই আমার আর খোঁজ খবর নেয়নি।" দীপা বলে উঠল




"ওকে...ওখানে কি আর কেউ থাকে বা কি ছিল যখন তুমি এসেছিলে ? "




"হ্যাঁ...অন্য ঘরে লোকজন ছিল আর তাদের পরিবারও হয়তো ওখানে থাকতো | একজনকে তো দেখেছিলাম চুলায় রান্না করতে আবার কেউ কেউ টিভি দেখছিল| সবাই যে যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল ওখানে, কেউ কারুর ব্যাপারে নাক গলাবার মতো নয়।"




"তারমানে আমাদের কাছে যদি ওই রুমের চাবিটা থাকতো তাহলে আমরা সেখানে গিয়ে আরও কিছু ইনফরমেশন জোগাড় করতে পারতাম... হয়তো সব কিছুরই সমাধান হয় যেত..... " রুদ্র জানালা দিয়ে দূরে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল




"হ্যাঁ রু...চাবিটা যদি থাকতো তাহলে সব কিছুরই সমাধান হয়ে যেত...." আশাহত হয়ে বলে উঠলো দীপা



"চাবি? চাবি তো আছে..." তিস্তা বলে উঠল



তিস্তার কাছ থেকে এরকম কিছু শুনবে সেটা ওরা দুজনে একদমি আশা করেনি "মানে..? চাবি আছে মানে....? " রুদ্র আর দীপা অবাক হয়ে একসঙ্গে প্রশ্ন করে উঠলো


"মানে চাবি তো তোমাদের কাছেই আছে ...দাড়াও" বলে বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে রুমের একদিকে হেটে গেল তিস্তা, তবে রুদ্র লক্ষ করলো যে প্রত্যেক পা ফেলার সাথে সাথে তিস্তার সুন্দর মাই জোড়া ঝাঁকুনি খেতে খেতে উপর নিচ দুলতে উঠল | কিছুক্ষণের মধ্যেই তিস্তা ফিরে এলো তাদের সেই ব্যাক-প্যাকটা নিজের সঙ্গে নিয়ে |



"এতে চাবি আছে....? অরে হ্যাঁ সেদিন তো দেখেছিলাম এতে কিছু চাবি ছিল..তবে কি..?" তবে দীপা শেষ করার আগেই রুদ্র তিস্তার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে এক গাদা চাবি বার করলো....



"কোনটা...এখানে তো অনেক চাবি আছে...কোনটা এর মধ্যে...?" অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো রুদ্র


দীপা সামনে এগিয়ে এসে প্রত্যেকটা চাবি পরীক্ষা করে দেখল তবে সেই রুমের চাবি কথাও খুঁজে পেলো না | আশাহত হয়ে তিস্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো :


"কই...চাবিটা তো নেই এরমধ্যে...তুই কোন চাবির কথা বলছিলি...?"




"ওই...দেখেছো তো..চোখের সামনে থাকতেও তোমরা ওটাকে দেখতে পেলে না" বলে বিছানার ওপর রাখা একটা ক্যানিস্টারের দিকে ইশারা করলো তিস্তা



"ক্যানিস্টার..ক্যানিস্টারে কি আছে...?" রুদ্রর প্রশ্ন শেষ হতে হতে তিস্তা ক্যানিস্টারটাকে বিছানা থেকে তুলে নিজের হাতে নিয়ে নিচের দিকটাকে চেপে ধরল, তারপর আস্তে আস্তে নিচটা ঘোরাতেই "মট" করে একটা আওয়াজ হয়ে বিছানার ওপর কি যেন একটা পরে গেলো | রুদ্র আর দীপা আশ্চর্য হয়ে বিছানার ওপর সেই সদ্য পড়া জিনিসটার দিকে তাকাতেই দেখল যে সেটা একটা চাবি | রুদ্র হাতে করে সেটাকে তুলে দীপাকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলো;


"এইটা...?" একটা বড়, ৮-লিভারের নাভতাল লকার চাবি ওপরে তুলে ধরল রুদ্র ।



"হ্যাঁ, রু হ্যাঁ....এইটাই!!! এইটাই!!!" দীপা চেঁচিয়ে উঠলো "তারমানে....তারমানে পাণ্ডে-জিও এই পথ দিয়েই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। আমরা ঠিক রাস্তাতেই হাঁটছি..." আতদিনে একটা চূড়ান্ত ইঙ্গিত পেয়ে দীপার মন আনন্দে ভরে উঠল ।



"হ্যাঁ..কিন্তু সেটা আর হল কোই....দীপা দি..?" উদাসীন কণ্ঠে তিস্তা বলে উঠল ।




"না তিস্তা একদম না, পুরনো কথা মনে করে দুঃখ পাস না, বরঞ্চ কালকের চিন্তা করে মনে ফুর্তি আন, আনন্দে থাক..."




"হমমম ..." তিস্তা আস্তে করে বলে উঠল ।




"তবে তুই এইটার ব্যাপারে আগে থেকে জানতিস...? আমাদেরকে এইটার ব্যাপারে বলিস নি কেন একবারের জন্যেও ? এইটা কতটা ইম্পরট্যান্ট সেটা তুই নিশ্চয়ই জানিস....? তবে কেন জানালি না আমাদের কে...?" তিস্তাকে উদ্দেশ করে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো দীপা ।




"দীপা দি...আমার সত্যি একদম মনে ছিল না এটার ব্যাপারে...মানে ওই শরীরটা খারাপ হওয়ার পর থেকেই আমার....আমার সত্যি...."





"হ্যাঁ...ওরকম হলে যার কারুর মাথা তাল গোল পাকিয়ে যাবে তিস্তা আর সেটার জন্য তোমাকে কেউ কিছু বলছে না..." দীপার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রুদ্র বলে উঠল ।




"হমম....ঠিক আছে, তবে এটা ছাড়া তুই কি আর একটুও কিছু জানিস ওখানকার ব্যাপারে...? মানে এভরি বিট অফ ইনফরমেশন ইজ ভাইটাল ফর আস তিস্তা সো..." তিস্তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে দীপা উঠল কারণ ওর মনটা খুঁত খুঁত করছিল ।



"না এর থেকে বেশী আর কিছু আমি জানি না , দীপা দি..." বলে নিজের মাথা নিচু করে নিলো তিস্তা ।



"ঠিক আছে..." শান্ত গলায় বলে উঠল দীপা ।



"তাহলে...এইবার আমরা গেস্ট হাউসে যাব, তাই তো...? তবে কখন যাব আমরা...?" রুদ্র দীপাকে প্রশ্ন করল ।



"হ্যাঁ...যাব তো নিশ্চয়ই, তবে এখন নয়....এখনও বাইরেটা ভালোই অন্ধকার। আলো ফুটুক তারপর ভাবা যাবে "



"তবে আবার সেই একই প্রশ্ন করবো আমি...ওখানে যাওয়া কি আমাদের জন্য নিরাপদ হবে? মানে এখন আমাদের কাছে এই চাবিটা আছে তাই..গেলে রুমে কি থাকবে না থাকবে তার... "



'রুম নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না রুদ্র...আই নো এভরিথিং অ্যাবাউট দা রুম আর সেফটি নিয়ে তুমি একদমই চিন্তা করো না.." তিস্তা বলে উঠল ।



"আহঃ..হ্যাঁ তিস্তা থাকলে সেফটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই...দ্যাটস ফর শিওর..." আড়মোড়া ভেঙে বলে উঠল দীপা ।




"তাহলে কে কে যাব আমরা ওখানে...? তুমি আর আমি না তুমি আর তিস্তা নাকি তিনজনেই...?" রুদ্রও প্রশ্ন করল ।




"হ্যাঁ...তিনজনেই...সোজা আঙ্গুলে যদি ঘি তুলতে পারি তাহলে তো কোনও কথাই নেই কিন্তু যদি না ওঠে তবে আঙ্গুলটা বাঁকাবো আমি, আর তখন কাজ করবি তোরা | তাই তিন জনেরই প্রয়োজন ওখানে...." ।




"কি করবে ওখানে তুমি....কি প্ল্যান তোমার....?" রুদ্র চিন্তিত হয়ে বলে উঠল ।




"বলবো...সব বলবো...তবে যাই হোক না কেন, দুজনে কখনো আলাদা হবি না, সব সময় একসাথে থাকবি আর তিস্তা..." বলে তার দিকে ঘুরল দীপা "অযথা নিজের বন্দুক বের করবি না...তোর এই বন্দুক আছে মানেই সবাইকে জানাব ব্যাপারটা আমার মটেও পছন্দের নয়..." শক্ত ভাবে বলে উঠল দীপা ।




"আমি তো কখনও অযথা ব্যাপারে বন্দুক বার করি না দীপা দি...দরকারেই...ঠিক আছে তাই হবে...." আর বেশী কথা না বারিয়ে চুপ করে গেল তিস্তা আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।




"ব্যাস....এবার যদি ওখানে সব কাজ ঠিকঠাক হয় তাহলে হয়ত আমাদের জন্য আরেকটা দরজা খুলে যাবে..."



"হমম...তবে এবার শুধু ভোরের অপেক্ষা...তাই তো" রুদ্র জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল ।



"হ্যাঁ.." বলে দীপাও জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল আর তার তিস্তাও তাই করল ।


কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ওদের, খুব শীঘ্রই ভোরের আকাশ ফ্যাকাসে আলোতে ভোরে উঠল আর তার ফলে তাদের চোখের সামনে সেলিব্রেশন হোটেলকে জীবন্ত হয়ে উঠতে দেখল ওরা । সূর্যের প্রথম কিরণ এসে ওদের মুখের উপর পড়তেই ওদের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো, জ্বলজ্বল করে উঠল একটা নতুন বাঁচার আশায় | দীপা আর তিস্তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরল রুদ্র | নিজের ঘাড়ে রুদ্রর উত্তপ্ত গরম নিঃশ্বাস অনুভব করল দীপা তারপর হঠাৎ নিজের লোমশ যোনির উপর রুদ্রর আঙুল অনুভব করল। সেটা আনুভব করে রুদ্রর দিকে তাকাতেই দীপা লক্ষ করলো যে তার লিঙ্গটা একদম খাঁড়া মজবুত হয়ে রয়েছে আর সেটায় আস্তে আস্তে হাত বোলাচ্ছে তিস্তা | চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখে আর রুদ্রর স্পর্শ নিজের যোনির ঠোঁটে অনুভব করে দীপার নগ্ন শরীরের মধ্যে দিয়ে একটা কাঁপুনি বয়ে যেতে লাগল আর তাতে তার শরীরের প্রত্যেকটা রোমকূপ জেগে উঠল | তার শরীর কামনার বানে ভাসতে চাইলেও তার মন বলল আরেক কথা | জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দীপা খুঁজে চলল সেই রুমটাকে, যেখানে সম্ভবত ছিল তাদের মুক্তির মূল চাবিকাঠি ।



এবার তাদের সময় শুরু.... এবার সময় সেলিব্রেশন হোটেলে রেড করার ।
 
Last edited:
  • Like
Reactions: ranaroy
207
438
64
পর্ব ৩০


"কিন্তু যদি প্রথমেই তোমাকে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে দায়....তাহলে ? তাহলে ভেতরে ঢুকে চাবি কোথা থেকে পাবে তুমি..." রুদ্রও যুক্তি দিয়ে প্রশ্ন করে উঠল ।


"দেবে না ঢুকতে...আমার মন বলছে...." দীপা বলে উঠল ।


"তাহলে...প্রথমে বরঞ্চ আমরাই জাই...?" তিস্তার দিকে তাকিয়ে দীপার উদ্দেশে বলে উঠল রুদ্র ।


"না....তোদের কেও ভেতরে ঢুকতে দেবে বলে মনে হয়না আমার...দেখছিস না কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না ওরা...সবাই এসেও ফিরে চলে যাচ্ছে" বলে জানালা দিয়ে সেই সেলেব্রেশন হোটেলের দিকে ইশারা করল দীপা । আকাশে তখন সূর্যদেব নিজের প্রকপ দেখাতে শুরু করেছেন আর তারি ঝলক গিয়ে পড়ছিল সেই সেলেব্রেশন হোটেলে ।


"তাহলে..."




"হানি ট্র্যাপ..." রুদ্র আর তিস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা




"ঠিক আছে...কিন্তু একা কেন? তিস্তাকে নিয়েও তো যেতে পারতে...তুমি, টু ইস অলওয়েজ বেটার দেন ওয়ান " রুদ্র বলে উঠল



"নট...অলওয়েজ , যা প্ল্যান করেছি আমরা তাই ফলো....যদি ওখানে কিছু অসুবিধা হয় তাহলে তিনজনেই একসাথে পালাব...দলছুট হয়ে গেলে কিন্তু সব কিছুই ভেস্তে যাবে, তাই...বি কেয়ারফুল" সাধান সূচক কণ্ঠে বলে উঠল দীপা



"হমমম...."



হোটেলের সেই ঘরে বসে সেলেব্রেশন হোটেলে রেড করার প্ল্যান রেডি হয়ে গেল ওদের | দীপার প্ল্যান অনুযায়ী, ওরা ঠিক করল যে প্রথমে দীপা একা গিয়ে একবার চেষ্টা করবে ওই হোটেলের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকার | দরজার সামনে চব্বিশ ঘণ্টা একটা গার্ড মতাওন করা থাকে তাই সেটা টপকে যাওয়া বেশ শক্ত হবে । তবে যদি সেটা সম্ভব না হয় তখন খেলার মধ্যে রুদ্র আর তিস্তার এন্ট্রি হবে | দীপা প্ল্যান করে লোকটাকে নিজের হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করবে আর যখন নিজের ছলে বলে কৌশলে সেই গার্ডটাকে সে ডিসট্র্যাক্ট করবে তখন ওরা দুজন সামনের সেই দরজা দিয়ে হোটেলের ভেতরে ঢুকবে | তারপর সিঁড়ি বেয়ে প্রথমে ফার্স্ট ফ্লোর তারপর সেকেন্ড ফ্লোরে যাবে; সেখান থেকে সেই ৯ নম্বর ঘরের সামনে গিয়ে তালা খুলে ভেতরে ঢুকবে । তারপর নিজেদের সব কাজ টাজ মিটিয়ে আবার বেরিয়ে আসবে । তবে যতক্ষণ না ওরা আসছে ততক্ষণ দীপা গার্ডটাকে ডিসট্র্যাক্ট করে রাখবে, তারপর সেও ওদের সঙ্গে বাইরে এসে মিট করে আবার নিজেদের হোটেলের রুমে ফিরে যাবে ।


তবে যে জিনিসটার অনুমান করেছিল দীপা সেদিন সেই জিনিসটাই হল |


l7n0IJl.jpg


"কোথায় যাবেন আপনি...? " হোটেলের মেন্ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডটা জিজ্ঞেস করল ।



"সেকেন্ড ফ্লোর রুম নম্বর ৯..." সোজা সুজি বলে উঠল দীপা



"কিন্তু....আপনাকে তো আগে কোনোদিন এখানে দেখিনি...কবে এসেছেন আপনি এখানে...? " দীপার আপাদমস্তক দেখে প্রশ্ন করল লোকটা




"সেটা আপনার জেনে লাভ নেই, আর আমার যতদূর মনে হয়...এই হোটেলের টার্ম আর কন্ডিশনে সে সব কিছুই বলা আছে । যে যখন ইচ্ছা......"




"হ্যাঁ.... " দীপাকে থামিয়ে লোকটা বলে উঠল, "সে সব কিছুই লেখা আছে, আসলে প্রব্লেমটা কি জানেন তো ম্যাডাম.....পরশুদিন থেকে আমাদের এখানে সিকিউরিটিটা আরও স্ট্রিক্ট করে দেওয়া হয়েছে...যাকে তাকে আমরা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না....এমন কি চাবি থাকলেও না...." বলে পকেট থেকে দেশলাইয়ের বাক্স বার করল লোকটা



"কেন? কি জন্য এত স্ট্রিক্ট হয়ে গেলেন আপনারা...কেউ এসেছে নাকি এখানে..? " বলে হোটেলে দিকে একবার চাইল দীপা




"পরশুদিন এখানে একটা লাশ পাওয়া গেছে....আর সে লাশ বলতে লাশ, শালা...লোকটাকে মেরে ওর মুখটাকে হাতুড়ি দিয়ে থেঁতো করে দিয়েছে...শালাকে চেনাই যাচ্ছে না..."




"সেটা তো আর নতুন কিছু না আপনাদের জন্য...."




"হ্যাঁ...তবুও...অচেনা কাউকে আমরা আপাতত ঢুকতে দিচ্ছি না...ওপর থেকে এই অর্ডার এসেছে আমাদের কাছে " পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে তাতে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরাল লোকটা, তারপর সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে দীপার মুখের সামনে ছাড়ল ধোঁয়াটা |



লোকটার সেই অসভ্যতায় রেগে গা রিরি করে উথলেও সেটাকে নিজের মুখে ফুটে উঠতে দিলো না দীপা | আবার একবার অনুরোধ করল লোকটার কাছে "দেখুন....আপনি বুঝতে পারছেন না, ওখানে যাওয়াটা আমার খুবই দরকার...ওটা আমার বাঁচা মরার সওয়াল"




"আমি বুঝতে পারছি ম্যাডাম, ওখানে যাওয়াটা আপনার জন্য খুবই ইম্পরট্যান্ট কিন্তু আমি আপনাকে যেতে দিতে পারবোনা......সরি" বলে দেওয়ালে হেলান দিয়ে সিগারেট টানতে লাগল লোকটা ।




লোকটার মতি গতি দেখে দীপার বুঝল যে তার অনুমানি ঠিক; সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, তাই এবার নিজের আঙ্গুল বেঁকিয়ে চেষ্টা করলো দীপা| নিজের শাড়ীটাকে আলগা করে আঁচলটাকে বেশ কিছুটা নামিয়ে নিলো যাতে বুকের খাঁজটা স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়, তারপর বলে উঠল "আমি যদি আপনাকে কিছু হেল্প করি তবুও আমায় ছাড়বেন না...?" কথাটা শেষ করে লোকটার গায়ের কাছে এসে ঘেঁষে দাঁড়ালো দীপা




'মানে...?" লোকটা ভেবাচেকা খেয়ে বলে উঠল | দীপার মধ্যে যে এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হবে সেটা সে একবারের জন্য ভাবেনি |




"হেল্প...মানে আমি আপনাকে একটু হেল্প করবো আর তার বদলে আপনি আমাকে একটু হেল্প করবেন" বলে নিজের শাড়ির আঁচল সরিয়ে নিজের মাইয়ের খাঁজ বের করল দীপা আর সেটা দেখেই লোকটা সাথে সাথে দীপার ওপরে ঝাপিয়ে পরার জন্য এগিয়ে এলে তবে পরোক্ষনে নিজেকে সামলে নিলো |



"এ আপনি...মানে...হেল্প তো একটু দরকার ছিলই...বুঝতেই পারছেন খুব চাপ আমাদের কিন্তু এখন ডিউটির মধ্যে...সে সব" বলে লোকটা দোনো মোনো করতে লাগলো



"কিচ্ছু হবে না, চলুন না....ওই তো ওইখানেই তো ওয়েটিং রুম আছে.... ওইদিকটা তো ফাঁকাই থাকে সব সময়...তাই না...?" বলে দূরে ভেতরে একটা রুমের দিকে ইশারা করল দীপা



"আ...আপনি কি করে জানলেন?" লোকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল



"এই দেখেছেন তো....আমি তো আপনাকে বললামই যে আমি এখানে আগেও এসেছি, কিন্তু আপনি তো আমায় ভেতরে ঢুকতে দিতেই রাজি হলেন না মশাই....." দীপা নেকী সূরে বলে উঠল



"আরে...আরে ঠিক আছে...ঠিক আছে...চলুন..চলুন" বলে দীপাকে সঙ্গে নিয়ে হোটেলের ভেতরে ঢুকে গেল লোকটা | তবে লোকটার অজান্তেই ভেতরে ঢোকার আগে পেছনে ঘুরে চোখ মাড়ল দীপা...কিন্তু কাকে...?


সামনের দরজা থেকে ঠিক কুড়ি ফুট দূরে হোটেলের গেটের বাইরে, একটা ভাঙা পরিত্যক্ত গাড়ির পেছনে অপেক্ষা করছিলো রুদ্র আর তিস্তা দীপার সেই সিগনালের জন্য | আর দীপার কাছ থেকে সেই সংকেত পেয়েই আস্তে আস্তে গাড়িটার পেছন থেকে বেরিয়ে হোটেলের ভেতর ঢুকল ওরা |


হোটেলের মেন দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সামনের সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে উঠতে লাগলো ওরা | হোটেলটার যে একসময় খুবই নাম ডাক ছিল সেটা ভেতরে ঢুকে সব আসবাবপত্র দেখেই বুঝতে পারলো রুদ্র । সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ফার্স্ট ফ্লোরের শেষ সিঁড়িতে পৌঁছে, একবার নিজের মাথা বাড়িয়ে উঁকি মেরে দেখে নিলো কেউ সেই করিডোরে আছে কি না | তারপর আবার সিঁড়ি দিয়ে সেকেন্ড ফ্লোরের উদ্দেশে উঠতে লাগলো ওরা | লোকজনের চোখ এড়িয়ে খুবই সাধনে উঠতে উঠতে শেষে সেকেন্ড ফ্লোরে পৌঁছে গেলো ওরা | তারপর সেই আগের বারের মতোই নিজের মাথা বাড়িয়ে উঁকি মেরে দেখল রুদ্র | ভাগ্যক্রমে, রুমের বাইরে কেউই না থাকায় হাফ ছেড়ে বাঁচল ওরা | তারপর সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে আস্তে আস্তে করিডোর দিয়ে একের পর এক রুমের সামনে দিয়ে যেতে যেতে শেষে রুম নাম্বার ৯ এর সামনে এসে পৌঁছল ওরা | পেছনে ঘুরে একবার এক বার ওপর থেকে নিচের চেহারাটা দেখে নিয়ে তিস্তার দিকে ঘুরল রুদ্র |



"চাবি...চাবিটা তোমার কাছে তো..?" তিস্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল রুদ্র



"হ্যাঁ...নাহলে কোথায় যাবে, দীপা দি তো আমাকেই চাবিটা রাখতে বলল...তবে দীপা দির ইন্সটিংট আছে বটে...." বলে নিজের শর্টসের পকেট থেকে সেই ৮ লিভারের নাভতাল চাবিটা বার করল তিস্তা । তারপর রুদ্রর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে, তালার মধ্যে সেই চাবিটাকে ঢুকিয়ে চারবার ঘোরাল আর ঘোরাতেই "ঘটট" করে একটা আওয়াজ করে দরজাটা খুলে গেল | ওদের মনে হল যেন ওদের ধরে এতক্ষণে প্রান সঞ্চার হল।


দরজাটা আস্তে করে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে যেতেই রুদ্রকে বাধা দিলো তিস্তা |

"না...দাঁড়াও..." বলে রুদ্রর হাতটা চেপে ধরল তিস্তা, " আমি আগে ঢুকছি..." বলে নিজের শর্টসের দু সাইডের চেন খুলে নিজের সেই উরুর বেল্ট থেকে বন্দুক দুটো বার করল তিস্তা, তারপর আস্তে আস্তে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকল | ভেতরে সব জিনিস ঠিকঠাক আর নিরাপদ দেখে রুদ্রকে ভেতরে ঢুকে আসতে বলল তিস্তা | তবে রুদ্র ভেতরে ঢুকে দরজার ছিটকিনিটা দিতে যেতেই তিস্তা আবার ওকে বাধা দিলো |



"না..না....লক করো না...কখন কি হবে আমরা কিছুই জানি না...পালাতেও হতে পারে, তাই ভেজিয়ে রাখাই ভালো হবে" তিস্তার কাছে সেই কথা শুনে দরজাটা ভেজিয়ে দিলো রুদ্র | ঘরের ভেতরে ঢুকতেই একটা ছোট খাটিয়া নজরে পড়ল রুদ্রর আর তারই পাসে রাখা ছিল একটা আলমারি, সেই আলমারি যার কথা দীপা তাকে বলেছিল |



আস্তে আস্তে আলমারির সামনে এগিয়ে গিয়ে আলমারির পাল্লাটা খুলতেই ওপরে জমে থাকা ধুলটা বেড়িয়ে এল । আলমারির ভেতরেটা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল রুদ্র | তবে কাজের জিনিস পত্রের বেশি অকাজের জিনিসেই ভর্তি ছিল আলমারিটা | প্রথম দুটো তাকে কিচ্ছু না পেয়ে পরের তাকে খুঁজতেই একটা টালিস্কর সিঙ্গেল মল্টের ভর্তি বোতল দেখতে পেলো রুদ্র | পাণ্ডে-জি যে রাশভারী লোক ছিলেন সেটা রুদ্র আগে থেকে জানলেও এই রকম জাইগায় এই জিনিস পেয়ে তার কাছে সেই ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে গেল | তার পাশের তাকে খুঁজতেই কিছু কাগজ পত্র আর বিল পেলো রুদ্র | তিস্তার দিকে আশাহত হয়ে তাকিয়ে শেষ তাকে খুঁজতে যেতেই একটা ছেঁড়া ফাটা ম্যাপ পেলো রুদ্র...তবে সেটা এতটাই ছেঁড়া ফাটা ছিল যে জায়গার নামগুলো পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছিল না | সেই তাকেই সেই ড্রপ-বক্সটা দেখতে পেয়ে সেটাই হাত দিতে যেতেই তিস্তা বলে উঠল যে সেটাও সম্পূর্ণ ফাঁকা | রুদ্রর খুবই নিরাশ হয়ে চুপ করে সেই শেষের তাকের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল এমন সময় পেছন দিক থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এল ।

তবে শেষমেশ তারা যেটার আশা করেনি সেইটাই হল |



"হ্যান্ডস আপ! হ্যান্ডস আপ!!! " কে যেন তাদের পেছন দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠল | ভয়ে অপ্রস্তুক হয়ে নিজেদের হাত দুটো আস্তে আস্তে ওপরে তুলে ধরলো ওরা | "ঘোর..ঘোর এবার!!!" লোকটা আবার চেঁচিয়ে উঠল । লোকটাকে না দেখতে পেলেও তার জুতোর আওয়াজে পরিষ্কার বুঝতে পারলো যে সে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে | আস্তে আস্তে উল্টো দিকে ঘুরে মাথা তুলে ওপরের দিকে তাকাতেই তিন তিনটে গুণ্ডাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল ওরা । সবারি পরনে জামা আর প্যান্ট আর হাতে একটা করে বন্দুক |



"শেষ মেশ জালে মাছ ধরা পরেই গেল...মাড়া" বলে তিস্তার দিকে এগিয়ে এল সামনের গুণ্ডাটা | "আমি বুঝতেই পেরেছিলাম...একদিন না একদিন তুই এইখানে আসবই...তুই তো আমাদেরই কুত্তা আর কুত্তারা সময় হলে নিজের ঘরে ফিরে আসে...তাই না?" বলে খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উঠল লোকটা । তার কোথা শুনে রুদ্র বুঝতে পারল যে সেই ওরা তিস্তাকে আগে থাকতেই চেনে এখন ওরা কি চায় তাদের কাছ থেকে...?



"শালি...শুধুমাত্তর তোর জন্যই ওই পাশের রুমটা ভাড়া নিয়েছিলাম আমি...তোর পোঙ্গা মারব বলে" বলে তিস্তার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল লোকটা তারপর আস্তে আস্তে নিজের বন্দুকের নলটা তিস্তার বুকের ওপর রাখল | "তুই শালী ভেবেছিলি যে তোর ওই বুড়োর কাছে গিয়ে সারাজীবনের জন্য বেঁচে গেছিস...কিন্তু আজকে এই অবস্থা থেকে তোকে কে বাঁচাবে বে" বলে বন্দুকের নলটা তিস্তার স্তনের ওপরে নিয়ে গিয়ে ঘষতে লাগলো লোকটা | রুদ্র মেয়েদের অপমান একদমই সহ্য করতে পারত না আর নিজেরই আপন কাউকে এখন অপমানিত অপদস্ত হতে দেখে সে আরও রেগে গেল তবে কোনও কিছু রিএক্ট করবার আগে একটা জিনিস সে লক্ষ্য করল যে তিনজনেরই বন্দুকের ওপরই সাইলেন্সর জাতীয় কিছু একটা লাগানো ছিল |


"এরে বাবু...তোরা আছিস তো আমার সাথে...?" পেছনের সাঙ্গোপাঙ্গ উদ্দেশ্য করে বলে উঠল সামনের গুণ্ডাটা




"হ্যাঁ...হ্যাঁ গুরু... তুমি শুরু কর এবার..."



"তবে এইবার কোথায় যাবি মাগি....? সেই রাতের কথা মনে আছে তোর নিশ্চয়ই...আজকে সেই রাতেরই বদলা নেব আমি" বলে তিস্তার মুখের দিকে তাকাল লোকটা, "তুই রাজি আছিস কি না সেটা দেখার আজ আর কেউ নেই আর তাই এই খাটিয়াতেই ফেলে ফেলে চুদে তোকে শেষ করে দেবো শালি..." তবে তার কথা শেষ হতে না হতেই রুদ্র প্রচণ্ড জোরে চেঁচিয়ে উঠল আর তার ফলে গুন্ডাগুলর নজর এতক্ষণে গিয়ে পড়ল রুদ্রর ওপর ।



"আরে বাবা...এটা কে বে , তোর নাগর বুঝি...? শালী আমাদের কে তো মারতে দিলই না তবে এই মাল দিয়ে....| এরে বাবা...দেখ বাঁড়া দেখ...কেমন রগে ফুঁসছে মালটা..." বলে রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ালো গুণ্ডাটা "আমাকে চোখ রাঙাচ্ছিস মাদারচোদ....এইবার দ্যাখ কি ভাবে আমি তোর গাঁড় ফাটাই " বলে বন্দুক সমেত রুদ্রর পেটে সজোরে একটা ঘুসি মারল লোকটা | ঘুষিটার এতটাই জোর ছিল যে সেটা লাগার সাথে সাথে রুদ্রর মুখ দিয়ে রক্ত ছিটকে বেরিয়ে এলো আর সেই টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পেছনের দিকে পর গেলো |



আর সেইটাই ছিল তিস্তার শেষ সীমানা । রুদ্রর সেই অবস্থা দেখেই তিস্তা নিজের সেই ভীষণ মূর্তি ধারণ করল | গুণ্ডাগুলোকে কোনও কিছু করার সময় না দিয়ে নিজের উরু বেল্ট থেকে দুটো বন্দুকই বার করলো তিস্তা | গুন্দাগুল এতটাই অপ্রস্তুত ছিল যে সেটার তারা একদমই আশা করছিল না | নিমেষের মধ্যে প্রচণ্ড হিংস্রতার সাথে সামনে দিকে ঝাঁপিয়ে পরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো গুণ্ডাকে লক্ষ্য করে একের পর এক মরণ বান ছুঁড়তে লাগল তিস্তা আর প্রকোপে তাদের শরীর সাথে সাথে ঝাঁজরা হয়ে গিয়ে দূরে ছিটকে পড়লো |


এতো সব এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে রুদ্রর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গুণ্ডাটা রিএক্ট করতে পারলো না আর সেটা বুঝতে পেরেই রুদ্র ওর বিচিতে প্রচণ্ড জোরে একটা লাথি মেরে ওকে নিচে ফেলে দিলো| গুণ্ডাটা একটা বিকট চিৎকার করে সেই ঘরের মেঝেতে পরে গেলো আর সাথে সাথে তিস্তা পেছন দিকে ঘুরে ওর বুকের ওপর নিজের হাঁটু দিয়ে চেপে ধরল | তারপর নিজের বন্দুক দিয়ে দুই পায়ের হাঁটু লক্ষ করে গুলি চালাল । গুণ্ডাটা ভীষণ জোরে আর্তনাদ করে তিস্তার পায়ের তলায় ছতফত করে উঠল ।


"আমিও তোর অপেক্ষাই ছিলাম" বলে নিজের বন্দুকের পেছনটা দিয়ে ওর কপালে একটা জোরে প্রহার করলো তিস্তা আর সাথে সাথে ওর কপাল ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো | "তুই আমায় যাই করিস না কেন..আমার তাতে কোনও কিছু যায় আসেনি না...কিন্তু এই ছেলেটার গায়ে হাত দিয়ে আজকে তুই তোর জীবনের সব থেকে বড়ো ভুলটা করেই ফেললি...." বলে মাথা ঘুরিয়ে রুদ্রর দিকে তাকাল তিস্তা । তিস্তা ওর দিকে তাকাতেই সে দেখল যে চোখ মুখ যেন পুরো পালটে গেছে...তাকে দেখে রুদ্রর মনে হল যেন কোন প্রেতে তার উপর ভর করেছে ।



"শালী....তুই...তুই..মরবি মাগি...তুই আহ্হ্হঃ" তবে কথা শেষ করার আগেই নিজের বাঁ হাত দিয়ে তার বিচিতে আবার প্রতিঘাত করলো তিস্তা | প্রচণ্ড যন্ত্রণায় তিস্তার পায়ের নিয়ে শুয়ে শুয়ে কাতরাতে লাগলো গুণ্ডাটা "আমাকে ছে...ছেড়ে দে, তুই.....তুই.... আমি আর.....কিছু..." অসংলগ্ন ভাবে বলে উঠলো গুণ্ডাটা



"তোকে ছেড়ে দেবো ? তোকে ছেড়ে দিলে আমার লাভ কম লোকসানি হবে বেশী আর তার ওপর তুই শেষ হয়ে গেলে তোর জানোয়ার গ্যাংটাও ভেঙে গুড়িয়ে যাবে....." বলে কপালের ক্ষতর জায়গাটায় নিজের আঙুল দিয়ে টিপে ধরল তিস্তা



"আহহহহহ্হঃ আঃহ্হ্হঃ " বলে চেঁচিয়ে উঠল গুণ্ডাটা, "তিশা...আমায় ক্ষ....মা....আমায়...ক্ষমা করে দে...আমায় ছেড়ে....." ক্ষীণ ভাবে বলে উঠল গুণ্ডাটা



"না..." বলে নিজের বেল্টের পেছন দিক থেকে একটা ছোড়া বার করে এক কোপে গুণ্ডাটার গলার নলি কেটে দিলো তিস্তা | "যতক্ষণ বেঁচে থাকবি ততক্ষণ নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবি" বলে ওর গলার উপর থেকে নিজের হাঁটুটা সরিয়ে নিলো তিস্তা আর সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্তের ধারা ছিটকে বেরিয়ে আসতে লাগলো সেই কাটা জায়গা দিয়ে |


"অনেক জীবন নষ্ট করেছিস তুই....আজকে তুই মর শূয়রেরবাচ্চা" বলে শরীরের সমস্ত জোর দিয়ে ছড়াটা গুণ্ডাটার বুকের ওপর বসিয়ে পেট অব্দই চিরে দিলো তিস্তা | সারা ঘর তাদের রক্তের বন্যায় ভেসে যেতে আরম্ভ করলো | মেঝেতে বসে সেই ভয়ঙ্কর দর্শন দেখছিল রুদ্র আর সেই দেখে তার কয়েক বছর আগের সেই ঘটনার কথা মনে পরে গেল | তিস্তা গুণ্ডাটার কাছ থেকে সরে আস্তে আস্তে রুদ্রর সামনে এল, তারপর ওর হাত ধরে ওকে সোজা করে দাঁড় করাল । তারপর আচমকাই রুদ্রকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধিরে চুপচাপ কিছুক্ষণ ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকল | কিছুক্ষণ পর রুদ্রকে নিজের বুকের থেকে আলাদা করে তার চোখে চোখ রাখল তিস্তা ঃ

"তোমার..তোমার লাগেনি তো..?" রুদ্রর ঠোঁটে লেগে থাকা রক্তটা নিজের হাত দিয়ে মুছে দিলো তিস্তা |


"না...কিন্তু আমাদের এক্ষুনি, এখান থেকে পালাতে হবে, সবাই ওই গুলির আওয়াজ নিশ্চয়ই শুনতে পেয়েছে .." ভয়ে বলে উঠলো রুদ্র কারণ সে জানতো যে এই সব গুণ্ডাদের গ্যাং তাদের লিডারের আসে পাসেই থাকে আর তারা যদি একবার তাদের ধরতে পারে তবে সব শেষ হয়ে যাবে |


"হ্যাঁ...চলো" বলে ছুটে আলমারির সামনে গেলো তিস্তা, তারপর আলমারির মধ্যের সমস্ত জিনিসগুলোকে সেই ব্যাক-প্যাকের ভেতর ঢোকাল | তারপর তাড়াহুড়ো করে রুমের মধ্যে থেকে বেরিয়ে করিডোর দিয়ে ছুটতে লাগলো ওরা তবে আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে তাদের চোখে কেউই পড়লো না আর | সবাই যে যার মতন নিজেদের ঘরে বসে নিজেদের কাজ করতে ব্যস্ত ছিল, ঠিক যেমন দীপা বলেছিল | দৌড়োতে দৌড়োতে একদম শেষ সিঁড়ি নামতেই হোটেল থেকে বাইরে বেরোনোর দরজা দেখতে পেলো ওরা | তবে মেন্ দরজা অব্দি এসেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো তিস্তা আর সাথে সাথে রুদ্রর হাতটা খপ করে চেপে ধরল |





"গার্ডটা...গার্ডটা কোথায়....? দীপা দি..." তিস্তা হাঁপাতে হাঁপাতে রুদ্রকে জিজ্ঞেস করল




'জানি....না...তবে....এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই .......চলো" বলে এবার তিস্তার হাতটা চেপে ধরে সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেটের বাইরে পৌঁছে রাস্তা দিয়ে ছুটতে লাগলো রুদ্র | তবে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কোথাও কোনও জনমানবের চিহ্ন দেখতে পেলো না তারা | ওদের মনে হতে লাগল যেন সবাই মোড়ে গেছে |




"রু..রুদ্র..কোথায় যা..চ্চ?" দৌড়োতে দৌড়োতে জিজ্ঞেস করল তিস্তা




"আমাদের রানডেভু পয়েন্টে...দীপা যেখানে..." বলে আরও জোরে দৌড়তে লাগলো ওরা, তবে বেশি দূর যেতে হল না ওদের | কিছুদূর ঐরকম যেতেই ওদের সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো | রুদ্র আর তিস্তা ভয়ে গাড়ির দিকে তাকাতেই ভেতরে দীপাকে দেখতে পেলো :



"তাড়াতাড়ি....গাড়িতে ওঠ..." দীপা চেঁচিয়ে বলে উঠল সেই মরচে ধরা, রং ওঠা ভাঙা গাড়িটার মধ্যে থেকে | দীপার প্ল্যান বুঝতে পেরে অযথা আর সময় নষ্ট না করে গাড়িতে উঠে পড়লো ওরা আর উঠতেই দীপা এক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে গাড়িটাকে ছোটাতে আরম্ভ করলো | অ্যাড্রেনালিনের চোটে ওরা এতটাই উত্তেজিত হয়ে গেছিলো যে কিছুক্ষণ অন্তর অন্তত ওদের শরীর নিজে থেকেই কেঁপে উঠতে শুরু করল | গাড়িটাকে যতটা সম্ভব জোরে চালাতে চালাতে অলিগলি দিয়ে কাটাতে কাটাতে এগিয়ে যেতে লাগলো দীপা |


"গুলির আওয়াজ...গুলি কে চালাল..কথা থেকে এলো..আওয়াজ, তোরা..তোরা সব ঠিক আছিস তো ?" গাড়ি চালাতে চালাতে উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করল দীপা




"তিস্তা...." রুদ্র পেছন থেকে বলে উঠল




"তীস্তা...কি হয়েছে তিস্তার...?" ভয়ে দীপা আবার প্রশ্ন করে উঠল




"কিছু হয়নি ওর...গুলিগুল তিস্তা চালিয়ে ছিল আমাকে......" তবে রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার আগে দীপা চেঁচিয়ে উঠল




"তিস্তা...? কেন....কেন...? "




"ওসব পরে বলব তোমাকে, তুমি এখন এখান থেকে সোজা বেরিয়ে ভাঙা হাইওয়েতে ওঠো....যত তাড়াতাড়ি সম্ভব " তিস্তা চেঁচিয়ে উঠল




"কেন..? হাইওয়েতে..কেন যাবো...? " দীপা আবার চেঁচিয়ে বলে উঠল




"যাবে কারণ আমি যেতে বলছি...." নিজের দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠল তিস্তা "বাঁচতে চাইলে...যা বলবো তাই করবে...."




তিস্তার সেই রূপ এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে দীপার তার কথা মেনে নিতে বাধ্য হল |




"কোথায় যাবো আমরা?"




"ওই পারে....ধানবাদ.." তিস্তা বলে উঠল




"ধানবাদ......ধানবাদে কি আছে..? আরেকটা সেফ হাউস..? " দীপা জিজ্ঞেস করল




"না...সেফেস্ট হাউস..." তিস্তা বলে উঠলো




"তুই আমাদের থেকে আবার কি লুকচ্ছিস তিস্তা...তুই..." দীপা নরম গলায় বলে উঠল




"কিছু লোকাচ্ছি না....তোমায় যেটা বললাম করতে সেটা করো..." শক্ত ভাবে বলে উঠল তিস্তা


অযথা আর কথা না বারিয়ে হাইওয়ের ওপর উঠে গাড়ি ছোটাতে লাগলো দীপা | টানা তিনঘণ্টা ঘন্টা সেই ভাবে হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি ছুটে চলার পর দীপাকে সাইডের একটা কাঁচা রাস্তা ধরতে বলল তিস্তা | সেই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই আরেকটা ছোট রাস্তায় এসে পড়লো ওরা, তবে সেই রাস্তা দিয়ে যতই না ওরা এগোতে লাগলো ততই পাশের গাছপালাগুলো ঘন হয়ে উঠতে আরম্ভ করলো | শেষে এতটাই ঘন হয়ে গেলো যে আর সামনে এগোবার মতন জায়গা পেলো না ওরা


"এই...এই জঙ্গলের মধ্যে তোর সেফ হাউস আছে...কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাদের...?" ভয়ঙ্কর কোনও কিছুর আশঙ্কা করে বলে উঠল দীপা |




"হ্যাঁ...এখানেই আছে....আর যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে পৌঁছলে নিজেরাই বুঝতে পারবে...."




"কিন্তু এখান দিয়ে তো আর ঢোকা যাবে....সামনে তো আর রাস্তা নেই....." সামনের ঘন ঝোপ ঝারের দিকে ইশারা করে বলে উঠল দীপা




"তোমায় এগিয়ে যেতে বলেছি এগিয়ে জাও....." তিস্তার কাছ থেকে সেই কথা শুনে আবার গিয়ার দিয়ে এক্সিলারেটরে চাপ দিতেই হালকা হালকা এগোতে লাগলো গাড়িটা | আস্তে আস্তে সেই ঝোপ ঝড় ঠেলতে ঠেলতে কিছুদুর যেতেই আবার একটা মাঝারি মাপের রাস্তায় এসে পড়লো ওরা | তবে আসে পাশের সব গাছগাছালি দেখে পাহাড়ি বলে মনে হতে লাগল দীপার |



"আর কত দূর তিস্তা....?" রুদ্র পেছন থেকে প্রশ্ন করল




"ওই তো " বলে সামনের উইন্ড স্ক্রিনের দিকে আঙ্গুল তুলে ইশারা করল তিস্তা আর তাকে অনুসরণ করে সেই দিকে তাকাতেই ওদের নজরে পরল জঙ্গলের ভেতরে সেই বাড়িটাতে | গাড়িটাকে বাড়িটার থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড় করিয়ে ছে কি করেনি এমন সময় সটান গাড়ি থেকে নেমে পড়ল তিস্তা, তারপর আস্তে আস্তে হেটে সামনের দিকে এগিয়ে গেল । তিস্তার সেই রুপ ব্যাবহারে ভয় আশ্চর্য দুঃখ তিনটি যেন ফুটে উঠতে লাগল দীপা মুখে | যাকে সে আপন বলে মেনে নিয়েছিল সেই কিনা তাদের শেষ সীমানায় নিয়ে চলে এল...এই সব চিন্তায় মগ্ন হয় পড়ল দীপা এমন সময় হঠাৎ নিজের কাঁধের উপর কারুর একটা স্পর্শ অনুভব করল । স্পর্শ আনুভব করে পেছনে ফিরে তাকাতেই রুদ্রর সেই উজ্জ্বল মুখটাকে দেখল দীপা |



"চলো..." শান্ত গলায় বলে উঠলো রুদ্র | রুদ্রর সেই উজ্জ্বল মুখে একটা স্নিগ্ধ আশ্বাস পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল দীপা । তারপর হাটতে হাটতে গিয়ে দাঁড়াল তিস্তার পাশে |



"এটা সেফ-হাউস....?" তিস্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল দীপা



"চলো..." বলে বাড়িটার দিক অনুসরণ করে হাটতে আরম্ভ করল তিস্তা | তিস্তার কাছ থেকে সেই উত্তর পেয়ে কোনও উপায় না দেখে তার পেছন পেছন হাটতে আরম্ভ করল দীপা আর রুদ্রও | দূর থেকে দেখে বাড়িটাকে যতটা ভয়ঙ্কর বলে মনে হচ্ছিলো, কাছে এসে সেটাকে তার থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর মনে হতো লাগলো দীপার | বড় বড় দুটো গাছের মাঝখানে এমন ভাবে বসে ছিল বাড়িটা যে সেটাকে দেখে মনে হতে লাগল যেন সেই গাছগুলর সঙ্গেই সে বেড়ে উঠেছে মাতি থেকে | যেন কত কালের অভিশপ্ত.....না জানি কতই না প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মধ্যে | হাটতে হাটতে বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াতেই সামনের মরচে ধরা গেটের ওপর নজর পড়ল দীপার | এককালে সেটাতে হয়তো নীল রং করা ছিল তবে সে সবের আর এখন কোনও অস্তিত্বই নেই | নীল রঙ...? নীল রঙটাই কেন এল দীপার মাথায় সেটা সে নিজেও বুঝতে পারল না । গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা |



"তিস্তা..এটার চাবি..চাবি কো....." নিজের প্রশ্ন শেষ করবার আগেই দরজায় দুবার জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে উঠল তিস্তা আর সাথে সাথে তিস্তার মতলব বুঝতে পেরে ওর হাতটা চেপে ধরল দীপা |



"কে থাকে এখানে...? কে...? " দীপার কথা শেষ হতে না হতেই সামনের দরজাটা খুলে গেল আর সাথে সাথে সেই দিক থেকে একটা দমকা হওয়া এসে ওদের মুখে ওপর আছড়ে পড়লো | বাইরের সেই আধো অন্ধকারের মধ্যেও সেই বাড়ির ভেতরে থেকে অন্ধকার ঠিকরে বেরিয়ে আসতে লাগলো আর তারপরি হঠাৎ সেই অন্ধকারের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো একজন বয়স্ক বেক্তি | আস্তে আস্তে দরজার বাইরে এসে বেক্তিটি দাঁড়ালেন, তারপর তিস্তার দিকে তাকালেন উনি :



"তিশা.....!" তিস্তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলেন উনি তারপর হঠাৎ দীপার দিকে চোখ পড়তে নিজের চোখের চশমাটা ঠিক করে সেট করে বলে উঠলেন "মিস চ্যাটার্জী...!"
 
Last edited:
  • Like
Reactions: ranaroy
207
438
64
পর্ব ৩১


"ধমমমমম!" করে একটা প্রচণ্ড আওয়াজ করে বোমটা এসে পড়লো সেই ভাঙা ফ্লাইওভারটার ওপর | আগে থেকেই নিজের দেহ রেখে দিয়ে থাকলেও বম্ব পরার জন্য সাথে সাথে আরও কিছুটা অংশ ভেঙে এইদিক ঐদিক ছিটকে পড়লো | তবে তার নিজের অজান্তেই সেই অবশিষ্ট শেষ শক্তি দিয়ে আগলে রইলো তার ভেতরের থাকা আশ্রয়কারীকে |
আকাশের বুক চিরে একটার পর একটা ফাইটার প্লেনের যাওয়ার আওয়াজ হতে লাগলো আর তারি সাথে সাথে মনে হতে লাগল যেন পুরো মাটিটাই কেঁপে উঠল | মাঝে মধ্যে আবার দূর থেকে গুলি চলার আওয়াজও ভেসে আসতে লাগলো | কার ভাগ্যে যে সেই হতভাগ্য গুলি লেখা ছিল সেটা কেউই জানল না । চারিদিকের অবস্থা দেখে মনে হতে লাগল যেন এই পৃথিবী এইবার শেষ হয়ে যেতে চলেছে, দুঃখে আভিমানে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিতে চেলেছে তারি বাসিন্দাদের দিক থেকে | সূর্যের আলো তখন অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছিলো আর সেই সবের মধ্যেই নিজেদের বাঁচাতে সেই ভাঙা ফ্লাইওভারের নিচে আশ্রয় নিয়ে ছিল একটা পরিবার, তবে তার মধ্যে এখন শুধু অবশিষ্ট একটি মাত্র প্রান |
বম্বিঙয়ের ফলে ফ্লাইওভারটার জায়গায় জায়গায় ফাটল ধরে গেছিলো আর সেই রকমই একটা ভাঙা ফাটলের অংশ দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়ল সেই অবশিষ্ট ব্যক্তির মুখের ওপর | বম্বিঙ্গের ফলে তার সারা শরীরে মুখ ধুল বালি লেগে সাথে সাথে রক্তাও লেগে ছিল, তবে সে রক্ত তার নিজের নয় | নিজের মায়ের দেহটাকে নিজের বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে ধুলো বালির মধ্যে বসে ছিল সেই ছোট ছেলেটা, কারণ সে জানতো যে যাই হোক না কেন তার মা তাকে সব কিছুর থেকে রক্ষা করবে । তারই হাত কতক দূরে রক্তাক্ত ছিন্ন বিছিন্ন অবস্থায় পড়েছিল আরেকটা দেহ । তার বাবার |
দুঃখে, বেদনায় ক্লান্তিতে সে নিজের চোখ দুটো আর খুলে রাখতে পারছিলো না । সে বুঝেও বুঝতে চাইছিল না যে তার বাবা মা আর কোনোদিন তার সঙ্গে কথা বলতে পারবে না, তারা এখন চিরনিদ্রায় আচ্ছাদিত ।
হঠাৎ দুর থেকে পাথর খসার আওয়াজ পেয়ে চকিতে সেই দিকে তাকাল সে আর সাথে সাথে দূর থেকে একটা ছায়ামূর্তি তারই দিকে এগিয়ে আসতে দেখল । সেই দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভয়ে নিজের মায়ের দেহটাকে নিজের বুকের সাথে আরও জোরে আঁকড়ে ধরল সে | তবে ভয় পেলেও সেই দিকেই একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল সে। ছায়ামূর্তিটা তারই দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো তবে সেটাকে দেখে তার মনে হল যেন সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে | সূর্যের শেষ কিরণ তার ওপর পড়তেই সেই ছায়ামূর্তিটাকে পরিষ্কার দেখতে পেল সে তবে দেখে সাধারণের চেয়ে অনেকটাই বেঁটে বলে মনে হল ছেলেটার | একসময় ছায়ামূর্তিটা তার একদম সামনে চলে আসতেই সে বুঝতে পারলো যে সেটা কোন বেঁটে লোক নয় আসলে একটা বাচ্চা, তারই সমবয়সী... । সে আস্তে আস্তে তার সামনে এসে পাথরের ওপর ধপ করে বসে পড়লো | ছেলেটা আস্তে আস্তে নিজের চোখ তুলে ওর মুখের দিকে তাকাতেই দেখল যে তার কপাল বেয়ে একটা সরু রক্তের ধারা নেমে আসছে...তার সেই রুপ দেখেই ছেলেটা খুব ভয় পেয়ে গেল :
"কে তুই...?" ছেলেটা চেঁচিয়ে উঠল
"আমি...? কেউ না..." হালকা অস্ফুট কণ্ঠে বলে উঠল মেয়েটি ।
"কি চাস তুই...আমায় কি করবি তুই..." আবার চেঁচিয়ে বলে উঠল ছেলেটা
"আমি তোকে কিছুই করবো না..." মেয়েটা বলে উঠল
"হ্যাঁ...আর তুই আমার কিছু করতেও পারবি না......আমার মা বাবা আমার সঙ্গেই আছে...." বলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল নিজের মায়ের দেহটাকে|
মেয়েটা করুন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন সত্যিটা তাকে বলে উঠল ঃ
"তোর...বাপ মা আর নেই রে...নেই আর...." নিজের মাথা ঘুরিয়ে দূরে পরে থাকা সেই রক্তাত দেহটার দিকে তাকাল মেয়েটা |
"না...না....না, তুই মিথ্যে বলছিস...এইত আছে, আমার কাছেই আছে...এই তো..এই তো....। ওহ মা..মা চোখ খোলো...ওহ মা চোখ খোলো তোমার..." বলতে বলতে কেঁদে ফেলল ছেলেটা । নিজের জীবনের সব থেকে বড় সত্যিটা কে এতক্ষণ ধরে অস্বীকার করার পর শেষমেশ সেটা কে মেনে নিতে বাধ্য হল সে ।
"না....নেই" বলে তার কাছ থেকে তার মায়ের দেহটা ধরে সরিয়ে দিয়ে পাশে মাটিতে রেখে দিলো সে আর তারপরই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরল |
"আমায় একা রে...রেখে কেন চ...চলে গেলে তোমরা..." বলে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল ছেলেটা ।
"চুপ...কর, আমি আছি তো নাকি..." মেয়েটা বলে উঠল
'তুই...তুই কে..?" আবার সেই একি প্রশ্ন করে উঠল ছেলেটা
"জানি না..."
"তুই কোথায় থাকিস...? তোর বারি কোথায়...? "
"জানি না..." তবে এইবার তার নিজের চোখের কোন বেয়ে অশ্রুধারা বেরিয়ে এলো ।
"তাহলে...তুই এখানে কি করছিস...? এখানে তো সবাই মারপিট করছে.....তুই এখানে থাকলে মোড়ে যাবি তো...." ছেলেটা ভয়ে বলে উঠল ।
"তুই চল না আমার সাথে....তোকে আমার সাথে নিয়ে যাবো আমি...আমার বন্ধুদের কাছে...ওখানে অনেকে..." নিজের মুখের কথাটা শেষ করবার আগেই আরেকটা বোম্ব এসে আঁচড়ে পড়লো সেই ফ্লাইওভারটার ওপরে আর সাথে সাথে ওপর থেকে কংক্রিটের একটা বিরাট চাঙড় ভেঙে পড়ল । তবে ভাগ্যক্রমে, তাদের কিছু হল না...
"চল এখন থেকে এখুনি, এখন থাকলে আমরা কেউই আর বাঁচবো না....চল " বলে ছেলেটার হাতটা চেপে ধরে দৌড়োতে আরম্ভ করল সেই ছোট মেয়েটা | নিজের মা বাবার দিকে শেষবারের জন্য একবার তাকাতেই ছেলেটার চোখে জল চলে এল তবে এখন তারও নিজের প্রাণের ভয় হতে লাগল আর তাই সেও মেয়েটার সঙ্গে দৌড়তে লাগল । তাদের প্রাণের ভয় এতটাই ছিল যে খালি পায়ে দৌড়োতেও ওদের কোনও রকম কষ্টই হল না |
"কোথায়...কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে...? " দৌড়োতে দৌড়োতে ছেলেটা প্রশ্ন করে উঠল |
"ডাক্তার কাকুর কাছে...." বলে আরও জোরে ওর হাতটা চেপে ধরে দৌড়োতে লাগল মেয়েটা | কিছুদূর ঐরকম যেতে না যেতেই সামনে কয়েকটা লোক নজর পড়ল ওদের আর সেটা পড়তেই ভাঙা একটা দেওয়ালের পেছনে লুকিয়ে পড়লো মেয়েটা । তারপর নিজের বন্ধুর হাতটা টেনে ধরে নিচে বসিয়ে দিলো | সেই লোকগুলোকে সে আগে দেখেছে আর সে জানতো যে তারা ভালো নয়....সেই লোকগুলোই মেরে ছিল তার বন্ধুদের |
দেওয়ালের পেছনে লুকিয়ে থাকতে থাকতে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসতে লাগল সেই ছেলেটার মনের মধ্যে । সাথে সাথে নিজের মুখ খুলে কথা বলতে যেতেই ওকে বাধা দিয়ে ওর মুখের ওপর হাত দিয়ে চেপে ধরল মেয়েটা | তারপর নিজের ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল তুলে ধরে ওকে কথা বলতে বারুন করল আর ঠিক তক্ষণই সেই ভাঙা দেওয়ালের ওই পার থেকে তাদের কানে কিছু কথা ভেসে এলো :
"মেজর জেনারেল স্যার, আই....আই এম রিয়েলই সরি টু টেল ইউ দিস বাট, আমাদের ডি কোম্পানির অনেক জওয়ানই আইদাড় কিল্ড ইন একশান বা সিভিআরলি ইনজিওর্ড স্যার......তারা এরকম ভাবে আর কন্টিনিউ করতে পারবে না স্যার....আই এডভাইস ইউ...." দেওয়ালের ওই পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল ।
"ফাক ইওর এডভাইস ক্যাপ্টেন....যারা গেছে, গেছে...ভালো হয়েছে, তবে যারা এখনো বেঁচে আছে তাদের কে লড়াই চালিয়ে যেতে বলবে এন্ড দ্যাটস মাই অর্ডার আর...যে আমার এই অর্ডার মানবে না....শুট দেম...." চেঁচিয়ে বলে উঠলেন মেজর জেনারেল ।
"কিন্তু...কিন্তু মেজর..স্যার...ওরা" কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না সেই ব্যক্তিটি
"নো মোর ওয়ার্ডস, ক্যাপ্টেন....নো মোর ওয়ার্ডস, নাও...হোয়াট এবাউট দা ইনফরমেশন আই ওয়ান্টেড....রেজিস্টেন্সের কি অবস্থা....?" গম্ভির গলায় বলে উঠলেন মেজর জেনারেল
"আমরা...আমরা, এখনও ওদের এইচ কিউয়ের ঠিকানা বের করতে পারিনি...স্যার....কিন্তু" ক্যাপ্টেন আপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলেন
"আর সেটা তুমি এত বড়ো মুখ করে আমাকে বলতে এসেছ.. ব্লাডি ফাকিং ইডিয়ট!!! " মেজর চেঁচিয়ে উঠে নিজের টেবিলে রাখা কাঁচের পাপার ওয়েটটা ছুঁড়ে দেওয়ালে আছাড় মারলেন আর সাথে সাথে সেটা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল ।
"মেজর জেনারেল স্যার....প্লিজ....স্যার...আপনি..আপনি শান্ত হন । আপনি কোনও চিন্তা করবেন না, আমরা..আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের ঠিকানা জোগাড় করে ফেলবো...আই গিভ ইউ মাই ওয়ার্ড মেজর, কিন্তু...কিন্তু স্যার তারপর কি করবো আমরা? মানে ওদের কে ধরে আমাদের ক্যাম্পে প্রিসনার্স বানাবো, তাইতো...?" ভয়ে অনিশ্চিত কণ্ঠে উঠলেন সেই ক্যাপ্টেন
"নো ক্যাপ্টেন....ওদের ঠিকানা জানতে পারলেই আমরা ওদের এইচ কিউয়ে রেড করবো, অন ফুট.... তারপর ওদের আর ওদের শরণাপন্ন প্রত্যেকটা পুরুষ, মহিলা...বাচ্চাকে শেষ করে ফেলবো আমরা.." হিংস্র ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলে উঠলেন মেজর জেনারেল
"কি...?" অবাক বিস্ময়ে মেজর জেনারেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ক্যাপ্টেন, "কিন্তু স্যার, দ্যাটস...দ্যাটস নট ফেয়ার, আমি...আমরা.."
"ফাক অফ ক্যাপ্টেন...তোমায় যেটুকু তোমাকে কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা তুমি করো...নিজের পেগ্রেডের বাইরে নাক গলাতে এসো না...আই উইল ফাকিং ডেস্ট্রয় ইউ.....নাও ফাক অফ !!!" বলে ক্যাপ্টেনের উনিফরমের কলার ধরে টানতে টানতে টেনে হিঁচড়ে তাকে ঘরের বাইরে বের করে দিলেন উনি, তারপর সজোরে নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন ।
মেয়েটা বয়সে অনেকটাই ছোট হলেও মেজর আর ক্যাপ্টেনের কথাপকথন শুনে বুঝতে পারলো যে কি বিপদ তার আর তাদের বন্ধুদের সামনে ঘনিয়ে আসতে চলেছে....
"আমাদের...আমাদের...এখুনি এখান থেকে পালতে হবে....আমায় আমার বন্ধুদের বাঁচাতে হবে.....চল এক্ষুনি চল..." বলে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতেই দেখল যে তার পা দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে মাটিটা ভিজে লাল হয়ে গেছে ।
"একি!! তোর পা দিয়ে তো রক্ত বেরোচ্ছে..." বলে সাথে সাথে মাটিতে বসে পরে ছেলেটার পায়ের পাতাটা নিজের কোলের ওপর তুলে নিলো মেয়েটা | তার পাটা নিজের কোলে তুলতেই সে দেখল যে ওর পায়ের তলায় একটা বড়ো লোহার টুকরো ঢুকে রয়েছে |
"এটাকে...বার করতে হবে" ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল মেয়েটি আর সাথে সাথে সেও নিজের মাথা নাড়িয়ে নিজের সম্মতি জানাল।
"তবে এই নে...আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধর..." নিজের হাতটা তার দিকে বাড়িয়ে বলে উঠল মেয়েটা... "তবে, তোর যতই ব্যথা লাগুক না কেন একদম চেঁচাবি না...ঠিক আছে?"
ছেলেটা আবার নিজের মাথা নাড়াল, তারপর নিজের হাত বারিয়ে শক্ত করে মেয়েটার হাতটা চেপে ধরল | সব কিছু ঠিক থাক করে দেখে আস্তে আস্তে সেই লোহার টুকরোটাকে তার পায়ের ক্ষত থেকে টেনে বের করতে লাগলো মেয়েটা তবে আশ্চর্যের বিশয় হল এই যে, যতই ব্যাথা লাগুক না কেন ছেলেটার নিজের মুখ দিয়ে টু শব্দটাও বের করলো না । শুধু তার চোখের কোন বেয়ে অঝোরে জল ঝরতে লাগলো | লোহার টুকরোটা পুরোটা বেরতেই ক্ষতর জায়গাটা দিয়ে আস্তে আস্তে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো আর সেটা দেখে মেয়েটা নিজের জামা থেকে কিছুটা কাপড় ছিঁড়ে ওই ক্ষতর জায়গাটার ওপরে বেঁধে দিলো |
"তোর লাগেনি তো...?" বলে ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতেই সে নিজের হাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে নিলো, তারপর নিজের মাথা নাড়িয়ে 'না' জানাল ।
"ঠিক আছে...তাহলে...চল এবার..." বলে আস্তে আস্তে দুজনে মাটি থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই হঠাৎ ওপর দিক থেকে একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেল | সেই আওয়াজ লক্ষ্য করে সেই দিকে তাকাতেই তারা বুঝল যে সেটা তাদেরই দিকে ধেয়ে আসছে আর সাথে সাথেই ওদের পাশে সেই রকেটের মতন দেখতে জিনিসটা এসে পড়ল | সেই রকম জিনিস আগেও দেখে থাকার কারণে ভয়ে নিজের বন্ধুর হাতটা চেপে ধরে দৌড়নোর চেষ্টা করল মেয়েটা কিন্তু কিছুদূর যেতে না যেতেই সেই রকেটের মতন জিনিসটা 'দুম' করে ফেটে গেল |
"স্যার, স্যার...তাড়াতাড়ি চলুন......খুব খারাপ অবস্থা ওদের.." দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে বলে উঠল একজন আর সেটা শুনেই ঘরের ভেতরে থাকা বেক্তিতি ঘর থেকে দৌড়োতে দৌড়োতে বেরিয়ে এল । বাইরে এসে করিডোরের দিকে তাকাতেই দেখল যে ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় দুটো ছোট দেহ শোয়ানো রয়েছে | বেক্তিটি সঙ্গে সঙ্গে তাদের সামনে ঝুঁকে পরে তাদের দুজনের কব্জি ধরে তাদের নারী পরীক্ষা করতেই চমকে উঠল ঃ
"তাড়াতাড়ি!!!! ওদের ভেতরে নিয়ে এসো..তাড়াতাড়ি !!! নার্স !!! " চেঁচিয়ে উঠলেন সেই বেক্তি
ওখানে সামনা সামনি যারাই ছিল সঙ্গে সঙ্গে জরও হয়ে সবাই মিলে ধরা ধরি করে সেই বাচ্চা দুটোকে ভেতরে অপারেটিং রুমে নিয়ে গেল | তবে তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের দেখে অনেকেই আশা ছেড়ে দিলো |
"কোথায়...কোথায় পেলে ওদের...? কোথায় ছিল ওরা..? " অপারেটিং টেবিলের ওপর জিনিস পত্র গোছাতে গোছাতে জিজ্ঞেস করে উঠলেন সেই বেক্তি |
"ওই শালা বানচোদ দেড়.....সরি ডাক্তার-কাকু....ওই শালাদের ক্যাম্পের কাছে প্যাট্রোল করার সময় আমরা ওদেরকে খুঁজে পেলাম....শেলিং হওয়ার সময় ওরা ওইখানে ছিল...মানে.."
"মানে ভুল সময়ে ভুল জায়গায়..." বলে বাচ্চা গুলোর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালেন ডাক্তারটা, "হে ভগবান..আর কত নিষ্ঠুর হবে তুমি...এরা কি দোষ করেছে...এদেরকে এরকম শাস্তি দিচ্ছ কেন..." বলে প্রায় কেঁদেই ফেললেন ডাক্তার-কাকু
"ডাক্তার-কাকু আপনি..."
"মানু. ওদের অবস্থা...." নিজের কথা শেষ করতে পারলেন না ডাক্তার-কাকু
"ডাক্তার-কাকু আপনি...আপনি কিছু করে ওদের কে বাঁচান, আপনি আমাদের ভগবান...পারলে আপনিই পারবেন..." বলে ডাক্তারের পায়ে লুটিয়ে পড়ল সেই লোকটা, তারপর হাত জোর করে বলে উঠল "আমরা আর কাউকে মরতে দেখতে চাইনা স্যার...বিশেষ করে ওদের কে তো নয়ই "
"ঠিক..ঠিক আছে মানু...তুমি যখন নিজের হাল ছারনি তখন আমিও আমার প্রাণপণ চেষ্টা করবো... আই উইল গিভ মাই বেস্ট....তবে তোমরা এবার সবাই প্লেজ বাইরে যাও...নার্স এদিকে..." তার কথা শুনে সবাই তাড়াহুড়ো করে সেই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই নার্স ভেতর থেকে অপারেটিং রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিলো আর সাথে সাথে অপারেটিং রুমের সামনের বাল্বটা জলে উঠল |
দূরে কোথাও আবার একটা বোম্ব ফাটার আওয়াজ ভেসে এলো ওদের কানে কিন্তু সে সবে ওরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছিলো |
"মানু, বাচ্চা দুটোর....অবস্থা দেখে..." নীরবতা ভঙ্গ করে পাশ থেকে একজন বলে উঠল
"মেলা ফ্যাচফ্যাচ করিস না কানের কাছে....আর তুই ভুলে যাচ্ছিস যে তোর সেই অবস্থা থেকেও ডাক্তার-কাকু তোকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে এনেছিল..." বলে তার দিকে তাকাল মানু
"সে তো বটেই...আমি তো হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম...."
"আমি ছাড়ি নি....ডাক্তার-কাকু ছাড়েন নি....ওরা কেউই ছাড়ি নি......আজকেও ছাড়বে না..." বলে সেই অপারেটিং রুমের সামনে জ্বলে থাকা বাল্বের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল মানু ।
প্রতিটা মুহূর্ত যেন ওদের কাছে দিন বরাবর বলে মনে হতে লাগল | মনে হল এই বুঝি দরজা খুলে ডাক্তার-কাকু বেরিয়ে আসবেন আর বেড়িয়ে এসেই তাদের কে সেই খারাপ সংবাদটা শোনাবেন....
ঘণ্টা তিনেক পর হঠাৎ আলোটা বন্ধ হয়ে যেতেই দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলেন ডাক্তার-কাকু আর বেরিয়েই দেখলেন সবাই তার ঘরের বাইরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে | সবার মুখেই উদ্বিগ্নতার ছাপ...জিজ্ঞাসু চোখে ডাক্তার-কাকুর মুখের দিকে তাকিয়ে যেন বুঝতে চাইছে সেই ঘরের অবস্থাটাকে....
"ডাক্তার-কাকু, কি হল? ওরা....ওদের" গলা দিয়ে আর কোনও আওয়াজ বেরল না মানুর
ডাক্তার-কাকু নিজের মাথা নাড়িয়ে বললেন "দে আর স্টেবেল ", ডাক্তারের মুখের কথা শেষ হতে না হতেই সবাই আনন্দে উল্লাসে ফেটে পারলো | মানু দৌড়ে এসে ডাক্তার-কাকুকে জড়িয়ে ধরল আর তাই দেখে ওখানে থাকা সবাই ডাক্তার-কাকুকে ওপরে তুলে ধরল |
"আরে.!! আরে..বাবারে... ঠিক আছে....ঠিক আছে....খুব খুশি তোমরা...বুঝেছি...বাবা এটা ইনফামারী...আস্তে আস্তে..." কেউ তার কথা শুনেছেনা দেখে ডাক্তার-কাকু আসল ওষুধের প্রয়গ করলেন, "তবে এইবার কিন্তু আমার কোমর ভেঙে যাবে...এই রকম করলে" বলতেই আবার সবাই মিলে ডাক্তার-কাকুকে আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে আনল |
নিচে নেমে মুখে একটা স্বস্তির হাসি এনে ডাক্তার-বাবু বলে উঠলেন " ওরা..ওরা সুস্থ হয়ে উঠলে আমাকে বরঞ্চ পাঁঠার মাংস খাইও....তাতে আমি খুশি হবো বেশি....কিন্তু ওরা কে বা কোথা থেকে এসেছে সেটার কি কোনও খবর আছে তোমাদের কাছে...মানে দুটো বাচ্চা ওইরকম জায়গায়..কি করে..? "
"না ডাক্তার কাকু....আমরা যখন ওদের কে পেলাম তখন ওই রক্তাত অবস্থায় ওদেরকে দেখে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি...অবশ্য এমনি হলেও হয়তো চিনতে পারতাম না...তবে রেডার শালাকে একবার বলে দেখা যেতে পারে...মানে ওর মতন..." মানু বলে উঠল
"জানি...জানি, তোমাদের রেডারকে আমি খুব ভালো করেই জানি...তবে আশ্চর্যের বিষয় কি জানো তো মানু ; ওই বাচ্চা মেয়েটাকে আমি চিনি...."
"আপনি চেনেন...ওকে? সেটা...সেটা তো খুবই খুশির খবর...."
"সেটা খুশির খবর কিনা জানি না তবে আমি যখন সোনাগাছির যৌন পল্লীতে সজাগতা প্রোগ্রাম করাতে যেতাম তখন ও আমার কাছে দৌড়ে আসত জানাতও...আমাকে জড়িয়ে ধরে ডাকু ডাকু বলে ডাকত..." বলতে বলতে হেসে ফেললেন ডাক্তার-কাকু, "তবে সে..সব অনেকদিন আগেকার কথা...আর ওই রকম জায়গাতে থাকলে মেয়েদের যেমন অবস্থা হয়, ঠিক সেই একই অবস্থাই হয়ে ছিল ওর মায়ের..."
"ওহ! আর...আর ওই ছোট ছেলেটা...? ওকে...ওকে চেনেন না আপনি...? ওর পোশাকআশাক দেখে তো বড়ো ঘরের মনে হল...কিন্তু ওইরকম জায়গায়..." মানু বলে উঠল
"না...ওর ব্যাপারে আমি কিছু জানি না মানু, তবে কেন জানো তো ওর মুখটা......মুখটা দেখে খুবই চেনা চেনা মনে হল । কোথায় যেন দেখেছি আগে...মানে সেটা মনে হচ্ছে....কিন্তু মনে..." আর হঠাৎই সেই মুখটা মনে পড়তেই ডাক্তার-কাকুর মাথা ঘুরে গেল | সেই চাপ না সামলাতে পেরে প্রায় মাটিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় মানু এগিয়ে এসে ওনাকে ধরে ফেলল ।
তার সেই অবস্থা দেখে সবাই মিলে ধরাধরি করে বাইরের চেয়ারের ওপরে ওনাকে বসিয়ে দিলেন, তবে তাদেরকে বাধা দিয়ে ডাক্তার-কাকু তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলেন "আমি ঠিক আছি একদম...তোমরা চিন্তা করোনা... তবে তুমি, মানু ..তুমি শিগগিরি..শিগগিরি থার্ড ফ্লোরে যাও...আমি যেটা ভাবছি যদি সেটাই হয় তাহলে...তাহলে" আস্তে আস্তে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু ।
"তাহলে..তাহলে কি ডাক্তার-কাকু ? থার্ড ফ্লোরে কি আছে? কে আছে ওখানে? মানে কাকে খুঁজবো আমি ওখানে গিয়ে..কাকে কি বলবো?" মানু একটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতেই ডাক্তার-কাকু ওর হাতটা খপ করে চেপে ধরলেন |
"থার্ড ফ্লোরে...একদম শেষের ঘরে যে মহিলাটি আছে তাকে...তাকে বল..." অস্ফুট সরে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু
"কে...? মিস..চ্যাটার্জী ? উনি তো নার্স...তবে..." অন্ধকারে কিছু খুঁজে পাওয়ার আশায় মানু বলে উঠল
"হ্যাঁ...চ্যাটার্জী...দীপা, আর সম্ভবত ওই বাচ্চা ছেলেটা ওরই ভাগ্নে, রুদ্র..." সেই ঘরের দিকে ইশারা করে বললেন ডাক্তার-কাকু ।
"মানে.... মানে ওকেই খুঁজতে উনি মাঝেমধ্যে এইদিক ওইদিক বেরিয়ে যান...? কিন্তু্‌...কিন্তু তাহলেও আপনি কি করে...কি করে শিওর হলেন যে সেই..."
"আমি ওদের ফ্যামিলি ডক্টর মানু...আমার এই হাত দিয়েই ওর আর ওর দিদির নাড়ি কেটেছিলাম আমি..."
 
Last edited:
  • Like
Reactions: ranaroy
207
438
64
পর্ব ৩২
"ডাক্তার-কাকু !" একসাথে বলে উঠল দীপা আর তিস্তা, তবে দীপার কণ্ঠে একটা আশ্চর্য সূচক শোনা গেলো | একে অপরকে চিনতে পেরে সবাই একে ওপরের দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো | সেই ঘন জঙ্গলের মাঝে সূর্য সবে অস্ত গেছে আর তার ফলে বাইরের দিকটা ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিণত হয়েছে |
" দীপা...তুমি...তোমরা...তোমরা এখানে..? কিন্তু...?" নীরবতা ভেঙে প্রশ্ন করে উঠলেন ডাক্তার-কাকু |
"হেল্প...আস, ডাক্তার-কাকু , প্লিজ....." তিস্তা তার দিকে তাকিয়ে কাতর ভাবে অনুরোধ করে উঠল
"হ্যাঁ নিশ্চয়ই...নিশ্চয়ই...ভেতরে এসো...ভেতরে এসো তোমরা " বলে দরজাটা হাট করে খুলে দিলেন ডাক্তার-কাকু | কোনও দ্বিধা ছাড়াই তিস্তা ভেতরে গটগট করে হেটে ঢুকে গেলেও দীপা নিজের মনের মধ্যে দ্বিধা অনুভব করল | ভেতরে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? কিন্তু সে তো ডাক্তার-কাকুকে অনেকদিন চেনে ? তবে উনি এখানে কি করে...এই সব কথা নিজের মনে ভাবতে ভাবতে শেষমেশ দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল সে | তবে সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই আবার তাদের সেই দুর্ভেদ্য অন্ধকার ঘিরে ধরল |
"এই...তোমরা...তোমরা একটু দাড়াও...আমি লাইনটা ঠিক করে আসছি...." বলে সেই অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেলেন ডাক্তার-কাকু...
"লাইন? কি লাইন...?" দীপা ভয়ে জিজ্ঞেস করে উঠতেই সাথে সাথে ঘরের ভেতরের সব আলো জ্বলে গেলো |
বাইরে থেকে দেখে বাড়িটাকে কোনও হানাবাড়ি বলে মনে হলেও ভেতরে সেই আলো জ্বলে উঠতেই ওদের চোখ ধাঁদিয়ে গেল । বাড়ির প্রতিতা কনে কিছু না কিছু দামি জিনিস রাখাই ছিল । বাড়ির দেওয়ালে লাগান সব আসবাবপত্র আর মূর্তি থেকে একটা আভিজাত্তের আভা ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে লাগল । আস্তে আস্তে ভেতরের ঘরে ঢুকতেই দূরে একপাশে রাখা একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো দেখতে পেলো ওরা | অবাক হয়ে এইদিক ওইদিক তাকাতে ব্যস্ত হয়ে গেল ওরা, এমন সময় নিজেদের পেছনে দিক থেকে আবার তার কণ্ঠ ভেসে এলো
"এখানে....এখানে বস তোমরা, আমি জল নিয়ে আসছি" বলে তাদের কে সোফার দিকে ইশারা করলেন ডাক্তার-কাকু, তারপর পেছন দিকে ঘুরে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন |
"তুই...ডাক্তার-কাকুকে কি ভাবে চিনলি..? " তিশার দিকে তাকিয়ে তাকে প্রশ্ন করল দীপা | তিস্তার ওপর থেকে যে তার অনেকটাই বিশ্বাস চলে গেছে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারল রুদ্র , তবুও সেই বেবস অবস্থাতেই বসে তাদের মধ্যে কথোপকথন শুনতে লাগল |
"চিনলাম.." হালকা কণ্ঠে বলে উঠল তিস্তা
"কিন্তু কি করে...? কি করে তুই ডাক্তার-কাকু কে চিনলি তিস্তা..? বল আমায়...?" চেঁচিয়ে উঠল দীপা
"এই....দীপা, তুমি.....তুমি ওকে তিস্তা বলছ কেন? ওর নাম তো তিশা..." পাস থেকে আবার ডাক্তার-কাকুর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো তার তাই শুনে সবাই সেই দিকে ঘুরতেই তাকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখল | তার হাতে একটা ট্রে আর তাতে চারটে জলের গ্লাস আর কিছু হালকা খাবার দাবার | আস্তে আস্তে সেগুলো তাদের সামনের টেবিলের ওপর রেখে সফার ওপর বসে পরলেন উনি ।
"নাহ....নাহ...ডাক্তার-কাকু.... এখন ওইটাই আমার নাম..." শান্ত গলায় বলে উঠল তিস্তা
"ওহ!! আচ্ছা আচ্ছা....বুঝেছি, বুঝেছি, পাণ্ডে-জি দিয়েছিলেন নাকি এই নামটা তোকে...?" হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু
"হ্যাঁ..." আস্তে করে বলে নিজের মাথা নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল তিস্তা
"আপনি...পাণ্ডে-জিকে....চিনতেন ডাক্তার-কাকু...?" অবাক হয়ে বলে উঠল দীপা | তার কাছে যেন সব কিছুই খবরের মতন মনে হতে লাগল |
"হ্যাঁ...চিনতাম...না, মানে চিনি তো । তাকে চিনবো না আবার,তবে...তবে কোথায় তিনি ?" বলে উৎসুক দৃষ্টিতে তিস্তার দিকে তাকালেন উনি |
সেই প্রশ্নের উত্তর ওদের সবাইকার জানা থাকলেও কেউ নিজের মুখ ফুটে সেটা বলতে চাইলো না | আচমকা ঘরের ভেতরটা প্রচণ্ড রকম নিস্তব্ধ আর গুমোট হয়ে গেল |
ওইদিকে নিজের প্রশ্নের প্রাপ্য উত্তর না পেয়ে ডাক্তার-কাকু আবার প্রশ্ন করে উঠলেন " কোই হে বন্ধুগণ...এরকম চুপ করে গেলে কেন তোমরা....?"
তবে তার কথা শেষ হতে না হতেই পাস থেকে রুদ্র বলে উঠল "নেই...পাণ্ডে-জি আর নেই...উনি মারা গেছেন..."
"কি...? মানে....? কি বলছ তুমি! " হালকা অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন উনি | তিনি যে এইরকম একটা খবর শুনবেন সেটার প্রত্যাশা তিনি একদমই করেননি, সেটা তার গলার আওয়াজ শুনে পরিষ্কার বোঝা গেল |
"কিন্তু....." বলে তিস্তার দিকে তাকালেন উনি | কিছুক্ষণ ওই ভাবে নীরব থাকার পর নিজের চোখের চশমাটা খুলে নিজের পাঞ্জাবির একটা কোন দিয়ে মুছে নিলেন...
"ঠিক....কিন্তু...তুমি কে ভাই ? ওদের...ওদের দুজনকে তো আমি ভালোভাবেই চিনতে পারছি, কিন্তু...কিন্তু তোমাকে তো চিনতে পারলাম না...তুমি কে? " চশমাটা আবার নিজের চোখে লাগিয়ে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু, তারপর নিজের সাদা সাদা দুটো ভুরু কুঁচকে রুদ্রর মুখের দিকে তাকালেন |
"ওহ সরি..সরি, আমি রুদ্র...রুদ্র চ্যাটার্জী..."
সেই উত্তরটার শোনার জন্যও তিনি প্রস্তুত ছিলেন না । "তুমি, তুমি....রুদ্র???" চেঁচিয়ে উঠে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালেন রুদ্রর দিকে তারপর হঠাৎ তিস্তার দিকে ফিরলেন ডাক্তার-কাকু | তিস্তা দিকে তাকাতেই তার মুখে একটা হালকা হাসির রেখা দেখতে পেলেন উনি |
"হ্যাঁ, রুদ্র...কেন...? কি হয়েছে..?" রুদ্র পাল্টা প্রশ্ন করে উঠল
"না..কিচ্ছু হয়নি..." বলে নিজের জায়গা থেকে উঠে পড়লেন ডাক্তার-কাকু, তারপর টেবিলের ওপর থেকে সেই ট্রেটা তুলে সবার দিকে বারালেন । সারাদিনের সেই ক্লনাতির পর তিনজনেরই খুবই খিদে পেয়েছিল তাই দ্বিতিওবার অনুরধ করার আগেই গবগব করে প্লেটের ওপর থাকা খাবার এক নিশ্বাসে খেয়ে ফেলল ওরা।
ওদের খাওয়া শেষ হতেই নিজের হাতে ট্রেটা তুলে নিলেন ডাক্তার-কাকু , তারপর বলে উঠলেন , " তোমাদের অবস্থা দেখে.... খুব একটা ভালো মনে হচ্ছেনা আমার....যাও যাও...তোমরা একে একে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও...আমি ততক্ষণ রাতের খাবারের দিকটা দেখি...." বলে একটু এগোতেই আবার পেছন ফিরে তাদের দিকে তাকালেন উনি, " আররর...এখানে সব সময় পাওয়ার আর জল থাকে....তাই কোনও কিছুতে লজ্জা বোধ করো না তোমরা..."
"দাঁড়ান...দাঁড়ান ডাক্তার-কাকু আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে..." ওনাকে থামিয়ে দীপা বলে উঠল |
"যাবে ? চলো তাহলে..." বলে দুজনে একসঙ্গে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল
"আমি বাথরুমে যাচ্ছি..." বলে রুদ্রও নিজের জায়গা থেকে উঠে তিস্তাকে ওখানে একা রেখে বাথরুমের উদ্দেশে চলে গেল |
"ডাক্তার-কাকু, আপনি এখানে ? এখানে কি করে...কি করে এলেন? " রান্নাঘরের মধ্যে ঢুকতেই দীপা তাকে প্রশ্ন করে উঠল | দীপার যে আর তস সইছিল না সেটা তার মুখ দেখে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছিলেন ডাক্তার-কাকু ....
"দীপা...তুই...সবই তো জানিস মা, কি অবস্থা হয়েছিল আমাদের তখন...কত নিরীহ মানুষকে মরতে হয়েছিল সেই সময়ে..." উদাসীন কণ্ঠে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু
"জানি, জানি ডাক্তার-কাকু...কিন্তু আপনি এখানে...একাই..? অন্যরা কোথায়...? মানে মানুদা, ওসি ওরা...ওরা...ওরা কোথায়....? "
"ওরা কেউই আর বেঁচে নেই দীপা....সেইদিন...সেইদিনই, ওরা সবাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে..." দরজার পাস থেকে একটা টুল বের করে ধপ করে ওর ওপর বসে পড়লেন উনি....."আমরাও হয়ত বাঁচতাম না তবে....ইনফার্মারী..বলে আমাদেরকে নিস্তার দিয়েছিল ওরা.....কিন্তু এইচ...এইচ কিউয়ের প্রত্যেকটা মানুষকে, ওরা শেষ করে দিয়েছিল...শেষ করে দিয়েছিল দীপা...." বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন ডাক্তার-কাকু । বছরের পর বছর জমে থাকা সেই কথা গুল তার স্রিতিতে নারা দিয়ে উঠল ।
দীপা সেই দেখা দেখি ডাক্তার-কাকুর সামনে বসে তাকে জড়িয়ে ধরল " আমি...আমি আর ওই...ওই সব কিছু বরদাস্ত করতে পারিনি রে মা....তাই...তাই এইখানে...এইখানে এসে গা ঢাকা...দিয়ে ছিলাম...." কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলেন ডাক্তার কাকু ," আমি খুব ভীতু....আমি খুব স্বার্থপর..রে দীপা...."
"না...না ডাক্তার-কাকু, আপনি স্বার্থপর কোনোদিন ছিলেনও না আর হবেনও না....আর নিজেকে আপনি ভীতু কি করে বলছেন...? আপনি না থাকলে সেই হাজার হাজার প্রাণ কি করে বাঁচত...কি করে আমি...." বলতে বলতে থেমে গেল দীপা, তারপর আস্তে আস্তে মেঝে থেকে উঠে বলল "তাহলে...তাহলে তখন থেকে আপনি এখানে একই থাকেন....মানে..?"
"হ্যাঁ...রে আর যতদিন বেঁচে থাকবো এখানেই নিজের মাথা গুঁজে রাখবো, তবে..তবে আর হয়তো বেশিদিন নেই.....মনে হয় | জানিস তো এখন মা....মাঝে মাঝেই....দূর থেকে.... একটা আলোর মতন কিছু একটা দেখতে পাই আর মনে হয় যেন আমাকে সেখানে যাওয়ার জন্য কেউ ডাকছে।সেইখানেই...হয়তো একদিন টেনে নিয়ে যাবে আমায়..." শান্ত গলায় বলে উঠল ডাক্তার-কাকু
"না...না ওরকম কথা বলবেন না ডাক্তার-কাকু...এতদিন পর আমরা সবাই আমাদের আপন একজন কে পেয়েছি আর তার মধ্যে আপনি এইরকম কথা...কি করে বলছেন? এখনও অনেক, অনেকদিন বাঁচতে হবে আপনাকে...." দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠল দীপা
"আরও অনেকদিন? ঠিক...তাই...তাই হবে...." বলে নিজের চোখের জল নিজের হাত দিয়ে মুছে ফেললেন ডাক্তার-কাকু ," তবে...তোরা এখানে হঠাৎ কেন...মানে এতদিন কোথায় ছিলি তোরা মা...?"
"কলকাতায়" ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠল দীপা তারপর , "তবে....ডাক্তার-কাকু, এখানে এসে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে আজকে....না শুধু আজকেই নয় অনেকদিন ধরেই সেটা জেগেছে তবে আজকে সেটা....." তবে নিজের কথা শেষ করার আগেই ডাক্তার - কাকু বলে উঠলেন
"কি প্রশ্ন? কি প্রশ্ন দীপা মা...? নির্দ্বিধায় বলে ফেল..সেটা"
"না মানে... প্রশ্নটা তিস্তাকে নিয়ে মানে ওই তিশা...যাই হোক ওর নাম...ওকে আমি আর ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিনা ডাক্তার-কাকু...মানে ওর হাব ভাব ওর সব ডিসিসান মাকিন আমার একদমই ভালো ঠেকছে না....আমাদের থেকে ও কিছু লুকছে কাকু...." দীপা বলে উঠল
"অ্যাই এম সরি টু টেল ইয়উ দিস দেপা বাট তোর এই ধারণাটা পুরোটাই একদম ভুল" দীপার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ডাক্তার-কাকু ।
"ভুল ? ভুল কেন ? তবে আপনি ওকে কি করে চিনলেন? মানে ও পেসেন্ট ছিল নাকি আপনার? কিন্তু এই বাড়ির ব্যাপারে ও কি করে জানল...? " একটার পর একটা প্রশ্ন করে যেতে লাগল দীপা
"তাহলে...তুই শুনতে চাস...তাইতো...? ঠিক আছে...." বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ডাক্তার-কাকু তারপর, " তোরা যে সেইদিনের পর ঠিকই থাকবি সেটা আমি জানতাম আর আমিও ভাবছিলাম তোদের নিয়ে এখানে চলে আসতে....কিন্তু..কিন্তু...সেই বড়ো বোমটা ডেটোনেট হওয়ার পর আমি আর তোদের বাঁচার আসা ছেড়ে দিয়েছিলাম রে মা....যদি জানতাম যে তোরা ঠিক আছিস তাহলে নিশ্চয়ই তোদের খুঁজে বার করে আমার এই এইখানে নিয়ে আসতাম.....আর নিয়ে এসে..." বলতে বলতে থেমে গেলেন গেলেন ডাক্তার-কাকু
"নিয়ে এসে কি? কি ডাক্তার-কাকু....?" জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে উঠল দীপা
"নিয়ে এসে তার সঙ্গে তোদের দেখা করাতাম....তবে...তবে তোর সেইদিন কার কথা মনে আছে মা ? মনে আছে সেইদিন...যেদিন তোর রুদ্রকে প্রথমবারের জন্য খুঁজে পেয়েছিলি তুই...? সেইদিন....?" বলতে বলতে ডাক্তার-কাকুর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল ।
"ডাক্তার-কাকু আমি যাই ভুলে যাই না কেন...সেইদিনটার কথা আমি কোনোদিনও ভু......আপনি না থাকলে...আমার রুদ্র" বলে থেমে গেল দীপা তারপর চকিতেই আবার বলে উঠল, " কিন্তু...কিন্তু সেটার..সেটার সাথে আমার এই প্রশ্নের কি সম্পর্ক....কি সম্পর্ক ডাক্তার-কাকু" অধৈর্য হয়ে বলে উঠল দীপা | তিস্তার আসল পরিচয় আর ওর উদ্দেশ্য জানার জন্য তার মন যে কতটা আনচান করছিল সেটা ডাক্তার-কাকু বুঝতে পারলেন আর বুঝতে পেরে সোজাসুজি আসল পয়েন্ট গেলেন ।
"পুরোটাই....পুরোটাই দীপা" বলে নিজের টুল থেকে উঠে পড়লেন ডাক্তার-কাকু, তারপর আস্তে আস্তে ফিল্টারের সামনে গিয়ে একটা ডেকচিতে জল ভরলেন, তারপর দীপার দিকে ঘুরলেন, " তোর সেই মেয়েটার কথা মনে আছে....সেই মেয়েটা, যাকে আমরা রুদ্রর সাথে খুঁজে পেয়েছিলাম ...মনে আছে সেই কাটা ছেঁড়া অবস্থায় পরে থাকা সেই ছোট মেয়েটাকে.....?" দীপার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন ডাক্তার- কাকু
"হ্যাঁ...হ্যাঁ ডাক্তার-কাকু ওকে, ওকে কি করে ভুলতে পারি আমি....ওই মেয়েটাই তো রুদ্রকে সব কিছুর থেকে বাঁচিয়ে তোমাদের কাছে নিয়ে আসছিল....কিন্তু...."
"কোনও কিন্তু নয় দীপা.....ওই মেয়ে....ওই মেয়েটাই তিশা....দীপা, তোদের তিস্তা..." চেঁচিয়ে উঠলেন ডাক্তার-কাকু আর সেই কথা দীপার কানে পৌঁছতেই দীপার শরীর মন সব কিছুই একদম তোলপাড় হয়ে গেল | কি কি বললেন ডাক্তার -কাকু....আমার রুদ্রকে...তিস্তা...তিশা.....দীপার মাথা সাথে সাথে তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল আর মাথা ঘুরে প্রায় পরে যেতেই ডাক্তার-কাকু তকে ধরে নিলো | যে মেয়েটার ওপর সে সন্দেহ করছিলো সেই মেয়েটাই তার রুদ্রকে সেইদিন বাঁচিয়ে ছিল, না...শুধু সেইদিন নয়, আজকেও | রুদ্রকে যদি ও সেদিন না নিয়ে আসত তাহলে...তাহলে হয়তো সে তার রুদ্রকে কোনোদিনও ফিরে পেত না |
তবে সেই জন্যেই প্রথম দেখাতেই একবারে চিনে গেছিল রুদ্রকে....চিনে গেছিল তার সেই একদিনের বন্ধুকে । সেই সেই প্রথমদিন থেকেই সব বিপদের হাত থেকে রুদ্রকে বাঁচিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা আর সে কিনা টার ওপর সন্দেহ করছে....... এতসব চিন্তা ভাবনা নিজের মনে ফুটে উঠতেই নিজের কপালে ভীষণ যন্ত্রণা অনুভব করল দীপা...তার মনে হল এখুনি বুঝি তার কপালটা ফেটে যাবে রক্ত বেরিয়ে যাবে | টুলর ওপর বসে নিজের মাথাটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে জোরে চেঁচিয়ে উঠল |
"এ আমাকে কি বললেন ডাক্তার-কাকু...আমার...আমি" দীপার মুখ থেকে অসংলগ্ন কথাবাত্রা শুনে ডাক্তার - কাকু তার দিকে এগিয়ে এলেন
"কাম ডাউন দীপা, কাম ডাউন....এইনে...এইনে...হ্যাভ সাম ওয়াটার" বলে দীপার হাতে একটা জলের গ্লাস ধড়িয়ে দিলেন, তারপর রান্নাঘরের ওপরের ড্রয়ার থেকে একটা সাদা রঙের বাক্স বার করলেন ,"তোর এখন কত বয়স হল যেন...এক্তিরিশ...তাই না?" বলে সেই সাদা বাক্স থেকে ট্যাবলেটের একটা পাতা বার করে একটা ট্যাবলেট বের করে দীপার হাতে ধরিয়ে দিলেন " খেয়ে...নে, খেয়ে নে ওটা...মাথা ব্যথার....."
নিজের হাতে থাকা গ্লাস থেকে মুখে এক ঢোঁক জল নিয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলো দীপা | কিছুক্ষণ ওইরকম টুলের ওপর বসে থাকার পর শেষমেশ উঠে নিজের হাতের গ্লাসটা রান্নাঘরের কাউন্টারের ওপর রাখল ।
" কিন্তু...কিন্তু ডাক্তার-কাকু....তাহলে এতদিন..এতদিন ও কোথায় ছিল? মানে...মানে পাণ্ডে-জির কাছে তো ছিলই সেটা জানি....কিন্তু তার..তার আগে কোথায় ছিল ও?" ডাক্তার-কাকুর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল দীপা
"একটা খুব খারাপ জায়গায় দীপা...খুবই খারাপ জায়গায় " ডাক্তার-কাকু বলে উঠলেন
সাওয়ারের ঠাণ্ডা জলের নিচে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর সব ক্লান্তি ও গ্লানি ধুতে ধুতে রুদ্র অনুভব করল কে যেন তাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরল | রুদ্রর হাতের নিচ দিয়ে নিজের হাত দুটো ঢুকিয়ে দিয়ে রুদ্রর শরীরের সাথে নিজের শরীর চেপে ধরল তিস্তা | তার নরম শরীরের স্পর্শ পেয়ে আপনা থেকে চোখ বন্ধ হয়ে গেল রুদ্রর |
"আজকে....আবার তুম...তুমি আমাকে বাঁচালে" বলে আস্তে আস্তে তিস্তার দিকে ঘুরল রুদ্র | তিস্তার শরীরের স্পর্শ পেয়ে সেটা বুঝলেও এইবার সামনা সামনি আসতেই তিস্তাকে নিজের মতনই নগ্ন অবস্থায় দেখল রুদ্র | তিস্তার দিকে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল রুদ্র | তার মনে হতে লাগল যেন সে তিস্তাকে অনেকদিন, অনেককাল ধরে চেনে, সে খুবই আপন কেউ তার | সেই ঠাণ্ডা জলের ঝর্ণার নিচে রুদ্রর নগ্ন শরীরের উষ্ণতা নিজের শরীরে অনুভব করতেই তাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরল তিস্তা আর সেটা করতেই রুদ্র ব্যথায় কোকীয়ে উঠল |
"কি...হল? লাগল ? লাগল তোমার...? " বলে সাথে সাথে রুদ্রকে ছেড়ে দিয়ে নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ওর মুখের দিকে তাকাল তিস্তা ।
"না..না লাগেনি, লাগেনি...ওসব কিছু না...কিছু হয়নি" বলে তাকে আবার জড়িয়ে ধরতে যেতেই রুদ্রকে বাধা দিলো তিস্তা । তিস্তা ঠিকি বুঝেছিল যে রুদ্রর লেগেছে তাই আস্তে আস্তে নিজের মাথাটা নিচু করে রুদ্রর পেটের ওপর দিকটায় তাকাতেই ও থমকে দাঁড়াল | আস্তে আস্তে আরও একটু সামনে এগিয়ে আসতেই দেখল যে তার পেটের ওপর দিকে অনেকটা অংশ নিয়ে রক্ত জমে কালশিটে পরে গেছে |
"এ...এখানে...এখানে খুব ব্যথা, তাই না..? " বলে আস্তে আস্তে নিজের হাত দিয়ে সেই জখম জায়গাটার ওপর বোলাতে লাগল তিস্তা | তার স্পর্শে রুদ্রর নিজের শরীরটাকে তৃপ্তিতে ভোরে যেতে অনুভব করল আর আস্তে আস্তে সেও নিজের হাতে করে তিস্তার মুখটা নিজের মুখের সামনে তুলে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খেলো রুদ্র | আর সেই চুম্বন ছিল পৃথিবীর সব থেকে লম্বা চুম্বন, তবে তাতে না ছিল কোনও কামনা না ছিল কোনও বাসনা | শুধু ছিল ভালোবাসা আর ভালোবাসা | সেই প্রেমের মুহূর্তে, ঠাণ্ডা জলে ভিজতে ভিজতে নিজেদের শরীরের উষ্ণতা অনুভব করে একে অপরের মধ্যে সব দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলতে লাগলো ওরা | ওদের মনে হল যেন সেই পৃথিবী থেমে গেছে, শুধু জেগে রয়েছে তারা । অনেকক্ষণ ধরে সেই গভীর চুম্বন উপভোগ করার পর আস্তে আস্তে তিস্তার ঠোঁটের ওপর থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে নিলো রুদ্র, তারপর তিস্তার চোখে নিজের চোখ রেখে প্রশ্ন করে উঠল :
"তিস্তা...ওই গুণ্ডাটা তোমাকে...চিনতো? তাই না..?"
"হ্যাঁ...হ্যাঁ রুদ্র, আর আমিও ওকে চিনতাম । ওর নাম রনজু " বলতে বলতেই তিস্তার চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে যেতে লক্ষ্য করল রুদ্র |
" হম....কিন্তু তোমার...তোমার সাথে ও কিসের বোঝা পড়ার কথা বলছিল তিস্তা, কি বদলা...কি চাইছিল তোমার কাছ থেকে...? " রুদ্র প্রশ্ন করে উঠল
"তুমি...জানতে চাও...? কিন্তু আমার...." উদাসীন কণ্ঠে বলে উঠল তিস্তা
"তিস্তা...এইদিকে তাকাও..." বলে তিস্তার চিবুকে নিজের হাতে করে ওপর তুলে ধরল রুদ্রও, "তোমাকে আমি কখনোই কষ্ট দিতে চাইনা....আর এই ব্যাপারটা আমায় বলতে যদি তোমার কষ্ট লাগে...তাহলে আমার সে সব ব্যাপারে জানার কোনও ইচ্ছা নেই...." বলে আবার তিস্তাকে জড়িয়ে ধরল রুদ্র
"না...রু, আজকে..তোমাকে সব কিছুই বলবো আমি.." বলে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে সাওয়ারের নবটা ঘুরিয়ে বন্ধ করে দিলো তিস্তা, তারপর আস্তে আস্তে সেই ভেজা মেঝের ওপর বসে রুদ্রর হাত ধরে ওকেই নিচে তার বসতে বলল | প্রথমে একটু অবাক হলেও, পরোক্ষনে তিস্তার মনের কথাটা বুঝতে পেরে মেঝেতে বসে পড়লো রুদ্র | তিস্তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে হাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরল রুদ্র । তিস্তাও সেই পরম তৃপ্তি পেয়ে রুদ্রর কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দিল |
"বলও এবার...আমি প্রস্তুত....."
"রুদ্র....তুমি এখন আমায় যে অবস্থাতে দেখছ, আগে সেরকম আমি একদমই ছিলাম না | ভদ্রসমাজে আমারদের মতন মানুষের কোনও জায়গা ছিল না জানো... কারণ আমার জন্ম হয়েছিল একটা নিষিদ্ধ-পল্লীতে, নিষিদ্ধ-পল্লি নিশ্চয়ই বঝো তুমি...?" তার প্রশ্ন শুনে রুদ্র নিজের আস্তে করে নিজের মাথা নাড়াতেই তিস্তা আবার বলতে আরম্ভ করলো ।
"ছোটবেলা থেকেই...আমার মতন বাচ্চাদের একটাই পরিচয় হয় রুদ্র ; আমরা সব বেশ্যার বাচ্চা..." বলে নিজের মাথা নিচু করে নিলো তিস্তা ,"আমি আমার বাবাকে কোনোদিনও দেখিনি জানতো, তবে আমার...আমার মা আমাকে খুব ভালোবাসত...| রাতের পর রাত খেটে যা কিছু আয় করতো তাই দিয়েই আমাকে খুশিতে আনন্দে রাখার চেষ্টা করতো জানো তো...আর সেই দেখে পাশের সব কাকিমারা মাকে নিয়ে মজা করত, বলত রেন্দির বাচ্চা আবার খুশিতে থাকবে...... সেই সব বলে...সেই সব নিয়ে ঠাট্ট করলেও মা কোনোদিন তাতে কান দেয়নি....কিন্তু যখন একটু বড়ো হলাম আর বুঝতে শিখলাম তখন রোজরোজ মায়ের ওই অবস্থা দেখে আর সহ্য করতে পারতাম না আমি...রুদ্র | ছোট হলেও মনে হত যেন কি একটা...কি একটা জিনিস জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে ওরা মায়ের কাছ থেকে | এইভাবেই দিনের পর দিন রাতের পর রাত কেটে যেতে লাগলো...তবে আমাদের যা ছিল সেটা ছিল খুব অল্পই কিন্তু সেই অল্পতেই আমরা খুব খুশি ছিলাম । তবে......বেশিদিন সেই সুখ সইল না আমার কপালে রুদ্র...এমন একটা অসুখ করল মায়ের যেটা সারাবার মতন কেউই নেই এই পৃথিবীতে ছিল না, তাই...তাই মাও আমাকে ছেড়ে একদিন চলে গেল রুদ্র..." নিজের কথা শেষ করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল তিস্তা |
"তবে..তবে সেটাতে একটা ভালো জিনিসও হল জানতো...ডাক্তার-কাকুর সঙ্গে আমার আলাপ । মানে ডাক্তার-কাকু আমাকে সেই ছোট্ট বেলা থেকেই চিনতেন...মাঝেমাঝে আসতেনও আমাদের বাড়িতে, আমার জন্য ভালোমন্দ খেলনা নিয়ে আর তাই মায়ের সেই খবর শোনার পর উনি আমায় নিজের সাথে নিজের ক্লিনিকে নিয়ে এলেন । আর তারপর থেকে সেই ডাক্তার- কাকুর ক্লিনিকেই থাকতে আরম্ভ করলাম আমি....কিন্তু ওই...তোমায় বললাম না সুখ আমার কপালে বেশি দিন সয়না ...."বলে মাথা ঘুরিয়ে রুদ্রর দিকে তাকাল তিস্তা
"কেন? কি হয়েছিল তারপর ?"
"যুদ্ধ রুদ্র....সেই যুদ্ধ" বলতেই রুদ্রর চোখের সামনে সেই স্মৃতি ভেসে উঠল
"জানো তো রুদ্র ডাক্তার-কাকুর ক্লিনিকে থাকা কালীন আমার মনে হত যেন আবার সব কিছু আগের মত ঠিক ঠাক হয়ে গেছে । আমারও অনেক স্বপ্ন ছিল রুদ্র...সেই স্বপ্ন যেগুলো আর পাঁচটা সাধারণ ছেলে মেয়েদের থাকে, অনেক, অনেক কিছু করার ইচ্ছা ছিল আমার, কিন্তু....কিন্তু ওই শালার যুদ্ধটা আবার সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল আমার থেকে, সব কিছু....." বলে নিজের চোখের জল মুছল তিস্তা |
"কিন্তু ওই যুদ্ধতেই....পেলাম এমন একটা জিনিস, না...জিনিস নয়, এমন একজনকে...কিন্তু তাকে পেয়েও আবার তাকে হারিয়ে ফেললাম আমি রুদ্র......তবে নিয়তির খেলা দেখো..পরে আবার আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে পড়লো সেই বেক্তি" বলে রুদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল তিস্তা | সেই ব্যাপারে অবগত থাকার কারণে রুদ্র তার কথার কোনও কূলকিনারা করতে না পেরে নিজের ভুরু দুটোকে কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো দিয়ে বলে উঠল ঃ
"তারপর, তারপর কি হল তিস্তা...?"
"তারপর কি হল...? তারপর শুরু হল আমার জীবনের সব থেকে খারাপ সময়ের | আর সেই খারাপ সময়টা ছিল রনজু " ঠাণ্ডা গলায় বলে উঠল তিস্তা
"রনজু? রনজু মানে.....আজকে যাকে তুমি....." বলতে বলতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল রুদ্র
"হ্যাঁ...ওই শূয়রের বাচ্চাটাই..." নিজের দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠল তিস্তা ," তবে যুদ্ধ নিজের মতন শুরু হয়ে নিজের মতন শেষ হয়ে গেলেও যাদের হারাবার তাদের সব কিছুই হারিয়ে গেছিল, রুদ্র | আমিও সেই সময় ডাক্তার-কাকুকে হারিয়ে ফেললাম আর তার সাথে সাথে হারিয়ে ফেললাম আমার বাঁচার আশাটাকে | কি ভাবে যে তখন কাটিয়েছি সেইসব দিনের কথা এখনও মনে পরলে এখনও আমার বুকটা ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায় রুদ্র | কি করেই না রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম আমি...ভিক্ষে করতাম একটু কিছু খেতে পাওয়ার জন্য...যদি কেউ একটু কিছু খেতে দিতো সেখানেই থেকে যেতাম আমি....." বলে কিছুক্ষণের জন্য থামল তিস্তা, তারপর আবার বলে উঠল ;
"সেইরকমই একদিন...খাবারের লোভ দেখিয়ে আমাকে ধরে কলকাতা থেকে এখানে লরি করে পাচার করে দিলো কেউ একজন"
"এখানে...এখানে মানে...ধানবাদে...?"
"হ্যাঁ রুদ্র ধানবাদে...আর এখানে আমার স্থান হল এখন কার মহিলা পল্লীতে, তবে তুমি চিন্তাও করতে পারবেনা সেটা আমার জন্য কতটা খারাপ পরিণতি ডেকে আনল | ছোট ছিলাম তো তাই আমাদের ওপরে কেউ কোনও সন্দেহ করতো না, তাই আমাকে আর আমার বন্ধুদের দিয়ে সব রকমের জিনিস এইদিক থেকে ঐদিক হেরাফেরি করাত ওরা | সব রকমের জিনিস বলতে তুমি বুঝতেই পারছ ; ড্রাগস, মদ, টাকাপয়সা, অস্ত্রশস্ত্র...সব কিছুই। তবে কি জানো তো...মহিলা পল্লীতে থাকার কারণে আমরা মেয়েরা অনেকটাই সুরক্ষিত ছিলাম, অনেক ভালো ছিলাম কিন্তু আস্তে আস্তে আমার বয়স বাড়তেই ওদের চোখ পড়লো আমার শরীরের ওপরে পড়ল | মহিলা পল্লী হওয়ার কারণে সেখানে শুধু মেয়েরাই থাকত আর এমন কেউই ছিল না যে জরজবরদস্তি করে সেই ধান্দায় আমাদের নামাতে পারত "
"মানে..তুমি না চাইলে..."
"হ্যাঁ..আমি না চাইলে আমাকে জোর করে কেউ সেই ব্যবসায়ে নামাতে বাধ্য করতে পারতো না...কিন্তু তক্ষণই আমার জীবনে রনজু আর ওর দাদা নিলয়ের আগমন হল | আমাকে জরজবরদস্তি করতে পারবেনা জেনেও আমাকে সেই ধান্দায় নামার জন্য বাধ্য করতে চেষ্টা করতে লাগলো ওরা | রোজ রাতে সবাই শুয়ে পড়লে রনজু আর ওর দাদা এসে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে, আমার মুখে কাপড় বেঁধে...আমায়...আমায় চাবুক দিয়ে মারত রুদ্র...." বলে আস্তে করে সামনের দিকে এগিয়ে এসে রুদ্রর দিকে নিজের পিটটা ঘোরাতেই, রুদ্র দেখল যে তাতে এখনো কিছু দাগ উঁচু উঁচু হয়ে রয়েছে | নিজের হাত দিয়ে তিস্তার সেই পিঠের দাগের ওপর বোলাতে বোলাতে সেই অন্যায়ের কথা চিন্তা করে রুদ্রর রক্ত রগে ফুটতে লাগলো ।
"আর...আর বলতে হবেনা তোমাকে তিস্তা...আমি আর তোমার পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা...." রুদ্র বলে উঠল
"না রুদ্র....প্লিজ..আজকে আমাকে বলতে দাও" বলে রুদ্রর হাতটা চেপে ধরল তিস্তা, "আমায় ওরা দেহ ব্যবসায়ে নামানোর চেষ্টা করলেও সেটা কোনোদিনই করতে পারেনা ওরা | তবে রোজ রাতে রনজু আর ওর দাদার আমার জেদ ভাঙবার জন্য সেই একইভাবে আমাকে চাবুক দিয়ে মেরে যেতে লাগল...তবে ওরা চলে গেলেও আমি ঠিক করে ঘুমতে পারতাম না রুদ্র...জানো তো...তবে যদিও ঘুমিয়ে পরতাম সকালে উঠে দেখতাম যে বিছানাতে রক্ত লেগে রয়েছে । সেই ক্ষতর উপর রজ নতুন ক্ষত হয়ে সব শেষ হয়ে যেতে শুরু করেছিল রুদ্র...... |"
"কিন্তু সেইদিন...সেইদিন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছিলো " বলতেই তিস্তার চোখে সকালের সেই বিধ্বংসী আগুন জ্বলে উঠতে দেখল রুদ্র |
"তখন বর্ষা কাল...সবেমাত্র রাতের খাওয়া সেরে নিজের বিছানাতে শুয়েছি এমন সময় অনুভব করলাম কে যেন আমার গলা টিপে ধরল আর সাথে সাথে নিজের শরীরে ওপর ভারী কাউকে উঠতে অনুভব করলাম আমি | সাথে সাথে নিজের চোখ খুলতেই রনজুর দাদা নিলয়কে দেখলাম আমি...তবে..তবে সেদিককার তার রূপ যেন আগের চেও বীভৎস | আস্তে আস্তে আমার পরনের কাপড়ে হাত দিতে যেতেই বিছানায় পরে থাকা পেনটা ওর চোখ ঢুকিয়ে ওর চোখটা গেলে দিলাম | সেই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে নিলয় ছিটকে বিছানা থেকে পরে গেল আর মেঝেতে পরতেই সামনে যা পেয়েছিলাম, তাই দিয়েই মারলাম ওকে । খাটের নিচে মাছ কাটার বঁটিটা ছিল আর সেইটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে সোজা ওর বুকের ওপর বসিয়ে পেট বরাবর চালিয়ে চিরে দিয়েছিলাম আমি...." বলে থামল তিস্তা
রুদ্র অবাক হয়ে এক মন দিয়ে তিস্তার কথা শুনছিল আর মাঝে মধ্যে নিজের হাত দিয়ে ওকে আঁকড়ে ধরছিল ।
"সেখান বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দৌড়োতে দৌড়োতে কতদূর এসেছিলাম, সেটা আমি জানি না তবে ভাগ্যক্রমে বা কো ইন্সিডেন্টালি সেইদিন আবার ডাক্তার-কাকুর সঙ্গে শহরের বাজারে দেখা হল আমার...উনি আমার কাছ সব কিছু শুনে বুঝেছিলেন যে এখানে...এই বাড়িতে আমাকে রাখা ঠিক হবেনা...মানে আমার সেফটির জন্য আর ঠিক তখনই ওই অবস্থাতে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন পাণ্ডে-জি " নিজের কথা বলা শেষ করে রুদ্রর দিকে তাকাল তিস্তা ।
"তবে একটা জিনিস তিস্তা...ও কেন বলল যে ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলো মানে ও কি করে জানল যে তুমি ওইখানেই আবার ফিরবে ?"
"কারণ রুদ্র, সেলেব্রেশন হোটেলের সেই ঘরেই আমি প্রথমবার পাণ্ডে-জিকে দেখেছিলাম..."
"মানে...? কোন রুম...? ওই সেকেন্ড ফ্লোর রুম ৯....?" অবাক হয়ে প্রশ্ন করল রুদ্র
"হ্যাঁ...আর ওইখান থেকে পাণ্ডে-জি আমাকে নিতে এসেছিলেন, সবই ডাক্তার-কাকুর কথায়...তবে রনজু সে ব্যাপারে জানতে পারলেও পাণ্ডে-জির ভয়ে আমায় কিছু করতে আর সাহস পায়নি..."
"কিন্তু..কালকে যে তুমি বললে তুমি কোনোদিন সেখানে যাওনি...?"
"যাইনি তো...আমি গেছিলাম যখন সেটা সেলেব্রেশন হোটেল ছিল..এখন তো সেটা একটা গেস্ট-হাউস, তাইনা...?" বলে ফিক করে হেসে ফেলল তিস্তা, " তবে জানো তো রুদ্র...যে ঘরের দোরগোড়া থেকে আমি আমার মুক্তির পৃথিবীতে পা রেখেছিলাম সেটাকে আমি কোনোদিনও ভুলতে পারব না..."
"হমমম....তবে তুমি এখন পুরোপুরি মুক্ত, বল..?" রুদ্র নিজের মাথা ঘুরে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
"হ্যাঁ...আপাতত, আপাতত আমি মুক্ত...তোমায় এইসব কথা জানাবার জন্য" শান্ত গলায় বলে উঠল তিস্তা
'কিন্তু আমার সেটা মনে হয়না..জানো তো" বলেই তিস্তার কোমরটাকে নিজের হাতে করে জড়িয়ে ধরে তিস্তাকে নিজের কোলের ওপর তুলে নিলো রুদ্র
"এই..এই..এই. কি করছ ? " অদূরে গলায় বলে উঠল তিস্তা | নিজের জীবনের সব খারাপ, কালো মুহূর্তগুল শোনার পরেও তার ভালোবাসার মানুষ তাকে কাছে টেনে নিচ্ছে, এর থেকে বড়ো পাওয়া আর হয়তো কিছুই তিস্তার কাছে তাই সেও রুদ্রকে চেপে ধরল ।
"কি করছে এটা বুঝতে পারছনা...? আদর...আদর করছি তোমায় " বলে তিস্তার ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে আলতো করে ওর কানের লতিতে
কামড়ে ধরল রুদ্র
"আঃহ্হ্হঃ...ইস্স্স" রুদ্রর প্রেমের আদর নিজের শরীরে অনুভব করেই হালকা করে শীৎকার নিতে লাগল তিস্তা "রুদ্র...আমায় ইস্স..."
"কি..কি তিস্তা....বল মমম...বলও আমায়..." তিস্তার গালে ঠোঁটে নিজের প্রেমের চুম্বন বর্ষণ করতে করতে বলে উঠল রুদ্র...
" রুদ্র...আমি..উহ্হঃ..আমি..."
"এই তোর হল..? " বাথরুমের দরজার ওইপাশ থেকে দীপার গলার আওয়াজ আসতেই ওদের সেই অপূর্ব প্রেমের মুহূর্ত ভেঙে গেল"
"একিরে...কতক্ষণ ধরে ঢুকেছিস.....সব জল তো একাই শেষ করে দিবি...আর তিস্তা....তিস্তা কি তোকে কিছু বলে গেছে.....আমি ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না যে" চেঁচাতে চেঁচাতে বলে উঠল দীপা
"ধুর শালা...ভালো লাগেনা আমার...একদম " বলে না চাইতেও আস্তে আস্তে মেঝে থেকে উঠে রাগে গজগজ করতে লাগল রুদ্র আর তার এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে যেতে লাগল তিস্তা | অন্যথা আর সময় নষ্ট না করে বাথরুমের দরজা খুলে মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বেরিয়ে এলো রুদ্র |
"কিরে...কি করছিলি এতক্ষণ ধরে....?" দীপা প্রশ্ন করে উঠল
"হাত মারছিলাম.....তাতে কোনও অসুবিধা আছে তোমার...? " বলে মুখ টিপে হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে ওপরের তলায় চলে গেল রুদ্র | রুদ্রর কথার কিছু মাথা মুণ্ডু বুঝতে পেরে...আস্তে করে বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যেতেই এইবার তিস্তাকে বেরিয়ে আসতে দেখল দীপা , তবে নিজের মাথা লজ্জায় নিচু করে |
দীপাকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিস্তা নিজের মাথা তুলে তার দিকে তাকাতেই দীপার হাসি ভরা মুখ ওর চোখে পড়ল | আস্তে করে নিজের মুখটা তিস্তার সামনে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল :
"এই...ভেতরে কি করছিলি তোরা ? বল না "
"সত্যি কথা বলবো তোমায়..দীপা দি ?" তিস্তা সেটা জিজ্ঞেস করতেই দীপা জোরে জোরে নিজের মাথা নাড়িয়ে 'হ্যাঁ' জানালো | "গল্প করছিলাম আমরা, পুরনো দিনের গল্প..."
তবে তিস্তার মুখ থেকে সেই উত্তর শুনবে সেটা দীপা একদমই আশা করেনি তাই সাথে তার সেই হাসি হাসি মুখটা দুঃখে ভোরে উঠল | করুন দৃষ্টিতে তিস্তার দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত দিয়ে বলল ঃ
"তিস্তা...আমি তোকে কি বলে...তুই না থাকলে"
"পুরনো কথা নিয়ে চিন্তা করোনা দীপা দি...সেটাই তো তুমি বলেছিলে আমাকে, তাই না ? তাহলে তুমিও চিন্তা করোনা..."
"কিন্তু..কিন্তু তিস্তা...সেইদিন যদি আমি রুদ্রর সাথে তোকেও নিয়ে....তাহলে...তোর এই অবস্থার জন্য আমিই দাই তিস্তা.....আমিই..." তবে নিজের কথা শেষ করার আগেই তিস্তা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল
"না একদম না দীপা দি, তুমি...তুমি কেন দাই হতে যাবে বলত.....আমার এই অবস্থার জন্যে একটা মাত্র জিনিস দাই আর সেটা হল আমার ভাগ্য" বলে দীপার গালে চুমু খেলো তিস্তা, তারপর " আজকের জন্য, আমায় ক্ষমা করে দিও দীপা দি...জেনে না জেনে আজকে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি...তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও..." বলে নিজের হাত দুটো জোর করল তিস্তা
"এইবার টেনে একটা থাবড়া মারব...... চপ!!! বাচ্চা মেয়ে একটা...আবার মুখে এত বড় বড় কথা...যাহ্‌! ওপরে গিয়ে নিজের জামা কাপড় পর..." হাসি হাসি মুখ করে বলে উঠল দীপা, তারপর আবার বলে উঠল "আর একটু সাবধানে...ঠিক আছে? মানে যাই করিস না কেন আস্তে করিস কারণ এখন ডাক্তার-কাকুও আছেন আমাদের সাথে আর ওনার এই বয়সে ওইসব শুনতে পেলে..." বলে মুখ টিপে হাসল দীপা
"আইই! দীপা দি...তুমিও না...যাতা" বলে লজ্জায় নিজের মাথা নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ঘরের দিকে চলে গেল তিস্তা ।
 
  • Like
Reactions: ranaroy
207
438
64
পর্ব ৩৩
ডাক্তার-কাকুর বয়েস আর একা থাকার কারণে উনি সাধারনত তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তেন আর তার দেখাদেখিই, সেইদিন ওই তিন মূর্তিও তাঁর মতনই করল। নিজেদের খাওয়া-দাওয়ার পালা শেষ, এঁটো বাসুন-কসন ধুয়ে, ডাক্তার-কাকুকে "গুড নাইট" জানিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরে এলো ওরা। আর ফিরে আসতেই শুরু করল নিজেদের প্ল্যানের নতুন জাল বুনতে | ঘরের বিছানাটা আয়তনে অনেকটা বড় ছিল তাই ওদের তিন জনে বসতে কোন অসুবিধাই হল না। তিস্তা বালিশে হেলান দিয়ে দেয়াওলের দিকে বসল আর তারই মুখোমুখি উলটো দিকে বসল দীপা আর রুদ্র । আস্তে আস্তে সকালের অভিজানের কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে করতে হঠাৎ একটা প্রশ্ন করে বসল দীপা ঃ
"তুই..তুই ওকে মেরেই দিলই, তিস্তা..?" রুদ্রর কাঁধে হেলান দিতে দিতে বলে উঠল দীপা ।
'আমি তো তোমাদের বলেই ছিলাম দীপা দি, তোমাদের গায়ে আমি একটাও আঁচ লাগতে দেবো না..."
"না...সেই জন্য আমি তোকে কিছুই বলছি না তিস্তা আর তোর জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে সেই একি জিনিস আমিও করতাম তিস্তা, তুই আমাকে চিনিস...। এখন ওদেরকে শাস্তি দেওয়ার আর কেউ নেই...তাই যা করার আমাদের নিজেদের কেই করতে হবে..." দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠল দীপা
"হ্যাঁ জানি, জানি দীপা দি...তবে ওদের এত সাহস কি করে হল যে ও আমার রুদ্রর গায়ে হাত দিল...? " দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠল তিস্তা
"হে..হে..হে, আমার রুদ্র বলল " হাঁসতে হাঁসতে বলে উঠল রুদ্র
"তো খারাপ কি বলেছে ও? কি? তুই...তুই ওকে ভালবাসিস না..? " দীপা সেই কথা বলে উঠতেই তিস্তা সাথে সাথে উৎসুক দৃষ্টিতে রুদ্রর মুখের দিকে তাকাল, তাকিয়ে হয়তো জানতে চেষ্টা করল তার মনের কথাটাকে....
তবে দীপার সেই প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে রুদ্র বলে উঠল "ধুরর...ওসব পরে ভাবা যাবে, এখন মেন টপিকে এসো তোমরা, এর পরে কি করবে সেই ব্যাপারে ভাব তোমরা....উই রিয়েলি নিড এ ক্লু টু কনটিনিউ..."
"হমম, উই নিড আ ক্লু ফর শিওর....তবে সে সব তো তোদের দায়িত্বে ছিল তাই না...?" বলে নিজের ভুরু দুটো নাচাল দীপা ," ওই ৯ নম্বর রুম থেকে কি..কি জিনিস পেয়েছিস সেগুলো আরেকবার বল তো আমায়....লেট মি রিকালেক্ট.... "
"পেয়েছি তো মাত্র তিনটে না চারটে জিনিস..." বলে বিছানার ওপর থেকে ছোট হ্যান্ড-ব্যাগটা খুলে সেই সব জিনিস গেলো আবার বার করল রুদ্র , "এইতো...এই মালের বোতলটা আর এই কিছু কাগজ পত্র, সব ছাইপাশ লেখা এতে আররর...এই ম্যাপটা "
"ম্যাপ? হ্যাঁ...মাপটা, কিসের ম্যাপ ওটা দেখি একবার..." বলে বিছানার ওপর থেকে সেই ম্যাপটা নিজের হাতে নিয়ে এইদিক ওইদিক নাড়া ছাড়া করে দেখতে লাগলো দীপা | তবে মাপটার এতটাই খারাপ অবস্থা ছিল যে তার থেকে কিছুই বুঝতে পারল না দীপা , " আমার..আমার মনে হচ্ছে যে এই বাকি ছেড়া অংশটা পেলে জায়গাটার নামটা পরিষ্কার করে বুঝতে পারতাম আমরা..." বলে অন্যমনস্ক ভাবে ম্যাপটাকে উল্টো দিকে ঘোরাল দীপা আর ঘোরাতেই আবছা লাল রঙে লেখা কিছু দেখতে পেলো সে ।
"এইটা...এইটা কি লেখা? দেখেছিস এটা?" বলে রুদ্র আর তিস্তার সামনে সেই ম্যাপটাকে এগিয়ে আনল দীপা |
"লেখা..? লেখা নয় ওটায় স্ট্যাম্প মারা..লাল কালির স্ট্যাম্প...দাড়াও" বলে ম্যাপটাকে দীপার হাত থেকে নিয়ে নিজের চোখের সামনে তুলে ধরতেই তাতে হালকা তিনটে অক্ষর দেখতে পেল রুদ্র ঃ
"ইংলিশে..লেখা...এটা...টি, তারপর এস আর শেষে পি...টি এস পি, টি এস পি মানে....?" বলে বাকি দুজনের মুখের দিকে তাকাল রুদ্র
"ম্যাপের কোম্পানির নাম হয়তো....তবে তুই কি দেখে কিছু বুঝতে পারছিস যে এইটা কোন জায়গা হতে পারে..." দীপা বলে উঠল
"না...না, এইটার এই অবস্থা থেকে কোনও কিছু উদ্ধার করা আমার পক্ষে অসম্ভব, তবে...."
"তবে? তবে কি রুদ্র...?" তিস্তা প্রশ্ন করে উঠল
"তবে যেটুকু বঝতে পারছি, এই জায়গাটা দেখে কোনও একটা ভ্যালি বলে মনে হচ্ছে....মানে এই জায়গার ফিচারসগুলো দেখে...." রুদ্র বলে উঠলো
"তাহলে ওইখানেই নিশ্চয়ই আছে সেই সেফ হাউসটা" দীপা বলে উঠল
"কিন্তু ওই জায়গার সন্ধান পাবো কি করে এইবার ?" রুদ্র বলে উঠল
"দাড়াও....দাড়াও, আমাকে একটু ভাবতে দাও" তিস্তা বলে উঠল আর নিজের মনে কি যেন একটা চিন্তা করতে লাগল, তারপর বলে উঠল " আমাদের ওই ব্যাক-প্যাকটা কোথায় আছে...?"
"কোনটা? কালোটা..? ওই তো পাশের ঘরে, মানে আমার শোবার ঘরে আছে..." দীপার দিকে রেগে রেগে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র
" ওঃ..ওটা একবার এখানে নিয়ে আসতে পারবে প্লিজ ?" রুদ্রর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বলে উঠল তিস্তা
"হ্যাঁ, হোয়াই নট...." বলে বিছানা থেকে নেমে পাশের ঘরের দিকে চলে গেলো রুদ্র
"কেমন রেগে আছে দেখলি তো...আলাদা ঘরে শুতে বলেছি বলে? তবে তিস্তা...তোর ওই হাতের ব্যথাটা এখন কেমন আছে?" দীপা বলে উঠল
" ব্যথা..? ব্যথার আর কোন অস্তিত্ব নেই দীপা দি, একদম ঠিক হয়ে গেছে..." বলে নিজের জামাতা সরিয়ে ক্ষতর জায়গা বার করল তিস্তা , " তবে একটা কথা তোমায় না বলে পারছিনা দীপা দি, সেদিন তুমি খুবই ভালো অপারেট করেছিলে...মানে পুরো প্রফেশনালদের মতন | তুমি কি আগে প্রাকটিস করতে নাকি ..?" দীপার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল তিস্তা
"আরে না না..ঠিক প্রাকটিস না, আসলে ওই যুদ্ধের সময় সবাই কে কিছু না কিছু কাজে দরকার হয়েছিল মানে হিউম্যান রিসৌর্স এতোটাই কম ছিল যে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হয়েও ওই সময়ে আমায় এই রকম অনেক সার্জারি করতে হয়েছিল...তবে সবই ডাক্তার-কাকুর অব্জার্ভেসানে "
"ওঃ...তাহলে তুমি ডাক্তার-কাকুকে ওইখান থেকেই চিনতে? মানে ওই যুদ্ধের সময় থেকে....? " তিস্তা প্রশ্ন করে উঠল
"না..না, তারও অনেক আগে থেকে চিনি ওনাকে । উনি..উনি আমাদের ফ্যামিলি ডক্টর ছিলেন তিস্তা আর আমার বাবার খুবই ভালো বন্ধু ছিলেন " পুরনোদিনের সেই কথা বলতেই সেই পুরনোদিনের লোকজনের কথা মনে পরে গেলো দীপার আর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে |
"ওহহহঃ..." তিস্তা বলে উঠতেই সাথে সাথে রুদ্রকে ঘরে ঢুকতে দেখল ও ।
"এসে গেছি, এইতো এসে গেছি" বলে বিছানার ওপর উঠে ব্যাগ-প্যাকটা তিস্তার হাতে ধরিয়ে দিলো রুদ্র |
"কি জন্যে এটা আনতে বললি তিস্তা....?" দীপা প্রশ্ন করল
"বলছি...এর ভেতরে একটা ডাইরি ছিল বসের আর যদি আমি ভুল করে না থাকি তাহলে......" বলে ব্যাগের জিপ খুলে ভেতরের জিনিসপত্র খতিয়ে দেখতে লাগল তারপর হঠাৎ "এইতো" বলে চিৎকার করে উঠল । তারপর আস্তে আস্তে সেই ব্যাগ-প্যাকের ভেতর থেকে একটা সেলোফিনের শিটে জড়িয়ে রাখা ডাইরি মানে ওই ছোট নোটবুকের মতন একটা জিনিস বের করলো তিস্তা | জিনিসটাকে সেলোফিনের শিটে জড়ানো অবস্থাতে দেখে ওরা বুঝতেই পারলো যে জিনিসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ |
"এই দ্যাখো..এই দ্যাখো, এতে সব কোডেড নাম আর সব সংখ্যা লেখা রয়েছে কতগুলো" ডায়েরিটা খুলে তাদের দেখিয়ে বলে উঠল তিস্তা ," কিন্তু আমি কোনোদিনই এই ব্যাপারে বসকে কিছুই জিগ্যেস করিনি কখনো...তাই এগুলোর মানে আমি কিছুই জানি না... "
"ওহ! কোডেড? ওসব নিয়ে একদম চিন্তা করতে হবেনা তোকে তিস্তা, আমারদের রুদ্র কোন প্রবলেমই হবে না?" বলে রুদ্রর দিকে তাকাল দীপা " কিরে রুদ্র শুরু কর তোর খেলা...ডিকোড কর ওই লেখার মানে..."
"দাও দেখছি..." বলে তিস্তার হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে কিছুক্ষণ একমনে একদৃষ্টে সেই লেখাগুলোর ওপর তাকিয়ে থাকল রুদ্র, তারপর হঠাৎ বলে উঠল :
"ওকে, বুঝেছি...এখানে লেখা রয়েছে : পাচা, মমি, মুরো; এইগুলি সম্ভবত সবই নেমের আর স্যারনেমের ইনিশিয়ালগুলো সংক্ষিপ্ত করে লেখা আর তার পরের গুলো তাদের ফোন নম্বর"
"তুমি...তুমি কি করে বুঝলে যে সেগুলো ফোন নাম্বার, মানে ওগুলো অন্য কিছুও তো হতে পারে, মানে ধর ওই টাকা পয়সা, লেনদেনের ব্যাপারও তো হতে পারে তাই না ...?" তিস্তা বলে উঠল
"না..আমি শিওর তিস্তা....এইগুলোর দিকে একবার ভালো করে দেখো, তুমিও বুঝতে পারবে; এই কান্ট্রি কোডগুলো সামনে না লিখে শেষে লেখা রয়েছে আর প্লাসের জায়গায় মাইনাস লেখা রয়েছে দেখো " আর রুদ্রর কথা মত সেইদিকে তাকিয়ে সত্যি সেটাই দেখল তিস্তা
"আর এই নিচেরগুলো...?"
"ওহ...এইগুলো ? এই এসবিআই, এইচকেবি, পিএনবি আর এই নম্বরগুলো তো...? এইগুল হল ব্যাঙ্ক আর সেই ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর "
"বা ইন্টারনেট ব্যাংকিং আইডি আর পাসওয়ার্ডও হতে পারে, তাই না ?" পাস থেকে দীপা বলে উঠল
"হমমম...তবে আমাদের কি এই নাম্বারগুলোতে একবার কল করা উচিত? মানে যদি কিছু জানতে পাড়া যায়...." কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল রুদ্র
"ফোন করে কি বলবি ওদের ? হ্যালো...আপনি কি পাণ্ডে-জির সেফ-হাউসের ব্যাপারে কিছু জানেন?? জানলে আমাদের কে কি ওই অ্যাড্রেসটা দিতে পারবেন? এইসব বলবি ফোন করে? " দীপা বলে উঠল
"না, মানে..সেটা..."
" রু...আমাদের সম্পর্কে কেউ এখনও কিচ্ছু জানে না আর আমি সেটা সেই রকমই রাখতে চাই, ঠিক আছে ? " শক্ত গলায় বলে উঠল দীপা
"আর এইটা, এইটা দেখো, এইটা কি? ল্যাল লিখে তার পর দুটো ফোন নম্বর লেখা রয়েছে এন ২৩৬৮ -৫৫০৪ আর ৮৬৭৩০-৫০৮০০ " বলে সেই ডায়েরিটা আবার ওদের সামনে এগিয়ে অন্য তিস্তা আর সত্যি করেই তারা দেখল যে সেই পৃষ্ঠাটাতে শুধু সেই একটামাত্র জিনিসটাই লেখা আছে |
"লালু ? লালুটা আবার কে? তুই চিনিস কাউকে সেই নামের তিস্তা..? " দীপা বলে উঠল , " আর এইটা তো দেখে কলকাতার ল্যান্ডলাইনের নম্বর বলে মনে হচ্ছে , তবে সে সব তো বহুযুগ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে । তাহলে এখানে এটা লিখে রেখেছেন কেন পাণ্ডে-জি ?"
আর দীপার কথা শেষ হতে না হতেই রুদ্রর সেই জিনিসটা বুঝতে পেরে উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল সে "আই!!! আই!!! তোমরা..তোমরা বুঝতে পারছ না ওটা কি.....? ল্যাল মানে কি হতে পারে বুঝতে পারছনা?? একবার একবার ভাব? ভাব??"
"ল্যাল তারপর নম্বর..মমম...নাহঃ ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে " বলে উঠল তিস্তা
"আমারও এই ব্যাপারে কোনও ধারণাই নেই রু " দীপা বলে উঠল
"ধারণা আছে...কিন্তু ধারণটাকে তোমরা মেটেরিয়ালাইজ করতে পারছ না। এই তো ম্যাপটা দ্যাখো আবার" বলে সাথে সাথে সেই ছেঁড়া ফাটা ম্যাপটা টেনে বের ওদের সামনে তুলে ধরল রুদ্র ," বুঝতে পারছ ?"
"নাহ!!" দুজনে মিলিত সূরে বলে উঠল
"আরে...এখনও বুঝতে পারছনা ?"
"এইবার টেনে একটা থাবড়া মারবো রুদ্র বুঝলি? নিজে বুঝতে পেরেছিস যখন তখন আমাদের কে সেটা বলতে কি হয়েছে...?" দীপা কপট রেগ দেখিয়ে বলে উঠল
"ঠিক আছে....তবে এইটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ এবার যে এটা কোনও নরমাল ম্যাপ নয়, এটা একটা টোপোগ্রাফিক্যাল শিটের টুকরো....আর এই লাইনগুল"
"আইইই ! রুদ্র...আমি মনে হয়....কিছুটা বুঝতে পেরেছি এবার" পাস থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠল তিস্তা
"আরেহ!! তিস্তা ডার্লিং..." বলে তিস্তাকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চকাস করে একটা চুমু খেলো রুদ্র , " তবে এবার বোঝাও....তুমিই বোঝাও এবার দীপাকে"
"ঠিক আছে." বলে রুদ্রর হাত থেকে ম্যাপটা নিয়ে দীপার পাসে ঘেঁষে বসল তিস্তা, তারপর বলে উঠল "দীপা দি, এই ম্যাপের মধ্যে আঁকা এই লাইনগুলোকে দেখতে পাচ্ছও..? এই যেমন এই ১০ ডিগ্রী ১৫ ডিগ্রী, ২০, ২৫ ডিগ্রী" দীপাকে ম্যাপটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল তিস্তা
"হ্যাঁ..পাচ্ছি..."
'এগুলোকে বলে ল্যাটিটিউড...আর এই ওপরের থেকে যেগুল নেমেছে এইগুলো...এইখনে একটাই রয়েছে যেটা এটাকে বলে লংগিটিউড..." তিস্তা বলে উঠল
"হ্যাঁ অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ, জানি তো এসব । ওহ আচ্ছা এইগুলকেই তোরা ল্যাটিটিউড আর লংগিটিউড বলছিস , বুঝলাম। কিন্তু এবার, এবার কি করবো?" দীপা আবার প্রশ্ন করে উঠল
"এইবার ওই দুটোকে ছোট করে এক করে দাও.." তিস্তা বলে উঠতেই দীপা নিজের ভুরু দুটো কুঁচকল
"ছোট করে... এক করে দেবো মানে.....আইইই!" সাথে সাথে দীপাও চেঁচিয়ে উঠল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে , "তোরা..তোরা কি বলতে চাইছিস? এই..এই ল্যাল...ল্যাল কথার অর্থ ল্যাটিটিউড আর লংগিটিউড? ওটা কোনও ব্যক্তির নাম নয়??"
"হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ তুমি দীপা আর এই নম্বরগুলো হল সেই জায়গার কো-অর্ডিনেটস" বলে সেই নাম্বারগুলর নিচে আঙুল দিয়ে দেখাল রুদ্রও, তারপর আবার বলে উঠল ," এই নম্বরগুলোর দিকে একবার দ্যাখো, আমার মনে হচ্ছে এটা সম্ভবত ঝাড়খণ্ড "
"আর খুব সম্ভবত কোনও জলাশয়ের কাছে..." পাস থেকে বলে উঠল তিস্তা
"মানে...?" তিস্তার সেই কথা শুনে এক সাথে বলে উঠল দীপা আর রুদ্র
"এই ম্যাপটা রুদ্র....এই ম্যাপটার এই ওপরের দিকটা দেখো, কেমন নীল রং বোঝা যাচ্ছে এখনো..." বলে তাদের দিকে আবার সেই ম্যাপটা তুলে ধরল তিস্তা | রুদ্র দেখল যে ম্যাপের ঠিক ওপরের দিকে একটু খানি নীল রঙের অংশে দেখা যাচ্ছিল...
"তাহলে নিশ্চয়ই কোনও লেক বা নদীর কাছাকাছি..." দীপা বলে উঠল
"কিন্তু সেরকম জায়গা এখানে অনেক আছে দীপা-দি, তাহলে..." তিস্তা বলে উঠল
"তাহলে আমার কি মনে হয় জানত.....?" রুদ্র বলে উঠল "ওটা একটা ড্যাম..."
"ড্যাম...? কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে ওটা ড্যাম...?" তিস্তা প্রশ্ন করে উঠল
"পাসে ঘাঁটিটা আছে বলে...মনে হল আমার..." রুদ্র বলে উঠল
" তবে এখানে তো দুটোই সব থেকে নাম করা ড্যাম আছে ...একটা পাঞ্চেত আর আরেকটা মাইথন...তাহলে কোনটা...?" দীপা সেই প্রশ্ন করতেই সাথে সাথে দুজন নিজেদের নিজেদের মত তুলে ধরল ;
"মাইথন" তিস্তা বলে উঠল
"পাঞ্চেত" রুদ্র বলল
"পাঞ্চেত...? তুমি সিওর...?" তিস্তা প্রশ্ন করল
"নট কমপ্লিটলি....তবে আমি ৭৫% শিওর, ওই কোঅর্ডিনেটস গুলো দেখে আমার সেটাই মনে হচ্ছে" রুদ্র বলে উঠলো
"কিন্তু বাকি ২৫% শিওর নয় কেন তুমি...?"
"কারণ দুটো জায়গার ডিস্টেন্সে কাছাকাছি....তাই একই লংগিটিউড হলেও ওদের ল্যাটিটিউড আলাদা হবে...দ্যাটস মাই রিমেনিং ২৫% তিস্তা...." বলেই রুদ্রর মুখে একটা কনফিডেন্ট হাসি ছড়িয়ে পড়ল, তারপর আবার বলে উঠল , "তবে একটা জিনিস আমাদের সবাই কে মানতেই হবে, যে পাণ্ডে-জিও খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন"
"হ্যাঁ..সে আর বলতে" পাস থেকে দীপা বলে উঠল ,"তবে এইবার ওই এক্স্যাক্ট জায়গাটা খুঁজে বের করে নেওয়া যেতে পারে..তাইনা? "
"হ্যাঁ...কিন্তু এখানে তো কোনও ম্যাপই নেই ...." তিস্তা বলে উঠল
"আর থাকলেও সেটা দিয়ে আমাদের কাজ হবে না তিস্তা, তবে ইন্টারনেট থাকলে আমাদের সব কাজই মিটে যাবে একদম... " রুদ্র বলে উঠল
"মানে? কি ভাবে ?"
"একদম সহজ ব্যাপার,উইকিমাপিয়া অ্যাক্সেস খুলে ওর ইউ আর এলের পর ওই ডেইরিতে লেখা নম্বর মানে ল্যাটিটিউড আর লংগিটিউডের কো-অর্ডিনেটসটা পুট করে সার্চ করলেই এক্স্যাক্ট লোকেশনটা দেখিয়ে দেবে আমাদের আর ওই ডায়েরিতে দ্যাখো, একটা নাম্বারের আগে এন লেখা রয়েছে । ওইটার মানে নর্থ আর তারমানে তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে আরেকটা ইস্ট হবে...তাই নেট থাকলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে " রুদ্র বলে উঠল
"সে তো বুঝলাম কিন্তু এখানে তো নেটও নেই"
"তাহলে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের...শহরের দিকে যেতে হবে তাহলে একবার..." দীপা বলে উঠল
"কবে যাবে...দীপা দি ? " প্রশ্ন করল তিস্তা
"কালকে...কালকে যাবো আমরা, তবে তুই..তুই এইখানেই থাকবি তিস্তা, ডাক্তার-কাকুর সেফটির জন্য.." দীপা বলে উঠল
"না..না আমিও যাবো...ডাক্তার-কাকু এখানে সব থেকে বেশি সেফ আছেন...কিন্তু. তোমরা একা কি করে, না না আমাকে এখানে একা ছেড়ে তোমাদের কোথাও যেতে দেবো না আমি......." জোর গলায় বলে উঠল তিস্তা ।
"আরে বাবা মেয়ের জেদ দেখেছ? আমরা তো যাবো, কাজটা করবো, কাজটা মিটবে আমরা চলে আসবো..." দীপা বলে উঠল
"আর এখানে কেউ আমাদের কে চেনে না তিস্তা..তবে তোমাকে চিনলেও চিনতে পারে..তাই...আমরাই করে আসি কাজটা...?" রুদ্রও দীপার তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠল
'আর যদি...যদি না আসো, যদি আবার সেই হারিয়ে যাও তোমরা...আমার কাছ থেকে..?" তিস্তার চোখ দুটো ছলছল করতে দেখল দীপা
"না রে তিস্তা, সেটা..সেটা আর কোনোদিনও হবে না..." বলে তিস্তাকে নিজের বুকে চেপে ধরল দীপা কারণ তার মনের অবস্থাটা কেউ বুঝুক না বুঝুক সে ঠিকি বুঝতে পারল ।
 
  • Like
Reactions: ranaroy

ranaroy

New Member
20
16
3
বড় ভালো চলছে, গল্পের বিল্ড আপ ভালো। শুধু সেক্স স্টোরি না। আসুক আরো
 
  • Like
Reactions: Anuradha Sinha Roy
207
438
64
পর্ব ৩৪

ভোরের প্রথম আলো ফুটে সেই জঙ্গল বাড়ির উপর পড়তেই দীপার ঘুমটা ভেঙে গেলো | বিছানাতে ওপর আস্তে আস্তে উঠে বসতেই পাশে শুয়ে থাকা তিস্তার ওপর চোখ পড়ল দীপর ; তিস্তা তখনও নিদ্রামগ্ন হয়ে আঘরে ঘুমচ্ছে । তাই দেখে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল দীপা, তারপর সামনের জানালর পাল্লা দুটো খুলে দিলো। জানালার পাল্লা খুলতেই ঠাণ্ডা শীতল বাতাস এসে ওর শরীর স্পর্শ করে গেল । সূর্যের সেই নরম কিরনে ভাসতে ভাসতে কিছুটা দূরে একটা ছোট্ট ডোবার মতন দেখতে পেলো দীপা |
রাতের অন্ধকারের মধ্যে সেটা কাল তাদের চোখে না পরলেও আজকে সেটা স্পষ্ট দেখতে পেল দীপা । সেই দিকে আর একটু মনোযোগ দিয়ে তাকাতেই খেয়াল করল যে সেটা কোনও ডোবা নয় আসলে একটা ছোট পাহাড়ি নদীর ভাগ । সেটাকে দেখে মনে হল যেন সে নিজের রাস্তা হারিয়ে এইদিকে ভুল করে ঢুকে পরেছে। তবে তার চেও যে জিনিসটা দেখে দীপা বেশী অবাক হল সেটা ছিল সেই নদীরই পারে দাঁড়িয়ে থাকা একপাল হরিণ | হরিণগুলো শান্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে খেলা করছিল আবার কেউ কেউ সেই নদীর জল পান করে নিজেদের পিপাসা মেটাচ্ছিল । তাদেরকে দেখে দীপার মনে হতে লাগল যেন তারা ভুলেই গেছে যে মানবজাতি এই জায়গাতে এখনও তাদেরই মতন বিরাজমান | দীপা যে কতদিন পর ওই রকম একটা সুন্দর স্নিগ্ধ দৃশ্য দেখল সেটা সে নিজেও মনে করতে পারল না | কিছুক্ষণ সেই দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর, জানালার সামনের পরদাগুল টেনে দিলো দীপা । তারপর পেছনে ঘুরে ঘড়ির দিকে তাকাল সে । ঘড়িতে সবে সাড়ে ছটা দেখে আবার বিছানার ওপরে গিয়ে বসল দীপা ।
"আর শুধু একটামাত্র ধাপ...জাস্ট ওয়ান মোর, ব্যাস...ব্যাস তারপরেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাব । অনেক কষ্ট সহ্য করেছি আমরা, অনেক...তবে....তবে আর নয়, এইবার পালা আমাদের পরিত্রাণের, এইবার পালা আমাদের জেতার" নিজের মনকে শক্ত করে বলে উঠল দীপা
খেয়ে দিয়ে বেরোতে বেরোতে আরও দুঘণ্টা লাগলো ওদের | তবে বেরোবার আগে তিস্তা নিজের একটা বন্দুক রুদ্রর কাছে দিলো, যদি কখনও কোন দরকার লাগে |
এমনি তেও ওরা শহর থেকে অনেকটাই দূরে ছিল আর ডাক্তার-কাকুর আন্দাজে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে, তাই আর বেশী দেড়ি না করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ল ওরা শহরের উদ্দেশে । সেই একই ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে ক্রিতিম রাস্তা বানিয়ে আস্তে আস্তে শহরের উদ্দেশে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা | জঙ্গল পেরিয়ে একটু খোলা মেলা জায়গা দিয়ে যেতেই গাড়ির জানালা দিয়ে হু হু করে ঠাণ্ডা হওয়া ভেতরে ঢুকতে আরম্ভ করল | জানালার একটাও কাঁচ অক্ষত না থাকার কারণে দীপা নিজের সাথে আনা চাদরটাকে নিজের আর রুদ্রর গায়ে চাপা দিয়ে দিলো । তারপর রুদ্রর দিকে আরও কিছুটা ঘেঁসে বসল শরীরে উষ্ণতাটাকে মিলিত করবার জন্য |
মুখ্য শহরে পৌঁছতে ওদের অনেকটাই সময় লেগে গেল | তবে আগে যেমন রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হাজার গণ্ডা ইন্টারনেট কাফে চোখে পড়ত সেরকম একটাও ওদের চোখে পড়ল না আর | সেইরকম আরও কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটা ফাঁকা জায়গা দেখে রুদ্রকে গাড়িটা দাঁড় করাতে বলল দীপা ;
"একটাও চোখে পড়ল নাকি...? " রুদ্র প্রশ্ন করে উঠল
"হমম...সেই জন্যেই তোকে গাড়িটা থামাতে বললাম, চল বেশী দূর না এখান থেকে । গাড়িটা এখানেই থাক, হেটে চলে যেতে কোনও অসুবিধা হবে না..." বলে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল দীপা | গাড়িটাকে আরেকটু ভালো করে পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল রুদ্র তারপর দীপার সঙ্গে হাটতে আরম্ভ করল | কিছুদূর সেই রকম যেতেই একটা সাইবার কাফের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল ওদের |
"এইখানে..?" সেইদিকে ইশারা করে প্রশ্ন করল রুদ্র
"হ্যাঁ..."
"ওহ ভায়া...প্রাইভেট কিউবিকল লাগবে না আপনাদের ?" কাফের মালিকটা মুখ বেঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করল ।
"প্রাইভেট...? মানে...? প্রাইভেট আর নরমালের মধ্যে কি ডিফারেন্স ?" অবোধ বালকের মতন সরল ভাবে প্রশ্ন করল রুদ্র ।
"আরে ভায়া!! প্রাইভেট মানে বুঝতে পারছ না...? আরে ওই কাপেলদের জন্য গো...." বলে একটা বিচ্ছিরি রকমের হাসি হাসল লোকটা,"মানে ওই...ওই পার্সোনাল কাজের জায়গা গো...আরে ই...ইয়ে করারও জায়গায় আছে, তার ওপর বললে আমরা ভিতরেও ডিঙ্কস সার্ভ করি..."
"ডিঙ্কস...?"
"আরে ডিঙ্কস গো ভায়া, ডিঙ্কস...মদ, রাম, হুইস্কি আর এই সব কিছুই শুধু মাত্তর তিনশো টাকা পতি ঘণ্টায় " লোকটা বলে উঠল
"না না...আমাদের ওইসব কিছু লাগবে না, আমারদের এইগুলোতেই কাজ হয়ে যাবে..." বলে সেমি প্রাইভেট বুথের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল দীপা। এমনিই সেই জায়গার অবস্থা দেখে ওদের সব ভক্তি উঠে যাচ্ছিল তার ওপর আবার লোকটা বলে কিনা প্রাইভেট ঘর?
"আরে ভায়া, মাত্তর তো তিনশো টাকা, আর এখানে তো তুমি আর রোজরোজ আসবে না, তাই না? " বলে আবার সেই বিস্রি ভাবে হাসল লোকটা
" না...না দাদা, সেমি প্রাইভেটেই আমাদের কাজ হয়ে যাবে..." রুদ্র বলে উঠল
" আরে ভায়া...নাও তোমার জন্য আমি দুশো টাকায় দিয়ে দেবো, কি খুশি তো...? চলবে তো এবার ? " লোকটা বলে উঠল
"না..না আমাদের তেমন কিছু কাজ নেই, আমার ওই সেমি প্রাইভেটেই হয়ে যাবে..' জোর দিয়ে বলে উঠল রুদ্র
"হয়ে যাবে? ওহ! আচ্ছা তাহলে তাই হোক...নো প্রব্লেম , তবে এটা আরও সস্তা ভায়া, মাত্তর তিরিশ টাকা পতি ঘণ্টা..."
"হ্যাঁ...এইটাই ঠিক আছে..." দীপা বলে উঠল
"আচ্ছা...তাহলে ওই...ওই শেষের মেশিনে গিয়ে বসুন আপনারা " বলে কোনার দিকে একটা মেশিনের দিকে ইশারা করল লোকটা | জায়গাটা ঠিক মত বুঝে নিয়ে আস্তে আস্তে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে মেশিনের সামনে বসল দীপা |
"তবে ভায়া, ইস..পিডটা কিন্তু একটু সোলো আছে... মানে ওই বুঝতেই পারছ এই অবস্থায় ঠিক করে নেটওয়ার্ড ধরে না....."
"নেটওয়ার্ক..?" রুদ্র বলে উঠল
"হ্যাঁ, ওই..ওই একই হল, বোঝাতে পারলেই তো হল, তাই না? তাই বলছি একটু..একটু ধৈর্য ধরে করবে যা করার, রেগে টেগে ভেঙে দিয়ো না আবার...পরশুদিন যা হল" চিন্তিত হয়ে লোকটা বলে উঠল
" না..না, ওসব নিয়ে কোনও চিন্তা করবেন না.." বলে দীপার পাশে গিয়ে বসল রুদ্র |
তবে গিয়ে যা দেখল তাতে ওর যেটুকু ভক্তি ছিল সেটাও উবে গেল | কম্পিউটারের অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে কম্পিউটারের মনিটরটায় ব্ল্যাক টেপ দিয়ে কোনও ভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে আর তার থেকেও খারাপ অবস্থা ছিল ইন্টারনেটের | প্রথমত একটা ব্রাউজার খুলে কোনও মতে সেইটাতে উইকিমাপিয়া টাইপ করে এন্টার মেরে পাঁচ মিনিট ধরে বসে রইলো ওরা | কিছুক্ষণ পর সাইটটা খুলতেই উইকিমাপিয়াতে ওই ডায়েরির কোঅর্ডিনেটসগুলো টাইপ করে এন্টার মারলো রুদ্র |
"কিরে? এত সময় লাগছে যে ? এখানে কাজ হবে তো নাকি?" অত সময় লাগতে দেখে দীপা প্রশ্ন করে উঠল ।
"হমম হবে...তবে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে..." কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলে উঠল রুদ্র আর তার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই ম্যাপটা ফুটে উঠল স্ক্রিনে|
"দেখেছ... তোমাদের বলেছিলাম ওটা পাঞ্চেত" স্ক্রীনে ফুটে ওঠা ম্যাপের দিকে তাকিয়ে একটা বিজয়িদের মতন হাসি হেসে বলে উঠল রুদ্র
"হমম...পাঞ্চেত, তবে এইবার একটু বড় কর জায়গাটা..."
দীপার কথা সোনা মাত্রই মাউসে হুইলটা স্ক্রল করে পুরো ম্যাপটা লোড হতে দিলো রুদ্র | ঠিক ১০ মিনিট লাগল পুরো ম্যাপটা লোড হতে । সেটা পুরো লোড হওয়ার পরেই জায়গাটা স্পষ্ট দেখতে পেল ওরা ।
"শালা! কি জায়গা !" ফিসফিস করে বলে উঠল রুদ্র |
সেই জায়গাটা দেখে যার কারুর মুখ দিয়ে সত্যিই শালা বেরোনোর কথা | পাঞ্চেত ড্যামের অবশিষ্ট অংশের থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে, লেকের দক্ষিণ দিকে একটা ছোট জায়গার পিনটা দেখা যাচ্ছিল | জায়গাটার চারিপাশে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার বিস্ত্রিত ঘন বন জঙ্গল আর তারই সামনে দিকে সেই লেকটা | তবে সেই ম্যাপ দেখে তার থেকে বেশি আর কিছু বুঝতে পারলো না ওরা |
"ওখানে একটা লেগুণ মতন রয়েছে, দেখ "বলে একটা ছোট জলাশয়ের দিকে ইশারা করল দীপা ।
"হ্যাঁ, কিন্তু সেটা থাকলেও ম্যাপের স্কেল অনুযায়ী, জায়গাটা ঠিক করে পিন পয়েন্ট করতে পারছিনা আমি...মানে এই উইকিমাপিয়ার সার্ভারে ওই জায়গাটার কোনও রেকর্ডই শো করছে না..." রুদ্র বলে উঠল
"আর সেটা না করারই কথা, তাই না ?" দীপা বলে উঠল " ইসসস, তুই ওই ফোনটা নিয়ে আনলে পারতিস আজকে খুব কাজে দিতো রে..."
"ফোনটা? ওটা যে আনিনি সেটা তোমাকে কে বলল ?"
" মানে? এনেছিস তুই?" বলতে বলতেই রুদ্র নিজের পকেট থেকে সেই ব্যাগ-প্যাক থেকে পাওয়া ফোনটা বার করল
"বাহ্ ! এই না হলে আমার রু, তুই সত্যি আমারি চেলা" বলে ফিক করে হেসে দিল দীপা ," তবে এইবার আর দেড়ি না করি এই..এই ম্যাপটার কয়েকটা ছবি তুলে নে ওতে.....বাড়ি ফিরে ডিসকাস করা যাবে..."
"না...ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার থেকে কম্পিউটারে স্ক্রিনশট নেওয়া বেশি ভালো হবে, মানে তাতে ছবির কোয়ালিটি তো ভালো থাকবেই আর সেটায় যুম করলেও জিনিসটা ডিস্ট্রট করবে না " রুদ্র বলে উঠল
"তাহলে তাই কর...আমি ওসব অত বুঝি না । তবে শোন, আস পাশের সব কিছুরই স্ক্রিনশট নিয়ে নিবি মানে আমাদের ঘর থেকে সেখানে যাওয়ার রাস্তাটার...পুরোটাই " দীপা বলে উঠল
"ঠিক আছে..." বলে ম্যাপ থেকে একটার পর একটা স্ক্রিনশট নিতে লাগল রুদ্র | কাফে পুরোপুরি ফাঁকা থাকার কারণে ওদের সেই সব কাজ করতে কোন অসুবিধাই হল না । সব কিছু কাজ হয়ে যাওয়ার পর রুদ্র বলে উঠল
"এবার যাই, ডাটা কেবেলটা নিয়ে আসি..."
তবে কাফের মালিকের কাছে গিয়ে ফোনের কেবেলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই লোকটা আবার সেই নোংরা ভাবে হেসে উঠল।
"কি গো ভায়া, কি জিনিস নেবে গো ফোনে...? "
"পানু...." সোজা সুজি বলে উঠল রুদ্র
"আরেহ! বাহ্ বাহ্ বাহ্ হেব্বি! হেব্বি!" নিজের চেয়ারে বসে বসেই লাফিয়ে উঠল লোকটা ," তারপর...তারপর কি করবে...? একসাথে দেখবে নাকি তোমরা??" বলে জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁটটা একবার চেটে নিলো লোকটা
"হ্যাঁ...সেই...সেই রকমই কিছু করার প্ল্যান আছে, তবে ডাটা কেবেলটা কি এবার পাওয়া যেতে পারে "
"হ্যাঁ গো ভায়া নিশ্চয়ই...নিশ্চয়ই! এই নাও! " বলে টেবিলের ড্রয়ার খুলে কেবেলটা বার করে সেটা সযত্নে রুদ্রর হাতে তুলে দিলো লোকটা |
রুদ্র কেবেলটা নিয়ে দীপার পাশে গিয়ে আবার বসতেই দীপা প্রশ্ন করে উঠল , "কি বলছিল রে মিনসেটা?"
"নাথিং...আচ্ছা, এই জায়গাটা যদি লেকের ওপরে হয় তাহলে ওখানে আমরা কি করে যাবো ? মানে ধর তিনদিকে যদি পাহার আর জঙ্গল হয় আর সামনে দিকে যদি সেই লেক..."
" সে সব ভাবনা চিন্তা করে দেখতে হবে রু, তবে তার আগে এই সব জিনিসগুলো তোর ফোনের মধ্যে নিয়ে নে.." দীপা বলে উঠল
"হয়ে গাছে..."
"সব কিছু? সব কিছু নেওয়া হয়ে গেছে ফোনে ? " দীপার প্রশ্ন শুনে রুদ্র নিজের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই দীপা আবার বলে উঠল "তাহলে এইবার সব স্ক্রিনশটগুলো মেশিন থেকে উড়িয়ে দে, আমি কাউকে আমাদের এই প্লানের ব্যাপারে একটুও কিছু জানাতে চাই না । ইটস ভেরি কনফিডেনসিয়াল রু "
"সে সব আমায় বলতে হবেনা...আমি তার আগেই ক্যাশে আর ব্রাউজিংয়ের হিস্টরিটা ক্লিয়ার করে দিয়েছি আর যে ড্রাইভে সেভ হয়ে ছিল সেটাও ফরম্যাট করে দিয়েছি..." রুদ্র বলে উঠল
"তাহলে অল ক্লিয়ার তো...?"
"ক্রিস্টাল..." রুদ্র বলে উঠল
"তবে এইবার ব্রাউজার খুলে পর্ন সার্চ কর তারপর কয়াকটা পর্ন চালা "
দীপার মুখ থেকে যে ওই সময়ে ওই জায়গায় ওই কথা শুনবে সেটা রুদ্র একবারের জন্যও আশা করেনি তাই সে খুবই অবাক হয়ে দীপার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল "এ...কি বলছ গো?..বাইরে বেরিয়ে? এইখানে? এখন? এই অবস্থায়...খুব ইচ্ছে করছে নাকি...?"
"হমমম...খুব সেয়ানা হয়েছিস বল তুই... নিজের অবস্থাটা নিজের মুখে বলতে চাইছিস না, বল..? তবে চালা একটা ভালো দেখে " মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে বলে উঠল দীপা
"হ্যাঁ...কিন্তু এইখানে? এরকম জায়গায়..? মানে আগেও আমরা একসাথে...কিন্তু এখানে? " কিন্তু কিন্তু করে বলে উঠল রুদ্র
"যাতে ওই মালটা ভাবে যে আমরা সত্যিই পর্ন দেখেছি..." দীপা বলে উঠল
এতক্ষণে দীপার মতলবটা বুঝতে পারল রুদ্র, তারপর বলে উঠল "ওহ: আচ্ছা! বুঝেছি এইবার, তবে সেটা আগে বলতে কি হয়েছিল " বলে ব্রাউজারে একটা সাইট খুলে একটা ভালো পর্ন চালিয়ে একে ওপরের গা ঘেঁষে বসল ওরা | কিছুক্ষণ সেই দিকে তাকিয়ে থাকতেই রুদ্রর খাঁড়া হয়ে যেতে আরম্ভ করল আর সেটা বুঝতে পেরেই নিজের হাতটা রুদ্রর ধনের উপর রেখে আস্তে আস্তে ঘষতে লাগল দীপা | দীপার হাতের ছোঁয়া পেয়েই রুদ্রর লিঙ্গটা পুরো খাঁড়া হয়ে গেলো আর নিজেকে আর সামলে রাখতে না পেরে মাথা ঘুরিয়ে দীপার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। দীপাও ওর ঠোঁটের সেই অনুভুতি উপভোগ করতে লাগল কিন্তু হঠাৎ দীপা নিজের ঠোঁটা সরিয়ে নিয়ে বলে উঠল ঃ
"ব্যাস হয়ে গেছে...আমাদের কাজ হয়ে গেছে...চল এবার...."
"মানে? এইতো এইতো সবে...." বলে দীপার কানের পাশ দিয়ে সোজা তাকাতেই লোকটাকে নিজের জায়াগায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রুদ্র । ওদের সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখার জন্য উৎসুক হয়ে লোকটা 'হা' করে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল তবে রুদ্রকে দেখতে পেয়েই লোকটা আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ল ।
" ঠিক..ঠিক আছে বুঝেছি চলো" বলে সেই অবস্থাতেই কম্পিউটারের সামনে থেকে উঠে কাফের মালিকের দিকে এগিয়ে গেলো ওরা | দীপা সেখানে আর এমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সোজা দোকানটার বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়াল | রুদ্র আস্তে আস্তে লোকটার টেবিলের সামনে যেতেই লোকটা হেসে বলে উঠল
"কি ভায়া!!! হয়ে গেলো? ওরে: শালা..হেব্বি জিনিস দেখছিলে বলে মনে হয়...হেব্বি মুড বল..."
"হ্যাঁ ওই আরকি..." নিজের প্যান্টটা ঠিক করে এডজাস্ট করতে করতে বলে উঠল রুদ্র
"তবে ভায়া...কি দেখছিলে গো? একটু টিপস যদি..দাও, মানে বুঝতেই তো পাড়ছ..."
"আরে..দাদা একদম চিন্তা করো না , হিস্টরিতে গেলেই পেয়ে যাবে সব কিছু আর আমি কিচ্ছু ডিলিট করি নি..." লোকটার তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠল রুদ্র
"ওরে: শালা !! তুমি তো দেখছি ভায়া পুরো এক্সপার্ট লোক যে, থ্যাংক ইউ!! থ্যাংক ইউ!! আর বেস্ট অফ লাক আজকের জন্য ভায়া! " আহ্লাদে বলে উঠল লোকটা
"বেস্ট অফ লাক? মানে কিসের জন্য?" অবাক হয়ে বলে উঠল রুদ্র আর সাথে সাথে নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করে উঠল, বেস্ট অফ লাক কেন বলছে? তবে কি লোকটা যেনে গেল নাকি ? কিন্তু কি করে...কি করে সম্ভব সেটা ?
তবে তার ভয়ের কারণ যে আজথা সেটা একটু পরেই বুঝতে পারল রুদ্র
"আরে ভায়া, বুঝতেই তো পারছ.....থ্যাপথ্যাপ.." বলে আবার সেই নোংরা হাসিটা হাসল লোকটা
"ওহ!"যেন ধড়ে আবার প্রাণ সঞ্চলিত হল রুদ্রর, তারপর বলে উঠল , " আচ্ছা..আচ্ছা, থ্যাংক ইউ...থ্যাংক ইউ...তবে কত হল আমার যেন, তিরিশ তো...?"
ওইদিকে রুদ্রর বাইরে আসতে দেরি হতে দেখে দীপার চিন্তা হতে লাগল | "এত দেরি তো হওয়ার কথা নয় ওর তাহলে..." তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই রুদ্রকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখে সেই চিন্তার মেঘটা দীপার মন থেকে কেটে গেলো | রুদ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে উঠল ;
" কিরে? এত দেরি হল কেন তোর ? কি করছিলি? আবার কি বলছিল লোকটা ?"
"ভাট বকছিল, মাথায় নিশ্চয়ই ছিট আছে মাল্টার জানত" বলে দীপার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগল রুদ্র
"হমমম, তবে সরি ফর নট..." বলতে গিয়েও থেমে গেল দীপা ।
"আরে ডোন্ট...পরে সব কিছু কড়ায়গণ্ডায় উসুল করে নেব আমি, তবে এবার ফেরা যাক নাকি ? মানে কাজ যখন হয়ে গেছে আমাদের তখন আর বাইরে থেকে কোনও লাভ তো হবেনা " রুদ্র বলে উঠল
"হ্যাঁ..চল" গাড়ির সামনে পৌঁছে বলে উঠল দীপা , " আমি চালাই নাকি এইবার...?" রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা । দীপার কথা শুনে রুদ্র নিজের মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো তারপর ওর হাতে চাবি দিয়ে পাসেঞ্জের সাইডে উঠে বসল | দীপাও ড্রাইভারের শিটে বসে গাড়িটা স্টার্ট করে ডাক্তার - কাকুর বাড়ির উদ্দেশে রাওনা দিলো | মুখ্য শহর থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে উঠে গাড়ি ছোঁটাতে লাগল দীপা ।
"আশা করি তিস্তারা ওখানে ঠিকই আছে" রুদ্র বলে উঠল
"হ্যাঁ ঠিকই থাকবে, ওই জায়গা খুঁজে বের করার কোনও চান্সই নেই "
"হ্যাঁ...তবে খুঁজে পেলেও তিস্তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনও চান্স নেই " রুদ্র বলে উঠতেই দুজনেই হেসে উঠল
"তবে কালকের সেই ঘটনার ব্যাপারে কেউ আর কিছু করবেনা, আমার যত দূর আন্দাজ কারণ কেউ আমাদের দেখতে পাইনি আর তার থেকেও বড় রনজু কে মেরে দিয়ে তিস্তা সেই ব্যাপারটা হওয়ার আগেই শেষ করে দিয়াছে... "
"হমম...তবে"
"তবে কি...? " রাস্তার দিকে তাকিয়ে দীপা প্রশ্ন করে উঠল
"তোমাকে কাল থেকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব করব ভাবছি কিন্তু জিগ্যেস করতে পারছিনা...মানে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে না আমার..."
"মানে...?" গাড়ির ব্রেক কসে গাড়িটাকে স্লো করে বলে উঠল দীপা ।
"মানে ওই..." বলতে গিয়েও থেমে গেল রুদ্র
"রু..তোর আর আমার এই সম্পর্কের মধ্যে তো কোনোদিন কোনও 'কিন্তু কেন ' ছিল না, তাহলে...তাহলে আজকে কেন তুই দ্বিধা বোধ করছিস এইরকম?" তার কণ্ঠর স্বর শুনে মনে হল সেই কথাটা শুনে সে খুবই কষ্ট পেয়েছে । "বল না রে রু... প্লেজ " আবার বলে উঠল দীপা
"ঠিক আছে..." বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রুদ্র, তারপর বলল " কালকে ওই সেলেব্রেশন হোটেলের গার্ডটা তোমার সাথে কি করল...? মানে তোমাকে আলাদা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর ও...?" নিজের কণ্ঠে একটা আক্রোশ নিয়ে বলে উঠল রুদ্র
"ওহ!! এই ব্যাপার? এইটার জন্য এত দ্বিধা বোধ করছিলি তুই... কেন ? " নিজের ভুরু দুটো কুঁচকে বলে উঠল দীপা," ঠিক আছে, তাহলে শোন...কি হয়ে ছিল"
"ও আমাকে তো সেই ওয়েটিং রুমে নিয়ে গেল , তবে ওয়েটিং রুমে আগের বার গিয়ে থাকলেও এইবারে গিয়ে দেখলাম সেখান কার অবস্থা আরও খারাপ তাই ওখানে বসতে আমি আপত্তি করায় ও আমাকে ওদের ভেতরের স্টাফদের রুমে নিয়ে গেল | স্টাফ রুমের ভেতরে ঢুকতেই বুঝলাম যে সেই রুমটা ভালো ভাবেই মেনটেন করে ওরা | জানালায় মোটা মোটা পর্দা, দেওয়ালে লাগান এ সি, সব কিছু গুছিয়ে রাখা ওখানে | আমি আস্তে আস্তে ঘরের ভেতরে আরও কিছুটা ঢুকতেই দেওয়ালে লাগানো একটা বিরাট টিভি দেখলাম আর তারই ঠিক উল্টো দিকে একটা লম্বা সোফা রাখা ছিল।
লোকটা ভেতরে ঢুকে এ সিটা ফুল জোরে চালিয়ে দিয়ে সামনের টিভিটা অন করল, তারপর তার নিচে রাখা ডিভিডি প্লেয়ারে একটা কিসের সিডি ঢুকিয়ে দিলো | প্রথমে আমি অতটা বুঝতে না পারলেও সাথে সাথে টিভিতে সেটার ছবি ফুটে উঠতে দেখে বুঝলাম যে সেটা পর্ন...না পর্ন নয় ওটা পুরো দেশি পানু । আমি টিভির দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম এমন সময় আমাকে পেছন দিক দিয়ে চেপে ধড়ে আমার মাই দুটো চেপে ধরল লোকটা !
"বাবা...আপনার তো দেখছি খুবই তাড়াহুড়ো রয়েছে? তবে এইবার আপনাকে একটু সাহায্য করতে হবে বলে মনে হচ্ছে" বলে লোকটাকে ঠেলে সোফার ওপর ফেলে ওর সামনে বসে ওর ট্রাউজারটা খুলে ফেলল দীপা।
"তবে...আপনি..আপনি এর জন্য কত টাকা নেবেন? মানে আমার কাছে...." লোকটি বিড়বিড় করে বলে উঠল
"আরে বাবা...না না, আমি এসব টাকার জন্যে করি না | আমি এগুলো করি আমার নিজের খিদে মেটাবার জন্য" দীপার মুখে থেকে সেই কথাটা শুনতেই লোকটা সাথে সাথে আনন্দে ফেটে পড়লো তারপর হঠাৎ নিজের জাঙ্গিয়াটা নামিয়ে দীপার মাথার পেছনটা চেপে ধরে নিজের নেতানো ধোনের ওপর ঠেলে দিল।
"আরে!!! রিলাক্স বস রিলাক্স, এত তাড়াতাড়ি নয়, দাঁড়ান" কোনও মতে নিজের মুখটা সেখান থেকে সরিয়ে বলে উঠল দীপা | তবে লোকটার ক্রোচ দিয়ে এতটাই দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল যে দীপা বাধ্য হল ঘেন্নায় আরও কিছুটা সরে যেতে।
"এখন নয়? তবে কখন...?" অধর্য্য হয়ে বলে উঠল লোকটা
"দাঁড়ান..আগে ওটা বড় হোক, তারপর না হয় দেখা যাবে" বলে হাত দিয়ে ধনটাকে ধড়ে নাড়াতে লাগল দীপা
দীপার হাতের ছোঁয়া পেতেই লোকটা যেন চোখে সর্ষে-ফুল দেখতে আরম্ভ করল | টিভিতে তখন একটা মেয়ে আর একটা ছেলে রীতি মতো চোদাচুদি করে চলেছে আর সেটা দেখে লোকটা আরও উত্তেজিত হয়ে গেলো | সেই সুযোগ বুঝে দীপাও লোকটার বাঁড়াটা ধরে ওপর নিচ করতে লাগলো ।
"ওহ..ওহ..ওহ কি মজা! আহ:" বলে লোকটা আরামে চেঁচাতে লাগল "আঃ এবার আপনিও ল্যাংট হয়ে যান না প্লিজ, আমি আপনার মাই ভোদা দেখতে চাই...আহ্হ্হঃ"
"আরে বাবা অত তাড়াহুড়ো করার কি আছে বলুন তো, আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না। আগে ওটাকে আরও একটু খাঁড়া হতে দিন...তবে না আমায় ঠেসবেন " বলে দীপা নিজের হাতের তালুতে নিজের মুখ থেকে থুথু নিয়ে বাঁড়া চেপে ধরে ঘষতে লাগল।
সেই আরাম পেয়ে লোকটা নিজের চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে দীপাকে গালাগালি দিতে শুরু করল |
"আঃ খেমটি মাগিরে...আহহ...খুব ভাল লাগছে...আহহহ!!!"
"এইতো....বস এইতো!" বলে দীপা তাকে আরও বেশী উৎসাহ আর উত্তেজিত করতে লাগল আর নিজেও নিজের টেম্পো বাড়িয়ে দিলো তবে হঠাৎ কিছু বোঝার আগেই সে নিজের বীর্যপাত ঘটিয়ে ফেলল |
"আহহহ্হ্হঃ" বলে একটা চিৎকার করে সে বীর্যপাত ঘটাল ঠিকই কিন্তু তার বীর্যের পরিমাণ ছিল খুবই সামান্য ! বেশির ভাগটাই ওর নিজের ধনের ওপর পড়ল তবে বাকি যেটুকু দীপার হাতে লেগেছিল সেটা সে সোফাতে মুছে দিলো | লোকটাকে একটু নেতিয়ে পড়তে দেখেই দীপা মেঝে থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেল আর সেটা করতেই লোকটা হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ঃ
"এবার তোর গুদ মারব মাগি..." টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল লোকটা ," নিজের সায়াটা তোল মাগি তারপর এখানে নিজের গুদ কেলিয়ে শুয়ে পর "
"নো...থ্যাংক ইউ.." বলে দীপা সোজা হয়ে উঠতেই লোকটা ওর গলাটা চেপে ধরল
"নো...থ্যাংক ইউ, তোর বাপকে গিয়ে বলবি মাগি । আমার সঙ্গে চোদাতে এসেছিস তুই...না চুদিয়ে কি করে যাস আমিও দেখি..." বলে ওর গলাটা টিপে ধড়ে টিভির দিকের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল লোকটা । তবে ভাগ্যক্রমেই ঠিক সেই মুহূর্তেই সেই গুলি চলার আওয়াজ হল | গুলির আওয়াজ শুনে লোকটাকে একটু অন্যমনস্ক হতে দেখেই, টিভির নিচে রাখা ডিভিডি প্লেয়ারটা নিজের হাতে নিয়ে ওর মাথায় মাঝখানে একটা ঘা মারল দীপা |
"মানে একটু বেশিই জোরে হয়ে গেছিলো মারটা মনে হয়" দীপা বলে উঠল
"কেন ?"
"না মানে, মনে হল যেন ডিভিডি প্লেয়ারটার একদিকের কোনটা মারার সাথে সাথে মাথার মাঝখানে ঢুকে গেলো, আর ওই এক ঘা খেয়েই একদম কাত হয়ে মেঝেতে পরে গেল মালটা "
"রক্ত বেরোচ্ছিল..?" রুদ্র বলে উঠল
"একদম...তবে আমার মনে হয় ওকে অতটা জোরে মারা ঠিক হয়নি..."
"যা করেছ বেশ করেছ । কারুর সঙ্গে জোরজবরদস্তি করার ফল ও কালকে টের পেয়েছে আর তুমি যা বলছ তাতে মাল চিরনিদ্রায় চলে গাছে..." রুদ্র বলে উঠল,"কনসিডার দ্যাট অ্যাজ এ ডিভাইন জাজমেন্ট নাথিং এলস, আর আমি তোমার জায়গাতে থাকলেও সেই একি কাজই করতাম "
"আমার শরীরে কেউ হাত দিলে তুই একদম সহ্য করতে পারিস না বল..?" দীপা শান্ত গলায় বলে উঠল । রুদ্রকে এই প্রশ্ন করলেও তার আসন্ন উত্তরটা কি হবে সেটা সে আগে থেকেই জানত ।
"সেটা শুধু তোমার ক্ষেত্রে হতে যাবে কেন বল? যে কোনও মহিলারই অসম্মান আমি সহ্য করতে পারি না আর পারবোও না, কোনোদিন..." শক্ত গলায় বলে উঠল রুদ্র
"আর সেই জন্যই... এই অরাজকতার মধ্যেও তোকে যে আমি এই শিক্ষাটা দিতে পেরেছি সেটা যেনে আমি খুবই গর্ব বোধ করি...তুই সত্যি আমার রু...." বলে আস্তে করে নিজের মুখটা ঘুরিয়ে রুদ্রর গালে একটা চুমু খেলো দীপা
"হমম, সে নয় হল...তবে এই গাড়িটা? এই গাড়িটা কোথা থেকে পেলে তুমি...?"
"এটা? এটা রাস্তার ধারে রাখা ছিল, দেখলাম যে ভেতরে চাবি ঝুলছে তাই এটাকে নিয়েই তোদের কাছে চলে গেলাম...মানে কয়াক সেকেন্ডের ডিসিশান এটা " দীপা বলে উঠল
"ওহ! তাহলে এই গাড়িটার একটা ব্যাবস্থা করতে হবে আমাদের..."
"হ্যাঁ...তবে আর কত দূর রু..?" রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল দীপা
"আর বেশি নয়"
প্রায় আরও ঘণ্টাখানেক পর ওরা শেষমেশ ডাক্তার-কাকুর বাড়ির সামনে এসে থামল |
 
  • Like
Reactions: ranaroy
Top